দক্ষিণ কোরিয়ার দেগু শহর ও জেজু দ্বীপ

সম্পত ঘোষ

 

দেগু : ইতিহাস থেকে বর্তমান
আপেলের শহর বা কখনও বুননের শহর নামে পরিচিত দেগু (Daegu) শহরের দূরত্ব আন্দং থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার, সময় লাগে প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা। আন্দং বাস টার্মিনাল থেকে দেগু যাওয়ার বাস সারাদিন পাওয়া যায়। বর্তমান কোরিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম শহর এটি। বেশ কয়েকবার এসেছি এই শহরে, অথবা এই শহরের ওপর দিয়ে গিয়েছি অন্য কোন গন্তব্যে। এবার উদ্দেশ্য দেগু জাতীয় সংগ্রহালয় (Daegu National Museum) আর ওরিয়েন্টাল মেডিসিন সংগ্রহালয় (Daegu Yangyeongsi Museum of Oriental Medicine) পরিদর্শন। সকাল সাতটা নাগাদ উঠে বেরিয়ে পড়লাম, আমার বাড়ি থেকে আন্দং বাস টার্মিনালের দূরত্ব লোকাল বাসে প্রায় এক ঘণ্টা, টার্মিনাল থেকে সাড়ে আটটার বাস দেগু-র উদ্দেশ্যে। টিকিট কেটে বাস টার্মিনালের ভিতরেই ব্রেকফাস্ট করে নিলাম। 'বিবিন ভাপ' আমার পছন্দের মেনু। ভাত, অঙ্কুরিত সয়বিন, সিদ্ধ শাক এবং মাশরুম, অল্প পরিমাণে ছড়ানো তিলের তেল আর স্যুপ এইসব মিলে তৈরি হয় 'বিবিন ভাপ' (Bibin-vap), আলাদা আলাদা করে উপকরণগুলি পরিবেশন করা হয়, একটি বাটিতে একসাথে মেখে নিতে হয়, বেশিরভাগ রেস্তোঁরাতে এর সাথে ডিমের পোচ দেওয়া হয়।
বর্তমান দেগু-র ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনেক। সমগ্র কোরিয়ান উপদ্বীপকে (Korean peninsula) একত্রিত করার অব্যবহিত পরেই সিল্লা সাম্রাজ্যের রাজা সিন্মুম (Sinmum) গিয়ংজু থেকে দেগু-তে রাজধানী স্থানান্তরিত করার কথা বিবেচনা করেন, যদিও তা সম্ভব হয়নি। 'শামগুক সাগি' (Samguk-Sagi)-তে এই উদ্যোগের কথা বর্ণিত আছে। ঐতিহাসিক কিম বুসিক (Gim Busik/ Kim Busik) দ্বারা চাইনিজ ভাষায় রচিত 'শামগুক সাগি' হল কোরিয়ার তিন রাজত্বের (গরিয়, সিল্লা, বাকজে) মূল্যবান ঐতিহাসিক নথি। জাতীয় সংগ্রহালয়ে রয়েছে এর বিবরণ। দেখলাম কাঠের গায়ে খোদাই করে লেখার উপায়। দেগু সংলগ্ন অঞ্চলের প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্যের ফলে প্রাচীন এবং নব্য প্রস্তর যুগের বিভিন্ন পাত্র, অস্ত্র, এবং পরবর্তী সময়কালের মৃৎপাত্র, মৃৎ নির্মিত বস্তুর নিদর্শন পাওয়া যায়। খ্রীস্টপূর্ব ১৫০০ থেকে ৩০০ সময়কাল 'মুমুন মৃৎ কাল' (Mumun pottery period) নামে পরিচিত। এই সময়কালের মধ্যেই পর্বতের পাদদেশে কোরিয়ান গ্রাম্য ব্যবস্থা প্রথম স্থাপিত হয়। প্রধানত ধান চাষ এবং পশুপালন ছিল জীবনধারনের উপায়, ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে সামাজিক শ্রেণীবিন্যাস। জানা যায়, খ্রীস্টপূর্ব পঞ্চম শতকে ব্রোঞ্জের ব্যবহার হত শাসকের প্রতীক হিসাবে। এগিয়ে চললাম সেইসব নিদর্শন দেখতে দেখতে।

