আবার পুরী

তপন পাল

~ পুরীর তথ্য ~ পুরীর আরও ছবি ~

অবশেষে এই পূজোতেও পুরী যাওয়া সাব্যস্ত হলো। বিবাহের ত্রিংশত বর্ষে সপ্তদশতম বার পুরী ভ্রমণ। হিসাবটি যুগল ভ্রমণের; কারণ সমুদ্র দেখতে মধ্যে মধ্যে একদিনের জন্য – শ্রীজগন্নাথে গমন, পরদিন সকালে পৌঁছে এবং সেই দিন রাতেই উহাতেই প্রত্যাবর্তন - পুরী আমি একা হামেশাই যাই।
কিন্তু যুগল ভ্রমণের হ্যাপাই আলাদা। ভোর ভোর পুরী পৌঁছতে ভালো লাগে। ভালো লাগে হোটেল যাওয়ার পথে মুখে নোনা হাওয়ার ঝাপটা। কিন্তু শনিবার শিয়ালদহ-পুরী দুরন্ত এক্সপ্রেস নেই। একটি বিশেষ রেলগাড়ি (০৮৪০২) শনিবার সাঁত্রাগাছি ছেড়ে দুরন্তর মতোই পরদিন ভোর চারটেয় পুরী পৌঁছোয়। অগত্যা পর্বতসম ওভারব্রীজ পেরিয়ে অগতির গতি সেই রেলগাড়ি।
যাত্রা - ৩০ আগষ্ট শনিবার রেলগাড়িতে চেপে বসা গেল। বারবার যাতায়াতের সূত্রে জানি - এই গাড়িটিতে খড়গপুর থেকে মনোরম আমিষ আহার্য মেলে। কিন্তু দিনটি শনিবার - অগত্যা গৃহপালিত আলুচচ্চড়ি পরোটা।
১ম দিন — পরদিন প্রবল বৃষ্টির মধ্যে পুরী। সপ্তদশতমবার সৈকতের সেই একই বাঙালি হোটেল। আমি একা গেলে ওই হোটেলের পিছনের একটি হোটেলে উঠি। তার কর্মচারীর সঙ্গে এই সকালে দেখা - দেখা আমাদের দীর্ঘকালীন পাণ্ডা মহারাজের সঙ্গেও।
স্নান, আহারের হ্যাপা নেই। সাতটার মধ্যে মন্দিরে, সঙ্গী যথারীতি বৃষ্টি। তবে দেখা গেল আমাদের কালীঘাটের মতো জগন্নাথ মন্দিরে কদাচ জল দাঁড়ায় না। পড়ামাত্র হু হু করে সিঁড়ি ও ঢাল বেয়ে সিংহদরজার নীচের নালা দিয়ে সমুদ্রে চলে গেল। যথাবিহিত দর্শন, পূজা..... জগন্নাথ তো অপরাপর দেবতার মতো পিতা নন; গনেশের মতো জ্যেষ্ঠ ভ্রাতাও নন, সখা। তা সখাসন্নিধানে, সখা সন্দর্শন করে কার না আনন্দ হয়! জগন্নাথস্বামী নয়নপথগামী ভবতু মে ...
কিন্তু আমাদের বেড়াতে যাওয়ার মূল উদ্দেশ্য তো বিশ্রাম, আহার ও নিদ্রা। দুপুরে ভূরিভোজন। তৎপরে অকালনিদ্রা-অপরাহ্নে সায়াহ্নে ঘরের বারান্দা থেকে বৃষ্টিস্নাত সমুদ্রদর্শন।
তবে শুয়ে বসে দিন কাটালে তো চলবে না। চরৈবেতি। কে না জানে – যে শুইয়া থাকে তাহার ভাগ্যও শুইয়া থাকে! তাই হোটেলে বলি, কাল সকাল সাতটায় আমাদের একটা গাড়ি লাগবে। বার বার যাতায়াতের সূত্রে পুরী শহরটি এবং শহরস্থিত তথা শহর থেকে দূরের দ্রষ্টব্যগুলি চেনা। পুরীকে ঘিরে চারপাশের দর্শনীয় স্থান - যেমন রামচন্ডি, বলিহারিচন্ডি, অলরনাথ, সাতপড়া, পিপলি, কোনার্ক, চন্দ্রভাগা, শিশুপালগড়, হিরাপুর, বেলেকাটি, অত্রি, বালিঘাই, কুরুমা, বেলেশ্বর, রঘুবাজপুর, ধৌলি, ধবলেশ্বর, কাকতপুর, অস্তরঙ্গ… ভুবনেশ্বর ও পুরীর অগণন মন্দিররাজি - এ সবই কোনও না কোনোবারে দেখা।
বেশ কয়েকবছর আগে, মেদিনীপুরের এক প্রত্যন্তগ্রামে পটচিত্র ও পটচিত্রীদের ছবি তুলতে গিয়ে একটি ইতালীয় মেয়ের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। মেয়েটি জননাট্যের (Folk Theatre) গবেষক। সেই সূত্রেই তাঁর ভারতে আগমন ও দীর্ঘকালীন অবস্থিতি। কথা প্রসঙ্গে তিনি আমাকে ভুবনেশ্বরের নিকটবর্তী হিরাপুরের চৌষট্টি যোগিনী মন্দিরের কথা বলেন। মেম দিদিমণির মনে হয়েছিল তন্ত্র রীতির এই মন্দিরটি নারীর বহু্মুখী প্রতিভা ও ব্যসনের প্রতীক। পরের বার পুরী গিয়ে হোটেলের ট্রাভেল ডেস্কে ওই কথা বললে তাঁরাও অবাক, ওমত কোন মন্দিরের কথা তাঁরা কস্মিনকালেও শোনেননি। শেষে চলো তো, খুঁজে নেব বলে বেরিয়ে অবশেষে খুঁজে পাওয়া গেল। সঙ্গে শিশুপালগড়। সব দেখেশুনে শ্রীমতী পালকে সারথি বাবাজীবনের অবাক জিজ্ঞাসা- "দিদি - আপনি কি প্রফেসর"?
কিন্তু এই বছরটা তো শ্রী জগন্নাথের নবকলেবর। আর এই কলেবরের কাঠ কোথায় পাওয়া যাবে সেই নির্দেশ দেন নাকি কাকতপুরের দেবী মঙ্গলা। ফলে এইবার কাকতপুর না গেলেই নয়।
দ্বিতীয় দিন — সকাল সাতটার মধ্যে তৈরি হয়ে নিয়ে গাড়ির লোককে ফোন করি। ফোন পেয়ে তিনি অবাক! সত্যিই কি তোমরা এই বৃ্ষ্টির মধ্যে বেরোবে! তোমরা হোটেলে আছ বলে বুঝতে পারছ না, সারা শহর জলময়। তবু আমরা বেরোবই। অগত্যা গাড়ি এল পৌনে আটটায়। বৃষ্টিস্নাত আবহাওয়ায় বর্হিগমন মাত্র মিনিট দশেকের মধ্যেই শহরের সীমানা ছাড়িয়ে মৌসুমীদাক্ষিণ্যসিক্ত সবুজ ভূচিত্রের মধ্য দিয়ে প্রশস্ত রাজপথ ধেয়ে ছুটে চলা। তখন পাতায় পাতায় বিন্দু বিন্দু ঝরে জল...

