নাগজিরার জঙ্গলে
দেব মুখার্জি
লগ হাটের বারান্দায় বসে ছিলাম, যে দিকে চোখ যায় সবুজে সবুজ, তবে এই শীতের জঙ্গলে নানান সবুজের মাঝে কিছুটা হলুদ আর ধূসর ভাব এসেছে, সামনে লেকটার জলে হলদেটে সবুজ ছাওয়া পড়েছে পাহাড়টার আর সেখানের নানান গাছগুলোর। পাড়ের দিকে বেশ কিছুটা জায়গা জুড়ে লম্বা ঘাসগুলো শুকিয়ে সবুজ থেকে ক্রমশ বাদামি হচ্ছে, একটা হালকা হাওয়া বইছে ওই জলের ধার থেকেই, তবে হিমেল নয়।
পরপর অনেকগুলো ছাতিম গাছ এদেশে বলে সপ্তপর্ণী। জারুল গাছটার পাশ দিয়ে ডানদিকে ঘুরে একটা বাঁশের সাঁকো, সেখানে একটা মস্ত গাছ, প্রকাশ বললে, এটাকে মারাঠিতে বলে লেন্ড্রা, হলুদ ফল হয় পাখিতে খায়। সেগুন, করৌঞ্জ, হরিতকি, সাজা, কুসুম, কিছু গাছ চিনতে পারি আর বেশিরভাগ অচেনা, আর এর আগে চিনলেও ফের ভুলে গেছি, প্রকাশ আবার বলে 'দেখো এটা সালাই, মারাঠি নাম'...শশীনভাই বলেন 'গুগগুল'... 'আর ওইটা অর্জুন', রাজুদা যোগ দেয়।
একদল হনুমান কিছুটা লাফালাফি করে চলে গেল, ছোট ছোট ঘাসের সবুজ ঘাসজমি, একটু দূরে একপাল হরিণ, তিনটে ময়ূর ওখানেই ... ক্র্যাঁও ক্র্যাঁও – একটু কর্কশ ডাক এদের, থেকে থেকে কানে আসছে, সামনে একটা আমগাছ, মগডালটা শুকিয়েছে কী কারণে কে জানে, টিয়াপাখিগুলো, সেই ডালে বসেই ডেকে চলেছে, আরও নানান পাখি, উড়ছে একডাল থেকে অন্যডালে, নীল আকাশের বুকে নানান সুরে ডাকছে। একদল ছাতারে কোথা থেকে উড়ে এসে রাস্তার ওপরেই বসে ছ্যা ছ্যা করে, ঝগড়া করছে বোধহয়। হিন্দি বা মারাঠিতে এদের বলে 'সাতভাই', আগেই জেনেছি ।
তিনটে সম্বর, হড়বড় করে একটু দৌড়ে গাছের পেছনে গিয়ে থেমেছে তারা। হরিণ প্রজাতির মধ্যে সব চেয়ে বড়সড় চেহারা এদের, আবার আমার মনে পড়ল বড়ই মন্দবুদ্ধির হয় এরা, পেঞ্চের খুরসাপারের গাইড বলেছিল সে কথা, সেইবার হ্যান্ডসাম-এর (বাঘ) ডেরায় পৌঁছে। দুটো ফিমেল খয়েরি বাদামি রঙের, আর কালচে রঙেরটা মেল, বাহারি সিং, মাথার ওপরে বেশ ডালপালা ছড়িয়ে। ঘাড়ের কাছে লোমগুলো, থুতনিতেও, কী দৃপ্ত ভঙ্গি, কী অপরূপ রূপ এই পূর্ণবয়স্ক সম্বরের। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখছে, কানগুলো খাড়া করেছে, অদ্ভুত। একেবারে ছবির মত নিশ্চল হয়ে দাড়িয়ে অনেকক্ষণ... একেই বোধহয় বলে চিত্রার্পিত। সে দৃশ্য দেখে অভিভূত শশীনভাই ফিসফিস করেন, 'আনওয়ার্ল্ডলি', মনে মনে বলি 'অপার্থিব!'
