ভুবনেশ্বর (Bhubaneswar)- ওড়িশার রাজধানী ভুবনেশ্বর। একদা কলিঙ্গ রাজধানী ইতিহাস প্রসিদ্ধ ভুবনেশ্বরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অতীত ইতিহাসের সাক্ষী মন্দিরগুলিই প্রধান আকর্ষণ। পাঁচশোরও বেশি মন্দির আছে মন্দিরনগরী ভুবনেশ্বরে। এরমধ্যে উল্লেখ্য- সপ্তম শতাব্দীতে নির্মিত পরশুরামেশ্বর মন্দির, অষ্টম শতকে তৈরি বৈতাল মন্দির, দশম-একাদশ শতকে গড়ে ওঠা মুক্তেশ্বর মন্দির। এরই সমসাময়িক রাজারানি, ব্রহ্মেশ্বর এবং লিঙ্গরাজ মন্দির। মন্দিরগুলির গায়ের ওড়িশি ভাস্কর্যের অপরূপ শিল্পকলা দর্শককে মুগ্ধ করবে।
১০০০ খ্রীষ্টাব্দে রাজা ললাট কেশরী লিঙ্গরাজ মন্দিরটি নির্মাণ করেন। বিশাল এই মন্দিরপ্রাঙ্গণে একসময় ১০৮টি মন্দির ছিল। মূল মন্দিরের উচ্চতা ১৬৫ফুট। মন্দিরপ্রাঙ্গণটির দৈর্ঘ্য ৫২০ ফুট ও প্রস্থ ৪৬৫ ফুট। গ্র্যানাইট পাথরে তৈরি চক্রাকার লিঙ্গরাজ মন্দিরের মূল প্রবেশদ্বার তিনটি। কলিঙ্গ স্থাপত্যের রীতি অনুযায়ী মন্দিরটি বিমান, জগমোহন, নাটমন্দির ও ভোগমন্দিরে এই চারঅংশে বিভক্ত। মন্দির ও প্রাচীরের গাত্র ফুল, লতাপাতা প্রভৃতি সূক্ষ্ম কারুকার্য মন্ডিত। মন্দিরমধ্যে গণেশ, কার্তিক, পার্বতীর মূর্তি রয়েছে।
মন্দিরের কাছেই বিন্দু সরোবর। এই সরোবরকে ঘিরে গল্পকথা রয়েছে। পার্বতীর তৃষ্ণা মেটানোর জন্য শিব সমস্ত নদনদীর কাছে অনুরোধ করেন বিন্দু বিন্দু জল দেওয়ার জন্য। সেই বিন্দু বিন্দু জল থেকেই এই সরোবরের সৃষ্টি। কথিত আছে, এই সরোবরে স্নান করলে সর্বপাপ মুক্ত হওয়া যায়। চন্দনযাত্রার সময় লিঙ্গরাজ এই সরোবরে স্নান করেন।
বিন্দু সরোবরের পূর্বপাড়ে অনন্ত বাসুদেব মন্দির। প্রাচীন এই বিষ্ণুমন্দিরটি সম্ভবত ১২৭৮-এ অনঙ্গ ভীমদেবের কন্যা চন্দ্রাদেবী নির্মাণ করেন। মন্দিরের কারুকার্য দেখার মতো।
সিদ্ধারণ্য বা সিদ্ধঅরণ্যটি একসময়ে আম্রকানন বলে পরিচিত ছিল। এখন কেদারগৌরী বা গৌরীকুন্ডের প্রস্রবণটি পুণ্যপুকুর নামে খ্যাত। এখানে রয়েছে নবম শতকে তৈরি মুক্তেশ্বর মন্দিরটি। হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈনধর্মের মিশ্র প্রভাবের ভাস্কর্যে গড়া দেবমূর্তিগুলো দেখার মতো। এখানে সিদ্ধেশ্বর মন্দিরে গণেশের দন্ডায়মান মূর্তিটি অসাধারণ। মুক্তেশ্বরের বিপরীতে ৬৫০ খ্রীষ্টাব্দে তৈরি পরশুরামেশ্বর মন্দির। কেদারেশ্বর মন্দিরটি ষষ্ঠ শতকের। কেদারেশ্বরে দুধগঙ্গার জলে নানা ব্যাধির উপশম হয় বলে বিশ্বাস।
সিদ্ধারণ্যের কাছে সুন্দর এক বাগিচার মধ্যে রাজারানি মন্দির। একাদশ শতাব্দীতে তৈরি সূক্ষ্ম কারুকার্য মন্ডিত এই মন্দির ৫৮ ফুট উঁচু। দেওয়ালে, থামে, কুলুঙ্গিতে নানা দেবদেবী, সুন্দরী নারীমূর্তির বিভিন্ন ভঙ্গিমায় ছোট ছোট কাজ দেখার মতো। কথিত আছে, রাজা উদ্যত কেশরী তাঁর রানির ইচ্ছেয় এই মন্দির গড়েন, নাম দেন রাজারানি।
ভুবনেশ্বর থেকে কোনারকের পথে পুরী রোডে ৫কিমি এগিয়ে ধৌলিচক থেকে ডানদিকে আরও ৩কিমি দূরে ধৌলিগিরি। ধৌলিতে অশোক পাহাড়ের গায়ে খোদিত রয়েছে কলিঙ্গরাজ অশোকের কাহিনী। এখানেই ঐতিহাসিক কলিঙ্গ যুদ্ধ ঘটে খ্রীস্টপূর্ব ২৬১-তে কলিঙ্গরাজ ও অশোকের মধ্যে। ইতিহাসের সাক্ষী দয়ানদী আজও বয়ে চলেছে। প্রায় ১৬ফুট বাই ১০ফুটের একটি পাথরের শিলায় সম্রাট অশোকের ১৩টি রাজাজ্ঞা লিপিবদ্ধ রয়েছে। ১৯৭২ সালে পাহাড়চূড়ায় জাপান ও বৌদ্ধসংঘের উদ্যোগে নির্মিত হয়েছে বিশ্বশান্তি স্তূপ। শ্বেতপাথরের স্তূপের চারপাশে আছে চারটি বিশেষ সময়ের বুদ্ধমূর্তি। পাশেই ধবলশ্বের শিবমন্দির। এখান থেকে সূর্যাস্তের দৃশ্যও মনোরম। কাছেই অশোকের সমসাময়িক নগরী শিশুপালগড়ের ধ্বংসাবশেষ।
