সাভারের জাতীয় শহীদ-স্মৃতি সৌধ
অতীন চক্রবর্তী
"এক সাগর রক্তের বিনিময়ে
বাংলার স্বাধীনতা
আনল যাঁরা
আমরা তোমাদের ভুলবো না"
সাভারে শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে উজ্জ্বল অক্ষরে লেখা ওই চারটি পংক্তি প্রবেশদ্বার দিয়ে এগিয়ে যেতেই নজরে এল। ঢাকা থেকে ৩২ কিমি উত্তর-পশ্চিমে সাভার। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে হওয়া বাংলা দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের তথা মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের আত্মত্যাগ স্মরণ করে বিশাল এই জাতীয় স্মৃতি সৌধ (National Martyrs' Memorial) স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার গড়ে তুলেছে এই সাভারের বুকে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল ২৬ মার্চ ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে। ১৬ ডিসেম্বরে বাঙলাদেশীরা বিজয় পতাকা দেশের মাটির বুকে ওড়াতে সক্ষম হয়েছিল। বাংলাদেশের সরকার বা জনসাধারণ ভোলে নি সেইসব মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন উৎসর্গের কথা। তাইতো স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণ এই সাভারের শহীদ স্মৃতি সৌধকে গ্রহণ করেছে আধুনিক কালের একটি তীর্থভূমি রূপে।
কাদের সিদ্দিকী এবং অন্যদের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা যখন এগিয়ে চলেছিলেন রাজধানী ঢাকার উদ্দেশ্যে তখন এই সাভার ছিল শেষ বাধা। তারপর সব শেষ, পরাজিত হয় পাকিস্তানী সেনাবাহিনী। তবে যুদ্ধ শেষ হওয়ার কয়েক দিন আগে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে সরাসরি সংঘর্ষে নিহত হয় কিশোর গোলাম দস্তগীর। সাভারের সেন্ট্রাল ক্যাটল ব্রিডিং অ্যান্ড ডেয়ারি ফার্ম-এর প্রধান গেটের কাছে তাকে সমাধিস্থ করা হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তাঁর সম্মানে একটি স্মৃতিস্তম্ভও নির্মাণ করেন সেখানে।
সাভার নামটির উৎপত্তিস্থল হল সপ্তম-অষ্টম শতাব্দীর বংশাবতী(বর্তমানে বংশী নামে পরিচিত) নদীর পূর্বতীরে অবস্থিত প্রাচীনতম সর্বেশ্বর (("সবকিছুর পালনকর্তা") নগরী বা সোম্ভর। যা ছিল প্রাচীন সম্ভঘ রাজ্যের (Sambagh Kingdom) রাজাদের রাজধানী। পৌরাণিক কাহিনির পাশাপাশি প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলিও জানিয়ে দেয় সপ্তম শতাব্দীর প্রথমার্ধে পাল রাজবংশের হরিশচন্দ্র নামে একজন বৈষ্ণব রাজার রাঢ অঞ্চল থেকে এইখানে আগমনের কথা। তবে হরিশচন্দ্রের রাজত্বের পৌরাণিক কাহিনী সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে কিছু বিতর্ক রয়েছে। এই বিতর্কের কারণ একই নামে সন্ধান পাওয়া যায় - সেইসময়কার পৌরাণিক সূর্যবংশের রাজা হরিশচন্দ্র আবার বিক্রমপুরের রাজা হরিশচন্দ্রের। তবে যে কোন ক্ষেত্রেরই হোন না কেন সেই রাজা হরিশ্চন্দ্র, স্থানীয় কিংবদন্তী অনুসারে বোন রাজেশ্বরীর পুত্র দামোদর দ্বারা সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হয়েছিলেন তিনি। তবে এ ব্যাপারে সবাই এক মত যে এই সাভারে কোন এক সময় জনৈক হরিশ্চন্দ্র নামে একজন রাজা ছিলেন, আর নগরীর নাম তখন ছিল সর্বেশ্বর বা সোম্ভর।
