ধারাবাহিক ভ্রমণকাহিনি - হিমালয়ের ডায়েরি (দ্বিতীয় পর্ব)
ফুলের দেশে কিছুক্ষণ
সুবীর কুমার রায়
নন্দন কানন (ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স)-এর আরও ছবি
হেমকুণ্ড যাবার পথে যে চায়ের দোকানটা দেখে গেছিলাম, সেখানেই আবার ফিরে এলাম আমরা। তীরথের মা আর বোনও ইতিমধ্যে কাণ্ডিতে পৌঁছে গেছেন। তীরথ পকোড়া, পাঁপড় ভাজা আর চা খাওয়াল। চা খেতে খেতে হঠাৎ সে একটা অদ্ভুত প্রস্তাবও করে বসল – আজই নন্দন কানন ঘুরে আসতে চায়। ওর অফিসের ছুটি খুব কম। মা, ভগ্নীপতি আর বোনকে নিয়ে বদ্রীনারায়ণ যাবে, গরম কুণ্ডে স্নান করে পুণ্য অর্জন করতে। তাই আজ না গেলে ওর আর ওখানে যাওয়াই হবেনা।
আমার মনেও এ ইচ্ছা অনেকক্ষণ থেকেই উঁকি দিচ্ছিল। তীরথের প্রস্তাব শুনে বললাম, নন্দন কাননের কিছু ছবি তোলার ইচ্ছা আছে। আকাশের অবস্থা মোটেই ভাল নয়, সন্ধ্যাও নেমে আসবে। আজ ওখানে যাওয়া যেতেই পারে, যদি ভাল আবহাওয়া না পাই, তবে আগামীকাল সকালে আবার যাব। আকাশ নিশ্চয় পরিষ্কার হবে, অন্তত ভালভাবে দেখবার ও ছবি তুলবার মতো পরিষ্কার হবে, এই আশা নিয়ে চটপট বেরিয়ে পড়লাম। যে জায়গাটা থেকে রাস্তা দু'দিকে ভাগ হয়ে গেছে, সেখানে পৌঁছে দিলীপ বলল ও আজ আর হাঁটতে পারবে না। আমাদের পক্ষেও যে কতটা সম্ভব জানিনা তাও উৎসাহ নিয়ে বললাম, আজ তীরথকে নন্দন কানন দেখিয়ে নিয়ে আসি। কাল ওকে বদ্রীনারায়ণ পাঠিয়ে দিলে আমরা মুক্ত। কাল সকালে আমরা তিনজন আবার নন্দন কানন যাব। দিলীপের হাতে ফুলের ব্যাগ আর কাপড়ের ব্যাগদুটো দিয়ে, ওয়াটারপ্রুফ হাতে নিয়ে, আমরা নন্দন কাননের রাস্তা ধরলাম। ওরা নীচে গুরুদ্বোয়ারার উদ্দেশ্যে যাত্রা করল।
খানিক এগোতে না এগোতেই বৃষ্টি শুরু হ'ল। গায়ে ওয়াটারপ্রুফটা চাপিয়ে নিলাম। রোদের থেকে মাথা বাঁচানোর জন্য একটা কাপড়ের টুপি পড়াই ছিল, তার ওপরে বর্ষাতির টুপিটা দিয়ে হাঁটতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পরে ভিজে যাচ্ছে দেখে মাথায় হাত দিয়ে দেখি, হায় কপাল সেটা কখন আমায় ত্যাগ করে চলে গেছে! মহা চিন্তায় পড়লাম। এভাবে পথ চলা অসম্ভব। ভবিষ্যতেই বা কী করবো? তীরথকে ডেকে বিপদের কথা বললাম। ও এখন ভগ্নীপতি ছাড়া হয়ে, এবং আজই নন্দন কানন দেখার সুযোগ পেয়ে, আনন্দে তিনগুণ গতিতে চলেছে। পাহাড়ি রাস্তায় কত জোরে যে হাঁটতে পারে, এতক্ষণে বেশ বুঝতে পারছি। তীরথ বলল, ওর টুপিটা আমি নিতে পারি, বর্ষাতির সঙ্গে আটকানো আর একটা টুপি আছে। বললাম, কিন্তু এরপর? বলল, দুটো বর্ষাতি টুপির কোন প্রয়োজন নেই, কাজেই এই টুপিটা আমি স্বচ্ছন্দে নিজের কাছেই রাখতে পারি। মুশকিল হল ওর টুপির মাপ অনেক বড়, আমার চোখ ঢেকে যাচ্ছিল। কোন রকমে চারপাশে মুড়ে, ছাই রঙের বর্ষাতির সঙ্গে গোলাপী রঙের টুপি পরে, এগোতে শুরু করলাম। সামনে একটা গ্লেসিয়ার পড়লো। একটা মাঠের মতো পাথুরে অংশের ওপর দিয়ে গিয়ে গ্লেসিয়ারটা পার হতে হবে। সাবধানে চলেছি। দেখি কতগুলো ছেলে গ্লেসিয়ার কেটে রাস্তার মতো তৈরি করছে। ওরা তীরথের কাছে কিছু সাহায্য চাইল। ও খুচরো পয়সা বার করে, তাদের দিয়ে এগিয়ে গেল।
