পাহাড়চূড়ার আতঙ্কের শেষে

দেবাশিস বিশ্বাস

~ ধৌলাগিরি পর্বতাভিযানের আরো ছবি ~

ফেসবুকে একটার পর একটা ম্যাসেজ জমছিল – আপনারা সুস্থ হয়ে তাড়াতাড়ি ফিরে আসুন। বসন্তদাকে ফিরে পেয়েছি, এত মানুষের শুভেচ্ছা রয়েছে সঙ্গে – মনে হচ্ছিল আবার সব ঠিক হয়ে যাবে।...
ফিরে আসার বেশ কিছুদিন পরে বসন্তদার তেনজিং নোরগে পুরস্কার পাওয়ার মুহূর্তে বার বার মনে পড়ছিল সেই ভয়ঙ্কর রাতের কথা...।
ডায়েরির পাতা উল্টাই –
১৬ই এপ্রিল, মঙ্গলবার – কলকাতা থেকে ১৩ই এপ্রিল রওনা দিয়ে কাঠমাণ্ডু পৌঁছে সেখান থেকে বেণী হয়ে আজ দারবাং (উচ্চতা ১১১০ মি) পৌঁছেছি। গাড়ির রাস্তা এখানেই শেষ। কাল থেকে হাঁটা শুরু। এভারেস্ট, কাঞ্চনজঙ্ঘা, অন্নপূর্ণার পর আমাদের লক্ষ্য পৃথিবীর সপ্তম উচ্চতম শৃঙ্গ ধৌলাগিরি (৮১৬৭ মি/২৬,৭৯৫ ফুট)। বসন্তদা ছাড়াও এবারে সঙ্গী মলয়। আর বহুদিনের সাথী পেম্বা শেরপাতো রয়েইছে। আয়োজক সেই লোবেন এক্সপেডিশনই।
'ধৌলাগিরি' একটি সংস্কৃত শব্দ। ধবল অর্থ সাদা বা সুন্দর আর গিরি মানে পর্বত। মধ্য নেপালের বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র পোখরার উত্তরে অন্নপূর্ণা। অন্নপূর্ণার পশ্চিমে অর্থাৎ পোখরার উত্তর-পশ্চিমে ধৌলাগিরির অবস্থান। অন্নপূর্ণা আর ধৌলাগিরির মধ্যে দূরত্ব ৩৪ কিমি। আর এই দুই বিশাল শৃঙ্গের মাঝে পৃথিবীর গভীরতম গিরিখাত দিয়ে বয়ে চলেছে কালীগণ্ডকী নদী। ধৌলাগিরি আরোহণের প্রচলিত পথ এই শৃঙ্গের উত্তর-পূর্ব গিরিশিরা বরাবর। ১৯৫০ সালে ফ্রান্সের পর্বতারোহী মরিস হারজগ ধৌলাগিরি আরোহণ করতে এসে উপযুক্ত কোন পথ খুঁজে না পেয়ে মত পালটে অন্নপূর্ণা অভিযান করতে যান এবং সফলও হন। এটাই প্রথম অন্নপূর্ণা আরোহণ। এরপর বেশ কয়েকটি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর ১৯৬০ সালে এক সুইস-অস্ট্রিয়ান দল ১৩ মে প্রথম ধৌলাগিরি আরোহণ করে।
ধৌলাগিরি গিরিশ্রেণীতে ধৌলাগিরি ছাড়াও আছে ধৌলাগিরি - ২, ধৌলাগিরি – ৩, ৪, ৫, চুরেন হিমল, চুরেন মূল, পূর্ব, পশ্চিম, পুথা হিনচুলি, গুরজা হিমল ইত্যাদি শৃঙ্গ।
১৭ই এপ্রিল, বুধবার - সকাল সকালই ঘোড়া এসে হাজির। ঘোড়ার পিঠে মালপত্র তুলে শুরু হল হাঁটা মাগ্দি নদী বরাবর। গন্তব্য খামলা। মাগ্দি নদীর নামে এই জেলার নামও মাগ্দি। এই মাগ্দি নদীই বেণীতে গিয়ে কালীগণ্ডকী নদীর সঙ্গে মিশেছে।
আশেপাশে বেশ কয়েকটা গ্রাম। তাই পথে লোকজনের দেখা মিলছে। দড়ির ব্রিজ দিয়ে নদী পেরিয়ে আবার এগিয়ে চলা। রাস্তার ধারে পাহাড়ি জলধারার জল পান করে তৃষ্ণা মেটানো হল। দিনের বেলাতেও একটানা কানে আসছে ঝিঁ ঝিঁ-র ডাক।
দুপুরবেলায় গ্রামের একটা বাড়িতে খাওয়ার জন্য থামা হল। তারপর আবার চলা। পথে চলতে চলতেই চোখে পড়ল একটা বাড়িতে শুয়োরের মাংস শোকানো হচ্ছে। অনেকটা খাড়া ঢাল পেরিয়ে বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ পৌঁছলাম খামলা। সেখানেই গ্রামের এক বাড়িতে রাতের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে।
