রাঁচিগমনঃ

তপন পাল


~ রাঁচির আরও ছবি ~

ভূমিকাঃ বেডরুম বা বোর্ড রুমের কথা বাইরে আলোচিত না হওয়াটাই শোভনতা; তবে তোমরা তো আমার ঘরের লোক, তোমাদের বলতে অসুবিধা নেই। একদিন, বা ঠিক করে বলতে গেলে একরাতে, শ্রীমতী পাল আমাকে বললেন তিনি একবার হাজারিবাগ যেতে চান। শুনে আমি আশ্চর্য হলাম; হাজারটি বাঘ বা হাজারটি বাগান, যে অর্থেই শহরটি তার নাম অর্জন করে থাকুক না কেন, বাঘ বা বাগানের সঙ্গে আমাদের খুব একটা সম্প্রীতি নেই। আমরা খুঁজি সমুদ্র, নদী, নিদেন পক্ষে নালা খাল বিল পুকুর...। হাজারিবাগে তো যতদূর জানি কোন বড় নদীও নেই। দামোদরের এক শীর্ণ শাখানদী কোনার শহরটির পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে; অন্তত এমনটিই দেখেছি রেলগাড়িতে যেতে যেতে।
তাহলে হাজারিবাগ কেন? শ্রীমতী পাল বললেন আজ নয়, সেই ১৯৮৭ থেকেই তার হাজারিবাগ যাওয়ার শখ। তখন আমার আস্তে আস্তে মনে পড়ল। ১৯৮৭তে আমরা থাকতাম বহরমপুরে, জাতীয় সড়ক সন্নিহিত এক সরকারি আবাসনে। সেখানে আমাদের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী, জনৈক পরিবহণ আধিকারিক, মহাসমারোহে হাজারিবাগ গিয়েছিলেন রাজারাপ্পার ছিন্নমস্তিকা মন্দিরে পুজো দিতে। তিনি আমাদেরও তাঁর সঙ্গে যাওয়ার অনুরোধ করেছিলেন; কিন্তু তখন পুত্রটি নেহাতই ছোট; তাই আর যাওয়া হয়ে ওঠে নি। কে জানতো যে সেই না যেতে পারার অতৃপ্তি তিনি লালন করেছেন এতদিন! খোঁজ খবর শুরু হল। জানা গেল রাজারাপ্পা হাজারিবাগ ও রাঁচি, উভয় শহর থেকেই সহজগম্য। তদনুযায়ী গন্তব্য ঠিক হল রাঁচি।
বিকেলবেলার দিকে মধ্যেমধ্যে চা খেতে আমি বাবুঘাটের দিকে যাই। তখন দেখেছি রাঁচির বাস ছাড়ে মুহুর্মুহু। তবে কি বাসেই যাব? শেষ অবধি যাওয়া ঠিক হল ১৮৬১৫ হাওড়া-হাতিয়া ক্রিয়াযোগ এক্সপ্রেসে। ইনি হাওড়া ছাড়েন রাতের বেলা, দশটা দশে। খড়গপুর-টাটানগর-চান্ডিল-মুড়ি হয়ে রাঁচি পৌঁছান পরদিন সকাল সাতটায়। ঠিক হল চারটে দিন থাকা হবে, তার মধ্যে দুদিন বেরোনো হবে, একদিন রাজারাপ্পা আর একদিন ম্যাকক্লাস্কিগঞ্জ। ফেরা ওই ১৮৬১৬ হাতিয়া-হাওড়া ক্রিয়াযোগ এক্সপ্রেসেই। ইনি রাঁচি ছাড়েন রাত সাড়ে নটায়, হাওড়া পৌঁছান পরদিন সকাল সাড়ে ছটায়।
তদনুযায়ী হাওড়া স্টেশনের নতুন ঘাঁটি। আমাদের রেলগাড়ি ২২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দন্ডায়মানা। তিনি অতি দীর্ঘ, দুটি এস এল আর, তিনটি অসংরক্ষিত, এগারোটি স্লিপার, চারটি বাতানূকুলিত তিন ধাপের, দুটি বাতানূকুলিত দুই ধাপের ও বাতানূকুলিত প্রথম শ্রেণীর মিশ্র কামরা নিয়ে তিনি তেইশ কামরার। আমাদের জায়গা HA 2 কামরায়। সেখানে গিয়ে দেখা গেল সত্তরোর্ধ দুই ভগিনী আমাদের বরাদ্দ দুটি লোয়ার বার্থে শয়ান। উঠুন ঠাকমা, এটা আপনাদের নয়, ইত্যাদি বলাকওয়ার পর জানা গেল তারা একটি সুবৃহৎ বাঙালিসুলভ ভ্রমণার্থীদলের অংশবিশেষ, এবং তাঁদের টিকিট বাতানুকুলিত তিন ধাপের কামরায়। এরপর মোটামুটি ঘটনাবিহীন ভাবেই চারবার সুবর্ণরেখা পেরিয়ে পরদিন সকালে রাঁচি। সকালবেলার দিকে জানলা দিয়ে দেখা গেল ঘন সবুজে ঢাকা টিলা ছড়িয়ে রয়েছে দিগন্ত জুড়ে, আকাশ রাঙিয়ে সূর্য উঠছে। সূর্যওঠা নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র আদিখ্যেতা নেই, আমি অতি ভোরে উঠি, রোজই সূর্যোদয় দেখি। চায়ের চিন্তায় মগ্ন হলাম।


