মায়াবী মেনমেচো
সুপর্ণা রায় চৌধুরী
ছোটবেলা থেকেই রাত আমার ভীষণ প্রিয়। অনুভূতির গভীরে রাতের আকুল ডাক যেন এক মায়া, বা গভীর থেকে গভীরতর অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া সবটাই আমার কাছে অপূর্ব। আর সেই রাত যদি হয় কোনও এক পাহাড়ের কোলে, তবে তার সেই রূপের বর্ণনা ভাষায় প্রকাশ করা খুবই কঠিন কাজ। এমনই এক মায়াবী রাত আর তার পরের এক আশ্চর্য ভোরের কথা আজ লিখতে বসেছি যা আমার কাছে আমৃত্যু মনে রেখে দেওয়ার এক অভিজ্ঞতা।
জুলুক বেড়াতে গিয়ে কর্তা আর আমি উঠেছিলাম ওরই এক বন্ধুর বাড়িতে। দাদা-ই ডাকি তাকে। রেশমপথে তাদের পাঁচপুরুষের ব্যবসা। সেই সৌভাগ্যে সেখানে জমি এবং বাড়ি। বাড়িতেই ছোট্ট হোমস্টে। জুলুক যখন পৌঁছলাম রাতের ঝকঝকে আকাশ তারায় ভরা। দারুণ ঠান্ডা হাওয়ায় হাতটা জমে আসছে। মিলিটারি ক্যাম্পের সামনে দাঁড়িয়ে পাহাড়গুলোকে দেখে মনে মনে পরের দিনের ভোরের অপেক্ষায় ঘরে ঢুকলাম। চন্দুভাই ততক্ষণে খাবার, বিছানা তৈরি করে এসে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল – "ওয়েলকাম।" বললাম, এসেছি কিন্তু সেই লেক মেনমেচোতে মায়াবী রাত দেখব বলে। হেসে বলল সকালে তৈরি থাকতে। দাদা যে কথা বোনকে দেয়, তা সব সময় রাখার চেষ্টা করে। হ্যাঁ, সে আমার বড় দাদাই বটে। কারণ মেনমেচো যাওয়া বড়ই কঠিন একটা কাজ।
সকাল শুরু হল ভজন শুনে। আর্মি ক্যাম্পের মন্দিরে ভজন চালিয়ে দেয় মাইকে, সারা জুলুকের মানুষের সেই ভজন শুনে ঘুম ভাঙে। কী যে সুন্দর লাগে সে সকাল! পাহাড়ের গা দিয়ে সূর্য তখনও পুরোপুরি ওঠেনি। শীতভেজা সকাল অপূর্ব। তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে রওনা দিলাম পুরনো রেশমপথ ধরে জুলুক থেকে আরও ওপরে ওঠার জন্য। চন্দুভাই-এর বাড়ির পিছন দিক থেকে দেখা যায় সাপের মতন পাহাড়কে পেঁচিয়ে রাস্তা ওপরে উঠে যাচ্ছে। সেই রাস্তা ধরেই গাড়ি যাচ্ছে। চন্দুভাই দেখিয়ে বলল, আমরা যাব ওই ওপরে। থাম্বি ভিউপয়েন্ট - যেখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা আর নিচের জিগজ্যাগ রোড পুরো পরিষ্কার দেখা যায়। জুলুক থেকে ওপরের দিকে তাকালে যেমন সুন্দর, আবার ওপর থেকে জুলুককে দেখতেও ততটাই সুন্দর। ভিউপয়েন্টে যখন পৌঁছলাম রোদ ঝলমলে আকাশ - চোখের সামনে কাঞ্চনজঙ্ঘা রেঞ্জ একদম পরিষ্কার - বরফের চাদর মুড়ে শুয়ে আছে। শিখরগুলো খুব ভাল করে চিনিয়ে চলেছে চন্দুভাই। আর আমি ছবি তুলতে তুলতে মনের আনন্দে বিভোর হয়ে উঠছি।
