বেড়ানোর ভাল লাগার মুহূর্তগুলো সকলের সঙ্গে ভাগ করে নিতে ইচ্ছে করে, অথচ দীর্ঘ ভ্রমণ কাহিনি লেখার সময় নেই? বেড়িয়ে এসে আপনার অভিজ্ঞতাগুলো যেমনভাবে গল্প করে বলেন কাছের মানুষদের - ঠিক তেমনি করেই সেই কথাগুলো ছোট্ট করে লিখে পাঠিয়ে দিন ছুটির আড্ডায়। লেখা পাঠানোর জন্য দেখুন এখানে। লেখা পাঠাতে কোনরকম অসুবিধা হলে ই-মেল করুন - admin@amaderchhuti.com
ঈশ্বরের চিত্রপট তাকদায়
উদয়ন লাহিড়ি
~ তাকদা-র আরও ছবি ~
তিস্তা বাজারের রাস্তা ধরে পৌঁছালাম পেশক। পেশক থেকে তিনচুলে প্রায় দশ কিলোমিটার আর তাকদা তিন। তাকদা আসলে একটা ছোট পাহাড়ি শহর। উচ্চতা হাজার পাঁচেক ফিট। মেন রোড থেকে পাথরের খাড়া রাস্তা উঠে গেছে সাইনো হেরিটেজ বাংলোতে। শেষ অংশ ওই পাথরের রাস্তা দিয়ে হেঁটে উঠতে হবে। তবে সেটা একটুখানিই তাই রক্ষা। ঝকঝকে পরিষ্কার ঘন নীল আকাশ। মনটাও সেরকমই ভালো হয়ে গেল।
কিছুদিন আগেই লেপচাজগত ঘুরে এলাম টোটাল সাড়ে তিন হাজার টাকায়। এহেন আমি কিনা তাকদা এসেছি ইনোভাতে চড়ে! আসলে এবার ফ্যামিলি সঙ্গে আছে। সামনে একটা লন। সেখানে সাইনো পরিবারের দুটি পোষা সারমেয়। একটার নাম বেটা, আর একজন সিম্বা। আমাদের সঙ্গে বেশ আলাপ হয়ে গেল ওদের। আমরা যেখানে বসছি ওরাও সেখানেই বসে থাকছে। মাঝেমধ্যেই বিস্কুট খাচ্ছে। এই বাংলোটা ব্রিটিশ আমলে তৈরি। আন্তর্জাল তথ্য বলছে, ১৯১৫ সালে। সাইনোর বাসিন্দাদের মতে এটা তৈরি হয়েছিল ১৯০৮ সালে। সাইনো বাংলোর মালিক বর্তমানে মোকতান পরিবার। এনাদের আন্তরিকতার কথা ভোলা যায় না। আনন্দ মোকতান সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত। থাকেন কার্শিয়াঙে। কিছুদিন হল এটা চালু করেছেন। একটা নতুন ঘর করেছেন বাংলোর লাগোয়া। সেখানেই আমাদের ঠাঁই হল। পুরোনো বাংলোয় দুটো ঘর আর বাড়তি দুটো ঘর, এই চারটে ঘর ভাড়া দেন। বাংলোতে থাকেন আনন্দ মকানের বয়স্ক বাবা ও বৃদ্ধা মা। দুজনেই এখনও যথেষ্ট কর্মশীল। আর থাকেন আনন্দ মোকতানের বোন। স্থানীয় স্কুলের শিক্ষিকা। তাঁর স্বামী শ্রীযুক্ত প্রধান অতিথিদের দেখভাল করেন। ওঁদের ছোট্ট মেয়ে ভূমিশ্রী। এখানে খাবারও খুব ভালো। যত্ন নিয়ে খাওয়ানও বটে। কুক যুবরাজ আর সুরজকে বলতে বাধ্যই হয়েছিলাম যে আমাদের অর্ধেক পরিমাণ খাবার দিতে। খেয়ে শেষ করে উঠতে পারছিনা আর সেটা ফেলা যাচ্ছে। বড্ড খারাপ লাগে খাবার নষ্ট করতে।