জাতীয় সংগ্রহালয়ের অভ্যন্তরে তিনটি প্রদর্শনী (gallery) রয়েছে। পুরাতত্ত্ব প্রদর্শনীতে রয়েছে প্রাচীন এবং নব্য প্রস্তর যুগ থেকে সময়কাল অনুসারে কোরিয়ার তিন সাম্রাজ্যের ধ্বংসাবশেষের নিদর্শন। কোরিয়ার ইতিহাসে, সভ্যতায় এই তিন সাম্রাজ্যের গুরুত্ব অপরিসীম; গোগোরিয় রাজত্বের শক্তি এবং রাজত্ব বিস্তার, বাকজে রাজত্বের বানিজ্যে এবং বানিজ্যের খাতিরে অন্যান্য রাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন, এবং সর্বোপরি সিল্লা রাজত্বের উপদ্বীপটিকে ঐক্যবদ্ধ করা। কলা এবং ইতিহাস প্রদর্শনীতে রয়েছে বৌদ্ধ সংস্কৃতির নিদর্শন। প্রস্তর এবং ব্রোঞ্জ (গিলটি করা) নির্মিত ভগবান বুদ্ধের মূর্তিগুলি খ্রীস্টপূর্ব ৫৭ থেকে ৬৬৮ খ্রীস্টাব্দ সময়কালের মধ্যেকার। বৌদ্ধধর্ম এবং সংস্কৃতির প্রভাব কোরিয়ার রাজনৈতিক ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য। সপ্তম শতাব্দীতে সিল্লা রাজত্বও বৌদ্ধধর্মকে সরকারী ভাবে গ্রহন করলে বৌদ্ধ ভাস্কর্য উল্লেখযোগ্য ভাবে উন্নতিলাভ করে। সিল্লা সাম্রাজের দ্বারা তিন সাম্রাজ্যের একীকরণের পরে বুদ্ধমূর্তি নির্মাণ আরও বেশি প্রচলন পায় এবং অষ্টম শতাব্দীতে বুদ্ধমূর্তি ভাস্কর্য এক নান্দনিক ঐক্যের প্রতীক হিসাবে শীর্ষস্থানে পৌছয়। পরবর্তীকালে যদিও তা এই উজ্জ্বলতা হারায় এবং বিভিন্ন আঙ্গিকের মূর্তি নির্মাণ দেখা যায়। এই আঙ্গিকগুলি প্রধানত হাতের বিভিন্ন মুদ্রা যা আসুরিক শক্তি বিনাশকারী বলে ধারণা করা হয়। তৃতীয় প্রদর্শনীর বিষয়বস্তু হল ঐতিহ্যগত লোক-সংস্কৃতি এবং জীবন। ইয়েওংনাম (Yeongnam) অঞ্চলের 'সেনবি' (Seonbi) সংস্কৃতি আচার-অনুষ্ঠান, রীতি-নীতি ইত্যাদি সম্পর্কে জানা যায় এই গ্যালারিটিতে। ঐতিহ্যমণ্ডিত রঞ্জন পদ্ধতি (dyeing), স্থানীয় উদ্ভিদ বা অন্যান্য উৎস থেকে প্রাপ্ত রঞ্জক (dye), নানান দেশের ফেব্রিক (fabric) শৈলী, কাপড় বোনার পদ্ধতি, বিভিন্ন ঔষধি গাছ-গাছড়ার (herb) ব্যবহার, ইত্যাদি দেখান হয়েছে এখানে। দেখতে দেখতে হঠাৎ চোখ আটকে গেল শাড়িপরিহিত এক মহিলার প্রতিকৃতি দেখে, এখানে স্থান পেয়েছে ভারতীয় নারীবেশ। এছাড়াও রয়েছে রাজবেশ, আধিকারিক বেশ, বিবাহের বেশ, পুরুষ ও নারীর নানা বেশের নমুনা। এরপর দেখলাম 'দদংসিয়ন কনফুসিয়ান অ্যাকাডেমি'-র (Dodongseowon Confucian Academy) একটি প্রতিলিপি।