হাঁটছিলাম। একবার লেকের ধারে সাঁকোটার কাছে যাই, জলে মাছেরা ঘাই দিচ্ছে, তাকিয়ে ছিলাম ওই দিকে, পরপর তিনটে বুড়বুড়ি উঠল... ডাঙায় বসে জলের তলায় চারে কী মাছ জমেছে ওই বুড়বুড়ি দেখে বলত বাবা কিংবা বড়শিতে ঠোকর মারা দেখে এক্কেবারে নির্ভুল, শেখার চেষ্টা করতাম, আজ ওই তিনটে বুড়বুড়ি দেখে মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল... তেলাপিয়া। আর তারপর চশমাটা ঝাপসা হল, আকাশের দিকে তাকাই আর তারপর পায়ের নিচে নজর পড়ে শুকনো পাতাগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে ... আবার সেই পুরোনো কথাটা মনে পড়ে "শুকনো পাতা মাড়িয়ে চলার সময় মনে রেখো যৌবনকালে কতোটা ছায়া দিয়ে তারা তোমায় আগলে রেখেছিল।" কী যে গভীর দর্শন এর মধ্যে রয়েছে লুকিয়ে, মনটা উদাস হয়।
'দাদা ইধার দেখো...', প্রকাশ ক্যামেরা তাক করেছে... বড় ভালো ছবি তোলে প্রকাশ...। নানান কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে সে, সেভাবে দেখা সাক্ষাৎ আর হয়না তবে অনেকদিন পরে আবার চারজন একসঙ্গে হতে পেরেছি, আর তারপর এই জঙ্গলের কোর এরিয়ায় এখন লগহাটে। মোবাইলে ধরে রাখা ছবিটা দেখায় ও, প্রকাশের হাতটা জড়িয়ে ধরি, কৃতজ্ঞতা জানাই, চারটে লাইন মনে আসে...
हाथ छूटे भी तो
रिश्ते नहीं छोड़ा करते
वक़्त की शाख से
लम्हे नहीं तोड़ा करते
(হাত দুটো চলে যেতেই পারে দূরে
ভালবাসা তবু থাকবে হৃদয় জুড়ে।
সময়ের শ্যামল সবুজ শাখা থেকে
মধুর সে পল - পারবেনা নিতে ছিঁড়ে।)
অনুবাদ - কল্যাণশঙ্করদা
দুজনে সিঁড়িতে এসে বসি... শশীনভাই আর রাজুদাও এসে বসেন, শশীনভাই বলে ওঠেন 'দেবদা, এ কোথায় নিয়ে এসে ফেললেন আমাদের', তারপর স্বগতোক্তি করেন 'অ্যামেজিং'... রাজুদা আঙুলটা তুলে ঘড়ির দিকে দেখায় বলে...'ঢাই বাজ চুকা, চলতে হ্যয় কেয়া?' সাফারির সময় হয়েছে, গাইড ধনলাল মাডভি অপেক্ষা করছিল... আমরা ডাকতেই বললে... 'চলিয়ে।' প্রকাশ বিড়বিড় করছিল -
पौरे को भटकने दो
खोजने दो नए रारते
(প্যয়রো কো ভটকনে দো
খোজনে দো নয়ে রাস্তে)
আলো ছায়া মেখে জঙ্গলের পথে গাড়ির চারটে চাকা গড়ায়, পথের লালচে মাটির মিহি ধুলো উড়তে থাকে, গুলজার সাহেবের চারটে লাইন ফের মনে পড়ে, অনুবাদ করে দেয় মৌসুমী।
धूप अठा ले
लम्बा सफर है
काम देगी
छाँव भी रख ले
थकने लगेगा तो
आराम देगी
(রোদ্দুরটা সরিয়ে নিও
লম্বা পথে কাজেই দেবে
ছায়াটাও রেখে দিও
ক্লান্ত হলে আরাম দেবে)
নির্জন নিরিবিলি জঙ্গল, সরকারি বনবাংলো... মধুকুঞ্জ, নামটা বড় মনে ধরেছিল আমার। দরজার সামনে একটা সিমেন্টের বেঞ্চ, একেবারে জলের ধারে, চারপাশে নানান গাছগাছালি, ওয়াচ টাওয়ার। সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে চারদিক দেখি, ধনলাল বলেছিল, বেলা পড়লে পশুরা আসে জল খেতে, তবে এখনও কেউ আসেনি, নেমে পড়ি সেই মাচান থেকে। এসে বসি সেই বেঞ্চে, শীতের শেষ বিকেলের পড়ন্ত রোদ মেখে। জলে মাছের ঘাই, মাকড়সার সাঁতার কাটা, জমে থাকা শ্যাওলা, এদেশে বলে কাই, তাকিয়ে ছিলাম ওইদিকেই, মনে পড়ল ওকিল ভাইকে, অজানা অচেনা বয়স্ক মানুষটা সেদিন শিখিয়েছিল এই কাই বড়শিতে জড়িয়ে মাছ ধরার কৌশল। পুরোনো কতো কথা সব , মনের মাঝে ভেসে ওঠে।
নিদা ফাজলি সাহেবের চারটে লাইন আমার বড় প্রিয় বলে উঠি...
