বৈচিত্র্যময় সিসিলিতে
শ্রাবণী ব্যানার্জী
ইতালির ম্যাপটা দেখলে মনে হয় – একটি বুটজুতো যেন উপেক্ষা ভরে এক ত্রিকোণ পাথরকে পদাঘাতে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন, সেই তিনকোণা জায়গাটিই আজকের সিসিলি। সবদিক থেকেই এরা যেন সত্যিই দূরে সরে আছে, তাই ইতালিতে থেকেও এরা স্বতন্ত্র। বহু যুগ ধরে নানা জাতি, নানা ভাষা ও নানা ধর্মের সংমিশ্রণে এটি একটি নজিরবিহীন স্থানে পরিণত হয়েছে। বহুবার ইতালি সফরে গেলেও সিসিলি আমার কাছে অধরাই ছিল তাই কয়েক বছর আগে সেদিকেই রওনা হয়েছিলাম।
কয়েক হাজার বছর পেছিয়ে গেলে হয়তো এই সাড়ে বত্রিশ ভাজা দেশটিকে বুঝতে একটু সুবিধা হবে। প্রায় সাতাশশো বছর আগে গ্রিকরা এই সিসিলিতে কলোনি স্থাপন করে আর সেইসূত্রেই জগৎবিখ্যাত গণিতজ্ঞ ও বৈজ্ঞানিক আর্কিমিডিস এখানেই জন্ম গ্রহণ করেন। তারও অনেক আগে পিথাগোরাস-এর মত দার্শনিক ও গণিতজ্ঞ যিনি পিথাগোরিয়ান থিওরেম-এর জন্য খ্যাত, তিনিও এই সিসিলিকেই তার কর্মস্থান হিসাবে বেছে নেন। তারপর প্রাচীন ফোনেসিয়ান (লেবানন) ও কার্থেজ যা কিনা আজকের টিউনেশিয়া তাদের হাত ঘুরে এ দেশটি চলে আসে রোমানদের আওতায়। রোম সাম্রাজ্য পতনের পর বাইজানটাইন বা পূর্ব রোম সাম্রাজ্য কনস্টানটিনোপল থেকে এসে এটিকে দখল করে নেয়। তারপর আসে আরব মুসলমানরা। তারাও বহু বছর রাজত্ব করার পর একে একে নর্মান (আজকের নরওয়ে, ডেনমার্ক) জার্মান, ফ্রেঞ্চ, স্প্যানিশদের হাত ঘুরে আঠারোশো ষাট সালে গ্যারিবল্ডির দাপটে আজকের এই স্বয়ং শাসিত দেশটি ইতালির আওতায় আসে।
রাজধানী পালারমো-তে পা দেওয়ার সঙ্গেসঙ্গেই বুঝলাম এটি একটি খিচুড়ি দেশ। বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন সময় রাজত্ব করায় সব কিছু মিলিয়ে এদের একটি নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে পালারমোতে রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ফ্রেডরিক-এর দরবারে পৃথিবীবিখ্যাত চোদ্দ মাত্রা 'সনেট'-এর জন্ম হয় কারণ বড় বড় কবিতা শোনার ধৈর্য নাকি ওঁর ছিল না। বাংলাদেশিরা এ তল্লাটে রাজত্ব না চালালেও এখন তাঁদের দাপটও কিছুমাত্র কম নয়। হকার ছাড়াও এখানে দেখলাম বিভিন্ন রেস্টুরেন্টের গায়ে বাংলায় লেখা আছে – এখানে মাছের ঝোল ভাত পাওয়া যায়। একজন বাংলাদেশিকে জিজ্ঞাসা করে জানলাম শুধু পালারমোতেই নাকি দশ হাজার বাংলাদেশি থাকেন আর তাঁদের ছেলেমেয়েদের জন্য বাংলা স্কুলও আছে। চারিদিকে এঁদের রমরমা দেখে মনে হল কে জানে আর কিছু বছর পর হয়তো এই দেশটির ভাষার খিচুড়ির সঙ্গে আর এক নতুন উপাদান বাংলাও যুক্ত হয়ে যাবে। তবে তাই বা খারাপ কি বলুন, কথাতেই তো আছে – অধিকন্তু ন দোষায়।
দেশটি মাফিয়াদেরও পীঠস্থান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মিত্রপক্ষ ইতালির বিরূদ্ধে যাওয়ার জন্য এই গুণ্ডা মাফিয়াদের সহায়তা নিতে বাধ্য হয় আর তারপর দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর ধরে তারা ফুর্তির সাথে কোকেন হেরোইনের ব্যবসা চালাতে থাকে। ঝামেলা হয় যখন টুরিস্টরা 'গড ফাদার' সিনেমাটি দর্শন করে মনে করেন নেপলস বা সিসিলিতে গেলে ওঁদের হোটেলের বিছানাতেই বোধহয় কেউ ঘোড়ার কাটা মুন্ডু রেখে যাবে। অনেকে আবার জিজ্ঞাসা করে বসেন – আচ্ছা ঠিক কোথায় গেলে ওই বদমাইশ মাফিয়াগুলোর দর্শন পাব বলুন তো? কী জ্বালা! এই মাফিয়াদের তো রাবণের মত কোনও বাড়তি মাথা নেই যে দেখলেই বুঝবেন। রেস্টুরেন্টে আপনার পাশে বসেই হয়তো কোনও মাফিয়া গ্যাং-এর লোক আরাম করে খাচ্ছে আর আপনি তাকেই জিজ্ঞাসা করে বসলেন – একটু মাফিয়াদের দেখিয়ে দিতে পারেন? যেমন আমি ছোটোবেলায় মাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম – মা চোর কেমন দেখতে হয় একটু বলবে?