ভুবনেশ্বর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরত্বে হিরাপুরে এগারো শতকে নির্মিত চৌষট যোগিনী মন্দির। সারা ভারতের চৌষট যোগিনী মন্দির চারটির মধ্যে এটি অন্যতম একটি। খোলা আকাশের নীচে প্রাচীরের গায়ে ৬৪টি যোগিনী মূর্তি দেখার মতো।
ভুবনেশ্বরের আরেক আকর্ষণ ওড়িশা স্টেট মিউজিয়াম ও ২০ কিলোমিটার দূরে চিড়িয়াখানা নন্দনকানন। ১৯৬০ সালে ৪২৬ হেক্টর জায়গা জুড়ে নন্দনকানন তৈরি হয়।
এখানে সাদা বাঘ ও সিংহ দেখার জন্য আলাদা সাফারির ব্যবস্থা আছে। এছাড়াও চিড়িয়াখানায় রয়েছে চিতাবাঘ, ব্ল্যাক প্যান্থার, হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ার, ইউরোপিয়ান ব্রাউন বিয়ার, ঘড়িয়াল, শিম্পাঞ্জি, বেবুন প্রভৃতি বন্যপশু। একপাশে সরীসৃপ ঘর। এখানে টয়ট্রেন রাইড আর লেকের জলে বোটিংয়ের ব্যবস্থা আছে।
ভুবনেশ্বর শহর থেকে ন্যাশনাল হাইওয়ে ধরে ৮কিমি পশ্চিমে পূর্বঘাট পর্বতমালার এপারে খণ্ডগিরি, ওপারে উদয়গিরি। খ্রীষ্টপূর্ব ২ শতকে গ্র্যানাইট পাহাড় কুঁদে তৈরি হয়েছিল এই গুহাগুলি।
গ্র্যানাইট পাথরের উদয়গিরির উচ্চতা ১১৩ফুট। উদয়গিরিকে বৌদ্ধদের গুহাও বলা হয়। উদয়গিরিতে মোট ৪৪টি গুহা আছে। সবকটি গুহা দেখতে অনেক সময় লেগে যায়। ফুলের গাছে সাজানো সিঁড়ি বেয়ে উঠে প্রথমেই পড়বে স্বর্গপুরী গুহা। এখানে আছে সুন্দর একটি হস্তিমূর্তি। এই গুহা পেরিয়ে রানিগুহা। ভাস্কর্যময় এই গুহায় আছে যুদ্ধ, বিজয়মিছিল, হস্তী, নারী, নর্তকীমূর্তি। এরপর গণেশ গুহা। হস্তিগুহার কাছের শিলালিপিটি বৌদ্ধ বা জৈনধর্মের। এতে কলিঙ্গরাজ খারবেলার জীবনচরিত ও অনুশাসন লিপিবদ্ধ আছে বলে অনুমান করা হয়। মহাবীর এই উদয়গিরিতে কিছুদিন অবস্থান করেন বলে শোনা যায়। এরপরে একে একে আরও দেখে নিতে হবে সর্প গুহা, অনন্ত গুহা, জয়া-বিজয়া গুহা।
উদয়গিরির গুহাগুলি দেখতে দেখতেই পৌঁছে যাওয়া যাবে খণ্ডগিরিতে। খণ্ডগিরি জৈন তীর্থক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত। এখানে ১৯টি গুহা আছে। এখানকার অনেকগুলি গুহার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ত্রিশূলা গুহা, গণেশ গুহা, বাঘ গুহা প্রমুখ। অনেকগুলি গুহাতেই অপরূপ ভাস্কর্য মুগ্ধ করে। গুহাগুলো পেরিয়ে উপরে উঠে জৈন তীর্থংকর ২৪তম মহাবীর ও ২৩তম পার্শ্বনাথের মন্দির। এর উপর থেকে ভুবনেশ্বর শহরকে খুব সুন্দর দেখায়। পাহাড়ের পশ্চাৎপটে অপরূপ অরণ্যশোভা।
ভুবনেশ্বর থেকে ৪০কিমি পশ্চিমে উষ্ণ প্রস্রবণ অত্রি।
যাওয়াঃ- নিকটতম রেলস্টেশন ভুবনেশ্বর। শহর থেকে ৪কিমি দূরে বিমানবন্দর। অটোয় অটোয় ভুবনেশ্বরের আশ-পাশ বেড়িয়ে নেওয়া যায়। ভুবনেশ্বর থেকে কন্ডাক্টেড ট্যুরে বা নিজেদের ব্যবস্থাপনায় গাড়িতে/বাসে বেড়িয়ে নেওয়া যায় উদয়গিরি- খণ্ডগিরি, ধৌলি, কোনারক, ও পুরী।
থাকাঃ- ওড়িশা স্টেট মিউজিয়ামের কাছেই সরকারি পান্থনিবাস। এছাড়া শহরজুড়ে অজস্র হোটেল আছে। ভুবনেশ্বরের এস টি ডি কোডঃ- ০৬৭৪।
কেনাকাটাঃ- ওড়িশার হস্তশিল্প ও তাঁতশিল্প বিশেষ উল্লেখযোগ্য। স্টেট এম্পোরিয়াম উৎকলিকা, ওড়িশা স্টেট হ্যান্ডলুম উইভার্স কো-অপারেটিভ। ওড়িশা স্টেট হ্যান্ডলুম ডেভেলপমেন্টে কর্পোরেশন কেনাকাটার জন্য ভালো জায়গা। সরকারি দোকানপাট রবিবার বন্ধ থাকে।
উৎসবঃ- পুরীর মতো লিঙ্গরাজ মন্দিরকে কেন্দ্র করেও রথযাত্রা, দোলযাত্রা, চন্দনযাত্রা উৎসব হয়। বৈশাখ মাসে অক্ষয়তৃতীয়া থেকে শুক্লাষ্টমী পর্যন্ত চন্দনযাত্রা উৎসব চলে।