শহরের উপকন্ঠে, জাতীয় সড়কের ওপরে বটমঙ্গলা মন্দিরটি আমার বড় প্রিয়। ওড়িয়া ভাষায় বট শব্দের অর্থ পথ। অর্থাৎ পথের দেবী। অনেকটা আমাদের নাচিন্দা (পূর্ব মেদিনীপুর) ধরনের - সেখানে নতুন গাড়ি কিনে লোকে পুজো করাতে আসেন - এমনকি ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়ে পুরোহিতকে বলেন একটু মায়ের ঘটে ছুঁইয়ে দিতে। নিচু ছাদের ছোট মন্দির- মাথা নিচু করে ঢুকতে হল - কিন্ত ভারী জমজমাট। অনর্গল মন্ত্রোচ্চারণ আর ঢোকার মুখে ঝোলানো অসংখ্য পেতলের ঘন্টার সম্মিলিত ধ্বনি, ধূপ ধোঁয়া-ফুল মালা…
তারপর পুরী কোণার্ক মেরিন ড্রাইভ। কেয়া ঝোপ আর কাজু বাগিচার মধ্যে দিয়ে সংরক্ষিত অরণ্যের গা বেয়ে পথ। পথে নুয়ানই ও ভার্গবী নদী। পরবর্তী বিরতি রামচন্ডি মন্দিরে। পূর্বে রামচন্ডি ও পশ্চিমে বলিহারিচন্ডি; এই দুই শাক্ত দেবী নাকি বৈষ্ণব জগন্নাথের মেন্টর - সমুদ্রের আগ্রাসন থেকে জগন্নাথ মন্দিরকে রক্ষা করতে সদাসতর্ক।
রামচন্ডি মন্দিরটি কুশভদ্রা নদীর মোহনায়। বোটিং এর ব্যবস্থা আছে - নদীর শান্ত জল পেরিয়ে তারপর একটি সৈকতে যেতে হয়; সমুদ্র সেখানে শুরু। জায়গাটি জনপ্রিয় পিকনিক স্পট, এবং নিসর্গ তথায় অতি মনোরম।
কিন্তু এবারে কপাল মন্দ। তাতার সৈন্যের মত ধেয়ে আসছে উপসাগরীয় বৃষ্টি, সঙ্গে এলোপাথাড়ি হাওয়া। ছাতা, দুরবীন, ক্যামেরা, কিছুই বার করা যাচ্ছে না। অগত্যা মুঠিফোনে ছবি।
সমুদ্রের গা দিয়ে রাস্তা, অভয়ারণ্যের মধ্য দিয়ে। চন্দ্রভাগা সৈকতে নেমে দেখি সমুদ্র উত্তাল। জলের নীল রং বদলে কালো। ঢেউয়ের ভেঙ্গে পড়া ফেনা তুলোবীজের মত উড়ে যাচ্ছে হাওয়ায়। সঙ্গে প্রবল বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দ। সৈকতের পাশেই জয়দেব পার্ক। গীতগোবিন্দের জয়দেবকে নিয়ে বাংলা-ওড়িশার দ্বন্দ্ব অনেকদিনের।