হঠাৎ লক্ষ্য করলাম, তীরথ যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে, সেখানকার গ্লেসিয়ারটা কীরকম ঝুলছে। গ্লেসিয়ারের ওই অংশের বরফ গলে গিয়ে একটা পাতলা বরফের তক্তার মতো হয়ে রয়েছে। তক্তার শেষ দিকটা আরও পাতলা হয়ে বিপজ্জনক অবস্থায় ঝুলছে, আর তীরথ ঠিক সেই পাতলা বরফের তক্তাটার ওপর দাঁড়িয়ে আছে। তক্তার অনেক নীচ দিয়ে তীব্র বেগে জল বয়ে যাচ্ছে। যে কোন মুহূর্তে বরফের তক্তাটা ভেঙ্গে গিয়ে তীরথকে নিয়ে অনেক নীচের জলপ্রবাহে পড়তে পারে। ভয়ার্ত গলায় চিৎকার করে ওর নাম ধরে নীচ থেকে ডাকলাম। ও বোধহয় ইশারা বুঝতে পেরে লাফ দিয়ে অনেকটা বাঁপাশে সরে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। কাছে যেতেই আমাকে প্রাণ বাঁচানোর, অন্তত পক্ষে চরম বিপদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য, বারবার ধন্যবাদ জানিয়ে দু'হাত ভরে মনাক্কা, কিশমিশ ইত্যাদি দিয়ে আমাদের সঙ্গে এগিয়ে চললো।
ক্রমশঃ ওর থেকে আমাদের ব্যবধান আবার বাড়তে লাগল। সকাল থেকে শুধু কয়েক কাপ চা এবং তীরথের মনাক্কা, কিশমিশ, পেস্তা, ছোট এলাচ খেয়ে রয়েছি। নিশ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে, বোধহয় দম ফুরিয়ে এসেছে। মাধব আমার থেকে কিছুটা এগিয়ে, তীরথকে বহুদূরে দেখা যাচ্ছে। কিছুটা এগিয়ে দেখি তীরথ আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে, আবার একসঙ্গে হলাম। একটি ছেলে নন্দন কানন থেকে ফিরছিল। সে আমাদের সাবধান করে বলল, রাস্তা খুব খারাপ, বৃষ্টি হচ্ছে, আর এগোলে ফিরতে অসুবিধা হবে। তীরথ একটু মনখারাপ করেই জিজ্ঞাসা করল কী করা উচিত? এতটা পথ কষ্ট করে এসে ফিরে যাওয়া চলে না, যা আছে কপালে হবে - মাধব কিছু বলার আগেই আমি উত্তর দিলাম। ওরা রাজি হল। পথে এবার দ্বিতীয় একটা গ্লেসিয়ার পড়ল। সাবধানে পার হয়ে রাস্তায় উঠলাম। এ পথে কাণ্ডি বোধহয় যায় না, তবে ঘোড়া বা খচ্চরের যাতায়াত আছে বোঝা যাচ্ছে। রাস্তা বলতে অভ্রযুক্ত পাথরের টুকরো ইতস্তত ভাবে ফেলা রয়েছে। অসম্ভব ধারালো পাথর, খালি পায়ে হাঁটলে, পা কেটে যাবেই। বৃষ্টির জল ও ঘোড়ার নাদে রাস্তা আরও পিছল হয়ে আছে। দূরে চোখে পড়ল সবুজ বন।
একটা ব্রীজ পার হয়ে আবার তীরথকে ধরতে পারলাম। বিরাট এলাকা নিয়ে এই ফুলরাজ্য। এখান থেকে ঘাংঘারিয়ার দূরত্ব প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার। তবে ভালভাবে নন্দন কাননকে দেখতে হলে আরও দেড়-দু' কিলোমিটার পথ এগোতে হবে। এক হাত থেকে এক বুক পর্যন্ত ফার্ণ জাতীয় গাছের মধ্যে দিয়ে পায়ে হেঁটে ঘুরতে হবে। দূর থেকে দেখলে শুধুই সবুজ বন বলে মনে হয়। দু'হাত দিয়ে জঙ্গল সরিয়ে বনের মধ্যে না ঢুকলে, ফুল পাওয়া যাবে না। বেশিরভাগ ফুলের আকারও খুব ছোট ছোট। বইয়ে পড়েছিলাম, এখানে জোঁকের উপদ্রব খুব বেশি। একটা সরু ঝরনার মতো ধারার জল খেয়ে বনের মধ্যে প্রবেশ করলাম। বুঝতেই পারছি জামা প্যান্ট সব ভিজে যাবে। বর্ষাতি গায়ে থাকায় অবশ্য শুধু্ই প্যান্ট ভিজতে শুরু করলো। এক এক রঙের ফুল, এক এক জায়গায় ফুটে আছে। কী তাদের রঙ। মনে হয় যেন ফুলের রঙ অনুযায়ী ফুলের গাছ বিভিন্ন জায়গায় লাগানো হয়েছে। মাইকের চোং-এর মতো দেখতে একরকম ফুল দেখলাম। যত রঙ, যত কারুকার্য্, সব ফুলের ভিতরের অংশে, ফুলের বাইরেটা বিশ্রী ফ্যাকাশে সবুজ রঙের। চারিদিকে একরকম হলুদ ও সাদা রঙের ফুলের ঝাড় চোখে পড়ছে। রজনীগন্ধার মতো বড় বড় ডাঁটার ওপর থোকা থোকা ফুল, অনেকটা এলাকাকে হলুদ বা সাদা করে, সব গাছের ওপরে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। উপত্যকার চারিদিকের পাহাড়ের ওপরেও সবুজ বনের রাজত্ব। ওখানেও হয়তো এইসব ফুল পাওয়া যাবে, হয়তো এর থেকেও সুন্দর ফুলেরা লোকচক্ষুর আড়ালে ওখানেই বসবাস করে। তীরথ তার মা ও বোনকে দেখাবার জন্য হেমকুণ্ড সাহেবে দেখেনি এমনসব ফুল তুলে সংগ্রহ করতে শুরু করল। এখানে কিন্তু ব্রহ্মকমল পাওয়া যায় না। বিস্তীর্ণ এলাকা ঘুরেও, আমাদের অন্তত একটাও চোখে পড়ে নি। সম্ভবত এখানকার উচ্চতা হেমকুণ্ডের তুলনায় অনেক কম বলে, এখানে এ ফুল ফোটে না।
হেমকুণ্ডে একরকম বেগুনি রঙের দোপাটির মতো ফুল দেখেছিলাম, এখানে সেই ফুল অজস্র ফুটে আছে, তবে সব হলুদ রঙের। এবার বর্ষা অনেক দেরিতে এসেছে, এখনও ভাল করে আসেনি বললেই ঠিক হবে। তাই সব ফুল এখনও ফোটেনি। অদ্ভুত অদ্ভুত সব ফুলের কুঁড়ি হয়ে আছে। ফুলের বন দিয়েই যাত্রীরা ঘুরে বেড়ায়, ফলে অনেক গাছ কাত হয়ে মাটিতে শুয়ে আছে। বৃষ্টিতে ভিজে এত কষ্ট করে এতটা পথ হেঁটেও খুব একটা নতুন ফুল দেখতে না পেয়ে মনটা বেশ খারাপ। ঠিক করলাম কাল আর আসব না। দিলীপ হয়তো আমাদের কথা বিশ্বাস করবে না। তীরথকে বললাম, ওকে একটু বুঝিয়ে বলতে। এবার বেশ জোরেই বৃষ্টি নামল। দ্রুত পা চালালাম। বৃষ্টির তোড়ে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। একে বৃষ্টি, তার ওপর ভীষণ জোরে হাওয়া বইছে। বৃষ্টির ছাটে ভাল করে তাকানো পর্যন্ত যাচ্ছে না। তিনজনে লাইন দিয়ে হেঁটে বন পেরিয়ে রাস্তায় উঠলাম। এই অবস্থাতেও তীরথ ওর মা ও বোনের জন্য নতুন ফুলের অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে। আমরাও ওর কাজে সাহায্য করতে করতে পথ চলছি। রাস্তায় সেই ছেলেটা ছাড়া আর কাউকে এতক্ষণ পর্যন্ত চোখে পড়েনি। আমরা তিনজনেই এত বড় ফুলের সাম্রাজ্যে বিচরণ করছি। রাস্তা বেশ পিচ্ছিল হয়ে গেছে। টুকরো টুকরো পাথরগুলো ফেলে যেন আরও বিপদ সৃষ্টি করেছে। যতটা সম্ভব মুখ ঢেকে, প্রায় ছুটে আমরা নীচে নেমে আসছি। গ্লেসিয়ারগুলো একে একে লাঠি ঠুকে ঠুকে অতিক্রম করে এলাম। বর্ষাতি আমাদের বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা করতে পারছে না। আমরা পায় সম্পূর্ণ স্নান করে গেছি। অবশেষে একসময় কষ্টের সমাপ্তি ঘটিয়ে ছুটে গুরুদ্বোয়ারার হলঘরে ঢুকলাম।
