ধারাবাহিক ভ্রমণকাহিনি - হিমালয়ের ডায়েরি (তৃতীয় পর্ব)

আগের পর্ব – ফুলের দেশে কিছুক্ষণ


বদ্রীনারায়ণ থেকে মানা ও বসুধারা

সুবীর কুমার রায়

পূর্বপ্রকাশিতের পর -

পরটাগুলো গরম করে নিয়ে কফির সঙ্গে খেতে ভালই লাগল। মাধব গিয়ে কম্বলগুলো গুরুদ্বোয়ারা কর্তৃপক্ষকে ফেরৎ দিয়ে, আমাদের জিনিসগুলো নিয়ে এল। দোকানে বসেই ঘাংরিয়া গুরুদ্বোয়ারার একটা ছবি নিলাম। কয়েকজন মিলিটারি, দোকানের বাইরে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছে। অনেকদিন বাড়ি ছেড়ে বেরিয়েছি। গোটা পৃথিবীর কোন খবর আমরা এতদিন পাইনি। ওদের হাতে রেডিও দেখে খবর জিজ্ঞাসা করলাম, ওরা জানাল, প্রধান মন্ত্রী চরণ সিং পদত্যাগ করেছেন। ওসব খবর তখন মোটেই মুখরোচক মনে হল না। দাম মিটিয়ে গোবিন্দঘাটের উদ্দেশ্যে হাঁটতে শুরু করলাম। নন্দন কানন থেকে ফিরবার পথে চারজন যুবকের সাথে দেখা হয়েছিল। তারা বোধহয় হেমকুণ্ড সাহেব পরে যাবে। তাদের একজনের হাতে দেখলাম, সাদা বেশ কয়েকটা কাগজ যত্ন করে পলিথিন পেপারে মোড়া। আলাপ হলে জিজ্ঞাসা করেছিলাম এই কাগজগুলো কী জন্য নিয়ে যাচ্ছে। উত্তরে একজন বলেছিল, এগুলো ব্লটিং পেপার, এটা দিয়ে মুড়ে ব্রহ্মকমল নিয়ে যাবে। তাতে নাকি ফুল অনেকদিন টাটকা থাকে। আমি হেসে বললাম, 'মৌয়া গাছের মিষ্টি ছায়া ব্লটিং দিয়ে শুষে, ধুয়ে মুছে সাবধানেতে রাখছি ঘরে পুষে', গোছের ব্যাপার বলছেন। সত্যিই কী ব্লটিং পেপারে মুড়ে রাখলে, ফুল অনেকদিন ভাল ও টাটকা থাকে? ওরা বলল তাই শুনেছে। বললাম, নন্দন কাননে কিন্তু ব্রহ্মকমল পাবেন না, ব্রহ্মকমল নিতে গেলে হেমকুণ্ড সাহেব যেতে হবে। ওরা তবু বললো না না, নন্দন কাননেই তো আসল ব্রহ্মকমল পাওয়া যায়। বললাম দু-দু'বার ঘুরে আসলাম, আসল নকল একটাও তো চোখে পড়ে নি। দেখুন চেষ্টা করে, বেষ্ট অফ লাক। এখন হঠাৎ ওদের কথা এসে পড়ায়, দিলীপ বলল, আগে জানলে ব্লটিং পেপার নিয়ে আসতাম। একে ব্রহ্মকমল খুব একটা বেশি নেওয়া হয় নি, তাও আবার যদি ভাল না থাকে, তবে দুঃখের শেষ থাকবে না।
সকালবেলা তীরথ চলে যাওয়ার আগে, আমাদের একটা পলিথিন ব্যাগে করে, ওদের বাড়িতে তৈরি ঘিয়ে ভাজা আটার মতো এক প্রকার খাবার দিয়ে গেছে। রাস্তায় খবর পেলাম বিকেল চারটের সময় শেষ বাস পাওয়া যাবে। হাতে সময় খুব অল্প। কোন দোকানে চা পর্যন্ত না খেয়ে, তীরথের দেওয়া নতুন খাবার মুখে পুরে, আমরা প্রায় ছুটে নেমে চলেছি। হেমকুণ্ড, নন্দন কানন থেকে ফিরছি বলে, পথে হেমকুণ্ডগামী পাঞ্জাবীরা আমাদের সাথে কথা বলছে, খোঁজখবর নিচ্ছে। অল্প কথায় আলাপ সেরে, আবার সামনে এগিয়ে চলেছি। জঙ্গলচটিতে এসে আমরা চা খেলাম, সঙ্গে তীরথের দেওয়া আটাভাজা। জিনিসটা নতুন হলেও, খেতে বেশ ভালই। এখানে আবার শুনলাম বদ্রীনারায়ণ যাবার বাস, পৌনে পাঁচটার সময় পাওয়া যাবে। বুকে নতুন আশা নিয়ে দাম মিটিয়ে ছুটলাম। একনাগাড়ে নীচের দিকে নামতে নামতে, পাগুলো বেশ ব্যথা করছে। যতদূর দৃষ্টি যায় দেখবার চেষ্টা করছি নীচের গুরুদ্বোয়ারা দেখতে পাওয়া যায় কী না। এখনও কিছু নজরে পড়ে নি। আরও কিছু পথ চলার পর, হঠাৎ দূরে, বহুদূরে, আমাদের আকাঙ্খিত গুরুদ্বোয়ারার দেখা মিলল। এবার আমাদের হাঁটার গতি আরও বেড়ে গেল। সবকিছু ঠিক থাকলে, আজই আমরা বদ্রীনারায়ণ পৌঁছচ্ছি। শেষ পর্যন্ত গুরুদ্বোয়ারার সামনে এসে হাজির হলাম। সামনে কয়েকজন পাঞ্জাবী বসে আছে। তীরথকে দেখলাম না। সময় নষ্ট না করে, দোতলায় মাল রাখার ঘরে গেলাম। বাইরে থেকে দরজায় তালা ঝুলছে। এদিকে প্রায় সাড়ে চারটে বাজে। দৌড়ে গেলাম কুলি ডাকতে। একজন কুলির কাছেই জানতে পারলাম, এক পাঞ্জাবীর কাছে মাল রাখার ঘরের চাবি থাকে, এবং সে বাস রাস্তায় গেছে। মাধবকে ডুপ্লিকেট চাবি কার কাছে থাকে জেনে মাল নেওয়ার ব্যবস্থা করতে বলে, ছুটলাম বাস রাস্তার দিকে। কুলিটা জানালো সেই পাঞ্জাবীটি মিলিটারি রঙের জামা ও পায়জামা পরে আছেন। মাধবকে বললাম, ভদ্রলোককে খুঁজে পাঠিয়ে দিচ্ছি আর রাস্তায় বাস থামাবার জন্য অপেক্ষা করছি। দেখি যদি অনুরোধ করে বাসটাকে পাঁচ-সাত মিনিট বেশি সময় দাঁড় করানো যায়। বাস রাস্তায় যাবার পথেই পাঞ্জাবী ভদ্রলোকটির সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। হাতজোড় করে তাঁকে তাড়াতাড়ি ঘর খুলে মালপত্র বার করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলাম। এও জানালাম যে আমার দু'জন সঙ্গী গুরুদ্বোয়ারায় কুলি নিয়ে অপেক্ষা করছে। তিনি সম্মতি জানিয়ে জোর কদমে গুরুদ্বোয়ারার দিকে পা চালালেন। খানিক বিরক্তিও লাগছিল যে তীরথ আমাদের জন্য অনেক করছে ঠিকই, কিন্তু বাধ্যতামূলকভাবে এই গুরুদ্বোয়ারায় থাকাটা ভালোলাগছিলনা, অনেকটা ওদের মতো করেই চলতে হচ্ছিল। তীরথের দেখা না পেয়ে যেন একটু স্বস্তিই পেলাম, মনে হল বদ্রীনারায়ণ গিয়ে নিজেদের পছন্দ মতো যেকোন হোটেলে ওঠা যাবে। আর আমাদের গুরুদ্বোয়ারায় মালপত্র নিয়ে লাইন দিয়ে উদ্বাস্তুদের মতো রাত কাটাতে হবে না। এইসব ভাবতে ভাবতে