উত্তরাখণ্ডে ট্রেক
মৃণাল মণ্ডল
~ গঙ্গোত্রী-গোমুখ ট্রেকরুট ম্যাপ ~ গঙ্গোত্রী-গোমুখের আরও ছবি ~
গোমুখ অভিযান :
গঙ্গোত্রী পর্ব
২০১৭ সাল। মে মাস। সাধারণত আমাদের মে মাসে বড় কোনও অভিযান হয় না। অন্তত আজ অবধি হয়নি। কিন্তু এবার তা আর হল না। নতুন জায়গা। নতুন দল। আমি আর অসীমা আগের দলের সদস্য। এবার আমার সঙ্গে পরিকল্পনা শুরু হল সন্দীপদার। সন্দীপদা প্রস্তাব দিল উত্তরাখণ্ড ট্রেকের। অনেকগুলো ট্রেক রুট ভাবা হল। প্রথমে ভাবা হল হর্-কি-দুন। তারপর আলোচনা পর্যালোচনা চলল দিনের পর দিন। শুরু হল পড়াশুনা। খোঁজখবর নেওয়া। চেনা-অচেনা সবার কাছে। এমনকি ট্যুর এজেন্সির থেকেও। সঙ্গে চলল দলগত আলোচনা। কোথায় যাব, কারা কারা যেতে চায় এইসব জরুরি বিষয়ে।
শুরু হল ছোট ছোট মিটিং। হোয়াটস্অ্যাপে গ্রুপ বানিয়ে প্রায়ই সেসব আলোচনা আস্তে আস্তে যাওয়ার ইচ্ছেটাকে উসকে দিতে লাগল প্রতিদিন। প্রত্যেকটি আলোচনার পরেই যেন অবচেতনে পৌঁছে যেতে লাগলাম সেই অচেনা অদেখা রাজ্যে। কতবার যে মনে গড়ে উঠল কাল্পনিক এক সফর আর তার হৃদয়গাহ্য অপার্থিব সৌন্দর্য তার হিসেব রইল না। দিনে একবার অন্তত আমাদের উত্তরাখণ্ডের সঙ্গে পরিচয় হচ্ছিল কল্পনার অবয়বে।
সন্দীপদা এই পরিকল্পনায় আক্ষরিক অর্থেই অগ্রজের ভূমিকা নিচ্ছিল। ম্যাপ ধরে, দূরত্ব মেপে, রুট ঠিক করে, যাওয়া আসার পথ নির্ণয় করে আলোচনা এগোল। আর আমাদের হর-কি-দুন হারিয়ে গিয়ে এবার আলোচনায় চারধামের জায়গা হল পাকাপাকি ভাবে। যমুনোত্রী, গঙ্গোত্রী (সঙ্গে গোমুখ), কেদারনাথ আর বদ্রীনাথ।
দলও ক্রমশ: ভারি হতে থাকল। অতনু আর রাখী সম্মতি জানাল একবাক্যে। ওদের ছুটি পাওয়ার সমস্যা সত্ত্বেও। আর সবথেকে বড় কথা ট্রেকিং-এর পূর্ব কোনো অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও। সোমাঞ্জন না-হ্যাঁ, না-হ্যাঁ করতে করতে রাজি হল। সন্দীপদা আর সোমাঞ্জনের পরিচিত একজন প্রধান শিক্ষক মহাশয় এবং আরও একজন যেতে রাজি হল। আর সেই সঙ্গে এগোল পরবর্তী পর্যায়ের আলোচনা পর্ব।
মজার ব্যাপার হল যে এর মধ্যে সন্দীপদার বিয়ের ঠিক হল। মে মাসের আট তারিখ আমার আর অতনুর বান্ধবী অনসূয়ার সঙ্গে। আর আরও মজার ব্যাপার অত তাড়াতাড়ি বিয়ের তারিখ ঠিক করার পিছনে দায়ীও হয়ে রইল আমাদের উত্তরাখণ্ড পরিকল্পনা। প্রসঙ্গত বিয়েতে অন্যতম একটা শর্তই ছিল, "এই ট্রেক করতে দিতে হবে, বাধা দিলে চলবে না।"
আমি আর সন্দীপদা মিলে টিকিট কাটার দায়িত্ব নিলাম। বাঙালিদের বেড়ানোর ভিড়ে টিকিট পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠল। শেষপর্যন্ত টিকিট কাটা হল। যাওয়ার জন্য দুটো ট্রেনে ফেরার দুটো ট্রেনে (ওয়েটিং টিকিট ও আর.এ. সি পাওয়া গেছিল তাই। পরে কনফার্ম হবে এই আশায়)।
ওদিকে সন্দীপদার বিয়েও হল ধুমধাম করে। কবজি ডুবিয়ে ভুরিভোজও করে এলাম যথারীতি।