वक़्त के साथ है मिट्टी का सफ़र
सदियों से
किसको मालूम, कहाँ के हैं,
किधर के हम हैं
(চিরকাল হতে সময়ের সাথে
চলিতেছে মাটি, চলিতেছে জমি।
কেহ নাহি জানে কোথাকার ধূলি
কেন আমি অজানা সে পথ চলি
কে জানে কোথায় - চলিতেছি শুধু আমি)
(ভাবানুবাদ- কল্যাণশঙ্করদা)
বুদ্ধদেব গুহর 'মাধুকরী'র একটা লাইন মনে পড়ে -
"কোথা থেকে কোথায় আসে মানুষ রোজগারের সন্ধানে।" সত্যিই তো কোথা থেকে কোথায় আসে মানুষ... কিসকো মালুম, কঁহা কে হ্যয়, কিধর কে হম হ্যয়।
মাছরাঙাটা জলের ধারেই শুকনো গাছটার ডালে, শিকারের খোঁজে, মাঝে মাঝে জলে নামছে ছোঁ মেরেই আবার ডালে বসে গায়ের জল ঝাড়ছে ডানা নাড়িয়ে। দূরে একটা পানকৌড়ি, একবার ডুব দিয়ে আবার মাথা তুলে গলাটা উঁচু করেছে। সামনের গাছটায় একদল হরিয়াল...ইয়েলো ফিটেড গ্রিন পিজিয়ন, মহারাষ্ট্রের স্টেট বার্ড, জঙ্গলে ঘুরেই শেখা। লেকের অপরপারে বনদফতরের একটা বাংলো...'নিলয়', সাধারণের জন্যে নয়, ধনলাল বলেছিল, 'বড়ে সাহাব লোগ আকে ঠহরতে হ্যয়।' আমি ভাবি এজন্মে তো হলনা ... দেখা যাক পরের জন্মে যদি প্রভাবশালী হতে পারি।
একটা কাঠঠোকরা নিম গাছটার মোটা গুঁড়িতে ঠক ঠক করে ঠুকছে, চিন্তাটা কেটে গেল, লাল মাথাটা নাড়িয়ে আমায় একবার দেখল আর তারপর গুঁড়ির অন্যপারে মুখ লুকোল। কতগুলো জল ফড়িং... কমলা রঙের, জলের ধারে নুইয়ে থাকা ঘাসের মাথায় বসছে আর উড়ছে আবার এসে বসছে, একটা বোঁওওও করে শব্দ কানে আসে, স্বচ্ছ পাখনাগুলো দ্রুত নাড়াচ্ছে... 'আমাকে খুঁজে দে জল ফড়িং'... শিলাজিৎ-এর গানটা ... হেসে ফেলি বলি... এইতো জল ফড়িং।
মস্ত বড় সাজা গাছটা হেলে রয়েছে, তবে জয়ী জীবনযুদ্ধে, একবার গিয়ে হাত দিই ফাটাফাটা গায়ে... ক্রোকোডাইল ট্রি, কুমিরের গায়ের সঙ্গে নাকি সাদৃশ্য, তবে আমার কাছে এ শিব বৃক্ষ, জঙ্গলের মানুষদের সঙ্গে শিব বৃক্ষের পুজোয় আমিও যোগ দিয়েছিলাম। এলোমেলো হাওয়ায় শুকনো পাতাগুলো উড়ছিল...সরসর করে একটা শব্দ, একটা বনজ গন্ধ...মাটির মিহি ধুলোর গন্ধ আর জলজ গন্ধ ভেসে আসছিল নাকে, প্রাণ ভরে শ্বাস নিই। নির্জন প্রকৃতির রূপ রস গন্ধ, মোহিত হয়ে বসে বসে আকাশ পাতাল ভাবনা আসে মনে, আমি বিড়বিড় করি...শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কয়েকটা লাইন...
"মনে মনে বহুদূর চলে গেছি –
যেখান থেকে ফিরতে হলে আরো একবার জন্মাতে হয়..."
তাল কাটে প্রকাশের গলার আওয়াজে... 'ঘরে চলো দাদা... সন্ধে হচ্ছে কী দরকার এই ফাঁকা জায়গায় একা একা বসে থাকার... কাল নাকি এদিকে ভাল্লুক বেরিয়েছিল... ধনলাল বললে' ... 'বলি ভয় দেখাসনা তুই।'
প্রকাশ এসে হাতটা ধরে, বলে - 'ওঠো', বড়ো ভালো লাগে সেই স্পর্শ, আন্তরিকতা। অনেকগুলো ছবিও তুলে দেয় সে।
একটা বোর্ড লাগিয়ে রেখেছে বন দফতর, রঙগুলো আজ বিবর্ণ, মারাঠি ভাষায় কিছু লেখা পড়ার চেষ্টা করি, শিবাজি মহারাজের আজ্ঞাপত্র... বলি বুঝিয়ে দিতে কী লেখা রয়েছে...
*"Aagyaptra of Shri Shivaji Maharaj"* which clearly states that unreasonable or illegal tree felling should not be done.
If required for NAVY ship building some selective trees can be taken after giving proper compensation.
Trees gone dry can be taken after careful permission of the owner… NOTHING SHOULD BE TAKEN FORCIBLY AT ALL.