১৮ই এপ্রিল, বৃহস্পতিবার – জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে বেশ কিছুটা পথ পেরিয়ে মাগ্দি খোলার কাছে পৌঁছালাম। নড়বড়ে সেতু পেরিয়ে ওপারে ছোট্ট গ্রাম দুগাপ। দু'একটা বাড়িঘর আর ছোট একটা চায়ের দোকান। চা-বিস্কুট খেয়ে আবার হাঁটা। পথে দেখা মিলল পোর্টারদের – খাবার বানানোর তোড়জোড় চলছে।
লোকালয় শেষ। পাহাড়ের খাড়া ঢাল কাটা পথে হেঁটে বিকেলবেলায় পৌঁছালাম বোগারা। উচ্চতা ২০৮০ মিটার। চাষের জমির মাঝে মাঝেই দু'একটা বাড়ি, হোটেল। অন্যান্য অনেক অভিযাত্রীর দেখাও মিলল। আমাদের তাঁবুও পড়ল এখানে।
১৯ এপ্রিল, শুক্রবার – চাষের ক্ষেতের মধ্যে দিয়ে কিছুদূর যাওয়ার পর খাড়া চড়াই শুরু হল। ডানহাতে অনেক নীচে মাগ্দি খোলার জল দেখা যাচ্ছে। রাস্তার ধারে একটা চায়ের দোকানে বসে অল্প বিশ্রাম নিয়ে আবার পথ চলা। এবারে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে এগোনো। জঙ্গলের মাঝে ছোট একটা ফাঁকা জায়গায় চোখে পড়ল একটিমাত্র দোকান। এখানে দেখা হল স্পেনের দু'জন অভিযাত্রীর সঙ্গে। দুপুর বারোটা নাগাদ পৌঁছলাম দোবান, উচ্চতা ২৫১০ মিটার। এখানে পাশাপাশি পাথরের তৈরি দু'তিনটে হোটেল রয়েছে। সামনে বেশ খানিকটা ঘাসের সমতল ময়দান – আমাদের তাঁবু পড়ল সেখানে।
২০ এপ্রিল, শনিবার – সকাল সাতটা নাগাদ বেরিয়ে পড়লাম। কাঠের সেতু দিয়ে মাগ্দি খোলা পেরিয়ে আবার জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে হাঁটা। চোখে পড়ল বড় বড় গাছের গায়ে আটকে থাকা বিশালাকার ছত্রাক। হলুদ রঙের একরকম ফুলের গাছে আলো হয়ে রয়েছে জঙ্গল। সাড়ে ন'টা নাগাদ তালিত্রায় চা-পানের বিরতি। এগারটা নাগাদ সালাগারিতে পৌঁছে দুপুরের খাওয়া সারা হল। আবার জঙ্গলের ভেতর দিয়ে চড়াই ভেঙ্গে এগোনো। বেলা দুটোর সময় ইটালিয়ান বেস ক্যাম্পে পৌঁছালাম।
বিকেল থেকেই শুরু হল তুষারপাত – টানা তিনদিন থামার কোন লক্ষণই নেই। এরমধ্যেই বেস ক্যাম্প চত্ত্বরে ঘুরে স্মৃতিফলকগুলো দেখছিলাম – এই অভিযানে এসে যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন তাঁদেরই স্মৃতিতে। মনটা খারাপ হয়ে যাচ্ছিল।

২৬ এপ্রিল, শনিবার – অপেক্ষায় অপেক্ষায় এক সপ্তাহ কেটে গেছে। শেরপারা বারদুয়েক বেসক্যাম্প ঘুরে এলেও আমরা রওনা হতে পারিনি। আজ সকাল ছ'টা নাগাদ বেরিয়ে পড়লাম। প্রথমে চড়াই ভেঙ্গে বেশ কিছুটা ওপরে ওঠার পর আবার নীচে নামার পালা। সোজা নেমে যেতে হবে একেবারে ছোনবর্ধন হিমবাহের বুকে। খাড়া বরফের ঢালে লাগানো দড়ি ধরে সন্তর্পনে নামা। হিমবাহের বুকের ওপর দিয়ে সাবধানে চলা - পেরোলাম সুইস বেসক্যাম্প। এবারে দুপাশের খাড়া পাথুরে ঢালের মধ্য দিয়ে পথ। খুব সাবধানে দ্রুত রক ফল জোন পেরোলাম। জাপানি বেসক্যাম্পে পৌঁছে প্যাক লাঞ্চ খুলে খাওয়ার পাট সারা হল।
দুপুরের পর আবহাওয়া খারাপ হতে শুরু করল। হালকা তুষারপাতের মধ্যেই পৌঁছালাম বেসক্যাম্প। পাশাপাশি অনেক দলের তাঁবু পড়েছে – ফরাসি, জাপানি, পোলিশ, ইতালিয়ান ও স্পেনের অভিযাত্রীদের।