পুরী (Puri)- বাঙালির চিরকালীন নস্টালজিয়া রয়েছে পুরীকে ঘিরে। ইতিহাসেও বহু প্রাচীনকাল থেকেই পুরী বা পুরুষোত্তম ক্ষেত্রের উল্লেখ পাওয়া যায়। ওড়িশার এই একান্ত বাঙালিপ্রবণ শহরটির মূল আকর্ষণ দীর্ঘ সমুদ্রতট আর জগন্নাথ দেবের মন্দির। পুরীর বিচগুলির মধ্যে স্বর্গদ্বারের প্রশস্তিই সবচেয়ে বেশি। পুরীর সমুদ্রে স্নান করার ব্যাপক চল থাকলেও সমুদ্র অনেকসময়ই বেশ বিপজ্জনক হয়ে ওঠে, তাই সাবধানতা নেওয়া উচিত। বেড়ানোর সেরা সময় অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারী। তবে সারাবছরই ভিড় লেগে থাকে।
ভারতের হিন্দুদের চারধাম অর্থাৎ বদরীনাথ, দ্বারকা, রামেশ্বরম এবং পুরী। পুরাণের কথায়, শ্রীজগন্নাথ বদরীতে স্নান করে দ্বারকায় অঙ্গসজ্জা করেন। তারপর পুরীতে অন্নভোগ সেরে রামেশ্বরমে শয়ান বা বিশ্রাম নেন।
কথিত আছে, আদিতে সূর্যবংশীয় রাজা অবন্তীরাজ ইন্দ্রদ্যুম্ন স্বপ্নাদেশ পেয়ে জগন্নাথ মন্দিরটি তৈরি করেন। বর্তমান মন্দিরটি ১১০০ খ্রীষ্টাব্দে রাজা অনন্তবর্মন শুরু করলেও তাঁর পৌত্র রাজা অনঙ্গ ভীমদেবের আমলে ১১৯৮ খ্রীষ্টাব্দে সমাপ্ত হয়। গর্ভগৃহ বা মূল মন্দিরের উচ্চতা ১৯২ফুট। প্রবেশদ্বার চারটি- সিংহদ্বার, হস্তীদ্বার, অশ্বদ্বার ও খাঞ্জাদ্বার। এরমধ্যে সিংহদ্বারটি প্রধান। এখানেই কোনারক থেকে আনা অরুণ স্তম্ভটি রয়েছে। পূর্বদিকে মূল প্রবেশদ্বার বা সিংহদ্বার। ৬৭০ফুট দীর্ঘ ও ৬৪০ফুট চওড়া মন্দিরটি ওড়িশি শিল্পধাঁচে চার ভাগে বিভক্ত- ভোগমন্ডপ, নাটমন্দির, জগমোহন ও দেউল।
কথিত আছে, স্বপ্নাদেশে সমুদ্র থেকে পাওয়া কাঠের সাহায্যে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তিটি তৈরি। মন্দিরের বেদিতে বলরাম, জগন্নাথ ও সুভদ্রার মূর্তির সঙ্গে রয়েছে লক্ষ্মী, সরস্বতী ও নীলমাধবের মূর্তিও। বিষ্ণুরই আরেক রূপ জগন্নাথ। মন্দিরচত্বরে আরও চল্লিশটি ছোটো মন্দির আছে। মন্দিরে শুধুমাত্র হিন্দুদের প্রবেশাধিকার আছে। ক্যামেরা, মোবাইল, চামড়ার কোনও জিনিস সঙ্গে নিয়ে ঢোকা নিষেধ।
পুরী শহরের আশেপাশে স্থানীয় দ্রষ্টব্যগুলি রিকশা বা অটোতে ঘুরে দেখে নেওয়া যায়। এরমধ্যে রয়েছে চক্রতীর্থ বা স্বর্গদ্বার, কানপাতা হনুমান, বিদুরপুরী, মহোদধি, সুদামাপুরী, সোনার গৌরাঙ্গ মঠ, শংকরাচার্য মঠ, কবির মঠ, নানক মঠ, রাধাকান্ত মঠ বা কাশীমিশ্র ভবন, সিদ্ধবকুল মঠ, শ্বেতগঙ্গা, শ্রীশ্রীগুণ্ডিচা মন্দির বা মাসির বাড়ি বা বাগানবাড়ি, দশাবতার মঠ, তোতা গোপীনাথজির মন্দির, কপালমোচন মন্দির ইত্যাদি।
পুরী থেকে ভুবনেশ্বরের পথে ১৭কিমি দূরে সাক্ষীগোপাল। দেবতা এখানে শ্রীকৃষ্ণ রূপে পূজিত হন। এই পথেই পুরী থেকে ৯কিমি দূরে চন্দনপুর থেকে আরও দেড় কিমি এগিয়ে পটচিত্রের জন্য খ্যাত রঘুরাজপুর।
সারাদিনের কন্ডাক্টেড ট্যুরে দেখে নেওয়া যায় কোণারক, নন্দনকানন, ভুবনেশ্বরের মন্দিরগুলো, খণ্ডগিরি, উদয়গিরি, ধৌলি বা ধবলেশ্বর ইত্যাদি।
যাওয়াঃ- নিকটতম রেলস্টেশন পুরী। ওড়িশার প্রতিবেশি রাজ্যগুলির বিভিন্ন জায়গা থেকে ও ওড়িশার বিভিন্ন শহরের সঙ্গে বাস যোগাযোগ রয়েছে পুরীর। পুরী থেকে কন্ডাক্টেড ট্যুরে কোনারক, উদয়গিরি-খণ্ডগিরি ও ভুবনেশ্বর বেড়িয়ে নেওয়া যায়।
থাকাঃ- আই টি ডি সি- হোটেল নীলাচল অশোক। এছাড়া পুরীর সমুদ্র ও জগন্নাথদেবের মন্দিরকে কেন্দ্র করে নানা বাজেটের অজস্র হোটেল ছড়িয়ে রয়েছে পুরো এলাকা জুড়ে। ধর্মশালাও আছে বেশ কয়েকটি। সস্তায় থাকার জন্য রয়েছে নানান সংস্থার হলিডে হোমগুলি। পুরীর এস টি ডি কোডঃ- ০৬৭৫২।
কেনাকাটাঃ- সমুদ্রের ধার জুড়ে শাঁখ, ঝিনুক, পাথরের নানান পসরা নিয়ে হাজির দোকানীরা। শহরেও মিলবে হস্তশিল্প বা তাঁতশিল্পের অনেক দোকান। কটকি, সম্বলপুরী শাড়ি, রঘুরাজপুরের পটশিল্প, পিপলির অ্যাপ্লিক, শাঁখ, ঝিনুক অথবা পাথরের ঘরসাজানোর জিনিস -এসবই হতে পারে পুরী বেড়ানোর স্মারক।