ভোজ সেরে এসে বুঝলাম ভোজবাজির মতো আমাদের যমুনোত্রী উবে গেল। আর সঙ্গে নিয়ে গেল আমাদের ট্যুরের এক সদস্যকে। আবার যোগও দিল একজন। সেই যোগ দেওয়ার মজার ব্যাপারটায় পরে আসছি।
ট্যুর প্ল্যানিংটা পরিবর্তন হল। যমুনোত্রী চলে গেল বাতিলের খাতায়। তার জায়গায় যুক্ত হল তুঙ্গনাথ ও আউলি। এটাই শেষপর্যন্ত ঠিক হল। চূড়ান্ত অভিযানের রূপরেখা দাঁড়াল এইরকম - প্রথমে হরিদ্বার থেকে গঙ্গোত্রী। তারপর পদব্রজে গোমুখ। সেখান থেকে গৌরীকুণ্ড। এরপর পদব্রজে কেদার। তারপর চোপতা। সেখান থেকে পদব্রজে তুঙ্গনাথ হয়ে চন্দ্রশিলা। চন্দ্রশিলা থেকে বদ্রীনাথ হয়ে মানাগ্রাম। তারপর জসিমঠ। সেখান থেকে রোপওয়েতে আউলি। শেষে হরিদ্বার প্রত্যাবর্তন।
সেইমতো এগারো দিনের জন্য মন্দাকিনী ট্রাভেলস (হরিদ্বার-এর) থেকে গাড়ি বুক করা হল অগ্রিম পাঠিয়ে (প্রসঙ্গত বলে রাখি যাঁরা হরিদ্বার থেকে কোথাও যাওয়ার জন্য গাড়ি খুঁজবেন তাঁরা মন্দাকিনী থেকে নেবেন না। কারণ এরা কথা সবসময় ঠিক রাখতে পারে না। যেটা আমরা অন্য আরেকবারের উত্তরাখণ্ড সফরে হাড়ে-হাড়ে টের পেয়েছিলাম)।
যাই হোক, আবার ফেরত আসি দলগঠনের গল্পে। সন্দীপদার পরিচিত যে প্রধান শিক্ষক সেই অভিজিৎদা শেষপর্যন্ত রাজি রইলেন। কিন্তু আরেকজন যিনি যাবেন বলেছিলেন তিনি ইস্তফা ঘোষণা করলেন। আরও এক মজার ব্যাপার ঘটল। যার প্রসঙ্গ আগে বলতে গিয়েও বলিনি। এবার সেই প্রসঙ্গ বলা যাক।
অনসূয়া অর্থাৎ আমাদের বান্ধবী আর সন্দীপদার সদ্যবিবাহিতা সহধর্মিণী হঠাৎ বিদ্রোহ শুরু করল দাদার সঙ্গে। প্রথমে অভিযোগ। তারপর অনুযোগ, শেষটায় অভিমান। তাতেও কাজ না হওয়ায় আমার শরণাপন্ন হল। সে এক হাস্যস্পদ অভিযোগ, "দ্যাখ্, তোদের দাদা আমাকে নিয়ে যাচ্ছে না।" আর দাদার কথা, "ও পারবে না।"
এরপর শুরু হল দাদাকে বোঝানো আর রাজি করানোর পর্ব। শেষটায় দাদা রাজি হল। সদ্যবিবাহিত (দুসপ্তার বিয়ে হওয়া) দম্পতির হানিমুন ট্রেকও হবে তাহলে। অন্তিমদলও রূপরেখা পেল। সন্দীপদা, অনসূয়া, অতনু, রাখী, সোমাঞ্জন, অভিজিৎদা, অসীমা আর আমি।
দল হল। জায়গাও নির্বাচিত। প্রত্যেকদিন ট্রেনের টিকিটের দিকে হা-পিত্যেশ করে তাকিয়ে রইলাম কনফার্মেশানের জন্য। অবশেষে টিকিট কনফার্ম হল - যাওয়া উপাসনা আর ফেরা কুম্ভতে। এবার চাতকের মত চেয়ে থাকলাম যাওয়ার দিনটার অপেক্ষাতে।
এইবেলা আসল কাজটা সেরে রাখি। তা হল জায়গার ইতিহাস ও ভূগোল বর্ণনা। কারণ কোথাও যাওয়ার থাকলে সেই জায়গা নিয়ে যদি একটু পড়াশুনা করে নেওয়া যায় তবে ফেলুদার ভাষায় "জায়গার সঙ্গে নিজেকে রিলেট করতে সহজ হয়, তখন অচেনা জায়গাও আর ঠিক অচেনা লাগে না" আর ইতিহাসের মধ্যে থাকে এক রোমহর্ষক উপলব্ধি।
খুব ছোটবেলায় পড়েছিলাম, গঙ্গানদীর উৎপত্তি হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ গুহা থেকে। পড়েছিলাম নয় বলা ভালো মুখস্থ করেছিলাম। এবার তা চাক্ষুষ দেখব ভেবেই অনেকখানি আপ্লুত ছিলাম মনে মনে। ভূগোলের সেই মুখস্থবিদ্যার চক্ষুকর্ণে বিবাদভঞ্জন হবে, এই ভেবে।