বেসক্যাম্পে পৌঁছেই হাওয়ার দাপট টের পেলাম। ধৌলাগিরি বিখ্যাত বা কুখ্যাত এই হাওয়ার জন্যই। উত্তরে তিব্বতের দিক থেকে একটানা বয়ে চলে এই হাওয়া। তীব্র হাওয়ার দাপটে পাহাড়, মাটি ক্রমাগত ক্ষয় হয়ে তৈরি হয়েছে প্রকৃতি সৃষ্ট ভাস্কর্য। এইজন্যই টুকুচে শৃঙ্গের দেওয়ালে আঁচড়ের মতন লম্বালম্বি দাগ রয়েছে।
বেস ক্যাম্পের দক্ষিণে ধৌলাগিরি। মাঝে ছোনবর্ধন হিমবাহ। হিমবাহের পরেই পিরামিডের আকারে যে কালো খাড়া পাথুরে শৃঙ্গ দাঁড়িয়ে রয়েছে, বিখ্যাত আইগার (IGAR) শৃঙ্গের সঙ্গে তার সাদৃশ্য থাকায় এরও নাম রাখা হয়েছে আইগার। এরই গা বেয়ে আমাদের উঠতে হবে।
২৭ এপ্রিল, রবিবার – বেসক্যাম্প বা মূল শিবির গুছিয়ে নেওয়া শুরু হল। তৈরি হল মন্দির আর টয়লেট।
গত কয়েকদিন প্রচুর তুষারপাত হয়েছে। চারপাশের পাথরের দেওয়ালগুলোতে তুষার জমে রয়েছে। রোদ ওঠায় মাঝে মধ্যেই ওই দেওয়ালগুলো থেকে আলগা বরফ গড়িয়ে পড়ে তুষারধ্বস বা অ্যাভালাঞ্চ-এর সৃষ্টি করছে।
এরমধ্যে ওপরের ক্যাম্প থেকে দুজন অভিযাত্রী আইগারের দেওয়াল বেয়ে নেমে এল – গা ঘামানোর পালা চলছে – প্রকৃতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা।
অনেক দল, অনেক লোকজন, তাই খাবারের লোভে এসে জুটেছে অসংখ্য পাখিও। রয়েছে অজস্র বাহারি প্রজাপতিও।
বেসক্যাম্পে পৌঁছে যাওয়া মানে অভিযানের প্রথম পর্ব শেষ। শেষপর্বের কঠিন দিনগুলোর আগে আপাতত কয়েকদিন সুবিধামত জমিয়ে খাওয়া, গল্পের বই পড়া, গান শোনা। ওরই ফাঁকে ফাঁকে চলছে ম্যাসেজ – শরীরটাকে ঝরঝরে করে নেওয়ার জন্য।
আবহাওয়া বেশ পরিষ্কার। কিন্তু একটানা হাওয়ার দাপট চলছেতো চলছেই। ধৌলাগিরির মাথার দিকে তাকালেই চোখে পড়ছে প্রবল হাওয়ায় বরফ মেঘ উড়ছে।
২৮ এপ্রিল, সোমবার – সকাল থেকেই শুরু হয়ে গেছে পুজোর প্রস্তুতি। পেম্বারাই পুরোহিত। পুজোর শেষে পেম্বা সকলকে খাদা পরিয়ে দিল, টাঙানো হল প্রেয়ার ফ্ল্যাগ। ইতিমধ্যে জার্মানির একটা বেশ বড় দল এসে হাজির।
৩০ এপ্রিল, বুধবার – চা-বিস্কুট খেয়ে রাত আড়াইটের সময় রওনা দিলাম একনম্বর ক্যাম্পের দিকে। শেরপারা গতকাল একবার একনম্বর ক্যাম্প থেকে ঘুরে এসেছে। হেড-টর্চের আলোয় পথ চলা। সামনে বসন্তদা আর পেম্বা, মাঝে আমি, পেছনে মলয়। দাওয়া আর পাসাং অনেকটাই এগিয়ে গেছে। ছোনবর্ধন হিমবাহ আড়াআড়ি পার হয়ে আইগারের খাড়া দেওয়ালে জুমার লাগিয়ে চলা। একটানা খাড়া উঠে এরপর বাঁদিক বরাবর হালকা হালকা বরফের ঢাল। পথের বাঁপাশে আইসফল জোন। আইগারকে পেছনে ফেলে এরপর ডানদিকে ধৌলাগিরির দেওয়াল বেয়ে ওঠা।
ক্রমশঃ ভোর হল। সূর্যের আলো ধীরে ধীরে রাঙিয়ে দিচ্ছে ধৌলাগিরির শীর্ষ। পশ্চাৎপটে চাঁদ। অপূর্ব দৃশ্য। এবারে একের পর এক অন্য শৃঙ্গগুলোও প্রথম সুর্যের আলোয় সোনালি হয়ে উঠছে।
