ধারাবাহিক ভ্রমণকাহিনি (২) - প্রথম পর্ব
থোড়া অ্যাডজাস্ট কর্ লিজিয়ে
কাঞ্চন সেনগুপ্ত
হিমাচলের তথ্য ~ হিমাচলের আরও ছবি
জানি না সদর্থে এটা কোনও ভ্রমণ কাহিনি হয়ে উঠবে কিনা। কোনোরকম 'কাহিনি' গড়ে তোলার দায়ও স্বীকার করছি না এ লেখার কোনও ছত্রেই। শুধু যা দেখে এলাম, যেভাবে দেখে এলাম তা জানাবার তাগিদ থেকেই লিপিবদ্ধ করতে বসেছি এবারের 'বেড়াতে যাওয়া', বন্ধুরা মিলে চিরন্তন সিমলা-কুলু-মানালি-রোহ্তাং-সোলাং-নগ্গর ইত্যাদি ইত্যাদি। সময়কালটা বলি, কারণ এটা ইম্পর্ট্যান্ট হয়ে দাঁড়াবে। মে মাসের ১৯ তারিখ কোলকাতা থেকে যাত্রা শুরু করে ২৯শে মে ফিরে আসা কোলকাতায়। একে তো কোল্ড-ফেভারিট টুরিস্টস্পট তার ওপর পিক্ সিজন্; যদি কোনও পাঠক ভেবে থাকেন বরফ, শীত আর সিনারিমাখা রম্য ভ্রমণ কাহিনি উপভোগ করতে চলেছেন একখানা, তবে মার্জনা করবেন, এই লেখকের দেখার চোখ, লেখার হাত ও অভিজ্ঞতার চামড়া কোনোটিই তদনুরূপ সরেস হতে পারছে না। চাইলে আপনি এখানেই ক্ষান্ত দিতে পারেন। আবার চাইলে...
তারিখ অনুসারে নয়, এবারের বর্ণনা অবস্থান অনুসারী হোক।
প্রথম অবস্থানঃ IRCTC ওয়েবসাইট। কালকা মেলের টিকিট। সতেরোই জানুয়ারি ২০১৭ সকাল আটটা বেজে এক মিনিট কয়েক সেকেন্ড, অনলাইন টিকিট ভেসে উঠল চোখের সামনে WL 39, 40, 41, 42, 43, 44। আমি জানিনা কারা সেই সুপারম্যান যারা সোজা পথে রেলের কনফার্মড টিকিট পায়। নিশ্চয়ই পায় কেউ, কিন্তু আমার মতো অসহায়দের জন্য এখানেই একটা ট্যুরের মজা মাটি হয়ে যাওয়া অসঙ্গত কিছু নয়। আর এ চিত্র বছরের প্রায় সব সময়ই। প্রসঙ্গতঃ, আমি আজ থেকে সাত বছর আগে বৌকে নিয়ে এই একই ট্যুর করেছিলাম, এই কালকা মেলেই টিকিট কেটেছিলাম। সেবারও টিকিট পেয়েছিলাম RAC 1 ও 2 এবং বিশ্বাস করুন পাঠক, যাত্রাকালে আমরা ট্রেনেও উঠেছিলাম ওই RAC 1 ও 2 নিয়েই। সত্যি এর সমাধান জানিনা, কারণ আমি জানি না সমস্যাটা কোথায়? এত সিট্ কোথায় যায়? কোটা? কত সেটা? তাই প্রতিবারই আমার ভ্রমণকাব্য শুরু হয় একঘেয়ে এই ছন্দপতন দিয়ে। প্রতিবারই নাক-খত্ দিই, সিজন্-এ আর বেড়াতে যাচ্ছি না। এবারে তো বলেছি, আর বেড়াতেই যাব না। রেলগাড়ি ফিক্ করে হাসল!
দ্বিতীয় অবস্থানঃ ট্রেন। এবার শিবালিক। (দেখুন শিবালিকে যখন চড়তে পারছি কালকা থেকে, তখন নিশ্চয়ই আমার মতো অসহায়েরও কোনো কোটাধারীই সহায় হয়েছিলেন... এটা কি আর আলাদা করে বলে দিতে হবে?) কালকা ছেড়ে সিমলা যাওয়ার ভোরের শিবালিক মানে এক স্বপ্নময়তা। ট্রেন থেকে নেমে খানিক S-এর মতো বাঁক নিয়েই কালকা স্টেশনের সেইসব প্ল্যাটফর্মগুলোতে পৌঁছে যাওয়া যায়, যা আসলে এক জাদুনগরী পাড়ি দেওয়ার গুপ্তদ্বার, হঠাৎ করে সামনে এসে পড়ে। যাত্রীরা বিহ্বল হয়ে দেখে, "আরে কোথায় ছিল এমন একটা জগত যাকি না এতাবৎ হাওড়া টু কালকার ঠিক ওপিঠের থেকে এক্কেবারে আলাদা।" আলো-আঁধারির মধ্যে ধীর ব্যস্ততা জেগে ওঠে খেলনা-গাড়িটিকে কেন্দ্র করে। হুস্ হুস্ ইঞ্জিন, খটাখট লিংক-আপ, "ওরে রামা ছুটে আয়, নিয়ে আয় লন্ঠন" ইত্যকার হুলুস্থুলুর মধ্যেই চমক লাগানো বাঁশি বাজে; ওমনি ছবির মতো প্রেক্ষাপট থেকে দুলে উঠে জ্যান্ত হয় শিবালিক। সুবিশাল ক্যানভাসে নিজ নিজ জায়গা ভরিয়ে আমরাও অংশ হয়ে যাই এ জাদু সফরের। সফর গড়িয়ে চলে পাহাড়ের কোলে কোলে, ছোট-বড় টানেল পেরিয়ে। যত ওপরে উঠতে থাকি, সূর্যও উঠতে থাকে সঙ্গে সঙ্গে, কুয়াশা কুয়াশা ভাবটা সরতে থাকে। পাহাড়, পাহাড়ের ধাপ, ধাপে ধাপে পাইন, পাইনের পায় পায় জড়িয়ে জড়িয়ে নাzউক্ বাঁক, বাঁকেরা লুকিয়ে রাখছে মায়াবী রেলপথ, আমরা... কুউউউ ঝিক্ ঝিক্... ঠিক খুঁজে নিচ্ছি যেই সেই চোরা চোরা পথ ওমনি সে-পথ কোনো এক সুড়ঙ্গে সুড়ুৎ সেঁধিয়ে গেল... অন্ধকার। এভাবে চলতে চলতে বাইরের কুয়াশা কাটে বটে, তবে আমরা জড়িয়ে যাই অনাবিল মায়ায়, জড়িয়েই থাকি। এভাবেই পেরিয়ে যাই সবচেয়ে দীর্ঘ টানেলটি। যার নাম ব্যারোগ টানেল (Barog), ক্যাপ্টেন ব্যারোগের নামে।