গঙ্গোত্রী আসলে উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশী জেলার একটা হিমবাহ অঞ্চল। ঠিক তিব্বতের সীমানা বরাবর। হিমবাহটি লম্বায় মোটামুটি ৩০ কিমি এবং চওড়ায় ২ থেকে ৪ কিমি। এই হিমবাহের অনেকগুলি চূড়া আছে (শিবলিং, থালয় সাগর, মেরু এবং তৃতীয় ভাগীরথী ) যেগুলি পর্বতারোহীদের কাছে আকর্ষণীয়। হিমবাহটি চৌখাম্বার নিচের Cirque (ফরাসি শব্দ, যার অর্থ সার্কাস, আসলে হিমবাহ গলে একটা প্রাকৃতিক অ্যাম্ফিথিয়েটার গোছের অঞ্চল তৈরি হলে তাকে cirque বলে। যা অবতল উপত্যকার মত দেখতে) থেকে প্রবাহিত। হিমবাহের শেষ অংশ অর্থাৎ পাদভূমি অনেকটা গরুর মুখের মত দেখতে একটা গুহার সৃষ্টি করেছে। তাই তার নাম গোমুখ। এই গোমুখ গঙ্গোত্রী শহর থেকে ১৯ কিমি দূরে আর শিবলিং-এর পাদদেশে অবস্থিত, সেটা আবার তপোবনের বিখ্যাত তৃণভূমি ও উপত্যকা থেকে সাড়ে চার কিমি দূরে।
এবার আসি ইতিহাসের কথায়। পুরাণমতে, হারিয়ে যাওয়া ভেড়ার খোঁজ করতে করতে এক মেষপালক গঙ্গোত্রী হিমবাহের কাছে পৌঁছায় আর সেখানে সে গরুর মুখের মত গুহা দেখে অবাক হয়ে তার নামকরণ করে গোমুখ। পরবর্তীকালে যা সাধুসন্ত, পুরোহিত, পর্বতারোহী, ভ্রমণ উৎসুক সবার কাছে এক পবিত্র পূজার ও দর্শনীয় স্থান হয়ে ওঠে। কথিত আছে পাপী মন নিয়ে যদি কেউ গোমুখ দর্শনে যায় তবে তার আত্মা নরকের আগুনে জ্বলবে আর তার পার্থিব শরীরের ভয়াল ও নারকীয় ভৌতিক দর্শন হবে মুহুর্মুহু।
আর সংক্ষেপে ভূগোল হল, গঙ্গোত্রী শহর থেকে ৯ কিমি দূরে চিরবাসা, সেখান থেকে ৭ কিমি দূরে ভোজবাসা আর তারও সাড়ে ৩ কিমি দূরে গোমুখ গুহা।
অভিযানের দিন গোনার ফাঁকে আয়োজন করা হল এক দলগত সমবেত আলোচনার। উপস্থিত হলাম সন্দীপদার বাড়িতে। অভিজিৎদা বাদে বাকি সবাই। এক সান্ধ্য আসর জমে উঠল আড্ডা, খাওয়া-দাওয়া, অভিযানের হালহকিকৎ আলোচনায়। সন্দীপদা নিজের হাতে মাংস রান্না করে খাওয়াল। আলোচনা হল কী কী নিতে হবে তা নিয়েও। কারণ, আমি আর অসীমা একসঙ্গে ট্রেক করি। সন্দীপদা অন্যদলের সঙ্গে বেরোয়। বাকিদের এটা প্রথম ট্রেকিং হতে চলেছিল। অসীমা আর সন্দীপদা ভালো ট্রেকার। অভিজিৎদার হাঁটার অভ্যেস ছিল। অতনু হাঁটব হাঁটব করেও পাঁজি দেখে দিন পায়নি, হাঁটার অভ্যেস করার। সোমাঞ্জনের প্রস্তুতি জানা ছিল না। তবে সোমাঞ্জন ও অতনু শেষ অবধি দারুণ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিল। আর মেয়েরা যারা প্রথমবারের জন্য ট্রেক করছিল (রাখী ও অনসূয়া), তারাও অসাধারণভাবে সমস্ত অভিযান শেষ করেছিল।
যাই হোক অত্যাবশ্যকীয় সরঞ্জামের ফর্দ ও ওষুধের ব্যাপার জানিয়ে দেওয়া হল। আর রেশনের (ড্রাই ফ্রুট ও অন্যান্য খাবারদাবার ) দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হল।
