ফিনল্যান্ডের বসন্তে

সুপ্রিয় কুমার রায়


ফিনল্যান্ড -১
২৬/০৭/২০১৬ সকাল এগারটা চল্লিশে দমদম এয়ারপোর্ট থেকে রওনা হয়ে দিল্লি পৌঁছালাম দুপুর দুটো কুড়িতে। বাইরে বেরোনোর সময় জানতে পারলাম ট্যাক্সি আর অটো দুটোরই স্ট্রাইক। ওলা আর উবেরের বিরুদ্ধে। ওলা-উবেরের জন্য ট্যাক্সি-অটোর ব্যবসাতে সব জায়গাতেই টান পড়েছে। যাই হোক একটা গাড়ির ব্যবস্থা হল। চললাম হোটেলে। পরদিন সকালে প্লেন ছাড়বে। সোজা হেলসিঙ্কি।
সাড়ে দশটায় রওনা হলাম দিল্লি থেকে, হেলসিঙ্কি পৌঁছালাম ওদের সময় অনুসারে তিনটে পাঁচ মিনিটে অর্থাৎ ভারতের ঘড়িতে বিকাল পাঁচটা পঁয়ত্রিশ মিনিট। দিল্লি থেকে আফগানিস্থান ও মস্কোর আকাশপথ ধরে সোজা হেলসিঙ্কি।
বড় ছেলে সায়ক অপেক্ষা করছিল এয়ারপোর্টে। গাড়ি নিয়ে বাইরে বেরিয়ে দেখি ঝকঝকে আকাশ। যেদিকে তাকাই নীল আর নীল। সূর্যের আলো দেখে মনে হচ্ছে দুপুর দুটো। আগের বছর লন্ডন থেকে ফিনল্যান্ড এসেছিলাম, তখন শীতকাল। দেখেছিলাম বিকেল তিনটের মধ্যেই সূর্যদেব ঘুমিয়ে পড়তেন কিন্তু এখন শুনলাম ভোর চারটে থেকে রাত এগারোটা অবধি উনি জেগে থাকেন। আর বাকিটুকুও পুরো অন্ধকার হয় না, গ্রহণের সময়কার মতো আলো থাকে। গতবার শীতের সময় গাছের পাতা সব ঝরে গিয়েছিল, গাছের রঙ ছিল সাদা, প্রচুর বরফ পেয়েছিলাম। এবার সবুজ রঙের আস্তরণে সারা শহর ঢাকা পড়েছে। সত্যি সত্যিই নানা রঙের ফুল বলছে – ধন্য আমি মাটির পরে। গতবার ঘাসের রঙ ছিল সাদা আর এবার ঘাস তার নিজের রঙ ফিরে পেয়েছে। এখানে এখন গরমকাল। তাই রাস্তায় প্রচুর লোকজন দেখা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, কী আনন্দ আকাশে বাতাসে। সবাই প্রাণভরে উপভোগ করছে সময়টাকে। এখানকার সামার আমাদের শীত আর বসন্তকাল। কাছেই ছেলের বাড়ি। পৌঁছে গেলাম বেশ তাড়াতাড়িই।
গতবার ছিলাম হেলসিঙ্কিতে এবার আছি এসপো-য়। হেলসিঙ্কির লাগোয়া এই শহরটা। একটা দিন শুধু ঘরে বসেই কাটিয়ে দিলাম শরীরটাকে এখানকার জলহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য। বিকেলে মিনিট পনের হেঁটে পৌঁছে গেলাম সমুদ্রের ধারে। সৈকত খুব একটা বড় নয়। বাচ্চারা সমুদ্রের জলে লাফালাফি করছে, ঢেউ নেই বললেই চলে। বালিতে রোদের মধ্যে অনেকেই শুয়ে আছে। এই সময়টা এখানকার লোকজন যতটা পারে শরীরকে রোদের মধ্যে রাখে কারণ শীতকালে সূর্যের আলো খুব কম সময়ের জন্য থাকে এবং তেজও থাকে অনেকটা কম। সমুদ্রের ধারের রাস্তায় জগিং করতে দেখলাম অনেককেই। এমনি করেই সময় বয়ে যাচ্ছিল। চমকে উঠলাম ঘড়ি দেখে। রাত দশটা বাজে অথচ বোঝার উপায় নেই সূর্যের আলো দেখে। মনে হচ্ছে পড়ন্ত বিকেল।

ফিনল্যান্ড -২
রাত্রে গরম গরম আটার রুটি, আলু-ফুলকপির তরকারি ও হাতে বানানো নাড়ু খেতে খেতে হঠাৎ ছেলের কাছে ওর বন্ধুর ফোন এল। আগামীকাল পিকনিকে যাবো কিনা? মালদা থেকে তার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি এসেছে। সবাই মিলে একসঙ্গে যেতে চায়। আমরা তো সব ব্যাপারে হাত উঠিয়েই আছি। ঠিক হয়ে গেল সকাল সকাল বেরিয়ে পড়ব কিছু খাবার নিয়ে। এখান থেকে ২৭ কিলোমিটার দূরে একটা চমৎকার পিকনিকের জায়গা আছে শুনলাম। জঙ্গল, লেক এবং ছোট পাহাড় - সবই আছে। জায়গাটার নাম নুউক্সিও (NUUKSIO)। তবে ওখানে রান্না করতে দেবে না, নিয়ে গিয়ে খাওয়া যাবে। ভোর ভোর উঠে কিছু খাবার বানিয়ে নিলেই হবে, আপাতত চললাম বিছানায়।

