Home Page
Current Issue
Archive
Travel Plans
Trekking Routemap
Tips
Explore
Rail
Air travel
Other Websites

Feedback




hit counters
hit counter

বিহার (Bihar)

 

তিন হাজার বছরের বেশি প্রাচীন সভ্যতার গৌরব ও ঐতিহ্য নিয়ে বিহার। গৌতম বুদ্ধ তাঁর জীবনের বেশিরভাগ সময়টাই কাটিয়েছিলেন বিহারে। বৌদ্ধবিহার থেকেই বিহার নামের উৎপত্তি। বিখ্যাত বৌদ্ধ স্থাপত্যগুলিও এখানেই। আজও সেই প্রত্নসম্পদগুলি ভারতের বৌদ্ধিক ও আধ্যাত্মিক গরিমার সাক্ষী। মৌর্য ও গুপ্ত সাম্রাজ্যের আমলে বিহারই ছিল ভারতের রাজনৈতিক ভরকেন্দ্র। মগধ থেকেই তখন শাসিত হত গোটা দেশ।


পাটনা (Patna)- ঐতিহাসিক পাটলিপুত্র শহর আজকের বিহারের রাজধানী পাটনা। গঙ্গার ধারে অবস্থিত এই শহরের মহাত্মা গান্ধী সেতুটি পৃথিবীর অন্যতম দীর্ঘ সেতু। আধুনিক পাটনা শহরের পশ্চিমদিকে - আর পূর্বদিকে ইতিহাসের শহর। অতীতের পাটলিপুত্রের স্মৃতি খুঁজতে যেতে হবে কুমরাহর, ভিখনাপাহাড়ি ও বুলন্দিবাগ । পাটনা মিউজিয়ামে আছে প্রায় ৫০ হাজার দুর্লভ শিল্পসম্পদ। বিশ্বের বৃহত্তম ফসিল বৃক্ষটি এখানেই আছে। এক পবিত্র আধারে সংরক্ষিত রয়েছে বুদ্ধের চিতাভস্ম। পুরোনো পাটনার ঝাউগঞ্জে রয়েছে পবিত্র শিখতীর্থ পাটনা সাহিব বা শ্রীহরমন্দির সাহিব গুরদোয়ারাটি। গুরু গোবিন্দ সিং-এর জন্মস্থান। প্রতিদিনই এখানে হাজার হাজার পুণ্যার্থী আসেন। হরমন্দির লাগোয়া শের শাহী মসজিদ। পাদ্রি কি হাভেলি দর্শনীয়-এখানে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন মাদার টেরিজা। অন্যান্য দ্রষ্টব্যের মধ্যে রয়েছে গোলঘর, সদাকত আশ্রম, নবাব শহীদ-কি-মকবারা, বিড়লা মন্দির প্রভৃতি। আরেক আকর্ষণ গঙ্গায় নৌকোবিহার।
পাটনার কাছেই গঙ্গা ও গন্ডক নদীর মোহনায় শোনপুর (Sonepur) গ্রাম। প্রতি বছর নভেম্বর মাসে এখানে বসে বিখ্যাত পশুমেলা। দু-সপ্তাহ ধরে চলা এই মেলায় গোরু মহিষ ছাড়াও বিক্রি হয় হাতি, ঘোড়া, উট এবং পাখি।
যাওয়া -প্রধান রেলস্টেশন পাটনা জংশন। এছাড়া পাটনা সাহিব, রাজেন্দ্রনগর ও দানাপুর রেলস্টেশন। বিমানবন্দরও পাটনাতেই। সড়কপথে যোগাযোগ রয়েছে ভারতের অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে।
থাকা -বিহার রাজ্য পর্যটন উন্নয়ন নিগমের হোটেল কৌটিল্য বিহার, আই টি ডি সি-র হোটেল পাটলিপুত্র অশোক। এছাড়া প্রচুর প্রাইভেট হোটেলও আছে।