টানেল পেরিয়েই গাড়ি দাঁড়াবে ব্যারোগ স্টেশনে। এখানে আমরা দাঁড়াব খানিকক্ষণ। ঠিক 'দাঁড়ায়' না কেউ এখানে, একমাত্র গাড়িটি ছাড়া। সবাই ছটফট করতে থাকে দারুণভাবে। বাচ্চা থেকে বুড়ো সব্বাই। চটপট গাড়ি থেকে নেমে পড়ে সবাই। ক্যামেরা, মোবাইল ইত্যাদি নিয়ে উদভ্রান্তের মতো ছবি তুলতে থাকে। আমি তো দাঁড়ানো ইঞ্জিনের চাকার ফাঁক দিয়ে অল্প অল্প সাদা ধোঁয়া বেরোচ্ছিল, তার ছবিও তোলার চেষ্টা করলাম মোবাইলে। আসলে এক ছবির মতো সফর থেকে আমরা এসে পড়লাম আরেক রূপকথার সিনারিতে। তাই এই দিশাহারা উৎফুল্লতা। ব্যারোগ স্টেশনটা যারা দেখেছেন তারা আমার সাথে একমত হবেন নির্ঘাত। এখানে কিছুক্ষণ দাঁড়াবো আমরা। রেল-কোম্পানি আমাদের নাস্তা খাওয়াবে। টিকিট রিজার্ভ করার সময়েই উল্লেখ করে দিতে হয় ভেজ / নন্ভেজ। আমরা সবাই ছিলাম নন্ভেজ, তবু ছ'টা প্লেটের পাঁচটা এল নন্ভেজ আর একটা ভেজ। পরিবেশক ছটফটে তরুণটি পোলাইট হেসে বলল, 'থোড়া অ্যাডজাস্ট কর লেঙ্গে?' আমরা তখন এমনিতেই বুঁদ হয়ে আছি প্রকৃতিতে। সত্যি, মানুষ আনন্দে থাকতে পারলে কতটা সহজ থাকতে পারে, আর সহজ থাকতে পারলে কতটা আনন্দে থাকে! যাক্গে, গাড়ি যখন খানিক দাঁড়াবেই তাহলে অল্প কিছু বলে নিই এই ফাঁকে।
কালকা থেকে সিমলা রেলপথে ছোট ছোট আরো বেশ কটি, প্রায় ১৫/১৬টি রেল স্টেশন আছে। গুম্মান, কোটি, সোনওয়ারা, সোলান, কাঠলীঘাট... যেমন তাদের মনভোলানো সারল্য তেমন তাদের গ্রাম্য নামের বাহার! মনে হবে সব ক'টিতেই নেমে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে যাই। এই আস্তানাগুলি বানানো হয়েছিল এই লাইন পাতার সময়, সেই-ই ব্রিটিশ আমলে। লাইন পাতার মজদুরদের থাকার মেস্। পরে সেইগুলোকেই স্টেশনে রূপান্তরিত করা হয়। গোটা রেলপথে ছড়ানো মোট ১০৩টি টানেলের, লম্বায় সবচেয়ে বড় যেটি, মানে এই ব্যারোগ টানেল সম্পর্কে শোনা যায়, ইঞ্জি্নিয়ার ক্যাপ্টেন ব্যারোগকে কোম্পানি ভার দেয় এই টানেলটির জন্য। ব্যারোগ সাহেব পাহাড়ের দু'দিক থেকে একসাথে টানেল খোঁড়ার কাজ শুরু করেন। উদ্দেশ্য তাড়াতাড়ি কাজ চালিয়ে পাহাড়ের মাঝামাঝি দুদিকের টানেল এক জায়গায় মিলিয়ে দেওয়া। তেমনটা হয় না। হিসেবের গন্ডগোলে শেষমেষ দেখা যায় দুইশপ্রান্ত এক জায়গায় মিশছে না। কাজের বরাত ব্যারোগ সাহেবের হাত থেকে চলে যায় এবং তাঁকে ১ টাকা জরিমানা করা হয়। এ অপমান সাহেব সহ্য করতে পারেন না। অসমাপ্ত টানেলের মধ্যে ঢুকে আত্মহত্যা করেন। পরবর্তীতে তাঁর নামেই টানেলের নামকরণ করা হয় সম্ভবতঃ তাঁর সিন্সিয়ারিটিকে সম্মান জানিয়ে।
এবার উঠে পড়ি ট্রেনে। শিবালিক ছাড়বে। এরপর কাঠলীঘাটে একবার থামবে। পাশের লাইনে সরে দাঁড়াবে। সিমলা থেকে আগত কালকাগামী ট্রেনটিকে এখানেই জায়গা দেবে শিবালিক। আগেরবারও এরকমই হয়েছিল। তারপর আবার সিঙ্গল লাইনটি ধরে সিমলা পৌঁছতে পৌঁছতে বাজবে বেলা প্রায় সাড়ে এগারোটা।
তৃতীয় অবস্থানঃ বানিজ্যনগরী সিমলা। মহা মুস্কিল! সিমলা বানিজ্যনগরী হয়ে উঠবে তাতে আর আপত্তির কি আছে? আমাদের সঙ্গে বিরোধ বাঁধল এই যে, আমরা চেয়েছিলাম ওল্ড বাসস্ট্যান্ড থেকে যে রাস্তাটা এঁকে বেঁকে সোজা চলে গেছে সিমলা-ম্যাল-টুরিজম্-লিফটের দিকে, সেই রাস্তার ওপর কোনো থাকার জায়গা। আলিশান আরাম দরকার নেই, রাতটুকু ঠিক মতো কাটাতে পারলেই হবে। নেট ঘেটে ফেললাম। ঐ যে বলেছি সিজন্ টাইম। ওখানে গিয়ে যদি না-কিছু পাই! নেটে পেয়েও গেলাম। সরাসরি হোটেল মালিকের ফোন নাম্বার। হোটেল একেবারে রাস্তার নিচে (মানে ধারেই)। পঞ্চায়েত ভবন লাগোয়া। পরপর বেশ কয়েকবার ফোন কল ও ই-মেইল চালাচালি করে দর-ও নেমে এল হাজার দেড়েক টাকা পার-ডে। ট্যাক্সি নিয়ে সোজা হোটেল। তিনটে রুম। দেখে-টেখে নিজেরাই নিজেদের বললাম, এই খরচে, এই লোকেশনে, এর বেশি আর কিইবা আশা করা যায়! আর শুধু তো রাতটুকু... দিনেরবেলা তো আমরা টো টো কোম্পানি। তিনটে ঘরে ভাগাভাগি করে আমাদের মালপত্র রেখে সবাই বেরোব দুপুরের খাবার খেতে; নামল বৃষ্টি। ছাতা ছিল সঙ্গেই। হোটেলের লোকেশনটা যে জব্বর আগেই বলেছি। হাঁটাপথে ম্যাল বা বাসস্ট্যান্ড মিনিট দশেকের মামলা। আর খাবার-দাবারের দোকান তো রাস্তায় উঠে এলেই... ছিঁটেফোঁটা বৃষ্টি মাথায় নিয়ে খাবার হোটেলের ভেতরে ঢুকে খাবার অর্ডার দেওয়ার পর-পরই নামল ঝমঝম করে বৃষ্টি, সঙ্গে শিল। দেখতে দেখতে সাদা হয়ে গেল কালো পিচের রাস্তা। টিনের চালে অঝোরে শিল-তরঙ্গ। দোকানি কিশোর, একটা ছোট ফোকর গ'লে উঠে গেল চালে। মুঠোভর্তি শিল পাকিয়ে গোলা বানাচ্ছে ভিজে ভিজে। ওটা দিয়ে কিছু করে ওঠার আগেই আমরা লোভীর মতো চেয়ে বসলাম ঐ গোলা। খাবার দিতে দেরি হচ্ছে। লোডশেডিং। মোমবাতি সহায়। আমাদের সেসব খেয়াল নেই। ফিরে গেছি ছোটবালায়। আজ ২১শে মে ২০১৭। এবারও সিমলায় মরসুমের প্রথম বারিষ এল, আমরা যেদিন সিমলা এলাম।