নুউক্সিওতে পৌছে দেখি ওরা চারজন পার্কিংয়েই দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের একটু আগে পৌঁছেছে। সকলে একসঙ্গে জিনিসপত্র নিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম। পার্কিংয়ের এবং জঙ্গলে ঢোকার জন্য কোনও মূল্য দিতে হয় না। ভালই ভিড়। শনিবার সব ছুটি, তার ওপরে এখানকার সামার। দল বেঁধে সব বেরিয়ে পড়েছে আনন্দ উপভোগ করতে। অনেকের সঙ্গে জঙ্গলের রাস্তা ধরে এগোলাম। একটু এগোতেই নজরে পড়ল গাছের গায়ে লাল, নীল আর হলুদ রঙকরা তিনটে কাঠের টুকরো লাগানো আছে। যেহেতু মন সবসময় জানার মাঝে অজানাকে সন্ধান করে তাই জানতে চাইলাম ছেলের কাছে। ও বলল, এই জঙ্গলঘেরা পাহাড়ে অনেকগুলো ট্রেকিং রুট আছে। যাতে কেউ রাস্তা না হারিয়ে ফেলে তার জন্য এই ব্যবস্থা। লাল, নীল আর হলুদ রঙের আলাদা আলাদা কাঠের টুকরো জঙ্গলের মধ্যে বিভিন্ন গাছে লাগানো আছে। রাস্তা চেনানোর জন্য। তাইতো! বেশ কজনকে দেখলাম পিঠে স্যাক, টেন্ট আর স্লিপিং ম্যাট নিয়ে যেতে। জঙ্গলের মধ্যে বিভিন্ন রঙের মাশরুম বা ব্যাঙের ছাতা ছড়িয়েছিটিয়ে রয়েছে। হঠাৎ নজরে পড়ল ছোট ছোট গাছে প্রচুর পাকা ব্লু বেরি। কোনদিন খাইনি তাই ঝাঁপিয়ে পড়লাম। অরণ্যের অধিকার। তাকিয়ে দেখি আমি শুধু একা নয়, ওদেশের লোকও আছে। কয়েকটা মুখে পুরে আবার হাঁটতে লাগলাম। একটা রাস্তা সোজা উপরে উঠে গেছে আর একটা ডানদিকে গিয়েছে বেঁকে। ডানদিকের রাস্তা ধরে এগোতে লাগলাম। ঝাউ আর ব্লু বেরি ছাড়া নাম-না-জানা গাছের সংখ্যাই বেশি। শুনলাম এটা নাকি ফিনল্যান্ডের জাতীয় উদ্যান। ছোটবড় মিলিয়ে তেতাল্লিশটা লেক আর জলাভূমি অনেকটা জায়গা দখল করে আছে। একদিক থেকে আরেকদিকে যাওয়ার জন্য জলের ওপরে কোথাও আছে ভাসমান সেতু, আবার এমনি সেতুও আছে। দূরে ছিপ নিয়ে একজনকে মাছ ধরতেও দেখলাম। লেকের জলে বেশ কিছু পরিযায়ী পাখি, দেশে যাদের দেখতে পাই শীতকালে। ওদিকে আর না এগিয়ে কিছুটা ফিরে এসে যে রাস্তাটা ওপরের দিকে গেছে সেইদিকেই হাঁটতে লাগলাম। ছোট পাহাড়। পাহাড়ে চড়ার অভিজ্ঞতা অনেকদিনের এবং আনন্দেরও। তরতর করে উঠতে লাগলাম। কিছুটা উঠতেই চোখ জুড়িয়ে গেল।
পাইন গাছে ঘেরা সুন্দর একটা লেক। জলের উপর ভাসছে অসংখ্য পদ্মপাতা। লেকের পাশে তাঁবু খাটিয়ে একদল ছেলে মেয়ে আনন্দ করছে। কেউ কেউ আগুন জ্বালিয়ে খাবার গরম করছে। আগুন জ্বালানোর কাঠ এখানে বিনা পয়সায় পাওয়া যায়। জঙ্গলের মধ্যে বেশ কটা টয়লেট বানানো। সকলের উদ্যোগে সবসময়ই পরিষ্কার। আমরা বাড়ির থেকে অভ্যাসমত বিছানার চাদর এনেছি তাই লেকের পাশে বিছিয়ে আড্ডা মারতে বসলাম। আর কাউকে অমনি চাদর পেতে বসতে দেখিনি। শুনলাম এই লেকের জল শীতকালে বরফ হয়ে যায়। তখন সবাই এর ওপর দিয়ে যাতায়াত করে। চারদিকে ছড়িয়েছিটিয়ে বিভিন্ন দলে সবাই আনন্দ করছে। আমাদের দেশের পিকনিকের মতোই। নেই শুধু মাইকের আওয়াজ। নির্ভেজাল আড্ডা, মনোরম পরিবেশ মাতিয়ে রাখল সারাদিন। সবাই নানারকম ভাবে আনন্দ করল অথচ জায়গাটা একটুও নোংরা হল না। এরাই কি শুধু দেশটাকে ভালবাসে!