প্রথম দিনঃ
জঙ্গল, টিলা আর আদিবাসী জনজাতি অধ্যুষিত ছোটনাগপুর মালভুমির দক্ষিণ দিকে জলের উৎস রাঁচি লেককে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে রাঁচি শহর, "দ্য সিটি অফ ওয়াটার ফলস্", বর্তমানে ঝাড়খন্ডের রাজধানী। ছোটনাগপুর মালভূমির অরণ্য আচ্ছাদিত রাঁচি "ছোটনাগপুরের রাণী" বলে অভিহিত। এই রাজ্যের রয়েছে এক সমৃদ্ধ ইতিহাস। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এই অঞ্চল। বিরসা মুন্ডার বীরত্বপূর্ণ কিংবদন্তী এখনও প্রতিটি মানুষের স্মৃতিতে জাগরূক।
হোটেল কর্তৃপক্ষ সদাশয়, তিনদিনের জন্য একটি গাড়ির বন্দোবস্ত তাঁরা আগে থেকেই করে রেখেছিলেন। তিনি এলেন নটায়। ততক্ষণে আমরাও প্রস্তুত। বাড়িতে বিউলি ডাল আলুভাতে দিয়ে ভাত খেলেও বেড়াতে বেরোলে আমরা কিঞ্চিৎ সাহেবভাবাপন্ন হয়ে পড়ি, বিশেষত প্রাতরাশের বিষয়ে। লুচি তরকারি, পুরি সব্জি, পরটা ঘুগনি শুনলেই বিরক্ত লাগে। ম্যাগো! ওইসব খাও আর সারাদিন আইঢাই কর আর ঢ্যাক ঢ্যাক করে ঢেকুর তোল। ঢের ভাল আমার মাখন-জেলিবিহীন শুকনো পাউরুটি।


প্রথমেই রাঁচি লেক। শহরের বুক জুড়ে ২১৪০ ফুট উঁচু রাঁচি পাহাড়ের পাদদেশে তার বিস্তৃত বিস্তার। ১৮৪২ সালে কলোনেল অন্সলে এই হ্রদের পত্তন করেন। রাঁচি পাহাড়ে উঠলে নাকি খুব সুন্দর নিসর্গদর্শন হয়, কিন্তু আমাদের পায়ে অত জোর নেই। তারপর টেগোর হিল। কাদম্বরী দেবীর স্বামী জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ১৯০৮ সালে কলকাতা ছেড়ে মোরাবাদি পাহাড়ে বাড়ি তৈরি করে বসবাস শুরু করেন। ১৯২৫ সালের ৪ মার্চ এখানেই তাঁর মৃত্যু। জ্যোতিরিন্দ্রনাথের অনুষঙ্গেই পাহাড়টি ক্রমশ লোকমুখে টেগোর হিল হিসেবে পরিচিতি পায়। তিনি তৈরি করেন 'শান্তিধাম', উপাসনার জন্য পাহাড় চূড়ায় ব্রহ্মমন্দির। একটি কুসুম গাছের নীচে রয়েছে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের তৈরি একটি বসার বেদি 'কুসুমতল'। বড়লোকের খেয়াল বলে কথা, পিতার অর্থ থাকিলে কত কী-ই না করা যায়। এখন তার সর্বাঙ্গে উপেক্ষা, অবহেলা, মালিন্যের ছাপ। দেখলে মন খারাপ হওয়ার বদলে গা রি রি করে, কী বিপুল অপব্যয়। তৎকালীন ভূমিনির্ভর বাবুয়ানির অর্থের উৎস কোথায়, কাদের গলা টিপে, সেটি আমাদের না জানার কথা নয়। সেখান থেকে নক্ষত্র বন। ২০০৩ সালে রাজভবনের বিপরীতে তৈরি বাগিচাটি রাশিচক্র অনুসারে সাজানো। তারপর রক গার্ডেন, আর তার নীচে শহরে জলের যোগানদার কাঁকে বাঁধ। রক গার্ডেনটি অতি মনোহর, বিশেষত হাতে সময় থাকলে। গাছ, ঝরনা, কৃত্রিম মানুষপ্রমাণ গুহা যার ভিতরে ঢুকে বসে থাকলে বিশ্বজাহান তোমাকে খুঁজে পাবে না। আহারে, চল্লিশ বছর আগে যদি আসতে পারতাম! সেখান থেকে দশম জলপ্রপাত; দুই ধাপে ৪৪ মিটার নীচে আছড়ে পড়ছে কাঞ্চি নদী; অরণ্যানী, পাহাড়, পাথর। কিন্তু সূর্যোদয় দেখতে হলে যেমন ভোরবেলায় উঠতে হয়, তেমনিই জলপ্রপাত দেখতে হলে বিস্তর সিঁড়ি ভাঙতে হয়। তাই দূর থেকেই।
পরবর্তী গন্তব্য শহরের প্রান্তে, ছোট টিলার উপর নির্মিত জগন্নাথ মন্দির। ১৬৯১-এ বড়কাগড়ের রাজা ঠাকুর অনীশনাথ সহদেও পুরীর মন্দিরের আদলে এটি নির্মাণ করান। ১৯৯০-এ সেই মন্দির ভেঙে যাওয়ার পর নতুন মন্দির হয়েছে ১৯৯২-এ। রথযাত্রার সময় বড় মেলা বসে। অনেকখানি হাঁটতে হল, গাড়ি রাখার নিয়ম টিলার নিচে। কেন যে এরা রোপওয়ে করে না! তারপর নবনির্মিত সূর্যমন্দির; টাটানগরের রাস্তায় পাহাড়ের মাথায় বিশাল রথের আকারের মন্দির - সম্মুখ ভাগে সাতটি পাথরের ঘোড়া। এবং মধ্যাহ্নভোজ।