বাস রাস্তায় এসে, সামনে তাকিয়ে চমকে উঠলাম। তীরথ দাঁড়িয়ে। ওর মা, বোন ও ভগ্নীপতি একটা চায়ের দোকানে বেঞ্চে বসে আছেন। তীরথ আমায় দেখেই প্রায় ছুটে এসে, নন্দন কানন সম্বন্ধে নানারকম প্রশ্ন করতে শুরু করে দিল। ওকে জুতো হারানোর গল্প বললাম। ওর মাকে নিজের ভাষায় ঘটনাটা বলল। নতুন নতুন ফুল কী কী দেখেছি, এবং কবরখানার কথা বলতে, ও এগুলো দেখতে না পাওয়ার জন্য আফসোস করে বলল, গতকাল আর একটু কষ্ট করে এগিয়ে গেলেই ভাল হত। ও আজ এখানেই থাকবে বলে স্থির করেছিল। কিন্তু ভগ্নীপতি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায়, আজই বদ্রীনারায়ণ যাচ্ছে। কাল ভোরে গরমকুণ্ডে স্নান সেরে দেশের উদ্দেশ্যে রওনা দেবে। ও চলে যাচ্ছে, এবং কেন চলে যাচ্ছে জানিয়ে, গুরুদ্বোয়ারায় একটা চিঠি লিখে রেখে এসেছে, আমাদের দেওয়ার জন্য।
অনেকক্ষণ সময় কেটে গেল, মাধবদের পাত্তা নেই। তীরথকে বললাম, একটু এগিয়ে দেখি। ও বলল, চিন্তা কোরো না, ওরা ঠিক সময়ে চলে আসবে। একটু পরেই অনেক দূরে মাধব, দিলীপ ও কুলিকে লাইন দিয়ে আসতে দেখা গেল। সবার জন্য চায়ের অর্ডার দিয়ে, এগিয়ে গিয়ে মাল নিলাম। হাল্কা বৃষ্টি শুরু হওয়ায়, দাঁড়িয়ে থাকা একটা গাড়ির তলায় মালপত্রগুলো ঢুকিয়ে রাখলাম। চা দিয়ে গেল। একটাও চুমুক দেবার আগেই বাস এসে গেল। চা ফেলে রেখে বাসের ছাদে উঠে মালপত্র সাজিয়ে রাখলাম। কুলির পয়সা দিতে গিয়ে দেখা গেল খুচরো নেই। তীরথের বোনের কাছ থেকে দুটো টাকা নিয়ে, কুলিকে বিদায় করলাম। আমি ও মাধব বাসের ছাদে মাল তোলায় ব্যস্ত ছিলাম। মালপত্র তুলে রেখে এসে দেখি, তীরথের মা আমাদের জন্য কাপড় পেতে বসার জায়গা সংরক্ষণ করে রেখেছেন। আমরা সবাই বাসে বসার জায়গা পেলাম। বদ্রীনারায়ণ পর্যন্ত বাস ভাড়া মাত্র দু টাকা পঁচাত্তর পয়সা। তীরথ আমাদের বাস ভাড়াও দিতে গেল। আমরা কিছুতেই রাজী না হওয়ায় বলল, ঠিক আছে, তাহলে তোমরা তোমাদের ভাড়া দাও, আমি আমাদের চারজনের ভাড়া দিচ্ছি।
বাস ছেড়ে দিল। আগামীকাল সকালের পর আর আমাদের কোন দিন দেখা হবেনা বলে, তীরথের মা খুব দুঃখ প্রকাশ করলেন। বললাম মন খারাপ করবেন না। পৃথিবীটা গোল, একদিন না একদিন আবার দেখা হবেই। তাছাড়া কোনদিন পাঞ্জাবে যাওয়ার সুযোগ আসলে আপনাদের ওখানে তো যাবই। খুব খুশী হয়ে বললেন, তোমাদের যতদিন ইচ্ছে, আমার ওখানে প্রেমসে থাকতে পার। তীরথ এবার বললো, রায় তুমি তো গান জান। সামনেই আমার বিয়ে। তুমি তোমার বন্ধুদের নিয়ে আসবে, হারমোনিয়াম বাজাবে। নতুনদার সাথে কোথায় যেন নিজের মিল খুঁজে পেলাম। একটু থেমে, তীরথ হঠাৎ বলল, যদি কিছু মনে না করো তো একটা কথা বলতাম। তোমরা তিনজনে যাবে অনেক জায়গা। হেলং এর মতো পথে আরও বিপদ আসতে পারে। আমার কাছে যথেষ্ট টাকা আছে, প্রয়োজন হলে কিছু রেখে দাও। পরে কোন কারণে প্রয়োজন হলে আর আমার সঙ্গে দেখা হবে না, বিপদে পড়বে। ওর মাও বললেন তীরথের থেকে কিছু টাকা নিয়ে রেখে দাও বেটা। তাঁকে বললাম, কথাটা শুনে খুব ভাল লাগল। আমাদের টাকার আর প্রয়োজন হবে না, ধন্যবাদ। তবু তীরথ আবার বলল, নাহয় ধার হিসাবেই রাখ, বাড়ি ফিরে গিয়ে ফেরত দিয়ে দিও। ওকে জানালাম, আমরা প্রয়োজনের বেশিই টাকা নিয়ে এসেছি, দরকার হবে না। এবার তীরথের বোনকে কুলিকে দেওয়া টাকা দুটো ফেরত দিতে গেলে, ও কিছুতেই নেবে না। বলল, মাত্র দুটো টাকা, তাও ফেরত দেবে? ভাইয়ার কাছ থেকে ও টাকা আমি ফেরত নিতে পারব না। কী বিপদ, এরা আমাদের ভেবেছেটা কী? বললাম টাকা ভাঙানো ছিলনা বলে নিয়েছিলাম, ফেরত না নিলে খুব দুঃখ পাব। ও আর কথা না বাড়িয়ে টাকাটা নিয়ে নিল।
তীরথ বলল আজ রাতটা ওরা বদ্রীনারায়ণে কোন একটা ভাল হোটেলে উঠবে, আমরা যেন একই হোটেলে উঠি। কিছু না বলে চুপ করে বসে, সামনের দিকে উদাসভাবে তাকিয়ে রইলাম। সন্ধ্যাবেলা বাস এসে বদ্রীনারায়ণ পৌঁছলো। কুলিরা ছুটে এল। একজন পাণ্ডা পরিস্কার বাংলায় আমাদের বলল তার ওখানে উঠতে। মন্দিরের পাশেই সে থাকে। জিজ্ঞাসা করলাম, মন্দিরটা কোথায়? হাত তুলে দূরে দেখাল। ঘন কুয়াশায় কিছুই দেখা গেল না। পাণ্ডা বলল, আপনারা বাঙালি বলেই বলছি। কথা শুনে বুঝতে পারছি, বাংলা বললেও বাঙালি নয়। ব্যবসার খাতিরে বাংলাটা শিখেছে। কত টাকা দিতে হবে জিজ্ঞাসা করায় বলল, আমাদের যা ইচ্ছা দিলেই হবে। নাম জিজ্ঞাসা করায় সে জানাল, 'পঞ্চভাই' বললে এখানে যে কেউ তাকে দেখিয়ে দেবে। জানিনা পাঁচ ভাই মিলে পার্টনারশিপ ব্যবসা ফেঁদেছে কী না। এবার তীরথকে বললাম যে ওরা তো সকালেই চলে যাবে, কিন্তু আমরা এখানে তিন-চার দিন থাকব। দামী হোটেলে তিন-চার দিন থাকা আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। কাজেই আজ আমরা এই ভদ্রলোকের বাড়িতেই উঠি। পছন্দ না হলে কাল অন্য কোথাও ঠিক করে নেওয়া যাবে। তারা যেন কিছু মনে না করে। কাল প্রথম বাসে তাদের হৃষিকেশ যাওয়ার সময় আমরা এসে, তাদের বিদায় জানিয়ে যাব। তীরথ কুলির হাতে মালপত্র দিয়ে, মা, বোন আর ভগ্নীপতিকে নিয়ে এগিয়ে গেল।

