যে বন কুয়াশা-ছাওয়া

কণাদ চৌধুরী


~ চটকপুরের আরও ছবি ~

শিয়ালদহ স্টেশন থেকে সন্ধের কোনও লোকাল ট্রেন ধরে যখন নিয়মিত ঘরে ফিরতে হত, তখন দার্জিলিং মেলের সঙ্গে প্রায়ই দেখা হত স্টেশনে। এই একটা ট্রেন, যেটা দেখলেই উঠে পড়ার এক অদম্য বাসনা মনের ভিতর চাগিয়ে ওঠে। শোনা যায় পাহাড়ের আহ্বান আর চোখ বুজলেই মনের পর্দায় ভেসে ওঠে কেভেন্টার্সের বারান্দায় টেবিলের ওপর মিল্কশেকের গেলাস আর পেছনে নীল আকাশের প্রেক্ষাপটে কাঞ্চনজঙ্ঘার শুভ্র তুষার-কিরীট - আঃ, সেই চিরকেলে চেনা লোকের দার্জিলিং। পর্যটন-বিধ্বস্ত দার্জিলিং-এর ডাকে যদিও মন এখন আর তেমন করে সাড়া দেয়না, কিন্তু বেড়াতে যাওয়ার জন্য উত্তরবঙ্গে এখন রয়েছে আরও অনেক ছোট-বড় নানান জায়গা। সেখানে যাওয়ার জন্যেও রয়েছে হরেক কিসিমের ট্রেন, তবুও ওদিকে যেতে হলে দার্জিলিং মেলই এখনোও আমার প্রথম পছন্দের গাড়ি। সমস্যা একটাই। টিকিট কাটতে সামান্য বিলম্ব হলেই আইআরসিটিসি-র পোর্টাল থেকে উত্তরবঙ্গগামী প্রায় সব ট্রেনে "ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই" আওয়াজ উঠতে থাকে। এবারেও তার ব্যতিক্রম হল না। অবশেষে টিকিট মিলল পদাতিকে, যাবার সময় স্থির হল ফেব্রুয়ারি মাসের শেষাশেষি, যেতে হবে সেই দার্জিলিং-এর পথ ধরেই, তবে এবারের গন্তব্য দার্জিলিং নয় – তার সমীপবর্তী এক ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম, নাম যার চটকপুর। এই গ্রামটির কথা প্রথম শুনিয়েছিল রামনাথ, যার গাড়িতে ও ব্যবস্থাপনায় বছর কয়েক আগে ডুয়ার্সে কয়েকদিন ঘোরাঘুরি করেছিলাম।
"দার্জিলিং তো অনেকবার গিয়েছেন - এর পরেরবার আসুন, নিয়ে যাব চটকপুর।"
"কী আছে চটকপুরে?"
"কিছুই নেই, শুধু পাহাড় আর জঙ্গল, তবে দেখবেন, ভাল লাগবে।"
চটকপুর নামটা মাথায় টুকে রাখা ছিল সেই থেকেই, তবে পালে হাওয়া দিল আমাদের কন্যা। তার মুখ থেকেই শুনলাম চটকপুর ভ্রমণের হাতে-গরম গল্প। সেই দরাজ সার্টিফিকেট শুনেই শেষে ঠিক হল, চলো এবার তবে চটকপুর।