ঢাকা শহরের দৈনিক ডেস্টিনি অফিসের কাছ থেকে আমাদের সাভারের যাত্রা শুরু হয়েছিল। এই অফিসের কাছেই আমাদের হোটেল। এই যাত্রার আগের দিন ওই অফিসে যে অভ্যর্থনা পেয়েছি তা আমার জীবনের এক স্মরণীয় অধ্যায় হয়ে আজও রয়েছে। সাভারের সুন্দর এই স্মৃতি স্তম্ভটির কথা ওঁদের কাছ থেকেই প্রথম জানতে পারি। এটি সৈয়দ মইনুল হোসেনের ডিজাইন এবং কনসার্ড গ্রুপ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। স্মৃতিসৌধের পরিকল্পনা ১৯৭৬ সালে শুরু হয়। প্রথমে উপযুক্ত একটি জায়গা নির্বাচন, তারপরে রাস্তা ও ভূমি উন্নয়ন কাজ শুরু হয়। এত বড় প্রোজেক্টের ভার যাঁর হাতে তুলে দেওয়া হবে তাঁকে খুঁজে পাওয়া বেশ এক কঠিন কাজ। চাই সুন্দর এক আকর্ষণীয় নকশা। অবশেষে ১৯৭৮ সালের জুন মাসে দেশব্যাপী অনুষ্ঠিত হয় এক নকশা প্রতিযোগিতা। মোট সাতান্নটি জমা দেওয়া নকশা থেকে মূল্যায়ন হিসাবে শেষে সৈয়দ মইনুল হোসেনের নকশা নির্বাচন করা হয়। সাতটি সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ আকৃতির দেওয়াল বা প্রিজমগুলির আকারে গঠিত এক আকর্ষণীয় স্মৃতি সৌধ সেই নকশায় তুলে ধরা হয়েছিল। গঠনের সর্বোচ্চ শিখর একশ পঞ্চাশ ফুট উচ্চতায় পৌঁছায়। এই পিরামিড আইকনটি ( pyramidal icon) শুধুমাত্র ভাস্কর্যের কাঠামোর রূপই ধারণ করে নি, বরং, পুরো কমপ্লেক্সটা ডিজাইন করা হয়েছিল সামগ্রিক দৃশ্যাবলীর এক জ্যামিতিক বিন্যাসকে লক্ষ্যে রেখে। এরই সঙ্গে সংলগ্ন, সবুজ এলাকা, কৃত্রিম হ্রদ, সুপরিকল্পিত কংক্রিট গঠিত সুসজ্জিত পথ ইত্যাদি মিলে পরিপূর্ণ হয়েছে একটি উজ্জ্বল স্মৃতিস্তম্ভ। দেওয়ালের এই সাতটি সমদ্বিবাহু ত্রিভুজাকৃতি প্লেনগুলোর (isosceles triangular planes) প্রতিটি হচ্ছে বাংলাদেশের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য সাতটি অধ্যায়ের রূপক, যেমন ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের ইউনাইটেড ফ্রন্টের নির্বাচন, ১৯৫৬ সালের সংবিধান আন্দোলন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬-বিষয়ের আন্দোলন (6-point Movement), ১৯৬৯ সালের গণ বিদ্রোহ, এবং অবশেষে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের স্মরণীয় ঘটনা যার মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণ পাকিস্তানের বর্বরোচিত অত্যাচারের হাত থেকে মুক্তি পায়।
১৯৭৪ থেকে ১৯৮২ সালের মাঝামাঝি সময়ে দ্বিতীয় ধাপে গণকবর, হেলিপ্যাড, পার্কিং স্পেস এবং পায়ে চলার পথ নির্মাণ করা হয়। ১৯৮২ সালে তৃতীয় পর্যায়টিতে প্রধান স্মৃতিস্তম্ভ, সবুজক্ষেত্র, কৃত্রিম হ্রদ এবং অন্যান্য সুবিধাগুলো সম্পন্ন করা হয়। কমপ্লেক্সের এই সব নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ হবার পর ১৯৮২ সালের ১৬ ডিসেম্বর এই স্মৃতি সৌধটির পরিপূর্ণরূপে উদ্বোধন করা হয়।