সাইনো বাংলোর ঠিক ওপরেই তাকদা মনাস্ট্রি। বহু প্রাচীন গুম্ফা। অদ্ভুত লাগল যে বুদ্ধের মূর্তির সামনে রাম, হুইস্কি, ভ্যাট ৬৯ এই সবের বোতল রাখা। মানেটা বুঝলাম না। ছবি তোলা বারণ কারণ ওরা বিশ্বাস করে যে ছবি তুললে জীবনীশক্তি হ্রাস হয়। ফেলু মিত্তিরের গ্যাংটকে গণ্ডগোলেও তাই পড়েছিলাম। একসময় এই অঞ্চলটি ছিল ব্রিটিশ ক্যান্টনমেন্ট। তাবড় তাবড় মিলিটারি অফিসারেরা আসতেন এখানে। তাদের জন্য তৈরি হয়েছিল বড় বড়ো বিলাসবহুল ব্রিটিশ বাংলো। সেগুলির আজ হয় ভগ্নদশা, নাহয় স্কুল বা চার্চ হয়ে গেছে। মনাস্ট্রি দেখে চললাম এরকমই একটি বাড়ি রানিকুঠি দেখতে। রানিকুঠি বর্তমানে চার্চ। পরবর্তী গন্তব্য অর্কিড হাউসটা নাকি পৃথিবী বিখ্যাত ছিল। অনেক বিদেশি পর্যটক আসত এর টানে। তাকদা বাজার থেকে আধা কিলোমিটার দূরে। গোর্খা আন্দোলনের সময় ভেঙে দিয়েছিল। এখন আবার সুন্দর করে সাজানো হচ্ছে।
ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা নেমে এল। যখন ফিরলাম দেখলাম রাস্তায় অধিকাংশের নেশাতুর অবস্থা। একটু ভয়ও পাচ্ছিলাম। এদিকে বেশ ঠাণ্ডা লাগতে শুরু করেছে। চায়ের খুব দরকার।
সাইনো বাংলোতে আলো জ্বালানো হয়েছে। তাতে আরও অভিজাত রূপ নিয়েছে আমাদের আজকের রাতের ঠিকানা। ঠাণ্ডাটা চামড়া ভেদ করে এবার হাড়ে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। গজল চলছে – জগজিৎ সিং। সামনের লনটায় এসে বসলাম। নিরাবরণ আকাশে কত যে তারা! হাতের চা-টা হাতেই ধরা রইল। কোন নীহারিকায় চলে গেলাম কে জানে! আমি এখন জ্যোতির্বিদ। কালপুরুষ,সপ্তর্ষিমণ্ডল এসব যেন আমার কতদিনের চর্চা। বাকি অর্ধেক চাঁদটি আজ খুব দরকার ছিল।
যুবরাজ খেতে ডাকছে। ভাবলাম, খেয়ে একটু গড়িয়ে নিয়ে আবার এসে বসব। খেয়ে দেয়ে বিছানায় লেপটা চাপা দেবার পর আর কিচ্ছু মনে নেই। ঘুমটা ভাঙল আঙ্কলের (আনন্দ মোকতানের বাবা) ডাকে। তখনও বাইরে অন্ধকার। কটা বাজে কে জানে! সূর্যোদয় দেখা যায় এখান থেকে। ঠিক পেছনেই টাইগার হিল। তবে অনেকটা ওপরে। বাঁ দিকে একটা পাহাড়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা অবরূদ্ধ। তাছাড়া বাকি সব টাইগার হিলের সমান। সূর্যোদয়ের বর্ণনা দেওয়া সাহসে কুলাল না। আটটার মধ্যে তৈরি হয়ে গেলাম। আশেপাশে ঘুরে দেখব। সারথি হিসেবে আজ পেলাম এনাসকে। নটার মধ্যে সুমো নিয়ে এসে গেল। প্রথমেই এলাম রংলি রংলিওট চা বাগান। এটার বিস্তার বিশাল। তাকদা মনাস্ট্রি থেকে কাল এটাকেই দেখেছিলাম। এরপর গিল চা বাগান। এটাও বেশ বড়। তারপরের রাস্তা আর বুঝতে পারলাম না। এনাস এক জায়গায় নিয়ে এল। এখান থেকে পাথুরে রাস্তায় খানিক নীচে নেমে হ্যাঙ্গিং ব্রীজ। ইস্পাতের দড়ির ওপর ঝুলছে। নীচে কাঠের বাটাম। দুলছে পুলটা। দুই মেয়েকে চেপে ধরে আস্তে পেরোলাম। পুলের মাঝখানে দুই দিকের দৃশ্যপট অসাধারণ। এটাও নাকি ব্রিটিশদের তৈরি। তবে বুঝলাম যত্নের অভাবে আর কালের প্রভাবে আর বোধহয় বেশিদিন আয়ু নেই।
