বেড়ানোর ভাল লাগার মুহূর্তগুলো সকলের সঙ্গে ভাগ করে নিতে ইচ্ছে করে, অথচ দীর্ঘ ভ্রমণ কাহিনি লেখার সময় নেই? বেড়িয়ে এসে আপনার অভিজ্ঞতাগুলো যেমনভাবে গল্প করে বলেন কাছের মানুষদের - ঠিক তেমনি করেই সেই কথাগুলো ছোট্ট করে লিখে পাঠিয়ে দিন ছুটির আড্ডায়। লেখা পাঠানোর জন্য দেখুন এখানে। লেখা পাঠাতে কোনরকম অসুবিধা হলে ই-মেল করুন - admin@amaderchhuti.com

 

লেপচাজগতে

উদয়ন লাহিড়ি

~ লেপচাজগতের আরও ছবি ~

মানুষগুলো আমাদের হিসেবে বড্ড বেমানান। জানা নেই শোনা নেই অথচ দেখ, কথা বলছে যেন কবে থেকে আমাদের চেনে! এ আবার কী রকম রে বাবা! আমরা কলকাতায় থাকি তো। আমাদের চোখে এরা অদ্ভুত। কিন্তু এই করতে করতে আমরা কখন যে এই তামাং ছোট্ট পরিবারটার সঙ্গে মিশে গেছি বুঝতেই পারিনি!
মাত্র ১৯ কিলোমিটার দার্জিলিং থেকে। লেপচাজগত। ছোট্ট একটা জনপদ। চারদিকে রেন ফরেস্ট। সঙ্গী ঘন কুয়াশা আর স্তব্ধতার শব্দ। নিঃসঙ্গ পাখির ডাকে স্তব্ধতার মাত্রা আরও বেশি।

সাকুল্লে শ'খানেক মানুষ থাকে বলে মনে হয়। সবচেয়ে কাছের বাজার সুখিয়াপোখরি। কোনো মেডিকাল সাহায্য দরকার হলেও ওই সুখিয়াপোখরি না হলে ঘুম। জঙ্গলে শুনলাম লেপার্ড আছে, কখনও পোষা কুকুর তুলে নিয়ে যায় গ্রাম থেকে। আর আছে সজারু, হরিণ আর সালামান্ডারের মতো বিরল প্রজাতি।
সহজ পায়ে চলা পথে ভিউ পয়েন্ট। আবার কঠিন রাস্তা অতিক্রম করে যাওয়া যায় ঘুম রক। তার থেকেও খারাপ রাস্তা ধরে আরও আধঘন্টায় হাওয়াঘর বলে একটা পুরানা হাভেলি। ঘুম রক আর হাওয়াঘর যাওয়া বেশ শক্ত। জঙ্গলের রাস্তা। সারাক্ষণ জল পড়ে পিছল। তার ওপর জোঁক। সোনায় সোহাগা। এত ঘন কুয়াসা কিছুই দেখা যায়না। রাত্তিরে দেখলাম ঘন কুয়াসার জল বিন্দুতে গাড়ির হেড লাইট ঠিকরে যেন অরোরা বোরিয়ালিস-এর সৃস্টি হচ্ছে। আমরা তার ছবি তোলার আপ্রাণ চেষ্টা করে কিছুতেই পারছিলাম না। তাই দেখে অনিল তামাং একটা টর্চ নিয়ে ওই এফেক্ট তৈরি করতে চলে গেল দূরে যাতে আমরা ছবি তুলতে পারি। ভাবুন ব্যপারখানা!