দৈনিক ডেস্টিনি অফিসের কয়েকজন গণ্যমান্য সুজনদের কাছ থেকে সাভার সম্পর্কে কিছু জানার পর আর দেরি না করে পরের দিন খুব সকালেই আমরা বেরিয়ে পরেছিলাম সাভারের উদ্দেশ্যে। পর্যটকদের সুবিধার জন্য এখানে আসার অনেক সুব্যবস্থার দিকে নজর দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। প্রাইভেট গাড়ি ছাড়াও ভালো বাসগুলোর চলাফেরা রয়েছে এই রুটে। রাস্তাও মোটামুটি। এক কথায় সব মিলিয়ে এই পথ চলায় শ্রান্তি থাকলেও শান্তি আছে। অল্প পথ। ঘন্টাখানেকের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম। সকাল সকাল আসার সুবিধা হল ভিড়টা তখনও অতোটা হয়ে উঠতে পারে নি। তবে শুনেছি বিকেল-সন্ধ্যায় দর্শকদের আগমন অনেক বেশি। উত্তরের প্রধান প্রবেশদ্বার দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেই মনটা নিজের থেকেই ভারাক্লান্ত হয়ে উঠল। বাঙালিদের আত্মশাসনের অধিকারের জন্য জীবন উৎসর্গ, দেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের যোদ্ধাদের বীরত্ব ও আত্মত্যাগের স্মৃতিবহনকারী এই সৌধ। সৈয়দ মইনুল হোসেনের এই সুন্দর স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপত্যের আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে শত শত বাঙালি শহীদদের রক্তঝরার ইতিহাস। এখানে এসে পরবর্তীযুগের বাংলার মানুষ এঁদের আত্মবলিদানের কথা স্মরণ করবে, জানাবে তাদের প্রাণের শ্রদ্ধা।
স্মৃতিসৌধ কমপ্লেক্সের অভ্যন্তরে পার্কটি বড় এবং সুসংগঠিত। রয়েছে লিলিফুলে ভরা জলাশয়। কতো জানা-অজানা শহীদদের আত্মত্যাগের কথা জড়িয়ে রয়েছে বাংলাদেশের আকাশে-বাতাসে। তাঁদের আত্মবলিদানের রক্তে রাঙানো পথ ধরেই এসেছে আজকের এই স্বাধীন বাংলাদেশ। তাঁদের স্মৃতি স্মরণ করেই তৈরি হয়েছে জাতীয় স্মৃতিসৌধ । নাম জানা-অজানা সব শহীদদের আত্মত্যাগের সম্মান এখানে দেওয়া হয়েছে। দশটি সুন্দর গণকবর নির্মাণ করা হয়েছে, তাতে লেখা রয়েছে ''অজ্ঞাতনামা শহীদদের কবর''।
ভাস্কর্য স্থাপনের ভিত্তিফলকের প্ল্যাটফর্মটি স্মৃতিস্তম্ভের সামনেই স্থাপন করা হয়েছে। রয়েছে জলাধারের একটি পুল। প্রধান কমপ্লেক্সের জন্য মোটামুটি চুরাশি একর জমির প্রয়োজন ছিল কিন্তু সরকার প্রায় একশ দশ একর জমি অধিগ্রহণ করে ভাস্কর্য শিল্পের পাশাপাশি প্রাকৃতিক শোভাতে পুরো কমপ্লেক্সটিকে সুন্দর একটি রূপ দিয়ে সাজাতে সহযোগিতা করেছিলেন।
প্রধান কমপ্লেক্সের দিকে এগিয়ে যাবার পথেই আলাপ হয়েছিল এক শিক্ষিত পরিবারের সঙ্গে। চট্টগ্রামের বাংলা উচ্চারণে ওঁরা কথা বলছিলেন, আমাদের পক্ষে বুঝতে পারা মুস্কিল। ভদ্রমহিলা প্রফেসর আর স্বামী একজন আর্কিটেকচার ইঞ্জিনীয়র। এর আগে কয়েকবার এখানে এসেছেন। ওঁদের সঙ্গেই এখানকার আঁকা-বাঁকা পথ দিয়ে এগিয়ে চলেছি। চলার পথেই উনি আমাদের জানিয়েছিলেন- "This winding passage also allows the visitor to see the monument from multiple perspectives, experiencing its dramatically differing configurations depending on the viewing location. To many, the visual magic of the National Martyrs' Monument lies in its optical illusion, perhaps a picaresque cubist twist to what "nation" means.."