কুরুক্ষেত্র (Kurukshetra)- থানেশ্বর, পানিপথ আর কুরুক্ষেত্র -ইতিহাস আর পুরাণের গল্পমাখা স্থানগুলো বেড়িয়ে নেওয়া যায় একযাত্রাতেই।
কথিত আছে কৌরব ও পাণ্ডবদের পূর্বপুরুষ রাজর্ষি কুরু এখানে তপস্যা করেন, তার থেকেই এই স্থানের নাম হয় কুরুক্ষেত্র। তবে কুরুক্ষেত্রের পরিচিতি কৌরব ও পাণ্ডবদের ১৮ দিন ব্যাপী যুদ্ধের জন্য। কুরুক্ষেত্রে নানান হিন্দুতীর্থ রয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্রহ্মেশ্বর সরোবর, সরোবরের মাঝে সর্বেশ্বর মহাদেবের মন্দির, সরোবরের তীরে বিড়লা গীতা মন্দির। শীতে পরিযায়ী পাখিদের ঠিকানা এই সরোবর। এছাড়া, কুরুক্ষেত্র, থানেশ্বর ও বানগঙ্গা সরোবর তিনটিও পবিত্র। আর রয়েছে ভীষ্মকুন্ড, অভিমন্যু ক্ষেত্র, কর্ণটিলা, লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দির, গীতাভবন, সীতামাঈ, দুর্গামন্দির, জ্যোতিসর কুন্ড, শঙ্করাচার্যের মন্দির, কর্ণমন্দির। অন্যান্য দ্রষ্টব্যের মধ্যে শ্রীকৃষ্ণ মিউজিয়াম, বিজ্ঞানকেন্দ্র, জুম্মা মসজিদ, পাথরিয় মসজিদ, চিনিওয়ালি মসজিদ, ছোট লালা মসজিদ, শেখ চিল্লী জালালের সমাধিক্ষেত্র, সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়।
কুরুক্ষেত্রে হরপ্পার সমসাময়িক প্রত্নতাত্ত্বিক নির্দশনও পাওয়া গেছে।
শহর থেকে ৩ কিমি দূরে রাজা হর্ষবর্ধনের রাজধানী শহর থানেশ্বর(Thaneswar)। হিউয়েন সাঙের ভ্রমণকাহিনীতে সমৃদ্ধশালী এই নগরীর উল্লেখ পাওয়া যায়। থানেশ্বরের দ্রষ্টব্যের মধ্যে রয়েছে থানেশ্বর মহাদেব মন্দির, সন্তোষীমাতার মন্দির, সিংহবাহিনী অম্বিকা মন্দির, ভদ্রকালীর মন্দির প্রভৃতি। কুরুক্ষেত্র থেকে ৭১ কিমি দূরে ঐতিহাসিক পাণিপথ(Panipath)। ছেলেবেলায় বার বার মুখস্থ করে ফেলা পাণিপথের বিখ্যাত তিন যুদ্ধের কথা মনে পড়বে এখানে দাঁড়িয়ে, যদিও যুদ্ধক্ষেত্রটি ছাড়া ঐতিহাসিক স্মৃতিচিহ্ন কিছুই নেই। ১৫২৬ সালের ২১ এপ্রিল প্রথম পাণিপথের যুদ্ধে দিল্লির সম্রাট ইব্রাহিম লোধীকে হারিয়ে ভারতের মুঘল সাম্রাজ্যের পত্তন করেন বাবর। পাণিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধে ৫ নভেম্বর ১৫৫৬ সনে আকবরের সেনাপতি বৈরাম খানের কাছে পরাজয় ঘটে পাঠান সেনানায়ক হিমুর। ১৭৬১ খ্রিষ্টাব্দ, ১৩ জানুয়ারি, পাণিপথের তৃতীয় যুদ্ধে আহম্মদ শাহ দুরানির হাতে পরাজিত হয় মারাঠা শক্তি।
এখানে মুসলমান ফকির আবু আলি কালান্দারের সমাধিস্থলটি দ্রষ্টব্য। পাণিপথ থেকে ৩৫ কিমি দূরে কার্নাল লেক (Karnal Lake)।
পাণিপথের বর্তমান খ্যাতি তাঁতশিল্পের জন্যও।
যাওয়াঃ-নিকটতম রেলস্টেশন দিল্লি -আম্বালা-কালকা রেলপথে পাণিপথ এবং পাণিপথ ও আম্বালা ক্যান্টনমেন্টের মাঝে কুরুক্ষেত্র। বাসেও চন্ডীগড় থেকে কুরুক্ষেত্র চলে আসা যায়। দূরত্ব ৮৮ কিমি।
থাকাঃ- হরিয়ানা ট্যুরিজমের কুরুক্ষেত্রে জ্যোতিসর কমপ্লেক্স ও পিপলিতে প্যারাকিট রির্সট। পানিপথে ট্যুরিজমের স্কাইলেক রিসর্ট এবং কর্নাল লেকের পাড়ে ডিলাক্স হোটেল কার্নালা লেক। এছাড়াও প্রচুর বেসরকারি হোটেল, পি ডব্লু ডি রেস্টহাউস, ধর্মশালা প্রভৃতি আছে। কুরুক্ষেত্রের এস টি ডি কোডঃ- ০১৭৪৪।
উৎসবঃ-কথিত আছে সূর্যগ্রহণের সময় এবং ফাল্গুন মাসের শুক্লা একাদশীতে (ফেব্রুয়ারি-মার্চ) সূর্যকুণ্ড তীর্থস্থানে সহস্র অশ্বমেধ যজ্ঞের পুণ্য মেলে। এইসব পুণ্যস্নানকে কেন্দ্র করে কুণ্ডের তীরে মেলা বসে যায়।