এরপর আমরা যাব তিস্তা ভ্যালি চা বাগান। পিচ রাস্তা দিয়ে খানিক যেতে যেতে গাড়ির চাকা বাঁ দিকে ঘুরতেই শুরু হল সবুজের গালিচা। দুই দিকে চা বাগান। আকাশ নীল - নীলের সঙ্গে হলুদের মিশ্রণ। সে ভারি অদ্ভুত রঙ। তেমন রঙের দেখা কচিৎ কখনও পাওয়া যায়। আকাশ যে এতো নীল হয় তা যেন আগে আমার ধারনাই ছিলনা। দুদিকে চা বাগানের মাঝখান দিয়ে চলেছি। আমি এখন ধনরাজ তামাং। মাথায় হাত চলে গেল, তিন কোনা টুপিটা সোজা করব বলে। খেয়াল হল তামাং-এর টুপিটা তো নেই। কোথায় যেন খুব খারাপ লাগল। মনে হল আমি এখানকার কেউ নই। সাময়িক বাসিন্দা মাত্র। এই স্থান আমার নয়। যাকগে, তবুও এই কটা দিনের জন্য তো আমার। সেটাই চুটিয়ে উপভোগ করিনা কেন। পরকে আপন করাটাও তো ভ্রমণের উদ্দেশ্য। এই সব ভাবতে ভাবতেই বুঝলাম রাস্তা বেশ ক্ষীণকায় আর পাথুরে। বেশ খানিকটা চলার পর এনাস এক জায়গায় গাড়ি দাঁড় করাল। পাহাড়ের দুই ঢালে গালিচা। ওপরে ঘন নীল। মাঝখান দিয়ে হলুদ পথ চলে গেছে কোনো এক ভিউ পয়েন্টের দিকে। গাড়ি থেকে নেমে সেদিকেই পা বাড়ালাম। পেছন থেকে এনাসের কন্ঠধ্বনি ভেসে এল "বহুত বড়িয়া ভিউ।"
ভিউ পয়েন্টটা চারটে সিঁড়ির ওপরে। ওপরে উঠে সত্যি হতবাক হয়ে গেলাম। পর্বতবহুল এক দৃশ্যপটে মাঝে মাঝে বেশ কয়েকটি নদী এঁকেবেঁকে চলেছে। নীল পর্বতের মাঝে সবুজবর্ণ জলধি। জলরঙে বড় কোনও পেন্টিং। ঈশ্বরের চিত্রপট। এই সময়েও ঘড়ির কাঁটা থামার কোনো লক্ষণই নেই। অগত্যা ফিরে চললাম। গাড়িতে উঠেও বসলাম। মন কিন্তু ভরল না। ইচ্ছা করছে এইখানে বসেই কাটিয়ে দিই সারাটা জীবন।
গাড়িটা এগিয়ে চলেছে বড়া মাঙ্গোয়ার দিকে। প্রথমে পড়বে ছোটা মাঙ্গোয়া। তারপর বড়া মাঙ্গোয়া। খুব ধীর গতিতে চলেছি আমরা। কারণ রাস্তার চামড়া তো খসে গেছেই, হাড়গোড়গুলোও আর কিছু নেই। এহেন হাড়-জিরজিরে রাস্তা দিয়ে প্রায় দশ কিলোমিটার পেরিয়ে বড়া মাঙ্গোয়া অরগানিক বাগান। ঢুকতে ত্রিশ টাকা লাগবে প্রতি জন। অসংখ্য গাছ চিনলাম। নামগুলো জানতাম কিন্তু কীরকম দেখতে তা জানতাম না। ফার্ন, রুদ্রাক্ষ, তেজপাতা, দারচিনি, কমলালেবু, গন্ধলেবু, পেয়ারা। ভেতরে দুটো মেডিটেশন সেন্টারও আছে। ওদের একটা দোকানও আছে। সেখানে অরেঞ্জ স্কোয়াশ, ভিনেগার, অরেঞ্জ পীল পাউডার এইসব কমদামে পাওয়া যায়।
এবার ফেরার পালা। এ পথে তিনচুলের গুম্বাদাঁড়া ভিউ পয়েন্টে আর দাঁড়ালাম না। খিদে পেয়েছে প্রচণ্ড। বিকেলের দিকে আকাশে মেঘের আনাগোনা। মোকতান পরিবারের কাছে শুনলাম ওঁরা এখান থেকে একটা ট্রেকের ব্যবস্থাও করেন। ডে-হাইকিং বলা যেতে পারে। ছয় কিলোমিটার জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে লামাহাটা, আবার ফিরে আসা।