জাতীয় সংগ্রহালয়ের বাইরে রয়েছে একটি বহিরাঙ্গন প্রদর্শনী। পাঁচতলা একটি প্রস্তর নির্মিত প্যাগোডা রয়েছে এখানে। বেড়িয়ে এসে পায়ে হেঁটে যাওয়ার একটি রাস্তা রয়েছে দেখে সেটি ধরে হাঁটতে থাকলাম, ফুল আর গাছের বাগান রয়েছে রাস্তা বরাবর। এই প্রসঙ্গে একটি কথা জানিয়ে রাখি যে সংগ্রহালয়ের ভিতরে ছবি তোলায় নিষেধ রয়েছে, তাই ভিতরের ছবিটা মানসপটে নিয়েই ফিরতে হল।
দেগু জাতীয় সংগ্রহালয় থেকে বেরিয়ে এবার বাড়ি ফেরা। আসার সময় ট্যাক্সিতে এসেছিলাম কিন্তু ফেরার সময় ট্যাক্সি পাওয়া খুব সহজ হল না। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে বাস ধরলাম দেগু বাস টার্মিনালে ফেরার জন্যে। এদেশে সাধারণ মানুষ খুব বেশি ইংরেজি বলেন না, কিন্তু একজন ছাত্র খুব সুন্দরভাবেই ইংরেজিতে বুঝিয়ে দিল বাসরাস্তা আর রুট নম্বর। এবার ফেরা নিজের শহরে, আন্দং–এ।

আগের দিন-ই ভেবেছিলাম 'দেগু ইয়াংনিয়ংসি ওরিয়েন্টাল মেডিসিন সংগ্রহালয়' দেখে আসব কিন্তু তা সময়ের অভাবে সম্ভব ছিল না। তবে কয়েকদিনের মধ্যেই একটা সুযোগ এল। আমার এক বন্ধু আর দুই অধ্যাপক উৎসাহিত। এমনিতে ওরিয়েন্টাল মেডিসিন নিয়ে সারা বিশ্ব কৌতূহলী, যেমনটা আমাদের আয়ুর্বেদ নিয়ে। দ্বিপ্রাহরিক আহার সেরে বেরিয়ে পড়লাম, একই পথ আবার। যখন উপস্থিত হলাম ওরিয়েন্টাল মেডিসিন সংগ্রহালয়ে তখন প্রায় আড়াইটে বাজে। প্রায় সাড়ে তিনশ বছর পুরনো এই ওরিয়েন্টাল মেডিসিনের ইতিহাসকে সংরক্ষিত রাখার উদ্দেশ্যে ১৯৯৩ খ্রীস্টাব্দে স্থাপিত হয় এই কেন্দ্রটি। জিনসেং, হরিণের শিং, বিছে, ওষধি গাছ ইত্যাদির ব্যবহারের বিবরণ রয়েছে প্রদর্শনীতে। ওরিয়েন্টাল মেডিসিনের ইতিহাস, ফিট বাথিং (feet bathing), প্রদর্শনী, ঔষধি বিক্রয়কেন্দ্র ইত্যাদিও রয়েছে এখানে। বেশ কয়েক ঘণ্টা কেটে গেল প্রদর্শনীতে। এবার রাতের খাওয়ার সময় হল, প্রায় সাড়ে ছয়টা। এখানে লোকে সন্ধ্যাতেই রাতের খাওয়া সেরে নেয়, এটাই রীতি। আজকের মেনুতে চিংড়ি (tiger prawn), তবে রন্ধনপদ্ধতি আমাদের থেকে ভিন্ন। পরিষ্কার করা বেশ বড় বড় চিংড়িগুলিতে নুনের প্রলেপ দেওয়া, গরম কড়াইতে বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে, কিছুক্ষণের মধ্যেই সেগুলি লাল হয়ে যাচ্ছে, তারপর পরিবেশন এবং সবশেষে ভাত আর টফু (tofu) স্যুপ। সয়বিনের দুধ থেকে প্রস্তুত একপ্রকার খাবার টফু। ধারণা করা হয় যে সয়বিনের দুধ নিষ্কাশন এবং টফু তৈরির পদ্ধতি চিনে আবিস্কার হয়। এবার ফেরা।