ঝকঝকে আবহাওয়া। কিন্তু হাওয়ার দাপট অব্যাহত। বরফের ময়দান বরাবর এগিয়ে চলা। মাঝে মাঝে মার্কিং ফ্ল্যাগ দেখে অভিমুখ ঠিক করে নেওয়া। হিমবাহের মাঝখান দিয়ে ঢাল। তাই প্রচুর ক্রিভার্স বা ফাটল রয়েছে। চারপাশে আইস ফল জোন। ডানপাশে ধৌলাগিরির ঢালেও ছোট-বড় তুষারধ্বসের চিহ্ন। দড়ি লাগানো নেই। খুব সাবধানে এঁকেবেঁকে পথ চলা। একটা লম্বা ঢাল পেরিয়ে পৌঁছলাম এক নম্বর শিবিরে। উচ্চতা ৫৮০০ মিটার। ঘড়িতে তখন সকাল দশটা চল্লিশ। আশেপাশে অন্যান্য দলের তাঁবু পড়েছে। তাঁবুর ঠিক পাশেই বরফের দেওয়াল। সেখান থেকে বরফ কেটে নিয়ে এল পেম্বা, পানীয় জল বানানো হবে। মাথা তুললে চোখে পড়ছে ধৌলাগিরির মাথায় তীব্র হাওয়ার দাপটে বরফ-মেঘের উড়ে যাওয়ার দৃশ্য। উত্তর-পূর্বে টুকুচে আর টুকুচে পশ্চিম। উত্তর পশ্চিমে ধৌলাগিরির অন্যান্য শৃঙ্গ।
১ মে, বৃহস্পতিবার – আজ গা ঘামানোর পালা। সকালে খালি হাতেই বেরিয়ে পড়লাম। ওপরে উঠতে উঠতে চোখে পড়ল ধৌলাগিরির পূর্ব গিরিশিরা। পূর্বদিকে বরফের ঢালের পিছন থেকে উঁকি দিচ্ছে অন্নপূর্ণা। উত্তর-পূর্বে টুকুচে, উত্তরে সীতা চুচুরা। উত্তর থেকে পশ্চিমদিকে ধৌলাগিরির অন্যান্য শৃঙ্গ। আর দক্ষিণে স্বয়ং ধৌলাগিরি। সাড়ে দশটা নাগাদ ৬০০০ মিটারের মতন ওঠার পর আবার নীচে নামতে শুরু করলাম।
বিকেল থেকে শুরু হল হালকা তুষারপাত। ক্রমে জোর বাড়তে থাকল। ঘন মেঘের চাদরে ঢেকে গেল চারপাশ।
২ মে, শুক্রবার – সকাল থেকেই মেঘলা। হালকা তুষারপাতও চলছে। তারমধ্যেই আটটা নাগাদ আমরা বেরিয়ে পড়লাম – গন্তব্য ক্যাম্প- টু। একটানা তুষারপাতের জন্য আগের অভিযাত্রীদের পায়ের চিহ্নও কোথাও নেই। প্রতি পদক্ষেপে পা ডুবে যাচ্ছে বরফে, চলতেও বেশ কষ্ট হচ্ছে। মেঘলাতো ছিলই। ক্রমশঃ চারপাশ থেকে ঘন মেঘের চাদর এসে সবকিছুকে একেবারে ঢেকে দিল। আট-দশ ফুট দূরের কিছুও আর চোখে পড়ছে না। ওর মধ্যেই হেঁটে চলেছি। হাওয়া আর তুষারপাত দুটোই ক্রমশঃ তীব্র হচ্ছে। বেলা সাড়ে এগারটাতেও ক্যাম্প টুতে পৌঁছতে পারলাম না দেখে চিন্তা হল যে রাস্তা ভুল করে ক্যাম্প পেরিয়ে চলে যাইনিতো? সকলে ঠিক করলাম সঙ্গের মালপত্র সেখানেই জড়ো করে রেখে আবার নীচে নেমে আসব। কিন্তু এত মেঘ, হাওয়া আর তুষারপাত যে ফেরার পথে রাস্তা পুরোপুরিই হারিয়ে ফেললাম। এদিকে সঙ্গে তাঁবু, স্টোভ কিচ্ছু নেই। শেষমেষ পেম্বা ঠিক করল বরফ কেটে গুহা বানিয়ে তাতেই থাকা হবে। এদিকে বরফ কাটার বেলচাও নেই। অগত্যা কার্ডবোর্ডের একটা টুকরো নিয়ে ঝিনুক দিয়ে সাগর ছেঁচার মত গুহা বানানোর চেষ্টা শুরু করল। অনেকক্ষণের প্রাণান্তকর চেষ্টার পরও যখন বিশেষ এগোলনা তখন হাল ছেড়ে দিল পেম্বা। এবারে পথ খোঁজার একটা শেষ চেষ্টা – একেবারেই মরিয়া আমরা। প্রায় দেড়-দু'ঘন্টা খোঁজার পর হঠাৎই মেঘের আড়াল সরে গিয়ে সকলের চোখে পড়ল একটা মার্কিং ফ্ল্যাগের আবছা উপস্থিতি। আহ্, হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম সকলেই। এবারে সেই ফ্ল্যাগের নিশানা দেখে দেখে ক্যাম্প ওয়ানের দিকে ফিরে চলা। পৌঁছলাম বিকেল সাড়ে পাঁচটায়।
৪ মে, রবিবার – সকাল সাড়ে আটটায় আবার রওনা ক্যাম্প টু-র দিকে। লক্ষ্য ধৌলাগিরির উত্তর-পূর্ব গিরিশিরা। আবহাওয়া একদম পরিষ্কার। তবে পূর্বদিক থেকে দলবেঁধে উঠে আসছে মেঘের সারি। গতকাল মূল শিবির থেকে আরও কয়েকটা দল একনম্বর ক্যাম্পে পৌঁছেছিল। আজ তারাও আমাদের সঙ্গী।
