দ্বীপের নাম সান্তোরিনি
সোমদেব পাকড়াশী
এথেন্সে যে হোটেলে আছি সেটির ব্যালকনিতে দাঁড়ালে অনতিদূরে বিশ্ববিশ্রুত এক্রোপলিস নানা রঙে রূপে দৃশ্যমান। দিনকয়েক এক্রোপলিসসহ নানা দর্শনীয় জায়গা বিস্ময়মিশ্রিত আনন্দে দেখা হলে সেদিন নৈশভোজের পর মনে পড়ল পরের দিন কাকভোরে ট্যাক্সির ব্যবস্থা করতে হবে। সান্তোরিনি দ্বীপে হোটেল বুক করা আছে। ফেরিঘাঁটিতে সময়মতো পৌঁছনো চাই। তড়িঘড়ি সেকথা রিসেপশনে জানাতে ওদের একটা ফোনকলেই মুহূর্তে মুশকিল আসান হল। ট্যাক্সির ব্যবস্থা তো হলই ফেরির টিকেটদুটিও কনফার্ম করানো গেল। এছাড়া তারা সবিনয়ে জানালেন যে সকালে প্রাতরাশের পুরো ব্যবস্থা থাকবে। পরেরদিন ভোরের আলো ফোটার আগেই নিস্তব্ধ জনশূন্য প্রাতরাশ ঘরে পৌঁছে দেখা গেল অন্যান্য দিনের মতই সেখানে নানা ফলের রস, দই, চা, কফি, টোস্ট, চিজ, মাখন, ডিমসেদ্ধ, বেকন ইত্যাদিসহ এলাহি ব্যবস্থা করা আছে। এদের আন্তরিক আতিথেয়তায় মনটা ভরে গেল।
কাঁটায় কাঁটায় ভোর পাঁচটা। ট্যাক্সি এসে হাজির। ঘুমন্ত এথেন্সের নীরব পথ বেয়ে ঘন্টাখানেকের মধ্যে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম আর ইউরোপের সবচেয়ে বড় পোতাশ্রয় পাইরিয়াস-এ ফেরিতে ওঠার অপেক্ষায় আমরা। সেখান থেকে সমুদ্দুরপথে কমবেশি ঘন্টাপাঁচেক পরেই অপরূপ দ্বীপ সান্তোরিনিতে পৌঁছব। দ্বীপটি গ্রিসের মূল ভূখণ্ড থেকে অনেকটা দক্ষিণে। এযুগের 'সিধু জ্যাঠা'র (গুগল) থেকে জেনেছি, গ্রিসের এই অতি সুন্দর ও মনোরম দ্বীপটি পর্যটকের কাছে পৃথিবীর সর্বাধিক আকর্ষণীয় স্থানগুলোর সামনের সারিতে। শান্ত ইজিয়ান সাগরের অন্তহীন রূপরাশি দেখতে দেখতে দুপুরের আগেই নানান দ্বীপ পেরিয়ে পৌঁছলাম সেখানে।
গ্রিসে প্রায় সবকটি দ্বীপই দর্শনীয়। তার মধ্যে মিকোনস, কর্ফু, ন্যাক্সস, প্যাক্সস, হাইড্রা, মিলোস, ডেলোস, সান্তোরিনি, ক্রিট ইত্যাদি দ্বীপগুলোতে পর্যটকদের ভিড় বেশি। আবার প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্যও সান্তোরিনি এবং ক্রিটের মত দ্বীপগুলোকে স্বতন্ত্র মর্যাদা দিয়েছে।
সান্তোরিনির জাহাজঘাটা থেকে সমুদ্রের কিনারা ধরে ছোট এবং আরামপ্রদ আট সিটের গাড়িটি পাকদন্ডি বেয়ে হোটেলে পৌঁছনোর পথে চোখে পড়ল কী সুন্দর সর্পিল এই পাকদন্ডির সন্নিবেশ – বিশাল পারাবারের জলস্তর থেকে ক্রমশ ওপরে, আরও ওপরে – বিভিন্ন থাকের বসতির দিকে উঠে গেছে। এক অপূর্ব দৃশ্য!