পঞ্চভাই-এর সঙ্গে একটা বাচ্চাছেলে এসেছিল। সম্ভবত ওর অ্যাসিস্ট্যান্ট। কুলির হাতে মালপত্র দিয়ে, তার সঙ্গে কথা বলতে বলতে আমরাও এগোলাম। মাধবের লাঠির নালটা আলগা হয়ে গিয়েছিল। কুলিটা লাঠিগুলোর ওপর ভর দিয়ে হাঁটছিল। মাধবকে বললাম লাঠিগুলো ওর হাত থেকে নিয়ে নিতে। ও বলল, থাক কিছু হবে না। মন্দিরে এসে পৌঁছলাম। ও বাবা, এ তো রীতিমতো শহর। মন্দিরের সঙ্গেই ডানপাশে বিরাট একটা হোটেল। দুটোর মাঝখান দিয়ে সিঁড়ি ভেঙ্গে আমাদের যেতে হবে। পাশের একটা দরজা দিয়েও মন্দিরে ঢোকা যায়। একটু ওপরেই পঞ্চভাই-এর আস্তানা। একটা ঘেরা বারান্দা, শতরঞ্চি পাতা আছে। একজন মোটাসোটা যুবক ও একজন বৃদ্ধ তাতে বসে গল্প করছে। তাদের পাশ দিয়ে পরপর দুটো ঘরের দ্বিতীয়টায় গিয়ে ঢুকলাম। ছোট ঘর, দুটো দরজা একটা জানালা। একটা দরজা দিয়ে বারান্দায় বেরোতে হয়। অপরটা পাশের ঘরে যাওয়ার। এই দরজাটা বন্ধ। বুঝলাম বাইরে বসে থাকা দু'জন ঘরটা নিয়েছেন। পাশের ঘর থেকে ঘন ঘন কাশির আওয়াজ আসছে। তার মানে ওরা সংখ্যায় তিনজন। আমাদের ঘরটা ভালই। যারা বাইরে যাওয়া বলতে শুধুই বিলাসবহুল হোটেলের ঘর বোঝেন, তাদের কথা বলতে পারব না। কিন্তু আমাদের মতো যারা এপথে শুধু দেখতেই এসেছে, এবং ঘর বলতে রাতের নিশ্চিন্ত আশ্রয় বোঝে, তাদের জন্য ঠিক আছে, অন্তত আমাদের চলে যাবে। যাহোক, পঞ্চভাই লেপ এনে দিল। আমাদের মালপত্র তাকে গুছিয়ে রাখলাম। বারান্দায় আসতেই ওরা জিজ্ঞাসা করল আমরা কোথা থেকে আসছি। আমরা আজকের সমস্ত ঘটনা বলে বললাম, আজ বদ্রীনারায়ণের বাস ধরবার জন্য প্রায় ছুটে ছুটে আসার জন্যই বোধহয় পায়ে বেশ ব্যথা হয়েছে। পায়ে ব্যথার কথা শুনেই বৃদ্ধ ভদ্রলোক বললেন, তাহলে আর এখানে বসা যাবে না। কেন বসা যাবে না জিজ্ঞাসা করায়, তিনি বললেন ইয়ং ছেলে, এইটুকু পথ হেঁটেই পায়ে ব্যথা হয়ে গেল? যুবকটির থেকে জানলাম, বৃদ্ধ তার কেউ হয় না। একতলায় একটা ঘর নিয়ে থাকেন। ন'বছর বাড়ি ছাড়া হয়ে, হিমালয় দর্শন করে বেড়াচ্ছেন। বৃদ্ধকে বললাম, এপথে আসার জন্য শারীরিক শক্তি কোন কাজে লাগে না। মনোবলই সব। বাড়ি কোথায় জিজ্ঞাসা করাতে, তিনি বলতে চাইলেন না। পরে জেনেছিলাম তাঁর বাড়ি নদীয়া জেলায়। ভদ্রলোকের পায়ের পাতায় বিরাট বিরাট ঘা, লাল রঙের ওষুধ লাগানো আছে। শুনলাম জোঁকের আক্রমণে এই অবস্থা হয়েছে। দুমাস হাসপাতালেও ছিলেন। একটু পরেই ভদ্রলোক একতলায় চলে গেলেন। যুবকটি বলল, তার বাড়ি বর্দ্ধমানের মেমারীতে। সোনার দোকান আছে। তারা কেদারনাথ যাওয়ার উদ্দেশে রওনা দিয়ে রাস্তার ধ্বসের জন্য বাস যেতে না পারায়, বদ্রীনারায়ণ চলে এসেছে। আমরা এখান থেকে কেদারনাথ যাব শুনে, সেও একসঙ্গে যেতে চাইল। তার এক কর্মচারী আছে, তাকে খচ্চর ভাড়া করে দেবে।
একবার বাইরে যাওয়ার জন্য নীচে নেমে দেখি, একতলার বৃদ্ধটি ওই ঠাণ্ডায় বাসন ধুচ্ছেন। তিনি আমাদের এখানে কী কী দেখবার আছে জানালেন। মন্দিরে এলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই চন্দন চর্চিত বদ্রীবিশালকে সম্পূর্ণ নগ্ন করে, নতুন বস্ত্র পরানো হ'ল। তাঁর গলার পুরাতন মালার চাহিদা দেখলাম খুব। উপস্থিত সমস্ত ভক্তই হাত বাড়িয়ে মালা বা ফুলের টুকরো নিতে চাইছে। মূর্তির মাথার মুকুটটা দূর থেকে দেখলেও চোখ ঝলসে যাবে। শুনলাম ওটার মূল্য নাকি এক কোটি টাকা। হতেই পারে, মন্ত্রীদের যেখানে কোটি টাকার সম্পত্তি থাকে, নারায়ণের থাকতে আপত্তি কোথায়?