ধীরে ধীরে মেঘলা হয়ে এল, শুরু হল তুষারপাত। তার মধ্যেই এগিয়ে চলা। খাড়া ঢাল বেয়ে প্রথমে ওপরে উঠে তারপর দড়ি ধরে অন্য ঢাল বরাবর বাঁদিকে নেমে বেলা একটা নাগাদ ক্যাম্প টুতে পৌঁছলাম। উচ্চতা ৬৪০০ মিটার। আগামীকাল আবার বেস ক্যাম্পে নেমে যাব।

১০ মে, শনিবার – সকাল আটটা নাগাদ খালি হাতেই রওনা দিলাম ফ্রেঞ্চ পাস অভিমুখে। এর আগে বেশ কয়েকদিন বেস ক্যাম্পেই শেরপা আর অন্যান্য অভিযাত্রীদের সঙ্গে গল্পে-আড্ডায় কাটল।
যাওয়ার পথে ধৌলাগিরি আরোহণ করতে এসে যাঁরা মারা গেছেন তাঁদের স্মরণ করে নির্মিত স্মৃতিফলকগুলো চোখে পড়ল। একের পর এক স্মৃতিফলক দেখতে দেখতে অদ্ভুত একটা অনুভূতি হচ্ছিল। ।
ছোনবর্ধন গ্লেসিয়ার পেরিয়ে খাড়া উঠে এলাম একটা গিরিশিরার মাথায়। ঝকঝকে আবহাওয়া। পিছনে তাকালেই চোখে পড়ছে বিশাল ধৌলাগিরি। এরপর গিরিশিরার মাথা বরাবর চলা। গিরিশিরা পেরিয়ে হালকা ঢালের লম্বা বরফের ময়দান।
সাড়ে এগারোটা নাগাদ উঠে এলাম ৫৩৬০ মিটার উচ্চতায় ফ্রেঞ্চ পাসের মাথায়। পাসের দক্ষিণে ধৌলাগিরি, দক্ষিণ-পশ্চিমে টুকুচে, উত্তর দিকে মুকুট হিমল। পাসের একদম মাথায় চলছে একটানা ঝোড়ো হাওয়া।
বেলা দুটো নাগাদ বেসক্যাম্পে ফিরে এলাম।
১৯ মে, রবিবার – গত সপ্তাহখানেক ধরেই আবহাওয়ার কোন উন্নতি না হওয়ায় একটানা বেসক্যাম্পেই থাকতে হয়েছে। এদিকে বর্ষাও এসে যাচ্ছে। কয়েকটা দলতো হাল ছেড়ে দিয়ে ফিরেই গেল। আমরা বেশ মরিয়া হয়েই ভোরবেলায় বেরিয়ে ঘন্টা আটেক হাঁটার পর পৌঁছে গেলাম ক্যাম্প ওয়ান।
২১ মে, মঙ্গলবার – সকাল সাড়ে ছটায় বেরিয়ে পড়লাম ক্যাম্প থ্রি-র উদ্দেশ্যে। সকালের ঝকঝকে আবহাওয়ায় খাড়া ঢাল ধরে উঠে যাওয়া। পূর্বদিকে তাকালেই দেখতে পাচ্ছি অন্নপূর্ণা আর নীলগিরি। পশ্চিমদিকে ধৌলাগিরির বিভিন্ন শৃঙ্গ। উত্তরে টুকুচে। আমাদের আগে পরে আরও কয়েকজন অভিযাত্রী-শেরপা রয়েছে। বেলা যতই বাড়ছে হাওয়ার বেগও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে, সঙ্গে বরফের কুচিও উড়ছে।
বেলা দুটো নাগাদ একজায়গায় পৌঁছে জাপানি তাঁবুর চিহ্ন চোখে পড়ল। না থেমে প্রবল হাওয়ার মধ্যেই এগোতে থাকলাম। হাওয়ার দাপটে বরফের কুচি উড়ে এসে চোখেমুখে পড়ছে। মনে হচ্ছে যেন টুকরো পাথর এসে লাগছে। বিকেল চারটে নাগাদ উঠে এলাম ৭২৫০ মিটার উচ্চতায় ক্যাম্প থ্রিতে।
২২ মে, বুধবার - রাত দশটা-সাড়ে দশটা নাগাদ আমরা বেরিয়ে পড়লাম সামিটের জন্য। কমতে কমতে দলটা এখন বেশ ছোট। আমরা তিনজন আর সঙ্গে তিন শেরপা আর স্পেনের দুজন সঙ্গে এক শেরপা। ঘন্টা দুয়েকে পৌঁছলাম প্রায় ২০ মিটার উঁচুতে লাগানো জাপানি তাঁবুর কাছে। এখান থেকে আমাদের সঙ্গী হল এক জাপানি মহিলা ও তার দুই শেরপা। পথে আসতে আসতে আমাদের সঙ্গী মলয়ের কিছু অসুবিধা হওয়ায় সিদ্ধান্ত হল ও এই জাপানি মহিলার তাঁবুতেই থেকে যাবে। অন্যান্য বছরের থেকে আমাদের যা অভিজ্ঞতা হয়েছিল, তা হল সারারাত আমরা ক্লাইম্ব করে ভোরবেলায় মাথায় চড়ে যাব। এখানেও লক্ষ্য তাই ছিল। ৮১৬৭ মিটার উচ্চতায় উঠতে হবে। আর আমরা প্রায় ৭২৫০ মিটার থেকে যাচ্ছি। বাকী দূরত্ব প্রায় ৯০০ মিটারের কাছাকাছি। তারমানে পাহাড়ে ন'ঘন্টাতো লাগবেই, আমরা ধরে নিয়েছিলাম দশ থেকে বারো ঘন্টা লাগবে। মোটামুটি পরদিন সকাল আটটা-সাড়ে আটটা নাগাদ আমাদের ক্লাইম্ব করার কথা।