পালারমো জায়গাটিতে মস্ক, প্যালেস, ক্যাথিড্রাল প্রায় সবাই হাত ধরাধরি করেই চলাফেরা করে। হাল্কা বাদামি রংয়ের বিরাট ক্যাথিড্রালটা বাইরে থেকেই তার অপূর্ব আর্চ, উত্তর আফ্রিকা থেকে আগত ম্যুরিশদের অসাধারণ জ্যামিতিক নকশা ও ক্লক টাওয়ার নিয়ে এতটাই সুন্দর যে মনে হল এখানেই কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকি। ভেতরে ঢুকে দেখলাম সোনালি রঙের অসাধারণ সব শিল্পকর্ম, মোজাইক, ভাস্কর্য, কোষাগার আর ঝকঝকে রত্ন সম্ভার নিয়ে সেও এককথায় বড় সুন্দর। বাইজানটাইন ও মুসলমানদের মিলিত প্রভাব থাকায় এটাও এক ইউনেস্কো হেরিটেজ সাইট।
নর্মান প্যালেসে ঢুকে বুঝলাম সেটাও কম চমকপ্রদ নয়। হাজার বাহাত্তর অর্থাৎ ইংল্যান্ড জয় করার মাত্র ছবছর পরেই উত্তর ইউরোপ থেকে আগত নর্মানরা সিসিলি দখল করে নেয়। প্যালেসের থেকেও চোখ কাড়ল তার গায়ে লাগানো প্যালাটাইন চ্যাপেল। বাইজান্টাইন, নর্মান ও উত্তর আফ্রিকা থেকে আসা ইসলামিক ফতিমিড অর্থাৎ এই ত্রিসংস্কৃতির সংমিশ্রণে যা তৈরি হয়েছে তা নিঃসন্দেহে নজর কাড়ার মতো। মোজাইক, চারিদিকে কারুকার্যময় সূক্ষ্ম কাঠের কাজ, যিশু-সহ প্রতিটি দেয়ালে সোনালি পেইন্টিং আর সবথেকে আকর্ষণীয় মুসলমানদের তৈরি ধনুকাকৃতি ছাদে হানিকম্ব বা মৌচাকের মত দেখতে মুকার্নাস। নর্মান রাজাদের সব জাত ধর্মের প্রতি সহনশীলতার এ যেন এক চমৎকার নিদর্শন। এই দেশে এসে বুঝেছিলাম খিচুড়ি সংস্কৃতিও কিছুমাত্র কম আকর্ষণীয় নয়।
একসময় হাঁটতে হাঁটতে পৌছে গেলাম পালেরমোর ঐতিহাসিক কেন্দ্রবিন্দু 'কোয়ারতোকান্তিতে' যা কিনা বাংলায় চার মাথার মোড়। সেখানেও দেখলাম দুধারের বাড়ির জানলাগুলো মূর্তি দিয়ে সাজানো। এর পাশেই পিয়াজা প্রেতোরিয়া যার মধ্যখানে ফোয়ারা আর চারিদিকে প্রায় ষোলোটা মার্বেলের স্ট্যাচু নিয়ে সেও এক বিরাট চত্ত্বর। তার মধ্যে গ্রিক মিথলজি অর্থাৎ তাদের দেবতা আপোলো, পোসাইডন ও জিউস যা কিনা আমাদের সূর্য, বরুণ ও ইন্দ্র তাঁদের মূর্তিগুলো চিনতে কোনও অসুবিধাই হল না। পালেরমো স্ট্রিটফুডের খুব নাম শুনেছিলাম কিন্তু সন্ধ্যাবেলায় গিয়ে বিভিন্ন জানোয়ারের মুন্ডু থেকে হৃৎপিন্ড ও পিলে স্যান্ডউইচের সম্ভার দেখে সব খিদে কর্পূরের মতই উবে গেল। তার থেকে বেজায় মোটা চতুষ্কোণ সিসিলিয়ান পিৎজা ঢের বেশি নিরাপদ। তাছাড়া এদেশের স্পেশ্যালিটি ভেতরে কুচো মাংস দেওয়া বোমার সাইজের ভাতের গোলা ভাজা 'আরাণচিনি' যদি পেটে কয়েকটা চালান করে দিতে পারেন তাহলে একেবারে বহুক্ষণের জন্য খিদের হাত থেকে নিশ্চিন্ত। সিসিলিয়ান খাবারগুলোও আরবি, মেডিটেরেনিয়ন আর আফ্রিকানের সংমিশ্রণে বহুদিন ধরেই ফিউশন। বহু খাবারেই বেগুনভাজার ছড়াছড়ি যেমন 'কাপানাতা' খেয়ে দেখলাম গোল গোল করে কাটা বেগুনভাজার সঙ্গে আরও কিছু সবজি আর লতাপাতা দিয়ে ওপরে কিছুটা মিষ্টি সস ছড়িয়ে দিয়েছে। পাশে তাকিয়ে দেখি একজন পাস্তার ওপরেও বেগুন ভাজা ছড়িয়ে খাচ্ছেন।