। জাতীয় স্মৃতিস্তম্ভের চরমপন্থী পথটি (tortuous path) স্ব-শাসনের জাতিগত কঠিন পথ, পাশাপাশি এগিয়ে থাকা চ্যালেঞ্জিং যাত্রার প্রতীক হিসাবে প্রতীয়মান হয়।
এই অপটিক্যাল বিভ্রমের অংশটি স্মৃতিস্তম্ভের পরিকল্পনা থেকে উদ্ভূত। সামনের দিক থেকে দেখে এটি একটি কাঠামো বলে মনে হচ্ছে, আসলে তা নয়। স্মৃতিস্তম্ভ পরিকল্পনা সাতটি স্বাধীন স্থায়ী কংক্রিট প্লেটের ব্যবস্থার উপর। প্রতিটি একটি সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ, কিন্তু উচ্চতা এবং বেস বিভিন্ন মাত্রার সঙ্গে তৈরি করা হয়েছে। প্লেট নব্বই ডিগ্রী কোণে রেখে মাঝখানে ভাঁজ করা হয়। সর্বাধিক প্লেট একশ পঞ্চাশ ফুট সর্বনিম্ন বেস কুড়ি ফুট, এবং সর্বনিম্ন প্লেট হচ্ছে দীর্ঘতম একশ তিরিশ ফুট। আবার জাতীয় স্মৃতিস্তম্ভ গঠনে সংখ্যাসূচক ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ এক অর্থ পালন করে। Athenian Parthenon এর হিসাবে এই ধরনের আধিপত্য কাঠামোগুলির সংগঠন নীতিগুলি স্মরণ করে, যা সংখ্যায় আদর্শ স্থাপত্য সৌন্দর্য এবং অনুপাতের দার্শনিক ভিত্তি হিসাবে দেখা যায়। জাতীয় স্মৃতিস্তম্ভের ম্যাজিক ফিগার সাত, যা ১৯৫২ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর, ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বাঙালি জাতির জাতীয়তাবাদী সংগ্রামের সময়সীমার মধ্যে সীমাবদ্ধ আন্দোলনের সংখ্যা। উদাহরণস্বরূপ ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন ৫+২=৭ ছিল;, ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার দিনে ১+৬=৭ ছিল; এবং মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রাণ উৎসর্গ করার জন্য ৭ জনকে বীরশ্রেষ্ট যুদ্ধের নায়ক হিসাবে বাংলাদেশ সরকার সম্মানিত করেছিলেন। এই সব স্মরণ রেখেই সাতটি সমদ্বিবাহু ত্রিভুজাকৃতি প্লেন দিয়েই গঠিত হয়েছে এই স্মৃতি সৌধ। স্মৃতিস্তম্ভের অভ্যন্তরে পার্কটি বড় এবং সুসংগঠিত। এই রকম এক অতুলনীয় উন্নতমানের স্থাপত্যশিল্পের স্রষ্টা সৈয়দ মইনুল হোসেনকে এইজন্য ১৯৮৮ সালে দেশের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান 'একুশে পদক' দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছিল।
বাঙালিদের আত্মশাসনের অধিকার ফিরিয়ে আনতে যারা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসে সেইসব জাতীয় শহীদদের স্মৃতির জাতীয়তা উদযাপন উপলক্ষে জাতির যৌথ অনুষ্ঠানগুলির কেন্দ্রস্থল হল এই স্মৃতি সৌধ।
''মুক্তির প্রচ্ছদপটে ওদের কাহিনী আজ ঢাকা,
আগন্তুক ইতিহাসে ওরা আজ প্রথম অধ্যায়...''