২৫ মে, শনিবার – গত কয়েকদিন ডায়েরি লেখার মতো অবস্থা ছিল না। বাইশ তারিখের ঘটনা থেকেই শুরু করি –
কখনও বরফের ঢাল, কখনওবা পাথরের, তারই মধ্যে দিয়ে উঠে যাওয়া। চারপাশের সব শৃঙ্গগুলো অনেক নীচে। অনেকটা পশ্চিমদিকে করে এসেছি বলে অন্নপূর্ণা ধৌলাগিরির ঢালের আড়ালে চলে গেছে। পিছনে টুকুচের পাশ দিয়ে ফ্রেঞ্চ পাস দেখা যাচ্ছে। যখন বেরিয়েছিলাম তখন হাওয়া ছিল না। কিন্তু পথে যেতে যেতে মাঝে মাঝেই বেশ জোরালো হাওয়া দিচ্ছে আর তাতে বরফ উড়ছে। চলতে চলতে বারবারই দাঁড়িয়ে পড়তে হচ্ছে। ফলে যেখানে সকাল আটটা-সাড়ে আটটায় পৌঁছানোর লক্ষ্য ছিল, সেখানে বিকেল আড়াইটে-তিনটেতেও আমরা পৌঁছাতে পারিনি। খাওয়া নেই, জল নেই, শরীর ক্লান্ত, এদিকে প্রচন্ড হাওয়া দিচ্ছে – সমস্তকিছুই ক্রমশঃ আমাদের প্রতিকূলে চলে যাচ্ছে। একবার হাওয়া বন্ধ হচ্ছে, হাঁটা শুরু করছি, আবার হাওয়া বইছে, আমরা বসে পড়ছি। এভাবেই এগোতে এগোতে অনেক বেলা হয়ে গেছে।
এইভাবে চলে বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ পৌঁছে গেলাম চূড়ার ঠিক নীচের ধাপে। তখন আর হয়তো ৫০-৬০ মিটার বাকী, ঘন্টাখানেকের মত পথ। আমরা একসঙ্গে একটা দড়িতেই যাচ্ছিলাম – আমি, বসন্তদা, পাসাং আর পেম্বা শেরপা। এটাকে রোপ আপ করা বলে। আমাদের ঠিক আগে আগে যাচ্ছিল ওই জাপানি মহিলা আর তার দুই শেরপা। তার সামনে ছিল একজন স্প্যানিশ গারা নাম, আর তার শেরপা কেশব। আমাদের পেছনে ছিল আরেকজন স্প্যানিশ – লোলো – ওদের টিমলিডার। হঠাৎ করে এইসময় কেশব পড়ে গেল। আমরা তখন ফিক্স রোপ করিনি, কারণ দড়ি অনেক আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল, ফ্রি ক্লাইম্ব করছিলাম। কেশব যেই পড়ল, ওর সঙ্গে রোপ আপ করে থাকায় গারাও পড়ে গেল। তবে নরম বরফ থাকায় ওরা একশো-দেড়শো ফিট নীচে গিয়েই আটকে যায়। আমাদের শেরপা পেম্বা বলল, অ্যাক্সিডেন্ট শুরু হো গিয়া, চলো ওয়াপাস চলতে হ্যায়। আমরা নামতে শুরু করলাম। কিছুটা নামবার পর একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে পাসাংকে বললাম, দেখ ওদের কিছু সাহায্য করতে পার কীনা। যদিও জানতাম হয়তো সম্ভব হবে না। সঙ্গে দড়ি নেই, কোন ইকুইপমেন্ট নেই। খানিকক্ষণ পর পাসাং ফিরে চলে এল। হাওয়াতে ওর সানগ্লাস উড়ে চলে গেছে, ও খানিক ভয় পেয়ে নেমে এসেছে। এদিকে প্রবল হাওয়াতে আমার সানগ্লাসের ওপর বরফ উড়ে এসে জমে কঠিন হয়ে যাচ্ছে, কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না। মেঘলা হয়ে আছে, রোদের তেজ নেই দেখে সানগ্লাস খুলেই হাঁটছি। কিন্তু প্রচণ্ড হাওয়ায় চোখে এফেক্ট করছে। ঝাপসা দেখতে দেখতে সন্ধের দিকে অন্ধ হয়ে গেলাম – আর দেখতে পাচ্ছি না। বসন্তদার