জেজু আইল্যান্ড : আগ্নেয়গিরি দ্বীপ
এবারের গন্তব্য জেজু আইল্যান্ড (Jeju island), দক্ষিণ কোরিয়ার সর্ববৃহৎ দ্বীপ। দেশীয় মানুষের তো বটেই, পৃথিবীর পর্যটন মানচিত্রে নিজের জায়গা করে নিয়েছে কোরীয় উপদ্বীপের একেবারে দক্ষিণ উপকূলে অবস্থিত এই আগ্নেয় দ্বীপটি। স্বয়ংশাসিত জেজু আইল্যান্ড দক্ষিণ কোরিয়ার একটি প্রদেশ (Jeju -do; 'do' বা 'দো' কথাটির অর্থ province বা প্রদেশ)। যাত্রা শুরু হলো দেগু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (Daegu International Airport) থেকে। নিখাদ ভ্রমণের উদ্দেশ্যে যাওয়া নয়, কর্মসূত্রেই তিনদিনের জন্যে যাওয়া, উদ্দেশ্য অতি ক্ষুদ্র এক পরজীবী mite (যা মৌমাছির কলোনির জন্যে খুবই ধ্বংসাত্মক) এবং এক ধরণের আলুর কীটের (pest, যা আলুর ফলনের জন্যে ক্ষতিকারক) জরিপ (survey) করা আর তারই মধ্যে যতদূর সম্ভব দেখে নেওয়া জায়গাটাকে, জানিনা আবার কখনও সুযোগ পাব কিনা! প্রায় দুই মিলিয়ন বছর পূর্বে অগ্নুৎপাতের মাধ্যমে এই দ্বীপের সৃষ্টি হয়। পূর্ব-পশ্চিম বরাবর প্রায় ৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ আর উত্তর-দক্ষিণ বরাবর প্রায় ৩১ কিলোমিটার প্রস্থ দ্বীপটির মোট আয়তন ১৮৪৭ বর্গ কিলোমিটার। প্রায় এক ঘন্টা দশ মিনিটের যাত্রা। জেজু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছলাম প্রায় সকাল এগারটায়। বিমানবন্দরের বাইরে গাড়ি ভাড়া পাওয়া যায়। যদি ড্রাইভিং লাইসেন্স (ইন্টারন্যাশনাল অথবা কোরিয়ান) সঙ্গে থাকে তবে এখান থেকে গাড়ি নিয়ে পুরো দ্বীপটা অনায়াসে ঘোরা যায়। এদেশে গাড়ি রাস্তার ডানদিক দিয়ে চলে আর চালকের আসন বামদিকে অর্থাৎ আমাদের দেশের ঠিক বিপরীত, প্রথম প্রথম মানিয়ে নেওয়া একটু কঠিন বটে তবে সময়ের সঙ্গে তা অভ্যাসে পরিণত হয়।

জেজু আইল্যান্ড-র অন্যতম দ্রষ্টব্য হালাসান জাতীয় উদ্যান (Hallasan National Park)। হালাসান আবার মাউন্ট ইয়ংজুসান (Mt. Youngjusan) নামেও পরিচিত। ১৯৭০ সালে হালাসান জাতীয় উদ্যানের মর্যাদা পায়। প্রধান মাউন্টেন-র পাশে তিনশ আটষট্টিটি পরজীবী আগ্নেয়গিরি (parasitic volcano) রয়েছে। ২০০২ সালে হালাসান ইউনেস্কো বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ( UNESCO Biosphere Reserve ) মনোনীত হয় আর ২০০৭ সালে এটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট (World Heritage Site) হিসাবে পরিচিতি লাভ করে। ১৫৩.১১২ বর্গকিলোমিটার জুড়ে অবস্থিত হালাসান প্রধানত ব্যাসল্ট জাতীয় শিলা দিয়ে গঠিত এবং উচ্চতায় প্রায় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৯৫০ মিটার, যা দক্ষিণ কোরিয়ার উচ্চতম পর্বত। সেনোজোয়িক যুগে (Cenozoic era) অগ্নুৎপাতের দ্বারা সৃষ্ট হালাসান পর্বতের সাতটি ট্রেইল রয়েছে। এগুলি হলো Eorimok trail (৬.৮ কি.মি.), Yeongsil trail (৫.৮ কি.মি.), Seongpanak trail (৯.৬ কি.মি.), Seokgulam trail (১.৫ কিমি.), Gwaneumsa trail (৮.৭ কি.মি.), Donnaeko trail (৭ কি.মি.) এবং Eoseungsaengak trail (১.৩ কি.মি.)। একদম শৃঙ্গে রয়েছে crater লেক (Crater lake) যার নাম 'Baekrodam'। Crater পর্যন্ত ট্রেক করার সময় হাতে ছিল না, অগত্যা প্রায় ৫ কি.মি. চলার পর ফিরে আসতে হলো জাতীয় উদ্যানের পর্যটন কেন্দ্রে। বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। অতএব এবার ফিরতে হবে, সূর্যও পশ্চিমে ঢলে পড়েছে।

