বেড়ানোর ভাল লাগার মুহূর্তগুলো সকলের সঙ্গে ভাগ করে নিতে ইচ্ছে করে, অথচ দীর্ঘ ভ্রমণকাহিনি লেখার সময় নেই? বেড়িয়ে এসে আপনার অভিজ্ঞতাগুলো যেমনভাবে গল্প করে বলেন কাছের মানুষদের - ঠিক তেমনি করেই সেই কথাগুলো ছোট্ট করে লিখে পাঠিয়ে দিন ছুটির আড্ডায়। লেখা পাঠানোর জন্য দেখুন এখানে। লেখা পাঠাতে কোনরকম অসুবিধা হলে ই-মেল করুন - admin@amaderchhuti.com অথবা amaderchhuti@gmail.com -এ।
বাঙলার গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন – গনগনি
শুভ্রা সরকার
কাজের ভিড়ে ভীষণভাবে যাঁতায় পিষে,
রাত্রি কাটে ভবিষ্যতের দিন গড়ায়।
একদিন তো আমিও ছিলাম অন্য রকম,
একদিন তো আমিও ছিলাম খামখেয়ালি।।
রোজকার এই একঘেয়ে থোড়-বড়ি-খাড়া আর খাড়া-বড়ি-থোড় গোছের জীবনের সঙ্গে সঙ্গে মনটাও কেমন যেন যান্ত্রিক হয়ে গেছে। হাঁটুতে গেঁটে বাত বাসা বাঁধব বাঁধব করছে। মন বলছে সুতো ছাড়া ঘুড়ির মতো নিজের খেয়ালে উড়ে যেতে। তাতে বোধকরি কিছু সময়ের জন্য রেহাই পাওয়া যাবে এই শিকল বাঁধা যন্ত্র-জীবন থেকে। গায়েগতরে ব্যথাটাও যদি একটু কমে। তবে হাতে ছুটি বেশি নেই। তাই ঠিক করলাম একটা ছোটো একদিনের ট্যুর করবো। যেমন ভাবা তেমন কাজ। গন্তব্য পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা শহর আর তার কাছেই শিলাবতী নদীর তীরে গড়ে ওঠা বৃহৎ গিরিখাত গনগনি।
ফেসবুকের পোস্টে এই জায়গার সঙ্গে প্রথম পরিচয়। আমেরিকার গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের এক মিনিয়েচার ভার্সন বলা হয়ে থাকে এটিকে। অ্যারিজোনার জায়গায় গনগনি আর কলোরাডোর জায়গায় শিলাবতী নদী। প্রকৃতির কোলে লাল মাটি দিয়ে তৈরি অপরূপ সৌন্দর্য ও ভাস্কর্য। কলেজে প্রথমে কেমিস্ট্রি ম্যাডামই এর উল্লেখ করেন, জায়গাটাও বেশি দূর নয়, তাই রাজি হয়ে গেল সকলেই। নীল আকাশের নিচে একটু পায়ে হেঁটে, শিলাবতী নদীকে সাক্ষী রেখে, 'আজ ধানের ক্ষেতে রৌদ্র ছায়ায়'(থুড়ি কাশফুলের ছায়ায়) ফুরফুরে মেজাজে কাটিয়ে দেওয়া যায় গোটা একটা দিন। ব্যাস আর কি? প্ল্যান তৈরি, ঠিক হল দিনক্ষণ, তোলো ব্যাগ, চলো গনগনি। প্রথমেই বলে নিই আমাদের এই ঘোরাঘুরির একটা ছোটোখাটো 'যদি হও সুজন, তেঁতুল পাতায় নয়জন' গোছের টিম-ট্যুর আছে। তাতে সদস্যসংখ্যা নয় না হলেও ছয় তো বটেই। এর মধ্যে বয়সে এবং অভিজ্ঞতায় বড়ো কেমিস্ট্রি ম্যাডামই হচ্ছেন আমাদের ট্যুর প্লানার-কাম-গাইড আর দ্বৈপায়ন হলো টিকিট বুকিং এজেন্ট-কাম-জুনিয়র ফটোগ্রাফার। এছাড়া