একদিন আমরা কয়েকজন অনেক রাতে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করছি। এদিকে ওরা খুঁজতে বেরিয়ে পড়েছে টর্চ হাতে। দেখা হলে সাবধান করে বলল, লেপার্ড আছে। একটাই তো প্রাণ, এত সাহস ভালো না। আরও বলল যে একটাও কুকুর নেই এখানে, সব লেপার্ডে তুলে নিয়ে গেছে। অগত্যা গুটিগুটি পায়ে বাধ্য ছেলের মত ঘরে গিয়ে ঢুকলাম। এদিকে অনিল আমাদের সজারু দেখাবেই। সেই সজারুটা যেটাকে ও পা দিয়ে ঠেলতে গোল বলের মত হয়ে গড়িয়ে জঙ্গলে চলে গেছিল।
দুপুরে খাওয়া হয়েছে। হঠাৎ মনে হল দার্জিলিং-এর এত কাছে আছি। একবার যাব না? নিদেনপক্ষে বাতাসিয়া লুপ। লোকাল গাড়িতে চলে এলাম ঘুম। এখান থেকে হেঁটে বা গাড়িতে বাতাসিয়া লুপ। মনে হল কিলোমিটার দুয়েক হবে। গাড়ি করে বাতাসিয়া পৌঁছে ফেরার পথে হাঁটা। পথে ঘুম মনাস্ট্রি। দেখি টয় ট্রেন আসছে। বাইরে থেকে দেখতে বেশি ভালো লাগে না চড়তে প্রশ্নটা মনেই রয়ে গেল। ঘুম মনাস্ট্রিতে দেখলাম প্রায় বারো- চোদ্দো ফিট উঁচু বুদ্ধ মূর্তি।

ফেরত এলাম আবার মেঘের রাজ্যে। রাতে বন ফায়ার আর গজলের আসর।
পরের দিন প্রথমেই এলাম জোড়পোখরি। মানে, জোড়া পুকুর। কিন্তু দেখতে পেলাম একটা! একটা বাসুকি সাপের মূর্তি পুকুরের মাঝখানে। মানুষের সাজানো। তবে যাবার রাস্তায় প্রকৃতি দেবীর ঘড়া যেন উপচে পড়েছে।
পৌঁছলাম সীমানা ভিউ পয়েন্ট। নেপাল দেখা যাচ্ছে। কিন্তু ভূমিকম্পে আহত মৃত মানুষগুলো দেখা যাচ্ছেনা। দেখা যাচ্ছেনা সেই শিশুগুলোকেও যাদের আদর করার আর কেউ নেই বা খাবার দেবার। কিছু টাকা নিয়ে গেছিলাম নেপালে গিয়ে দেব বলে। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখলাম সেরকম কোনো ব্যবস্থা নেই নেপাল সরকারের তরফ থেকে। অগত্যা অনলাইনে সেই টাকা জমা দিলাম। পশুপতি মার্কেট আছে এখানে আর আছে পশুপতি মন্দির। মার্কেট তিন কিলোমিটার। বর্ডার ক্রস করে আবার গাড়ি পাওয়া যায়।
মিরিকের আগে একটা চা বাগান পড়ে। দার্জিলিং চা চেখে দেখলাম। একদম হলুদ রঙ। নিস্তব্ধ চা বাগানে বেশ ঘুরছিলাম।
এরপর মিরিক ঘুরে এগিয়ে চললাম এন জে পির দিকে। গরমটা বাড়ছে। দূরে সমতল দেখা যাচ্ছে।

~ লেপচাজগতের আরও ছবি ~

 

ম্যাকনালি ভারত ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানিতে কর্মরত উদয়ন লাহিড়ি অবসর পেলেই ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন।

 

 

 