খাওয়া শেষ করে হোটেলে ফিরলাম। বৃষ্টি ধরে এসেছে ততক্ষণে। খানিক জিরোবো, না আড্ডা দেব, নাকি কালকের জন্য গাড়ি/বাস বুক করতে বেরোবো ভাবছি... মাথায় ছাদ ভেঙ্গে পড়ল। একটি ঘরের সিলিং থেকে চুঁইয়ে জল পড়ছে ঠিক বিছানার মাঝখানটায়। দৌড়োদৌড়ি লেগে গেল। যতটা ব্যস্ততা আমাদের মধ্যে দেখা গেল, ততটা কিন্তু হোটেলওয়ালার মধ্যে দেখা গেল না। সদা-হাসিমুখ ম্যানেজারবাবু, তার স্যাকারিন হাসিটা ঠোঁটে বিছিয়ে রেখে আমাদের কোঁচকানো ভুরুগুলোর দিকে চোখ রেখে বলে যেতে লাগল ক্রমাগত, "সরজি, ম্যায় বিশ শালসে হু ইঁহা। অ্যায়সা কভি নেহি হুয়া। ও সর্, পানি জানে কি নালী কে মুহ্ পে না, কেয়া হুয়া, ওলে (শিল) জম্ গয়ে অর নালী জাম হো গয়া, অর সরজি, ও পানি পাস্ নেহি হো পায়া অর ইধর আগয়ে।" আমাদের চোখ কপালে ওঠার জোগাড়। রাত-বিরেতে এরকম বৃষ্টি হলে? আবার চট্জলদি উত্তর, "অ্যায়সা নেহি-না হোতা হ্যায়। আপ ফিকর মত্ করো সর্জি, নালী সাফ কর দিয়া হ্যায়, অর পানি নেহি টপকেগা।" যে লোক হাসিমুখে এই আশ্বাস দিচ্ছে যে আর বৃষ্টি হবে না বা আর শিল পড়বে না বা পড়লেও আর রেন-ওয়াটার পাইপ জাম হবে না, তাকে আর কিভাবে কি বোঝাবেন বলুন তো! আমরা হতবম্ভ হয়ে হতাশ গলায় জানতে চাইলাম, আচ্ছা আমাদের ওপরেও তো ফ্লোর আছে! সেসব পেরিয়ে কিভাবে সিলিং থেকে জল লিক্ করছে? জানি এরও কোনো নির্বাক করে দেওয়ার মতো লাগসই উত্তর আসবে, এলও... "পানি আয়া তো! যা-কে দেখিয়ে, আপসে জাদা পানি আয়া উধর! ইস্ লিয়ে তো আপ লোগোঁ কো উও সব রুম নেহি দিয়া। সর্ জি পাঁচ মিনিট রুকো, আপকা বিস্তর্ চেঞ্জ কর দেতে হ্যায়।" আমরা শেষ একবার মরিয়া ট্রাই করলাম, "কিন্তু এই রুমে কি-করে থাকা যায়?" আবার আশ্বাস, "সর্জি, কাল আপকো দুসরা রুমমে শিফ্ট করওয়া দেঙ্গে,আজ থোড়া অ্যাডজাস্ট কর লিজিয়ে।"
ফলতঃ যেটা হল আমরা তিনজন মিলে বেরিয়ে পড়লাম বাস স্ট্যান্ডের দিকে, উদ্দেশ্য পরের দিন সিমলা ঘোরার জন্য যদি কোনো গাড়ি ঠিক করা যায়। আর তিনজন ফিমেল 'একটু জিরিয়ে নি' বলে একসাথে অন্য একটি ঘরে দলা পাকিয়ে শুয়ে রইল। কথা হল আমরা বাস স্ট্যান্ড থেকে ফিরে সবাই মিলে ম্যালে যাব।
চতুর্থ অবস্থানঃ সিমলা ম্যাল। সিমলায় ম্যালের থেকেও আমার কাছে আকর্ষক ম্যালে ওঠার লিফ্ট। দারুণ অবাক হয়েছিলাম আগেরবার। এবারেও উৎসাহ ছিল বেশ। হেঁটেই পৌঁছে গেলাম লিফ্টের গোড়ায়। ভিড় এখানেও। লাইন পড়েছে। শুরু হল বৃষ্টি। না না, এভাবে একেবারে কিছু না বলে চলে যাওয়াটা ঠিক নয়। সব্বাই সিমলা ঘুরে এসেছে এটা ভেবে নেওয়া ঠিক নয়। যাঁরা এখনো যাননি আপনাদের জন্য বলি, হাঁটতে না-চাইলে ট্যাক্সি করে নিতে পারেন। ওল্ড বাসস্ট্যান্ড থেকে সিমলা ম্যাল ট্যুরিজম্-লিফ্ট বললে একশো টাকায় নিয়ে যাবে। গিয়ে দেখবেন, ওমা! এতো হেঁটে আসলেই হত! লিফ্টে টিকিট কেটে উঠতে হয়। কত করে টিকিট জিজ্ঞেস করলে... বলব না। আপনি কবে যাবেন, তখন কত দাম থাকবে টিকিটের কে জানে? আরো কোনো জিএসটি বা আরো কিছু লেগে যাবে কিনা ততদিনে... বাদ দিন। লাইন দিয়ে যে লিফ্টে উঠলেন এটি প্রথম লিফ্ট। তুলে আনবে আপনাকে অর্ধেক পাহাড়। সেখান থেকে বেড়িয়ে খানিক পাকদন্ডী করিডর, যার মাথায় শেড দেওয়া! যেন কোনো রাজার মহলের চিলতে ঝুলবারান্দা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন আপনি। পড়ন্ত বিকেলের সূর্য সরাসরি ঝিলিক ফেলছিল চোখে; দুষ্টু কিশোর যেমন আয়নার টুকরোয় রোদ্দুর ধরে চোখে ফেলে। করিডোরের অপর প্রান্তে দ্বিতীয় লিফ্টের দোরে দাঁড়িয়ে সূর্যের দুষ্টুমি দেখছি; ওমা গো! ঐ সূর্য আর এই ঝুলবারান্দার ঝিল্লির মাঝের খাদে ঝম ঝম নেমে এল বৃষ্টি। ওখানে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতেই করিডোরের চাল বেয়ে সারি সারি ধারাপাত; শেষ বিকেলের সোনা গায়ে গুলে নিয়ে অঝোরে ঝাঁপিয়ে পড়ছে নিচে। লিফ্টের দরজা খুলে গেল। আমরা উঠে এলাম আরো অর্ধেক পাহাড়।