৩৬০০ বছর আগে আগ্নেয়গিরির প্রচন্ড বিস্ফোরণে আর লাভা উদ্গীরণের ফলে ইজিয়ান সাগরের এই দ্বীপটি কয়েকটি খন্ডে বিভক্ত হয় এবং এখানে ব্রোঞ্জ যুগের মিনোয়ান সভ্যতার বিনাশ হয়। দ্বীপটির চেহারাটি এখন জলরাশির চারিদিকে ছড়িয়ে থাকা অতি সুবৃহৎ আয়তকার দ্বীপপুঞ্জে পরিণত। পর্যটকদের মূল আকর্ষণ সান্তোরিনি বা 'থিরা' এর মধ্যে সবচেয়ে বড় দ্বীপ। জলস্তর থেকে দ্বীপটির বসতি অনেকটা উঁচুতে – যেন অতিকায় এক কড়াই এর কানা ধরে সেগুলির অবস্থান।
আমাদের হোটেলটি সান্তোরিনির প্রধান শহর 'ফিরা'তে। এর খুব কাছেই হাঁটাপথে সাত-আট মিনিট দূরে ক্যালডেরা নামে স্থানটি সমুদ্রের পার ধরে টানা অনেকটা জায়গা নিয়ে ছড়ানো। এক একটা দিক সুন্দর ঝকঝকে ছবির মতো। অর্থোডক্স চার্চ নামে উজ্জ্বল সাদা রঙের একটি আকর্ষণীয় চার্চ রয়েছে এখানে।
এছাড়া এখানে পাওয়া যাবে নানা স্যুভেনির এবং আধুনিক ভিডিও এবং অডিও দ্রব্যসামগ্রী থেকে শুরু করে পর্যটকদের বিনোদন ও প্রয়োজনের নানা সম্ভার। গ্রিক এবং ইউরোপীয় খাদ্য-পানীয়তে ভরপুর একাধিক আকর্ষণীয় রেস্তোঁরা এখানে সেখানে ছড়িয়ে। সান্তোরিনির অন্যতম প্রধান আকর্ষণ তার সমুদ্রবক্ষে সূর্যাস্ত। হোটেলে লাঞ্চ সেরেই তা দেখার জন্য রওনা হলাম সমুদ্রপাড়ে 'ক্যালডেরা'র পথে। 'ক্যালডেরা' শব্দটি স্পেনীয়। ইংরাজীতে তর্জমায় হবে 'কলড্র্ন্' – আমাদের ভাষায় 'কড়াই'।
সমুদ্রতল থেকে প্রায় হাজার ফুট উঁচু ক্যালডেরার পাড় থেকে সমুদ্র এবং সান্তোরিনির বসতির মিলিত দৃশ্য অনুপম। ভাষায় প্রকাশ করার থেকে সে সৌন্দর্যে নীরবে অবগাহন করা অনেক সহজ এবং শ্রেয়।
প্রতিটি বাড়ির দেওয়াল থেকে ছাদের উপরিভাগ পর্যন্ত ধবধবে সাদা। চোখধাঁধানো উজ্জ্বল, ঝকঝকে। মাঝে দু-একটি হালকা কমলা রঙের বাড়ি। এখানে সেখানে উজ্জ্বল নীল রঙের গম্বুজ। বসতিগুলির মাঝে বিভিন্ন উচ্চতায় থাকে থাকে ছিমছাম পায়ে চলার পথ যেন ছন্দোবদ্ধ ভাবে বিন্যস্ত। সমস্তটা মিলে এক একটি দিক যেন ফ্রেমে-বাঁধাই এক একটি অপূর্ব ছবি। আমরা বিমোহিত।
বিকেল ক্রমে ক্রমে শেষের দিকে ঢলে পড়ছে – সূয্যিমামা পাটে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সমুখে সুবিস্তীর্ণ জলরাশি। তার এক জায়গায় আবার ছোট্ট দুখানি পাহাড় বিশাল সাগরের বুক থেকে সামান্য উঠে এসেছে – সুন্দরী ইজিয়ান যেন অপরূপ ভ্রূভঙ্গী করছে। এদিক সেদিকে কিছু ছোটবড় ফেরি চলমান। ডোবার অব্যবহিত আগে সূর্য একটি ছোট্ট পাহাড়গাত্র স্পর্শ করল। মুহূর্তে চারিধার সামান্য আঁধার। সেই মুহূর্ত হতে প্রতিক্ষণে অতিদ্রুত নিম্নগামী দিনকরের নিচে নামা, জলরাশি চুম্বন এবং ডুবে যাওয়ার চিরাচরিত অথচ চিরনূতন সেই প্রতিটি লহমা অনন্য হয়ে প্রকৃতির রঙের খেলার মধ্যে আমাদের অনুভূতিকে এক অন্য মাত্রায় বেঁধে দিল। সূর্যডোবার পালা শেষ। সর্বত্র যেন ছেয়ে আছে মায়াবী এক আলো – এক মনলোভা নতুন আবেশের রঙ চারিদিকে।