ফিনল্যান্ড -৩
শনিবার হ্যানকো (Hanko) যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু বাদ সাধলো আবহাওয়া দপ্তর। জানালো সেদিন আকাশ থাকবে মেঘাচ্ছন্ন ও বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তবে রবিবারের আকাশ ঝকঝকে, বৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা নেই বললেই চলে। এখানে আবহাওয়া দপ্তরের খবর মোটামুটি মিলে যায়। তাই ঠিক হল রবিবার সকালে রওনা হয়ে রাত করে বাড়ি ফিরে আসব। হেলসিঙ্কি থেকে ১৩০ কিলোমিটার দূরে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ একটি বন্দর শহর হল হ্যানকো। দুটো পরিবার সঙ্গে কিছু খাবার আর জল নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম সকাল সকাল। এসপো পার হতেই শহর ছাড়িয়ে পাড়ি দিলাম গ্রামের পথে। ঘন সবুজ অরণ্যের মধ্যে দিয়ে উঁচুনিচু ঝকঝকে রাস্তা। আরো কিছুটা যাওয়ার পর দেখলাম দুপাশের বিস্তীর্ণ জায়গা জুড়ে চলছে চাষআবাদ। যেহেতু এখানকার জমি সমান নয়, ক্ষেতগুলিও নিচ থেকে বেশ কিছুটা ওপরে উঠে আবার নিচে নেমে গিয়ে আবার উঠেছে ওপরে। মিরিকের রাস্তায় চা বাগানের কথা মনে করিয়ে দেয়। অসাধারণ দৃশ্য। চোখ ফেরানো যায় না। দুঘন্টার ওপর লাগল হ্যানকো যেতে।
পৌঁছে দেখি সামনে দিগন্তজুড়ে নীল জলরাশি। শুনলাম ১৩০ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে রয়েছে এই সমুদ্রসৈকত। অসংখ্য মানুষ শুয়ে আছে বালির ওপর। এসপোতেও একই জিনিস দেখেছি। সারা শরীরে রোদ লাগাতে ব্যস্ত এখানকার মানুষজন। সমুদ্রের ঢেউ নেই তাই জলের মধ্যেই বাচ্চাদের জন্য নানা ধরনের খেলার ব্যবস্থা করা আছে। বাচ্চারা তিন-চার ঘন্টার আগে কেউ জলের থেকে উঠছেইনা। বেশকিছু ছেলেমেয়েকে দেখলাম রাবারের নৌকাবিহারে মত্ত। স্থানীয় লোকেরাই গ্রীষ্মের সময়টা পরিবার নিয়ে সারাদিন সমুদ্রসৈকতে আনন্দ করতে ব্যস্ত। আমাদের মতো পর্যটকের সংখ্যা এখানে খুবই কম। সমুদ্রের মধ্যে বেশ কয়েকটা দ্বীপও দেখা যাচ্ছে। হ্যানকো ফিনল্যান্ডের এক নামকরা বন্দর। নানাধরনের ছোটবড় পালতোলা নৌকা দেখা যাচ্ছে বন্দর জুড়ে। মাঝে মাঝেই নৌকা নিয়ে সমুদ্রবিহারে নেমে পড়ছে এখানকার লোকজন। গাড়ি নিয়ে বেড়াতে বেরোবার মতো আর কী!

সারাদিন শহরটা ঘুরে বেড়ালাম। সাজানোগোছানো সুন্দর একটা চার্চ দেখলাম। সমুদ্রের ধারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে গোলাপি রঙের জলমিনার। হ্যানকো থেকে বেরিয়ে এগিয়ে চললাম আরেকটা গ্রামের দিকে। দুপাশে যবের ক্ষেত। গ্রামের বাড়িগুলো কী সুন্দর, ছোট ছোট বাংলোর মতো। কাঠের বাড়ি, মাথায় টিনের চাল। মাঝে মাঝে মনে হয় আগে থেকে পরিকল্পনা করে একটা দেশ তৈরি করা হয়েছে। সবকিছু জায়গামত। গ্রাম ছাড়িয়ে আবার পড়লাম জঙ্গলের মধ্যে। দুপাশে ঘন জঙ্গল। হঠাৎ সামনে তাকিয়ে দেখি ছোট ছোট কয়েকটা বলগা হরিণশাবক রাস্তা পার হচ্ছে। এও এক বিরল অভিজ্ঞতা। বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত দশটা তখনও আকাশে রয়েছে সূর্যের আলো। আর সেই আলো ছড়িয়ে পড়েছে সবার চোখেমুখে। অকৃত্রিম এক আনন্দ!

