-->
[ বেড়ানো একটা তীব্র নেশা, এ মাদকের সুখ যে একবার পেয়েছে, সে বারবার সেই আস্বাদ পেতে চায়। তেমনই এক পায়ের তলায় সর্ষে রাখা মানুষ গৌর কবিরাজ। চন্দননগরের ছেলে গৌরের কোনদিনই আকর্ষণ ছিল না পৈত্রিক ব্যবসায়। শেষে বাবার সঙ্গে মতে না মেলায় বেছে নিলেন পথকেই। যাত্রাদলে অভিনয়, সাউন্ড বক্স ভাড়া দেওয়া, বাচ্চাদের স্কুলে ভ্যানরিকশায় পৌঁছে দেওয়া, রিকশা চালানো এমন বিচিত্র সব পেশার পাশাপাশি নেশা কেবল একটাই – আর তা ভ্রমণ। এমনকী সে এমন নেশা যে বেচে দিয়েছেন নিজের অনেক কষ্টে তৈরি করা ঘরবাড়িও। ভ্রমণের ধরণও বড় বিচিত্র। ছেলেবেলায় বেরিয়ে পড়তেন সাইকেল নিয়ে। আর বড় হয়ে রুটিরুজির সঙ্গী রিকশা কিম্বা ভ্যানরিকশায় চড়ে স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন ভারতভ্রমণে।]
রেললাইনের ধারে ছোট্ট চালাঘর। পিছনে নিজের হাতে গড়া সবুজ বাগানে দু'হাত ছড়ানো কাকতাড়ুয়া দাঁড়িয়ে থাকে। ঘরের পাশে ঠেস দিয়ে রাখা ভ্যানরিকশার টুকরো অবয়ব। যে সঙ্গী ছিল গত বেড়ানোয়, আর যে সঙ্গী হবে আগামী ভ্রমণে। ঘরের দুয়ারে বিশ্রাম নেয় রোজের বন্ধু রিকশাটি। ট্রেনের আওয়াজের ব্যাকগ্রাউন্ডে পঁয়ষট্টি বছরের তরুণ ভ্রামণিক গৌরের মুখের রেখায় আলোছায়া খেলে। দু'চোখে পৃথিবী দেখার স্বপ্ন।
♦ বেড়ানোর নেশা ছোটবেলা থেকেই?
এ নেশা বড় বাজে জিনিষ দিদি – একবার যাকে ধরেছে আর ছাড়েনা। ছোটবেলা থেকেই দেশ দেখার আগ্রহ ছিল। ১৫-১৬ বছর বয়সে আমরা তিন ভাই মিলে সাইকেলে করে পুরী গিয়েছিলাম। সেই থেকে শুরু। তারপর পুরীই গেছি বোধহয় বার ছয়েক।
♦ আপনিতো কবিরাজ বাড়ির ছেলে, বাবা-কাকারা নিশ্চয় ডাক্তারি করতেন। রিকশা চালানোর এই পেশায় এলেন যে?
ডাক্তারি করতেন আমার দাদু। বাবার ট্রান্সপোর্টের ব্যবসা ছিল। চন্দননগরেই আমাদের নিজেদের বড় বাড়ি আছে – ভাইরা থাকে। ব্যবসা করা আমার ঠিক পোষালো না। আমি নিজের জীবনটা নিজের মতো করেই গড়েছি – নানারকম কাজ করেছি। অন্যদের মদের নেশা থাকে, কী অন্য কোন নেশা থাকে। আমার একটাই নেশা – বেড়ানো। গানবাজনাও ভালো লাগে। এই যে দেখছেন সব সাউন্ডের যন্ত্রপাতি, অনুষ্ঠানে ভাড়া দিই – অবশ্য রিকশাওলার থেকে সবাই ভাড়া নেয়না। কিছু চেনা লোকজন আছে। একসময় যাত্রা দলে এসবের জোগান দিতাম। নিজেও অভিনয় করেছি। যাত্রা করার সূত্রেও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় গ্রামে-গঞ্জে ঘুরেছি। বিয়ের পরে আমাদের একমাত্র ছেলের যখন চার বছর বয়স তখন ১৬০০ টাকায় একটা লুনা গাড়ি কিনি। এইসময় আমি একজায়গায় কাজ করতাম। স্বাধীন ভাবে কিছু করার ইচ্ছে হল। এরপর কাজটা ছেড়ে দিয়ে একটা রিকশা কিনি।
♦ পেশাটাই আবার নেশা! এটাওতো খুব অদ্ভুত – মাথায় এল কী করে?