সিমলা ম্যাল। চার্চ, মিউনিসিপ্যালটি ভবন, হাসপাতাল ইত্যাদি সম্বলিত প্রকৃতির রুফ-টপে এ যেন এক ওপেন-এয়ার শপিং মল। কতকটা ঠিকই বললাম। আমার মতো যারা ভীষণ ছিঁচকাদুনে টাইপের, তারা মুখ বেঁকিয়ে বলতে পারেন, এখানে মালিন্য নেই। একদম ঠিক। সবকিছু ঝকঝক করছে। ঐ যে অনেকটা ঘুরে আলসেমি করে বাঁক নিয়েছে চওড়া রাস্তা, ঐ যে রাস্তার পাশে ঠাসাঠাসি সব মণিহারি দোকানের সারি কি-মনোহরি, ঐ যে দোকানে দোকানে রাস্তায় আহ্লাদে আটখানা শিশু-বুড়ো-যুবক-যুবতী... বেপরোয়া বা সাবধানী, ঐ যে সব দিল্লি, হরিয়ানা, কেরল, কর্ণাটক, বাংলা... মানে তামাম ভারতবর্ষ কেমন লুটোপুটি, কেমন দিশেহারা, কেমন সবটা আলোয় আলোয় মাতোয়ারা, সবটা ঝকঝকে। এখানের ভিড় উদ্ভ্রান্ত, আত্মমগ্ন, টইটম্বুর। এখানের ভিড় ফুরফুরে, গায়ের ওপর এসে পড়ে না। এখানে আপনি একলা হতে পারেন অনায়াসে। দেখতে পারেন নিজের মনে, অস্তমিত সূর্য দূরের পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে জোনাকিদের (পাহাড়ি গ্রাম) তার আলো বিলিয়ে দিয়ে ডুবে যাচ্ছে। এখানের হইচইয়ের ওপর আলগা একটা নৈঃশব্দের কুয়াশা কুয়াশা জড়িয়ে থাকে। বৈভব আছে, আপনি না-চাইলে আপনাকে ধাঁধাবে না! মত্ততা আছে, আপনি মাতাল হবেন, নাকি বুঁদ হয়ে থাকবেন, পুরোপুরি আপনার সিদ্ধান্ত। আজ এখানে কনকনে ঠান্ডা হাওয়ার সাথে যখন তখন ঝাপতাল বৃষ্টি আসছে। চার্চের পাশে যে ওয়াচ টাওয়ারের মতো উঁচু বসার জায়গাটা, তার পিছনটায়, সবার আড়ালে প্রায় একটা ছবির মতো নিরালা কুটীর - 'Book Café – The Takka Bench'। লাইব্রেরি ও চা-কফি-স্ন্যাক্স-এর এক লাজবাব মেলবন্ধন! সিমলা ম্যালের জগঝম্পতে সময় 'কাটে' না; সময় কেমন মিলিয়ে যায়...ফুস্স্স্! আর ম্যালের এক কোণায় নাম-না-জানা বনফুলের মতো এই আস্তানাটিতে সময় যেন চুপটি করে এসে পা-গুটিয়ে বসে পাশের চেয়ারটিতে। এর বেশি লিখলে মনে হবে বিজ্ঞাপন করছি, কিন্তু একটি মাত্র হাফ-তথ্য দিয়ে এখান থেকে বেরিয়ে যাব, এই ক্যাফেটি সিমলা জেলের কয়েদিদের দ্বারা পরিচালিত।
পঞ্চম অবস্থানঃ সিমলা ঘুরে দেখার প্ল্যান। দেখে শুনে গাড়িই ঠিক করা। যারা 'সব' ঘুরিয়ে দেখিয়ে দেয়। বুড়ির চুল (Candy floss) আস্বাদন করা আছে নিশ্চয়ই। বুড়ির চুলের ঠাট্টাটা কেমন? মুখে দেওয়ার আগে চোখের সামনে, কাঠির ডগায় যে গোলাপী প্রলোভন তার মায়া ফাঁপিয়ে আপনাকে ফুসলাচ্ছে, মুখে দিলেই, ওমা! চুপসিয়ে এতটুকু! আপনারা হয়তো অনেক জায়গা ঘুরেছেন, তার মধ্যে সিমলাও আছে নির্ঘাৎ, সাইট-সিইং-এর নামে সিমলায় যা হয়, তা ঐ বুড়ির চুলের ঠাট্টাটাই মনে পড়ায়। ল্যামিনেট করা A4 সাইজ পেপারে ছবিসহ যে লিস্টি থাকে 5 points / 7 points / 12 points-এর, তা দেখে আপনার মনে হতেই পারে অনেক সস্তায় অনেক ঘোরাচ্ছে। আগেরবার ওরকম 'সস্তায়' ঘুরে নিয়েছিলাম বলে, এবার আগের থেকেই দাঁতে দাঁত চেপে ছিলাম "শুধু ফাগু", ইচ্ছা করলে চেইল রাজবাড়ি (এখন তো ওটা র্যাঞ্চোদের বাড়ি)। গাড়িওয়ালার থেকে পেলাম নালদেহ্রা আর তত্তাপানি বা তপ্তপানি, অর্থাৎ আরো একটি গরম জলের ঠেক। জানা গেল ফাগু হয়ে ঐ দুটো জায়গায় ঘোরা যাবে না। সময় হবে না। ফাগুটাকে ছাড়তে চাইছিলাম না, ঐ যে পাহাড়ি রাস্তায় ঘোড়সওয়ারি। তাই শেষমেষ কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়েই পান্সি চলল কুফরি। এখানে বলে রাখি, গাড়িওয়ালা বড়মুখ করে বলবে কিন্তু "কুফরি ঘুমায়েঙ্গে, ফাগু ঘুমায়েঙ্গে"। আপনিও গুগ্ল মামার থেকে কুফরি, ফাগুর আলাদা আলাদা ছবি দেখে মুগ্ধ! আহা আহা আহা... আবেগ সংযত করুন, না করতে পারলে চিটেড ফিল করবেন। কুফরি আর ফাগু, একদমই কিন্তু সিংহী পার্ক আর একডালিয়া সার্বজনীন। সরি, কলকাতার বাইরের মানুষদের জন্য বলি, মুকেশ অম্বানীর নতুন সাতাশতলা বাড়িটার একতলা যদি হয় কুফরি, তবে সাতাশতমতলটির ওপর উঠলেই হল গিয়ে যাকে বলছি ফাগু ভ্যালি।
ফাগু ভ্যালিঃ খুব জোরের সঙ্গে আমার মত, এই জায়গাটায় বরফের সময় ছাড়া যাওয়া উচিৎ নয়। এই সময় কোত্থাও এক চিলতে বরফ নেই। এই সময় এখানে না-আসাই শ্রেয়। আর যদি গতরাত্রে মুষলধারে বৃষ্টি হয়ে থাকে তাহলে কি-দাঁড়ায় আপনাদের দেখাই। কুফরি গাড়ি স্ট্যান্ডে গাড়ি পার্ক হয়ে গেল। এখান থেকেই কাটা হয়ে গেল ঘোড়ার স্লিপ। ৫০০ টাকা/ঘোড়া, সহিসসহ; দরদাম করে দেখতে পারেন। রুট একটাই। এই সামনের যে পাহাড়ের ঢালটা দেখছেন ঘোড়ার খুরে খুরে খুঁড়ে খুঁড়ে গেছে, এই উপল-বন্ধুর পথ ধরে সারি সারি ঘোড়া, আর ঘোড়ার ওপর বসে থাকা নানানরকম নমুনা দেখতে দেখতে, আমাদের মতো আপনিও পৌঁছে যাবেন ঢালটার ওপরে। আর ঢালের ওপারেই ভ্যালি।