পাহাড়ে বেড়াতে গেলে মনের কোণে একটা আশঙ্কা সর্বদাই খচখচ করতে থাকে, সেটা হল পাহাড়ের খামখেয়ালি আবহাওয়া অনুকূল থাকবে তো? ভেবেছিলাম, এই ফাগুন মাসে পাহাড়ে কি আর বৃষ্টি পাব? দেখলাম বিধি বাম। যাত্রার দিনকয়েক আগে থেকেই গুগুল ওয়েদার জানাতে থাকল যে হাওয়া বিশেষ সুবিধের নয়, গন্তব্যে মেঘ-বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। উত্তরবঙ্গবাসী বন্ধু-স্বজনেরা জানালেন বৃষ্টি হচ্ছে বটে ওদিকে মাঝে মধ্যেই। মেঘ বা রৌদ্র যাই থাক কপালে, আমাদের পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুসারে বেরিয়ে পড়তেই হল নির্দিষ্ট দিনে। সারা রাস্তা দিব্যি চলল গাড়ি, কিন্তু নিউ জলপাইগুড়ির কিছু আগেই পদাতিক কোনও এক অজ্ঞাত কারণে স্থাণু হয়ে রইলেন দীর্ঘ সময়। নড়েনও না, চড়েনও না, ওদিকে স্টেশন থেকে আমাদের গাড়ির সারথি ঘনঘন ফোনে জানতে চাইছেন "আপলোগ কিধর হ্যায়?" বোধহয় অন্য ট্রিপ ধরা রয়েছে, আমাদের দেরি তার চাপ বাড়িয়ে তুলছে ক্রমাগত, আর আমরা ভাবছি হ্যায় তো কাছেই, কিন্তু পদাতিককে টা-টা করে ট্রেন থেকে নেমে যে হাঁটা মারব সে উপায় তো নেই। অগত্যা বসে বসে প্রহর গোনা, এই ছাড়ল, এই ছাড়ল - দেখতে দেখতে পুরো একটি ঘণ্টা মাইনাস করে তবে ট্রেন স্টেশনে এন্ট্রি নিলেন। আমাদের গাড়ির সারথির নাম অমল মিনজ, তার গাড়িতে লাগানো রিয়াল মাদ্রিদ ক্লাবের পতাকা আর ব্যানার স্পষ্টই জানিয়ে দিচ্ছে তার ফুটবল আনুগত্য কোন দিকে ধাবমান। শুধু তারই নয়, আরও অনেক গাড়িকেই দেখছি ইউরোপের নানান ফুটবল দলের পতাকা বহন করছে, কেউ বার্সেলোনা তো কেউ বা ম্যান-ইউ - মোহনবাগান বা ইস্টবেঙ্গলের মত দেশি দলের কোনও জায়গাই নেই। অমলের মাথার চুলের ছাঁটও ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর ঢঙে স্পাইক করা। মনে মনে বললাম, বাবা আর যাই কর, পাহাড়ি রাস্তায় গাড়িটা নিয়ে রোনাল্ড-র ডজ দেখিও না।

শিলিগুড়ি এখন আর মোটেও পাহাড়ের পদপ্রান্তে অবস্থিত ছোট্ট শহরটি নেই, প্রস্থে ও দৈর্ঘে সে বেড়ে চলেছে নিরন্তর। এখন শিলিগুড়িতে শপিং মল, মাল্টিপ্লেক্স, বড় বড় হাউসিং কমপ্লেক্স চোখে পড়াটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, শহরের সীমানা ছাড়াতে সময়ও লাগে বেশ কিছুক্ষণ। তিনটে রাস্তার যে কোনও একটি দিয়ে যাওয়া যায় দার্জিলিং, আমাদের গাড়ি ধরল রোহিণী রোড। পাহাড়ে গা বেয়ে উঠছে গাড়ি, মসৃণ সুন্দর রাস্তা, জানলার বাইরে তাকালে কিছুটা দূর অবধি দৃশ্যমানতা বেশ পরিষ্কার। আকাশও মেঘমুক্ত, বৃষ্টির কোনও চিহ্নমাত্র নেই, তবে দূরে একটা ঘন কুয়াশার চাদর টাঙানো রয়েছে নিচ থেকে ওপর অবধি, তুষারশৃঙ্গ দর্শনের পথে আপাতত সেটাই সর্বপ্রধান অন্তরায়। প্রথম যাত্রাবিরতি হল রাস্তার ধারেই কার্শিয়ং ট্যুরিস্ট লজে। কাঠের প্যানেলে সাজানো সুন্দর অভ্যন্তর, সুগন্ধি দার্জিলিং চা পরিবেশিত হল দুধ-সাদা পেয়ালা-পিরিচে, একেবারে সাহেবি কেতায়। ভাল দার্জিলিং চায়ের আসল স্বাদ-গন্ধ পেতে হলে সেটা দুধ-চিনি ছাড়া সেবন করাটাই বিধেয়, সঙ্গে পাওয়া গেল গরম-গরম সুস্বাদু মোমো, প্রাতরাশ নেহাত মন্দ হলনা। এর পর টুং হয়ে সোনাদা থেকে মূল রাস্তা ছেড়ে গাড়ি বাঁক নিল ডানদিকে। প্রথমে কিছুক্ষণ মনে হচ্ছিল একটা দেওয়াল বেয়ে উঠছে গাড়ি, এতটাই খাড়া চড়াই। চটকপুর গ্রামটি মূল সড়কপথ থেকে প্রায় আট কিমি দূরে। গাড়ি চলার মত রাস্তা রয়েছে বটে, তবে সেই পথের অবস্থা বেশ করুণ, এমন কি শোচনীয় বললেও কম বলা হয়। উত্তাল ঢেউয়ে নৌকো যেমন মোচার খোলার মত দোলে, শুকনো রাস্তায় আমাদের সুমোও তেমনটি দুলে দুলে চলল। আপার সোনাদা পার করে বাকি রাস্তায় শুধু জঙ্গল, পথে লোকালয় বড় একটা নজরে এল না, পথের শেষে প্রথম চোখে পড়ল একটি ইঁট-রঙের তোরণ, লেখা রয়েছে – চটকপুর ইকো-ভিলেজ আপনাকে স্বাগত জানায়।