আবার শুরু হল প্রহর গোনার পর্ব। সকলে নিজের কাজের জগতে রইল বটে কিন্তু মন পড়ে রইল অভিযানের আশায় ও উত্তেজনায়।
অবশেষে এল কাঙ্খিত সেই দিন। সবাই আগের থেকে ব্যাগ গুছিয়ে প্রস্তুত হয়েই ছিল। ২১ তারিখ দুপুর সাড়ে তিনটেতে হাওড়া স্টেশনে জড়ো হলাম। সন্দীপদা, অনসূয়া, অভিজিৎদা আর সোমাঞ্জন আগেই পৌঁছে গেছিল। আমি, অসীমা, অতনু, রাখী একসঙ্গে পৌঁছলাম।
১২৩৬৯ কুম্ভ এক্সপ্রেস দুপুর একটায় ছাড়ার কথা হাওড়া থেকে। ছাড়ল প্রায় তিন ঘন্টা দেরি করে। উৎফুল্ল হয়ে অভিযান শুরু করলাম 'জয় ভোলেনাথ' ধ্বনিসহযোগে। আমাদের ছটা সিট একসঙ্গে আর বাকি দুটো আলাদা জায়গায় পড়েছিল। সোমাঞ্জন আর অভিজিৎদা সেই দুটো আলাদা সিটে নিজেদের জায়গা করে নিল। হইহুল্লোড় আড্ডা হল কিছুক্ষণ, সকলের বাড়িতে যাত্রাশুরুর খবর ফোনের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়ার পর। তারপর যে যার আসন দখল করে লম্বা হলাম। পরেরদিন বাড়ি থেকে আনা খাবারদাবার (যেমন অসীমার বাড়ি থেকে আসা লুচি, সুজির হালুয়া এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য) ও স্টেশনের আর ট্রেনের খাবার দিয়ে যথাক্রমে টিফিন মধ্যাহ্নভোজন আর রাতের খাবার সারা হল। আর গোটা দিন জুড়ে চলল আড্ডা, ডাম্ব-শ্যারাড, গল্প, গানের মজলিস আরো কত কী! এরকমভাবে গোটা একটা দিন ট্রেনে কাটিয়ে ফেললাম অবলীলায়। উপাসনা পৌঁছানোর কথা ছিল ২৩ মে বিকেল সোয়া ৪-টেতে হরিদ্বারে। মোট ১৫০৬ কিমির সফরের এই যাত্রা; হাওড়া থেকে হরিদ্বারের পথে। ট্রেন পৌঁছাল দেরি করে। স্টেশন থেকে টো-টো ভাড়া করে গৌ-ঘাটের পাড়ে নামলাম। তারপর ব্রিজ টপকে হেঁটে চলে গেলাম আনন্দনিবাসে। নিচে একটা ঘর নিয়ে যে যার মত একটু বিশ্রাম ও ফ্রেশ হতে গেল। আনন্দনিবাসের কোল ঘেঁষে গঙ্গাদেবী স্বয়ং তখন আমাদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন। তাঁর সেই উৎফুল্ল তরঙ্গ আপনবেগে ঘরের বাইরে সিঁড়ির ধাপে এসে আলাপ জমাতে চাইছে।
আমি আর সন্দীপদা বের হলাম। আনন্দনিবাসের সামনেই মন্দাকিনী ট্রাভেলস-এর একটা অফিস। আমাদের গন্তব্য, পরিকল্পনা সব আবার ঝালিয়ে নিলাম। কপালে একটা ট্যাভেরা জুটল। ড্রাইভার মাঝবয়সি। নাম মোমিন। দ্বিতীয় প্রস্থের অগ্রিম দিয়ে কাগজপত্রের কাজ মিটিয়ে নতুন দাদা-বৌদির হোটেলে খাওয়া সেরে আনন্দনিবাস ফিরলাম। বিকেল আর সন্ধ্যেটা গঙ্গার পাড়ে, হরিদ্বার বাজারে টহল দিতে কেটে গেল। তারপর লস্যির দোকান আর পুরনো দাদা-বৌদির দোকানে রাতের খাবার সেরে আনন্দনিবাসে ফিরলাম। রাতে নিবাসের ধাপে বসে আমি, অতনু, অসীমা আর রাখী গঙ্গার মনোরম শোভা উপভোগ করলাম বেশ অনেকক্ষণ।