খাওয়াদাওয়াঃ- পুরী বেড়িয়ে এসে সবাইকে আর কিছু নাহোক গজা কিম্বা জগন্নাথের মহাপ্রসাদ চেনাপরিচিত সবাইকে দেওয়া বাঙালির এক রীতি। মন্দিরে পুজোর বিনিময়ে প্রসাদতো মেলেই, মন্দিরের আনন্দবাজারেও কিনতে পারা যায় এই মহাপ্রসাদ।
উৎসবঃ- পুরীর সেরা উৎসব জগন্নাথদেবের রথযাত্রা। আষাঢ় মাসে এই রথযাত্রা উৎসবে দেশি-বিদেশি লক্ষাধিক পুণ্যার্থী আসেন।
ডিসেম্বর মাসে স্বর্গদ্বার লাগোয়া সৈকতে অনুষ্ঠিত হয় বিচ ফেস্টিভাল।
ভ্রমণ কাহিনি - || ছোট্ট ছুটির পুরী || আবার পুরী ||
কোণারক / কোণার্ক (Konark) - ওড়িশার মন্দির ভাস্কর্যের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন নিঃসন্দেহে কোণারকের সূর্যমন্দির। ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাতেও রয়েছে এর নাম। প্রায় একহাজার বছরের স্থাপত্যের ইতিহাসের শেষ পর্যায়ে অসাধারণ এই মন্দিরটি নির্মিত হয়। মন্দিরটি ঠিক কবে তৈরি হয়েছিল আর কেইবা ছিলেন এর স্রষ্টা তা নিয়ে ইতিহাসে, পুরাণে, গল্পকথায় নানান কাহিনী ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। পুরাণ মতে, কৃষ্ণপুত্র শাম্ব পিতার অভিশাপে কুষ্ঠ রোগাক্রান্ত হওয়ার পর চন্দ্রভাগা নদীর তীরে সূর্যের আরাধনা করেন। ১২ বছর সাধনা করার পর তাঁর রোগমুক্তি হয়। এরপর শাম্ব একটি সূর্যমন্দির নির্মাণ করেন। পুরী থেকে ৩৫ কিলোমিটার ও ভুবনেশ্বর থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরত্বে এই মন্দির। মোটামুটিভাবে, গঙ্গরাজবংশের রাজা নরসিংহদেব লাঙ্গুলীয় পুরন্দর কেশরী (১২৩৮-৬৪)-র আমলেই বর্তমান মন্দিরটির নির্মাণ হয় বলে অনেকেই মনে করেন। তবে এর প্রায় তিনশ বছর পরে মুঘল সম্রাট আকবরের সভাসদ আবুল-ফজলের আইন-ই-আকবরী গ্রন্থে কোণারকের সূর্যমন্দিরের যে উল্লেখ পাওয়া যায় সেই বর্ণনা পড়লে মনে হয় মন্দিরটি আরও প্রাচীন। খুব সম্ভব পুরনো মন্দিরের ওপর নরসিংহদেব নতুন মন্দিরটি তৈরি করান।
কলিঙ্গ স্থাপত্যের রীতি অনুযায়ী ওড়িশার মন্দিরগুলির চারটি অংশ - ভোগমন্ডপ, নাটমন্দির, জগমোহন ও দেউল। কোণারকের মন্দিরে এই নীতি পুরোপুরি মানা হয়নি। এখানে নাটমন্দির নেই। দেউল ও জগমোহন মিলিয়ে একটা ইউনিট হিসেবে তৈরি হয়েছিল। এখন আমরা কোণারকে যে মন্দিরটি দেখতে পাই সেটি মন্দিরের জগমোহন ও ভোগমন্ডপ অংশ। মূল মন্দির বা রেখ দেউল বহু শতাব্দী আগেই ধ্বংস হয়ে গেছে। ষোড়শ শতাব্দীর শেষপদে যবন আক্রমনে ক্ষতিগ্রস্ত হয় মূল মন্দিরটি। ক্রমশঃ কালের গহ্বরে তা বিলীন হয়ে যায়। ১৮২৫ সালে এস্টারলিং-এর বর্ণনায় রেখ দেউলের ভগ্নাবশেষের উল্লেখ পাওয়া যায়। ১৮৩৭ সালে জেমস ফার্গুসনের হাতে আঁকা ছবিতে রেখ দেউলের একটা অংশ দেখা যায় যার উচ্চতা ছিল ১৪০-১৫০ফুট। অর্থাৎ বর্তমান জগমোহনের চেয়ে উঁচু। কোণারক মন্দিরের প্রকৃত সংরক্ষণ শুরু হয় ১৯০১ সালে, লর্ড কার্জনের আমলে। পুরাতত্ত্ববিদ জন হান্টারের নেতৃত্বে রথের চাকা আর রথের ঘোড়া বালি সরিয়ে বের করে আনা হয়। জগমোহনের ভেতরটাও এই সময়েই বালি দিয়ে বুজিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়।
রথারূঢ় সূর্য এই মন্দিরের উপাস্য দেবতা। মন্দিরটিও তাই যেন গড়া রথের আদলেই। উপাস্য ভাস্করমূর্তিটি মুসলিম আক্রমনের সময়েই তৎকালীন সম্রাট মুকুন্দদেব পুরীর মন্দিরে স্থানান্তরিত করেন। রথের দুটি অংশ - মূল অংশ অর্থাৎ যেখানে রথী বসেন, তা হল বড়দেউল। আর সারথির অংশটাই জগমোহন। সূর্যের এই রথের মোট ৭টি অশ্ব- সপ্তাহের সাতবার নির্দেশ করে। একেকদিকে ১২টি করে মোট চব্বিশটি চক্র। একএকটি চক্র এক এক পক্ষকাল। এই প্রকান্ড রথটি দৈর্ঘ্যে প্রায় ৬৬মি, প্রস্থে সবচেয়ে চওড়া অংশে ৩০.৫মি। জগমোহনের উচ্চতা ৩৯মি। মূল মন্দিরটি ছিল অন্ততঃ ৭৭মি উচ্চ।