সমুদ্রতল থেকে ৭৮৮৭ মিটার ওপরে সিঞ্চল সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভিতরে অবস্থিত এই চটকপুর গ্রাম। মাত্র ষোলোটি পরিবারের একশোরও কম মানুষের বসবাস চটকপুরে। কোনও এক সময়ে জঙ্গলের কাঠ কেটে তার চোরাচালানের জন্যই এই গ্রামটির কুখ্যাতি ছিল। বনদপ্তরের উদ্যোগে এবং গ্রামবাসীদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে এখানে চালু করা হয় ইকো-ট্যুরিজম এবং হোম-স্টের ব্যবস্থা। এখন জৈব-পদ্ধতিতে চাষবাস এবং ভ্রমণার্থীদের পর্যটন পরিষেবা দেওয়াটাই গ্রামের মানুষজনের জীবিকার্জনের প্রধান দুটি উপায়। চটকপুর ইকো-ভিলেজে রয়েছে বন-দপ্তরের মালিকানাধীন দুটি পাশাপাশি কটেজ, কটেজ দুটিতে টয়লেট-সংলগ্ন মোট চারটি সুদৃশ্য কাঠের ঘর। ঘরগুলির অভ্যন্তর সুন্দর করে সাজানো, রয়েছে গিজার এবং প্রয়োজনে অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে মিলতে পারে রুম-হিটার। ঘরগুলির সামনে একচিলতে ফাঁকা জায়গা, রান্নাঘর এবং তৎসলগ্ন খাওয়ার ঘরটি রয়েছে সেখানেই। পাশে একটি ছোট দোকান, চা-কফি ছাড়াও আরও কিছু কিছু জিনিস মেলে সেই দোকানে। দোকানের মালিক এক অবসরপ্রাপ্ত ফৌজি, দোকান-সংলগ্ন তার বাড়িটিতেও রয়েছে হোম-স্টের ব্যবস্থা। তারপরেই পাহাড়ের ঢাল বেয়ে ডাইনে বাঁয়ে নেমে গিয়েছে ধুপি গাছের ঘন জঙ্গল আর কটেজ দুটির পিছনে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে ধাপে-ধাপে উঠে গিয়েছে পাকদণ্ডী, সেই পথ গ্রামের ভিতর দিয়ে আপনাকে নিয়ে যাবে ওপরের ওয়াচ-টাওয়ারটিতে, যেখান থেকে সূর্যোদয়ের কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপ নাকি টাইগার হিলকেও হার মানায়। চটকপুরের অন্যান্য হোম-স্টে গুলি রয়েছে ওই গ্রামেরই বিভিন্ন বাড়িতে, সেখানেও ব্যবস্থা ভালোই, তবে ঘরের সংলগ্ন টয়লেটের সুবিধা হোম-স্টেগুলিতে অনুপস্থিত। বন-দপ্তরের ঘরগুলি দেখাশোনার ও রান্নাবান্নার দায়িত্বেও রয়েছেন কয়েকজন গ্রামবাসী। দ্বিপ্রাহরিক ভোজনে পাওয়া গেল ভাত, ডাল, নেপালি আচার, একটি সবজি এবং ডিম; রাতে চিকেন মিলবে - জানালেন ম্যানেজার। পদের সংখ্যা বেশি না হলেও খাবার সুস্বাদু, পরিবেশনও সুচারু, এবং প্রায় সবটাই স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কাঁচামাল দিয়ে তৈরি। খাবার ঘরের পাশের খোলা জায়গায় একটি বসার জায়গা করা রয়েছে, যেখানে বসে কুয়াশা-আকুল পাইনবনের স্বাদ-গন্ধ উপভোগ করে কাটিয়ে দেওয়া যায় অনেকটাই সময়। কটেজের সামনে দিয়ে পথ গিয়েছে নেমে সেই বনের ভিতর দিয়ে, পায়ে-পায়ে চলে যাওয়া যায় টাইগার হিল, তবে আমরা আর সে চেষ্টা করে দেখিনি। সেই পথেরই এক প্রান্তে রয়েছে গ্রামের ছোট্ট স্কুলবাড়িটি, স্কুলে দুজন শিক্ষক থাকলেও বর্তমানে ছাত্র রয়েছে মোটে একটি।