ফিনল্যান্ড -৪
বাড়ির সামনে চারটে বড় বড় বাজার আছে যেখানে সব পাওয়া যায়। তিনটে বাজার ম্যলের মধ্যে ও আরেকটা এশিয়ান বাজার, কাছেই একটা বাড়ির নিচের তলায়। হঠাৎই এশিয়ান বাজারে একটা ভালো ইলিশ মাছ পাওয়া গেল। কালো জিরেও পাওয়া গেল ওই বাজারেই। গোটা সর্ষে আমরা দেশ থেকে নিয়ে এসেছি কিন্তু তেল? অনেক রকমের তেল আছে কিন্তু সর্ষের তেল পাচ্ছিনা। কাছাকাছি সব দোকান দেখা হল। কোত্থাও নেই। সর্ষের তেল ছাড়া ইলিশ মাছ ভাবতেই পারছি না। ছেলে বলল ওর অফিসের সামনে একটা ভারতীয় বাজার আছে। ওখানে খোঁজ করবে। মনে পড়ল গতবার ওখান থেকেই সর্ষের তেল এনেছিলাম। অবশেষে পরদিন পাওয়া গেল সর্ষের তেল। ফিনিসে ইলিশ খাওয়ার স্বাদ পূর্ণ হল।
ফিনল্যান্ডের ওপর দিয়ে উড়োজাহাজে আসার সময় জানলা দিয়ে নিচে তাকিয়ে দেখছিলাম নীল জল আর সবুজ বন। পরে বুঝলাম নীল জল হল বাল্টিক সি সহ অসংখ্য লেক আর সবুজ বন হল সারা শহর জুড়ে ছড়িয়ে থাকা অগুনতি গাছপালা। আমাদের দেশে শীতের পর আসে বসন্তকাল আর এখানে বসন্তের পরে শীত। সারা ইউরোপ জুড়ে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য ম্যাপল গাছ। সারা পৃথিবীতে প্রায় একশো পঁচিশ রকমের ম্যাপল গাছ আছে। বাড়ির সামনে যতগুলো ম্যাপল গাছ দেখেছি পাতার রঙ এখন ঘন সবুজ। শীতকালে সব পাতা ঝরে যাওয়ার আগে রাঙিয়ে দিয়ে যাবে নানা রঙে। বোঝা যাবে বসন্ত জাগ্রত দ্বারে। লন্ডনেও গতবার এমনি শোভা দেখেছিলাম।

বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে ফিনল্যান্ডের শিক্ষাব্যবস্থা বিশ্বের এক নম্বরে। স্কুলের বাইরে এখানে টিউশনের কোনো দরকার নেই। ছেলেমেয়েদের বইয়ের ব্যাগ নিয়ে প্রাইভেট টিউটরের কাছে পড়তে যেতে এখানে দেখা যায় না। এখানে কাউকে পান-গুটকা খেতে দেখিনি। রাস্তাঘাটে, স্টেশনে, সমুদ্রসৈকতে কোথাও দেখতে পাইনি পানের পিক আর গুটকার দাগ।
বিকেলে এসপো থেকে ১৩২ নম্বর বাস ধরে চললাম হেলসিঙ্কি। যেহেতু এখানে বাঁদিকে গাড়ির স্টিয়ারিং তাই বাস ধরার জন্য আমাদের দেশের উল্টোদিকে দাঁড়াতে হয়। সামনের গেট দিয়ে এক এক করে সবাই উঠে ড্রাইভারের কাছ থেকে টিকিট কেটে ভিতরে যাচ্ছে। আর যাদের বাসকার্ড আছে তাদের গেটের মুখেই একটা ছোট মেসিনের সামনে কার্ডটাকে ধরতে হচ্ছে। বাসগুলো আমাদের দেশের এসি বাসের মত।

ফিনল্যান্ড – ৫
আমার ছোট ভাইয়ের বড় মেয়ে থাকে জার্মানি। ফিনল্যান্ডে কয়েকদিনের জন্য বেড়াতে এসেছে আমাদের কাছে। তাই আবার ঠিক হল সৌমেনলিনা দ্বীপ যাওয়ার। ১৭ আগস্ট বিকালে সবাই মিলে অর্থাৎ আমি, স্ত্রী বেবি, সায়ক আর ভাইঝি মিষ্টু স্টিমারে করে চলে গেলাম 'সৌমেনলিনা দ্বীপ'। মুম্বাইয়ের 'গেট অফ ইন্ডিয়া' থেকে 'এলিফান্টা' যাওয়ার মত। স্টিমারে মিনিট কুড়ির মত লাগে।