কালো পোশাক পরা এক পু্রোহিত পুজোর সব কাজ করছেন। সামান্য আরতির মত হল। শুনলাম এবার মন্দিরের দরজা বন্ধ করা হবে। আমাদের সঙ্গে পঞ্চভাই পাণ্ডাও মন্দিরে গিয়েছিল। তার চেষ্টায় সবার আগে দাঁড়াবার সুযোগও পেয়েছিলাম। কয়েকজন লোক মূর্তির অনতিদূরে - আমাদের আর মূর্তির মাঝখানে বসে। তারা নাকি ভি.আই.পি. মানুষ। একজন লম্বা চওড়া লোক মন্দিরের ভিতরে প্রবেশ করল - সঙ্গে বডিগার্ড। শুনলাম ইনি একজন ভি.ভি.আই.পি.। মন্দিরে এই আলাদা ব্যবস্থা দেখব আশা করি নি। পাঞ্জাবীদের কোন গুরুদ্বোয়ারায় এ রকম দেখি নি। অথচ দেশে শিখ ধর্মাবলম্বী ভি.ভি.আই.পি-র অভাব আছে বলে তো মনে হয় না। জয় বদ্রীবিশাল কী জয়। মন্দিরের বাইরে বেরিয়ে এলাম।
ঘরে ফিরে ঠিক করলাম আগামীকাল সকালে ভারতের শেষ গ্রাম, 'মানা'র ওপর দিয়ে 'বসুধারা' যাব। একতলার সেই বৃদ্ধ ভদ্রলোক বললেন, বেশ কয়েক কিলোমিটার দূরে শতপন্থ লেক। খুব সুন্দর জায়গা, তবে ওখানে যেতে গেলে চামোলী থেকে অগ্রিম অনুমতি পত্র নিয়ে আসতে হয়। জানা ছিলনা, তাই আর যাওয়ার চেষ্টা করে লাভ নেই। একটু পরে মন্দিরের পাশের দোকানে রুটি, তরকারি খেতে গেলাম। দেখা হল ঘাংঘারিয়ার সেই বাঙালি ভদ্রলোকের সঙ্গে, যিনি আমাদের ভাঙ্গা গ্লেসিয়ার আর নদীর কথা বলেছিলেন। তাঁর সঙ্গে হেমকুণ্ডে সাঁতার কাটতে দেখা সেই জাপানি ছেলেটিও রয়েছে। দুজনেরই কোন সঙ্গী না থাকায় একসাথেই রয়েছেন শুনলাম। বাঙালি ভদ্রলোকটির বাড়ি মধ্যপ্রদেশে, ভারত হেভি ইলেকট্রিক লিমিটেড-এ কাজ করেন। আমরা নন্দন কাননের ভাঙ্গা গ্লেসিয়ারটা পার হয়ে গেছিলাম কী না জিজ্ঞাসা করায়, তাঁকে আমাদের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা বললাম। এঁর উল্টো দিকের চেয়ারে আর এক ভদ্রলোক বসেছিলেন। তাঁকে দেখতে অনেকটা বাঙালিদের মতোই। উনি ইংরেজিতে জিজ্ঞাসা করলেন, আমরা কী বলছি। বুঝলাম ইনি বাঙালি নন। আমাদের পরিচিত ভদ্রলোক তাঁকে সমস্ত ঘটনা বলাতে, তিনি বললেন, খুব রিস্ক নিয়েছিলেন। দেশের জন্য, দশের জন্য লোকে প্রাণ দেয়, আপনি তো একটা জুতোর জন্য প্রাণ দিতেন!
একুশে আগষ্ট। সকালে ঘুম থেকে উঠে গেলাম তপ্তকুণ্ডে স্নান করতে। তিনজনে মাঝখানের চৌবাচ্চাটার জলে নামলাম। ডানপাশে মন্দিরের দিকে মুখ করে বসলে, জলের মধ্যে এক কোণে একটা সিমেন্ট বা পাথরের স্ল্যাব আছে। ওটায় সুন্দর বসে থাকা যায়। মাধব আর দিলীপ একটু পরেই মন্দিরে পুজো দিতে গেল। আমি গরম জলে বসে গায়ের ব্যথা কমাতে লাগলাম। সেই বাঙালি ভদ্রলোক ও জাপানি ছেলেটি এসে হাজির হল। বাঙালি ভদ্রলোক গরম জলে নামলেন। আর কিছুক্ষণ কাটিয়ে, জল থেকে উঠে জাপানি ছেলেটিকে প্রশ্ন করলাম, কেন জলে নামছে না? ইংরেজিতে কথা বললেও, 'থাওল থাওল' বলে সে কী যে বলতে চাইছে, বুঝতে পারছি না। হঠাৎ বুঝলাম ওর সঙ্গে টাওয়েল নেই। বললাম, ওর সঙ্গীর কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে স্নান করতে, শরীর একবারে সুস্থ হয়ে যাবে। কাঁধের ঝোলা ব্যাগ থেকে তাকে একটু আমসত্ত্ব দিলাম। চোখ বুজে খাওয়া দেখে বুঝলাম, বস্তুটির সঙ্গে তার আগে পরিচয় না থাকলেও, আমসত্ত্ব তাকে যথেষ্ট তৃপ্ত করেছে। বেশ কিছুক্ষণ পরে ঘরে ফিরে দেখি, আমার সঙ্গী দুজন তখনও ফেরেনি। কিছুক্ষণ পরে তারা প্যাকেটে করে প্রসাদ নিয়ে ফিরে এল। আমরা মন্দিরের পাশে হোটেলে গেলাম। ওরই বাঁপাশ দিয়ে বসুধারা যাবার রাস্তা। এখানে দেখি ধোসাও পাওয়া যায়। গরম গরম ধোসা আর চা খেয়ে আমরা রওনা দিলাম। আগের দিনের সেই যুবকটিও আমাদের সঙ্গী হল।
এখান থেকে তিন কিলোমিটার দূরে ভারতের শেষ গ্রাম 'মানা'। মন্দিরের বাঁপাশে, অর্থাৎ হোটেলটার কাছে একটা নোটিশ বোর্ডে লেখা আছে - বিদেশিদের ওই নোটিশ বোর্ডের ওপারে যাওয়া নিষেধ। জানলাম চামোলী থেকে অনুমতি পত্র আনলে বিদেশিদের বসুধারা যেতে দেওয়া হয়। জাপানি ছেলেটির আর বসুধারা দেখা হল না। যাওয়ার পথে অনেকে বলল, ক্যামেরা নিয়ে বসুধারা যেতে দেওয়া হয়, আবার অনেকেই বলল, যেতে দেওয়া হয় না। আমাদের সঙ্গে অতি সাধারণ একটা ভারতীয় ক্যামেরা। সেটা গলায় ঝুলিয়ে নিয়ে চললাম। ডানপাশে মিলিটারি আড্ডা, প্রচুর ঘোড়া ও ট্রাক দাঁড়িয়ে। একটা ব্রিজ পার হয়ে ওখানে যেতে হয়। একসময় আমরা মানা গ্রামে এসে হাজির হলাম। কেউ কিন্তু ক্যামেরা চাইল না। অনেকগুলো বাচ্চা পিছন পিছন পয়সার জন্য আসছে। শুনলাম এখান থেকে ঊনচল্লিশ কিলোমিটার দূরে তিব্বত বর্ডার।