সেখান থেকে দেউড়ি মন্দির; টাটা রাঁচি হাইওয়ের (জাতীয় সড়ক ৩৩ ) ওপর রাঁচি থেকে অনেকদূরে ষোড়শভূজা দেবী দুর্গার অতিবিস্তৃত অতি পুরাতন মন্দির। পাথরের ওপর পাথর সাজিয়ে, মধ্যিখানে সিমেন্টের মত কিছু না দিয়েই গাঁথনি। মন্দিরের পুরোহিতদের মধ্যে কয়েকজন আদিবাসী, বাইরে আদিবাসীদের একটি দল ধামসা মাদল বাজাচ্ছেন। একদা অখ্যাত এই পুরাতন মন্দিরটি অধুনা বহুখ্যাত, কারন মহেন্দ্র সিং ধোনি খেলতে যাওয়ার আগে এখানে পূজা দিয়ে যেতেন, তাই থেকে জনবিশ্বাসে মান্যতা পেয়েছে এই দেবীর প্রসাদেই ধোনির খ্যাতি। মৌখিক ইতিহাস বলে আজ অবধি যারা এই মন্দিরের মূল কাঠামোর পরিবর্তন করতে গিয়েছেন তাঁদের সবার জীবনেই নেমে এসেছে বিপর্যয়। তাই এখন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে মন্দিরের মূল কাঠামো অপরিবর্তিত রেখে মন্দির বড় করার। কংক্রিটের মস্ত মস্ত থাম উঠছে আকাশছোঁয়া – আর সেই কাজে ভক্তজনদের কাছ থেকে টাকা চাওয়া হচ্ছে। দেখে খারাপ লাগে, কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন হয় আমরা জানি, কিন্তু ধোনি তো সত্যিই ধনী। তাঁর প্রিয় মন্দিরের 'উন্নতিকল্পে' জনগণের কাছ থেকে টাকা তুলতে হবে! দু পাঁচ দশ কোটি টাকা তো তাঁর কাছে নস্যি!!
সেখান থেকে প্রত্যাবর্তন।