ওই টুকটাক বাদাম, বিস্কুট, মিষ্টি, লস্যির যোগান যিনি স্বেচ্ছায় দিয়ে থাকেন তিনি হলেন আমাদের ফিজিক্স স্যার। বাকি দুজন হলেন তুহিনাদি আর সৌরভ স্যার। সৌরভ স্যার হলেন গিয়ে সিনিয়রমোস্ট ফটোগ্রাফার। বাকি আমরা দুজন নেহাতই এদের ছবির নায়িকা হতেই যাই আর কী! তো এই হলো গিয়ে আমাদের ছয় সুজন, যাদের নিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু।
শরৎকালের এক ছুটির দিনে সূর্যোদয়ের আগেই ঘুমকে বিদায় জানিয়ে তৈরি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম ঘোরার নেশায়। বাগুইহাটিতে দেখা করার কথা আমাদের চারজনের - ফিজিক্স স্যার, ম্যাডাম, আমি আর ফটোগ্রাফার দ্বৈপায়ন। বাড়ি থেকে বেরোতে বেরোতেই কেমিস্ট্রি ম্যাডামের ফোন পেলাম, মিটিং পয়েন্টে প্রথম আগমন তাঁরই। বলাবাহুল্য এই ট্যুরের বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকাটিও এঁরই। হাঁটা লাগালাম বেশ জোরেই, পৌঁছে দেখলাম বাকি দুজনেই পৌঁছে গেছে। আমিই লেট-লতিফ। ঘোরার কথা এলে ম্যাডামের উৎসাহ ও উচ্ছ্বাস যে কেউই পড়ে নিতে পারে। অগত্যা পৌঁছনোর প্রতিযোগিতায় চতুর্থ স্থানের অধিকারিণী হয়েই নিজেকে তৃপ্ত রাখতে হল। ট্রেনের নাম আরণ্যক এক্সপ্রেস। শালিমার থেকে সাতটা পয়ঁতাল্লিশ মিনিটে ছাড়ার কথা। ওলা বুক করা হল শালিমারের উদ্দেশ্যে, মাঝপথে মেট্রোপলিটন অফিস মোড় থেকে মাথা বেড়ে হল পাঁচ। আমাদের পঞ্চম সঙ্গী - তুহিনাদি। তুহিনাদির ভীষণ প্রিয় এই একদিনের ট্যুরগুলো। ওলা ছুটে চললো তীব্রগতিতে, তিলোত্তমার ভিড় শূন্য রাস্তায় যেন সে এক নতুন প্রাণ খুঁজে পেয়েছে। যথা সময়ে পৌঁছে গেলাম শালিমার ষ্টেশনে। এখান থেকে দলে যোগ দিলেন সৌরভ স্যার আর স্পেশাল অ্যাপিয়ারেন্সে সৌরভ স্যারের ডি.এস.এল.আর.। ট্রেনে উঠে প্রত্যেকেই নিজের নিজের স্থান দখল করে বসে পড়ল। দলে সবথেকে ছোটো হওয়ার দরুণ জানলার ধারের সিটটাতে একছত্র অধিপত্য বিস্তার করে মনে মনে বেশ খুশিই হলাম। ট্রেনও চলতে শুরু করলো যথাসময়ে। ছয় বাঙালি একজায়গায় আর আড্ডা জমবে না, এমনটা ভাবাও পাপ! ট্রেনের গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে থাকল আমাদের গল্প। সময়ের হিসেব হারিয়ে হঠাৎ করেই চলে এল খড়গপুর। এখানে গাড়ি দাঁড়াবে মিনিট পনেরো। চায়ের কথা উঠতেই একবাক্যে সবার সম্মতি পাওয়া গেল, ওইযে কথায় আছে "বাঙালির চা-এ না নেই"। এরপর খড়গপুরের ধোঁয়া ওঠা আলুর দম আর ফিজিক্স স্যারের আনা কলা, মিষ্টি সহযোগে সারা হল প্রাতরাশের পালা। ট্রেন আবারও ছুটতে শুরু করল।