জগমোহনের পূর্বদিকে যে সিঁড়ি আছে তার প্রত্যেকদিকে দুটি করে মোট চারটি চক্র আছে। দক্ষিণ দিকে ছিল চারটি রথাশ্ব। তার ভিতর দুটির মাথা আছে- দ্বিতীয়টির অনেকটাই এখনো অক্ষত আছে। চক্রগুলি মোটামুটি একই রকম, যদিও কারুকাজে তফাত আছে। রথচক্রগুলির ব্যাস ২.৭৪মি, এতে আটটি বড় স্পোক এবং আটটি ছোট স্পোক আছে। বড় স্পোকগুলির মাঝে মোট আটটি এবং চক্রের মাঝে একটি গোলাকার অংশ রয়েছে। তাতে স্ত্রী, পুরুষ, মিথুনচিত্র, দেবদেবীর মূর্তি খোদিত রয়েছে।
সবার নিচে উপান অংশে আছে হাতির সারি, শিকারের দৃশ্য, শোভাযাত্রার দৃশ্য। উপানের ওপরের অংশের ভিতর পাটায় জীবজন্তুর চিত্র ও নানান নকশা কাটা। তলজঙ্ঘাতে কিছু দূরে স্তম্ভের কুলুঙ্গিতে নানান দৃশ্য। দুটি স্তম্ভের মাঝে কখনও দুটি বা তিন-চারটি খাড়া পাথর। এই খাড়া পাথর গুলিতেও নানা ভাস্কর্যের নিদর্শন- মিথুনমূর্তি, অলসকন্যা, বিরাল অথবা নাগমূর্তি। তলজঙ্ঘার ওপরে বন্ধনের তিনটি অংশে নানান নকশা কাটা। উপর জঙ্ঘাতে, নিচের তলজঙ্ঘার স্তম্ভের ওপর আবার একটি করে পদ্মশীর্ষ অর্ধস্তম্ভ, তলজঙ্ঘার মূর্তিগুলির ঠিক ওপর ওপর এখানেও একসারি মূর্তি।
ওপর জঙ্ঘার ওপরে বড়ণ্ডি অংশও অক্ষত নেই। এর কিছুটা ঝোলা বারান্দার মত বাইরে বেরিয়ে আছে। তার গায়ে অপরূপ নকশাকাটা। জগমোহনের তিনদিকে তিনটি দরজা। পূর্বদিকে সিংহদ্বার। তিন দরজার পর বিস্তৃত চাতাল শেষে ধাপে ধাপে সিঁড়ি নেমে গেছে। চতুর্থদিক অর্থাৎ পশ্চিমদিকে বড় দেউলে যাবার দ্বার। জগমোহনটি পঞ্চরথ পীড় দেউল বা ভদ্রদেউল। বাড় অংশে পাঁচ ভাগ- পা-ভাগ, তল জঙ্ঘা, বন্ধন, উপর জঙ্ঘা এবং বরণ্ডি। পা-ভাগের ওপরে তল-জঙ্ঘায় দুই জোড়া করে অর্ধস্তম্ভের মাঝে মাঝে কুলুঙ্গি করা হয়েছে। তাতে অপেক্ষাকৃত বড় মূর্তিগুলি ছিল, যার অনেকগুলিই এখন আর নেই। অলসকন্যা, মিথুনমূর্তি এখনও কিছু কিছু আছে আর রয়েছে রাহাপাগের উল্লম্বনরত বিড়াল, কোনাপাগ ও অনুরথ পাগের খাঁজে গজবিড়াল ও রাক্ষস বিড়ালের মূর্তিগুলি। উপর জঙ্ঘার পরিকল্পনা তলজঙ্ঘার মতই। সবার ওপরে বড়ণ্ডিতেও নানান নকশা রয়েছে।
বড় দেউলের তিনদিকে সূর্যদেবের তিন মূর্তি - দক্ষিণে দন্ডায়মান পূষা, পশ্চিমে দন্ডায়মান সূর্যদেব ও উত্তরে অশ্বপৃষ্ঠে হরিদশ্ব। জগমোহনের পূর্বদ্বারের সামনে ছিল একটি ধ্বজস্তম্ভ। তার শীর্ষে ছিল সূর্যসারথি অরুণের মূর্তি। এই মূর্তিটি এখন পুরীর মন্দিরে আছে।
জগমোহনের তিনদ্বারের সামনে সোপানের কাছে ও মন্দিরের চত্ত্বরের ভিতরেই প্রকান্ড পাদপীঠের ওপর রয়েছে তিনজোড়া বিশালকায় মূর্তি। উত্তরদ্বারের দিকে দুটি হস্তি, দক্ষিণদ্বারে দুটি অশ্ব এবং পূর্বদ্বারে হস্তিদলনকারী শার্দুল মূর্তি।
পীর দেউলের গন্ডিতে তিন পোতাল। প্রথম পোতালের চাতালের চারদিকে চারটি করে মোট ষোলটি কন্যামূর্তি। আর রাহা অবস্থানে ঝুঁকে থাকা আটটি নৃত্যশীল ভৈরবমূর্তি। দ্বিতীয় পোতালেও ষোলটি কন্যামূর্তি। তৃতীয় পোতালে রয়েছে করালদ্রংস্ট্রা সিংহ। তার ওপরে ঘন্টা-শ্রী, আমলক প্রভৃতি। কন্যামূর্তিগুলি সম্ভবত নৃত্যরতা দেবদাসীর। কঙ্কন, কেয়ূর, শতনরী, কর্ণাভরণ মুকুট - অলঙ্কারে শোভিত দেবদাসীদের কেউবা পাখোয়াজ, মাদল, বাঁশি, খঞ্জনি, করতাল, ঝাঁঝর হাতে গীতবাদ্যে মত্ত, কেউবা দর্পনহাতে ব্যস্ত প্রসাধনে।
মূল মন্দিরের দক্ষিণ-পশ্চিমে সূর্যপত্নী মায়াদেবীর মন্দির।
মন্দিরে পাওয়া ভাস্কর্যের বেশকিছু নিদর্শন নিয়ে কাছেই কোণারক মিউজিয়াম। শুক্রবার ছাড়া রোজই খোলা থাকে।