বিকেলে রাস্তার ধারে দেখবেন লোকজন বিয়ারের সাথে 'পানেলে' অর্থাৎ ছোলা আর ময়দা দিয়ে মাখা ভাজা কাটলেট জাতীয় কিছু একটা খেয়ে যাচ্ছে। সিসিলির আবিষ্কার 'কেনোলি' যা কিনা ভেতরে ক্রিমঢোকানো পাইপের মত পেস্ট্রি তারও আবার বাইরেটা ভাজা। প্রখর হজমশক্তি থাকলে ভাজা খাবার দিব্যি মুচমুচে ও উপাদেয় লাগে আর এব্যাপারে গুজরাটিরাও সিসিলিয়ানদের কাছে কিঞ্চিৎ শিক্ষা লাভ করতে পারে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। আশ্চর্যের ব্যাপার এসব খেয়েও এরা কিন্তু কেউ মোটা নয় হয়তোবা সেটা সারাদিন উঁচু নিচু পাহাড়ি রাস্তায় হাঁটাচলা করার ফল। আমাদের হোটেলটা পিয়াজা ভার্গয়েব-এর পাশেই থাকায় ইতালির সবথেকে বড় 'মাসিমো' অপেরা হাউজটিকেও দেখতে পেলাম। বিশাল চত্ত্বরটিতে লোকজন ফুর্তিতে খাওয়াদাওয়া করছে আর বাংলাদেশি হকাররা খেলনা থেকে বেলুন ফানুস সবই বিক্রি করে যাচ্ছে। এসব তল্লাটে বাংলায় ঝগড়া করা কিন্তু আদৌ সুবিধার নয়, বরং ইংরাজি ঢের বেশি নিরাপদ।
পালেরমোর শহুরে পরিবেশ থেকে বেরিয়ে আমরা পরেরদিন একসময় চলে গিয়েছিলাম 'মনরিআলে' আর 'চেফালু'-তে কারণ গন্তব্যস্থানগুলো কাছেই থাকায় বাসে করে পৌঁছে যাওয়া যায়। বারোশো খ্রিস্টাব্দে নর্মান রাজা দ্বিতীয় উইলিয়াম-এর উদ্যোগে তৈরি ক্যাথিড্রালটিতে ঢুকে মনে হল সৌন্দর্যে এ যেন তার ঠাকুর্দা (যিনি পালেরমো ক্যাথিড্রাল করেছিলেন) তাকেও ছাড়িয়ে গেছে। এদেশে এরকম এত ইউনেস্কো হেরিটেজ সাইট আছে যে আলাদা করে হয়তো সত্যিই বলার কিছু নেই। ভেতরে সারা দেয়াল জুড়ে সোনালি মোজাইক আর অপূর্ব সুন্দর যিশুকে দেখে মনটা যেন ভরে গেল। পুরো ডিজাইনটাই মুসলমান আর্কিটেক্টকে দিয়ে করানোর ফলে ভেতরের ফোয়ারা থেকে সুন্দর স্তম্ভ দিয়ে ঘেরা আঙিনা, সবেতেই ইসলামিক ছাপ খুব স্পষ্ট।
পরেরদিন সকালে দিনকয়েকের জন্য একটি গাড়ি ভাড়া করা হল যাতে সিসিলিতে আমাদের পছন্দমতো জায়গাগুলোতে ঘুরতে পারি। একঘন্টা চালিয়ে যাওয়া হল আড়াই হাজার বছরের পুরোনো ডরিক ধাঁচে গ্রিকদের তৈরি 'সেজেশতা টেম্পল' দেখতে। খাড়া টিলাতে উঠতে গিয়ে বেশ একটু হাঁপিয়ে গেলাম, কাছে গিয়ে বুঝলাম কোনও কারণে এরা মন্দিরের ভেতরটি কোনোদিনই শেষ করেনি যদিও বাইরেটা সুন্দরভাবেই রাখা আছে। রুক্ষ শুষ্ক জায়গা তবু তারও একটা সৌন্দর্য আছে।
গ্রিকরা অবশ্য প্রায় সব মন্দিরই উচ্চস্থান দেখে করত যাতে লোকজনকে হাঁপাতে হাঁপাতে রীতিমতো কষ্ট করেই ভগবানের দর্শন পেতে হয় – ভগবানরা খুব সহজলভ্য হয়ে গেলে আমজনতার কাছে তাঁদের বিশেষ মূল্য থাকে না।