দ্বিতীয় দিনঃ
বাল্যকালে শ্যামনগরস্থিত ভারতচন্দ্র পাঠাগারের শিশু ও কিশোর বিভাগের সদস্য ছিলাম। ওই পাঠাগারের নামে সন্দেশ পত্রিকার গ্রাহকপদ ছিল। সেই গ্রাহকসংখ্যা উল্লেখ করে পাঠাগারের শিশু ও কিশোর বিভাগের অনেক সদস্যই পত্রিকার নানাবিধ প্রতিযোগিতা ও অনুষ্ঠানে অংশ নিত। পরবর্তীকালে আমার পুত্রও সন্দেশের গ্রাহক হয়েছিলো। সেই সূত্রে লীলা মজুমদারের সঙ্গে বারকয়েক সংক্ষিপ্ত আলাপচারিতা হয়েছিল। স্নেহশীলা, মাতৃসমা (আমি বলতাম পিসিমা) মানুষটির কাছে রাজরাপ্পা ভ্রমণের গপ্পো শুনেছি, সেখানে যেতে হলেই নাকি পথিমধ্যে গাড়ি বিগড়াত। এখন যোগাযোগ অনেক উন্নত, ৩৩ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে হাজারিবাগ থেকে ৪৮ কিমি আর রাঁচি থেকে ৪৩ কিমি, অর্থাৎ হাজারিবাগ-রাঁচির মাঝপথে রামগড় থেকে আরও ৩২ কিমি গিয়ে রাজরাপ্পা জলপ্রপাত। পুরুষ দামোদরের বুকে নারী ভৈরবীর ঝাঁপিয়ে পড়ার দৃশ্য উসকে তোলে ছিন্নমস্তার বেদিমূলে বিপরীত বিহাররত কাম ও রতির, প্রাণতোষিণী তন্ত্র গ্রন্থে বর্ণিত দেবী ছিন্নমস্তার উদ্ভবের চিত্রকল্প। সেখানে এক টিলার উপরে এই মন্দির। ভৈরবী নদীর হাঁটু জল পেরিয়ে মন্দিরে যেতে হত, এখন বাঁশের সাঁকো হয়েছে। ক, রক্তবর্ণা বর্ণনী রজোগুণের। ছিন্নমস্তা বিপরীত বিহাররত কাম ও রতির দেহের উপর যুদ্ধভঙ্গিমায় দণ্ডায়মানা, বাৎসল্যরস যে কামনার চেয়ে দৃঢ়, সেই জীবনবোধের তিনি উদ্গাতা। ছিন্নমস্তা আত্মবলিদান, সংযম ও সৃষ্টিশক্তির প্রতীক; তিনি একাধারে পুষ্টি তথা জীবনদাত্রী, অপরদিকে জীবনহন্তারক। দুর্গাষ্টমী মহানবমীর সন্ধিক্ষণে দেবী দুর্গার যে সন্ধিপূজা হয়, তা রূপভেদে এই দেবীরই পূজা।
হিন্দু ও বৌদ্ধধর্মে ছিন্নমস্তার পূজা প্রচলিত। তিব্বতী বৌদ্ধ দেবী বজ্রযোগিনীর ছিন্নমুণ্ডা রূপটির সঙ্গে দেবী ছিন্নমস্তার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। শাক্ত মহাভাগবত পুরাণগ্রন্থ অনুসারে দক্ষের কন্যা দাক্ষায়ণী ছিলেন শিবের প্রথমা স্ত্রী। দক্ষ তাঁর যজ্ঞানুষ্ঠানে শিবকে নিমন্ত্রণ না জানালে দাক্ষায়ণী বিনা আমন্ত্রণেই পিতার যজ্ঞে যেতে মনস্থ করেন। কিন্তু শিব রাজি হন না। তখন দাক্ষায়ণী ভীষণা দশমূর্তি ধারণ করে দশ দিক থেকে শিবকে ঘিরে ধরেন। শিব আতঙ্কিত হয়ে অনুমতি প্রদান করেন। এই দশ মূর্তিই দশমহাবিদ্যা – এদের মধ্যে ছিন্নমস্তা স্বয়ং পার্বতী, মতান্তরে পরশুরাম জননী রেণুকা; ইনি রাহুগ্রহের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। প্রাণতোষিণী তন্ত্র গ্রন্থে দেবী ছিন্নমস্তার উদ্ভবের অপর একটি আখ্যান বিবৃত, কিঞ্চিৎ আঁশটে গন্ধ থাকায় সেটি এখানে আলোচিত না হওয়াই সমীচীন। বৌদ্ধ ধর্মশাস্ত্র অনুযায়ী কৃষ্ণাচার্যের শিষ্যা ছিলেন মহাসিদ্ধা দুই বোন মেখলা ও কনখলা। তাঁরা তাঁরা নিজেদের মাথা কেটে গুরুকে উপহার দেন এবং তারপর নৃত্য করেন। দেবী বজ্রযোগিনী সেই রূপেই সেখানে উপস্থিত হন এবং তাঁদের সঙ্গে নৃত্যে যোগ দেন।
বিপুল লম্বা লাইন। ঘণ্টাদেড়েক দাঁড়াবার পর দর্শন মিলল। পুণ্যার্থীদের অনেকের হাতে দড়িবাঁধা ছাগল, চকচকে তেলমাখা দেহ, ভারী করুণ আতঙ্কিত চোখ। দর্শনের পর মন্দির চাতাল থেকে যেপথ দিয়ে নেমে বাইরের দিকে গেলাম, তার ঠিক পাশে রক্তাক্ত বলিক্ষেত্র। দেখলে পিলে চমকে যায়!। বিপুল সংখ্যায় বলি হয়, কসাইরা যন্ত্রের মত বলি দিয়ে চলে, নর্দমা দিয়ে রক্তস্রোত দামোদরে মেশে, পুণ্যার্থীদের পায়ে পায়ে চটচটে রক্ত প্রাঙ্গণে ছড়ায়। বলির পর স্পন্দমান ধড়টিকে কসাই যে কী অবহেলায়, তাচ্ছিল্যে, সম্ভবত ঘৃণায়ও, ছুঁড়ে ফেলে, না দেখলে বিশ্বাস হয় না। অ্যানাটমির এক প্রবাদপ্রতিম শিক্ষককে একবার ছাত্রদের বলতে শুনেছিলাম - Respect the Dead। ছাত্রটি এক হাতে একটি মনুষ্যঅস্থি ধরে অন্য হাতে সিগারেট খাচ্ছিল। সেই কথাটি মনে পড়ছিল বার বার।
আমি পশুহত্যার বিপক্ষে নই। পঞ্চান্ন বছর বয়স অবধি হিন্দু ও মুসলমান উভয় ধর্মেরই নিষিদ্ধ মাংস পরিতৃপ্তি সহকারে খেয়ে এসেছি। কিন্তু দেবীমাতার নামে পশুহত্যা, তাও এমন এক দেবীর নামে যিনি বাৎসল্যের প্রতীক; কেমন যেন লাগে। দর্শনার্থীদের সারিতে আমাদের সম্মুখেই ছিলেন নদীয়া জেলার এক প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক। বিবাহের ষোড়শ বৎসর পরে তাঁর সন্তানলাভ হয়েছে, তাই তিনি, তার নিজের ভাষাতেই, মার্কিনদের মত থ্যাঙ্কসগিভিং-এ দেবীমাতার কাছে এসেছেন। কিন্তু হাতের দুটি দড়িবাঁধা ছাগল দেখে থ্যাঙ্কসগিভিং হ্যালোউইন-এ পর্যবসিত হল। আমার সন্তানলাভ হয়েছে বলে ছাগীমাতাকে যদি সন্তানহারা হতে হয়, সেই যুক্তিতে তো অনেক কিছুই সমর্থনীয় হয়ে ওঠে। পাথরের সিঁড়ির উঁচু চওড়া ধাপ এসে শেষ হয়েছে মোহনায় – ভেরা আর দামোদর নদের সঙ্গম, খুব পবিত্র। নামতে গিয়ে দেখি জায়গায় জায়গায় টাটকা রক্ত, নদীর স্রোতেও মিশে যাচ্ছে। ওখানেই জেগে-থাকা পাথরে বসে স্নান করছেন পুণ্যার্থীরা। মাথার উপরে চিল শকুনের ওড়াওড়ি। পারিপার্শ্বিকে খুব একটা ভক্তি জাগে না। কালীঘাট মন্দিরে গেলেও আমি যাই ভোর পাঁচটায়, বলি শুরু হওয়ার আগে। পায়ে চিটচিটে রক্ত লাগলে খুব বিরক্ত লাগে।