ক্যালডেরার পাকদন্ডীর পথে একটি চত্বরের রেস্তোঁরায় নানা মনকাড়া খাদ্যখানা ও সঙ্গে এখানকার আঙুর থেকে তৈরি পৃথিবীবিখ্যাত ওয়াইন ভিনসাঁটো আস্বাদন করা গেল। এক কথায় অনবদ্য। দোকানি জানাল ভিনসাঁটোর চুমুকের সঙ্গে ক্যালডেরাতে সূর্যাস্ত দেখার মজাই নাকি আলাদা।
পরের দিন সকালের দিকে দুটি ওয়াইনারিতে আঙুর থেকে কয়েকটি প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে বিভিন্ন ওয়াইন তৈরি করার ব্যাপারটি সবিস্তারে দেখলাম। সেখানে আবার এর অনেকটা সময় নানা ওয়াইনের স্বাদ নিতে চমৎকার ভাবে কাটল।
ব্রোঞ্জযুগের অমূল্য নিদর্শনের সম্ভারপূর্ণ আক্রোতিরি দ্বীপটিতে ভ্রমণ বিকেলের দিকে। প্রদর্শকের কথায় জানা গেল এখানে সেযুগের বসতির ভগ্নাবশেষ, ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, ফ্রেসকো ইত্যাদি সেযুগের বিষ্ময়কর সাক্ষ্য বহন করছে। কিন্তু দেখা গেল সমস্ত জায়গাটি সংরক্ষণমূলক কাজের জন্য ঘেরা। ফলে আজ বিশদভাবে সেসব দেখা সম্ভব হলনা।। উঁকিঝুঁকি দেখা আর প্রদর্শকের বিবরণে কিছুটা আভাস পেলেও তা এই দ্বীপটির প্রত্নতাত্ত্বিক সুপ্রাচীনতাকে ভাল করে জানার ঔৎসুক্য বাড়িয়ে দিল কেবলমাত্র। কী আর করা। সামান্য ক্ষুণ্ণমনেই আজ হোটেলে ফিরতে হল।
পরদিন সকালে সামান্য তাড়াহুড়ো করে ব্রেকফাস্ট সারলাম হোটেলে – সান্তোরিনি থেকে জলপথে নিও কামেনি দ্বীপে যাব জীবন্ত আগ্নেয়গিরি দেখতে। মিঞা-বিবি দুজনেরই চাপা উত্তেজনা রয়েছে সেকারণে। সকাল নটায় ট্রাভেল এজেন্সির গাড়ি আমাদের নিয়ে যাবে ফেরি ঘাটে। কিছুক্ষণ আগে থেকেই হোটেলের সামনের মোড়ে এসে গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে। গাড়ি এল সোয়া নটার পর। যাহোক, আশ্বাস পাওয়া গেল যে সময়মতোই যথাস্থানে পৌঁছব। পরিষেবার এই সামান্য বিচ্যুতি নিজগুণে মাফ করা ভাল। কিন্তু ফেরিঘাটের কাছে এসে কোনটা আমাদের ফেরি, কোথায়বা তার সঠিক অবস্থান কিছুই বোঝা গেলনা। কিছুপরে গাড়ির চালক আর তার সহকর্মীটি একটি যাত্রীপূর্ণ সাধারণ ফেরি অল্প দূর থেকে আমাদের জন্য নির্ধারিত জলবাহন বলে দেখিয়ে দ্রুত বিদায় নিল। বিচলিত হয়ে ফেরিটির কাছে যেতে না