সবাইতো ট্রেনে, বাসে কিংবা উড়োজাহাজে করে বেড়াতে যায়। আমি সেই লুনা গাড়িতেই স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে আবার পুরী গিয়েছিলাম। সেবারে আমাদের পুরো বেড়ানোয় দশ দিন লেগেছিল। রিকশাটা কেনার পর মনে হল এবারে রিকশা করে পুরী গেলে কেমন হয়? যেমন ভাবা তেমনি কাজ। টাকাপয়সা জোগাড় করে চাল,ডাল, তেল, নুন, মুড়ি, চিঁড়ে বেঁধে নিয়ে একদিন আমরা তিনজনে মিলে রিকশায় করে পুরী রওনা দিলাম। আমরা কুড়ি দিনের মধ্যে পুরী ভ্রমণ করে ফিরে আসি। এভাবেই শুরু। ভ্যানে করে যাওয়ার পুরো পরিকল্পনাও আমার। আগে ইস্কুলের বাচ্চাদের নিয়ে যেতাম। মনে হল ভ্যানে করে গেলে যেখানে খুশি রাত্তির হবে ঘুমিয়ে পড়ব। বিছানাপত্তর নিয়ে যেতে পারব। রান্না করে খাব।
♦ শুধু তিনজনেই বেরিয়ে পড়েন?
হ্যাঁ, আর কে যাবে! হা...হা...(হাসি) আর কে পাগল আছে আমাদের মত? অবশ্য তিরুপতি যাওয়ার সময় প্রথমে একজন ৮০ বছরের বৃদ্ধা সঙ্গী হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রওনা হওয়ার পরে পরেই অসুস্থ হয়ে পড়ায় বারাসত থেকে যোগাযোগ করে তাঁকে বাড়িতে ফেরত পাঠিয়ে দিতে হল।
♦ গৌরদা, কোথায় কোথায় বেড়াতে গেছেন এভাবে?
পুরীই গেছি প্রায় বার ছয়েক। আর বড় বেড়ানো বলতে একবার গেছিলাম বেনারস, গয়া, রাজগীর আর দেওঘর। এই বেড়ানোয় আমাদের প্রায় দু'মাস সময় লেগেছিল। তবে সবচেয়ে বেশী সময় লেগেছিল তিরুপতিতে – তিনমাস। ওটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় বেড়ানো। তাছাড়া প্রায়ই ছোটখাট টুকটাক বেরিয়ে পড়ি। এইতো ক'দিন আগে নবদ্বীপ-মায়াপুর ঘুরে এলাম।
♦ তিরুপতিতো বহু দূর। এতটা পথ ভ্যানরিকশা নিয়ে, সাহসটা কীকরে হল? রওনা দিয়েছিলেন কবে?
পুরী গেলাম। বেনারস গেলাম। তারপরে লোকজনে জিজ্ঞাসা করছে এবার কোথায় যাবে? কোথায় যাব, কোথায় যাব করতে করতে কেউ কেউ বলল, তিরুপতি যাও। যাও বললেই কি যাওয়া যায়? তিরুপতি কোথায় আর পু্রী কোথায়, বহু বহু দূর। তবে বেনারস ঘুরে আসার পর খবরটা এখানকার কাগজে বেরিয়েছিল। স্থানীয় এক সংস্থা থেকে আমাদের একটি পুরস্কারও দেওয়া হয়। এতে আমাদের মনের জোরও বেড়ে যায়। তিরুপতি যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করি। শেষে ২০০৮ সালের ১৩ নভেম্বর ভোর পাঁচটায় আমি, আমার স্ত্রী শুক্লা কবিরাজ আর আমার পুত্র পার্থ কবিরাজ – এই তিনজনে মিলে সাইকেল আর ভ্যানরিকশা নিয়ে চন্দননগর রবীন্দ্র ভবন থেকে তিরুপতির উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলাম।
♦ এত দূরের যাত্রায় বেরিয়ে পড়ার খরচতো অনেক। কীভাবে যোগাড় করলেন?