মধ্যাহ্নভোজ। ফেরার পথে হুড্রু জলপ্রপাত। উচ্ছল সুবর্ণরেখা বিরামহীন শব্দে ঝাঁপিয়ে পড়েছে পাথরে। তারপর জোনা বা গৌতমধারা জলপ্রপাত। পাহাড়ের কোল বেয়ে, আড়াআড়ি দাঁড়িয়ে থাকা পাথর এড়িয়ে অনেকটা জায়গা জুড়ে নীচে এসে পড়ছে ঝরনার জল। তারপর চলে যাচ্ছে রাঢ়ু নদীতে। সব শেষে সীতা জলপ্রপাত।

তৃতীয় দিনঃ
ম্যাকক্লাস্কিগঞ্জ {Mccluskiegunj (MGME)} তথা ছোটা ইংল্যান্ডে যাওয়ার ইচ্ছাটি আমার আবাল্য। কিন্তু ওই আর কী, যাওয়া হয়ে ওঠেনি পাকেচক্রে; এবং তার জন্য রেল কোম্পানিও কিঞ্চিৎ দায়ী। হাওড়া থেকে ম্যাকক্লাস্কিগঞ্জ যাওয়ার সরাসরি রেলগাড়ি একটিই, ১১৪৪৮ হাওড়া-জবলপুর শক্তিপুঞ্জ এক্সপ্রেস। ইনি হাওড়া ছাড়েন দুপুর একটায়, ম্যাকক্লাস্কিগঞ্জ পৌঁছন রাত এগারোটায়। রাত এগারোটা বরকাকানা জংশন বারওয়াদি জংশন শাখার এই ছোট রেল স্টেশনটির কাছে গহিন নিশুতি রাত। স্টেশনটির প্ল্যাটফর্মগুলি গ্রাউন্ড লেভেল; এবং ফুট ওভারব্রিজ নেই। ট্রেন থেকে নেমে রেললাইন পেরোতে হবে, সেখানে সর্বদা কয়লাভর্তি মালগাড়ির আসা যাওয়া। তারপরে অঞ্চলটির ভূ-রাজনীতিও খুব ভ্রমণার্থীবান্ধব নয়; নচেৎ ঔপনিবেশিক রেলব্যবস্থার মহান এই কেন্দ্রটিতে অনেক আগেই আসা যেত। সম্প্রতি কোঙ্কণা সেনশর্মার A Death In The Gunj সিনেমাটি দেখে ম্যাকক্লাস্কিগঞ্জ যাওয়ার সুপ্ত ইচ্ছাটি জেগে উঠেছিল।
ম্যাকক্লাস্কিগঞ্জ ছোটনাগপুর মালভূমির অন্তঃপাতী অরণ্য টিলা নদী জনবসতি সংবলিত দৃষ্টিনন্দন ভূচিত্রের একটি রুক্ষ পাথুরে পাহাড়ি এলাকা। ১৯৩২ সালে Ernest Timothy McCluskie, কলকাতার একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও ম্যাকক্লাস্কিগঞ্জর প্রতিষ্ঠাতা দু লক্ষ অ্যাং ইন্ডিয়ানের কাছে সেখানে 'সেটল' করার আহ্বান জানিয়ে চিঠি পাঠান। ১৯৩৩ সালে The Colonisation Society of India নামক একটি সংস্থা ভারতবর্ষে অ্যাং ইন্ডিয়ানদের জন্য নিজস্ব একটি 'মুলক' (homeland) প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে সমবায় সমিতির শেয়ার বিক্রি ও শেয়ারগ্রহীতাদের মধ্যে জমি বণ্টন করতে শুরু করেন । দশ বছরের মধ্যে ম্যাকক্লাস্কিগঞ্জ ৪০০ অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান পরিবারের আবাসস্থল হয়ে ওঠে। যদিও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ - স্বাধীনতালাভ পরবর্তীকালে তাদের অনেকেই ভারত ছেড়ে অন্যত্র 'সেটল' করেন। স্বভাবতই, দু'লক্ষ সম্ভাব্য অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান আবাসিক ও চারশো আবাসিক অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান পরিবারের অধিকাংশই ছিলেন রেল কর্মচারী; ভারতবর্ষে রেলব্যবস্থার বিকাশ তথা বিবর্তনে অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদের এক গৌরবোজ্জ্বল ভুমিকা। ঔপনিবেশিককালে এবং স্বাধীনতালাভ পরবর্তী দুই দশকে ভারতীয় রেলের চালক, গার্ডদের চাকরি ছিল অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদের একচেটিয়া; রেলের অপরাপর প্রায়োগিক শাখার চাকরিতেও তাঁদের প্রাধান্য ছিল। তাই উপমহাদেশের রেলব্যবস্থার ইতিহাসচর্চাকারীদের কাছে ম্যাকক্লাস্কিগঞ্জ তীর্থস্থান সমতুল।