পরেরদিন জিনিসপত্র নিয়ে বেরিয়ে গুরুদোয়ারা অবধি হেঁটে আনন্দনিবাসের অন্য অফিসের সামনে থেকে গাড়িতে উঠলাম। যাত্রা শুরু হল। ঠিক করলাম যদি সন্ধ্যের আগে হারশিল পৌঁছানো সম্ভব হয় তবে সেটাই করা হবে। হরিদ্বার থেকে ঋষিকেশ ২১ কিমি। ঋষিকেশ থেকে চাম্বা ৩৪ কিমি। চাম্বা থেকে তেহরি হয়ে উত্তরকাশী ৮৮ কিমি। যেতে যেতে সন্ধ্যে নেমে এল। পাহাড়ি রাস্তায় গাড়ি ৩০ কিমির বেশি গতিতে চালানোর নিয়ম নেই। আবার রাত আটটার পরেও আর এগোনোর অনুমতি থাকে না। তাই আরেকটু এগিয়ে উত্তরকাশী থেকে খানিক ওপরে রাস্তার পাশেই সুবিধামত হোটেল দেখে একটা ডরমেটরি নিলাম। তারপর নিজেদের খাবারের ব্যবস্থা আর ড্রাইভারের রাতের থাকাখাওয়ার বন্দোবস্ত করে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে আড্ডা দিতে লাগলাম আধশোয়া হয়ে। শুরু হল অন্তাক্ষরী। সন্দীপদা নব্বই-এর দশকের হিন্দি গান আর ভোজপুরি গানের ডালি বের করে আসর মাতিয়ে দিল। এরই মাঝে হোটেল থেকে জানিয়ে গেল খাবার তৈরি। সাড়ে নটা নাগাদ রাতের খাবার সেরে সটান হলাম। পরের দিন ট্রেক শুরু করার কথা। বিশ্রামের প্রয়োজন ছিল তাই। যদিও পরের দিন ট্রেক শুরু করা যায়নি। আর যায়নি বলেই পূর্বপরিকল্পনার বাইরে গিয়ে আমরা যে নিজেদের ইতিহাস ও মহাকাব্যের সাক্ষী হয়ে যাব অভিযানের শুরুতেই, সেটা আমাদের দূরতম কল্পনাতেও যে আসেনি, সেটা নিশ্চিতভাবে বলা যায়। সেই কথায় আসব সময় হলেই।
পরেরদিন সকালে প্রাতরাশ সেরে আবার যাত্রা শুরু করলাম। গঙ্গোত্রী পৌঁছলাম সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ (প্রায় ৮০ কিমি পথ)। জিনিসপত্র একটা হোটেলের সামনে রেখে, আমি আর সন্দীপদা কাগজপত্র নিয়ে ছুটলাম গোমুখ যাত্রার অনুমতি নেওয়ার অফিসে। সেখানে গিয়ে মাথায় হাত। দীর্ঘ লাইন, সকালে অফিস খুলবে কিনা সন্দেহ। রোজ নাকি দেড়শো জনের বেশি অনুমতি দেওয়া হয় না। তাও আবার ফ্যাক্স, নেটবুকিং ও কাউন্টার-বুকিং মিলিয়ে। নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ফিরে এলাম। ঠিক করলাম বিকেলের শিফটে লাইন দেব দুপুর থেকে, পরেরদিনের যাত্রার জন্য। আজ বিশ্রাম নেব সকলে। সেইমতো ফিরে এসে তিনটে ঘর নেওয়া হল। একটাতে আমি, অসীমা, অতনু, রাখী। আর একটায় সোমাঞ্জন, অভিজিৎদা আর ড্রাইভার। আর অন্যটা নবদম্পতি অর্থাৎ সন্দীপদা ও অনসূয়াকে ছেড়ে দেওয়া হল। আমরা নিজেদের ঘরে গিয়ে স্নান সেরে নিলাম। পোষাক পাল্টালাম। তারপর ভাত, মটরের তরকারি, আলু-ফুলকপির তরকারি দিয়ে দুপুরের আহার সেরে আবার সটান হলাম। দুপুরে দুটো নাগাদ বেরোলাম আমি আর সন্দীপদা। বিকেলেও মস্ত লাইন। আমরা আলাদা আলাদা লাইন দিলাম, যারটা আগে এগোয়। অবশেষে অনেক কসরত, তর্কাতর্কি সেরে আমি সুযোগ পেলাম। আর অনুমতিপত্রও আদায় করে নিলাম আমাদের ছয়জনের। ড্রাইভার গঙ্গোত্রীতেই আমাদের ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষা করবে ঠিক হল। কাজ যখন মিটল আমার বিশ্রামের ইচ্ছা চলে গেল। নতুন উদ্যমে জায়গাটার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার তাগিদে বেরিয়ে পড়লাম। সঙ্গী হল