হেডটর্চের আলোটা জোরালো ছিল। বসন্তদার সঙ্গে আলোটা বদলে নিলাম। দড়িটাকে এবার কেটে নিলাম। একটা দড়িতে আমি আর পেম্বা আর আরেকটা দড়িতে বসন্তদা আর পাসাং। আমার অক্সিজেন তখন শেষ হয়ে গেছে। অক্সিজেন সিলিন্ডার, স্যাক সব দড়িতে বেঁধে নামতে শুরু করলাম। কিন্তু চোখে না দেখতে পাওয়ায় আমি বুঝতেই পারিনি যে যেখানটায় আমরা আলাদা হলাম সেখানে বসন্তদা বসে গেছে। আমার মাথায় তখন একটাই ভাবনা যে ওই জাপানি মহিলার তাঁবুটা যেখানে ছিল, আমাদের তাঁবুর দুশো মিটার ওপরে, সেখানে পৌঁছাতে হবে। হাঁটছিতো হাঁটছি। তারপর কোন একসময় সেখানে পৌঁছালাম। পেম্বা বলল, দেবাশিসদা পৌঁছ গিয়া। তাঁবুতে ঢুকে অজ্ঞান হয়ে গেলাম। মনে হল যেন মারাই যাচ্ছি, চোখের সামনে নানান রঙ দেখছি। তাঁবুর ভেতরে কেউ আমাকে টেনে নিল, আমার মনে হল বোধহয় বসন্তদা। আসলে জাপানি মহিলার একজন শেরপা ছিল দাওয়া, সেই আমাকে টেনে নিয়েছিল। কেউ একটা গরম কোনো তরল আমাকে খাইয়ে দিল। প্রায় ঘন্টাদুয়েক ওভাবে আচ্ছন্ন অবস্থায় চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিলাম। তারপর আস্তে আস্তে চোখ খুললাম। তখন আবছা আবছা আলো দেখতে পাচ্ছি। তখন খেয়াল করলাম বসন্তদা নেই। পেম্বাকে জিজ্ঞাসা করলাম বসন্তদা কোথায়। বলল, বসন্তদাতো উপর রহ গিয়া, উসকো জিন্দা আনা মুসকিল হ্যায়।
পেম্বা এরমধ্যে ওয়াকিটকিতে আমাদের তাঁবুতে যোগাযোগ করেছিল। ওখানে তখন মলয় আর ওর সঙ্গে শেরপা দাওয়া ছিল। দাওয়াকে মলয়ের অক্সিজেন সিলিন্ডার আর একটু জল বানিয়ে ওপরে বসন্তদার কাছে যত সকালে সম্ভব পৌঁছাতে বলেছিল। পাসাং ততক্ষণে নেমে এসেছে, দাওয়া বসন্তদার কাছে পৌঁছে গেছে। ওখান থেকে ওয়াকিটকিতে জানিয়েছে, বসন্তদা মিলগয়া, ও ঠিক হ্যায়, লেকিন চল নেহি সকতা। আমি তখন বসন্তদার সঙ্গে কথা বললাম – তোমার বাড়িতে বৌদি আছে, ছেলে আছে, ওদের কথা ভাব, মনে জোর আনো, উঠে দাঁড়াও। বসন্তদা তখন একটাই কথা বলছে, আমাকে পিঠে করে নামাতে হবে। কিন্তু ষাট-পঁয়ষট্টি কেজির একজনকে পিঠে করে নামানো সম্ভব নয়। সেকথা বলতে বসন্তদা বলল, তুই তো নেমে গেছিস। বুঝতে পারছি আমি নেমে এসেছি, বসন্তদা পারছে না, এরকম মনে হতেই পারে। আমি অনেক করে বোঝালাম। দাওয়ার সঙ্গেও কথা বললাম যে আমরা যেভাবে নেমে এসেছি, সেভাবে নেমে এস। তারপর এক দেড়ঘন্টা হয়ে গেছে। তখনও কেউ ফিরছে না দেখে বার বার ফোন করছি কিন্তু কেউ ফোন ধরছে না। আমি আর পেম্বা দুজনেই তখন মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গেছি যে নিশ্চয় বসন্তদাকে পিঠে করে আনতে গিয়ে দাওয়া পা স্লিপ করে দুজনেই পড়ে গেছে। তখন আমার মন পুরোপুরি ভেঙ্গে গেছে – একসঙ্গে এলাম, বসন্তদাকে নিয়ে ফিরে যেতে পারব না। চোখে জল চলে এসেছে। তখনও আর কেউই ফেরেনি, সেটাও খুব খারাপ লাগছে। বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ বসে থাকতে থাকতে ঝিমুনির মত হয়েছিল, পেম্বা ডেকে বলল, দেবাশিসদা, বসন্তদা আ গয়া। তাকিয়ে দেখি দাওয়া ঠেলে বসন্তদাকে টেন্টে ঢোকাচ্ছে। তখন আমি দাওয়াকে এই মারিতো সেই মারি – তুমি ওয়াকিটকি ধরছনা। দাওয়া বলল বসন্তদাকে প্রায় পিঠে করে এনেছে তাই ফোন ধরার অবস্থাই ছিল না।