SocialTwist Tell-a-Friend

প্রকৃতির রঙ-তুলিতে আউলি

আশীষ গঙ্গোপাধ্যায়়

~ আউলির আরও ছবি ~

আমাদের এই যাত্রাকে শুধুমাত্র তীর্থযাত্রা বললে ভুল হবে। যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করেছিলাম উখি মঠ থেকে যোশীমঠ হয়ে আউলি পর্যন্ত তা এককথায় অনির্বচনীয়।
হরিদ্বার থেকে ঋষিকেশ হয়ে যাত্রা শুরু করে মাঝে উখি মঠে একদিন ও দু-রাত্তির থেকে, চোপতা দেওরিয়াতাল দেখে যোশীমঠের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম। এন.এইচ. আটান্ন ধরে ঋষিকেশ থেকে যোশীমঠ যাওয়ার পথে চারটি প্রয়াগ (দেবপ্রয়াগ, রুদ্রপ্রয়াগ, কর্ণপ্রয়াগ ও নন্দপ্রয়াগ) দর্শন করেছি। 'প্রয়াগ' শব্দের অর্থ, দুটি নদীর মিলনস্থল। কোথাও অলকানন্দা-ভাগীরথী, কোথাও অলকানন্দা-পিন্ডার, কোথাওবা অলকানন্দা-মন্দাকিনী। এইভাবে একটির পর একটি প্রয়াগ অতিক্রম করে যোশীমঠের দিকে এগিয়ে চলেছি আর ক্রমশঃ উন্মুক্ত হয়ে উঠছে হিমালয় পর্বতমালা। একপাশে সবুজ পাহাড়, অন্যপাশে গভীর খাদ। অনেক নীচে বয়ে চলেছে নদী। কোথাও কোথাও সঙ্কীর্ণ, পাহাড়ের ধ্বসে কিছু কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত, হঠাৎ হঠাৎ বাঁকের মধ্যে বিপদ সংকুল এই রাস্তা যেন সাপের মতো পাহাড়গুলোকে জড়িয়ে ধরে আছে।
এইরকম পাহাড়ি রাস্তায় একজন অভিজ্ঞ, দক্ষ ড্রাইভারের হাতে গাড়ির স্টিয়ারিং থাকলে নির্ভয়ে যাত্রাপথের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। আমাদের দুটি গাড়ির চালক সোনু আর নবীন অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে আউলি দর্শন করিয়ে আবার হরিদ্বারে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিল। এইরকম চালক সঙ্গী থাকলে গাইডের অভাবও দূর হয়ে যায়। একের পর এক পর্বত অতিক্রম করে, সর্পিল পাহাড়ি পথ ধরে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও আতঙ্কজনিত উত্তেজনার মধ্য দিয়ে আমরা যোশীমঠের দিকে এগিয়ে চললাম। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের মধ্য দিয়ে যেতে যেতে সব ভয় দূর হয়ে গেল।
সন্ধ্যে হয় হয়, তখনও যোশীমঠ থেকে পাঁচ-ছয় কি.মি. দূরে। শুরু হল ঝিরঝির করে বৃষ্টি। ইন্টারনেটে আগেই দেখেছিলাম - বৃষ্টির পূর্বাভাস। যোশীমঠে জি.এম.ভি.এন-এর হোটেলে পৌঁছাতে পৌঁছাতে, ঝমঝম করে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। হোটেল কর্তৃপক্ষের কাছে জানা গেল যোশীমঠ থেকে আউলি পর্যন্ত যাওয়ার রোপওয়ে বন্ধ আছে - মেরামতি কাজের জন্য। সড়কপথে গাড়িতে ত্রিশ কি.মি. রাস্তা আউলি পর্যন্ত।

নৈশাহার সেরে শুতে যাচ্ছি, তখনও সমানে বৃষ্টি পড়ে চলেছে। জানিনা, আমাদের আউলি দর্শন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা! বৃষ্টির শব্দ শুনতে শুনতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানিনা, ঘুম ভাঙল হাঁকাহাঁকি-ডাকাডাকির আওয়াজে। তাড়াতাড়ি বাইরে এসে হোটেলের লবিতে দাঁড়িয়ে সামনে যা দেখলাম, নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারলাম না। পরিস্কার নীল আকাশ, চারদিক ঝলমল করছে সূর্যের আলোয়। পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে জমে আছে বরফ। রাত্রে বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পর শুরু হয়েছিল তুষারপাত — আর তারই ফল এই অপরূপ দৃশ্য। প্রাতরাশ সেরে আউলির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। রাস্তার দু-পাশে বরফ, তার মধ্যে হলুদ, বেগুনী, কমলা রঙের নাম না-জানা ফুলের বাহার। ক্রমশঃ আউলির কাছাকাছি আসতে চোখে পড়ল বরফ আর বরফ, চারদিকে শুধুই বরফ। রোপওয়ে স্টেশনে পৌঁছে দেখলাম, বরফে ঢেকে আছে — দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ি, বাড়ির ছাদ, রাস্তা — সব কিছু। গাড়ি থেকে নেমে বরফের ওপর হাঁটার জন্য বিশেষ ধরনের জুতো পড়ে, সিঁড়ি ভেঙে অনেকটা উঠে, মূল রোপওয়ে স্টেশনে পৌঁছালাম। রোপওয়েতে পাঁচ-সাত মিনিট লাগে আউলি উপত্যকায় পৌঁছোতে।