অসীমা, অতনু, রাখী আর সোমাঞ্জন। প্রথমে বাজার এলাকায়, একটা সুন্দর ঢালাই করা চাতাল আর তাতে বেঞ্চ পাতা ছিল সেখানে। রাস্তার সেই অংশটার ধার ঘেঁষে লোহার রেলিং। অনেকটা দার্জিলিং বা গ্যাংটকের-এর ম্যালের মতো। যার নিচে কুলকুল স্বরে বইছে গঙ্গা। আর দূরে দেখা যাচ্ছে গঙ্গোত্রীর মন্দির। অপর পাশের পাহাড়ে বড় গাছের জঙ্গল। যার মধ্যে পাইন গাছটাই চেনা। বেশ কিছুক্ষণ সেখানে বসে বিহ্বল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম, কখনও মন্দির আবার কখনও জঙ্গলের দিকে। পুরো যেন একটা পিকচার পোস্টকার্ড। তারপর সেটা ছাড়িয়ে বাজার। বাজার বলতে রাস্তার দুপাশে সারিবদ্ধ একতলা বা দোতলা দোকান, হয় কাঠের কাজকরা সামগ্রী, ঠাকুরের ছবি, শিবলিঙ্গ, নানারকম পাথর, গঙ্গার জল নিয়ে যাওয়ার পাত্র, ট্রেক করার জন্য লাঠি, পূজা দেওয়ার সামগ্রী এসবের দোকান অথবা কোনও খাবারের দোকান বা রেস্টুরেন্ট। তবে সর্বত্রই শুধু নিরামিষই চলে। খুঁজে রাতের খাবারের জন্য একটা ভালো রেস্টুরেন্টের সন্ধান করে রাখলাম। আস্তে আস্তে বিকেল ফুরিয়ে আসছিল। আরও এগিয়ে চললাম। বাজার একটু হালকা হলে সামনে পড়ল গঙ্গার ওপর কাঠের সেতু। এ-পাহাড় ও-পাহাড়ের যোগসূত্র। সেতুর পাশে চুপ করে কিছুক্ষণ দাঁড়ালাম। তারপর সেতুর ওপর উঠলাম। এরপর সিঁড়ির ধাপে গঙ্গার জলে। হাতের ক্যামেরা আর মোবাইলও চুপ করে থাকল না। ছবি উঠতে লাগল দেদার। প্রকৃতির। আমাদের। প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের। তারপর আবার সেতুর ওপর উঠে এসে গঙ্গার আওয়াজ শুনতে লাগলাম চুপ করে। হঠাৎ কিছু পথচলতি মানুষের কথা কানে এল। আর আমাদের অজান্তেই পুরাণ-ইতিহাস দোরগোড়ায় এসে কড়া নাড়ল। যেকথার উল্লেখ আগে একবার করেছিলাম। এবার বিস্তারে সে কথা বলি।
ঘড়িতে তখন সাড়ে পাঁচটার কাছাকাছি সময় হবে। পথচলতি উত্তেজিত সেই মানুষদের কথোপকথনে হঠাৎ একটা শব্দ কানে এল - 'পাণ্ডবগুহা'। পরস্পরের মুখের দিকে চাইলাম আমরা। মুহূর্ত বিলম্ব না করে তাদের জিজ্ঞাসা করতেই পরিষ্কার হল ব্যাপারটা।
মহাভারতের কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ সমন্ধে কমবেশি সবাই জানি। এই মহাযুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার আগে পঞ্চপান্ডব এবং দ্রৌপদীকে বারো বছর প্রবাসী জীবন কাটাতে হয়। এরপর একবছর অজ্ঞাতবাস। শর্ত এই যে অজ্ঞাতবাসকালীন কারও পরিচয় প্রকাশিত হলে আবারও বারো বছর প্রবাস এবং একবছর অজ্ঞাতবাস কাটাতে হবে।
যুধিষ্ঠির বললেন, "দ্বাদশ বছর গত হতে চলেছে, ত্রয়োদশ বছর উপস্থিত হল বলে; তোমরা বল, কষ্টের এই অজ্ঞাতবাস কোন্ রাজ্যে সর্বোত্তম হবে?"
অর্জুন বললেন, "কুরুদেশের চারদিকে অনেক রমণীয় দেশ আছে যেমন পাঞ্চাল, চেদি, মৎস, শূরসেন, পটচ্চর, দর্শান, মল্ল, শাল্ব, যুগন্ধর, কুন্তিরাষ্ট্র, সুরাষ্ট্র ও অবন্তী। এদের কোনটি আপনার ভালো মনে হয়?"