গড়বেতায় যখন নামলাম, ঘড়ির কাঁটা প্রায় সাড়ে এগারোটা ছুঁইছুঁই। হোটেল আগে থেকেই বুক করা ছিল, টোটোগাড়িও বলা ছিল। টোটোতে চড়ে সোজা হোটেলে পৌঁছে ব্যাগপত্র রেখে, সফরের সমস্ত ক্লান্তি ধুয়ে মুছে আধ ঘণ্টার মধ্যে তৈরি হয়ে গেলাম যার জন্য এখানে আসা, সেই গনগনি যাওয়ার উদ্দেশ্যে। কিছুদিন আগেও রাজনৈতিক খবরের শিরোনামে ছিল এই গড়বেতা। কিন্তু কালের নিয়মে রাজনৈতিক গড়বেতার পটভূমিকা পাল্টে গিয়ে হয়েছে গড়বেতা-গনগনি, প্রকৃতির এক অবিস্মরনীয় সৃষ্টি।
হোটেল থেকে টোটোতে করে মিনিট পনেরো লাগলো শিলাবতী নদীর ধারে পৌঁছতে। সূর্য্য তখন প্রায় মাথার ওপরে, যদিও আকাশ মেঘলা থাকায় তেমন কোনও অসুবিধে হল না। তবে ভাগ্যিস বৃষ্টি হয়নি সেদিন। লাল মাটির সরু রাস্তা দিয়ে চললাম আমরা, দুপাশে সারি সারি গাছ। স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেল এগুলো নাকি কাজুবাদাম গাছ। ফল না থাকায় আমাদের পক্ষে তা যাচাই করা মোটেও সম্ভব ছিলনা। যদিও গাছ থেকে ছিঁড়ে কাজুবাদাম খাওয়ার ইচ্ছেটা একদমই হয়নি বললে নেহাত মিথ্যে বলা হবে। এই লালমাটির পথে সবুজের সারির মাঝে চলতে চলতে মনের ভেতর বেজে উঠছিল রবিঠাকুরের গান। খানিক পথ পেরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে শিলাবতী নদীর তীর ওরফে গনগনি ডাঙা।
নদীর কোথাও হাঁটু জল, কোথাও কোমর পর্যন্ত। আদতে নদী শান্ত, বাঁধনহারা বেণীর মতো নিজের খেয়াল বশে এঁকে বেঁকে চলেছে মনের খুশিতে। লালমাটির ছোট ছোটো ঢিবিগুলোর গা ক্ষয়ে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে এক অপরূপ কারুকার্য, প্রকৃতি যেন নিজে হাতে খোদাই করেছে এ নকশা। উপরি পাওনা কাশফুলে মুড়ে থাকা নদীর তীর। প্রকৃতির কোলে লাল ল্যাটেরাইট মাটি আর সাদা চুনা পাথরে তৈরি খাঁজ, সবুজের সতেজতা আর নদীর দুপাশ জুড়ে ছড়িয়ে থাকা সাদা কাশ ফুলের সারিবদ্ধ জঙ্গল চোখে না দেখলে গ্র্যান্ড-ক্যানিয়ন উপাধির সার্থকতা বুঝতে পারতাম না। কথিত আছে পাণ্ডবরা অজ্ঞাতবাসের সময় কিছুদিন এখানে বসবাস করেছিলেন। সেইসময় একদিন যুধিষ্ঠির নদীর পাড়ে এক ব্রাহ্মণকে বসে কাঁদতে দেখে জিজ্ঞেস করে জানতে পারেন যে নদীর অপর পাড়ে এক রাক্ষস আছে, নাম বক রাক্ষস। প্রতিদিন একজন করে গ্রামবাসীকে সে তার খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে এবং আজ তার পালা। এই কথা শুনে প্রচণ্ড রেগে যুধিষ্ঠির ভীমকে পাঠান রাক্ষসবধের উদ্দেশ্যে। প্রবল যুদ্ধ হয় বকরাক্ষস ও ভীমের মধ্যে। আর এই যুদ্ধের ফলেই নাকি গনগনির ক্যানিয়নের সৃষ্টি হয়। ইতিহাসের দিক থেকেও এই স্থানের গুরুত্ব কিছু কম নয়। চুয়ার-লায়েক বিদ্রোহের অন্যতম নায়ক অচল সিং ও তার দলবলকে এই গনগনির মাঠেই ফাঁসি দিয়েছিল ইংরেজরা।