বহুচর্চিত কোণার্ক মন্দিরকে পাশ কাটিয়ে কোণার্ক-কাকতপুর রাস্তা ধরে কাকতপুর। ওড়িশার রাস্তা আমাদের কাছে সততই এক বিষ্ময়। আমাদের মতই বৃষ্টিপ্রবণ এলাকা হওয়া সত্ত্বেও কোন মন্ত্রবলে তাঁরা তাঁদের সমুদয় রাস্তা বছরভর পরিপাটি রাখেন ঈশ্বর জানেন। পথেই দয়া ও কাদুয়া নদী। মন্দিরটি বিস্তৃত। মূল বিগ্রহের মন্দিরের পাশাপাশি আরও অনেকগুলি মন্দির। নানাবিধ মাতৃমূ্র্তির দেওয়াল চিত্র, তন্মধ্যে আমাদের দুর্গা ও কালী বিরজমানা।
ওড়িশা মন্দিরময়। পথে ঘাটে মন্দির ছড়ানো অধিকাংশই সুবৃহৎ। সর্বসময়ের জন্য এক বা একাধিক পুরোহিত সম্পন্ন। পুরোহিত মশাইরা অধিকাংশই দ্বিচক্রযানারুঢ়, হাতে স্মার্টফোন। মন্দিরগুলির রক্ষণাবেক্ষণও যথাযথ। এই মন্দিররাজির অর্থনৈতিক চালিকাশক্তিটি কোথায় জানতে বড় আগ্রহ হয়। আমাদের মন্দিররাজির মতো তাঁরা যে দু পাঁচ দশ টাকার প্রণামী নির্ভর নন, তা মন্দিররাজির রক্ষণাবেক্ষণ ও নিত্যপূজার আয়োজন দেখলেই বোঝা যায়। সম্ভবত পারিবারিক দাক্ষিণ্য, ট্রাষ্ট মারফৎ, এবং বাঁধা আয় তাদের সজীব রেখেছে।
তারপর অনেকখানি পথ গিয়ে অস্তরঙ্গ। ছোটখাট একটি গঞ্জ বলা যেতে পারে। সেখান থেকে গ্রামীণ রাস্তা ধরে, ধানখেতের মধ্য দিয়ে এঁকে বেঁকে অনেকখানি পথ গিয়ে জাহানিয়া পির সাহেবের মাজার। ওড়িশার প্রত্যন্ত গ্রামে অন্য সম্প্রদায়ের একটি ধর্মস্থান অবাক করে। ধরাবাঁধা ইসলামের প্রান্তবর্তী এই ধরনের পির, সুফি, আউলিয়াদের ধর্মস্থানে সাধারণত উভয় সম্প্রদায়েরই মানুষজন যাতায়াত করেন। মাজারে প্রণাম ঠুকে সৈকতে। বৃষ্টি তখন শরবৃষ্টি করে চলেছে; সৈকতে যতদূর চোখ যায়, ডাইনে ও বামে আমি একা। সমুদ্রের জল ঘন কালো- সে যেন অতিশয় জ্যান্ত, বাস্তব, আগ্রাসী এক অস্তিত্ব। তার সেই মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে বাস্তবিকই ভয় করে। অস্তরঙ্গে সমুদ্র দেখা জীবনের একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে।