চন্দুভাই ডাক দিল গাড়িতে ওঠার জন্য। বলল, এবার যাব মেনমেচো। শুনেছি, অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে সেখানে পৌঁছাতে হয়। আর্মির পারমিশন পাওয়া খুব ঝামেলার। অবশ্য আমি আছি মজাতে – ওসব নিয়ে আমার কোনও টেনশন নেই – সব দায়িত্ব চন্দুভাই-এর। গাড়ি চালু হতেই চন্দুভাই বলল, সামনে আসছে নাথাং ভ্যালি। অপূর্ব সুন্দর এই ভ্যালিটাকেই দেখে কেমন যেন আনমনা মনে হল। সুন্দর রঙবেরঙের কাঠের বাড়ি, খেলার মাঠ, স্কুল, মন্দির, প্রাচীন গুম্ফা সবই আছে, কিন্তু কোথাও কোনও মানুষজন দেখতে পেলামনা, কেন জানি না। হতে পারে এখানে অক্সিজেন এত কম, তাই হয়ত লোকজন রাস্তায় কম চলাফেরা করে।
চন্দুভাইকে বললাম ফেরার সময় একরাত নাথাং ভ্যালিতে থেকে তারপর যাব। ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিল বাবা মন্দিরের উদ্দেশ্যে। আর্মিদের ক্যাম্পের পাশ দিয়ে নাথাং ভ্যালিকে পিছনে ফেলে গাড়ি এগিয়ে চলল কুপুপ লেকের দিকে। কুপুপ লেকের কাছে যেতে দেয় না, পুরোটাই আর্মিদের দখলে। রাস্তার ওপর থেকে লেক দেখে মনে হয় অনেকটা হাতির মতন - তাই এলিফ্যান্ট লেকও বলে। দূর থেকেই দেখা আর প্রচুর ছবি তোলা হল।
নাথাং ভ্যালি দেখে যাওয়া হল বাবা মন্দিরে। এই অঞ্চলে আসল ভগবান বলতে ওরা এই হরভজন সিং বাবাজিকেই মানে। সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, সবাই বাবাজিকে বিশ্বাস করেন এবং অসীম শ্রদ্ধার সঙ্গে তার পুজোও করে প্রতিদিন। ১৯৪৬ সালে পাঞ্জাবের একটা ছোট্ট গ্রামে হরভজন সিং-এর জন্ম। ১৯৬৬ সালে আর্মিতে যোগদান করেন। ১৯৬৮ সালে সিকিম তথা উত্তরবঙ্গ বন্যার কবলে পড়ে। সেইসময় আর্মির উদ্ধারকাজে হরভজন সিং তাঁর পারদর্শিতা দেখান। সেই বন্যারই এক রাতে এক বাঙ্কার থেকে আর এক বাঙ্কারে যাওয়ার সময় প্রবল বৃষ্টি আর ঝড়ে একটি পাহাড়ি নদীতে তিনি পড়ে গিয়ে ভেসে যান। কোনওভাবেই বাঁচানো যায় নি। সেইসময় তাঁর দেহও উদ্ধার করা যায় নি। শোনা যায় যে, কিছুদিন পরে তাঁরই সঙ্গে একই বাঙ্কারে থাকা এক বন্ধু স্বপ্নে দেখেন হরভজন সিং বলে দিচ্ছেন তাঁর দেহ কোথায় আছে। সেই অনুযায়ী সেনাবাহিনী থেকে গিয়ে দেহ উদ্ধার করা হয় এবং আদি বাবা মন্দিরে সমাধিস্থ করা হয়। তারপর থেকেই এই রাস্তায় বাবাজি অতন্দ্র প্রহরী। কোনও বিপদের আশঙ্কা থাকলে বা বিপদ আসন্ন এমন সময় দেখা দিয়ে বলে যান। যারা ওই রাস্তায় গাড়ি, ট্রাক, বাইক ইত্যাদি চালান তাঁরা ভগবান রূপে পূজা করেন। এমন কী চায়না বর্ডারের সেনারাও নাকি বলেছেন তাঁরা এক ছায়ামানুষকে দেখতে পান প্রহরীর বেশে বর্ডাররক্ষা করতে। গল্পটা শুনে গাটা আমারও শিউরে উঠেছিল। আসলে মানুষই তো ভগবান। আমরা শুধু শুধুই মন্দির, মসজিদ, গির্জায় ছুটি। স্বার্থ, হিংসা ত্যাগ করে যদি মানুষকে ভালবাসা যায়, তবে ঈশ্বর তোমার সঙ্গেই বিরাজমান। এখন নতুন বাবা মন্দিরও হয়েছে হরভজন সিং-এর। নতুন বাবা মন্দিরের ঠিক পাশ দিয়ে যে রাস্তাটি পাহাড়ের গা বেয়ে আবার নীচে নেমে গেছে সেটাই মেনমেচো। মেনমেচো যখন পৌঁছলাম তখন মধ্যাহ্ন। সূর্য অনেকটা মাথার ওপরে। তাই লেকের জল কিছুটা যেন কম রঙিন। এমনিতে বলা হয় মেনমেচো লেকের রঙ প্রতি মিনিটে বদলায়।
কুপুপ দেখে যখন ইন্দো-চায়না বর্ডার অঞ্চলে ছিলাম, গাড়িতে কয়েকজন কর্মরত সিকিম পুলিশ উঠে এসেছিলেন। চন্দুভাই-এর সঙ্গে নেপালিতে কী কথা বলছিলেন তাঁরা, প্রথমে বুঝতে পারিনি। পরে হিন্দিতে ওঁরাই আমাদের বুঝিয়ে বললেন যে, সঙ্গে সিকিম পুলিশ না গেলে সেনাবাহিনী থেকে পারমিট দেবেনা মেনমেচো ঢোকার জন্য। প্রায় সাত কিলোমিটার রাস্তা আগে পায়ে হেঁটে নামতে হত। এখন গাড়িতেই নামা-ওঠা করা যায়। যাই হোক, আমি তো মেনমেচো প্রথম দেখে আনন্দে বিভোর হয়ে গিয়েছিলাম। ক্যামেরায় ছবি তুলব কী, এরকম জায়গা থাকতে পারে তা কল্পনার জগতেও কখনও আসেনি! অসম্ভব সুন্দর। দেখার পর ভাষায় প্রকাশ করাই কঠিন হয়ে যায়। কিন্তু আসতে হলে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয় প্রথমেই বলেছি। সিকিমের ফিশারি ডিপার্টমেন্ট থেকে একটা কাঠের কটেজ করা আছে। সেখানে রাত কাটানোর ব্যবস্থা করা আছে। কিন্তু কোনওরকম ইলেকট্রিকের ব্যবস্থা নেই, আর কটেজের ভিতরে জলেরও কোনও ব্যবস্থা নেই। শুধু জঙ্গলকে উপভোগ করা আর ওই নির্জনতায় নিজেকে খুঁজে পাওয়া।
এই জঙ্গলে মাত্র দুটি মানুষ থাকেন। লালিদাজু আর তার স্ত্রী। লালিদাজু বারো বছর এখানে চাকরি করছেন। ফিশারি ডিপার্টমেন্টের কেয়ারটেকার। মেনমেচো লেক সিকিম গভর্নমেন্টের ট্রাউট মাছের চাষের একমাত্র জায়গা। এই জঙ্গলে এত বছর থাকতে থাকতে তাঁদের জীবনটাও প্রকৃতির মতনই সুন্দর হয়ে গেছে। অতিথি এসেছে তাঁদের ওই ঘন জঙ্গলের বাড়িতে। এখান থেকে কুপুপ প্রায় সাত কিলোমিটার। হেঁটে দেড় থেকে দু'ঘন্টা মত সময় লাগে। তাই এই দুজন ওই জঙ্গলে অন্য কোনও মানুষের দেখা পেলে আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠেন। কী খাওয়াবেন প্রথমে তো বুঝে উঠতেই পারছিলেন না। তারপর ভাত, ডাল, ডিম রান্না করে দুপুরে খাওয়ার ব্যবস্থা করলেন দুজনে মিলে। লালিদাজুর স্ত্রী বেশ সুন্দরী, ঠান্ডায় ফর্সা গাল দুটো লাল হয়ে থাকে। বয়সের ভারে একটু ধীর হয়ে গেছেন। ওদের দুজনকে দেখে অবাক হওয়া ছাড়া আর কিছুই ভাবা যায় না। এই জঙ্গলে দুটো মানুষ তাঁদের জীবনের বারোটা বছর হাসতে হাসতে কাটিয়ে দিলেন! না পাওয়া যায় প্রয়োজনমত সাংসারিক জিনিসপত্র, না আছে ডাক্তার, না আছে তৃতীয় কোনও ব্যক্তি কথা বলার। সাত কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে গেলে তবে সব পাওয়া যাবে। আর যদি কখনও সেনাবাহিনীর গাড়ি এসে তাঁদের খবরাখবর নিয়ে বা দিয়ে যায় তবেই তাঁরা বাইরের জগতের খবর পান। অথচ দুটি মানুষের মধ্যে অসম্ভব প্রেম। একজন আর একজনকে আগলে রেখেছেন, প্রকৃতি যেমন পাহাড়ের প্রতিটি গাছগাছালিকে আগলে রাখে।
সেই জঙ্গলে যখন রাত নামে সে অপূর্ব। সেদিন পূর্ণিমা। কাঠের ঘরে লাল পাতলা পর্দা আর সেই পর্দা চুঁইয়ে জোৎস্না পড়ছে। পুরো ঘরটিকে আলোকিত করে রেখেছে। প্রচণ্ড ঠান্ডার মাঝে এক অপরূপ মায়াবী রাত। ইলেকট্রিকের আলো নেই, কিন্তু চাঁদের আলোয় ঘরের প্রতিটা জিনিস স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। এমনকি টেবিলের ওপর আমার ছোট্ট কানের দুলটাও জ্বলজ্বল করছে। সিকিম পুলিশের অফিসাররা, চন্দুভাই, আমাদের যে গাড়িটা ছিল তার ড্রাইভার কারমা ভাই সবাই আমাদের ওই জঙ্গলে লালিদাজুর হাতে সমর্পণ করে ফিরে গেছেন। সন্ধ্যায় ঘুরতে ঘুরতে লালিদাজুর স্ত্রী, ভাবীর কাছ থেকে শুনছিলাম তাঁদের জীবনের অভিজ্ঞতা। ভাবী ব্যস্ত হয়ে পড়লেন রাতের খাবার তৈরি করতে। আর আমি বসে তাঁর ঘরটা অবাক হয়ে দেখছি আর ভাবছি, আমাদের চাওয়ার শেষ হয় না আর এরা দিব্যি না পাওয়াতেও হাসিখুশি জীবন কাটায়! তাহলে ভগবান কাকে ভাগ্যবান করে পাঠাল, আমাকে না এই ভাবীকে?
এইসব ভাবতে ভাবতে গাটা সবে এলিয়েছি ভাবীর ছোট্ট ঘরের একটা চৌকির একপাশে, হঠাৎ দেখি তিনজন অল্পবয়সি ছেলে ঘরে ঢুকে ভাবীর সঙ্গে কী কথা বলছে, আর অনেক বাজার নামিয়ে রাখছে। ডিম, চিকেন, ভাত, ডাল, রুটি ওই রাতে এলাহি খাবার। গ্রামের ছেলে ওরা, তিন বন্ধু। আর সঙ্গে এনেছে তাদের পোষ্য কুকুর ববিকে। ওই গভীর অরণ্যে তিন বন্ধু আসাতে আমার মনটা বেশ খুশি খুশি হয়ে উঠল। অন্ততঃ আড্ডা তো হবে অনেক। তারপর সবাই মিলে হুল্লোড়, গান, বাজনা, খাওয়া-দাওয়া রাতের অরণ্যকে এরকম প্রাণ ভরে উপভোগ এর আগে আমি কখনও করিনি। চারদিক ভাসিয়ে দেওয়া জোৎস্নার আলোয় মায়াবী সেই রাত। বাইরের তাপমাত্রা প্রায় এক-দু ডিগ্রি হবে। হিমশীতল হাওয়ায় মাথার চুল পর্যন্ত কেঁপে উঠছে যেন। এমন কনকনে। লালিদাজুর কাঠের ঘরের কাঁচের জানলাটা দিয়ে দেখা যাচ্ছে এক বিশাল পাহাড়, যেন ওই অন্ধকার রাতে আমাদের পাহারা দিচ্ছে। প্রকৃতিকে ভালবাসলে সে তার চারগুণ বেশি ভালবাসা ফিরিয়ে দেয়, এ আমার চিরকালীন বিশ্বাস। যে জায়গাটা এখনও পর্যটকের উপযুক্ত নয়, কোনও পর্যটককে সেনাবাহিনী থেকে সহজে থাকার অনুমতি দেয় না, সেখানে আমরা আছি, এটাও তো একটা প্রকৃতির দেওয়া আশ্চর্য উপহার।
খাওয়া, হুল্লোড়, আড্ডার শেষে লালিদাজু, ভাবী এবং সেই তিন বন্ধুকে শুভরাত্রি জানিয়ে যখন আমাদের থাকার কটেজে শুতে গেলাম, টের পেলাম ঠান্ডাটা। দরজা খুলে অন্ধকার কাঠের বাড়িটায় ঢুকছি, দরজার ক্যারক্যার আওয়াজেই আমার বুকটা পুরো শূন্য হয়ে গেল ভূতের ভয়ে। এই গভীর পাহাড়ি জঙ্গলে পাশের আরও দুটো কাঠের বাড়ি পুরো ফাঁকা, রাতের অন্ধকারে সেদিকে তাকালে গাটা আর একটু বেশি মাত্রায় ছমছম করে ওঠে। জোৎস্নায় যেন আরও অতিপ্রাকৃতিক করে তুলছিল পরিবেশটাকে। মোমবাতি নিয়ে গল্পের বইয়ের ভূতুড়ে বাড়ির কাঠের সিঁড়ির মতন সেই সিঁড়ি দিয়ে উঠে কোনোমতে ঘরে ঢুকে বিছানায় শুয়ে সেই যে চোখ বুজেছিলাম, ভোর পাঁচটায় ঘুম ভেঙেছিল।
বাইরে তখনও অন্ধকার। লালিদাজু বলেছিল একটু আলো না ফোটা অবধি লেকের দিকে না যাওয়াই ভালো। আলো ফুটলে তবেই যেতে এবং জোরে জোরে কথা বা গান করতে করতে যেতে। অনেক সময় বুনো শুয়োর বা ভাল্লুক এসে পড়ে। শিয়ালও দেখা যায় মাঝেসাঝে। সকাল ছটা নাগাদ হাঁটা লাগালাম লেকের দিকে। গাছের গায়ে শিশির জমে সাদা হয়ে আছে। চলার পথের পাশে লেকের শুরুর অংশ কিছুটা জমে কাঁচের মতন দেখাচ্ছে। তখনও সূর্যের আলো এসে পড়ে নি। পাহাড় টপকে সূর্যের আলো লেকে পড়তে পড়তে প্রায় আটটা বেজে যায়। ফিরে এসে লালিদাজুর ঘরে বসলাম গরম গরম চা হাতে নিয়ে। আর বারবার জানলা দিয়ে দেখতে লাগলাম সূর্যের আলো পড়ল কিনা। ঠিক আটটা ঘড়ির কাঁটায়, অমনি আলোর ঝিলিক। বুঝলাম আগেকার দিনের মানুষের কেন ঘড়ি লাগত না। সূর্য যেন হাসতে হাসতে আলোর কিরণ ছড়িয়ে লেককে করে তুলল সুন্দরী মেনমেচো। চায়ের কাপ নামিয়ে দৌড় লাগালাম সেদিকে। লেকের পাড়ে গিয়ে দেখি জলের স্রোতের সঙ্গে সূর্যের আলোর কিরণের প্রেমালাপ চলছে। যেন সূর্য তার কিরণের মুক্তো ছড়িয়ে লেককে করে তুলেছে আরও অপরূপা।
এখানে পাহাড়, জঙ্গল প্রতিদিন অপেক্ষা করে থাকে মায়াবী রাতের শেষে এমন একটি ভোরের জন্য।
সুপর্ণা ভালোবাসেন ঘুরতে। অবশ্যসঙ্গী ক্যামেরা। বিশেষ প্রিয় গন্তব্য পাহাড়। ভালো লাগে জঙ্গল আর সমুদ্রও। তবে প্রচলিত ভিড়ের বাইরে। অল্প চেনা বা অজানা জায়গাতে গিয়ে নিজের মতন করে কিছু খুঁজে পাওয়ার নেশাতেই ছুটির অবকাশ খোঁজে তাঁর মন।