'সেজেশতা' থেকে আরও প্রায় ঘন্টা দেড়েক গাড়ি চালিয়ে পৌঁছে গেলাম সিসিলির দক্ষিণে 'এগ্রিজেনতো'-র ভ্যালি অফ টেম্পল-এ অর্থাৎ আড়াই হাজার বছরের পুরোনো মন্দির উপত্যকায়। এ যেন আমার কাছে এক বিস্ময়! টেম্পল অফ জিউস, মাউন্ট অলিম্পাস-এর রানি 'হেরা'বা শক্তিশালী 'হারকিউলিস'-এর মন্দিরগুলি অনেকটা নষ্ট হয়ে গেলেও 'কনকরডিয়া'মন্দিরটি এতটাই সুন্দর রয়েছে যে দেখে মনেই হয় না এর বয়েস আড়াই হাজার বছর। এ তল্লাটের লোকজন প্রাচীন কার্থেজ অর্থাৎ উত্তর আফ্রিকার টিউনেশিয়ার সৈন্যদের হারিয়ে এই সুন্দর মন্দিরটি তৈরি করে। গ্রিসে দেখেছি সব মন্দির বা ঐতিহাসিক জায়গাই হয় ভূমিকম্প নয়তো বা বহিরাগতদের আক্রমণে প্রায় ধ্বংসস্তূপ, তাই এদেশে এই সুন্দরভাবে সংরক্ষিত মন্দিরটি দেখলে সত্যিই যেন চোখ জুড়িয়ে যায়। নববিবাহিতরা দেখলাম মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন কায়দায় সব ছবি তুলছে। সে রাতটা এখানকার হোটেলেই কাটিয়ে দিলাম আর দূরে থাকলেও উঁচুতে আলো দিয়ে সাজানো সুন্দর মন্দিরটি যেন আমাদের সঙ্গেই রয়ে গেল।
পরেরদিন সকালে উঠে চলে গেলাম পিয়াজা আর্মেনিয়াতে। এখানকার প্রধান আকর্ষণ সতেরোশো বছরের পুরোনো একটি রোমান ভিলা। এই সাড়ে তিন হাজার স্কোয়ার মিটার জুড়ে ভিলাটি নি:সন্দেহে কোনও অভিজাত পরিবারের বাসস্থান ছিল কিন্তু সব থেকে নজর কাড়ে সারা মেঝে জুড়ে অসাধারণ মোজাইকের কাজ। বারোশো শতকে পাহাড় থেকে ধ্বস নেমে পুরো ভিলাটাই মাটির তলায় চাপা পড়ে যায়, বছর পঞ্চাশ আগে যখন মাটি খুঁড়ে এটিকে বার করা হয়, লোকজন এই অসাধারণ সংরক্ষিত মোজাইক দেখে তাজ্জব হয়ে যায়।
কাঠের পাটাতন দিয়ে উঠে বিরাট হলঘরের মেঝেটার দিকে তাকিয়ে মনে হল কী ভাগ্যিস মাটির তলায় চাপা পড়ে ছিল তাই তো এত সুন্দরভাবে সংরক্ষিত আছে। কোথাও দেখলাম লোকজন শিকার করতে যাচ্ছে, কোথাওবা যুদ্ধক্ষেত্রে বিভিন্ন মানুষের ভাবভঙ্গি আর কোথাও বিকিনি পরা সুন্দরীদের খেলা। ছোট ছোট পাথর দিয়ে মেঝেটিতে বসানো বিভিন্ন বিকিনির ডিজাইনও কিন্তু চোখে পড়ার মত, অনেকক্ষেত্রে আধুনিক যুগের বাড়া।
মধ্যিখানের উঠোনে সুন্দর কারুকার্যময় ফোয়ারা, অপূর্ব মোজাইক ও রোমান বাথ নিয়ে এই সতেরোশো বছরের পুরোনো ভিলাটি দেখলে রোমানরা যে কতটা সৌন্দর্যপ্রিয় জাত ছিল সেটা নতুন করে বলে দিতে হয় না।