তীরথের মা, বোন, দিলীপ - সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে বলে মনে হল। বাইরে প্রবল বৃষ্টি, হলঘরের ভিতরে মোটা মোটা কম্বল গায়ে দিয়ে ওরা আরামে শুয়ে আছে। এদিকে আমরা বৃষ্টিতে সর্বাঙ্গ ভিজিয়ে ঠাণ্ডায় কাঁপছি। আমাদের দু'জনের আবার ওই অবস্থায় থাকা ছাড়া উপায়ও নেই। সঙ্গে কোন দ্বিতীয় পোশাক নেই। দিলীপকে ডেকে সব বললাম। আগামীকাল আর ওখানে যাবার কোন যুক্তি নেই, তাও জানালাম। আমি আর মাধব বাইরের চায়ের দোকানে এসে, আলুর পরোটা আর কফি খেলাম। দোকানের একটা ছেলেকে দিয়ে তীরথদের জন্যও পাঠালাম। একটু পরে দিলীপ দোকানে এল। দোকানদার জানতে চাইলেন, আমরা আজ নন্দন কানন গিয়েছিলাম কীনা। খানিক হতাশার সুরেই বললাম গিয়েছিলাম, তবে ফুল সেরকম পেলাম না - আমাদের জায়গাটা খুব একটা ভাল লাগেনি। দোকানের বাইরের দিকে এক ভদ্রলোক বসে চা খাচ্ছিলেন। শুনে বললেন, নন্দন কানন যেতে একটা নদী পার হতে হয়। ওই নদীর কাছে একটা গ্লেসিয়ার ভেঙ্গে গেছে। ভাঙ্গা গ্লেসিয়ারের ওপারে অনেক ফুল আছে। উনি ভাঙ্গা গ্লেসিয়ার পার হয়ে ওপারে যেতে সাহস করেন নি। তবে একজন ভদ্রলোক ওপারে গিয়েছিলেন, তাঁর কাছে শুনেছেন। দোকানদার এবার জিজ্ঞাসা করলেন, আমরা কবরখানা পর্যন্ত গিয়েছিলাম কীনা। কথাটা শুনে মন খারাপ হয়ে গেল। অনেক দিন আগে একটা বইতে নন্দন কাননের কবর সম্বন্ধে পড়েছিলাম। যাঁর কবর, সেই জোয়ান মার্গারেট লেগি সম্বন্ধেও অনেক কিছু পড়েছিলাম। উনি নাকি ইংল্যান্ড থেকে ফুলের বীজ সংগ্রহ করতে এসে দুর্ঘটনায় এখানে মারা যান। ঠিক করে এসেছিলাম, কবরটা দেখতে যাব, ফুল দেব, ছবি তুলব। আর কার্যক্ষেত্রে একবারে ভুলেই গেলাম! আসলে বৃষ্টি আর রাস্তার কষ্ট, আমাদের সব গোলমাল করে দিয়েছে। দোকানদার এবার বললেন, ওই কবরখানার কাছেই আসল ফুল পাবেন, আপনারা নন্দন কাননের আসল জায়গাটাই যাননি। দ্বিতীয় গ্লেসিয়ার থেকে নন্দন কাননের এলাকা শুরু হলেও, যত ভিতরে যাবেন, তত নতুন নতুন ও সুন্দর ফুলের সন্ধান পাবেন। এরপরেও সেখানে না গিয়ে ফিরে যাই কী করে? বন্ধুদের বললাম, কাল ভোরে এই দোকান থেকে পরটা, ডিমসিদ্ধ কিনে নিয়ে, আমরা আবার নন্দন কানন যাব। তীরথকে বলব ও যেন গোবিন্দঘাট চলে যায়, সম্ভব হলে বদ্রীনারায়ণ। আমরা নন্দন কানন থেকে সোজা গোবিন্দ ঘাট, সম্ভব হলে বদ্রীনারায়ণ চলে যাব। গুরুদ্বোয়ারার হলঘরে ফিরে এসে কম্বল চাপা দিয়ে শুয়ে পরলাম। তীরথকে আমাদের প্ল্যান জানালাম। ঠিক হল আগামীকাল বিকেলে গোবিন্দঘাটে আবার আমাদের দেখা হবে।
বিশ-এ আগষ্ট। আজ আমরা তিনজন নন্দন কানন যাব। রাস্তা আমাদের চেনা হয়ে গেছে, অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তীরথরা তৈরি, তৈরি আমরাও। তবে ওদের পথ গুরুদ্বোয়ারা থেকে বেরিয়ে ডানদিকে, আর আমরা যাব বাঁদিকে। ওরা যাবে গোবিন্দঘাট, আমরা নন্দন কানন। হাঁটতে হাঁটতে একসময় আমরা দ্বিতীয় গ্লেসিয়ারটার কাছে পৌঁছলাম। আকাশ একেবারে পরিষ্কার, সুন্দর রোদ উঠেছে। এখনও সেই ভদ্রলোকের কাছে শোনা - নদী ও ভাঙ্গা গ্লেসিয়ারের কথা মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। আস্তে