কোণারক থেকে ৩ কিলোমিটার দূরত্বে চন্দ্রভাগা সংগম- চন্দ্রভাগা নদী মিলেছে বঙ্গোপসাগরে। এখানে সূর্যাস্ত অপরূপ।
কোণারক থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে কুরুম গ্রামে আবিস্কৃত হয়েছে বৌদ্ধযুগের ধ্বংসাবশেষ। ভূমিস্পর্শ বুদ্ধমূর্তি এবং ১৭ মিটার লম্বা ইঁটের প্রাচীর দ্রষ্টব্য। হিউয়েন সাঙের ভ্রমণকাহিনিতেও এর উল্লেখ আছে।
কোণারক থেকে ৭ কিলোমিটার দূরত্বে কুশভদ্রী নদী ও সমুদ্রের মোহনায় দেবী রামচন্ডীর মন্দির। কোণারক থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে কাকতাপুরে মঙ্গলাদেবী ও বনদুর্গার মন্দির। কাকতাপুর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে অস্তরঙ্গা লবণ তৈরি এবং মাছ ধরার কেন্দ্র, এখানে সূর্যাস্তও ভারি সুন্দর। কাকতাপুর থেকে কোণারকের পথে ১৪ কিলোমিটার দূরে চৌরাশি। এখানে রয়েছে নবম শতকের তান্ত্রিক দেবী বরাহমাতার মন্দির আর অমরেশ্বর লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দির।
যাওয়াঃ- নিকটতম স্টেশন পুরী ও ভুবনেশ্বর। পুরী থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে এখানে আসার জন্য সরাসরি বাস আছে। পুরী বা ভুবনেশ্বর থেকে দিনে দিনেও কন্ডাকটেড ট্যুরে বা স্বব্যবস্থায় বাসে, গাড়িতে দেখে নেওয়া যায়। তবে দুয়েকদিন থাকলে মন্দির সহ অন্যান্য স্থানীয় জায়গাগুলো বেড়িয়ে নেওয়া সম্ভব।
থাকাঃ- সূর্যমন্দিরের কাছেই ওটিডিসি-র পান্থনিবাস ও ট্র্যাভেলার্স লজ। মিউজিয়ামের কাছে ওড়িশা ট্যুরিজমের যাত্রীনিবাস। এছাড়াও কয়েকটি হোটেল আছে আশেপাশে। কোনারকের এস টি ডি কোডঃ- ০৬৭৫৮।
উৎসবঃ- ফেব্রুয়ারিতে কোণারক ডান্স ফেস্টিভাল অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবছর ডিসেম্বর মাসের ১ থেকে ৫ তারিখ পর্যন্ত ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্যের উৎসব অনুষ্ঠিত হয়, যা কোণারক উৎসব নামে খ্যাত।
|| ভ্রমণ কাহিনি - কোণার্কের সূর্যমন্দিরে ||
গোপালপুর (Gopalpur) – ওড়িশার সাগরবেলাগুলির মধ্যে অন্যতম গোপালপুর অন সি, বেরহামপুর স্টেশন থেকে ১৬ কিমি দূরে। নীল সাগরের বুকে নারকেল আর ঝাউগাছে ছাওয়া শান্ত-স্নিগ্ধ সৈকত। সোনালী বালুতটে সারাদিন ধরেই চলে জেলেদের মাছধরা। মাথার ওপর পাক খায় শঙ্খচিল। সমুদ্রে ভেসে বেড়ায় রঙবেরঙের পালতোলা নৌকো। তীরে বালির ওপরে রঙীন প্লাস্টিক আর গার্ডেন ছাতার তলায় পসরা সাজিয়ে বসেছে দোকানীরা।
শহর থেকে অল্পদূরে হলেও গোপালপুর সৈকত বেশ নির্জন। পুরীর সমুদ্রের মতো উত্তাল না হলেও স্নান করতে ভাল লাগে। তবে এখানে নির্দিষ্ট স্থানে স্নান করা উচিত। সমুদ্রের উঁচু-নিচু বালিয়াড়ি ছাড়াও বেশকিছু জায়গা পাথরে ভরতি। জলে আন্ডারকারেন্টও আছে। স্নান করার সময় সতর্ক থাকা ভাল।
সি-বিচের একপাশে লাইটহাউসটি বিকেল সাড়ে ৩টে থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। ১৩৫ ফুট উঁচু এই লাইটহাউসে ১৫৫টি সিঁড়ি ভেঙে উঠতে হবে। লাইটহাউসের থেকে গোপালপুরের বিস্তীর্ণ সাগরবেলা আর অপরূপ সূর্যাস্ত মুগ্ধ করে মনকে। অতীতে এখানে বন্দর ছিল। আজও রাতের বেলায় সমুদ্রে পথ দেখায় লাইটহাউসের আলো।
সৈকতের কাছাকাছি পায়ে হাঁটা দূরত্বে গোপালকৃষ্ণ মন্দির। দেবতা শ্রীবেণুগোপাল স্বামীভারণা। পিতলের গোলাকার থামসহ অন্যান্য কারুকার্য ভারি সুন্দর। গোপালজির নামেই এ শহরের নামকরণ বলে অনুমান করা হয়।
কাছাকাছি দেখার মধ্যে শ্রীরামকৃষ্ণ মন্দির, কোকোনাট গার্ডেন, ধবলেশ্বর মন্দির, ভিনসেন্ট চার্চ, হিল টপ ভিউ, গোপালস্বামী কৃষ্ণমন্দির, লাইটহাউস, কাজুবাদাম কারখানা। খাঁড়িপথে ব্যাকওয়াটার ভ্রমণ এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা।