চন্দননগর পরিবেশ উন্নয়ন সমিতি আর দু-একটা স্থানীয় সংস্থা ও কয়েকজনের ব্যক্তিগত সাহায্যে প্রায় পাঁচ হাজার টাকার মত সংগ্রহ হয়। আমি নিজেও এই যাত্রার জন্য ইতিমধ্যে পনের হাজার টাকা জমিয়ে ছিলাম। তাছাড়া অনেকেই চাল,ডাল, বিস্কুট, মুড়ি এসবও দিয়েছিলেন। পথ চলতে চলতেও অনেক সাহায্য পেয়েছি। লোকজন টাকাপয়সা দিয়েছেন, থাকতে দিয়েছেন, খেতে দিয়েছেন, গ্রামের মানুষ চাল-ডাল বেঁধে দিয়েছেন। রাস্তায় গাছ থেকে পেড়ে ফল খেয়েছি, মন্দিরের প্রসাদ। পথে পুলিশও খুব সাহায্য করেছে, তিরুপতি পৌঁছেও। সবার শুভেচ্ছা ভালোবাসাতেই এতটা পথ পাড়ি দিতে পেরেছি।
♦ এতটা রাস্তা যাওয়া, পথ চিনতে অসুবিধা হল না?
চার জায়গা থেকে ম্যাপ করে নিয়ে গেছি। কী জানি যদি কিছু ভুল হয়। প্রত্যেকটা জায়গার নাম, দুটো জায়গার মধ্যে কতটা দূরত্ব সব যতটা সম্ভব নিখুঁতভাবে। বাসে করে বেড়াতে নিয়ে যায় যারা, তারা ম্যাপ করে দিয়েছে, পুলিশ থেকেও একটা ম্যাপ দেয়, এছাড়া আমার চেনা লোক আছে যারা ম্যাপ করে দেয়।
♦ আর ভাষার সমস্যা হয়নি? আমাদের দেশে সেটাওতো একটা বড় অসুবিধা।
ও বাবা, সেতো বিরাট সমস্যা। বেনারস যাওয়ার সময় তেমন অসুবিধা না হলেও দক্ষিণের গ্রামের লোকজন তো হিন্দিও বোঝেনা। উড়িষ্যার বালুরগাঁও-এ সন্ধ্যাবেলায় আমরা একটা মন্দিরে আশ্রয় নিয়েছিলাম। সেই মন্দিরের পূজারী ছিলেন এক বাঙালি মহিলা। তিনি আমাকে অনেককিছু লিখে দিয়েছিলেন – নুনকে কী বলে, জলকে কী বলে, এক টাকাকে-দু টাকাকে কী বলে – নুনকে বলবে 'অপ্পু', জলকে বলে 'নীরু', ভাতকে বলে 'ভীমু'।
♦ এভাবে এতটা পথ ভ্যানরিকশা টেনে যাওয়াটাওতো বেশ শক্ত। একাই চালান?
হ্যাঁ, রান্না-খাওয়ার জিনিষ, বিছানাপত্র নিয়ে খুব ভারি হয়ে যায়। তাছাড়া রিকশার ওপরের লোহার খাঁচাটার ওজন-ও অনেক। একঘন্টা অন্তর আমরা দাঁড়াই আর খাই। চা রেডি থাকে ফ্লাস্কে। ছাতু আছে, চিঁড়ে আছে, মুড়ি, বিস্কুট। খুব দরকার পড়লে ছেলে চালায়। নইলে ও সাইকেল নিয়ে পাশে পাশে চলে। দরকারে মায়ে-ব্যাটায় গাড়ি ঠেলে। উড়িষ্যায় ভুবনেশ্বরের পর থেকে পাহাড় শুরু হয় – এই উঁচু, এই নীচু। একেবারে শেষ সীমানায় একটা বিরাট পাহাড় আছে। উড়িষ্যা থেকে যখন মাদ্রাজে ঢুকছে। পিঁপড়ের সারির মত ট্রাকগুলো ঘুরে ঘুরে রাস্তা দিয়ে উঠছে। সেই রাস্তা দিয়ে গাড়ি ঠেলতে ঠেলতে উঠেছি আমরা।
♦ এতটা পথ যেতে কোন বড় বিপদে পড়েননি?