ছোট্ট একটা দ্বীপ - চারিদিকে সমুদ্র তার মাঝে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে একটা জায়গা যেখানে তিন হাজার বছর আগেও মানুষ ছিল তার নিদর্শন পাওয়া যায়। ইউনেস্কোর হেরিটেজ লিস্টে এই দ্বীপের নাম আছে। আমাদের দেশের পাথরে বানানো দুর্গগুলোর মত এখানে চারিদিক ঘেরা একটা দুর্গ আছে। অনেকগুলি কামান সমুদ্রের দিকে মুখ করে রাখা যাতে জলপথে কেউ আক্রমণ করলে দুর্গকে বাঁচাতে পারে। ইতিহাসের সাক্ষী হিসাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অনেক নিদর্শন এখানে দেখা যায়। যুদ্ধের জন্য বানানো দুর্গ। প্রচুর বাঙ্কার। ওপর থেকে দেখলে বোঝাই যাবে না। সৈন্যদের থাকার জায়গা। গতবার এসেছিলাম শীতের সময়। সমুদ্রের জলের রং ছিল নীল কিন্তু চারিদিক ছিল সাদা চাদরে ঢাকা। হালকা বরফের আস্তরণে ঢাকা ছিল সবকিছু। আর এখন চারিদিক সবুজে সবুজ। নানা রঙের ফুল এই ছোট্ট দ্বীপটাকে রাঙিয়ে দিয়েছে। পাখির কলরবে মুখরিত সবদিক। অপূর্ব সুন্দর একটা জায়গা। পিকনিক করার পক্ষে আদর্শ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রাশিয়া বা সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ফিনল্যান্ড বা জার্মানির লড়াইয়ের ইতিহাসে এই জায়গার অনেক ঘটনা আছে। মস্কো মাত্র ১০২০ কি.মি. দূর। যাইহোক ইতিহাসের আলোচনায় যাচ্ছি না। এখানে একটা সুন্দর চার্চ আছে। বেশ কয়েকটা রেস্তোঁরা ও একটা ছোট জাদুঘর আছে। তিন-চার ঘন্টা কাটানো কোনও ব্যাপারই নয়। নানা দেশীয় পর্যটকদের ভিড়।

আবার স্টিমারে চেপে ফিরলাম হেলসিঙ্কি। রাত্রে এখানকার সবথেকে বড় ভারতীয় রেস্তোঁরাতে খাওয়ার ইচ্ছা। নাম ইন্ডিয়া হাউস। আটটা নাগাদ ঢুকলাম ডিনারের জন্য। সুন্দর সাজানোগোছানো, একসঙ্গে একশোর বেশি লোক বসতে পারে। অপরিচিত গন্ডির মধ্যে পরিচিত মানে স্বদেশীয় কিছু মানুষ দেখে বেশ ভালো লাগছিল। আরো ভালো লাগল হিন্দি কথাবার্তা শুনে। মনে হচ্ছিল দেশেই আছি। বিদেশে এলে দেশীয় সব ভাষাই যেন আরও মিষ্টি লাগে। দেশ নিয়ে অনেক ব্যাপারে নিজেদের মধ্যে সমালোচনা করি ঠিকই কিন্তু বিদেশে আসলে দেশপ্রেম ভালই উপলব্ধি করা যায়। খাওয়াটা বেশ ভালই হল। টিপস দেওয়ার চল নেই এখানে, এমনকি ভারতীয় রেস্তোরাঁতেও। শুভরাত্রি জানিয়ে বেরিয়ে এলাম ইন্ডিয়া হাউস থেকে।