গোপালপুর থেকে কন্ডাক্টেড ট্যুরে বা গাড়ি ভাড়া করে সারাদিনে বেশ কয়েকটা জায়গা বেড়িয়ে নেওয়া যায়। নির্মলঝর, নারায়ণী মন্দির, চিল্কা, রম্ভা, বরকুল। এছাড়া তপ্তপানি, চন্দ্রগিরি পর্বত একদিনের প্রোগ্রামে ও আরেকদিন তারাতারিণী বেড়িয়ে নেওয়া যায়। আর আছে ৩০ কিলোমিটার দূরে পাতিসেরনপুর সমুদ্রসৈকত ও ৩২ কিলোমিটার দূরে রুশিকন্যা নদীর মোহনা।
গোপালপুর থেকে ৮৮ কিমি দূরে ওড়িশা ও অন্ধ্রপ্রদেশের সীমান্তে নির্জন সৈকত সোনাপুর। নদী আর সমুদ্রের সঙ্গমে কাজুবাদাম গাছে ছাওয়া বিস্তীর্ণ বালুকাবেলা। পাখির গানে সৈকতের নির্জনতা ভাঙ্গে। গোপালপুর থেকে অটো বা গাড়িতে বেড়িয়ে নেওয়া যায়। পথে পড়বে গোল্ডেন বিচ, হিলটপ, রামমন্দির, ভৈরবী মন্দির প্রভৃতি।
যাওয়াঃ- নিকটতম স্টেশন বেরহামপুর (Berhampur)। স্টেশন থেকে বাসস্ট্যান্ড পৌঁছে বাস বা প্রাইভেট গাড়িতে ১৬ কিমি দূরে গোপালপুর।
থাকাঃ- গোপালপুরে ওড়িশা পর্যটন দপ্তরের পান্থনিবাসটি থাকার ভালো জায়গা। তবে সমুদ্র একটু দূরে। সাগরবেলার গায়েই অনেক হোটেল আছে।
|| ভ্রমণ কাহিনী- জলসই ||
চিল্কা (Chilika)-ভারতের সবচেয়ে বড় মিষ্টি জলের হ্রদ চিল্কা। পুরী, খুরদা ও গঞ্জাম - ওড়িশার এই তিন জেলাকে ছুঁয়ে ১,১০০ বর্গ কিমি এলাকা জুড়ে চিল্কার বিস্তার। চিল্কা বা চিলিকা হ্রদের জলে আছে নানা ধরনের মাছ, কাঁকড়া ও অন্যান্য জলচর প্রাণী। শীতে এখানে প্রচুর পরিযায়ী পাখি আসে।
চিল্কা হ্রদের তিনটি পয়েন্টে পর্যটক আবাস আছে। এরমধ্যে পুরী থেকে ৫০কিমি দূরে সাতপাড়া। সাতপাড়ায় ডলফিন দেখতে পাওয়া যায়। চিল্কার একেবারে শেষপ্রান্তে রম্ভা। আর এই দুই-এর মাঝামাঝি বারকুল।
পুরী থেকে সাতপাড়া যাওয়ার পথে ব্রহ্মগিরিতে আলারনাথ মন্দির পড়বে। সাতপাড়া থেকে লঞ্চে রাজহংস দ্বীপে নিয়ে যাওয়া হয়। এই যাত্রায় ডলফিনের দেখা মিলবে।
বেরহামপুর থেকে রম্ভার দূরত্ব ৪৫ কিলোমিটার। হ্রদের গায়েই ও.টি.ডি. সি.-র পান্থনিবাস। সাজানো বাগান পেরিয়ে চিল্কার মুখোমুখি। রম্ভা থেকে লঞ্চে লেকের বুকে জেগে থাকা বার্ডস, হানিমুন, ব্রেকফাস্ট প্রভৃতি দ্বীপগুলি বেড়িয়ে নেওয়া যায়। রম্ভা থেকে ২২ কিলোমিটার দূরত্বে ভাল্লারি পাহাড়ে নারায়ণী মন্দির। পাহাড়, অরণ্যে ঘেরা ভারি সুন্দর পরিবেশ । বরকুলে পান্থনিবাসের পিছনে জেটি থেকে লঞ্চ ছাড়ে নলবন বার্ড স্যাংচুয়ারি, কালিজাই দ্বীপ যাওয়ার। কালিজাই দ্বীপ ১০ কিলোমিটার দূরত্বে। এখানে মন্দিরে উপাস্য দেবী কালিজাই বা মা কালী। শোনা যায়, রাজা মানসিংহ খুরদার রাজা ভগীরথের বিরুদ্ধে যুদ্ধের আগে এখানে পুজো করেন ও যুদ্ধে জেতেন। বরকুল থেকে কাছেপিঠে ১৩ কিলোমিটার দূরে দক্ষপ্রজাপতি মন্দির, ১০ কিলোমিটার দূরে নারায়ণী মন্দির, ৩০ কিলোমিটার দূরে বারবারা অরণ্য প্রভৃতি বেড়িয়ে নেওয়া সম্ভব। বরকুল থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে বাণপুর একসময় ছিল শৈলোদ্ভব রাজবংশের রাজধানী। এখানে ভগবতী মন্দিরটি দর্শনীয়।
চিল্কা হ্রদের উত্তরে ছোট্ট গ্রাম মংলাজোরিতে নিভৃতে ভিড় জমায় পরিযায়ী পাখির দল।
যাওয়াঃ- সাতপাড়া পুরী থেকেই বেড়িয়ে নেওয়া যায়। রম্ভায় পৌঁছতে হলে ট্রেনে বালুগাঁও বা রম্ভা আসতে হবে। রেল লাইন আর ন্যাশনাল হাইওয়ে দুই-ই চলেছে হ্রদের গা ঘেঁষে। রম্ভায় সব ট্রেন থামেনা। বালুগাঁও থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে রম্ভা। রম্ভা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে বরকুলে অটো যাচ্ছে। বালুগাঁও স্টেশনে নেমেও বরকুলে আসা যায়। বালুগাঁও থেকে টাংগি হয়ে ৩৫ কিলোমিটার দূরে মংলাজোরি।