একটু এগোতেই ছোট একটা মিলিটারি ক্যাম্প। আমাদের থেকে যুবকটি একটু এগিয়ে গিয়েছিল, ও দেখলাম দাঁড়িয়ে আছে। কাছে যেতে আমার গলায় ঝোলানো ক্যামেরাটা মিলিটারিরা চেয়ে নিল। ওরটা আগেই নিয়েছে। আরও বেশ খানিকটা পথ হেঁটে আমরা ভীমপুল এসে পৌঁছলাম। সরু নদী, কিন্তু ভীষণ তার গতি। অসম্ভব রকম গর্জন করে বয়ে যাচ্ছে। নদীর দুপারের দুটো বড় পাথরের উপর একটা বিশাল পাথর যেন শুইয়ে রাখা হয়েছে। একটা দশ-বার ফুটের ব্রিজ বা পুল। ব্রিজের বেশ খানিকটা নীচ দিয়ে সেই ভয়ঙ্কর নদী বয়ে যাচ্ছে। নীচে নদীর দিকে তাকালে মাথা ঘুরে যায়। আসবার পথে শুনেছি এটা নাকি সরস্বতী নদী। মহাপ্রস্থানের পথে যাবার সময় ভীম এই বিশাল পাথরটা ফেলে, এই পুল তৈরি করেন। যাহোক, ওখানে বসে ভাবছি সরস্বতী নদী কী সারা দেশের ওপর দিয়েই বয়ে গেছে? তাহলে সর্বত্র তার স্বাস্থ্য এত খারাপ কেন? এই ভগ্ন স্বাস্থ্য নিয়ে কী ভাবেই বা সে এতটা পথ পাড়ি দেয়? এখানে এই ভয়ঙ্কর নদীর ওপর কী অদ্ভুত একটা ব্রিজ! কত কম খরচে নদীর ওপর ব্রিজ তৈরি করা যায়, এখনকার বড় বড় ইঞ্জিনিয়ারদের ভীমের কাছ থেকে শেখা উচিত। কোনরকম রক্ষণাবেক্ষণ খরচ ছাড়াই, যুগের পর যুগ দিব্যি ব্যবহারযোগ্য হয়ে টিঁকে আছে।
এমন সময় সেই বাঙালি ভদ্রলোক গলায় এক দামী বিদেশি ক্যামেরা ঝুলিয়ে এসে হাজির হলেন। আমরা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি কী ভাবে ক্যামেরা নিয়ে এখানে এসেছেন। তিনি তো আমাদের কথা শুনে আশ্চর্য হয়ে গেলেন। বললেন, এই ভাবেই গলায় ক্যামেরা ঝুলিয়ে সোজা এখানে এসেছেন। পথে এক মিলিটারি তাঁর সঙ্গে আলাপও করেছে। কিন্তু কেউ তাঁকে ক্যামেরা রেখে যেতে বলেনি। দিলীপকে বললাম, তার মানে ক্যামেরা নিয়ে এখানে আসতে না দেওয়ার কোন ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। আমরা দু'জনে আমাদের ক্যামেরা ফেরৎ আনতে আগের ক্যাম্পটার উদ্দেশ্যে ফিরে গেলাম। মাধব, আমাদের সঙ্গী যুবকটি ও বাঙালি ভদ্রলোক ভীমপুলে বসে থাকলেন। ক্যাম্পে এসে ওখানকার মিলিটারি প্রধানকে বললাম, "আমরা সাধারণ ভারতীয়, আমাদের সঙ্গের ক্যামেরাটাও অতি সাধারণ ভারতীয় ক্যামেরা। বহুদূর থেকে এখানে এসেছি। যদি অনুমতি দেন তাহলে ভীমপুল বা বসুধারার ছবি নিয়ে গিয়ে, বাড়ির লোকদের দেখাতে পারি"। ভদ্রলোক খুব শান্ত ও ভদ্রভাবে বললেন, বসুধারার ছবি তোলা গভর্ণমেন্টের কড়া বারণ। তাঁর কিছু করার নেই। আমরা জানালাম এক ভদ্রলোক ক্যামেরা নিয়ে ভীমপুলে অপেক্ষা করছেন, তাকে কেন নিয়ে যেতে দেওয়া হ'ল? মিলিটারি ভদ্রলোক সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে তাঁর সঙ্গীদের ডাকলেন। ক্যাম্পের ভিতর থেকে দু'জন সঙ্গী বেরিয়ে এসে সব শুনেই, ঘোড়া নিয়ে ঐ বাঙালি ভদ্রলোককে ধরতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হ'ল। ভাবলাম কেন বলতে গেলাম। কিন্তু কথাটা বলে ভদ্রলোকের বোধহয় মঙ্গলই করেছি। নাহলে ফিরবার সময় তাঁর বিপদ হ'তই। আমি খুব শান্ত ভাবে নরম গলায় মিলিটারিদের বললাম, আমি গলায় ক্যামেরা ঝুলিয়ে বসুধারা যাচ্ছিলাম। আপনারা ক্যামেরাটা এখানে জমা রেখে যেতে বলেছেন, আমি জমা দিয়ে দিয়েছি। আমার মতো ওই ভদ্রলোকও তাঁর ক্যামেরা গলায় ঝুলিয়ে নিয়েই এখান দিয়ে গেছেন। ক্যামেরা নিয়ে যাওয়া নিষেধ বলে কোন নোটিশ বোর্ড কোথাও নেই, আপনারাও তাঁর কাছ থেকে ক্যামেরা চেয়ে নেননি। ফলে তিনি না জেনে ক্যমেরা নিয়ে গেছেন। আমার কাছে না চাইলে, আমিও তো ক্যামেরা নিয়েই চলে যেতাম। প্রথম যে মিলিটারি অফিসারের সঙ্গে আমরা কথা বলছিলাম, তিনি এবার বেশ কড়া সুরে বললেন "অসম্ভব, এদিক দিয়ে গেলে আমরা ক্যামেরা চেয়ে নিয়ে জমা রাখবই। ওপাশ দিয়ে আর একটা রাস্তা আছে, সে দিকেও একটা ক্যাম্প আছে। ওদিক দিয়ে গেলে, ওই ক্যাম্পের কর্মীরা ক্যামেরা জমা নিয়ে নেবে। ক্যামেরা ইচ্ছা করলে আপনারা নিয়ে যেতে পারেন, তবে রীলে কত নম্বর পর্যন্ত ছবি তোলা হয়েছে নোট করে রাখা হবে। ফিরবার পথে দেখে নেওয়া হবে নতুন করে আর কোন ছবি তোলা হয়েছে কীনা। যদি কেউ ভুলবশতঃ না জানিয়ে ক্যামেরা নিয়ে চলেও যায়, তার ক্যামেরা থেকে রীলটা খুলে নেওয়া হবে"। বললাম - আপনাদের যাওয়ার দরকার নেই। কোন সভ্য ভারতীয় ভারত সরকারের নিষেধ অমান্য করে না। ভদ্রলোককে আমি আপনাদের কথা বলে ছবি তুলতে বারণ করে দেব। আমার কথা শুনে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ওই ভদ্রলোক আমাদের লোক কী না, বা আমাদের সঙ্গে এসেছেন কী না। বললাম তিনি আমাদের লোক নন, আমাদের সঙ্গে আসেনওনি। তবে তিনি বাঙালি, আমাদের ভাষা বোঝেন। আমি বারণ করলে তিনি কখনই ওখানকার ছবি তুলবেন না। অফিসারটি এবার অনেকটা নরম হয়ে বললেন, ঠিক আছে, আমি যেন তাঁকে ওখানকার কোন ছবি তুলতে বারণ করি। চলে আসছিলাম, হঠাৎ মনে হ'ল ব্যাপারটা আরও একটু পরিস্কার করে নেওয়া প্রয়োজন। ফিরে এসে জিজ্ঞাসা করলাম, ভদ্রলোক আমার কথায় কোন ছবি তুলবেন না কথা দিতে পারি। কিন্তু ফেরার পথে তাঁরা বিশ্বাস করবেন তো? পরে কোন ঝামেলা হবে না তো? অবিশ্বাসের প্রশ্ন থাকলে তাঁরা গিয়ে ভদ্রলোকের ক্যামেরা নিয়ে আসতে পারেন। অফিসারটি বললেন ঠিক আছে তাঁকে যেন ছবি তুলতে বারণ করে দেওয়া হয়। পরে কোনরকম ঝামেলা করা হবে না।