চটকপুরের প্রধান আকর্ষণ তার অমলিন প্রাকৃতিক পরিবেশ। বাইরের পৃথিবীর কলকোলাহলের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছেদ করে নির্জনতার মধ্যে পাহাড় ও অরণ্যের যুগলবন্দী যারা উপভোগ করতে ইচ্ছুক, কোনও সন্দেহ নেই চটকপুর তাদের পক্ষে একটি অতি আদর্শ জায়গা। ঘরে টিভি নেই, মোবাইলের সিগন্যাল অতি দুর্লভ। লাগামছাড়া পর্যটনের ফলশ্রুতিস্বরূপ জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে পর্যটকের যে জোয়ার আসে, মানুষের সেই ঢল এখনও এখানকার পরিবেশকে গড়িয়াহাটের চৈত্র সেলের বাজারে পরিণত করেনি। পক্ষীপ্রেমীদের জন্যেও চটকপুর একটি আকর্ষণীয় জায়গা, পাখিরা প্রচুর ডাকাডাকি করে তাদের অস্তিত্বের কথা জানান দিচ্ছিল প্রতিনিয়তই। শোনা গেল, আকাশ পরিষ্কার থাকলে চটকপুর থেকে দেখতে পাওয়া যায় সান্দাকফু, যারা এখান থেকে ট্রেক করে টাইগার হিল যান, তাদের নাকি পথে চোখে পড়ে মাউন্ট এভারেস্টের এক ঝলক। কটেজের সামনে ও পিছনের পাহাড়ি রাস্তায় আর পাইনের বনের প্রান্তে ইতস্তত পদচারণায় কেটে গেল অলস সময়। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে আসতেই অরণ্যে নেমে এল নিশ্ছিদ্র অন্ধকার। ডাইনিং হল থেকে মাঝে মধ্যে কানে আসতে থাকে কিছু টুকরো কথাবার্তা, এতদ্ব্যতীত আর কোনও শব্দ নেই কোথাও। ঘরের বাইরে বেরোলে মালুম হচ্ছে হাড়-কাঁপানো ঠান্ডা পড়েছে, কাল সকালে আকাশ পরিষ্কার থাকলে আমাদের ডেকে দেওয়া হবে ভোর-রাত্রে, সূর্যোদয় দেখতে যেতে হবে ওয়াচ টাওয়ারে। তবে কুয়াশার পর্দা মনে হচ্ছে সরেনি এখনও, আকাশে তাকালে নজরে আসছেনা কোনও নক্ষত্রের আলো, সুতরাং মনে হচ্ছে কাঞ্চনজঙ্ঘা এবার অধরাই রয়ে যাবে আমাদের কাছে। কুয়াশার পর্দার ওপারে তার উপস্থিতিকে শুধু কল্পনাই করে নিতে হবে এবারের মত। রাত্রে কটেজের ম্যানেজার জোরালো আলো ফেলে দেখালেন পাহাড়ের গায়ে কোনও বন্যপ্রাণীর উপস্থিতি, তার চোখদুটি জ্বলছে। গ্রামে ম্যানেজারের নিজ গৃহের হোম-স্টেতেও রয়েছেন বেশ কিছু অতিথি। তাদের জন্য আয়োজন করা হয়েছে বন-ফায়ারের, ওপরে পাহাড়ের গায়ে চোখে পড়ছে সেই আগুনের আলো, রাত্রির নৈঃশব্দ্য ভেঙে মাঝে-মাঝে কানে আসছে উচ্চকিত হাসির আওয়াজ। কটেজের কর্মীরা রান্না সেরে টেবিলে খাবার সাজিয়ে রেখে যে যার মত গ্রামে ফিরে গেলেন রাত্রি আটটার মধ্যেই, ডাইনিং হলের চাবি থাকল আমাদের কাছেই, খেয়ে-দেয়ে আমরাই তালা লাগিয়ে দেব, সেইরকমই কথা হল।