যুধিষ্ঠির বললেন, "মৎস দেশের বয়স্ক রাজা বিরাট ধর্মশীল এবং বদান্য। তাঁর কর্মচারী হয়ে ছদ্মবেশে থাকব। তিনি আমাদের রক্ষা করতে পারবেন।"*
যুধিষ্ঠির নাম ধরলেন কঙ্ক, বিরাট রাজার সভাসদ হলেন। ভীম 'বল্লভ' নাম নিয়ে পাকশালার প্রধান হলেন। অর্জুন তৃতীয় লিঙ্গ (না পুরুষ, না মহিলা) রূপে বৃহন্নলা নাম ধরে রাজকন্যা উত্তরার নৃত্যশিক্ষক হলেন। নকুল ছিলেন অশ্ব বিশেষজ্ঞ, তাই গ্রন্থিক নামগ্রহণ করে বিরাট রাজার অশ্বরক্ষক হলেন। সহদেব গো বিশেষজ্ঞ, তন্তিপাল নাম ধরে গোশালার তত্ত্বাবধায়ক হলেন। দ্রৌপদী ছিলেন কেশসংস্কারে (চুল বাঁধা) পটু, সৈরেন্ধ্রী নামে রাজমহিষী সুদেষ্ণার পরিচারিকা হলেন।
বিরাট রাজ্যে অজ্ঞাতবাসের পূর্বের বনবাস পর্বে পাণ্ডবরা বেশিরভাগ সময়টাই কাটিয়ে ছিলেন অধুনা উত্তরাখণ্ড ও হিমাচলের পার্বত্যাঞ্চল ও বনাঞ্চলে। সেইসময় বেশ কিছুদিন (বছর কিনা ঠিক জানা নেই) এক পার্বত্যগুহায় আশ্রয়গ্রহণ করেছিলেন। সেই গুহাই পাণ্ডবগুহা নামে খ্যাত। আর তারই অবস্থান নাকি এই গঙ্গোত্রীতে। ওপাড়ের ওই বনাঞ্চলে, তিন-চার কিলোমিটারের মধ্যে। আর পথিকেরা নাকি সেই গুহাদর্শন করেই আসছেন।
শুনে শিরদাঁড়া দিয়ে শিহরণের একটা হিমেল স্রোত বয়ে গেল। আরও জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম, রাস্তা নাকি সোজাই। গাইড লাগে না। আলোচনা সারতে মিনিট দু-তিনের বেশি লাগল না।
পাণ্ডবগুহার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম, তখন পৌনে ছটা বা ছটা হবে। অর্থাৎ সন্ধ্যে নামার আগে আমাদের হাতে আর এক-দেড় ঘণ্টা আছে। দ্রুত অপরপাশের সেই বনের মধ্যে দিয়ে চললাম, চোখ-কান খোলা রেখে, দলবদ্ধভাবে অচেনা জায়গাটা খুঁজে বের করার জন্যও আবার জংলি কোনও জন্তুর আক্রমণের আশঙ্কাও বটে। বেশ উঁচু উঁচু গাছ জঙ্গলে, ইতিউতি ছড়িয়ে থাকা ঝোপঝাড় আর পায়ের তলায় পুরু ঘাসের চাদর। মাঝে মাঝে আবার ফাঁকা জায়গাও। মোটামুটি কিলোমিটারখানেক পর্যন্ত কিছু কিছু বাড়িঘর আর লোকজনের বাস রয়েছে। লোকের দেখা মিললেই জিজ্ঞেস করে করে এগিয়ে চললাম। কিন্তু তারপর জনবসতি আর দেখা গেল না। জঙ্গলও আর একটু ঘন হয়ে এল।
এবার একটা নতুন জিনিস আবিষ্কার করলাম। মোটামুটি ৫০-৬০ মিটার দূরে দূরে ঘাসের মধ্যে থেকে বেরিয়ে পড়া ছোট পাথরের ওপর মোটামুটি স্পষ্ট লেখা – 'পাণ্ডবগুহা'। আর তার নিচে তীরচিহ্ন এঁকে দিক নির্দেশ করা। এটা দেখে একটু খুশিই হলাম। সেই পথনির্দেশিকা দেখে দ্রুত অগ্রসর হতে লাগলাম। হাঁটতে হাঁটতে উত্তেজনা অনুভব করছিলাম। গল্প করতে করতে এগোচ্ছিলাম বটে। তবে পায়ের গতি কমছিল না। ওদিকে দিনের আলোও ক্রমশ নিঃশেষ হয়ে আসছিল। হঠাৎ একটা উঁচু ঢিবির মত জায়গা। তার চারপাশে খানিক ঝোপঝাড়। আর পথনির্দেশিকাও আর দেখা গেল না। তাই ভাবলাম ওই ঢিবিটাই পাণ্ডবগুহা। সবাই মিলে ঢিবির চারপাশ ঘুরে গুহামুখ অনুসন্ধানে নেমে পড়লাম। ঢিবির একটা অংশ খানিকটা ছোট গর্তের মতো। কিন্তু বেশি বড়ও যেমন না, তেমনি গভীরও না। এই ভেবে হতাশ হলাম, যে এটাই পাণ্ডবগুহা আর তা কালের স্রোতে হয়তো মাটি দিয়ে ভরাট হয়ে গেছে। তখন দিনের আলো প্রায় শেষ। অন্ধকার ভিড় করছে চতুর্দিকে। আরও খানিকটা ওপরের দিকে একটু অনুসন্ধান করলাম। যদি অন্য কোন গুহা থাকে, যা আসলে পাণ্ডবগুহা ! আসলে পাণ্ডবগুহা বলে ওই ঢিবিকে কিছুতেই মন মানতে চাইছিল না।
ফেরার পথ ধরলাম। একটা জায়গায় এগোনোর পর হঠাৎ দেখলাম একটা সরু আলপথের মতো একটু পাহাড়ের কোল ঘেঁষে এগোচ্ছে। পরস্পরের মুখের দিকে তাকালাম। দু-একজন বলল আর না। অন্ধকার নেমে আসছে দ্রুত। ফিরতে হবে। জঙ্গল এটা। কিন্তু আমরা ক'জন আবার আলোচনা করলাম এতদূর এসে না দেখে ফিরে যাব! যদি এদিকে থাকে! আসল গুহা!
