মহাভারতের সময়ে রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু ছিল ইন্দ্রপ্রস্থ নগরী। কালের ইতিহাসে নাম বদলে দিল্লি হলেও চিরকালই এই শহরের গুরুত্ব অপরিসীম। রাজপুত ও দাস বংশের হাত ঘুরে মুঘলদের করায়ত্ত হয় দিল্লির মসনদ। শেষ পর্যন্ত ইংরেজরাও দিল্লিকেই বেছে নেয় রাজধানী হিসেবে। ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট দিল্লির লালকেল্লায় উত্তোলিত হয় স্বাধীন ভারতের জাতীয় পতাকা।
ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম শহর দিল্লি। লালকেল্লার পশ্চিমে প্রাচীরে ঘেরা পুরনো দিল্লি অলিগলি নিয়ে ঘিঞ্জি শহর। দিল্লি জংশন স্টেশনটিও পুরনো দিল্লিতেই। নতুন ও পুরনো দিল্লির মাঝে রামলীলা ময়দান। রাজধানী শহর নিউ দিল্লির অন্যতম বাণিজ্যকেন্দ্র জমজমাট কনট প্লেস বা ইন্দিরা চক।
দিল্লির প্রধান আকর্ষণ ঐতিহাসিক লালকেল্লা(Red Fort)। ১৬৩৮-৪৮ সালে মুঘল সম্রাট শাহজাহান এই বিশাল কেল্লাটি নির্মাণ করান। লাল বেলেপাথরে নির্মিত কেল্লাটির মধ্যে রয়েছে দেওয়ান-ই-আম, দেওয়ান-ই-খাস, রংমহল, শিশমহল, খাসমহল, মীনাবাজার, ঔরঙ্গজেবের তৈরি মোতি মসজিদ প্রভৃতি। সর্বত্র পাথরের জালির অসাধারণ কাজ। লালকেল্লায় রয়েছে একটি মিউজিয়ামও। বর্তমানে লালকেল্লার অধিকাংশটাই ভারতীয় সেনাবাহিনীর অধীনে, তবে যেটুকু দর্শনযোগ্য তাতেই মুগ্ধ হতে হয়। প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলায় লালকেল্লায় লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শোতে মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস থেকে শুরু করে ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস দেখানো হয়।
ভারতের উচ্চতম মিনারটিও দিল্লিতেই। সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবক ১১৯৯ সালে ৭২.৫ মিটার উচ্চতার এই কুতুব মিনার (Qutub Minar)টি তৈরি করেন। যদিও কাজ শেষ করেন তাঁর জামাতা সুলতান ইলতুতমিস। পাশেই রয়েছে চতুর্থ শতকে রাজা চন্দ্রভার্মার তৈরি লৌহমিনারটি। একই সঙ্গে দেখে নেওয়া যায় আলাইমিনার। সুলতান ইলতুতমিস এবং সুলতান আলাউদ্দিন খিলজির সমাধি।
কুতুব থেকে ৭-৮ কিলোমিটার দূরে ধ্বংসপ্রাপ্ত তুঘলকাবাদ দুর্গ। কাছেই আদিলাবাগ দুর্গের ধ্বংসাবশেষ।
পুরনো কেল্লার অন্যতম দ্রষ্টব্য খুনি দরওয়াজা, সিপাহি বিদ্রোহের সময় ইংরেজ সেনাপতি হাডসন মুঘলসম্রাট বাহাদুর শা জাফরের বেশ কয়েকজন আত্মীয় ও অনুগামীকে নির্মমভাবে হত্যা করে এই দরওয়াজায় ঝুলিয়ে রেখেছিলেন, তাই এর নাম খুনি দরওয়াজা। পুরনো কেল্লাতেও সন্ধ্যাবেলা লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো হয়। এর কাছেই রয়েছে মুঘলসম্রাট হুমায়ুনের সমাধি।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে এবং আফগান যুদ্ধে নিহত ভারতীয় ও ব্রিটিশ সৈনিকদের স্মৃতিতে ১৯৩১ সালে ১৬০ ফুট উঁচু ইণ্ডিয়া গেট (India Gate) তৈরি করা হয়।
এছাড়াও দিল্লির অন্যান্য দ্রষ্টব্য যন্তর-মন্তর, গুরুদ্বার বাংলা সাহিব, বাহাই মন্দির, সফদরজং টুম্ব, প্রগতি ময়দান, লক্ষীনারায়ণ মন্দির, ফিরোজ শা কোটলা, রাজঘাট, শক্তিস্থল, শান্তিবন, বীরভূমি,বিজয়ঘাট, জুম্মা মসজিদ, নেহরু প্যাভিলিয়ন, নেহরু মিউজিয়াম, জাতীয় মিউজিয়াম, চিড়িয়াখানা, ডল্স্ মিউজিয়াম, গান্ধী মিউজিয়াম, ন্যাশনাল রেল মিউজিয়াম, সূরজকুন্ড, বুদ্ধজয়ন্তী পার্ক, মুঘল গার্ডেন্স, রাষ্ট্রপতি ভবন প্রভৃতি।
যাওয়াঃ- শহর থেকে ২০কিমি দূরে ইন্দিরা গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট (Indira Gandhi International Airport)। একই চত্ত্বরে অন্তর্দেশীয় টার্মিনাল পালাম (Palam)।
পাহাড়গঞ্জের কাছে নতুন দিল্লি স্টেশন(NDLS) ও লালকেল্লার পশ্চিমে পুরনো দিল্লি স্টেশন(DLI)- দিল্লির দুই প্রধান রেলস্টেশন।
থাকাঃ- দিল্লি জুড়েই নানা মান ও দামের হোটেল আছে। ভারতীয় রেলের হোটেল রয়েছে নিউ দিল্লি রেলস্টেশনে। আই.টি.ডি.সি.-র হোটেল কনট প্লেসের কাছে। এছাড়াও অনেকগুলি ধর্মশালা আছে দিল্লিতে।