ফিনল্যান্ড – ৬
শনিবার ২১/০৮/২০১৬ হেলসিঙ্কি থেকে দ্বিতীয়বারের জন্য রওনা হলাম তালিন, ফিরলাম রবিবার রাত্রে। এবারও সেই বিশাল দশতলা জাহাজ। মনে হচ্ছিল একটা চলমান বড় পাঁচতারা হোটেল। কেউ কেবিন ভাড়া নিয়ে যাচ্ছে, কেউবা ডেকে বসে আড্ডা দিতে দিতে, আবার কেউ কেউ বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় বসে সময় কাটাচ্ছে, কেউবা ক্যাসিনোতে। চারিদিকে অনেক টিভি লাগানো আছে। কয়েকজন দেখলাম ভিড় করে খেলা দেখছে। অলিম্পিকে জার্মানি আর ব্রাজিলের ফুটবল ম্যাচ। বার রয়েছে বেশ কয়েকটা। কোনটাতে হচ্ছে গান আর কোনটাতে নাচ। কিন্তু সবকিছুই চলছে সুশৃঙ্খলভাবে। সব মিলিয়ে দুই থেকে আড়াই হাজার লোক ধরে জাহাজটায়। অবাক লাগল যখন দেখি একটা রেস্তোঁরাতে খাবার ওজন করে বিক্রি হচ্ছে। প্রচুর আমিষ ও নিরামিষ খাবার রাখা আছে, পছন্দমত খাবার প্লেটে নিয়ে যেতে হবে ক্যাশ কাউন্টারে। খাবার সমেত প্লেটটা ওজন করার যন্ত্রে রাখতে হবে। দাম ১০০ গ্রাম ২০ সেন্ট, যে কোনও কোল্ডড্রিঙ্কস ১ ইউরো। আমরা ছিলাম সর্বঘটে কাঁঠালি কলার মত। সব আনন্দই চেখে দেখছিলাম। পরিচ্ছন্নতা এদের মজ্জাগত। তাই সর্বত্রই ঝকঝকে তকতকে। আর পাবলিক টয়লেট আমাদের লজ্জা দেয়।
ভোরবেলা তালিনের মাটিতে পা রাখলাম। রবিবার ওখানের তাপমাত্রা তখন ২১ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। প্রথমবার এসেছিলাম নভেম্বরের শেষের দিকে, শীতের দাপটে সেবার পর্যটকের সংখ্যা ছিল কম, কিন্তু এবার তালিন যেন সেজে উঠেছে। মনে হচ্ছে বিশ্বের নানা জায়গা থেকে পর্যটক জমা হয়েছে তালিনের টাউন হল স্কোয়ারে। তালিন হল এস্তোনিয়ার রাজধানী। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এখন ইউরোপীয় ইউনিয়নে। যদিও এখানকার শতকরা ষাটভাগ লোক রাশিয়ান ভাষাতেই কথা বলে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জার্মানি আর সোভিয়েতের অনেক ইতিহাসবহনকারী এই তালিন। এবারেও আধুনিক তালিনের দিকে না গিয়ে মধ্যযুগীয় তালিন দেখতেই পছন্দ করলাম। বিশ্বের অধিকাংশ পর্যটকদের সঙ্গে পছন্দের মিল খুঁজে পেলাম। হাজার বছরের পুরানো শহর, বাড়িঘর – 'ফেয়ারি টেলস'-এর মত। মনে হচ্ছিল গল্পে দেখা রাজকন্যা থাকে, ওই সাত সাগর আর তের নদীর পারে। কোনও কোনও রেস্তোরাঁর সাজশয্যা, আসবাবপত্র সেই সময়টাকে ধরে রেখেছে। পার্লামেন্ট, বেশ কয়েকটা অপূর্ব সুন্দর চার্চ, ক্যাথিড্রাল দেখলাম। সবই মধ্যযুগীয় স্থাপত্য।

পর্যটকদের আনন্দ দেওয়া এবং সংস্কৃতির প্রচারের জন্য নানান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। দুপুরে গতবারের মতই 'মহারাজা' নামে একটা ভারতীয় রেস্তোঁরাতে খেলাম। পরিচয় হল এক বাংলাদেশি যুবকের সঙ্গে, এখানে মাস্টার্স ডিগ্রির পড়াশুনো করছে আর অবসর সময়ে কাজ করে এই হোটেলে কাজ করে। সারা ইউরোপে অজস্র এইরকম ছেলেমেয়ে ছড়িয়ে আছে। উন্নত দেশগুলোর মত যে কোনও কাজের মর্যাদা আমরা কবে দেব?

ফিনল্যান্ড – ৭
আগে থেকেই ঠিক ছিল তাই শনিবার সকাল সকাল তৈরি হয়ে নিলাম সবাই। খাবার খানিক খেয়ে আর খানিক নিয়ে পাড়ি দিলাম ওয়াইওয়াইতেরি সৈকতের ( YYTERI BEACH) উদ্দেশে। আমরা যেখানে থাকি সেখান থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূরে। এখানে কোল্ড ড্রিঙ্কস ও বিয়ারের থেকে কেনা জলের দাম বেশি তাই জলের বোতল সঙ্গে রাখা ভাল। যেখান থেকে খুশি ভরে নেওয়া যাবে। শহর ছাড়িয়ে আঁকাবাঁকা, উঁচুনিচু রাস্তা দিয়ে চারিদিক দেখতে দেখতে এগিয়ে চললাম গন্তব্যের দিকে। কখনও দুপাশে অরণ্য আবার কখনও শস্যক্ষেত। গান গাইতে গাইতে আর চারিদিকের শোভা দেখতে দেখতে পৌঁছে গেলাম ওয়াইওয়াইতেরি বিচে। প্রায় ছয় কিলোমিটার জুড়ে সাদা বালুর সৈকত। সমুদ্রের গর্জন বেশ দূর থেকেই শোনা যাচ্ছিল। হাওয়া চলছিল খুব জোরে। নীল জলের ব্যাপ্তি ছিল বিশাল।