সেরকম কোন বিপদের মুখে পড়িনি, গাড়ি টুকটাক খারাপ হয়েছিল, সেসবতো নিজেই সারিয়ে নিতে পারি। টায়ারতো খারাপ হয়েছেই। যাতায়াতে ৪০০০ কিমি পথ পাড়ি দিয়েছি। বাংলা পার হয়েছি, উড়িষ্যা পার হয়েছি, অন্ধ্রের শেষ সীমায় চলে গেছি। যেতে যেতে টায়ার খতম হয়ে গেল। সাইকেলের টায়ার কিনতে হল। ওখানে সাইকেল চলে। রিকশা দু-একটা ডিস্ট্রিক্টে চলে। আর অন্যরকম কোন বিপদে পড়িনি। ভগবানই খাবার দাবার, থাকার জায়গা সব জুটিয়ে দিয়েছেন। রাতে কোথাও কোন ঘরে থাকতে পেলে ভ্যান বাইরে পথেই থেকেছে – ওপরের খাঁচাটায় তালা দেওয়া থাকে। আর থাকার জায়গা না জুটলে গাছতলাতেই থেকেছি, বৌ ভ্যানে শুয়েছে আর আমরা বাপ-ব্যাটায় মাটিতে। সাধুবাবা সেজে গেছিতো (হাসি) তাই চুরি-ডাকাতির কোন ভয় হয়নি। মাওবাদীরা ধরেছে, তারাই আমাদের খাইয়েছে, থাকবার জায়গা করে দিয়েছে, টাকা-পয়সা দিয়েছে। চোর চুরি করতে এসেও বাবাজী বাবাজী বলে পায়ে ধরছে, ভালো রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছে। বলে আমাদের গ্রামে থাকবে চল। গ্রামে নিয়ে গিয়ে বলল ঘোরো একবার। সবাই চাল-ডাল এটাসেটা দিল, দেখলাম ভালোই ধান্ধা হল।
♦ ওরেবাবা! দারুণ আইডিয়াতো - সাধুবাবা সেজে যাওয়ার পরিকল্পনাও কি আপনার?
না, না। বালুরগাঁও-এর সেই মহিলা পূজারীই বুদ্ধি দিলেন। বললেন, তোরা তিরুপতি যাবি তো তোদের কাপড়-চোপড় বদলাতে হবে – সাধুর বেশে যেতে হবে। আমরা পাঁচশ টাকা দিয়ে নতুন কাপড়জামা কিনে সাধুর বেশ ধারণ করলাম। তিনজনেরই মাথায় ফেট্টি – তাতে লেখা জয় বাবা তিরুপতি। রিকশাতেও তিরুপতির ছবি লাগিয়ে নিলাম। বাকী পথটায় এতে সত্যিই খুব সুবিধা হয়েছিল। না হলে লোকে বেশ সন্দেহের চোখেই দেখছিল প্রথম প্রথম – ভ্যান রিকশা নিয়ে এতদূর বেড়াতে এসেছি এটা পথে গ্রামের লোকদের বোঝানো বেশ শক্তই হয়ে উঠছিল। ভাবছিল এদের নিশ্চয় অন্য কোন মতলব আছে!
♦ এই বেড়ানোয় তেমন কোন অভিজ্ঞতার কথা কি মনে পড়ছে যখন হঠাৎ বেশ ভয় পেয়েছিলেন বা খুব অদ্ভুত লেগেছিল?
তেমন পরিস্থিতিতো হয়েছেই, তবে খুব ভয় পেয়েছিলাম তা বলব না। বাবা তিরুপতির নাম করে বেরিয়েছি ভগবানই দেখেছেন আমাদের। সেরকম ঘটনা বলতে মনে পড়ে – ওয়ালটেয়ারের দিকে যাচ্ছি - জনবসতি শেষ হয়ে জঙ্গল শুরু হয়ে গেল। হঠাৎ দেখি জঙ্গলের মধ্যে থেকে তীরধনুক, টাঙ্গি আর বন্দুক নিয়ে কয়েকজন লোক বেরিয়ে এসে আমাদের ঘিরে ধরল। বুঝলাম এরা মাওবাদী। আমাদের ব্যানারে চারটে ভাষায় লেখা ছিল। সেটা দেখে ওরা বুঝতে পারল যে আমরা তিরুপতি ভ্রমণে যাচ্ছি। ওরা নিজেরাই আমাদের ৫০০ টাকা দিয়ে বলল ফেরার পথে এখান দিয়ে ঘুরে যেতে। খুব ভয় না পেলেও প্রথমে একটু চমকে গিয়েছিলামতো বটেই।
এর আগেরদিন উদয়গিরি, নয়াপাড়ায় আমরা যেতে যেতে দেখি রাস্তার দুপাশে বিরাট বিরাট গাছ আর তাতে অগুন্তি বাদুড় ঝুলছে। এত বড় বাদুড় আমরা কখনও দেখিনি। একেকটার ওজন প্রায় ২-৩ কেজির মত হবে। সেটা বেশ অদ্ভুত লেগেছিল।
আর এর দিন তিনেক পরে যাওয়ার পথে আর একটা খুব অদ্ভুত দৃশ্য চোখে পড়েছিল – একটা বাঁদর ছ'-সাতটা কুকুরের বাচ্চা নিয়ে পাহারা দিচ্ছে আর বাচ্চা কুকুরগুলোর মা কিছু দূরে গাড়ি চাপা পড়ে মরে পরে আছে। মনটা খারাপও লাগছিল বাচ্চাগুলোর জন্য।
♦পথেতো বেশ কয়েকবার জঙ্গলের ভিতর দিয়ে গিয়েছেন, কোন জন্তুজানোয়ার চোখে পড়েনি?