আস্তে একসময়, গতকাল যেখান থেকে প্রথম ফার্ণ জাতীয় গাছের বনে ঢুকেছিলাম, ব্রীজ পার হয়ে সেখানে এসে উপস্থিত হলাম। আজ আর বর্ষাতি গায়ে নেই, ফলে প্যান্টের সাথে জামা ও সোয়েটারও ভিজেছে। সামনে বিরাট অঞ্চল জুড়ে বেগুনি ও হলুদ রঙের দোপাটির মতো একপ্রকার ফুলের জঙ্গল। দেখলে মনে হবে কেউ চাষ করেছে, কারণ এখানে এ ছাড়া অন্য কোন ফুল নেই। অনেকটা অঞ্চল জুড়ে, যেন একটা বড় মাঠে, এই ফুলের চাষ করা হয়েছে। দিলীপকে বললাম ফুলের জঙ্গলের মাঝখানে দাঁড়াতে, উদ্দেশ্য একটা ছবি তোলা। একটা বড় পাথর পড়ে আছে। তার ওপরে উঠে ছবি নেব বলে প্যান্টটা যেই একটু তুলেছি, ব্যাস হাঁটু পর্যন্ত বিছূটি লেগে গেল। চুলকাতে চুলকাতে প্রাণ যায় আর কী! ছবি তুলে আবার এগিয়ে চললাম। গতকালের জায়গাটা পেরিয়ে প্রায় মাইল খানেক যাওয়ার পর চোখে পড়ল, ভাঙ্গা গ্লেসিয়ারটা। ভাঙ্গা বললে ভুল হবে। আসলে একটাই গ্লেসিয়ার ওপর থেকে নীচে নেমে এসেছে। কিন্তু মাঝখান থেকে দু'ভাগে বিভক্ত। মাঝখানটা দিয়ে একটা দশ-বার ফুট চওড়া নদী, প্রবল বেগে গড়িয়ে নেমে আসছে। কিছুটা এগিয়েই নদীটা আবার গ্লেসিয়ারের ভিতর ঢুকে যাচ্ছে। ঐ জায়গাটা কিরকম গর্ত মতো। যেন গ্লেসিয়ারটা নদীটাকে গ্রাস করবার জন্যই বিশাল হাঁ করে আছে। ওখানে পড়লে গ্লেসিয়ারের ভিতর দিয়ে কোন রাজ্যে নিয়ে যাবে জানি না। কবরের কাছে যেতে হলে, নদীটার অপর পারে যেতে হবে।
নদীর ওপর ছোট বড় অনেক পাথর পড়ে আছে। কোনটা জলের তলায়, কোনটা বা মাথা বার করে আছে। জলের গভীরতা না থাকলেও, গতি খুব বেশি। পাথরে পাথরে ধাক্কা খেয়ে, জলের রঙ দুধের মতো সাদা দেখাচ্ছে। দিলীপ ও মাধবকে বললাম, জুতো খুলে ফেলতে। আমি আগে নদী পার হয়ে গিয়ে, ওদের হাত থেকে মালপত্র নিয়ে নেব। তারপরে ওরা একে একে, আমার বাড়ানো লাঠি ধরে পাথরের ওপর দিয়ে পা ফেলে নদী পার হয়ে যাবে। এই ব্যবস্থা পাকা করে, পাথরের ওপর লাফ দিয়ে দিয়ে নদী পার হয়ে, অপর পারে গিয়ে দাঁড়ালাম। অদ্ভুত ব্যাপার, নদীর এপারটা আবার পুরো বরফে আচ্ছাদিত, খালি পায়ে দাঁড়াতে বেশ কষ্ট হচ্ছে। মাধবকে বললাম একটা একটা করে জুতোগুলো ছুঁড়ে দিতে। মাত্র দশ-বার ফুট দূর থেকে ওগুলো আমি সহজেই লুফে নিতে পারবো। মাধবের কিন্তু অন্য মত। সে বললো, লোফালুফিতে যথেষ্ট ঝুঁকি আছে। ঠিকমতো লুফতে না পারলে, নদীতে পড়ে যেতে পারে। আর একবার নদীতে পড়লে, গ্লেসিয়ারের সেই হাঁ করা গর্ত দিয়ে গ্লেসিয়ারের ভিতর চলে যাবে। তাই ও ঠিক করলো একটা একটা করে জুতো, ও আমার দিকের পারে, বরফের ওপর ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলে দেবে। সেইমতো ও ওপার থেকে প্রথম পাটি জুতোটা দক্ষ ক্রিকেটারের স্টাইলে এপারে ছুঁড়লো, এবং আমরা চরম বিপদের মধ্যে পড়লাম। হান্টার সু-এর পিছন দিকটা সামনের দিকের তুলনায় অনেক বেশি ভারী। ও জুতোর ফিতে ধরে জুতোটা এপারে বেশ জোরে ছোঁড়ায়, ওটা এপারে না এসে, সোজা ওপরদিকে অনেকটা উঠে গেল। আমি এক পা নদীতে বাড়িয়ে