যেতে দেখা গেল সেটি ঘাট ছেড়ে জলপথে ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দৃষ্টি-আকর্ষণকারী জোরালো হাঁকডাক বা অনুরোধ, উপরোধ আদৌ তাদের কর্ণগোচর হয়েছে বলে মনে হলনা। আমাদের নিয়ে আসা গাড়িটিও ইতিমধ্যে অদৃশ্য। পার্কিংলটেও সেটি দেখা গেল না। ট্রাভেল এজেন্সির এধরণের বালখিল্য ব্যবহারে নিতান্তই নিরাশ আমরা কিছুটা দূরে অভিযোগ ও প্রতিকার সম্পর্কিত অফিসে ঘটনাটি জানালেও কোনো সুরাহা হলনা। সনির্বন্ধ অনুরোধে হোটেলে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থাটি কেবল করানো গেল। দিনটা আজ পুরোই নষ্ট হবে ধরে নিয়ে বারোটা নাগাদ ফিরে হোটেল লাউঞ্জে চুপচাপ বসে কী করা যায় ভাবছি – দেখি ফ্রন্টডেস্কের মেয়েটি নিজেই দুকাপ গরম কফি ও অল্প স্ন্যাক্স নিয়ে হাজির। আমাদের যাত্রাভঙ্গের পুরো বিবরণ শুনে সে মর্মাহত। অবাক হলাম যখন সে ডেস্কে ফিরে দু-একটা ফোনবার্তার পর ট্রাভেল এজেন্সিটির এক কর্তাব্যক্তির সঙ্গে আমাকে বিশদে কথা বলার ব্যবস্থা করে দিল এবং আশ্বাস দিল যে আজই দ্বিতীয় ব্যাচের ফেরিতে গন্তব্য দ্বীপটিতে যাবার ব্যবস্থা অবশ্যই হয়ে যাবে। নিট ফল – ট্রাভেল এজেন্সির হয়ে কর্তাব্যক্তিটির ক্ষমা প্রার্থনা এবং আগের দেওয়া খরচেই সেদিন আরও ভালো প্যাকেজে আরামপ্রদ ফেরিতে ফ্রি লাঞ্চ এবং যাত্রাপথে সূর্যাস্তদর্শন ইত্যাদি। সঙ্গে সজীব আগ্নেয়গিরির দ্বীপে প্রতীক্ষিত ভ্রমণ। এহেন অভিজ্ঞতা গ্রিকদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা বহুগুণ বাড়িয়ে দিল। এ আতিথেয়তা ভোলার নয়।
যাহোক, সেদিন আফ্রোদিতি নামের ভারী সুন্দর একটি ফেরি ভরদুপুরে নিও কামেনি দ্বীপে আমাদের নিয়ে গিয়েছিল। বেশ কিছুটা চড়াই পেরিয়ে পথে দুধারে চোখে পড়ল ছোট বড় কালো আর ঘন খয়েরি রঙের লাভার পাহাড় – শুকিয়ে এখন পাথর। এর খানিক পরেই পৌঁছে গেলাম সজীব আগ্নেয়গিরির এক ক্রেটারের কাছাকাছি। সমস্ত এলাকাটা কিছুটা গরম। এই ক্রেটারটি সামান্য গভীর, বেশ কিছুটা জায়গা নিয়ে এর অবস্থান। ধূসর কালো নানান সাইজের ছোটবড় দানা আর মাটির আলগা মিশ্রণ রয়েছে অনেকটা জায়গা ধরে।
সঞ্চালক ভদ্রলোক এসে ইংরেজি, ইতালিয়ান, ফরাসী, জার্মান এবং অবশ্যই গ্রিক ভাষায় এই সজীব আগ্নেয়গিরির ইতিবৃত্তান্ত ব্যক্ত করার সুযোগে আমরা এবং আরো দু-পাঁচজন সেখান থেকে আরও কিছু ওপরের পথে গিয়ে দূরে ওই নিচে জাহাজ ভাসা বিশাল জলরাশির ওপারে সান্তোরিনির ঝকমকে সুন্দর সাদা বসতওলা দৃশ্যপটের বেশ কয়েকটা বিভিন্ন কোণ থেকে ক্যামেরাবন্দী করে ফেললাম।