গয়া (Gaya) - পাটনা থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে গয়া। ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্যে গয়ার স্থান উচ্চে। সম্রাট অশোকের আমলে গয়া ছিল মগধ সাম্রাজ্যের মধ্যেই। ফল্গু নদীর তীরের এই শহরের উল্লেখ আছে রামায়ণে। কথিত আছে ভগবান বিষ্ণুর পায়ের ছাপ বা পাদপদ্ম ঘিরেই তৈরি হয়েছিল গয়ার বিষ্ণুপাদ মন্দির। হিন্দুদের বিশ্বাস গয়াতে পিন্ড দিলে আত্মা স্বর্গে যায় বা মোক্ষ লাভ করে। মন্দিরের পশ্চিমে ব্রহ্মযোনি পাহাড়ের চূড়ায় পাতালেশ্বর শিবের মন্দির আর নিচে সীতার আশীর্বাদধন্য অক্ষয়বট। অন্যান্য দ্রষ্টব্যের মধ্যে শোন নদীর তীরে সূর্যমন্দির, গান্ধী মণ্ডপ, মিউজিয়াম প্রভৃতি। রয়েছে তেরো শতকের সুফি সন্ত মানেরির স্মৃতিবিজড়িত মানের। আর বড়ি দরগা, স্মৃতিস্তম্ভ এবং শিষ্য শাহ দৌলত-এর সমাধি। অসংখ্য মুসলমান তীর্থযাত্রীও  এখানে আসেন।
যাওয়া -নিকটতম রেলস্টেশন গয়া জংশন। বিহারের নানাদিক থেকে ও পাশের রাজ্যগুলি থেকে বাসও আসছে।
থাকা -প্রচুর বেসরকারি হোটেল ও ধর্মশালা আছে।


বোধগয়া (Bodhgaya)- ২৫০০ বছর আগের কথা - অতীতের উরুবিল্ব, আজকের বোধগয়াতেই বুদ্ধত্ব লাভ করেছিলেন রাজা সিদ্ধার্থ। এখানেই রয়েছে বোধিবৃক্ষ। বুদ্ধের সাধনস্থল। তবে পরবর্তীকালে মূল বৃক্ষটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় শ্রীলঙ্কায় রাজা অশোকের পুত্র-কন্যা মহেন্দ্র ও সংঘমিত্রা যে চারাটি নিয়ে গিয়েছিলেন তারই একটি শাখা এনে বসানো হয়। রয়েছে তাঁর সাধনার বজ্রাসনটিও।
মহাবোধি টেম্পল (Mahabodhi Temple) ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। খ্রীষ্টপূর্ব ১৮৪-১৭২ শতকের এই মন্দিরে রয়েছে প্রাচীন সুদৃশ্য বেষ্টনী দিয়ে ঘেরা সুবর্ণ বুদ্ধ। অন্যান্য দ্রষ্টব্য তিব্বতি গুম্ফা, বর্মি মন্দির, চিনা মন্দির ও বিহার, ভুটানের বৌদ্ধবিহার, থাই মন্দির ও বিহার প্রভৃতি। মে মাসে পালিত হয় বুদ্ধজয়ন্তী উৎসব।
যাওয়া -নিকটতম রেলস্টেশন গয়া জংশন ১২ কিলোমিটার দূরে। বিহারের নানাদিক থেকে বাসও আসছে।
থাকা -বিহার রাজ্য পর্যটন উন্নয়ন নিগমের হোটেল বুদ্ধ বিহার, আই টি ডি সি-র হোটেল বোধগয়া অশোক। এছাড়া প্রাইভেট হোটেলও রয়েছে।