ফিরে এসে দেখি মাধব ও যুবকটি আমাদের জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে। কিন্তু ক্যামেরার মালিক অনেকক্ষণ আগেই ক্যামেরা নিয়ে বসুধারার উদ্দেশে যাত্রা করেছেন। মহা চিন্তায় পড়লাম। মাধবকে সব বললাম। মাধব জানাল, একটু আগে তিনি তাকে সামনে দাঁড় করিয়ে ভীমপুলের একটা ছবি তুলেছেন। কী করা উচিত ভেবে না পেয়ে, এগিয়ে চললাম। বেশ কিছুক্ষণ পরে, বহুদূরে নীল জ্যাকেট পরা ভদ্রলোককে দেখতে পেলাম। একবারে ফাঁকা রাস্তা। মাঝে মাঝে মানা গ্রামের লোকেরা যাতায়াত করছে। দূরে বরফাচ্ছাদিত একটা শৃঙ্গ চোখে পড়ছে। হাত নেড়ে চিৎকার করে ভদ্রলোককে দাঁড়াতে বললেও, তিনি শুনতে পেলেন না। ভাবলাম রাস্তায় ছবি তুললে স্থানীয় লোকেরা যদি লক্ষ্য করে, তবে তারা হয়ত মিলিটারি ক্যাম্পে খবর দেবে। তখন আমিও না এর মধ্যে জড়িয়ে পড়ি। যাহোক ভদ্রলোক বোধহয় হাঁপিয়ে গিয়ে একটা জায়গায় বসে পড়লেন। আমরা জোর পায়ে আরও এগিয়ে গিয়ে, চিৎকার করে তাঁকে অপেক্ষা করতে বললাম। শেষে কাছে গিয়ে সমস্ত ঘটনা খুলে বললাম। ভদ্রলোক সব শুনে খুব ভয় পেয়ে গিয়ে বললেন, ইতিমধ্যে তাঁর দুটো ছবি তোলা হয়ে গেছে। একটা ভীমপুলে, আর একটা মাঝপথে। আর মাত্র একটা ছবি তুললেই এই ফিল্মটা শেষ হয়ে যাবে। তাঁকে আর কোন ছবি তুলতে বারণ করে বললাম, ফিরবার পথে ওরা জিজ্ঞাসা করলে সত্যি কথা বলতে। কোন কারণে অবিশ্বাস করে ফিল্ম খুলে ওয়াশ করলে তিনি খুব বিপদে পড়বেন। ভদ্রলোক বললেন, তার ওয়াশিং চার্জ দেওয়াই আছে। সেরকম হলে তিনি অনুরোধ করবেন ফিল্ম খুলে নিয়ে ওয়াশ করে আপত্তিকর ছবি রেখে দিয়ে, বাকী ফটো অন্তত নষ্ট না করে তাঁকে পাঠিয়ে দিতে। শেষ পর্যন্ত তাই ঠিক হল।
আবার এগিয়ে চললাম। বহুদূরে বসুধারা ফলস দেখা যাচ্ছে। কিন্তু যতই হাঁটছি, দূরত্ব একই থাকছে বলে মনে হচ্ছে। রাস্তা খুব একটা কষ্টকর না হলেও, হাঁটতে আর ভাল লাগছে না। মানা গ্রামে একটা বোর্ডে লেখা ছিল — বসুধারা পাঁচ কিলোমিটার। অর্থাৎ বদ্রীনারায়ণ থেকে বসুধারা আট কিলোমিটার পথ। কিন্তু রাস্তা যেন আর শেষ হতেই চায় না। অবশেষে বসুধারা প্রপাতের তলায় এসে হাজির হলাম। পাহাড়ের চুড়ায় ভেন্টিলেটারের মতো একটা গর্ত থেকে মিল্ক পাউডারের মতো সাদা জল পড়ছে। কোনকালে হয়তো পাহাড় বেয়েই জলের ধারা নামতো। মনে হয় পাহাড়ের ক্ষয়ের ফলেই এখন পাহাড়ের গা বেয়ে না পড়ে, ওপর থেকে সোজা তলায় জল পড়ছে। ওপর থেকে সরাসরি জল যেখানে পড়ছে, আর আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, সেখান পর্যন্ত সাদা গ্লেসিয়ার। পাশ দিয়ে গ্লেসিয়ারের ওপর গেলে, ফলস-এর ঠিক তলায় যাওয়া যায়। শুনেছি বসুধারার তলায় দাঁড়ালে গায়ে যদি জল না লাগে, তাহলে বুঝতে হবে সে পাপী। ঝরনার ঠিক নীচে দাঁড়ালে একটুও জল গায়ে না লেগে কী ভাবে নিচে পড়তে পারে ভেবে পেলাম না। মনে হ'ল তবে কী সারা দুনিয়ার মানুষই কোন পাপ কাজ করে নি? পাপের জন্য আদালতে বিচার-সাক্ষীর প্রহসনে অযথা সময় ও অর্থ নষ্ট না করে, এখানে জলের তলায় দাঁড় করিয়ে দিলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়। সে যাই হোক, গ্লেসিয়ার বেয়ে লাঠি নিয়ে খানিকটা উঠলাম। মাধবের লাঠি আগের দিন কুলির ধকল সইতে না পেরে, নালছাড়া হয়েছে। বুঝলাম লাঠি নিয়ে চেষ্টা করলে ওঠা যাবে, কিন্তু নেমে আসা খুব কঠিন হবে। পা হড়কে রাস্তার ওপর, যেখানে সবাই দাঁড়িয়ে আছে, সেখান দিয়ে গড়িয়ে নীচের চাষের জমিতে চলে যেতে হবে। আস্তে আস্তে সাবধানে নীচে নেমে এলাম। সঙ্গে আমসত্ত্ব আছে, সকলে মিলে খানিকটা খেলাম। ভাবলাম জাপানি ছেলেটাকে আর একটু খাওয়ালে হয়। একটু পরে আমরা ফিরবার পথ ধরলাম।
রাস্তায় কোন জলের ব্যবস্থা নেই। কাজেই ওই ঝরনার জলই একটু খেয়ে, এগিয়ে চললাম। মাধব, দিলীপ ও যুবকটি আস্তে আস্তে অনেক পিছিয়ে পড়ল। আমি ও ক্যামেরা কেলেঙ্কারির নায়ক, গল্প করতে করতে এগিয়ে চলেছি। একসময় যুবকটিও এগিয়ে এসে আমাদের দলে যোগ দিল। মাধব ও দিলীপ এত পিছনে পড়ে গেল, যে ওদের আর দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। মাধবের হাঁটুতে একটা ব্যথা হয়েছে। চিন্তা হ'ল কোন অসুবিধায় পড়ল কী না। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর, ওদের আবার বহুদূরে দেখতে পেলাম। একসময় আমরা সেই মিলিটারি ক্যাম্পের কাছাকাছি চলে এলাম। কোনরকম ঝামেলা হলে আমিও মুশকিলে পড়তে পারি ভেবে কায়দা করে ওদের থেকে পিছিয়ে গেলাম। আমরা তিনজন যখন ক্যাম্পে এসে পৌঁছলাম, দেখলাম যুবকটি আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। বাঙালি ভদ্রলোক তাঁর ক্যামেরা সমেত ভালভাবে ফিরে গেছেন। বুঝলাম কোন ঝামেলা হয় নি, মিলিটারিরা তাদের কথা রেখেছে। ক্যামেরা ফেরত নিলাম। পাশেই কয়েকজন বৃদ্ধা ভেড়ার লোম দিয়ে কম্বল বা ওই জাতীয় কিছু তৈরি করছেন। কয়েকটা বাচ্চা তাঁদের ঘিরে খেলা করছে। একজন বৃদ্ধা একটা বালতি নিয়ে এসে আমায় কী বললেন, বুঝতে পারলাম না। আবার জিজ্ঞাসা করাতে তিনি বললেন, আমার ওয়াটার বটলটার কত দাম? আমাদের দেশে এগুলো সস্তা কী না? বললাম এটার দাম সাত টাকা। তিনি বললেন যে তিনি আমাকে সাতটা টাকা দিচ্ছেন, আমি যেন তাঁকে এটা দিয়ে দিই। আমি ইচ্ছা করলে তাঁর বালতিটা নিয়েও এটা তাঁকে দিতে পারি। এরকম যে কোন প্রস্তাব আসতে পারে, স্বপ্নেও ভাবি নি। বললাম আমরা আরও অনেক জায়গায় যাব। রাস্তায় খাবার জলের প্রয়োজন হবে। বালতি করেও জল নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। কাজেই আমি এটা তাঁকে দিতে পারছিনা বলে দুঃখিত। মানুষগুলির সরলতা দেখে অবাক লাগল।