উপত্যকায় নেমে যা দেখলাম, সম্মোহিত হয়ে গেলাম। বরফের পুরু চাদরে ঢেকে আছে সমগ্র উপত্যকা। পশ্চিম থেকে পূর্ব পর্যন্ত বিস্তৃত হিমালয়ের গিরিশৃঙ্গগুলি ঘিরে রেখেছে — এই আউলি উপত্যকাকে। তার মধ্যে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে নন্দাদেবী। সম্মুখে উন্মুক্ত প্রসারিত এক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সামনে মুগ্ধ বিষ্ময়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। প্রকৃতির রঙ-তুলিতে আঁকা সম্পূর্ণ এক প্রাকৃতিক চিত্র। সামনে দাঁড়িয়ে বিশাল ওই পর্বতমালা, কী অপরূপ তার শুভ্রতা। তার কাছে কত ক্ষুদ্র আমরা! ঋষি বঙ্কিমচন্দ্রকে উদ্ধৃত করে বলতে ইচ্ছে করল — 'আহা! কী দেখিলাম! জন্ম-জন্মান্তরেও ভুলিব না'।
স্কিয়িং — এক অন্যতম আকর্ষণ, এই আউলিতে। আউলি গেছে অথচ স্কিয়িং করেনি — এমন পর্যটক বিরল। এই অপূর্ব সৌন্দর্য উপভোগ করে ফিরে চললাম যোশীমঠের দিকে। সূর্যের তাপে বরফ গলতে আরম্ভ করেছে, রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে পড়ছে। দেরি হলে ফেরা মুস্কিল হয়ে পড়বে।

~ আউলির আরও ছবি ~

 

শিক্ষকতা থেকে অবসরের পর আশীষ গঙ্গোপাধ্যায় মজে আছেন ব্যবসা এবং ভ্রমণে।

 

SocialTwist Tell-a-Friend

ভারতের মূল ভূখণ্ডের শেষবিন্দু

সোমদত্তা চক্রবর্তী

চাকরি সূত্রে আমার স্বামী কর্ণাটকের বেঙ্গালুরুতে থাকায় বিবাহ পরবর্তীকালে আমি সেখানকার নিত্যযাএী। সেই রকমই কোনও এক ছুটিতে বেঙ্গালুরুতে গিয়ে হঠাৎ আমার ভ্রমণ পিয়াসী মন ডানা মেলতে চাইল। বুক করে ফেললাম "দক্ষিণের কাশী" রামেশ্বরমে টি.টি.ডি.সি-র হোটেল তামিলনাডু। বেঙ্গালুরু থেকে চেন্নাই মাত্র সাত ঘন্টা পথ, গাড়িতে। বেঙ্গালুরুর স্বভাবোচিত ঠাণ্ডা আবহাওয়াকে সঙ্গী করে বাড়িয়ে দিলাম ইচ্ছার গতিবেগ। ড্রাইভার অ্যালেক্স আমাদের নিয়ে রওনা হল। "চায়ে পিয়োগে স্যার" – ডাকে আলগা ঘুমের চটক ভাঙল। বল্লাম – "পিলাইয়ে"। হাইওয়ের পাশে দক্ষিণী হোটেলে ইডলি সহযোগে ব্রেকফাস্ট সেরে আবার রওনা দিলাম – গন্তব্য চেন্নাই-এর এগমোর স্টেশন। পথে ওখানকার বিখ্যাত 'সারভানা ভবন'-এ রাতের খাবার খেয়ে নিলাম। রাত ন'টা চল্লিশে রামেশ্বরম এক্সপ্রেস ছাড়তেই আবার ঘুম।
পরদিন সকালে দশটা নাগাদ রেলগাড়ি বিখ্যাত 'পামবাম ব্রিজের' উপর দিয়ে - মোটামুটি সমুদ্রের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলল। একপাশে বিশাল উঁচু পামবাম ব্রিজ আর তার ঠিক নীচে নীল সমুদ্রের বুক চিরে এগিয়ে গেছে রেলপথ - অপূর্ব সে সৌন্দর্য। পৌঁছালাম রামেশ্বরম। রামেশ্বরম এমন একটা জাযগা, যাকে উইকিপিডিয়া সিটি বললেও আমাদের মতো অত্যাধুনিক নাগরিক জীবনে বড় হওয়া স্নব-রা গ্রামই বলবে। যাই হোক 'হোটেল তামিলনাডু' বেশ ভালো। সেখানে বুক করা স্যুইটে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে লাঞ্চ সেরে বেলা তিনটেয় টি.টি.ডি.সি. থেকে জিপে রওনা দিলাম গন্তব্য 'ধনুসকোডি'।