দুচোখ ভরে প্রকৃতিকে আস্বাদন করে এবার এল এই স্মৃতিগুলোকে ধরে রাখার সময়। শুরু হল ছবি তোলা। এ মহৎ কাজে প্রারম্ভিক ভূমিকা আমাদের সেই স্পেশাল অ্যাপিয়ারেন্সটি পালন করলেও, পরবর্তীতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিল ফোনের ছোট ছোট ক্যামেরাগুলো। কাশবনের ভেতরে – বাইরে, নদীর হাঁটু জলে পা ডুবিয়ে, ক্যানিয়নের খাঁজে বসে-দাঁড়িয়ে অনেক ছবি তোলার পর্ব শেষ করতে করতে বেলা পড়ে এলো। এবার ফেরার পালা। হাতে সময় আর বেশি নেই। পায়ে পায়ে হেঁটে উঠে এলাম শহুরে রাস্তায়, ততক্ষণে সবারই মোটামুটি খিদে পেয়ে গেছে। রাস্তার পাশে এক ভাতের হোটেলে ভাত খেয়ে আবার হোটেলে ফিরে আসা হল। খানিকটা বিশ্রামের পর বাড়ি ফেরার জন্য শুরু হল তোড়জোড়। বিকেলে ফিরতি আরণ্যক এক্সপ্রেসেই এই রাঢ়-বাংলা ফেলে ফিরে চলা আবার সেই কর্মব্যস্ত জীবনে, সঙ্গে নিয়ে একরাশ স্মৃতি আর অভিজ্ঞতা।
পেশায় অধ্যাপিকা হলেও শুভ্রা সরকার নেশায় ভ্রমণপিপাসু। আর এই ভ্রমণের স্মৃতিগুলোকে সংরক্ষিত করে রাখার জন্যই হাতে কলম তুলে নেওয়া। প্রিয়জনদের উৎসাহে নিমরাজি লেখিকার কোনো পত্রিকাতে লেখা পাঠানোর এই প্রথম প্রয়াস।
সিল্ক রুটে
পঙ্কজ দত্ত
বছরতিনেক আগে সিকিমে সিল্ক রুটে বেড়াতে গিয়েছিলাম। আমার অভিজ্ঞতার কথা আপনাদের সঙ্গে একটু ভাগ করে নিই।
নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে চারচাকায় পৌঁছেছিলাম লিংতাম নামক এক জায়গায়। যেতে সময় লেগেছিলো প্রায় চার-পাঁচ ঘন্টা।
লিংতাম-এ 'বাসেরা' নামে এক হোম-স্টেতে সেই রাতটা কাটিয়ে পরের দিন বেরিয়ে পড়লাম জুলুক-এর দিকে। জুলুক যেতে সময় লেগেছিল ঘন্টা তিন-চার। জুলুক-এ দুই রাত্রি থেকে আবার লিংতাম ফেরত আসি। সেখানে আবার এক রাত্রি থেকে চলে আসি রোলেপ। রোলেপ-এ এক রাত্রি থেকে কলকাতা ফেরত। তবে এই পুরো থাকাটাই কিন্তু হোম-স্টেতেই ছিলাম।
লিংতাম-এ থাকাটা এক দারুণ অভিজ্ঞতা। জানলা খুললেই পর্বতরাজি চোখের সামনে। আর ভোরবেলার সেই অপূর্ব দৃশ্য ভাষায় বোঝাতে পারবো না। পাহাড়ের ওপরে ভোরের সূর্যকিরণ পড়ে সে যে কী সুন্দর লাগে দেখতে, আহা! ভাবুন তো একটা ঘরে আছি আর সকালবেলা জানালা খুললেই দেখছি সেই দৃশ্য। কি অদ্ভুত না!