এখান থেকে 'রাগুসা' আর 'নোটো' নামক দুটো জায়গায় কয়েকঘণ্টা থেমে রাতে পৌঁছে গিয়েছিলাম সাইরাকিউস আর তার গা ঘেঁষে ছোট্ট দ্বীপ 'ওরটিজিয়া' – সেখানেই ছিল আমাদের হোটেল। 'রাগুসা'-র পাথুরে রাস্তা আর আশপাশ দেখে মনে হল এরা যেন সেই মধ্যযুগীয় সময়েই থেমে আছে অবশ্য তার আকর্ষণও কিছুমাত্র কম নয়। যারা বারোক স্টাইল দেখতে ভালবাসেন, তারা এখানকার 'সানজর্জিও ডুওমো'টা দেখলে দারুণ খুশি হবেন। 'নোটো'-তে পৌঁছতে সন্ধ্যা হয়ে গেল, চারিদিকে হাল্কা নীল রংয়ের আলোতে সাজানো জায়গাটিতে ঢুকে মনে হল যেন কোনও স্বপ্নপুরীর দেশ। সব থেকে চোখ কাড়ে বারোক স্টাইলের চার্চ আর পাথরে বাঁধানো রাস্তাগুলির ধারে ধারে আর্টিস্টদের তৈরি অসাধারণ ছবির পসরা।
চারশো বছর আগে ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে গেলে জায়গাটিকে আবার নতুন করে সাজানো হয়। হালকা রংয়ের চুনা পাথরের তৈরি পিয়াজা দুসেজিওতে দাঁড়ালে চোখে পড়ে আলোয় ঘেরা টাউনহল আর বিশপ প্যালেস।
রাতে সেজে ওঠা সুন্দর স্থাপত্যশিল্প মোহিত হয়ে দেখতে দেখতে কেন জানি না হঠাৎ করেই বেজায় খিদে পেয়ে গেল। কালবিলম্ব না করে একটি পিৎজার দোকানে ঢুকে খুব তাড়াতাড়ি দাও বোঝাতে প্রতিটি ইংরাজি শব্দের পেছনে ওকার যোগ করে – ক্যুইকো, প্রমতো, স্পিডো, ফাস্টো প্রভৃতি প্রচন্ড বেগে আউড়ে গেলাম। লোকটা আমার ইতালিয়ানের বহর দেখে অত্যন্ত নার্ভাস হয়ে 'নো প্রব্লেমো' বলে একটি তৈরি পিৎজাই হাতে ধরিয়ে দিল। খাওয়া সেরে আরও আধঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে সে রাতেই ওরতিজিয়া পৌঁছে গেলাম।
দুহাজার সাতশো বছর আগে সাইরাকিউস ও তার সংলগ্ন ছোট্ট দ্বীপ ওরতিজিয়া ছিল এক অসাধারণ গ্রিক কলোনি। রোমান রাষ্ট্রনায়ক ও দার্শনিক সিসেরো-র 'The biggest and most beautiful of all Greek cities' – উক্তিটা এতো বছর পরেও একইভাবে খাটে। একাধারে আড়াই হাজার বছরের পুরোনো গ্রীক থিয়েটার, গ্রীক দেবতা আপেলো ও মিনার্ভার টেম্পল, সুন্দর সাজানো মধ্যযুগীয় চার্চ, পাহাড়, নীল সমুদ্র ও দুর্গ নিয়ে আজও জায়গাটা ভারী সুন্দর। রাতে সাদা পাথরের রাস্তায় হাল্কা হলুদ আলোর ছটায় আড়াই হাজার বছরের পুরোনো পিয়াজা ডুওমোতে দাঁড়ালে মনটা যেন এক অন্য জগতে চলে যায়। লোকজন দেখলাম হালকা আলোয় রাস্তাতেই খাওয়াদাওয়া করছে।
এখানে রয়েছে এক অপূর্ব সুন্দর ক্যাথিড্রাল যা কিনা একদা গ্রিক দেবী এথেনার মন্দিরের ওপরেই তৈরি করা হয়েছিল। ভালো করে তাকিয়ে দেখলে আশেপাশে এখনও সেই আড়াই হাজার বছরের পুরোনো গ্রীক ডরিক স্তম্ভগুলো দেখতে পাওয়া যায়। বারোশো বছর আগে তখনকার শাসক বাইজানটাইনরা আরব আক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে সাগরের ধার দিয়ে একটি বিশাল দুর্গ বানায় যা কিনা আজও একইভাবে সূর্যের আলোয় ঝলমল করে ওঠে। তাকিয়ে দেখলাম নীল স্বচ্ছ সমুদ্রের জলে মাছ ও মানুষ উভয়েই সাঁতার কেটে যাচ্ছে।