এটি ভারতের মানচিত্রে মূল ভূখণ্ডের শেষবিন্দু। ধনুসকোডি থেকেই নাকি রামচন্দ্র লঙ্কা যাওয়ার সেতুবন্ধন করেছিলেন। রাস্তার দু'ধারে সারি বেঁধে চলেছে স্কুল ফেরত ক্ষুদে পড়ুয়ারা। ধনুসকোডি থেকে বিকেল পাঁচটার মধ্যে ফিরে আসতেই হবে। দু'পাশে ব্যাকওয়াটার-এর বুক চিরে এগিয়ে গেছে পিচকালো সোজা রাস্তা। নাম না-জানা জিপ চালক ভাঙা রেললাইন দেখিয়ে বলল, এটি চেন্নাই-ধনুসকোডি রেলপথ, ১৯৬৪ সালের সুপার সাইক্লোন–এ জলের তলায় হারিয়ে গিয়েছিল। পনেরো কিমি রাস্তা আমাদের এনে দিল সোনালি বালুর ধনুসকোডি সৈকতে।

সেখান থেকে বিশেষ জিপে সাত কিমি বালুকাময় পথে পাড়ি দিলাম একদা জমজমাট জনপদ ধনুসকোডির দিকে। অদ্ভুত বালুকাময় পথ পেরিয়ে উপস্থিত হলাম সাইক্লোনের কোপে অধুনা ভূতুড়ে শহর ধনু্সকোডি। নেমেই নজর এল ভগ্নপ্রায় রেলস্টেশন, অদূরেই বিশাল জলের ট্যাঙ্ক। কিছুদূর এগিয়ে চোখে পড়ল একটি শিবমন্দির, সাইক্লোনের সময় জলের গভীরে চলে গিয়েছিল, আবার কালের নিয়মে জেগে উঠেছে। স্থানীয় লোকদের মতে এই জায়গাতেই রামচন্দ্র শিবের উপাসনা করেছিলেন। আরও কিছুটা এগিয়ে দেখলাম একটি চার্চ যার পাশেই ছিল শ্রীলঙ্কার জাফনা যাওয়ার জেটি। চার্চের পিছনে সরু একটি বালির রাস্তা, একপাশে শান্ত ব্যাকওয়াটার অন্য পাশে উত্তাল বঙ্গোপসাগর - শান্ত আর দুর্দান্তের অপূর্ব মিশেল। অদ্ভূত এক শিহরণ হল ভারতমাতার শেষ বিন্দুতে পা দিয়ে। চারদিকে ১৯৬৪ সালের সুপার সাইক্লোনের ধবংস্তূপ ইতিহাসে পড়া মহেঞ্জোদাড়ো-হরোপ্পার কথা মনে করিয়ে দিল।
চোখের দেখা শেষ হল একটাসময়ে, মন অবশ্য তারপরেও ঘুরে চলেছে সেইসব ধবংপ্রাপ্ত বাড়ি, পোস্ট অফিস, স্কুল, রেলস্টেশন, চার্চের আনাচে কানাচে। মুক্ত নীল আকাশের নীচে স্মৃতি, আর ইতিহাস হয়ে যাওয়া এত বড় প্রাকৃতিক ধবংসলীলা হৃদয়ে নিয়ে ফিরে আসছি - নাম না জানা সামুদ্রিক পাখির ডাকের সঙ্গে সঙ্গে পিছনে সরে যেতে থাকল উপমহাদেশের শেষ বিন্দু।


কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্যশাখার স্নাতক সোমদত্তা চক্রবর্তী কিছুকাল টেকনো ইন্ডিয়া কলেজে শিক্ষকতা করেছেন।  বর্তমানে কর্ম এবং বিবাহসূত্রে বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা। ভালোবাসেন বেড়াতে।

 

SocialTwist Tell-a-Friend

To view this site correctly, please click here to download the Bangla Font and copy it to your c:\windows\Fonts directory.

For any queries/complaints, please contact admin@amaderchhuti.com
Best viewed in FF or IE at a resolution of 1024x768 or higher