বাংলাতে কেউ কথা বলছে, পেছনে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি লতাকুঞ্জের সামনে বেশ কয়েকজন... কাঁধে গলায় মস্ত বড়ো সব ক্যামেরা, লেন্স... সুব্রতদা Ex in Subrata, দেবরাজদা, ফেসবুকেই প্রথম পরিচয় ... বড় ভালো ছবি তোলেন ওঁরা, ওয়াইল্ড লাইফের। অল্প আলাপচারিতা, হাত নাড়ি, আবার দেখা হবে।
পথের ধারে সেই আমগাছটা, শুকিয়ে যাওয়া মগডালে টিয়াপাখিগুলো এখনও কি বসে, তাকিয়ে দেখি ওপরে... হ্যাঁ রয়েছে সবাই দলবেঁধে একটা ডালে। ভাবি আনতে হবে এখানে বাকি সব বন্ধুদের... বাবা বলত ভালো জিনিস সব সময় ভাগ করে নিতে হয়, তবেই আনন্দ বাড়ে।
"আম্বুয়া কি ছাঁইয়া মেঁ
ঝুলা ঝুলাবে রে, হাঁ
মঙ্গল গাওয়ে..."
ঠুমরি... ভাস্বতী গেয়েছিল সেবার পেঞ্চের জঙ্গলে এসে, ছবিগুলো দেখে... মন কেমন করা সেই সুরটা আজ আবার মনে পড়ল।
রাত প্রায় নটা বাজে, ডিনারের সময় নির্দিষ্ট এখানে। আমাদের আজকের আস্তানা থেকে ক্যান্টিন সামান্যই দূরে, পায়ে হাঁটা রাস্তা, ঘরের দরজা খুলে বাইরে বের হই, রাতের জঙ্গল, নিকষ কালো অন্ধকারে ডুবে। পোকার ডাক, একটা শব্দ 'কিরি কিরি কিরি'... একটানা একনাগাড়ে হয়েই চলেছে, মোবাইলে টর্চ জ্বেলে এগোই।
ক্যান্টিনের বারান্দায় দুজন দাঁড়িয়ে, ক্যামেরা খুলে একে অপরকে ছবি দেখাচ্ছেন, ভেতরে একদল মানুষ, গল্প করছেন জঙ্গল নিয়েই, কানে আসে... কালকে সাফারি রয়েছে, ভোরে উঠতে হবে... আজকের বিকেলটায় সাইটিং হয়নি। এক ভদ্রলোক আমাদের দেখে জিজ্ঞেস করলেন, 'কোঈ লাক', বুঝলাম জিজ্ঞেস করছেন কিছু দেখেছি কিনা সাফারির সময়। উত্তর দেওয়ার আগেই একটা হৈ চৈ... 'লেপার্ড, তেন্দুয়া'... বারান্দায় সবাই বেরিয়েছে ছুটে... কে কোথা থেকে টর্চের আলো ফেলেছে কে জানে, বোধহয় ফরেস্ট গার্ডেরা, আমি আলোর দিকে তাকাই, তারপর চশমাটা খুঁজি... ধীর গতিতে এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে লেপার্ডটা অন্ধকারে মিলিয়ে গেল। উৎসাহী জনগণের মাঝে প্রকাশের গলাটা কানে এল... 'জনম সফল হো গ্যয়া।'
সকালে পরিচয় হয়েছিল পঙ্কজ বনসোডের সঙ্গে, ও এই ক্যান্টিনের ঠেকাদার... জঙ্গলের বাইরে সাকোলি, ছোট জনপদ সেখানেই বাড়ি, আশেপাশের গ্রামের দু-তিনজন কর্মচারী নিয়ে তার এই ছোট্ট ব্যাবসা। সরকারি নিয়মে জঙ্গলের ভেতরে খাবার সব নিরামিষ, তবে ডিম পাওয়া যায়। সাধারণ আয়োজন, কিন্তু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং যথেষ্ট আন্তরিক। মুকেশ খাবার বানিয়ে পরিবেশনও করছিল... বলেছিলাম নিজেদের পছন্দের কথা ... ওই তেল-মশলা কম দেওয়ার কথা ... জিজ্ঞেস করলে আমায় 'जेवण कसे आहे' (খাবার ঠিক হয়েছে তো) বাঙালি উচ্চারণে মারাঠি বলি আমি... ছান কেলা তুমহি (খুব ভালো করেছো তুমি)।
অনেকটা রাত প্রায় জেগেই কাটিয়েছি... জঙ্গলের নৈঃশব্দ উপভোগ করছিলাম, ভোরের আলো ফোটার আগেই পাখিদের কলরব...রাজুদা বললে গুড মর্নিং করছে সমস্বরে। দরজা খুলে বাইরে আসি, টপ টপ করে জলের শব্দ গাছের পাতায়, জমির ঘাসগুলো ভিজে ভিজে আগায় শিশির বিন্দু... শশীনভাই বললেন 'ওস'...গাছের তলায় গিয়ে দাঁড়াই, শব্দটা বারবার কানে বাজছে ... রাজুদা বলল, 'দাদা শুনহ ক্যয়সে গুঞ্জ রহা হ্যয়... ওস কী বুন্দে।' বলি, 'সহি বোলে আপ।' শশীনভাই বলে ওঠেন লীলা সিনেমার জগজিৎ সিং… শুনেছো গানটা? উনি গুনগনিয়ে ওঠেন...