দেখেছিতো অন্ধ্রের জঙ্গলে, উড়িষ্যায়। ভালুক তার ছানা নিয়ে ঘুরছে, হাতির দল বেরিয়েছে, ময়ূর ঘুরে বেড়াচ্ছে, এই মোটা মোটা সাপ। রাতে শুয়ে শুয়ে শেয়ালের ডাক শুনছি। সে এক অভিজ্ঞতা (হাসি)।
এত কষ্ট করেতো গেলেন, তিরুপতির মন্দির দেখে কেমন লাগল?
বাবা সেতো এলাহি ব্যাপার। পুলিশই বলে দিল যে মন্দিরে পুজো দিতে হলে রাত দু'টো থেকে লাইন দিতে হবে। ভোর পাঁচটায় টিকিটঘর খুলল। আমাদের কাছ থেকে অবশ্য কোন টাকাপয়সা নেয়নি। তারপর বাসে চড়লাম। মাথাপিছু টিকিট ৪৫ টাকা। পাহাড়ের ওপরে ঠাকুরের গেটে পৌঁছে লাইন দিলাম। তখন বাজে সকাল আটটা। মন্দির খুলল বেলা এগারটার সময়। ৫ টাকার কুপন কেটে মন্দির দর্শন হল। এত কষ্ট, পরিশ্রম, খরচ করে এসে ঠাকুর দেখতে সময় দিচ্ছে মাত্র এক মিনিট। ঠাকুরটা পুরো সোনার। আর কত যে টাকা-পয়সা তার কোন হিসেব নেই।
ঠাকুর দেখে মন না ভরলেও এই যে এতটা পথ গেলাম, কত সুন্দর সুন্দর দৃশ্য একেবারে কাছ থেকে দেখলাম – নদী, সমুদ্র, পাহাড়, ঝরনা, জঙ্গল – কত মানুষের সঙ্গে পরিচয় হল এতেইতো মন ভরে গেছে। গঞ্জাম থেকে পলাশি যাওয়ার পথে একটা জায়গায় পাহাড়ে উঠে দেখি সমুদ্র দেখা যাচ্ছে। কী সুন্দর! চলার পথে এমন কত সুন্দর জায়গা, কত সুন্দর দৃশ্য চোখে পড়েছে। পথে বেরিয়ে খড়গপুর কিষাননগরে পৌঁছে একটা সারের দোকানের মালিককে রাতের মত একটা থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত করে দেওয়ার অনুরোধ করতে উনি নিজের বাড়িতেই নিয়ে গিয়ে খাওয়াদাওয়া করিয়ে স্থানীয় একটা স্কুলে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। পরদিন সকালে ভদ্রলোক আমাকে ১০১ টাকা দিয়ে যাত্রার জন্য শুভেচ্ছা জানিয়ে বললেন উনিও একসময় খুব বেড়াতে ভালোবাসতেন। এরকম আরও কত মানুষকে পেয়েছি চলার পথে।
♦ এরমধ্যে আবার কোথাও বেরিয়ে পড়ছেন নাকি?
ইচ্ছা আছে জগদ্ধাত্রী পুজোটা হয়ে গেলেই হরিদ্বার - মথুরা-বৃন্দাবনের পথে বেরিয়ে পড়ব সপরিবারে – যা হিসেব করেছি মোটামুটি চারমাস লাগবে ঘুরে আসতে। তবে খরচ তো অনেক – এই তো ভ্যানের ওপরের খাঁচাটা নতুন করে বানালাম – চার হাজার টাকা লাগল। কেউ যদি সাহায্য করতে চান তো ৯৮৩৬৮৬৫০৯৭ এই নম্বরে একটু যোগাযোগ করতে বলবেন, খুব উপকার হয়।
সাক্ষাৎকার – দময়ন্তী দাশগুপ্ত