মনে হচ্ছিল পৃথিবীর শেষপ্রান্তে পৌঁছে গেছি। প্রচুর পর্যটক। নানান অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের আয়োজন। নীল আকাশ, তাতে টুকরো টুকরো মেঘের আনাগোনা, সামনে বিশাল নীল জলরাশি, সাদা বালুর চর, সমুদ্রের গর্জন – মন মাতিয়ে দিচ্ছিল সকলের। সমুদ্রের পাশে অনেক সুন্দর সুন্দর থাকার জায়গা আছে, কিন্তু আমাদের ইচ্ছা এখানকার ছোট একটা গ্রামে থাকার। আগে থেকেই ঠিক করা ছিল, বাড়ির মালকিন অপেক্ষা করছিলেন। পৌঁছতেই সব বুঝিয়ে হাতে বাড়ির চাবি দিয়ে চলে গেলেন। অনেকটা জায়গাজুড়ে ছড়িয়েছিটিয়ে কয়েকটা ঘর নিয়ে একটা বাড়ি। বাড়ি-সংলগ্ন জমির পর বিশাল ক্ষেত। দূরে দূরে দেখা যাচ্ছে আরো কিছু বাড়ি, দেশের গ্রামের মত। কিন্তু ঘরে আছে ইন্টারনেট, ট্যাপ ওয়াটার, ইলেকট্রিসিটি, মডুলার কিচেন, সুন্দর খাট, টিভি, রেফ্রিজারেটর – সবই যা শহরের বাড়িতে দেখা যায়। এখানে কোথাও খোলা নালা দেখা যায় না। তখনও আকাশে বেশ আলো, আমরা বেরিয়ে পড়লাম গ্রাম দেখতে। দুপাশে ক্ষেত, তার মধ্যে দিয়ে ছোট রাস্তা। যে যার মতো ছবি তুলছি। এমনসময় এক ভদ্রলোক সাইকেল করে এসে জানতে চাইলেন আমরা কে এবং এখানে কেন এসেছি। প্রথমেই আমাদের মাথায় এল বোধহয় ইনটেলিজেন্স ব্যুরোর কেউ। বললাম আমরা পর্যটক, গ্রাম দেখতে এসেছি। কী দেখে জানিনা উনি জানতে চাইলেন ভারতবর্ষ থেকে এসেছি কিনা, আমরা তো অবাক। ভালও লাগল যে ইউরোপের এক প্রান্তে এত দূরের একটা গ্রামের বাসিন্দা আমাদের দেশের নাম জানে। মনে মনে একটু গর্বিত হলাম। শুনলাম উনি মোবাইল ফোনে কাউকে বলছেন যে আমরা ভারতবর্ষ থেকে এসেছি। আমরাও ধরে নিয়েছি নির্ঘাত আই.বি.-র লোক। আমাদের সঙ্গেসঙ্গেই উনি ঘুরছেন আর সব বলে দিচ্ছেন। ক্ষেতের থেকে ফসল তুলে খেতে দিচ্ছেন। খুবই আন্তরিক বলে মনে হচ্ছে। আমাদের মতো কোনও পর্যটকদের এর আগে গ্রাম বেড়াতে দেখেননি। অনেকটা ঘুরে যখন ফিরে আসছি তখন দেখি রাস্তায় দুজন মহিলা দাঁড়িয়ে আছেন। পরিচয় করিয়ে দিলেন ওঁর স্ত্রী ও কন্যার সঙ্গে। মেয়েটি কৃষিবিদ্যা নিয়ে বাইরে পড়াশুনা করে এবং ভারতবর্ষ সম্বন্ধে অনেক কিছু জানে। ভবিষ্যতে ওর কৃষক হওয়ার ইচ্ছা। অনেক গল্প হল। শুনলাম জার্মান আর সোভিয়েতের যুদ্ধের কাহিনি। ভদ্রলোকের বাবা ওই যুদ্ধের একজন শহিদ। একটা শহিদবেদী দেখালেন। ওঁদের সঙ্গে বেশ কয়েকটা ছবি তোলা হল স্মৃতি হিসাবে। বুঝলাম উনি ওই গ্রামেরই লোক, অন্যকিছু নন। এই প্রথম কোনো বিদেশীকে এগিয়ে এসে আলাপ করতে দেখলাম। এর আগে অনেকের সঙ্গে হাসি বিনিময় হয়েছে বা একে অপরকে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছি যেগুলোর মধ্যে ছিল লৌকিকতা, ছিল না এই অকৃত্রিম সরলতা। রাত্রে কিচেন ছেড়ে কাঠ দিয়ে আগুন জ্বালানো হল। চারপাশে গোল হয়ে বসলাম। মনে হচ্ছিল ক্যাম্পফায়ার। আদিম মানুষের মতোঝলসানো খাবার খেতে খেতে খুশিতে মেতে উঠলাম। বাকিরা গান ধরল – রাত্রি এসে যেথায় মেশে দিনের পারাবারে...