না, এসেছি যখন আর একটু দেখেই যাব। সিদ্ধান্ত নিলাম। আর যেমন ভাবা তেমনি কাজ। দ্রুত এগোতে লাগলাম সেই পথে। দিনের আলো শেষ হব হব তখন। কিছুদূর যাওয়ার পর আবার সেই পথনির্দেশিকা দেখতে পেলাম। হাঁটার গতি অনেক বেড়ে গেল। প্রায় পাঁচশো মিটার এগোনোর পর কাঙ্ক্ষিত গুহার সামনে যখন দাঁড়ালাম, আনন্দ যেন আর ধরে না। একটু নিচু কিন্তু দুজন মানুষ ঘেঁষাঘেঁষি করে ঢোকা যাবে এমন একটা মুখ। আর ঊচ্চতা বড়জোর ৭ কী ৮ ফুট হবে। চারপাশে ঘুরে দেখলাম সেটা একটা গোল বড়সড় পাথরের মতো। অর্থাৎ ভেতরে ঢুকে পাথর দিয়ে মুখ বন্ধ করে দিলে বোঝার উপায় নেই যে ওটা পাথর নাকি গুহা। আত্মগোপনের উপযুক্ত জায়গা বটে। অদ্ভুত খোঁজ পাণ্ডবদের! তারিফ না করে পারলাম না! এবার ভেতরে ঢুকে আর একপ্রস্থ অবাক হওয়ার পালা। সরু ক্যানেলের মতো একটা ঘর যেন। ৮ ফুট বাই ১২ ফুট মতো হবে। ভিতরের উচ্চতা বড়জোর সাড়ে ৬ ফুট। ভিতরটায় অন্তত ছ-সাতজন সাধু ও তাঁদের সাধনার জায়গা। জ্বলছে যজ্ঞের আলো। উড়ছে ধোঁয়ার কুণ্ডলী। সেই আলো-আঁধারিতে গুহার পরিবেশ মায়াময় ও রহস্যময়। সাধুরা অতিশয় ভদ্র, বিনম্র এবং আলাপী। তাঁদের পাণ্ডিত্য ও জীবনদর্শন জ্ঞান শ্রদ্ধা আনে মনে আর সবথেকে বড় কথা আত্মসম্ভ্রমবোধ গভীর। কোনোরকম সাহায্য হাসিমুখে প্রত্যাখ্যান করলেন তাঁরা। ভিতর ও বাইরের বেশ কিছু ছবি নিলাম। লক্ষ্য করলাম গুহার অপরপাশে আর একটা মুখ রয়েছে। সেটা বেশি বড় নয়। বড় জোর একজন লোক বেরোতে বা ঢুকতে পারবে, তাও হামাগুড়ি দিয়ে। অসীমা আর আমি বেরোলাম সেই পথে। বাইরে সামনে খানিকটা ঝোপঝাড় আর ঘাসের জমি। তারপর পাথরের উন্মুক্ত সমতল, পাহাড়ের ঢালে শেষ হয়েছে। এগিয়ে গেলাম সেইদিকে একেবারে প্রান্তে পৌঁছে দেখলাম, নিচে বইছে গঙ্গা। আর ওপাশের পাহাড়ে অর্থাৎ যে পাহাড়ে গঙ্গোত্রী শহর, বাজার আর আমাদের হোটেল তার মেইন-বাসস্ট্যাণ্ড দেখা যাচ্ছে গাছের ফাঁক দিয়ে।
মোটামুটি আধঘণ্টা কেটে গিয়েছিল। এবার সম্বিৎ ফিরল। সন্ধ্যা নেমে গেছে। ফিরতে হবে। ফোনে টাওয়ার নেই। সন্দীপদা হয়তো খোঁজাখুঁজি করছে। একটা টর্চ এনেছিলাম সঙ্গে। আর ছিল মোবাইলের টর্চ। তাই সম্বল করে দ্রুত ফেরার পথ ধরলাম। মাঝে একবার রাস্তা গুলিয়েছিলাম বটে। কিন্তু সেটাকে আমল না দিয়ে আবার সঠিকপথ খুঁজে পৌঁছে গেলাম গঙ্গোত্রীর গঙ্গার উপরের কাঠের পুলের ওপর। মনে তখন অসম্ভব রকম তৃপ্তি আর অদ্ভুত এক ভালোলাগার অনুভূতি।
*ব্যাসকৃত মহাভারত সারানুবাদ রাজশেখর বসু: বিরাটপর্ব: পান্ডবপ্রবেশপর্বাধ্যায়।
~ ক্রমশঃ
~ গঙ্গোত্রী-গোমুখ ট্রেকরুট ম্যাপ ~ গঙ্গোত্রী-গোমুখের আরও ছবি ~
হাওড়া জেলার অঙ্কুরহাটি কিবরিয়া গাজি উচ্চবিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক মৃণাল মণ্ডলের নেশা ভ্রমণ, খেলাধূলা ও সাহিত্যচর্চা।