''ওদের পতাকা ওড়ে গ্রামে- নগরে-বন্দরে,
মুক্তির সংগ্রাম সেরে ওরা ফেরে স্বপ্নময় ঘরে।।''
শান্ত পরিবেশে সংলগ্ন পার্কের লালরাস্তার ওপর দিয়ে বেশ কিছুটা সময় এগিয়ে গেলাম সামনের দিকে। রোদের তীব্রতা থাকলেও গাছের ছায়ার ভেতর দিয়ে হাঁটতে কোন অসুবিধা হচ্ছিল না। ডানপাশ দিয়ে একটা হাল্কা জলস্রোত বয়ে চলেছে। সময় কাটাবার সুন্দর পরিবেশ।
এটি তৈরি করতে প্রয়োজন ছিল প্রচুর পরিমাণ অর্থের। অন্যদের সঙ্গে তখন এগিয়ে এসেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও। বিশ্ববিদ্যালয়ের তখনকার দিনের ভাইস চ্যান্সেলর দেখতে এসে জানতে পারেন যে এটি নির্মাণের জন্য অজস্র টাকা খরচ হবে, তখন তিনি কাজটি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সবাইকে অনুরোধ করেন। অর্থসংগ্রহের ব্যাপারে সেইসময় দ্য ঢাকা ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট ইউনিয়ন (DUCSU)এর প্রচেষ্টা একটা বড় ভূমিকা ছিল। তিনটি ফেজের এই কাজ, তার ওপর গণকবর, হেলিপ্যাড, পার্কিং স্পেস এবং পায়ে চলার পথ, ইত্যাদি নির্মাণের জন্য সব মিলিয়ে শেষে আরো অনেক বেশি অর্থের প্রয়োজন হয়েছিল। একে একে সব কাজই ভালোভাবে সম্পূর্ণ হয়েছিল। এরপর ১৯৭৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর DUCSU-এর আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এটির প্রথম পর্যায়ের উদ্বোধন হয়েছিল। এই অনুষ্ঠানে বারো জন মুক্তিযোদ্ধা বীরকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে উদ্বোধন করাবার জন্য আনা হয়েছিল। এই ভাবেই বাংলাদেশের জনগণ বীর মুক্তিযৌদ্ধাদের চিরকাল সম্মান দিয়ে এসেছে।
ফিরে আসার আগে শেষবারের মতো শহীদ-স্মৃতি সৌধের দিকে তাকিয়ে সেইসব মুক্তিবীরের প্রতি কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ভাষায় জানালাম -
"হাজার সেলাম তাই নাও আজ, শেষযুদ্ধের সাথী..."
অবিভক্ত ভারতের রাজশাহী জেলার নওগাঁতে জন্ম অতীন চক্রবর্তীর। সরকারি পেশা এবং ভ্রমণের নেশার টানে ঘুরেছেন ভারতবর্ষের নানা অঞ্চলে। দীর্ঘদিন যাবৎ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিতভাবে গল্প ও ভ্রমণকাহিনি লিখছেন। সাহিত্যক্ষেত্রে পেয়েছেন একাধিক পুরস্কারও।