দীঘার নিকটবর্তী বিচিত্রপুরের মত এখানেও ম্যানগ্রোভ অরণ্য সৃষ্টির কাজ চলছে। গোলিয়াথ হেরণ, ব্ল্যাক হেডেড জাকানা, স্নাইপ, পার্পল মুরহেন পাখিদের আনাগোনা।
ফিরতি পথে আরও কয়েকটি জায়গায় যাওয়ার পরিকল্পনা ছিলো - কিন্তু ভিজে কাপড়ে বেড়াবার ইচ্ছা তখন উবে গেছে। ফেরার পথে কোণার্কে মধ্যাহ্নভোজ। বেলা তিনটেয় হোটেল।
তৃতীয় দিন — পরদিন, অর্থাৎ মঙ্গলবার, সকাল থেকে আকাশের মুখ ভার। জলে নামতে স্থানীয় প্রশাসন বারণ করছিলেন। তাই সৈকতে বসে ঢেউয়ের ঝাপটা খাওয়ার ইচ্ছা হল। কিন্তু গোটা দুয়েক ঝাপটা খেয়েই মালুম হল যে আমার বয়স বেড়েছে, অগত্যা সুবোধ বালকের ন্যায় গৃহকোণে। মন্দিরে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু কোন গূঢ় কারণে মন্দিরে আধুনিক ছাতার প্রবেশ নিষেধ। পুরোহিত কুলের শিরে লাঠির ডগায় তালপাতার সদাখোলা ছাতা শোভা পেলেও পেতে পারে; কিন্তু ভক্তকুলের ছত্রধারী হওয়া নৈব নৈব চ। অপরাহ্নে আকাশ একটু পরিস্কার হতে পশ্চিমে রিক্সায় মোহনায় - সৈকত সেখানে নির্জন; রিভার টার্ন আর দাঁড়কাকদের রাজত্ব। সৈকতে শঙ্খ ও ঝিনুকের সমাহার।
মঙ্গলবার অপরাহ্নে আকাশ পরিস্কার হতে মনে কিঞ্চিৎ আশা জেগেছিল। কিন্তু রাত তিনটেয় হোটেল ঘরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে সমুদ্র দেখতে দেখতে দূর দিগন্তে দেখলাম নীল আলোর আস্ফালন। মুহুর্মুহু বিদ্যুৎচমকে ছিঁড়ে যাচ্ছে রাত্রির গাঢ় তমসা।


চতুর্থ দিন — পরদিন বুধবার সারাদিন বাদলের ধারাপাত। শোনা গেল নতুন এক নিম্নচাপ দ্বারে সমাগত। আমরা গৃহবন্দী। এবং বৃহস্পতিবারও তাই।
বিগত চার দশকে বহু বার পুরী যাতায়াতের সূত্রে হারানো কয়েকটি জিনিষ মনকে নাড়ায়। প্রথমত, তথাকথিত হরিণের চামড়ার চটি - জলের ছোঁয়ায় যার গঙ্গাপ্রাপ্তি ঘটত। দ্বিতীয়তঃ কাগুজে বাঘ। কাগজের মন্ডের বাঘ, হাওয়ায় যার মাথা নড়ত। তৃতীয়তঃ সৈকত বরাবর স্বর্গদ্বার পর্যন্ত রাস্তায় অগনিত লেটার বক্স তীর্থযাত্রীরা পোষ্টকার্ডে পৌঁছ সংবাদ বাড়িতে জানাবে, সেই প্রত্যাশায়। সেই পোষ্টকার্ড সর্বদাই সেই তীর্থযাত্রীদের স্বগৃহে প্রত্যাবর্তনের পর গিয়ে পৌঁছাত- সে কথা বলাই বাহুল্য। কালক্রমে লেটার বক্স এর জায়গা নেয় এস.টি.ডি. বুথ। এখন তাও ইতিহাস। তারকেশ্বরে কুমড়ো কেনার মত, তখন যেই পুরী যেতো হাঁড়ি কিনতো। তখন যৌথ পরিবারের কাল, হাঁড়ির দরকারও পড়তো গেরস্তবাড়িতে। তখন পুরীর হাঁড়ি হতো দুরকম। প্রথমত উজ্জল সাদার ওপর ফোঁটা ফোঁটা - স্বর্গদ্বারের প্রায় প্রতিটি দোকানে অদ্যাবধি যা উপলব্ধ। দ্বিতীয় হাঁড়িটি ছিলো অপেক্ষাকৃত মোটা চাদরের, আদৌ উজ্জল নয়, বরং কিঞ্চিৎ ম্যাড়ম্যাড়ে, যার ঘেরের তুলনায় উচ্চতা বেশি হতো। সেই বিস্তৃত হাঁড়িটির জন্য আজও আমার দীর্ঘশ্বাস পড়ে!