না, এখানে সব ঘোড়ার নাম রাজু নয়। আলাদা বাহারি নাম আছে সবার। তবে সব পাহাড়ের ঘোড়াদের মতো এদেরও একই স্বভাব, খাদের ধার ঘেঁষে যাওয়া। আরে আজ এইরকম কাদা-মাখা অবস্থা এবড়ো-খেবড়ো পাথুরে ঢালটার... "ও ভাই, ও ঘোড়াওয়ালা, আরে ঘোড়া সামালো! হেইঃ কেইদিকে লে যাতা? খালি খাদকে ধারমে যাতা... হেই দেখো পিছলে পিছলে যাতা তো!" সহিসব্যাটাচ্ছেলেগুলোকেও দেখবেন ভারি চেনা লাগছে! ভালো করে দেখুন, এইরূপ ঘাড়-গুঁজে চলা উদাসীন বিশেষ প্রজাতির প্রাণীগুলোকে আমরা কলকাতায় মেট্রোতে দেখিনা নিয়ত? কানে ঠুলি (ইয়ার ফোন) গোঁজা, কাঁধে ব্যাগ কলেজ/স্কুল পড়ুয়া? বিশ্বাস না-হয় আমার কথা মিলিয়ে নেবেন। আমাদের ভয়ার্ত ডাকাডাকিতে মাঝে মাঝে হট্ হট্ করে এমন 'চাবড়াচ্ছে' ঘোড়াটাকে, যেন ওর উদ্দেশ্যই ঘোড়াসমেত আমাদের খাদে ফেলে দেওয়া। ভয় কাটাতে অনেকেই এই সময় খুব মিহি গলায় নিজের নিজের বাহনের সাথে আলাপ জমাতে চায়। সে-আলাপ অবশ্যই একতরফা। (সেই ভালো। নাহলে ভাবুন তো যদি কোনো একটা ঘোড়া ঘাড় ঘুরিয়ে বলত, "মেলা ফ্যাচ ফ্যাচ না-ক'রে চুপচাপ বোস্ না! আর একটা টুঁ শব্দ করলে দেব খাদে ফেলে!") হায়ারার্কির ওপরের দিকে অবস্থান করেও নিজের থেকে অনেক নিচের দিকে থাকা কাউকে এভাবে তেল দেওয়ার ঘটনা আমাদের সমাজ-ব্যবস্থায় সচরাচর এক্সপেরিয়েন্স করা হয়ে ওঠে না। ঐ দেখুন তবে... "উউউ তুফান, সোনা আমার, ঐদিকে যায় না বাবু, এদিকে এদিকে, দেখো ওদিকে খাদ, এদিকটা সেফ...হ্যাঁ হ্যাঁ বিজলির পেছন পেছন চলো। এইত্তো ভালো ছেলে...আবার, আবার কি-হল... এ মাইরি খালি খাদের দিকে যায়, এর কি ঝাঁপলগ্নে জন্ম নাকি?"
বিশ্বাস করুন, আগেরবারও মনে হয়েছিল এই শেষ। কিন্তু ঐ যে রোমাঞ্চমাখা শিহরণ মনে থেকে গিয়েছিল, প্রিয় বন্ধুদের সাথে আবার তা ফিরে পেতে চেয়েছিলাম। পেলাম না কিন্তু। সকাল থেকে ঘোড়ার পায় পায় থকথকে কাদা প্রথমেই একটা ঘিনঘিনে ভাব তৈরি করেছিল। পুরো অঞ্চলটাই যেন এক প্রকান্ড ওপেন-এয়ার আস্তাবল। বছরের এই সময়টায় ফাগু ভ্যালিকে অক্লেশে 'হাগু ভ্যালি' বলা চলে। তবে সেটাই সব নয়। ধীরে ধীরে মনটা খারাপ হতে থাকল ওপরে গিয়ে। শেষ প্রান্তে 'কুফরি (কি-একটা-যেন) উন্নয়ন সমিতি' ১০ টাকা করে কুপন কাটে। আগেও ছিল, এখনো আছে। এবার আবার তার সঙ্গে দেখি 'ফাগু ভ্যালি (কি-একটা-যেন) উন্নয়ন সমিতি' গজিয়েছে। আবার ১০ টাকা/ঘোড়া। এটা কিন্তু এক্সট্রা। যাহোক, নামলাম তুফানের পিঠ থেকে। ফেরার পথে আবার অন্য ঘোড়া। এই একই কুপন দেখিয়ে। এবার ভ্যালির দিকের ঢাল বেয়ে তরতর করে নামতে লাগলাম। চারপাশে পাহাড় ঘেরা ছড়ানো ভ্যালিটা আমাদের সামনেই। নতুন করে দেখবার ইচ্ছা আশ্চর্য সেই বাটি-সদৃশ প্রান্তর। সেই গোলাপ বাগান। সেই ছোট ছোট লাজুক দোকান ঘর টুকিটাকির। সেই ভিউ পয়েন্ট। যেখান থেকে শুধু মাত্র হাতের অদ্ভুত আন্দাজে টেলিস্কোপ সঠিক অ্যাঙ্গেলে ঘুরিয়ে, আপেল বাগান, চিনের প্রাচীর 'স্পষ্ট' দেখান কিছু স্থানীয় জাদুকর; এমনকি মেঘলা দিনেও! আমি বিশ্বতার্কিক, চোখ রাখিনি দূরবীনে গতবার। বিশ্বাসই করে উঠতে পারিনি এই ঘন কুয়াশায় কিছু দেখতে পাব। কিন্তু নিজের চোখে দেখেছি, বোসবাবুর ছেলে পিলু সব স্পষ্ট দেখতে পেয়েছিল। মাথা নেড়ে নেড়ে হ্যাঁ হ্যাঁ বলছিল আগেরবার। আর আমি তার পাশটিতে দাঁড়িয়ে ঐ কুয়াশার মধ্যেই উঁকি-ঝুঁকি মেরেছিলাম মাইনাস পয়েন্ট সেভেন-ফাইভ পাওয়ারের চশমা চোখে। বোসবাবুর ছেলে পিলু আর আমি সেবার দাঁড়িয়েছিলাম পাশাপাশি, একেবারে খাদের ধার ঘেষে। এই কথাটা কেন বললাম? কেন বলুন তো এতোখানি আন্ডারলাইন করে আমাদের আগের অবস্থান বোঝাতে চাইলাম? কারণ আছে। এবার গিয়ে হতভম্ব হয়ে গেলাম। ছড়ানো ভ্যালিটার এই দূরবীন দিয়ে দেখার অংশটা কেমন সরু মতো আরো একটু উঁচু হয়ে ভারি চমৎকার একটা ফালি তৈরি করেছে। ঐখানটা এমন যে দেখলেই মনে হবে গিয়ে ঐ ধারটাতে দাঁড়াই। টেলিস্কোপোওয়ালারাও ট্রাইপডের ওপর তাদের রোজগার দাঁড় করায় এই জায়গাটাতেই। এবার দেখলাম ঐ ফালিটুকুতে যাওয়ার পথের খানিক আগেই কাঁটাতার লাগিয়ে ঐ ফালিটুকু ঘিরে ফেলা। কাঁটাতারের ওপারে যাওয়ার একটা গেট করা, সেখানে টিকিট দেখিয়ে যেতে হবে। কিসের টিকিট? না, ঐ যে এপিঠ-ওপিঠ ল্যামিনেট করা A4 সাইজ পেপারে ছাপানো আছে, ঐসব দ্রষ্টব্যগুলো যদি ম্যাজিক টেলিস্কোপ দিয়ে আপনি দেখতে রাজি থাকেন তবেই আপনি গেটের ওপারে যেতে পারবেন। বাস্তবিকই আমার পেয়ারের ঐ জায়গাটায় ট্রাইপড আর টেলিস্কোপ যত দেখলাম ততজন পিলুকে দেখলাম না। বন্ধুকে যখন সেই দুঃখ বলছি কাঁটাতারের এদিকে দাঁড়িয়ে, ওপার থেকে টেলিস্কোপের মালিকরা মাথা খেয়ে ফেলছে তদবির-তাগাদায়। মনে হল একবার, ঘাড় ধরে দিই এদের কপালগুলো কাঁটাতারে ডলে!