ফেরার পথে চোখে পড়ল পাথরের তৈরি 'বৃদ্ধ ঠাকুরদা-র' (old grandfather) মূর্তি, কোরিয়ান ভাষায় যার পোশাকি নাম দোল হেরিউব্যাং (Dol Hareubang)। লোক ঐতিহ্য তথা জেজু আইল্যান্ড-র প্রতীক এই Dol Hareubang। পূর্বে বিভিন্ন নাম যথা ইউসিওকমক(Useokmok), মিউজিওকমক (Museokmok) অথবা বাইওকসুমেওরি (Byeoksumeori) নামে পরিচিত ছিল। ১৯৭১ সালে Dol Hareubang সরকারি নাম হিসাবে বিবেচ্য হয়। স্থানীয় বিশ্বাস এই যে Dol Hareubang 'খারাপ' কিংবা 'দৈত্য'র হাত থেকে সমাজকে সুরক্ষা প্রদান করে।
কোনো জায়গার খাদ্যাভ্যাস ওই স্থানের বাস্তুতন্ত্রের উপর ভীষণভাবে নির্ভরশীল, পারিপার্শ্বিক বাস্তুসংস্থান থেকেই মানুষ তার প্রয়োজনীয় খাদ্য এবং ঔষধি সামগ্রী সংগ্রহ করে এসেছে প্রাগৈতিহাসিক সময়কাল থেকেই এবং আজও বিভিন্ন জনজাতি তার (শারীরিক আর পরিবেশের সংযোগের) জিনগত স্বাক্ষর বহন করে নিয়ে চলেছে। জেজু আইল্যান্ড-র মাটি উর্বর নয়, তার উপর ঝোড়ো আবহাওয়া, আর তাই পূর্বে এখানে বিশেষ চাষাবাদ সম্ভব ছিল না, কাজেই খাদ্যসংগ্রহ মূলত নির্ভর করত সামুদ্রিক প্রাণী আর উদ্ভিদের (শৈবাল প্রধানত) ওপর। পরিবারের পুরুষরা গভীর সমুদ্রে যখন মাছ ধরতে যেত কয়েক সপ্তাহের জন্য তখন পরিবারের অন্যের সকলের জন্যে খাদ্য সংস্থানের দায়িত্ব বর্তাত পরিবারের নারীর উপর। অস্তিত্বরক্ষার তাগিদে তাঁরা শিখেছিলেন সমুদ্রে ডুব দিয়ে অক্টোপাস (Octopus), ক্ল্যাম (Clam), এবালন (Abalone), সি-উইড (Sea weed) ইত্যাদি সংগ্রহ করতে। স্থানীয় কোরীয় ভাষায় এঁদের Haenyo বলা হয় যার অর্থ 'সমুদ্র-নারী' (Sea-woman)। Haenyo-দের গড় বয়স পঁয়ষট্টি, অনায়াসে এঁরা ১০ থেকে ২০ মিটার গভীরে ডুব দিয়ে প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহ করে থাকেন। অলস সকালে যখন ঘর থেকে বেরিয়ে সমুদ্রের পারে বসেছিলাম তখন দেখা হল একজন haenyo-র সাথে। তাঁর ভাষা আমি বুঝিনা, কিন্তু ভাষা যে মনের ভাব প্রকাশের জন্যে বাধা হয়ে ওঠেনা তা আরও একবার উপলব্ধি করলাম।



গবেষণাগারে কাজের থেকে অব্যাহতি পেলেই সম্পত ঘোষ বেরিয়ে পড়েন নতুন কিছুর খোঁজে। সাইকেল চালানোটা খুব মিস করেন, আজকাল হয়ে ওঠেনা। বই পড়া আর বেড়ানোর পরিকল্পনা করাটা চালিয়ে যাচ্ছেন।

  

 

SocialTwist Tell-a-Friend

To view this site correctly, please click here to download the Bangla Font and copy it to your c:\windows\Fonts directory.

For any queries/complaints, please contact admin@amaderchhuti.com
Best viewed in FF or IE at a resolution of 1024x768 or higher