শেষতঃ বহুকথিত পুরীর লাঠি। বর্ষীয়ানরা পুরী গেলে কচিকাঁচাদের জন্য নিয়ে আসতেন। তখন যৌথ পরিবারগুলিতে কাঁড়ি কাঁড়ি বাচ্চা-কাচ্চা তাদের পেটাতে ও মারপিটে চমৎকার ভূমিকা নিতো হেঁতালের লাঠিগুলি। যৌথ পরিবার অবলুপ্ত, পরিবার পিছু বাচ্চাও এখন হাতে গোনা - তার ওপর তাদের পিতামাতার সদাসতর্ক উদ্বিগ্ন নজর, সেই দুঃখেই বোধহয় পুরীর লাঠি বাজার হারাল। নচেৎ বিচিত্রপুর, অস্তরঙ্গ প্রভৃতি জায়গায় ম্যানগ্রোভ আবাদের পর হেঁতাল গাছ কম পড়ার কথা নয়।
পঞ্চম দিন — বৃহস্পতিবার, প্রত্যাবর্তন। সকালে ভিজে ভিজে স্বর্গদ্বারে গিয়ে আত্মীয় প্রতিবেশী সহকর্মীদের জন্য বাধ্যতামূলক খাজা ক্রয়। নমস্কার সেই মহাপুরুষটিকে, যিনি ব্যাগের নিচে প্রথম চাকা লাগিয়েছিলেন। চাকা ব্যাগ না থাকলে আমরা কি আর বস্তা বস্তা খাজা নিয়ে আসতে পারতাম!
দুপুরে বাঁধাছাঁদা করে সন্ধ্যায় হোটেলের পিছনে দৃশ্যমান - জগন্নাথ মন্দিরের আলোকিত চূড়া ও সম্মুখের সততচঞ্চল সমুদ্রকে প্রণাম করে, স্টেশন।
কিঞ্চিৎ অপেক্ষার পর চার নম্বর প্ল্যাটফর্মে গাড়ি এল। ২২২০২ পুরী শিয়ালদহ দুরন্ত এক্সপ্রেস, আমাদের কামরা এ ওয়ান, ইঞ্জিন থেকে ষষ্ঠ। গোটা কামরায় মোট এগারো জন লোক, অথচ স্লিপার শ্রেণী সব ভর্তি। আমরা দুজন বাদে সবাই ষাটোর্ধ-রিবেটে ভ্রমণরত। রেলের সাম্প্রতিক ভাড়াবৃদ্ধি বাতানুকূল শ্রেণীর নিভৃতি কিছুটা হলেও ফিরিয়ে এনেছে দেখে ভালো লাগল। পৌনে আটটায় গাড়ি ছাড়ল। পরদিন তিনটে পঞ্চান্ন। নির্ধারিত সময়ের দশ মিনিট আগে - শিয়ালদহ।


~ পুরীর তথ্য ~ পুরীর আরও ছবি ~

পশ্চিমবঙ্গ অডিট ও অ্যাকাউন্টস বিভাগের কর্মী তপন পাল বোম্বে ন্যাচারাল হিস্ট্রি সোসাইটি এবং ইন্ডিয়ান রেলওয়ে ফ্যান ক্লাবের সদস্য। ভালোবাসেন বেড়াতে আর ছবি তুলতে।

 

 

SocialTwist Tell-a-Friend

To view this site correctly, please click here to download the Bangla Font and copy it to your c:\windows\Fonts directory.

For any queries/complaints, please contact admin@amaderchhuti.com
Best viewed in FF or IE at a resolution of 1024x768 or higher