না পেরে মুখ ঘুরিয়ে ফিরে আসছি, ভাবছি কেন এলাম, না আছে এবার সেই কনকনে হিমেল হাওয়া, না আছে রীতিমতো যত্ন করা সেই গোলাপ বাগান, না পাচ্ছি কোনো পাহাড়ি রম্য স্থানে ঘুরে বেড়াবার মতো এতটুকু ফুরুফুরে আমেজ। এতো পুরোদস্তুর মেলা! শুধু দোকান দোকান দোকান। ভ্যালিতে আপনাকে স্বাগত জানাবে সার সার চাট-চাউমিনের দোকান। বিশালাকার গোলার মধ্যে মানুষকে পুরে গড়িয়ে দিচ্ছে। আনন্দ কই? শুধু যে ফুর্তির ফাগু ভ্যালি! ভাবছি কত তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়া যায় এখান থেকে, ওমনি গায়ের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ল অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস কমিটির ভাইয়েরা। আবার আরেক দফা ল্যামিনেটকরা তালিকা। এ পাহাড় থেকে তাদের স্পেশাল গাড়িতে করে পাশের পাহাড়ে নিয়ে যাবে, সেখানে সমস্ত বন্দোবস্ত। দোল খাওয়া, ঝোলা, দড়িতে হাঁটা, পায়ে দড়ি বেঁধে মরণ-ঝাঁপ ইত্যাদি ইত্যাদির প্যাকেজ। এই ফ্যাসাদে, ঐ 'প্যাকেজ' কথাটি কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ; কারণ প্যাকেজের একদিকে 'ওদের প্রফিট' ও উল্টোদিকে 'আপনার পোষাল না' থেকে যেতেই পারে। আমরা আমাদের ঘোরানো মুখ আর ফেরালাম না। একেই ঘুসঘুসে জ্বরে যেন বিস্বাদ হয়ে আছে মুখ, আর গায়ে পড়ে সাধতে এসেছে, 'কেক খাবেন?' ধুত্তোর! এসেছি যখন, ঐদিকের টঙে ঐ মন্দিরটা আছে না, ওটা একবার ঘুরে দেখে আসি। মন্দিরটা একটু উঁচু জমিতে। সিড়ি ভাঙ্গতে হয় গোটা কতক। একটা মজা আছে। এদিক দিয়ে উঠে মন্দিরের চাতাল দিয়ে ওদিকে নেমে যাওয়া যায়, মন্দিরের বিগ্রহর সঙ্গে মোলাকাত না করেই। সেদিকেই যাচ্ছিলাম। যাওয়ার পথে মন্দিরের প্রায় গোড়ায় চেয়ার নিয়ে বসে আছে দুই স্থানীয় ভাই। কাছাকাছি হতেই জিজ্ঞেস করে বসল, "হরর্ হাউস মে যাইয়েগা?" খাটা পায়খানার থেকেও ছোটো সাইজের একটা তেড়াবেঁকা প্রকোষ্ঠের গায় নিদারুণ কঙ্কালের ছবিআঁকা কিছু একটা চোখে পড়েছিল এদিকে আসতে আসতেই। ভাব-সাব দেখে সঙ্গের বন্ধু জিজ্ঞেসই করে বসল, "অন্দর ভুত হ্যায় ভি, ইয়া আপলোগহি..." দু'পক্ষের কেউই ইন্টারেস্ট দেখায়নি আর। মন্দিরে উঠতে গিয়ে বাঁধা। মন্দির লাগোয়া নতুন সাব-মন্দির তৈরি হচ্ছে এবং তৎসহিত আনুদানের জন্য অনুরোধ। অ্যাবাউট টার্ন ও মন্দিরের পাশের ঝোপের মধ্যে দিয়ে পায়-চলা পথ ভেঙ্গে পেছনের খাদের পাশে গিয়ে দেখি সবুজ তারজালি দিয়ে ভ্যালির এ অংশ সুরক্ষিত করা। এখান থেকেই দেখতে পেলাম 'অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস'-এর অবাঞ্ছিত বোঝাখানা ঘাড়ে করে দাঁড়িয়ে আছে পাশের সেই হারকিউলিস পাহাড়টি। এখান থেকে সবই খেলনা খেলনা মনে হয়। কোন এক মোবাইল কোম্পানি এসেছিল ঐ পাহাড়ে সুউচ্চ টাওয়ার বসাতে। তার নিশান হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা টাওয়ারটা আমরা দেখতে পাচ্ছি। তারা চলে গেছে তাদের সিমেন্টের অফিস ঘর, স্টাফ কোয়ার্টার, গাছ কেটে সবুজ ঘাস লাগানো লন ফেলে রেখে। তাকেই অ্যাডভেঞ্চার পার্কের রূপ দেওয়া নির্ঘাত হিমাচল ট্যুরিজমের এক সফল পদক্ষেপ। বেলা অনেক হল, খুব খিদে পেয়েছে। গাড়ি পর্যন্ত পৌঁছনোর তাড়ায় আমরা ঘোড়ার খোঁজে গেলাম।