এরপর বসন্তদা সেরিব্রাল ইডিমার মত একটা অবস্থায় চলে গেল – ভুল বকছে, ঠিকমত চিনতে পারছে না, রাগ করছে, যা খুশি বলে যাচ্ছে। পরদিন শেরপাদের বললাম, তোমরা যেভাবে হোক বেঁধে বসন্তদাকে নামাও, আমি নীচে চলে যাচ্ছি। আমি থাকলে বসন্তদা কথা শুনবে না। মিনিট পনেরোয় আমি দুশো মিটার নীচে তাঁবুতে নেমে গেলাম। বসন্তদাকে ওই দুশো মিটার নামাতে প্রায় দেড়-দুঘন্টা লাগল। ধাক্কা খেতে খেতে নামায় খুব আহতও হল, হাঁটুর মাংস ছিঁড়ে গেল। আমার মনে হল যে এভাবে নামাতে গেলেতো পথেই মারা যাবে। শেরপাদের বললাম যে যত ম্যাট্রেস আছে, সব দিয়ে পেঁচিয়ে বাঁধ। যখন প্রায় বাঁধা শেষ তখন দেখি একটা হেলিকপ্টার আসছে। নীচে একটা হুক ঝুলছে। ওরা এসেছিল ওই স্প্যানিশ লোকটির খোঁজে। কিন্তু হুক ঝুলছে দেখে আমরা বসন্তদাকে আটকে দিলাম। ওরা প্রথমে বেসক্যাম্পে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বসন্তদার হিল ডায়ারিয়া হয়ে গিয়েছিল। তাই আর রিস্ক না নিয়ে সোজা কাঠমান্ডুতে নামিয়ে নিয়ে আসে।
সত্যি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম - বসন্তদাকে বাঁচাতে পারব।
এরপর ক্যাম্প থ্রি গুটিয়ে প্রায় দেড়টা নাগাদ নামতে শুরু করলাম। বেলা প্রায় সাড়ে চারটে নাগাদ ক্যাম্প টুতে পৌঁছে গেলাম।
২৮ মে, মঙ্গলবার – কলকাতায় পৌঁছে ডায়েরির শেষ পাতাটা লিখতে বসেছি। ২৬ তারিখে সকালেই বেরিয়ে ঘন্টাখানেকের মধ্যেই এক নম্বর ক্যাম্পে পৌঁছে গেলাম। চা-বিস্কুট খেয়ে আবার নীচে নামা। আইগারের কাছের সেই লম্বা বরফের ময়দান থেকে হেলিকপ্টার আমাদের তুলে নিয়ে বেসক্যাম্পে নামিয়ে দিল। ফিরে আসতে পারলনা সেই জাপানি মহিলা কোনো, স্পেনীয় গারা আর জাপানি মহিলার অন্য শেরপা দাওয়া। মনখারাপ নিয়েই পরেরদিন হেলিকপ্টারে নেমে এলাম পোখরা পর্যন্ত। সেখান থেকে প্লেনে কাঠমাণ্ডু। কাঠমাণ্ডু থেকে কলকাতা।
অবশেষে একটা অসমাপ্ত আরোহণের সমাপ্তি হল।

~ ধৌলাগিরি পর্বতাভিযানের আরো ছবি ~

ইনকাম ট্যাক্স অফিসার দেবাশিসের ভালোলাগা-ভালোবাসার সবটুকুই পাহাড়কে ঘিরে। ১৯৯৭ থেকে তাঁর পাহাড়চূড়ার অভিযান শুরু হয়েছিল। মাউন্ট কামেট, শিব, শিবলিঙ্গ, পানওয়ালিদর, রুবাল কাং – এই পাঁচ শিখর ছোঁয়ার পর বসন্ত সিংহ রায়ের সঙ্গে যৌথভাবে প্রথম অসামরিক বাঙালি পর্বতারোহী হিসেবে ২০১০ সালে এভারেস্টের শিখর আরোহণ। এরপর ২০১১-য় প্রথম অসামরিক ভারতীয় পর্বতারোহী হিসেবে বসন্ত সিংহ রায়ের সঙ্গে যৌথভাবে কাঞ্চনজঙ্ঘার শিখর ছোঁয়া। এরপর ২০১২-য় মাউন্ট অন্নপূর্ণা জয়।

 

SocialTwist Tell-a-Friend

To view this site correctly, please click here to download the Bangla Font and copy it to your c:\windows\Fonts directory.

For any queries/complaints, please contact admin@amaderchhuti.com
Best viewed in FF or IE at a resolution of 1024x768 or higher