রাজগীর (Rajgir) - অতীতের রাজগৃহ। বিপুলগিরি, রত্নগিরি, বৈভবগিরি, শোনগিরি আর উদয়গিরি পাহাড়ে ঘেরা এই ‘পাঁচপাহাড়ি দেশ’। ৬ খ্রিস্টাব্দে নৃপতি বিম্বিসার এখানে রাজধানী স্থাপন করেন। বহুবছর অবধি মগধের রাজধানী ছিল এই রাজগির। মহাবীর তাঁর জীবনের ১৪ বছরে এখানেই কাটিয়েছেন। আবার এখানেই বুদ্ধ ভক্তদের শুনিয়েছেন তাঁর বিখ্যাত সব উপদেশ। রাজগীরে পাহাড়ের গায়ে খোদিত রয়েছে মহাবীর ও বুদ্ধের উপদেশাবলি। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, জৈন সবধর্মের সমন্বয়ে রাজগিরের ইতিহাস উজ্জ্বল। ছবির মতো সুন্দর রাজগীরে আছে এক প্রশান্তির পরিবেশ আর স্বাস্থ্যকর জলবায়ু। ভেঙে পড়া পুরনো স্থাপত্যগুলির মধ্যে ঘুরতে ঘুরতে ফিরে যাওয়া যায় মহাবীর আর বুদ্ধের আমলে।
রাজগিরের প্রধান আকর্ষণ বিশ্বশান্তি স্তূপ (World Peace Pagoda / Vishwa Shanti Stupa)। বুদ্ধের নির্বাণের ১২ বছর পরে প্রথম বৌদ্ধ সম্মেলনের স্মৃতিকে ধরে রাখতে জাপানের বৌদ্ধসংঘ এখানে রত্নগিরি পাহাড়ের চূড়ায় গড়ে তোলে এই অনিন্দ্যসুন্দর শান্তিস্তূপ। স্তূপটির ব্যাস ১৪৪ ফুট ও উচ্চতা ১২৫ ফুট। এখানে রয়েছে বুদ্ধের মূর্তি। পাহাড়চূড়ায় হেঁটে উঠতে না পারলে রোপওয়ে চড়ে যাওয়া যায় ।
কাছেই মনিয়ার মঠ। শোনা যায়, এটিই নাকি ভারতের সবথেকে প্রাচীন মনসামন্দির, মহাভারতেও এর উল্লেখ আছে। এই পথে আর একটু এগোলে সোনভান্ডার। একসময় এটি নাকি রাজা বিম্বিসারের কোশাগার ছিল। বেণুবন ছিল বিম্বিসারের প্রমোদ উদ্যান। তিনি এটি দান করেছিলেন বুদ্ধদেবকে। রাজগিরের আর এক আকর্ষণ হল উষ্ণপ্রস্রবণ (Hot Water Spring)। এই উষ্ণ প্রস্রবণের গরম জলে স্নান করলে নাকি বহু ব্যাধির উপশম হয় বলে মানুষের ধারণা।
এছাড়া দ্রষ্টব্য রথচক্র দাগ, অজাতশত্রুর জেলখানার ভগ্নাবশেষ, জীবক উদ্যান, বীরায়তন মিউজিয়াম প্রভৃতি।
রাজগির থেকে ৩৮ কিলোমিটার দূরে পাওয়াপুরী (Pawapuri) জৈনদের তীর্থস্থান। ৪৯০ খ্রিষ্টাব্দে এখানেই ভগবান মহাবীরের শেষকৃত্য হয় । তাঁর স্মৃতিতে গড়ে উঠেছিল জলমন্দির। সরোবরের মাঝখানে গড়ে ওঠা মন্দিরটি অপূর্ব। এছাড়া দ্রষ্টব্য শ্বেতপাথরের অপূর্ব শিল্পমণ্ডিত শমসরণ মন্দির, শ্বেতাম্বর মন্দির, নয়ামন্দির ইত্যাদি।
রাজগির থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে ভারতবর্ষের অতীত গৌরবের সাক্ষী নালন্দা। খ্রিষ্টপূর্ব ৩ শতকে সম্রাট অশোক নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় (Nalanda University) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরবর্তীকালে গুপ্তরাজাদের পৃষ্ঠপোষকতা পায় নালন্দা। একসময় এখানে ১২,০০০ ছাত্র এবং ১৫০০ শিক্ষক ছিলেন। আচার্য ছিলেন মহাপণ্ডিত শীলভদ্র । হিউয়েন সাং ৬৩৭ খ্রিষ্টাব্দে এখানে আসেন। তিনি ৫ বছর এখানে ছিলেন।
১২০৫ সালে বখতিয়ার খলজির আক্রমণে ধ্বংস হয়ে যায় এই মহান বিশ্ববিদ্যালয়। আজ যা দেখা যায় তা সেই অসাধারণ স্থাপত্যের ধ্বংসাবশেষ ।
চিনা তীর্থযাত্রী, ভিক্ষু, পন্ডিত, বিশেষ করে হিউয়েন সাঙ-এর লেখায় বারবার ঘুরেফিরে এসেছে নালন্দার কথা। নালন্দা মিউজিয়ামে রয়েছে অনুপম ব্রোঞ্জ মূর্তির এক সংগ্রহ। এগুলি ৯ থেকে ১০ শতকে পাল আমলে তৈরি। রয়েছে প্রাচীন পুঁথি, তাম্র ও প্রস্তর ফলকে খোদিত অনুশাসন এবং বৌদ্ধ মূর্তি। কাছেই ভগবান মহাবীরের জন্মস্থান কুন্দলপুর (Kundalpur)
যাওয়াঃ- নিকটতম রেলস্টেশন বখতিয়ারপুর। বখতিয়ারপুর থেকে মাত্র ৬০ কিলোমিটার পথ রাজগির। বখতিয়ারপুর থেকে ট্রেন ও বাস যাচ্ছে রাজগির।
থাকাঃ- রাজগিরে বিহার পর্যটন দপ্তরের তিনটি হোটেল আছে। হোটেল তথাগত বিহার, হোটেল গৌতম বিহার ও হোটেল অজাতশত্রু বিহার। রাজগিরের এস টি ডি কোডঃ- ০৬১১২।