নালদেহ্রাঃ কুফরি থেকে গাড়ি যখন ছাড়ল তখন আমাদের মন, পেট দুটোই খালি। জানিনা আমাদের দেখে ড্রাইভার মহাশয় কিছু বুঝেছিলেন কিনা, আমাদের একবার অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের কথা জিজ্ঞেস করলেন, আর আমরা তৎক্ষণাৎ খারিজ করে দিলাম। গাড়ি এখন সিমলামুখী। হোটেল হয়ে যাওয়া 'রাজার বাড়ি চেইল' দেখতে উজিয়ে আরো ত্রিশ কিলোমিটার যাওয়ার কোনো ইচ্ছা দেখাল না কেউ। বরং গাড়ির মধ্যেই একটু একটু করে কথাটা ফেনিয়ে উঠল, 'এবার তবে নালদেহ্রা।' ড্রাইভার খুব একটা রাজি নয়। আমরা ক্রমশঃ নাছোড়। ড্রাইভারের সেই এক বাজারি চালু পদ্ধতি আমাদের ডিমোটিভেট করার, "এক্সট্রা টাকা লাগবে"। আমাদের মত - কেন লাগবে? আমরা তো বাকি আর কিছুই ঘুরছি না। ড্রাইভার নিজেই একখানা গোটা হোটেলের মালিক। ফ্রী টাইম, তাই গাড়ি চালাচ্ছে। ঠোঁটে পাতলা হাসিটা রেখেই বলল, "তো ঘুম্ লিজিয়ে না!" আসলে সেই ল্যামিনেট করা পেপারের লিস্ট অনুযায়ী জায়গাগুলো, সব যাতায়াতের রাস্তাতেই পড়ে থাকে। স্রেফ গাড়ি দাঁড় করিয়ে দেখিয়ে দিলেই হল। সকাল বেলা গাড়ি রওনা করে সিমলার সব ড্রাইভার সিমলা শহর থেকে অল্প বাইরে এসেই এক বেমক্কা পাহাড়ের বাঁকে গাড়ি দাঁড় করিয়ে বলবে, এই যে গ্রীন ভিউ পয়েন্ট। যান নেমে দেখে আসুন। আপনার গা ছুঁয়ে বলছি, ঠাহর করতেই সময় লাগবে যে এটাও একটা দ্রষ্টব্য! নাম-না-জানা পাহাড়ের খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে ওপারের পাহাড়ের গায়ে দেখুন কেমন সবুজ পাইন বন, গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়ে আছে যেন ব্রিগেডে কোনো রাজনৈতিক সমাবেশে 'গ্রাম থেকে আসা' ভিড়। বাঁকের মুখটাতে আরো আরো গাড়ি এসে থামছে। ভিড় হয়। তাই খাদের দিকটায় রাস্তার ধার ধরে চা, টুপি, স্থানীয় গয়না ইত্যাদির স্টল। আপনি খানিক চিড়িক চিড়িক ফটো বা সেল্ফি তুলবেন। সঙ্গের সাথীদের গাড়ি থেকে নেমে আসতে অনুরোধ করবেন, সবাই রাজি নাও হতে পারে। খুব স্বাভাবিক। তারপর আপনি যদি ব্যাটাছেলে হন, গাড়ি, ভিড়, স্টল, কোলাহল এসব ছাড়িয়ে হেঁটে হেঁটে খানিক ফাঁকায় যাবেন। বন্ধুরা কেউ ভাববে আপনার ফটোগ্রাফির যা বাতিক, ভালো ভিউ খুঁজছেন। আবার কেউ ভাববে নির্জনে প্রকৃতি উপভোগ করতে চাইছেন খানিক। কেউ আবার খেয়ালও করবে না। আর ড্রাইভার একবার আড়মোড়া ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে বলবেই-বলবে পেছন থেকে, "জলদি আইয়েগা"। এসব হবেই হবে, কারণ এখানে আর কিছু হওয়ার নেই। আপনি ঠকে গেছেন। আপনি নিজে মনে মনে ভাবছেন, নামলামই যখন একবার করে নিই। গাড়ি, ভিড়, স্টলগুলোকে যখন বাঁকের আড়ালে ফেলে দিয়েছেন, আর মন-মত জায়গা খুঁজছেন, তখনই আবিষ্কার করবেন, ওমা! এদিকেও তো ছোট-খাটো একটা ভিড়, তবে শুধু ব্যাটাছেলেদের। সবাই সবার থেকে মুখ ঘুরিয়ে রেখেছে।
যাক, বাজে কথা অনেক হল। আমাদের কথায় আসি। হল কি, কুফরি থেকে সিমলার দিকে সোজা ফিরে আসতে আসতে যেখান থেকে বাঁয় মোড় ঘুরতে হয়, ঠিক সেই পয়েন্ট থেকে মোড় না-ঘুরে আমরা যদি সোজা এগিয়ে যাই আরো ততখানি যতখানি পিছনে কুফরি, তাহলে পাব নালদেহ্রা - পাহাড়ের কোলে কেয়ারি করা এক সুরম্য বিশ্রামাগার বলা যেতে পারে। এখানে যেকোনো প্রকার শব্দ যেন ঢালে ঢালে গা-এলিয়ে চুপ। যে গাড়িতে সওয়ার হয়ে নালদেহ্রায়, সেও চুপ করে গেল সামান্য কিছু বেশি বখরায়। ড্রাইভাররা অভিজ্ঞ হন, তবে সবসময়ই আরো অভিজ্ঞ হয়ে ওঠার অবকাশ থেকে যায়। যেমন উনি ধারনায় আনতে পারেন নি, নালদেহ্রায় সিনেমার শ্যুটিং হয় এই তথ্য আমাদের খুব একটা রোমাঞ্চিত করবে না। বেলা তখন অনেকটা গড়িয়ে গেছে। একবার মনে হল হোটেলে লাঞ্চ পেলে হয়। আবার যদি শ্যুটিং পার্টি এসে থাকে তবে তো কম্মো-কাবার; সমস্ত খাবার সাবাড়!