जाग के काटी सारी रैना
नैनों में कल ओस गिरी थी
जाग के काटी सारी रैना
(জাগ কে কাটী সারী র্যয়না
নয়নো মে কাল ওস গিরী থী
জাগ কে কাটী সারী র্যয়না)
(গুলজার সাহেব)
আকাশটা হাল্কা ফরসা হয়েছে ধনলাল এসে দাঁড়ায়, আজকের সারথি বোরকর... দুজনেই তৈরি। সামনের রাস্তার ধারে গাছগাছালির মাঝে একটা লালচে রঙের বিল্ডিং... জিজ্ঞেস করি ধনলালকে 'কেয়া হ্যয় ও'... 'মন্দির হ্যয় সাহাব'... বুঝি জঙ্গলের বিপদসঙ্কুল জীবনে উনি হয়ত রক্ষাকর্তা... মানুষের আস্হা ও বিশ্বাস। প্রকাশ বলল, 'মাথ্থা টেক লেতে।' আগে আগে ও হাঁটছিল... পেছনে আমরা তিনজন। লোহার গরাদের পেছনে পাথরের মূর্তি, সামনে লেখা হনুমান মন্দির, ফুল মালা প্রসাদ পূজারী কেউই নেই, ভক্তের ভগবান এখানে নিঃসঙ্গ, একাকী। চারটে লাইন মনে পড়ে, বলে উঠি...
सारी दुनिया का जो
मसीहा है...
आपने घर में वो
अकेला है...
(সারী দুনিয়া কা জো
মসীহা হ্যয়...
আপনে ঘর মে ওহ
আকেলা হ্যয়)
(রাজেশ জোহরী)
একটা বোর্ড লেখা রয়েছে...কোসোমতন্ডী, মুরপার, মঙ্গেঝরী, সাকোলি... সঙ্গে তীরচিহ্ন দিয়ে দিক নির্দেশ... ধনলাল, সারথি বোরকরকে নির্দেশ করল... प्रथम, साकोलीकडे जाणारा रस्ता घ्या काल रात्री दिसलेला बिबट्या आज दिसू शकतो.( প্রথমে সাকোলির দিকের রাস্তাটা নাও, কাল রাতে দেখা পাওয়া তেন্দুয়াটা আজ দেখা যেতে পারে।) ধনলালের কথা শেষ হয়েছে কি হয়নি দেখি বেশ কিছুটা দূরেই একটা লেপার্ড, চলার পথ জুড়ে মৃদুমন্দ গতিতে, আমরা গাড়ি সাইড করে ইঞ্জিন বন্ধ করি, কিন্তু পিছনে আসা অগুন্তি জিপসি আমাদের টপকে দাঁড়িয়ে পড়ে, আর তারপর সামনে থেকে আসা জিপসি, ক্যান্টার। বড় বড় লেন্স লাগানো ক্যামেরা হাতে ফটো শিকারিরা আর বেশ কিছু ট্যুরিস্ট জঙ্গলে জানোয়ার দেখে, উত্তেজিত, জিপসিতে বসে দাঁড়িয়ে, জিপসিগুলো এলোমেলোভাবে রাস্তা জুড়ে। চিতাবাঘটা রাস্তা ছেড়ে ডানদিকের ঘন বাঁশ বনের জঙ্গলটায় ঢুকে পড়ল, রাস্তা জুড়ে দাঁড়িয়ে থাকা জিপসিতে উৎসাহী জনগণের উঁকিঝুঁকি বাড়ল... আরোও কয়েকটা জিপসি এসে দাঁড়িয়ে পড়ার পর, চলার পথটা এবার পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেল... আমার মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল একটাই শব্দ... 'অবরোধ।' প্রকাশ আমার দিকে তাকিয়ে বললে...'मनजे'(এর মানে)। প্রকাশ তো এইদেশের লোক, অবরোধ কি জানে না... জানে না হঠাৎ হঠাৎ অবরোধ, বন্ধ, সবকিছু স্তব্ধ হওয়ার গল্পগুলো। বলি, 'পরে বলব সময় করে।'
অনেকটা সময় দাঁড়িয়ে আছি ভাবছি কখন যে রাস্তাটা পরিষ্কার হবে... ঠিক তখনি মনের মধ্যে কে যেন বলে উঠলো অধৈর্য হবেনা... তুমি তো জানো তোমার জীবনসফর তোমার জীবনপথ... আমি ঘাড় নাড়ি। কয়েকটা লাইন মনের মাঝে তখন -
चुम लेता हूँ
हर मुश्किलो को
मैं अपना मानकर
जिन्देगी कैसी भी है
आखिर है तो मेरी ही
(চুম লেতা হুঁ
হর মুস্কিলো কো
ম্যয় অপনা মানকর
জিন্দেগী কৈসী ভী হো
হ্যয়তো মেরী হী)
(হোয়াটস অ্যাপে পাওয়া)