ম্যাকক্লাস্কিগঞ্জ বরকাকানা জংশনের ৬৫ কিলোমিটার দূরে ভারতীয় রেলপথের পূর্ব মধ্য এলাকার ধানবাদ ডিভিশনের এক ছোট্ট স্টেশন। তিনটে প্ল্যাটফর্ম সমুদ্রতল থেকে ৪৭৮ মিটার উপরে, সারাদিনে চোদ্দটা ট্রেন সেখানে থামে। তার এদিকে খালারি স্টেশন, ওদিকে মহুয়ামিলন। নয়েল টমাস, প্রাক্তন ডিভিশনাল মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার (ডিজেল) Waltair তাঁর স্মৃ্তিকথায় ('Footprints on the Track' ISBN: 978-81-928188-0-1) এই স্টেশন নিয়ে একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন। পঞ্চাশের দশকে তদানীন্তন অবিভক্ত পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার ছিলেন কে জি মুখারজি। রাজকীয় চেহারা ও সাহেবসুলভ আদবকায়দার জন্য অধস্তনদের কাছে তিনি ছিলেন কিং জর্জ মুখারজি। এহেন মুখারজিসাহেব একবার বেরিয়েছিলেন সি আই সি সেকশন পরিদর্শনে, যাচ্ছিলেন ম্যাকক্লাস্কিগঞ্জ পেরিয়ে খালারি; অ্যাসোসিয়েটেড সিমেন্ট কোম্পানি (ACC)-র লোকজনদের সঙ্গে সিমেন্ট পরিবহণে ওয়াগনের লভ্যতা আলোচনা সংক্রান্ত এক মিটিং-এ। সেই বিশেষ রেলগাড়ি ম্যাকক্লাস্কিগঞ্জের সমীপবর্তী হতেই আভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থায় তিনি চালককে বললেন ম্যাকক্লাস্কিগঞ্জে গাড়ি থামাতে। গাড়ি থামল। মুখারজিসাহেব সেলুন থেকে লাফ দিয়ে নামলেন নিচু প্ল্যাটফর্মে, হাঁটা লাগালেন স্টেশনের একমাত্র চায়ের দোকানটির দিকে। তার সঙ্গীসাথী অধস্তনরা প্রায় ছুটলেন সাহেবের সঙ্গে তাল রাখতে। একজন দৌড়ে গিয়ে ফিসফিস করে চায়ের দোকানের মালকিন Mrs. Kearney-কে বললেন 'জি এম সাব আয়ে হ্যায়'। মুখারজিসাহেব হতচকিত Mrs. Kearney কে দিনের সময়ের শুভেচ্ছা জানালেন (গুড মর্নিং, গুড নুন, গুড আফটারনুন)। তারপর জিজ্ঞাসা করলেন 'How is Bill keeping? Give my regards to Bill'। এতক্ষণে Mrs. Kearney মুখারজিসাহেবকে চিনতে পারলেন। মুখারজিসাহেব যখন সাহেব হননি, নেহাতই সদ্য চাকরিতে যোগ দেওয়া এক শিক্ষার্থী, তখন Bill Kearney তরুণ ছাত্রটিকে পক্ষপুটে নিয়ে কাজ শিখিয়েছিলেন। সময় কেটেছে, বিল অবসর নিয়ে ম্যাকক্লাস্কিগঞ্জে থিতু হয়েছেন। Mrs. Kearney বাড়ির তৈরি ব্রেড বিস্কুট নিয়ে প্ল্যাটফর্মের টি স্টলটি চালান। সময় ছিল না, মিটিং-এ যাওয়ার তাড়া তো আছেই, তদুপরি আচমকা এভাবে গাড়ি থামলে লাইনের পরের গাড়িও আটকে যাবে, তাই মুখারজিসাহেবের বিলের বাংলোয় আর যাওয়া হয়ে উঠলো না। হুইশিল বাজল, পতাকা নড়ল, রেলগাড়ি ফের চলতে শুরু করল। রেখে গেল ধ্রুপদী শিষ্টাচারের এক অভিজ্ঞান।
স্টেশনের লোকজনদের সঙ্গে আলাপচারিতায় জানালাম আমার আগমনের হেতু। তারা সোৎসাহে আমাকে স্টেশন চত্বর চষে ফেলার অনুমতি দিলেন। কিন্তু তিনটে প্ল্যাটফর্ম এমুড়ো ওমুড়ো করেও গাউনপরা কোন মহিলার দেখা মিলল না। আমি কি আশা করেছিলাম ওই ঘটনার সত্তর বছর পরেও Mrs. Kearney ম্যাকক্লাস্কিগঞ্জের প্ল্যাটফর্মে চা আর কুকি বিক্রি করবেন! আমি কি কচি খোকা? আটান্ন পেরিয়ে আমি কি জীবনের অনিত্যতা বুঝিনি? তা নয়। আমি শুধু এইটুকু আশা করেছিলাম যে ঐতিহ্যটি বজায় থাকবে, ছোটা ইংল্যান্ডের রেল প্ল্যাটফর্মে এখনও চা আর কুকি পাওয়া যাবে, স্টলটি চালাবেন কোন অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান ম্যাডাম। বিষণ্ণচিত্তে তাই সমকালীন বাস্তবতা মানতে হল।