আবার হাঁটতে শুরু করে কিছুক্ষণের মধ্যেই মানা গ্রামে এসে উপস্থিত হলাম। আই.টি.বি. পুলিশ ক্যাম্পের উল্টো দিকের একটা চায়ের দোকানে বসে অন্ততঃ বছর কয়েকের পুরনো চানাচুর কিনে, চা করতে বললাম। চানাচুরই এই দোকানের একমাত্র খাদ্যবস্তু। আমরা চায়ের অপেক্ষায় বসে আছি। বসে আছে আই.টি.বি. পুলিশে পোষ্টেড দু'জন ভদ্রলোক। একজনের বাড়ি বেনারস, অপরজন বিহারের লোক। তারা আমাদের সব কথা শুনে বলল, আমাদের ক্যামেরাটা জামার তলায় ঢুকিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত ছিল। ওপর থেকে দেখা না গেলে, কেউ সার্চ করতো না। ভাবলাম একই কাজে নিযুক্ত দু'জন কী চমৎকার দু'রকম কথা বলছে। ধন্য আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা! সাহস একটু বেড়ে গেল। পুলিশ ক্যাম্পকে সাক্ষী রেখে, দূরের গ্রামের ছবি নিলাম। দোকানদার এখনও চা তৈরি করছে। হঠাৎ দেখি পাথরে থেঁতো করে, সে কী যেন চায়ের কেটলিতে দিয়ে দিল। পরিমাণেও অনেকটা। জিজ্ঞাসা করতে দোকানদার জানাল, মশলা। ভাবলাম এখানকার অনেক চায়ের দোকানের মতো, এলাচ বা গরম মশলা জাতীয় কিছু দিয়েছে। ও বাবা! চায়ে একটা চুমুক দিয়েই অবস্থা শোচনীয়। খাবে কার সাধ্য! একগাদা গোলমরিচ চায়ে থেঁতো করে দেওয়া হয়েছে। জীবনে এই প্রথম ঝাল চা খেয়ে ধন্য হলাম! যাহোক, চা শেষ করে মন্দিরের পাশের হোটেলে ফিরে এলাম। অনেক বেলা হয়ে গেছে। পরটা আর চা খেয়ে, গেলাম শোণপ্রয়াগ যাওয়ার বাসের খবর নিতে। তীরথের কথা খুব মনে পড়ছে। আজ সকালে আমাদের ঘুম থেকে উঠতে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। ওর বাস খুব ভোরে বদ্রীনারায়ণ ছেড়ে চলে গেছে।
কেদারনাথ যেতে হলে, শোণপ্রয়াগ পর্যন্ত বাসে যাওয়া যাবে। খবর পেলাম বাস ছাড়ার ঘন্টাখানেক আগে টিকিট দেওয়া হয়। কেদারের রাস্তা খুব খারাপ হয়ে আছে। ওদিক থেকে কোন বাস আসছে না। ওদিক থেকে বাস এলে, তবে এদিকের বাসের টিকিট দেওয়া হবে। ঘরে ফিরে এসে দেখি একতলায় সিঁড়ির পাশে, বৃদ্ধ ভদ্রলোকের পাশের ঘরে, চার-পাঁচজন যুবক বসে আছে। পঞ্চভাই আর ওই বৃদ্ধ ভদ্রলোকও আছেন। বৃদ্ধ আমাদের কথা বোধহয় এদের আগেই বলেছেন। কারণ আমরা আসতেই তারা আমাদের ডেকে কথা বলতে শুরু করল। সবাই বাঙালি। দু'জনের বাড়ি আসানসোলে। ওদের মধ্যে দু'জন নাকি অমরনাথ ও কেদারনাথ হয়ে এখানে এসেছে। বাকীরা কেদারনাথেই প্রথম গেছিল। সেখান থেকে একটু আগে এখানে এসে পৌঁছেছে। একসঙ্গে অমরনাথ, ও কেদার-বদ্রী যেতে, আগে কারোর কথা শুনেছি বলে মনে করতে পারছি না। তবু মনটা বেশ পুলকিত হয়ে গেল। বাস তাহলে কেদারনাথ থেকে এসেছে। ওরা জানাল, মাঝ রাস্তায় ধ্বসের জন্য তাদের অনেকক্ষণ আটকে থাকতে হয়েছিল। গত দু'দিন কোন বাস আসে নি। কেদারনাথ থেকে আজই প্রথম বাস এসেছে তাদের নিয়ে। ওরা এখান থেকে নন্দন কানন, হেমকুণ্ড সাহেব যাবে। ওদের সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিয়ে, আমরা কেদারের রাস্তার একটা মোটামুটি অবস্থা জেনে নিলাম।
প্রায় সন্ধ্যার সময় আবার বাস স্ট্যান্ডে গেলাম। সেই যুবকটিও তার কেদার যাবার জন্য শোনপ্রয়াগের দু'টো টিকিট কাটার টাকা দিয়ে দিল। কাউন্টারের ভদ্রলোক জানালেন, এই পথে প্রথমে যমুনোত্রী, তারপর গঙ্গোত্রী, তারপর কেদারনাথ হয়ে সব শেষে বদ্রীনারায়ণ যাওয়া সুবিধাজনক। তাই সকলে ঐ ভাবেই এই চার জায়গায় যায়। যারা শুধুমাত্র কেদার-বদ্রী যায়, তারাও প্রথমে কেদারনাথ গিয়ে, সেখান থেকে বদ্রীনারায়ণ আসে। কেদার থেকে বদ্রী আসার বাস অনেক আছে। আজ রাস্তা পরিস্কার হয়ে যাওয়ায়, ওদিক থেকে কিছু বাস এসেছে। আগামীকালও বেশ কিছু বাস আসবে। তবে এদিক থেকে সোজা শোনপ্রয়াগ যাওয়ার বেশি বাস নেই। কাল সকাল ন'টায় সোজা শোনপ্রয়াগ যাওয়ার একটাই বাস ছাড়বে, এবং সেটা সন্ধ্যাবেলা শোনপ্রয়াগ পৌঁছবে। কাল সারাদিনে ঐ একটাই ডিরেক্ট বাস, বা এখানকার ভাষায় "যাত্রাবাস" আছে। আর একভাবে আমরা যেতে পারি। সকাল ছ'টার বাসে রুদ্রপ্রয়াগ গিয়ে, ওখান থেকে শোনপ্রয়াগের বাস ধরতে পারি। পৌঁছতে পৌঁছতে সেই সন্ধ্যাই হয়ে যাবে। ভাবলাম দু'ভাবেই পৌঁছতে যদি সন্ধ্যা হয়ে যায়, তবে যাত্রাবাসেই যাওয়া ভাল। বাস বদল করবার ঝামেলা নেই, বসবার জায়গা না পাওয়ার ঝুঁকি নেই। সবশেষে জানা গেল, যাত্রাবাসের টিকিট এখন পাওয়া যাবে না - কাল সকাল আটটায়।
ফিরে এলাম। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত্রি নামল। মাধব ও দিলীপ গেল মন্দিরে আরতি দেখতে। আমি সুটকেস গোছাতে বসলাম। বেশ কিছুক্ষণ পরে সঙ্গীরা ফিরে এসে আমার কাজে সাহায্য করতে শুরু করে দিল। সুটকেস ও কাঁধের একটা ব্যাগ গুছিয়ে রাখলাম। কাল সকালে হোল্ড-অল বেঁধে ফেললেই হবে। পঞ্চভাই একটা বদ্রীনারায়ণের মালা নিয়ে এল। আমাদের তিনজনের নামধাম ওর খাতায় টুকে নিল। নাম, বাবার নাম, গোত্র ইত্যাদি অতি প্রয়োজনীয় বিষয় জেনে নিয়ে, মন্ত্র পড়ে তিনজনকেই কপালে চন্দনের ফোঁটা পড়িয়ে দিল। হাতে খানিকটা করে পুজোর চরণামৃতও দিল। মাধব ও দিলীপ তাকে ভক্তিভরে প্রণাম করল। আরেকটু পরে হোটেলে গিয়ে রাতের খাবার খেয়ে এলাম। কিছুক্ষণ নিজেরা গল্পগুজব করে সময় কাটালাম। আজ একুশে আগষ্ট, বাড়ি থেকে দিন আষ্টেক হ'ল এসেছি। বাড়ির কথা খুব মনে পড়ছে। যে যার বাড়িতে চিঠি লিখে, শুয়ে পড়লাম।