অদ্য এই বাংলোতে শেষ রজনী। দুটো দিনেই যে পিছুটান তৈরি হয় এই প্রথম জানলাম।
~ তাকদা-র আরও ছবি ~
ম্যাকনালি ভারত ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানিতে কর্মরত উদয়ন লাহিড়ি অবসর পেলেই ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন।
পূবারের সোনালি তটে
অনুভব ঘোষ
~ কেরালার আরও ছবি ~
অন্যরকম কোথাও যাওয়ার ইচ্ছা ছিল দুজনেরই। আর ভারতবর্ষের মতো বিশাল দেশে নির্জন ভ্রমণ ঠিকানা খুঁজে পাওয়া খুব কঠিনও নয়। ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাস। ঠাণ্ডার আমেজ গায়ে মেখে মধুচন্দ্রিমা যাপনে বেরিয়ে পড়েছিলাম। গন্তব্য কেরালার বিখ্যাত ব্যাকওয়াটার। তার সঙ্গে জুড়ে নিয়েছিলাম অচেনা, নির্জন পূবার। কোভালাম সৈকতের খানিক দূরে তিরুভনন্তপুরমের কাছে মনোরম সৌন্দর্যের পূবার (Poovar)। সবুজ স্থলভূমি, নারকেল গাছের সারি, ব্যাকওয়াটার ভ্রমণ, আরবসাগরের ঢেউ সবই আছে পূবারে। কেরালা বেড়ানোর আদর্শ সময়ও ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি।
ভ্রমণের দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ ২৪ জানুয়ারি সকাল সাতটা নাগাদ লাইট হাউস বিচ ধরে হেঁটে গিয়ে হাওয়া বিচের কাছ থেকে অটো নিলাম পূবার যাওয়ার জন্য। দরাদরি করে রফা হলো চারশো টাকায় পূবার ঘুরিয়ে আবার বিচে ফিরিয়ে আনবে। দূরত্ব বিশ কিমির মধ্যে, মিনিট পঁয়তাল্লিশ-পঞ্চাশ সময় লাগল। আটটা নাগাদ অটো এসে দাঁড় করালো সবুজে মোড়া একটা জায়গায়, সামনে বড় ঝিল মতন আর একটা রেস্টুরেন্ট। একজন লোক এসে কথা বলে গেল ব্যাকওয়াটারে ঘোরার বিভিন্ন প্যাকেজ নিয়ে। সবচেয়ে কম তিন হাজার টাকায় এক ঘণ্টা পূবার ব্যাকওয়াটারে ও বিচে ঘোরা, সেটাতেই রাজি হলাম।
একটি ছোট মোটর বোটে আমরা দুজনে আর চালক, সে-ই গাইড। আমাদের ভাগ্য ভালো থাকায় নেপালি চালক পেয়েছিলাম, তাই হিন্দি কথা বুঝতে ও বলতে সুবিধা হয়েছিল। মোটরবোট সবুজ গাছে ভরা ঝিল থেকে সরু সরু আঁকা বাঁকা গলিপথে ঢুকে পড়ল। ঠিক বড় রাস্তার পাশে সরু গলির মতো। তবে পার্থক্য অনেক, দুপাশে বাড়ির বদলে সারি সারি গাছ যার মধ্যে বেশিরভাগই নারকেল। কোলাহলমুক্ত, শান্ত-স্থির জায়গা। যেখানে নিস্তব্ধতা ভঙ্গ হয় শুধুমাত্র পাখির ডাকে। মোটর বোটও খুব ধীরে চলে ঢুকে পড়ল আরও একটু ভিতরে, এখন আর শুধু দুপাশ নয় মাথার ওপরও গাছের ছায়ায়। যেন অন্ধকার দিয়ে চলেছি। গাঢ় সবুজ রঙ এখানে কালো অন্ধকারে পরিণত হয়েছে। গাছের ফাঁক দিয়ে আসা সূর্যের রশ্মি যেন আমাদের ছুঁয়ে দেখছে। সেই গাঢ় অন্ধকার গাছে ঘেরা জায়গা থেকে দূরে দেখা যাচ্ছে আলো। যেন আমরা পাথরের বদলে গাছের গুহা থেকে আলোর দিশা দেখে বেরিয়ে আসছি। আমাদের বোটের ডানপাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি নৌকায় ডাব বিক্রি চলছে। সে যেন একটা রঙিন ক্যানভাস ফুটে উঠেছে। মুগ্ধতা ধরে রাখতে কেবলই ছবি তুলে যাচ্ছিলাম।