২০১৭-র ১২ নভেম্বর আনন্দবাজার পত্রিকায় ম্যাকক্লাস্কিগঞ্জের ক্যান্টিন মজিদকে নিয়ে একটি ফিচার বেরিয়েছিল। বছর ষাটেকের মজিদ এখন ম্যাকক্লাস্কিগঞ্জে পর্যটকদের গাইডের কাজ করেন। একদা ম্যাকক্লাস্কিগঞ্জ স্টেশনে তাঁর ক্যান্টিন ছিল, সেই ক্যান্টিনের শিঙাড়া নাকি ছিল বিখ্যাত; সেই সূত্রেই তিনি আজ ক্যান্টিন মজিদ। তাকে ধরা হল, গাইডের পারিশ্রমিকটি হাতে ধরিয়ে দেওয়ার পর তিনি মুখ খুললেন। Mrs. Kearney কে তিনি দেখেননি, তবে তার কথা জানেন, আমার মত বই পড়ে নয়, অভিজ্ঞতায়। অ্যাংলো ইন্ডিয়ানেরা ছোটা ইংল্যান্ড ছেড়ে যাওয়ার তথা প্রয়াত হওয়ার পর সেই শূন্য রেল প্ল্যাটফর্মে তার পদক্ষেপ, ক্যান্টিন স্থাপন; বাড়ির তৈরি ব্রেড বিস্কুট প্যাস্ট্রির সংস্কৃতিতে শিঙাড়ার অনুপ্রবেশ। জনরুচি তো এমনি করেই বদলায়!
বিকাল ঘনাল। এদিকে সূর্য দেরি করে ডোবে। রেললাইন, পাহাড়, দূরের বাড়িঘর, সব যেন অবাস্তবতায় মিলিয়ে গেল। দুজনে বসে রইলাম প্ল্যাটফর্মের বেঞ্চিতে; কিছুক্ষণের জন্যে ফিরে গিয়েছিলাম বিগত সেই দিনগুলিতে। অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদের বলা হয় 'Unsung Heroes of the Railways in India'। এত সহজে আমরা বিস্মৃত হলাম তাঁদের! পঞ্চাশের, বিশেষত ষাটের দশকের পর থেকে অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানরা দলে দলে ভারত ছেড়েছেন, তার সঙ্গে সঙ্গে ম্যাকক্লাস্কিগঞ্জ হারিয়েছে তার আকর্ষণ, পরবর্তীকালে কোনরকম উন্নয়নের অভাবে সে এখন নেহাতই এক গ্রাম। তবুও সাব, মেমসাব, বাংলো, প্যাস্ট্রি, গ্রামীণ গির্জার মধ্যে ক্কচিৎ শোনা যায় ঔপনিবেশিক উত্তরাধিকারের দীর্ঘশ্বাস।
নিতাই কবিয়াল (কবি, তারাশঙ্কর) আক্ষেপ করেছিল 'এই খেদ আমার মনে - ভালবেসে মিটল না সাধ, কুলাল না এ জীবনে! হায় - জীবন এত ছোট কেনে? এ ভুবনে?' আমি মোটাদাগের মানুষ, পেটের চিন্তাতেই জীবন গেল, উচ্চতর কোন চিন্তার সময় বা সুযোগ কোনটাই মেলেনি, তার উপরে বাবা মারধোর করে কমবয়সে বিবাহ দিয়ে দেওয়ায় হৃদয়বৃত্তির চর্চাও যথাযথ করে ওঠা হয়নি, আবেগের কিঞ্চিৎ ঘাটতি নিয়েই তাই জীবন গেল। তবু, ওইসময় ওইখানে দাঁড়িয়ে, নিতাই কবিয়ালের সঙ্গে সহমর্মিতা অনুভব করলাম।