পরদিন সকালে জলখাবার খেয়ে রওনা হলাম তুর্কু (Turku) – ফিনল্যান্ডের আগের রাজধানী। শহরের মধ্যে দিয়ে অরা (Aura) নদী বয়ে গেছে লন্ডনের টেমস নদীর মত। তবে অরা চওড়ায় টেমস-এর থেকে অনেকটাই কম। এখানে মধ্যযুগীয় স্থাপত্যের কিছু নিদর্শন দেখা যায়। সেগুলির মধ্যে তুর্কু ক্যাসল এবং তুর্কু ক্যাথিড্রাল অন্যতম।

ফিনল্যান্ড – ৮
যত জায়গা ঘুরলাম সর্বত্র পুলিশ আর ট্যাক্সির উচ্চারণ এক, বানান হয়তো আলাদা। আরেকটা ব্যাপার নজরে এসেছে। এখানে জানলায়, বারান্দায় কাচ লাগানো কিন্তু কোন গ্রিল বা লোহার শিক নেই। অনেক আগে সিকিমে এমনটা দেখেছিলাম। কিন্তু সেটা তো পাহাড়। চুরি, ছিনতাইয়ের কোনও গল্প এখানে নেই।
রবিবার সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠলাম পার্ভো যাবো বলে। ফিনল্যান্ডের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর পার্ভো। অতি প্রাচীন এই শহরের পত্তন হয় ১৩০০ খ্রিষ্টাব্দে। শহরের মধ্য দিয়ে সমুদ্রের জল প্রবেশ করায় জায়গাটা অনেকটা ভেনিসের মত লাগে। মধ্যযুগীয় শহরটা আবার অনেকাংশে তালিনের মত দেখতে। তবে তালিনের বাড়িঘর ছিল পাথরের তৈরি আর এখানকারগুলো কাঠের। এছাড়া দেখতে একইরকম। পার্ভো থেকে এসপো ফিরে গেলাম নোকিয়ার অফিস মানে এখন যেটা মাইক্রোসফটের অফিস দেখতে। 'নোকিয়ানভিরতা' নদীর পাশে মাইক্রোসফট বা নোকিয়ার বিশাল অফিস।
যানবাহনে ফিনল্যান্ডে আমাদের দেশের মতো অত শ্রেণিভাগ নেই। ট্রামে, ট্রেনে একটাই ক্লাস। যাত্রীসংখ্যা আমাদের দেশের থেকে অবশ্য অনেকই কম। ট্রামে, বাসে, ট্রেনে জিনিস তুলতে বা পেরাম্বুলেটারে একদম ছোট বাচ্চাকে নিয়ে উঠতে এখানে কোনও কষ্টই হয়না, কারন সিঁড়িটা রাস্তার বা স্টেশনের প্লাটফর্মের সমান উচ্চতার। বয়স্কদের উঠতেও কোনও কষ্ট নেই। খোঁজ নিয়ে যেটুকু জানলাম তাতে এখানকার মানুষের মাসিক মাহিনার তারতম্য আমাদের দেশের মতো নয়। কম আর বেশির মধ্যে বিশেষ পার্থক্য নেই। শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের জন্য নাগরিকদের কোনো অর্থ দিতে হয় না। সব জায়গাতে হাসপাতাল, স্কুল এবং খেলাধুলো করার ব্যবস্থা আছে। রাস্তাঘাটে কোথাও পুলিশ নেই, অথচ সব কিছু নিয়ম ধরে চলছে। রাস্তায় কোনও কুকুর নেই। কেউ আবর্জনা ফেলেনা রাস্তায়, সবাই পরিষ্কার রাখে চারপাশটা। পথে থুতু ফেলা নৈব নৈব চ। এখানে বাইরে খুব ঠাণ্ডা, কিন্তু বাসে, ট্রেনে, ট্রামে, দোকানে, ঘরে সর্বত্র সাধারণ তাপমাত্রা, মানে ২১ থেকে ২২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। আর খাওয়ার জল সর্বত্রই একইরকম। জলের জন্য আলাদা কোনও ফিল্টার দেখলাম না। যেখান থেকে খুশি জল খাওয়া যায়। রাস্তাঘাটে গাড়ি, ট্রাম, বাস, মানুষের ভিড় সবই দেখলাম, কিন্তু কোনও গাড়ির হর্ন শুনতে পেলাম না। যেকোনও দূষণের ব্যাপারে এরা খুবই সচেতন। পরিবেশ সচেতনতা এদেশের সাধারণ মানুষের রক্তে মিশে গেছে।

ব্যাঙ্ককর্মী থাকাকালীন ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্যে কাজ করার সুযোগ হয় সুপ্রিয় রায়ের। অসংখ্য মানুষের সান্নিধ্যে এসে নানা ঘটনার সাক্ষী হন যা তাঁকে লেখার জন্য রসদ যুগিয়েছে। যখনই সময় পেয়েছেন বেরিয়ে পড়েছেন অজানাকে জানতে দেশে-বিদেশে। লেখালেখি এবং ভিডিওগ্রাফিতে উৎসাহ থাকায় নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল খোলেন অবসরজীবনে। তাঁর কিছু রচনা বাংলার প্রখ্যাত সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। ভ্রমণকাহিনি, বেড়ানোর ভিডিওর পাশাপাশি নিজের লেখার ওপর বানিয়ে ফেলেছেন পাঁচটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র।

 

HTML Comment Box is loading comments...

To view this site correctly, please click here to download the Bangla Font and copy it to your c:\windows\Fonts directory.

For any queries/complaints, please contact admin@amaderchhuti.com
Best viewed in FF or IE at a resolution of 1024x768 or higher