আমাদের হোটেলটা ছিল আর্কেমিডিস স্কোয়ারের ওপরেই, বারান্দা থেকেই দেখতে পেলাম ফোয়ারাসহ অপূর্ব সুন্দর রোমান দেবতা ডায়ানার মূর্তি। ঐতিহাসিকরা মনে করেন এরই আশেপাশে সেই অসাধারণ পন্ডিত আর্কিমিডিস থাকতেন। মনে হল রাস্তা থেকে যদি তেইশশো বছর আগের ওঁর পায়ের ধুলো সনাক্ত করতে পারতাম তাহলে অবশ্যই মাথায় ঠেকিয়ে নিতাম। এত বছর পরেও আমরা আধুনিক পুলি, ওডোমিটার, মাটি থেকে পেঁচিয়ে জল তোলা অর্থাৎ আর্কিমিডিস স্ক্রু ব্যাবহার করে থাকি। ছোটোবেলায় একটা গল্প শুনে খুব মজা পেতাম – একবার এখানকার রাজা হিয়েরো নাকি স্যাকরাকে দিয়ে সোনার মুকুট বানিয়ে আর্কিমিডিসকে বলেছিলেন – এই মুকুটটা না ভেঙে কি বলতে পারবে স্যাকরা সোনার সঙ্গে আর কিছু মিশিয়ে আমায় ঠকিয়েছে কিনা? সেদিন আর্কিমিডিস্ বাড়িতে এসে যখন বাথটবে স্নান করতে নামলেন তখন দেখলেন কিছুটা জল বাইরে ছলকে পড়ল। উনি সেই অবস্থাতেই 'ইউরেকা ইউরেকা' অর্থাৎ পেয়েছি পেয়েছি বলে চেঁচাতে চেঁচাতে রাজাকে গিয়ে বললেন – মুকুটকে একটা পাত্রে ডুবিয়ে কতখানি জল উছলে পড়ে সেটা মাপতে হবে আর ঠিক ততখানি ওজনের একতাল সোনা গামলায় ফেলে দেখতে হবে দুটো থেকে একই পরিমাণ জল উছলে পড়ে কিনা। যদি মুকুট খাঁটি সোনার হয় তাহলে দুবারই একই পরিমাণ জল বের হবে আর খাদ মেশানো থাকলে মুকুটটা আয়তনে একটু বড় হবে তাই বেশি জল ফেলে দেবে। আজ যা কিনা 'আর্কিমিডিস প্রিন্সিপল' নামে খ্যাত।
যতদিন তিনি বেঁচে ছিলেন ততদিন রোমানরা ভয়ে সাইরাকিউস আক্রমণ করতে সাহস পায়নি। দুবার যুদ্ধ করতে এসে ধারে কাছে কোনও সৈন্য না দেখে রোমানরা ভেবেছিল তাদের ভয়েই বোধহয় ব্যাটারা পালিয়েছে, যদিও তারা বাস্তবে আর্কিমিডিস-এর নির্দেশই অনুসরণ করছিল। চারিদিকে উঁচু টিলাতে ঘেরা সমুদ্রের সাথে যুক্ত সেই কোটরটিতে একবার শত্রু জাহাজ ঢুকে পড়লে বাছাধনদের আর ঘুরে পালানোর রাস্তা থাকবে না। শোনা যায় আর্কিমিডিস নাকি তখন ইউরিয়ালো দুর্গ থেকে আয়না ফেলে অর্থাৎ অনেকখানি সূর্যের আলো অল্প জায়গায় ধরে সবকটা জাহাজকেই পুড়িয়ে দিয়েছিলেন। সেই আড়াই হাজার বছরের পুরোনো দুর্গটাতে উঠেছিলাম যা কিনা আজও কিছুটা অক্ষত আছে আর সেখানে থেকে নিচে জলের দিকে তাকিয়ে সত্যিই তাজ্জব হয়ে গিয়েছিলাম। আয়না লাগানোর মোক্ষম জায়গা বটে। একবার এই কোটরে ঢুকে পড়লে অতগুলো জাহাজের পক্ষে ঘুরে সমুদ্রে ফিরে যাওয়া সম্ভব ছিল না কারণ সে যুগে ব্যাক গিয়ার ছিল না। একবার আর্কিমিডিস ক্রেনের সঙ্গে পেল্লাই বড় সাঁড়াশি জাতীয় কিছু লাগিয়ে শত্রুদের জাহাজগুলোকে উল্টে আছড়ে দিলেন যাকে আর্কিমিডিস ক্ল বা থাবা বলা হয়। এসব ভুতুড়ে কান্ডকারখানা দেখে রোমানদের ধারণা হয়ে গেল আর্কিমিডিস বেঁচে থাকতে তাদের পক্ষে সাইরাকিউস জয় করা সম্ভব নয়, তাই তারা নগরটিতে খাবার ও জল সরবরাহের রাস্তাগুলো বন্ধ করে দেয়। তিনবছর