(এরপর আগামী সংখ্যায়)

আগের পর্ব – ফুলের দেশে কিছুক্ষণ


রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের অবসরপ্রাপ্ত অফিসার সুবীর কুমার রায়ের নেশা ভ্রমণ ও লেখালেখি। ১৯৭৯ সালে প্রথম ট্রেকিং — হেমকুন্ড, ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স, বদ্রীনারায়ণ, মানা, বসুধারা, ত্রিযুগী নারায়ণ, কেদারনাথ, গঙ্গোত্রী-গোমুখ ও যমুনোত্রী। সেখান থেকে ফিরে, প্রথম কাগজ কলম নিয়ে লিখতে বসা। ভ্রমণ কাহিনি ছাড়া গল্প, রম্য রচনা, স্মৃতিকথা নানা ধরণের লিখতে ভালো লাগলেও এই প্রথম কোন পত্রিকায় নিজের লেখা পাঠানো। 'আমাদের ছুটি' পত্রিকার নিয়মিত লেখক, পাঠক, সমালোচক এবার থেকে নেমে পড়েছেন কীবোর্ডে-মাউসে সহযোগিতাতেও।

 

SocialTwist Tell-a-Friend

To view this site correctly, please click here to download the Bangla Font and copy it to your c:\windows\Fonts directory.

For any queries/complaints, please contact admin@amaderchhuti.com
Best viewed in FF or IE at a resolution of 1024x768 or higher