জুলুকে আবার একটু বাইরে বেরিয়ে এসে দু'পা হাঁটলেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেন চেয়ে আছে আমাদের দিকে। এক রাত জুলুক-এ কাটিয়ে পরের দিন সকালে বেরিয়েছিলাম সাইট-সিয়িং-এ। প্রথমে থামবি ভিউ পয়েন্ট-এ। এই থামবি ভিউ পয়েন্ট থেকেই দেখা যায় জুলুক এর হেয়ার পিন টার্নগুলো এবং যদি কপাল খুব ভালো থাকে আর আবহাওয়া পরিষ্কার থাকে তাহলে কাঞ্চনজঙ্ঘা রেঞ্জ। আমরা দুটোই দেখতে পেয়েছিলাম। ভিউ পয়েন্ট-এ কিছু সময় কাটিয়ে উঠে গেলাম নাথাং ভ্যালির দিকে। ভ্যালির দৃশ্য কিছুক্ষণ উপভোগ করে চলে গেলাম বাবা মন্দির-এ। ওখানে গিয়ে দেখি সেনাবাহিনির জওয়ানরা রয়েছে। আবহাওয়াও বেশ ঠাণ্ডা এখানে। জওয়ানদের ক্যান্টিনে একটু খাওয়াদাওয়া করে বাবা মন্দিরের ভেতরে ঢুকলাম। মন্দির বলা হয় বটে, কিন্তু আসলে একটা 'বাঙ্কার'। বাইরে অত ঠাণ্ডা থাকা সত্ত্বেও বাঙ্কারের ভেতরটা কিরকম যেন গরম।
এই বাবা মন্দিরের সঙ্গে একটি কাহিনি জড়িয়ে আছে। বাবা হরভজন সিং ইন্ডিয়ান আর্মি তে চাকরি করতেন। ব্যাটালিয়ন-এর সঙ্গে অন্য জায়গায় মার্চ করতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে গিয়েছিলেন গভীর খাদে। বলা হয় তিনি নাকি স্বপ্নে সহকর্মীদের এই মন্দির গড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। লোককথা বাবা হরভজন সিং এখনও নাকি ওই বাঙ্কারে নিয়মিত আসে্ন। বাঙ্কারে ঢুকে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। প্রত্যেকদিন ওঁর জুতো পালিশ করে ঠিক জায়গায় রাখা হয়, জামাকাপড় ইস্ত্রি করে রাখা হয়, এক গ্লাস কফিও রাখা হয় রোজ। এমনকি সরকার থেকে ওনার খাতায় বেতনও যায় প্রত্যেক মাসে। কিন্তু এত সব একটা মানুষের জন্য যে বেঁচে নেই! কেন! ওখানকার জওয়ানদের সঙ্গে কথা বলে বুঝি যে এমন অনেক সময় হয়েছে এই বাবা হরভজন সিং ওনাদের অনেক কিছু থেকে বাঁচিয়েছেন এবং আগাম বার্তাও দিয়েছে্ন অনেক বিপদের। এই সমস্তকিছুর জন্য তাঁকে পুজো করা হয়। বাবা মন্দিরে এবং ভারতীয় জওয়ানদের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কাটিয়ে চলে গেলাম এলিফ্যান্ট লেক দেখতে। লেকটার মুখের দিকটা ঠিক হাতির শুঁড়ের মতন। তাই এরকম নামকরণ। ওখান থেকে সোজা জুলুক চলে এসে সে রাতটা সেখানেই থাকা হল।
এরপর লিংতাম হয়ে চলে এলাম সোজা রোলেপ-এ - ঘন জঙ্গল আর তার মধ্যে হোম স্টে। ঠিক তার পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে ঝরনা। রাতে পোকা আর জলের আওয়াজ ছাড়া কিছু নেই। একটা ঝুলন্ত সেতু আছে রোলেপ-এ, সেটা দেখার জন্য বেশ অনেকটা হাঁটতে হয়েছিল। রোলেপ থেকে পরের দিন কলকাতায় ফেরার জন্য রওনা।
হলদিয়ার আই ভি এল ধুনসেরি পেট্রোকেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিস প্রাইভেট লিমিটেডে কর্মরত পঙ্কজ দত্তের আগ্রহ ফটোগ্রাফি এবং অ্যাডভেঞ্চার ভ্রমণ। তাঁর কথায়, জীবনে বাঁচার জন্য যেটাই করতে হবে ভালোবেসে করতে হবে, তাহলেই জীবনের মজা পাওয়া যাবে। জীবন ভারী সুন্দর।