বৈশালী (Vaishali)- খ্রীষ্টপূর্ব ৬ শতক থেকেই ইতিহাসে বৈশালীর উল্লেখ পাওয়া যায়। বৈশালী ছিল ক্ষত্রিয় লিচ্ছবি বংশের রাজত্বের মধ্যে। এটি পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন প্রজাতন্ত্র। ৪ কিলোমিটার দূরে কলুহাতে ৪৮৩ খ্রীস্ট পূর্বাব্দে বুদ্ধ তাঁর জীবনের শেষ ভাষণটি দেন। বুদ্ধের স্মরণে সম্রাট অশোক কলুহাতে স্থাপন করেছিলেন তাঁর বিখ্যাত সিংহস্তম্ভ। বৈশালীর আরেকটি দ্রষ্টব্য চৌমুখি মহাদেব মন্দির, ভাওয়ান পাথর মন্দির এবং করোনেশন ট্যাঙ্ক। বৈশালীর রাজাদের অভিষেকের সময় ছেটানো হত এই পুকুরের জল। লৌকিক বিশ্বাসে এই জল পবিত্র।
যাওয়াঃ- নিকটতম রেলস্টেশন হাজিপুর ৩৬ কিলোমিটার ও মজঃফরপুর ৩৪ কিলোমিটার।
থাকাঃ- বাসস্ট্যান্ডের কাছে বিহার ট্যুরিজমের ট্যুরিস্ট রেস্ট হাউস।
কেনাকাটা -বিহারের মধুবনী চিত্রকলার কদরতো এখন সারা দুনিয়ায়। মেয়েরাই এই লোকশিল্পের স্রষ্টা। সাদা কালো ও রঙিন এই চিত্রকলা এখন আঁকা হয় কাগজ, ক্যানভাস ও কাপড়ের ওপর। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে ভারতের সাংস্কৃতিক উৎকর্ষ প্রতিষ্ঠিত করছে এই লোকশিল্প। বিহারের চুনরিও ভারি সুন্দর। সাবেকি নকশা ছাড়াও এই চুনরির গায়ে থাকে নানা ধরনের লতাপাতা ও পশুপাখির ছবি। উত্তর বিহারের সুরসাঁদ-এ খাড়ি (মাইকা) প্রিন্টিং, বিহারের সুজনি, খাটোয়ার অ্যাপ্লিকের কাজেও বৈচিত্র্য আছে।
খাওয়াদাওয়া - পাটনার স্থানীয় খাবারের মধ্যে পুয়াপিঠা, তিলকূট, চিউরা, মাখানা ছাড়াও বিহারের বিখ্যাত ছাতু অথবা লিট্টি চোখাও খেয়ে দেখা যায়। নানা রকমের মিষ্টি পাওয়া যায় এখানে। একেক জায়গা একেকটি মিঠাই-এর জন্য বিখ্যাত। সিলাও, নালন্দায় খাজা, বিহার শরিফ-এ লাড্ডু, বিক্রম-এ কালা জামুন, বারার খুবি কি লাই, গয়ার তিলকূট আর প্যাঁড়া চেখে দেখতে হবে। হরনৌত-এর ছানা বালুশাহি আর কোয়েলওয়ার-এর ছানার মুড়কি বিখ্যাত।

 

 

Album

Live Traffic Feed

To view this site correctly, please click here to download the Bangla Font and copy it to your c:\windows\Fonts directory.

For any queries/complaints, please contact admin@amaderchhuti.com
Best viewed in FF or IE at a resolution of 1024x768 or higher