ভোরের জঙ্গলের ভেতরে মনোরম পরিবেশে দাঁড়িয়ে থাকতে খুব যে খারাপ লাগছিল তা নয়, তবে সময় নষ্ট হচ্ছে এর জন্যে খারাপ লাগছিল। সূর্যের আলো গাছপালার ফাঁক দিয়ে চুঁইয়ে এসে পড়েছে রাস্তার ওপরে, লেপার্ডটা বনের আরও ভেতরে সরতেই রাস্তার অবরোধ উঠেছে, বেশ কিছু ময়ূর হরিণ, নীলগাই, সম্বর, হনুমান আর নানান পাখপাখালি, গাছপালার মাঝে ঘুরে বেড়াই জিপসিতে বসে... শীতের জঙ্গলের রূপ রস গন্ধে মোহিত হই, নৈশব্দতা ভেঙে কখনও পশুপাখিদের ডাকাডাকি। রাস্তার ধারেই একটা শুকনো গাছ, ঝরা পাতার ওপরেই গাড়ির চাকাটা গড়ায়, বোরকরকে বলি জরা রোকো... বন্ধ করো ইঞ্জিন। শীতের হাওয়ায় গাছের পাতা ঝরে পড়ছে,জঙ্গলের অসীম নৈঃশব্দ তার মাঝে সেই ঝরা পাতার শব্দ কানে আসছে... ফিসফিস করে বলে উঠি -
मैं पेड़ हूं हर रोज़ गिरते हैं पत्ते मेरे, फिर भी हवाओं से बदलते नहीं रिश्ते मेरे...
(ম্যয় পেড় হুঁ হর রোজ গিরতে হ্যয় পততে মেরে, ফিরভি হাওয়াওসে বদলতে নেহী রিস্তে মেরে।)
(হোয়াটস অ্যাপে পাওয়া)
সঙ্গীরা বলে ওঠে "কেয়াবাত দাদা।"
লগহাটের রাস্তায় জিপসিটা ঘোরায় মাডভী... ভাল্লুকের ডাকাডাকি কাল বিকেলে শুনেছিল সে, ওই কুয়োটার ধারে। কাল উঁকি মেরে দেখেছি বেশ বড় সেই কুয়োটা কালো টলটলে জল... বারান্দার নীচে দাঁড়িয়েছিল তুলসীরাম, জেনেছি আর তিনমাস বাকি আছে চাকরির, তারপর রিটায়ার করবে, বাড়ি জঙ্গল লাগোয়া গ্রামে, জঙ্গলকে ভালোবেসে এতোগুলো বছর... 'কী কাজ করো তুমি জঙ্গলে'... একবার মাটির দিকে তাকায় সে তারপর বললে 'জঙ্গলের সেবা', ট্রাক্টর আর জলের ট্যাঙ্ক নিয়ে আর্টিফিশিয়াল ওয়াটার পিটগুলোতে জল ভরে সে। জলই জীবন... সেই সব বইতে পড়া কথাগুলোর সদর্থক রূপকার আজ চোখের সামনে। শশীনভাই বলে ওঠেন... 'ভয় করেনি কোনোদিন তোমার... জন্তু জানোয়ারের আক্রমণ' ... 'নাহ', ও ঘাড় নাড়ে তারপর জড়ানো মারাঠি ভাষায় বলে, গাছের ডাল থেকে তেন্দুয়া ওর ট্র্যাক্টরের ছাতে লাফিয়েছিল একবারই। দেড়শোটা পিট আছে জঙ্গলের ভেতরে, সামনাসামনি হয়েছে তেন্দুয়া, ভাল্লুকের আর বাঘেরও, তবে কেউ কিছু বলেনি কোনওদিন।
জঙ্গলের গল্প শুরু করলে শেষ করা যায়না আর জঙ্গলের মানুষদের গল্প সে আমার কাছে বড় বিস্ময়ের, বড় আনন্দের ... পিটেঝরী গেটের বাইরে চায়ের দোকানের চম্পাবাঈ... চিনে রেখেছে আমায় একবার দেখেই... ফিকা চহা বানিয়ে দিল... (চিনি ছাড়া চা), ওর বদ্ধমূল ধারণা, আমি বনদফতরের লোক, তাডোবার জঙ্গলের বাঘ এখানে যে ছাড়া হতে পারে সেটা দেখাশুনা করতেই নাকি আমি আসি। গেটের বাইরে বেরিয়ে আজ যখন ওর চায়ের দোকানে বসেছি, আবার একবার পাশে এসে জিজ্ঞেস করল, 'সাহেব কবে ছাড়া হবে বাঘ।' বুঝতে পারি ওর মনের ইচ্ছেটা... জঙ্গলে বাঘ দেখা গেলে লোকজন বেশি আসবে, হয়ত এসে বসবে ওর দোকানে, বাড়বে বেচাকেনা।
একজন বসেছিলেন চায়ের গ্লাস হাতে, বাঘের কথা শুনে মুখ তুলে থাকালেন... চম্পাবাঈ পরিচয় করিয়ে দেয়... "মাস্টারজি"। পরিচয় বিনিময় হয়, জানতে পারি পিটেঝরী সরকারি স্কুলের শিক্ষক উনি, হরিশ কাভগাটে, সাইকেলে চেপে সকালে বিকেলে ঘুরে বেড়ান এই জঙ্গল ঘেরা পথে, নিত্যদিন... এখানেই ঘরবাড়ি ... বললেন, 'বাইশ বছর হয়ে গেল শহরে আর যাওয়া হয়নি'... আমি যোগ করি, 'প্রয়োজনই হয়নি হয়তো', উনি হাসেন।