ধরে চলতে থাকা সেই অবরোধের পর খাবার ফুরিয়ে গেলে সাইরাকিউস যখন হার মানতে বাধ্য হল, রোমানরা পুরো নগরটিকেই লুট করে নিল। শোনা যায় রোমান জেনারেল মার্সেলস নাকি সৈন্যদের বারবার বলে দিয়েছিলেন তারা আর যাই করুক আর্কিমিডিস-এর যেন কোনও ক্ষতি না করে কারণ 'বিদ্বান সর্বত্র পূজ্যতে'। সৈন্যরা সেই অসাধারণ মানুষটিকে চিনতে না পেরে তরবারির এক আঘাতে তার মাথাটাই কেটে দিল। আর্কিমিডিস-এর সমাধি দেখতে গিয়েছিলাম যদিও ভেতরে মুন্ডুবিহীন ধড়ের হাড়গোড়গুলো আদৌ আর্কিমিডিস-এর কিনা সে ব্যাপারে অনেকেরই সন্দেহ আছে (আমাদের দেশের কনিষ্ক অবশ্য বিনা মাথাতেই দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছেন)।
সিসিলিতে থাকাকালীন আমাদের শেষ কয়েকটা গন্তব্যস্থল ছিল মাউন্ট এটনা, টাওরমিনা আর সাভোকা। সিসিলি এতটাই ছোট যে এক-দেড় ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে এক দ্রষ্টব্য স্থান থেকে আর একটিতে অতি অনায়াসে পৌছে যাওয়া যায় – কখনও পাহাড়, কখনও সমুদ্রতট আর কখনোবা জীবন্ত আগ্নেয়গিরি। এগারো হাজার ফিট উঁচু আগ্নেয়গিরি মাউন্ট 'এটনা', গ্রিক নামটির ইংরেজি অর্থ 'I burn' - তার সামনে যাওয়ার জন্য প্রথমে কেবলকার নিয়ে পাহাড়ে উঠলাম তারপর এক সাংঘাতিক মোটা চাকাওয়ালা বাস আমাদের একেবারে আগ্নেয়গিরির সামনেই নামিয়ে দিল।
আগ্নেয়গিরির মুখে বড় বড় গর্তগুলোকে এত কাছ থেকে দেখে সত্যিই কেমন যেন অস্বস্তি হতে লাগল, এ যেন ছবিতে দেখা চাঁদের মাটি যার আবার বিভিন্ন ভেন্ট থেকে গলগল করে গরম ধোঁয়া বেরোচ্ছে। গ্রীকদের 'এটনা' অর্থাৎ 'আমি জ্বলি' নামটা দেওয়া সার্থক কারণ আজও তিনি একইভাবে জ্বলে যাচ্ছেন। দুহাজার সাল থেকে ধরলেও প্রায় গোটা পনেরো বিস্ফোরণ ঘটেছে আর সাড়ে তিনশো বছর আগে এখানে কুড়ি হাজার অসহায় মানুষ দম আটকে পুড়ে মারা যায়। এই অগ্ন্যুৎপাতের অবশ্য একটি ভালো দিকও আছে কারণ ঊর্বর জমিতে প্রচুর শাক সবজি আর আঙুর হয় তাই এখানকার ওয়াইনও খুব সুস্বাদু। পায়ে মোটা জুতো থাকা সত্ত্বেও মনে হল কেউ যেন পায়ের তলায় ছ্যাঁকা দিচ্ছে, কিঞ্চিৎ লাফিয়ে লাফিয়ে চলতে চলতে ভাবলাম একেই বলে ভলকেনো – সাধে কী আর রোমানরা 'ভালকান' বা অগ্নি দেবতার পুজো করত!
এরপর সোয়া একঘন্টা গাড়ি চালিয়ে পৌঁছে গেলাম সেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর 'Pearl of Ionian Sea' টাওরমিনাতে। পাহাড়ের ওপর আর নিচে নীল সমুদ্র নিয়ে আমাদের হোটেলটাও ছিল বড় সুন্দর। চারিদিক দেখে মনে হল সাধে কী আর গ্রেটা গার্বো, কেরি গ্রান্ট, লিজ টেলর ও গ্রেগরি পেক-এর মতো সেলিব্রিটিরা বা গ্যেটে, ডুমা ও অস্কার ওয়াইল্ড-এর মত কবি সাহিত্যিকরা এখানে আস্তানা গেড়েছিলেন!