সকালে উঠে দেখলাম আমাদের আশঙ্কাকে সত্যি করে কুয়াশার চাদর তখনও নিজের জায়গা ছাড়েনি একটুও। অতএব, সূর্যোদয় আর দেখা হলনা এই যাত্রা। প্রাতরাশ শেষ করে স্থানীয় একটি কিশোরকে পথপ্রদর্শক করে বেরিয়ে পড়া গেল পাইনের জঙ্গলের রাস্তা ধরে ছোট্ট একটু জাঙ্গল-ট্রেকে। মিনিট পনের-কুড়ি হাঁটার পরে দেখা মিলল খুবই ছোট্ট এক জলাশয়ের – নাম কালিপোখরি। মনে হল স্থানীয় মানুষ-জনের কাছে জলাশয়টি বেশ পবিত্র, শিবরাত্রির পূজার চিহ্ন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে চারপাশে। কালিপোখরির শোভা খুব একটা আহামরি গোছের না হলেও, জলাশয়টির একটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এখানে দেখা মেলে একটি বিপন্ন, অতি-বিরল প্রজাতির উভচর প্রাণীর, যার নাম হিমালয়ান নিউট বা সালামান্ডার। জলাশয়ের ধারে কিছুটা সময় কাটিয়ে আবার বনপথ ধরে ফিরে আসা গেল কটেজে। দেখতে দেখতে ফেরার সময়ও এগিয়ে এল। ফেরার পথে গাড়িতে সঙ্গী হল এক স্থানীয় তরুণী, সে তার শিশুকন্যাটিকে নিয়ে যাবে সেই আট কিমি দূরের সোনাদায়, যেখানে শিশুটি তার দাদু-দিদার কাছে থেকে একটি স্কুলে পড়ে। তরুণীটি কথাবার্তায় যথেষ্ট সাবলীল এবং সপ্রতিভ, ইংরেজি শব্দের ব্যবহার শুনে মনে হল সে নেহাত অল্পশিক্ষিত নয়। রাস্তার করুণ অবস্থার দিকে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করায় সে জানাল যে ব্যাপারটা তাদের জন্যেও বেশ অসুবিধাজনক, সামান্য কাজে শহরে যেতে হলেও ষোল কিমি হাঁটতে হয়। রাস্তার অবস্থা ভালো হলে আরও বেশি পর্যটক আসবে, স্থানীয় মানুষ যাদের জীবিকা পর্যটন-নির্ভর, তাদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হবে, আমাদের এই কথার জবাবে তরুণীটি জানালেন – "লেকিন তব তো হামারা চটকপুর অউর এক দার্জিলিং বন জায়েগা।" গ্রামের এরকম একটা সম্ভাব্য পরিণতি তার পক্ষে যে খুব একটা আনন্দদায়ক হবে, তার কথা শুনে মনে হলনা। পর্যটনের পরিকাঠামো তৈরি করা ও বিকাশ ঘটানো কতখানি বাঞ্ছনীয়, সেই প্রসঙ্গে ওই পাহাড়ি তরুণীর বক্তব্য কিন্তু একেবারে ফেলে দেওয়ার মত নয় বলেই মনে হয়েছে। সুতরাং, পর্যটনের প্লাবনে চটকপুর যেন তার নিজস্বতা হারিয়ে না ফেলে ধরে রাখতে সক্ষম হয় তার আদিম ও নির্জন প্রাকৃতিক পরিবেশ, মনে সেই আশা রেখেই এবারের মতো বিদায় জানানো গেল চটকপুরকে।


~ চটকপুরের আরও ছবি ~

এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা এবং পরবর্তী সময়ে কর্মজীবন কেটেছে ভারতের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান সংস্থায়। অবসরজীবনে সময় কাটে বেহালা বাজিয়ে, নানান ধরনের গান-বাজনা শুনে, বই পড়ে, ফেসবুকে এবং সুযোগ পেলে একটু-আধটু বেড়িয়ে। লেখালেখির জগতে এটাই প্রথম পদক্ষেপ।

 

 

SocialTwist Tell-a-Friend

To view this site correctly, please click here to download the Bangla Font and copy it to your c:\windows\Fonts directory.

For any queries/complaints, please contact admin@amaderchhuti.com
Best viewed in FF or IE at a resolution of 1024x768 or higher