কোনমতে ওটাকে লুফে নেবার চেষ্টা করলাম। ক্রিকেট খেলায় ওভার বাউন্ডারি মারতে গিয়ে যেমন মাঝেমাঝে, বল মাঠের বাইরে না পড়ে অনেক ওপরে উঠে মাঝমাঠে পড়ে, ঠিক সেই রকম ভাবে আমার প্রায় হাত খানেক দূর দিয়ে অনেকটা ওপর থেকে ওটা নদীতে গিয়ে পড়লো, এবং সঙ্গে সঙ্গে নদীর প্রবল স্রোতে, নীচের দিকে বরফের গহ্বরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলো। পা দিয়ে ওটাকে কোনমতে অপর পারে কিক্ করে পাঠাবার চেষ্টা করলাম। কিন্তু চোখের নিমেষে সেটা আমার পায়ের পাতার ওপর দিয়ে চলে গেল। নদীর ওপারে, যেখানে দিলীপ দাঁড়িয়ে, সেখানে ওটাকে এক মুহুর্তের জন্য দেখা গেল। চিৎকার করে ওকে লাঠি দিয়ে ওটাকে আটকাতে বললাম। কিন্তু ও দেখতে পাবার আগেই, সেটা আবার জলের তলায় চলে গেল। বুকের মধ্যে যেন কেমন করে উঠলো। টাকা পড়ে গেলে তবু টাকার যোগাড় করা যাবে, অন্তত ফিরে আসা যাবে। কিন্তু জুতো? জুতো কোথায় পাব? তিন-তিনটে গ্লেসিয়ার পেড়িয়ে, জোঁক ও বিছুটি বনের মধ্যে দিয়ে হেঁটে গিয়ে , অভ্রযুক্ত ধারালো পাথরের ওপর দিয়ে পাঁচ কিলোমিটার পথ খালিপায়ে বা একপায়ে জুতো পড়ে হাঁটলে, তবে ঘাংঘারিয়া। সেখানে কোন দোকান নেই। ওখান থেকে তের-চোদ্দ কিলোমিটার পথ হাঁটলে, গোবিন্দঘাট। এ পথটাও উঁচুনীচু অসমান পাথুরে পথ। ওখানে চায়ের দোকান কয়েকটা আছে বটে, কিন্তু জুতোর দোকান কোথায়? ওখান থেকে বাসে পঁচিশ কিলোমিটার রাস্তা গিয়ে বদ্রীনারায়ণ। ওখানে বদ্রীবিশালের কৃপায়, জুতো হয়তো কিনতে পাওয়া যাবে, তবে ভাল নরম জুতো পাওয়া যাবে কী না, বা পায়ের মাপে পাওয়া যাবে কী না, যথেষ্ট সন্দেহ আছে। নন্দন কাননের রাস্তা ঘোড়ার নাদে ভর্তি। এপথে খালিপায়ে হাঁটতে গেলে ধারালো পাথরে পা কাটবেই, আর তার ওপরে ঘোড়ার নাদের প্রলেপ? স্বর্গের রাস্তা পরিষ্কার!
হাঁ করে দাঁড়িয়ে চিন্তা করার সময় নেই। আমার দিকের পারে, একটু দূরে বরফের গহ্বরের কাছে, একটা পাঁচ-ছয় ফুট উচু প্রায় গোলাকার পাথর রয়েছে। পাথরটার পিছনে সাত-আট ফুট দূরে সেই মৃত্যু গহ্বরে নদীটা ঢুকে যাচ্ছে। দৌড়ে পাথরটার কাছে গিয়ে হাতের চাপ দিয়ে ওটার ওপরে উঠেই, দেখতে পেলাম আমাদের পরম আরাধ্য দেবতাটিকে। ফিতেটা একটা পাথরের তলায় কী ভাবে আটকে গিয়ে জলের স্রোতে বনবন্ করে ঘুরছে। যেকোন মুহুর্তে ফিতে ছিঁড়ে বা পাথর থেকে আলগা হয়ে, সঙ্গে সঙ্গে বরফের ভিতর চলে যাবে। চিৎকার করে মাধবকে ডাকলাম, উদ্দেশ্য ও এসে আমায় ধরবে। আমি নীচে নেমে ওটাকে তুলে আনবো। মাধব কী করবে ভেবে পেল না। সময়ও আর নষ্ট করা চলে না, যা করার এখনই করতে হবে। বিপদ মাথায় করে নীচে গহ্বরের কাছে বরফের ওপর লাফ দিলাম। যে গ্লেসিয়ারের ওপর একটু আগে হাঁটতে ভয় পাচ্ছিলাম, সমতল হওয়া সত্ত্বেও লাঠি দিয়ে ঠুকে ঠুকে হাঁটছিলাম, সেই গ্লেসিয়ার, তা আবার নীচের দিকে ঢালু হয়ে নেমে গেছে, এবং একটু দূরেই ওরকম মৃত্যু গুহা থাকা সত্ত্বেও, অত উঁচু পাথরের ওপর থেকে কোন কিছু না ভেবে স্বচ্ছন্দে লাফ দিয়ে