ধীরে ধীরে সেই সজীব প্রাকৃতিক সবুজ গুহা থেকে বোট বেরিয়ে এসে উপস্থিত হলো বেশ উন্মুক্ত স্থানে। যার বাঁদিক এবং সামনেটা নারকেল গাছের সারিতে ভরা আর ডানদিকে খোলা মাঠ মতন। সেই নারকেল গাছের সামনেই একজন আবার জালে করে মাছ ধরছে আর একটি সারস তার শিকারের অপেক্ষায়। এরপর বোট একটু দ্রুত গতিতে চলতে শুরু করল। বাঁদিকে একটা বাঁক নিতেই চমক দেওয়ার মতো দৃশ্য। সামনেই খোলা বিস্তৃত শান্ত জলরাশির দুপাশেই নারকেল গাছের সারি, জানা-অজানা পাখির ভীড়। এরমধ্যে পানকৌড়ি আর সারসের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। একটু দূরেই গাঢ় নীল জলরাশি আছড়ে পড়ছে কেরালার একমাত্র স্বর্ণাভ বালুকাময় সমুদ্রতীরে (Golden Sands Beach)। বাঁদিকে নারকেল গাছের সারি আর ব্যাকওয়াটারের মধ্যে রয়েছে পূবার আইল্যান্ড রিসর্ট। কটেজগুলি ভীষণ সুন্দর দেখতে এবং তারা ওই ব্যাকওয়াটারেই ভাসমান। আরো কিছু ভাসমান রেস্টু্রেন্টও আছে যেখানে খাওয়া-দাওয়া করা যেতে পারে, আমাদের হাতে সময় কম থাকায় সে সৌভাগ্য হয়নি। এই ব্যাকওয়াটার আর সমুদ্রের মাঝে বাঁধ হিসেবে রয়েছে স্বর্ণাভ সমুদ্রতীর।
চড়ায় বোট থেকে নেমে আমরা পূবার বিচে হাঁটতে শুরু করলাম সমুদ্র অভিমুখে। এখানে সমুদ্র গাঢ় নীল। ঢেউয়ের উচ্চতা অনেক বেশি কোভালামের চেয়েও। সেই বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ে সাদা ফেনার মতো হয়ে ছিটকে পড়ছে সমুদ্রতীরে। এই জায়গা যে সার্ফিং-এর জন্য আর্দশ কয়েকজনকে তা করতে দেখেই বোঝা গেল। বেশ দূরে কোনও শ্যুটিং চলছিল। সত্যিই অসম্ভব সুন্দর পরিবেশ। সামনে নীল আরবসাগর, পায়ের তলায় স্বর্ণাভ বালুরাশি, পিছনে ঘন সবুজে মোড়া পূবার ব্যাকওয়াটার।
সময় না থাকায় মনের আর হাতের ক্যামেরায় অনেক ফ্রেম বন্দি করে উঠে পড়লাম বোটে। আরও একটু ব্যাকওয়াটারে ঘুরে ফেরত চলে এলাম। ফেলে এলাম প্রকৃতির আঁকা ক্যানভাস। স্মৃতিতে রেখে দিলাম সেই ক্যানভাসে আঁকা ছবিগুলি। মনে মনে বললাম, পূবার, আবার আসব।
~ কেরালার আরও ছবি ~
তথ্য-প্রযুক্তি কোম্পানিতে কর্মরত অনুভব ঘোষের শখ ফটোগ্রাফি এবং ভ্রমণ। অবসর সময়ে ভ্রমণ ও সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে লেখালেখি করেন। তবে এই প্রথম কোনও পত্রিকায় লেখা পাঠানো।