আগ্নেয়গিরি দেখে ফেরার পথে ফেরিতে সুস্বাদু আমিষভোজের সঙ্গে লাল ওয়াইন, শেষপাতে মিষ্টি এবং এখানকার বিখ্যাত মিষ্টি তরমুজে আমরা একেবারে তরতাজা। নতুন উদ্যমে ডেকের রেলিংয়ে হেলান দিয়ে কখনও নিবিষ্ট মনে দেখছি সাগরের প্রায় নিস্তরঙ্গ জলরাশির মধ্য দিয়ে আমাদের সুন্দর ফেরিটি কেমন তরতর করে এগিয়ে চলেছে। পথে রূপ আর বর্ণের বাহার নিয়ে অল্প বিস্তর ছোট বড়ো ফেরি বা দু-একটা বিশাল সাদা রঙের জাহাজ আমাদের মুগ্ধ করে এখানে সেখানে ভাসমান। কখনও দেখা যায় সুন্দর সাদা, খয়েরি, ঘন কালো বা সবুজাভ হলদেটে রঙে রঙিন সৈকতভূমি –যেখানে কিছুটা দূর যেতেই চওড়া পথরেখা এঁকেবেঁকে ক্রমশ ওপরে, আরও ওপরে উঠে ছোট ছোট বসতির দিকে মিলিয়ে গেছে। তৈরি করছে এক একটি দৃষ্টিনন্দন দৃশ্যান্তর। সব মিলিয়ে ভারী মনকাড়া এই সমুদ্র ভ্রমণ।
সঞ্চালকের বার্তায় জানা গেল ফেরিপথে সামান্য দূরে প্যালিও কামেনি নামে একটি ছোট্ট দ্বীপের কাছে এক প্রাকৃতিক উষ্ণ প্রস্রবণ আমাদের পরবর্তী গন্তব্যস্থল। সাগরের এই অংশের নিচে বহুযুগ আগে আগ্নেয়গিরির সক্রিয় কার্যকলাপের ফলে সৃষ্টি হয়েছিল এই উষ্ণ প্রস্রবণ। সেজন্য এখানে জল সর্বদাই কু্সুমকুসুম গরম আর শরীর ভাল করার নানা খনিজ মেশানো। জলের রঙেও দেখলাম হলদেটে ভাব। বিশেষ করে পাড়ের দিকে। পর্যটকদের অবগাহনের অনুমতি রয়েছে এই অংশে। সেজন্য 'আফ্রোদিতি' কিছু সময় দাঁড়িয়ে গেল এখানে। সুদূর গ্রিসে সমুদ্র সাঁতারের এই অভাবিত সুযোগ হাতছাড়া করিনি।
এবার সান্তোরিনিতে ফেরার পালা। ফিরতি পথে ফেরি থেকে অপার সাগরবক্ষে সূর্যাস্ত দেখা আরও একটি অসামান্য অনুভূতি।
ফেরার পথে সন্ধ্যার আধো আঁধারে নজর পড়তেই দেখা গেল ফেরি থেকে সামান্য দূরে ঝকমকে আলোকোজ্জ্বল আমাদের সান্তোরিনি যেন নতুন সাজে সেজেছে। যেন দ্যুতিময় হীরের মুকুটে সজ্জিতা অপরূপা!
পরেরদিনটি ছিল নির্ঝঞ্ঝাট উপভোগের। গোটাদিন নানারঙের সৈকতভূমিতে অনেকটা সূর্যস্নাত সময় কাটালাম চমৎকারভাবে।
কেমন যেন চট করে ফুরিয়ে গেল প্রাণোচ্ছল দিনগুলো। ভ্রমণজাত সম্পদগুলি ক্যামেরা এবং মনের মণিকোঠায় এবার বন্দী করে ফিরতে হবে।
বর্ষীয়ান সিভিল ইঞ্জিনিয়ার সোমদেব পাকড়াশী যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর ডিগ্রিপ্রাপ্ত। বহু বছর দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন দায়িত্বপূর্ণ পদে চাকুরির পর বর্তমানে কলকাতাতে একটি জিওটেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সালটেন্সি সংস্থার অধিকারীI