গেটের পাশে রাখা ছিল ধনলালের সাইকেলটা... সেটা নিয়ে বাড়ি ফিরছিল… আমাদের সঙ্গে ছিল ও কয়েকটা দিন... গাইড হিসেবে ওর অভিজ্ঞতা যথেষ্ট প্রশংসার দাবি রাখে... রাজুদা চা খেতে ডাকল ওকে... শশীন ভাই জিজ্ঞেস করেন... बिबट्या इथेच आहे हे तुम्हाला कसे समजले... (তুমি কি করে বুঝলে যে তেন্দুয়াটা এই দিকেই রয়েছে)... ধনলাল একবার আকাশের দিকে তাকায় আর তারপর কিছু না বলে একমুখ হাসে। বুঝি ওর অনুভব অভিজ্ঞতা... সেটা হয়ত ভাষায় প্রকাশ করতে পারছেনা... ফিরাক গোরখপুরীর দুটো লাইন আমার বড় প্রিয় এখানে বসে সেটাই মনে পড়ল...
बहुत पहले से उन क़दमों की आहट जान लेते हैं
तुझे ऐ ज़िंदगी हम दूर से पहचान लेते हैं
(বহুৎ পহেলে সে উন কদমো কী আহট জান লেতে হ্যয়
তুঝে এ জিন্দেগী হম দূর সে পহেচান লেতে হ্যয়)
রোজ অবশ্য গাইডের কাজ জোটেনা... রোটেশন আসতে দিন তিনেক তো লাগেই, সামান্য জমি জমা আছে, চাষ আবাদই মূল জীবিকা বলেছিল সে আগেই... হাসছিল ধনলাল ... হাত তুলে বিদায় জানায়, আবার হয়ত কেউ জঙ্গলে এলে যখন তার ডাক আসবে ও, আবার বুঝতে পারবে আহট... মৃদু শব্দ পদচারণার।
অল্প দূরে একদল কচিকাঁচা, জঙ্গলের আশেপাশে পড়ে থাকা কাগজ, প্ল্যাসটিক বোতল তুলে বস্তায় ভরছে কয়েকজন, একটা হাতঠেলা নিয়ে আরো দুজন অল্পবয়সী... পাশে একজন মাঝবয়সী মানুষ, মাথায় টুপি, চোখে চশমা, হাত ভরতি খালি মদের বোতল, বিয়ারের ক্যান... কুড়িয়ে বস্তায় ফেললেন। আমরা তাকিয়ে ছিলাম, মাস্টারজি বললেন 'এনাকে চেনেন তো... কিরণ পুরন্দরে সাহেব।'
"নাগজিরা এক প্রেম কথা"... ইউটিউবে ওঁর ভিডিও দেখেছিলাম, একটানা চারশো দিন নাগজিরার জঙ্গলে কাটিয়েছেন... হাতের তালুর মতো চেনেন এই জায়গাটা... পক্ষীমিত্র বলেই এখানে ওঁকে চেনেন সবাই। ছুটে যাই পরিচয় করি একটা ছবি তুলি একসঙ্গে অনুমতি নিয়ে... সামান্য আলাপচারিতা, বললেন, 'পুণের সবকিছু ছেড়েছুড়ে স্বামী স্ত্রী এখন পিটেঝরীতেই', জঙ্গলকে ভালোবেসে, গ্রামের ছেলেমেয়েদের প্রকৃতিপাঠে ব্যস্ত রেখেছেন, শেখাতে চেষ্টা করছেন যে জঙ্গল বাঁচলে তবেই মানুষ বাঁচবে।
প্রকাশ আর একবার পিটেঝরী গেটের দিকে যায়, পূজা ম্যাডামকে 'বাই' বলে আসি বলে। যাওয়ার সময় আলাপ হয়েছিল, সঙ্গে বন দফতরের কর্মী, নান্দেড়ে বাড়ি, এতো কঠিন পদবী উচ্চারণ করতে পারিনি, মনে আছে আমার। অনেকটা সময় নিচ্ছে প্রকাশ, তারপর দেখি লাফাতে লাফাতে বেরিয়েছে সে, মুখ দেখে মনে হচ্ছে লটারি জিতেছে। বলল, 'জেনে এসেছি 1st bird survey at Nawegaon-Nagzira Tiger Reserve, From 20 Jan 2023 to 23 Jan 2023, এই দেখো ফর্ম', তারপর বললে 'চলো নাম দিয়ে দি ফর্মটা ভরে ফেলি।' শশীনভাই চোখ বুলিয়ে দেখে বলেন, এলিজিবিলিটি ক্রাইটেরিয়াতে পাশ মার্ক জুটবে না... তারপর পড়ে শোনান…নাহ এজন্মে আর হলনা... রাজুদা ঘাড় নেড়ে বলে সামনের মাসে আমার বাষট্টি হবে। প্রকাশের মুখের দিকে তাকাই আমাদের দলে বয়সে সবচেয়ে ছোট ও... ওকে সান্ত্বনা দিয়ে বলি...