দিলাম। এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে, জুতোটাকে দু'হাতে চেপে ধরলাম। ওঃ, সে যে কী আনন্দ পেলাম কী বলবো। আমার সামনে বড় পাথরটা, তাই মাধবরা কী করছে দেখতে পাচ্ছি না। জুতো হাতে উঠে দাঁড়ালাম। অনেকক্ষণ একভাবে খালিপায়ে বরফের ওপর লাফঝাঁপ করে, পা দুটো ঠাণ্ডায় প্রায় অবশ হয়ে গেছে। উত্তেজনায় এতক্ষণ বুঝতে পারি নি। এখন দেখছি সোজা হয়ে দাঁড়াতে বেশ কষ্ট হচ্ছে। মাধবরা এখন আমায় দেখতে পাচ্ছে। ওরা দূর থেকেও আমার অবস্থার কথা বুঝে ফেলেছে। মাধব দু'হাত নেড়ে চিৎকার করে আমায় বসে পড়তে বলছে। কিন্তু বসব কোথায়? যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, সেটাও তো বরফ। শেষে হাতের চাপে পাথরটার ওপর উঠবার চেষ্টা করলাম। এদিক থেকে পাথরটার উচ্চতা অনেক বেশি হওয়ায়, পাথরের ওপর ওঠাও বেশ কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। শেষ পর্যন্ত হাতের চাপে বরফ থেকে পাথরটার ওপর উঠতে সমর্থ হলাম। জুতোর ওপর হাতের চাপ পড়ায়, জুতোর ভেতরের সমস্ত জল ছিটকে আমার মুখ, চোখ, সোয়েটার ভিজিয়ে দিল। একটু সময় নিয়ে আবার আগের জায়গায়, মানে নদীর পারে ফিরে এলাম। এতকিছু ঘটনা ঘটতে বোধহয় পাঁচ মিনিটও সময় নিল না। মাধবকে বললাম আস্তে আস্তে বাকী জুতোগুলো ছুঁড়ে আমার হাতে দিতে। একটা একটা করে সবগুলো জুতো আমার পায়ের কাছে জড়ো করলাম। লাঠিতে ঝুলিয়ে ক্যামেরাটাও এপারে নিয়ে আসলাম। এবার এপার থেকে একটু জলে নেমে লাঠিটা বাড়িয়ে ধরলাম। ওরা লাঠি ধরে সহজেই এপারে চলে এল। জুতোটা জলে ভিজে নতুনদার পাম্প সুতে পরিণত হয়েছে। মাধব ভিজে জুতোর ভেতর থেকে মোজা বার করে ঘোষণা করলো - "এটা দিলীপের জুতো"। দিলীপের মুখের তখন কী শোচনীয় অবস্থা। ওর পায়ের মাপ অস্বাভাবিক বড়। জুতো হারালে, কষ্ট করে বদ্রীনারায়ণ গেলেও ওর পায়ের মাপের জুতো মিলতো না। কারণ কলকাতাতেই আমাদের পায়ের মাপের হান্টার স্যু পাওয়া গেলেও, অনেক দোকানেই ওর মাপের জুতো পাওয়া যায়নি। ও আমাকে বারবার কৃতজ্ঞতা জানাতে লাগলো, আর আমি মনে মনে মাধবকে গালাগাল করতে লাগলাম। জায়গাটাকে স্মরণীয় করে রাখতে গোটাকতক ছবি নিয়ে নিলাম। এতক্ষণে বুঝছি উত্তেজনায় কী সাংঘাতিক ঝুঁকি নেওয়া হয়েছিল। জুতো পরে আবার হাঁটা শুরু হল।
এবার কিন্তু সত্যিই নতুন নতুন ফুলের সন্ধান পেলাম। সব রকম ফুল কিছু কিছু করে তুলে, দিলীপের হাতে দিলাম। উদ্দেশ্য কবরে ফুল দেব। টিপটিপ করে বৃষ্টি শুরু হ'ল। ওয়াটারপ্রুফ গায়ে চাপিয়ে, এক বুক ফার্ণ জাতীয় গাছের জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে হেঁটে চলেছি। সাপখোপ বা জোঁকের চিন্তা একবারও মাথায় আসেনি। মধ্যে মধ্যে গাছে ঢাকা পাথরের টুকরোতে হোঁচট খাচ্ছি। এগুলো খুব বিপজ্জনকও বটে। অসাবধানে দুই পাথরের মধ্যে পা পড়লে, পা ভেঙ্গে যেতে পর্যন্ত পারে। দূরে একটা সাদা রঙের পতাকা উড়ছে। ওটাই সম্ভবত কবর। আমি ওদের থেকে অনেকটা এগিয়ে আছি। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা কবরের কাছে চলে এলাম। তুলে আনা সমস্ত ফুল কবরের বেদীর ওপর দিয়ে, রোদের অপেক্ষায় রইলাম। অবশেষে সে আশা ছেড়ে একটা বড় পাথরের ওপর বসে, আলুর পরোটা ও ডিম সিদ্ধর গতি করতে লাগলাম। হঠাৎ একটু শরৎকালের মতো রোদ দেখা গেল।