চতুর্থ দিনঃ
আমাদের হোটেলটি ছিল রাঁচি মেন রোডে; তার ঠিকানায় লেখা অপোজিট ডেলি মার্কেট। সকালবেলায় কিছু করার না থাকায় অভ্যাসবশে ঢুঁ মারা গেল। ফুলকপি, পাতিলেবু, শশা, কড়াইশুঁটি, সিম বরবটির সম্মিলিত হ্রেষা ধ্বনি, দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়, মন ভালো হয়ে যায়। তারপর মধ্যাহ্নভোজ, আর কত কত যুগ পরে দ্বিপ্রাহরিক সুখনিদ্রা।
ফেরার গাড়ি ১৮৬১৬ হাতিয়া-হাওড়া ক্রিয়াযোগ এক্সপ্রেস রাঁচি আসে রাত নটা পঁচিশে।। পরদিন সকাল ছটায় সাঁতরাগাছি।

~ রাঁচির আরও ছবি ~

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অডিট ও অ্যাকাউন্টস বিভাগের কর্মী তপন পাল বোম্বে ন্যাচারাল হিস্ট্রি সোসাইটি এবং ইন্ডিয়ান রেলওয়ে ফ্যান ক্লাবের সদস্য। ভালোবাসেন বেড়াতে আর ছবি তুলতে। 'আমাদের ছুটি'-র জন্যই তাঁর কলম ধরা। সক্রিয়ভাবে যুক্ত রয়েছেন 'আমাদের ছুটি'-র সঙ্গেও।

 

 

SocialTwist Tell-a-Friend

To view this site correctly, please click here to download the Bangla Font and copy it to your c:\windows\Fonts directory.

For any queries/complaints, please contact admin@amaderchhuti.com
Best viewed in FF or IE at a resolution of 1024x768 or higher