आहिस्ता - आहिस्ता बढ़ रही हैं
चेहरे की लकीरें...
शयद नादानी और तजुर्बे में
बंढवारा हो रहा है...
(আহিস্তা- আহিস্তা বড় রহী হ্যয়
চেহরে কী লকীরে
শায়দ নাদানী ঔর তজূর্বে মে
বাটোয়ারা হো রহা হ্যয়।)
(গুলজার সাহেব)
একটা জিপসি গেটের বাইরে বের হয়। একদল মানুষ নামেন... স্ত্রী পুরুষ... চম্পাবাঈকে চা দিতে বলেন। মুখটা চেনা চেনা... ইনিই কালকে আমায় জিজ্ঞেস করেছিলেন, 'কোঈ লাক'... এবার আমার পালা, পালটা প্রশ্ন করি, 'কোঈ লাক'... ভদ্রলোককে বলতে না দিয়ে পাশের মাঝবয়সী মহিলা বলে ওঠেন হাত পা নেড়ে , খুবই উত্তেজিত হয়ে... मी एक बिबट्या पाहिला आहे, आज मी पहिल्यांदाच जंगलात आलो आहे... বুঝি উনি তেন্দুয়া দেখেছেন প্রথমবার কেনো জঙ্গলে এসেছেন সেটা জানাতে ভোলেননা। ভদ্রলোক পরিচয় করান – 'মেরি আক্কড় সাস।' শুনে আমার আক্কেল গুড়ুম। প্রকাশ উদ্ধার করে, বলে মিসেসের বড়ো বোনকে বলে... আক্কড় সাস।
এবার ফেরার পালা... কোনও জায়গা ছেড়ে আসতে একটু মন খারাপ লাগে, ওই পিছুটান... প্রকাশ বলল, 'পতঝড় কে মৌসম মে চলতে হ্যয় দাদা... পান্না টাইগার রিজার্ভ'…
গুগলে সার্চ করে রাজুদা তারপর বলে, 'পান্না সির্ফ দশ ঘন্টেকা জার্ণি... করীব করীব পানসো কিমি... লম্বা দূরী থোড়ি না হ্যয়।'
আমি ঘাড় নাড়ি, এবার মনটা খুশি খুশি...
গেয়ে উঠি...
मुझे आवाज़ देती है हवाएं जंगलों की रे...
বাকিরা গলা মেলায় -
मुझे आवाज़ देती है हवाएं जंगलों की रे
जंगल मांगे धूप पानी
धूप पानी बहने दे...
(মুঝে আওয়াজ দেতী হাওয়ায়ে
জঙ্গলো কী রে
মুঝে আওয়াজ দেতী হাওয়ায়ে
জঙ্গলো কী রে
জঙ্গল মাঙ্গে ধূপ পানি
ধূপ পানি বহেনে দে...)
(গুলজার সাহেব)
প্রকাশ বলে ওঠে..."No road is too long when you have good company"।
গিয়ার বদলে অ্যাক্সিলেটরে চাপ দেন শশীনভাই, গাড়ি ছুটতে থাকে ফেরার পথে।
দেব মুখার্জি চন্দননগরের, কর্মসূত্রে এখন তিনি প্রবাসী। ভ্রমণ তাঁর পেশার অন্তর্গত, নেশাও বটে। দীর্ঘসময় ধরে কাজে অকাজে ঘুরে বেড়িয়ে, সেই পথ চলার কিছু কথা, অল্পকিছু বছর আগে শখ করেই লিখেছিলেন ফেসবুকে। মাঝেমধ্যে কোনো লিটল ম্যাগাজিন বা ই-বুক অথবা কোনও সংকলনে কিছু লেখা ছাপাও হয়েছিল। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে একটি গল্পসংকলন 'পাড়ি'। 'আমাদের ছুটি'-র জন্য কলম ধরলেন এই প্রথম।