গাড়ি থেকে নেমে প্রথমেই চোখে পড়ল ঘোড়া। তারপরেই ঘনিষ্ঠ হয়ে এল ঘোড়ার মালিক। ঘোড়া প্রতি ৬০০ টাকা। আমরা বেঁকে বসলাম ২০০ টাকায়। আসলে ওদের কাটাতে চেয়েছিলাম। এরপর চোখ ফেরালাম নালদেহ্রার দিকে। আর সত্যিই, চোখ ফেরাতে পারলাম না। এইযে পাহাড়ের প্রায় চুড়োয় আমাদের গাড়ি এনে ফেলেছে, এই পাহাড়টার মাথাটা বেশ ছড়ানো, আর ঢেউ খেলানো। এতোটাই ছড়ানো যে এর একপ্রান্তে এক পেল্লায় গল্ফ কোর্স রয়েছে। কিন্তু এখনই ওখানে যাব না। এই ঝকঝকে পিচঢালা রাস্তার ওপর দিয়ে শ্রান্ত অথচ শান্তি নিয়ে হেঁটে চলেছি, আর ঐ যে রাস্তাটা সামনেই বেশ বড় করে বাঁক নিয়ে এই ঢেউ খেলানো পাহাড়টার ওদিকে গায়েব... ঐ বাঁকটার কাছে যেতেই দেখি বাঁকের মুখে দাঁড়িয়ে আছে HPTDC-র আকারে প্রকান্ড রাশভারী এক রেস্তোরাঁ। ভীষণ ভীষণ খিদে নিয়েও ঢোকবার আগে একটু দোনামোনা করছিলাম আমরা। না-জানি কত দামী! খাওয়া শেষ করে বেরিয়ে আসা এক ভদ্রলোক আমাদের ক্রস্ করে যাওয়ার সময় আশ্বাস দিয়ে গেলেন; আর আমরা হুড়মুড় করে ঢুকে পড়লাম। রাস্তার প্যারাবোলিক বাঁকের কোলটা জুড়ে নির্মিত, তাই ভারি উপযুক্ত ব্যবহার দেখলাম রেস্তোরাঁটির নির্মাণে। অর্ধচন্দ্রাকৃতি ডাইনিং রুমের ধনুকের মতো বাঁকানো অংশে সার সার অলিন্দ, একেকটি সুবিশাল ক্যানভাস যেন! প্রতিটির এপাশে বসবার ব্যবস্থা আর, বসে বাইরের দিকে তাকালেই, সামনের দেওয়াল জোড়া অশেষ প্রকৃতি। মোটামুটি ফাঁকাই ছিল। আমরা বাচ্চাদের মতো ২/৩ বার আসন বদলালাম শুধুমাত্র 'বেস্ট ভিউ' সম্পন্ন window sight টা নেওয়ার জন্য... ভাবুন একবার! এর বেশি বললে আবার মনে হতে পারে বিজ্ঞাপন, তবে জেনে রাখুন এ-যাত্রা নালদেহ্রা আমায় উচ্ছ্বসিত করেছে। মধ্যাহ্নভোজন পর্ব চলাকালীন একবার আমাদের গাড়ির ড্রাইভারের ফোন এল, "সর্জি, ঘোড়া লে লো, সস্তা কর দেঙ্গে, সাড়ে তিনশ দে-দিজিয়েগা এক ঘোড়েকা।" ৬০০টা সাড়ে তিনশোয়। আরো বলে রাখি, খাওয়া-দাওয়া শেষ করে যখন বেরোলাম, ড্রাইভার নিজে নিয়ে এল ঘোড়ার মালিক-কে আমাদের কাছে, ৩০০ টাকা/ঘোড়াও রাজি হয়ে গেল! সত্যি বলছি, আমরাও রাজি হয়ে যেতাম। এই মনোরম নিরিবিলি প্রায় ফাঁকা আঁকা-বাঁকা সবুজ প্রকৃতি-ঢাকা মোহময়ী উপত্যকা ঘোড়ায় চড়ে ধীরে ধীরে ঘুরে ঘুরে দেখার অভিজ্ঞতা স্মৃতির ভান্ডারে এক নায়াব নাগমণি হয়ে রয়ে যেতে পারত। কিন্তু হয়নি তা। ভেতো বাঙ্গালী দিনে ক'বার ঘোড়ায় চড়বে? ট্যুর বাজেটের প্রসারণশীলতার ক্ষমতাও অতি সীমিত (এই বাজেট নামক চাদরটির যে কি ফালা ফালা অবস্থা ঘটেছিল সে প্রসঙ্গে আসব)। তাছাড়া অমন ভরপেট্টা গেলার পর সব কথা অত মাথা দিয়ে চিন্তা করা সম্ভবপর নয়, সেই সময় শরীরের বেশি ভাগ রক্ত উদরাংশে কর্মরত থাকে। তাই অবসন্ন মস্তিষ্কে আমরা '২০০ টাকা করে দেব' এই গোঁ ধরে থাকলাম। বিরসবদনে ঘোড়াওয়ালা বলে চলে গেল, "ঘুম লেতে সর্, করীব ৬ কিমি রাস্তা হ্যায়, ৩০০ জাদা নেহি থা, থোড়া অ্যাডজাস্ট কর লেতে!" যে সরু পায়েচলা চ্যাটালো পাথর বাঁধানো পথ রেস্তোরাঁর সামনে দিয়ে সরাসরি ঢালের চরাইয়ে উঠে গেছে আমরাও সেদিকে উঠে চললাম। নিজেদের মধ্যেই নানান রকম বাক্য বললাম, 'ড্রাইভারেরও ভাগ আছে', 'অনেকটা এক্সট্রা খরচ হয়ে যাবে', 'একবার তো চড়লাম ঘোড়ায়', 'আর শরীরে দিচ্ছে না, খাওয়ার আগে হলে তাও হোত', এমনকি 'নেক্সট টাইম এখানে এসেই ঘোড়ায় চড়ব' টাইপের ইত্যকার কথায় নিজেদের ভেত্তরকার 'হলে-বেশ-হত'টাকে চাপা দিতে দিতে উঁচু উঁচু পাইনের ছায়ায় ছায়ায় উঠে এলাম ঢালের মাথায়। আর প্রকৃতি আমাদের সব ক্ষেদ ভুলিয়ে দিল নিমেষে।
খুব দায়িত্ব নিয়ে বলছি, বরফের সময় না-হলে ফাগু যাবেন না। সোজা নালদেহ্রা চলে আসুন। এখানে সময় কাটান। প্রকৃতি ছাড়াও রইল ঘোড়ায় চড়া, দড়িতে বাঁদর-ঝোলা হয়ে সোড়কে যাওয়া খাদের ওপর দিয়ে, ঝুলন্ত সাঁকোর ওপর দিয়ে হাঁটা ইত্যাদি অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস। রইল গল্ফ কোর্স। এখানে অ্যামেচারদেরও শেখানোর ব্যাবস্থা আছে। আরেকটু বুঝিয়ে বলি। গল্ফ কোর্সের এক পাশে একটা বড়সড় উঠোনের মাপের জায়গায় মিনিয়েচার গল্ফ কোর্স বানানো আছে সমস্ত রকম চিহ্নসহ। আমাদের মতো ট্যুরিস্টরাও দু'এক দান ট্রাই করতেই পারি ইন্সট্রাক্টরের সাহায্য নিয়ে। মেলায় যেমন বেলুন ফাটাই ১০ টাকায় ৬টা গুলি, সেইরকম। ১০টা পিট্ ১৫০ টাকা না কীযেন। আমাদের সময় সমস্তটাই বন্ধ ছিল। আপনারা চাইলে নেট থেকে তথ্য নিয়ে যাবেন প্লিz। আমাদের তো প্রকৃতিই শুষে নিয়েছিল। গেলে তাড়াতাড়ি যান, কারণ মানুষও তো প্রকৃতিকে শুষে নিচ্ছে।
(ক্রমশ)
হিমাচলের তথ্য ~ হিমাচলের আরও ছবি
কাঞ্চন সেনগুপ্তের ছেলেবেলা কেটেছে ইস্পাতনগরী দুর্গাপুরে। কর্মসূত্রে কলকাতায়। ২০০০ সাল থেকে বেসরকারি কনস্ট্রাকশন ফার্ম সিমপ্লেক্সের সঙ্গে যুক্ত। ভালো লাগে লেখালেখি, ছবি তোলা, বেড়ানো। আবার কখনোবা সময় কেটে যায় ছবি আঁকা বা টুকিটাকি হাতের কাজে।