বেদীর ওপর একটা ছোট মার্বেল পাথরের ফলক। মাঝখান থেকে ফেটে গেছে। হাত দিয়ে ধুলো, গাছের শুকনো পাতা সরিয়ে, খুব কাছ থেকে আবার ছবি নিলাম। কবরটার পাশে, আমাদের এখানকার বনবেগুনের মতো দেখতে, অদ্ভুত নীল রঙের একরকম ফুল দেখলাম। চারদিকে আরও কিছুটা ঘুরে, ফিরবার পথ ধরলাম। সময় নষ্ট করে লাভ নেই। যদি সম্ভব হয়, আজই বদ্রীনারায়ণ চলে যাব। দু'টো জায়গা দেখা হল। এবার তৃতীয় জায়গার জন্য তৈরি হতে হবে। একসময় আমরা আবার সেই নদীটার কাছে ফিরে এলাম। কোন রাস্তা না থাকায়, জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে আন্দাজে হেঁটে এসে দেখি, গতবার যেখান দিয়ে নদী পার হয়েছিলাম, সেখানে না এসে অন্য জায়গায় এসে হাজির হয়েছি। লাঠি ঠুকে বরফের ওপর দিয়ে নদীতে নামলাম। ওদের দাঁড়াতে বলে কোনদিক দিয়ে পার হওয়া সুবিধাজনক ভাবছি, মাধবই আবিস্কার করলো সেই সহজতম পথটা। সুন্দরভাবে পাথর পড়ে আছে। তিনজনই এবার জুতো পায়ে সহজেই নদী পার হয়ে এলাম। এপারে এক বৃদ্ধ ইংরেজ ভদ্রলোক, সঙ্গী ইংরেজ বৃদ্ধাকে নিয়ে খুব বিপদে পড়েছেন। কোনখান দিয়ে পার হলে তাঁদের সুবিধা হবে, ঠিক করতে পারছেন না। একটু দূরে এক হিন্দুস্থানি স্বামী-স্ত্রীরও সেই একই সমস্যা। সেই ইংরেজ বৃদ্ধার দিকে হাত বাড়াতে, তিনি এত জোরে আমার হাত চেপে ধরলেন, যে ভয় হল তিনি পড়লে একেবারে আমায় নিয়ে পড়বেন। একটা একটা করে পাথর টপকে এগোচ্ছি, আর তাঁকে টেনে নিয়ে আসছি। শেষ বড় পাথরটার ওপর থেকে ওপারে উঠলাম। বৃদ্ধাটি বড় পাথরটায় দাঁড়ালেন। তাঁকে একটানে এপারে নিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে, সম্ভবত তাঁর পায়ের চাপে, পাথরটা গড়িয়ে জলে চলে গেল। খুব সামলানো গেছে যাহোক! ওপথে আর ওপারে ফেরা গেল না। একটু ঘুরে আবার ওপারে গেলাম। বৃদ্ধ বৃদ্ধাকে যতক্ষণ দেখতে পেলাম, দেখলাম হাত নেড়ে আমাদের বিদায় জানালেন। আবার সেই ফুল, আবার সেই বনজঙ্গল, ক্রমে ভাঙ্গা রাস্তা, গ্লেসিয়ার, ঝরনা ফেলে, আমরা আবারও সেই চেনা হয়ে ওঠা চায়ের দোকানে ফিরে এলাম।
(এরপর আগামী সংখ্যায়)
নন্দন কানন (ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স)-এর আরও ছবি
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের অবসরপ্রাপ্ত অফিসার সুবীর কুমার রায়ের নেশা ভ্রমণ ও লেখালেখি। ১৯৭৯ সালে প্রথম ট্রেকিং — হেমকুন্ড, ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স, বদ্রীনারায়ণ, মানা, বসুধারা, ত্রিযুগী নারায়ণ, কেদারনাথ, গঙ্গোত্রী-গোমুখ ও যমুনোত্রী। সেখান থেকে ফিরে, প্রথম কাগজ কলম নিয়ে লিখতে বসা। ভ্রমণ কাহিনি ছাড়া গল্প, রম্য রচনা, স্মৃতিকথা নানা ধরণের লিখতে ভালো লাগলেও এই প্রথম কোন পত্রিকায় নিজের লেখা পাঠানো।