পাথরে বাঁধানো রাস্তা, ধারে ধারে সুন্দর সাজানো দোকান, ফুলে ঢাকা সব ভিলা, মধ্যযুগীয় চ্যাপেল, পেছনে আগ্নেয়গিরি আর নীল সমুদ্র নিয়ে এ যেন সত্যিই এক পিকচার পোস্টকার্ড। দুহাজার তিনশো বছরের পুরোনো গ্রিক থিয়েটারে গিয়ে দেখলাম শেক্সপিয়র-এর 'রোমিও জুলিয়েট' চলছে অর্থাৎ এতবছর পরেও লোকসমাগমে তিনিও মাউন্ট এটনার মতনই জীবন্ত আর এখানে দাঁড়ালে দূরে মাউন্ট এটনার রূপটিও চোখে পড়বে। সমুদ্রে নেমে দেখলাম নুড়ি পাথরের ঠেলায় হাঁটে কার সাধ্যি। অগত্যা রাস্তা থেকে রবারের চটি কিনে একটু এগোতে না এগোতেই একটি বিশাল পাথরের গায়ে ধাক্কা খেলাম। নাহ! এ কোনও মিহি বালির সমুদ্রতট নয় যে ঝিনুক কুড়োতে কুড়োতে ফুর্তিতে হাঁটবেন বরং এর সৌন্দর্য কিঞ্চিৎ দূর থেকে উপভোগ করাই ভালো।
'গডফাদার' সিনেমাটি বহুবার দেখার ফলে উৎসাহিত হয়ে কাছেই সাভোকা জায়গাটি দেখতে গিয়েছিলাম। পাহাড়ে ওঠার একটিমাত্র সরু রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালাতে চালাতে মনে হল মাফিয়াদের নিয়ে শ্যুটিং করার এক আদর্শ জায়গা বটে।
চারিদিকে আঙুরের ক্ষেত, কমলালেবু আর অলিভের জঙ্গল পেরিয়ে পাহাড়ে উঠে 'বার ভিটেলি'টা দেখেই চোখের সামনে যেন 'গড ফাদার'-এর দৃশ্যটা ভেসে উঠল। ভেতরটা দেখলাম অতি পুরোনো সময়ের আসবাবপত্র দিয়ে সাজানো আর তার সঙ্গে দেয়াল জুড়ে টাঙানো আছে 'করলিয়নি' পরিবারের বংশতালিকা। সব চরিত্র কাল্পনিক হলেও শোনা যায় এরকম একটি পরিবার নাকি সত্যিই এ তল্লাটে ছিল। সনাক্ত করতে পারব না জেনেও চারিদিকটা একটু টেরিয়ে টেরিয়ে দেখে নিলাম যদি একটাও – নাহ! তেনারা অত সহজলভ্য নন যে আমাদের মত হেঁজিপেঁজিদের দর্শন দিতে আসবেন, এখানে সবাই আমারই মতো ট্যুরিস্ট। অতএব মনের বিষণ্ণতা কাটাতে গোটা দুয়েক পেস্ট্রি আর কফির অর্ডার দিলাম। হঠাৎ সাংঘাতিক বাজনার শব্দে চমকে তাকিয়ে দেখি গোটা দুয়েক সাদা পোশাক পরা বছর দশেকের মেয়েকে রীতিমতো উঁচুতে তুলে লোকজন নিয়ে আসছে। আন্দাজে বুঝলাম মেয়েগুলো সব এঞ্জেল আর সামনে গোটা দুয়েক শয়তান নেচে নেচে তাদেরকে বিগড়ে যাওয়ার জন্য প্রলোভন দেখাচ্ছে। একেই বলে ফাটা কপাল, এখানে এসে মাফিয়াদের পরিবর্তে কিছুটা শয়তানদের নাচ দেখাই সার হল যদিও আমার কাছে দুটোর তফাৎ সামান্যই। এখান থেকে সেই ছবির মত সুন্দর টাওরমিনাতেই ফিরে গেলাম আর সেখানে দিনদুয়েক কাটিয়ে সিসিলিকে বিদায় জানলাম।
পাহাড়, সমুদ্র, জীবন্ত আগ্নেয়গিরি, আড়াই হাজার বছরের পুরোনো গ্রিক টেম্পল, ক্যাসেল, রোমান মোজাইক, মুসলমান কারিগরদের নির্মিত ক্যাথিড্রাল, নানা ধর্ম, নানা জাত ও নানাবিধ খাবারের সম্ভার নিয়ে এ যেন সত্যিই এক বড় সুন্দর বৈচিত্র্যময় দেশ। এক কথায় বলা যায় – এই বিবিধ মিশ্রণে গড়া সিসিলি বর্ষাকালের খিচুড়ি বা শীতের পাঁচমিশালি তরকারির মতনই উপভোগ্য যার স্বাদ একবার পেলে সহজে ভোলা যায় না।
শ্রাবণী ব্যানার্জির জন্ম ও বেড়ে ওঠা কলকাতায়। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির বাসিন্দা। বাংলা সাহিত্যের পাশাপাশি ইতিহাস পাঠ ও সঙ্গীত-চর্চাতে জড়িয়ে আছে ভালবাসা। কৌতূহল এবং আনন্দের টানেই গত কুড়ি বছর ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বিশ্বের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত।