বেড়ানোর ভাল লাগার মুহূর্তগুলো সকলের সঙ্গে ভাগ করে নিতে ইচ্ছে করে, অথচ দীর্ঘ ভ্রমণ কাহিনি লেখার সময় নেই? বেড়িয়ে এসে আপনার অভিজ্ঞতাগুলো যেমনভাবে গল্প করে বলেন কাছের মানুষদের - ঠিক তেমনি করেই সেই কথাগুলো ছোট্ট করে লিখে পাঠিয়ে দিন ছুটির আড্ডায়। লেখা পাঠানোর জন্য দেখুন এখানে। লেখা পাঠাতে কোনরকম অসুবিধা হলে ই-মেল করুন - admin@amaderchhuti.com অথবা amaderchhuti@gmail.com -এ।

 

 

বর্ষায় কৈখালি

দীপাঞ্জনা দত্ত বিশ্বাস

 

বর্ষায় ঘুরতে যাওয়ার একটা বিপদ থেকেই যায় - এই বুঝি ঝেঁপে বৃষ্টি নেমে ঘোরাটাই পন্ড করে দিল। কিন্তু মন তো সেটা মানতে নারাজ। এরকমই এক ঘোর বর্ষার দিন কয়েকজন বন্ধু মিলে একটা টাটা সুমো বুক করে বেরিয়ে পড়লাম নিমপিঠ আর কৈখালির উদ্দেশ্যে।

বাইপাস-কামালগাজি-বারুইপুর-জয়নগর-বহুরু এই রাস্তা ধরে গাড়ি এগিয়ে চলল। শীতকাল হলে মোয়ার জন্য অবশ্যই একবার গাড়ি দাঁড় করাতে হত। রাস্তার ধারে একটি মাঠের মধ্যে প্রচুর গরু-মোষ কেনাবেচা চলছে দেখে অবাক হলাম। তারপর মনে পড়ল, কদিন বাদেই তো বকরি-ঈদ। গ্রাম্য প্রকৃতির নিস্তব্ধতা ভেদ করে ছুটে চলল আমাদের গাড়ি। গল্প-আড্ডায় প্রায় ঘন্টা তিনেক পার করে নিমপীঠ রামকৃষ্ণ মিশনে পৌঁছলাম।

যে কোনো আশ্রমের শান্ত, স্নিগ্ধ, পবিত্র পরিবেশ চঞ্চল মনের একটা অদ্ভুত পরিবর্তন আনে, আমাদের ক্ষেত্রেও কোনও ব্যতিক্রম হল না। ছায়া সুনিবিড় আশ্রমের সামনেটা ফুল গাছ দিয়ে সুন্দরভাবে সাজানো। দলের ছেলেরা গেল দুপুরে ভোগের জন্য কুপন করতে আর আমরা মেয়েরা ভাবছি ফ্রেশ হওয়ার জন্য একটা রুম নিলে কেমন হয়। কুপন কেটে এসে খবর দিল দুপুর বারোটার পর থেকে ভোগ দেওয়া হবে আর মেয়েরা আছে শুনে মহারাজ আমাদের একটা ঘর খুলে দিতে বলেছেন। শুনে আমরা তো খুব খুশি। ফ্রেশ হয়ে আশপাশটা পায়ে হেঁটে ঘুরে দেখার জন্য বেরিয়ে পড়লাম।

আশ্রমের সামনেই ভ্যানে করে ডাব বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় লোকজনকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম কিছুদূরেই সারদা মিশন। গ্রামের ভেতর রাস্তা দিয়ে হাঁটতে বেশ ভালোই লাগছিল। পথের পুরোটাই ঘন গাছে ঘেরা, পাশে পুকুরে হাঁস ঘুরে বেড়াচ্ছে। কত রকম পাখির ডাক শুনলাম, কিন্তু সব দেখতে পেলাম না। একসময় পৌঁছে গেলাম সারদা মিশনে। মেয়েদের আবাসনের মধ্যে দিয়ে মন্দিরে পৌঁছাতে হয় যেটা আবাসিকদের কাছে একটু আপত্তিজনক মনে হল। মিশনের মন্দিরে পৌঁছে পুজো দেখতে লাগলাম। এখানকার পরিবেশও মনোরম। সেখান থেকে বেরিয়ে কিছুদূর এগিয়ে একটা কমিউনিটি হল নজরে এল। অদ্ভুত সুন্দর এর স্থাপত্যকলা। আরও খানিকটা এগিয়ে গিয়ে পাওয়া গেল রামকৃষ্ণ আশ্রম কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র। নাম না-জানা নানান গাছে ছেয়ে আছে পুরো জায়গাটা।

খিদে পাওয়াতে ঘড়ির দিকে চোখ গেল। কাঁটা প্রায় বারোটা ছুঁই ছুঁই। এদিকে আকাশের কালো মেঘ সুবিধার ঠেকল না। তাড়াতাড়ি আবার আশ্রমে ফিরে এসে দেখলাম ভোগের জন্য লাইন পড়ে গেছে। একটি বড় ঘরে সারি সারি বেঞ্চ-টেবিল পাতা। তার ওপর শালপাতায় ভোগ দেওয়া হয়েছে। ব্যাগ বাইরে জমা রেখে, জুতো খুলে সেই ঘরে ঢুকতে দেওয়া হল। প্রার্থনাসঙ্গীত শেষ হওয়ার পর ভোগ খাওয়ার অনুমতি মিলল। খিদের মুখে সব কিছু নিমেষে শেষ করে ফেললাম। খাওয়া শেষে বাইরে বেরিয়ে দেখি তুমুল বৃষ্টিতে আশ্রমপ্রাঙ্গণে জল দাঁড়িয়ে গেছে। বেরোনো দায়। আমাদের আবার কৈখালি যেতে হবে, সে এখনো ঘন্টা খানেকের পথ।

বৃষ্টি একটু ধরতেই বেরিয়ে পড়লাম। দারুণ ভাল রাস্তা। বৃষ্টি হওয়ার পর চারদিকটা আরও ঝকঝকে লাগছে। বৃষ্টিস্নাত রাস্তার জল দুপাশে উড়িয়ে অবশেষে পৌঁছলাম কৈখালি। বর্ষায় মাতলা পুরো মাতাল। রৌদ্রের দেখা মেলায় আগে নৌকাবিহারটা সেরে ফেলার কথায় অনেকেই নিমরাজি হল। তাদের মতে ভরা বর্ষায় মাতলায় নৌকাচড়াটা বেশি ঝুঁকি হয়ে যাবে। কিন্তু আমি মানতে নারাজ। অতএব দরদাম করে নৌকায় উঠে পড়লাম। ঝড়খালি যেতে অনেক সময় লাগবে বলে আশপাশটাই ঘুরিয়ে আনবে স্থির হল, তাই সই। কিছুক্ষণ পর সবার ভয় কেটে গেল ও উপভোগ করতে লাগল মাতলার তরঙ্গায়িত যৌবন।

নদীর ধারেই কৈখালি ট্যুরিস্ট লজ দেখে মনে হল দু-একদিন থেকে গেলে মন্দ হত না। পাশেই আছে কৈখালি রামকৃষ্ণ মিশন। এখানকার সন্ধ্যারতি দেখার মতো। তবে সন্ধ্যা অবধি থাকলাম না, শুনেছিলাম রাতে জায়গাটা ততো নিরাপদ নয়। স্থানীয় দোকানে চা আর ঝাল মুড়ি খেতে খেতে জানতে পারলাম আগে অসুবিধা থাকলেও এখন লোকাল লোকজনই ট্যুরিস্টদের অনেক সাহায্য করে। কথায় কথায় খেয়াল নেই, দেখি আমাদের ড্রাইভার ফেরার জন্য তাড়া দিচ্ছে এদিকে সন্ধ্যেও নামতে যায়। টিপটিপ বৃষ্টিও শুরু হয়েছে।
অতএব ফিরে চলা। বর্ষামুখর এই সুন্দর ভ্রমণের স্মৃতি চিরদিন মনকে সিক্ত করে রাখবে।

 

বোস ইন্সটিটিউটে কর্মরত দীপাঞ্জনা দত্ত বিশ্বাস ভালোবাসেন বেড়াতে।

 

 

SocialTwist Tell-a-Friend

To view this site correctly, please click here to download the Bangla Font and copy it to your c:\windows\Fonts directory.

For any queries/complaints, please contact admin@amaderchhuti.com
Best viewed in FF or IE at a resolution of 1024x768 or higher