থাকাঃ- সাতপাড়া, রম্ভা ও বরকুল থাকার জন্য পর্যটনদপ্তরের যাত্রীনিবাস আছে। সাতপাড়ার এস টি ডি কোডঃ- ০৬৭৫২। রম্ভার এস টি ডি কোডঃ- ০৬৮১০। বরকুলের এস টি ডি কোডঃ- ০৬৭৫৬
মংলাজোরি - চিলিকা হ্রদের উত্তরে মংলাজোরির জলাভূমিতে নিভৃতে ভিড় জমায় পরিযায়ী পাখির দল। খুরদা জেলার এই ছোট্ট গ্রামটির দূরত্ব ভুবনেশ্বর থেকে ৬০ কিমি। প্রায় ৩০০ কিমি ব্যপী জলাভূমি জুড়ে শীতের দিনে ভিড় জমায় রেড-ক্রেস্টের্ড পোচার্ড, এশিয়ান ওপেনবিল, কটন পিগমিগুজ, গ্রে হেডেড ল্যাপউইং, পার্পেল সোয়াম্পহেন, রুডিশেল ডাক, টাফটেড ডাক, ব্রাহ্মণী চিল – এমন একশোরও বেশী পরিযায়ী পাখি।
এই গ্রামের দ্রষ্টব্য বেশ কয়েকটি প্রাচীন মন্দিরও। এর মধ্যে পতিত-পাবন মন্দিরটি সবচেয়ে বড়।
যাওয়াঃ নিকটতম রেলওয়ে স্টেশন বালুগাঁও। বালুগাঁও থেকে টাংগি হয়ে সড়কপথে মংলাজোরি পৌঁছানো যাবে।
মরসুমঃ পাখি দেখার জন্য নভেম্বর থেকে মার্চ সেরা সময়।
থাকাঃ মংলাজোরিতে একটি বেসরকারী ইকো-ট্যুরিজম ক্যাম্প আছে। এছাড়া বালুগাঁও, কালুপদা বা খুরদা রোড-এও থাকা যায়।
তপ্তপানি (Taptapani)- পূর্বঘাট পর্বতমালায় অরণ্যে ঘেরা প্রকৃতির মাঝে ১,৭০০ ফুট উচ্চতায় উষ্ণপ্রস্রবণ তপ্তপানি। এখানে সকাল হয় পাখির ডাকে। পান্থনিবাসের থেকে হাঁটাপথে গরম জলের কুণ্ড তপ্তপানি। কুণ্ডের মধ্যে বড়ো পাথরটিকে দেবীজ্ঞানে পুজো করা হয়। মূল কুণ্ডের জল পাশে দুটো চৌবাচ্চায় এসে পড়ে। একটি পুরুষ ও অন্যটি মহিলাদের স্নানের জন্য নির্দিষ্ট। গন্ধক মিশ্রিত এই জলে স্নান করলে শরীরের ব্যথা বেদনা উপশম ও অন্য উপকার হয় বলে বিশ্বাস। পান্থনিবাসের নীচের দিকে ডিয়ার পার্কসহ ছোট চিড়িয়াখানা আছে।
যাওয়াঃ- নিকটতম স্টেশন বেরহামপুর। গোপালপুর বা বেরহামপুর থেকে তপ্তপানি যাওয়ার সরাসরি বাস আছে। দূরত্ব গোপালপুর থেকে ৬৬ কিলোমিটার আর বেরহামপুর থেকে ৫০ কিলোমিটার। রাস্তার দুপাশের শোভা মনোরম। মাঝামাঝি রাস্তায় বাঁদিকে পড়বে দিগাপাহানডি গ্রাম। এখানে পাহাড়ের চূড়ায় রয়েছে খণ্ডহর এক রাজপ্রাসাদ। দেড়-দু ঘন্টার মধ্যে পৌঁছে যাওয়া যায় তপ্তপানি।
থাকাঃ- একমাত্র থাকার জায়গা ও.টি.ডি.সি.-র পান্থনিবাস। তপ্তপানির এস টি ডি কোডঃ- ০৬৮১৪।
তারাতারিণী (Taratarini) - গোপালপুর থেকে ৪৬ কিলোমিটার ও বেরহামপুর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ের মাথায় সবুজ প্রকৃ্তির মাঝে তারা ও তারিণীদেবীর মন্দির। মন্দিরটি শক্তিপীঠ ও তন্ত্রসাধনার জন্য বিখ্যাত। প্রায় হাজারখানেক সিঁড়ি ভেঙে অথবা গাড়িতে করে ওঠা যায় মন্দিরপ্রাঙ্গণে। এখন রোপওয়েও হয়েছে। মন্দিরের সামনে অল্পকিছু দোকানপাট আছে। এখানে হনুমানের উৎপাত কিন্তু খুব। পাহাড়ের নীচে রুশিকন্যা নদী বয়ে চলেছে। উপর থেকে এই দৃশ্য অপূর্ব লাগে।
তারাতারিণী মন্দির থেকে ৭ কিলোমিটার দূরের জাঠগড়া ও জৌগাডা ঘুরে আসা যায়। এখানে সম্রাট অশোকের সময়কার ব্রাহ্মী ও পালিভাষায় উৎর্কীণ শিলালিপি দেখতে পাওয়া যায়।
যাওয়াঃ- বেরহামপুরের নতুন বাসস্ট্যান্ড থেকে বাস মেলে তারাতারিণীর। তবে তা তুলনামূলকভাবে কম, সময়ও বেশি লাগে। অটো বা গাড়ি রিজার্ভ করে আসাই সুবিধাজনক।
থাকাঃ- তারাতারিণীতে থাকার একমাত্র থাকার জায়গা ও টি ডি সি-র পান্থশালা। রেশন সঙ্গে নিয়ে এলে কেয়ারটেকার রান্নার ব্যবস্থা করে দেন। তারাতারিণীর এস টি ডি কোডঃ- ০৬৮০।
চাঁদিপুর (Chandipur)-ওড়িশার এক নির্জন সৈকত চাঁদিপুর। অন্যান্য সৈকত গুলির থেকে চাঁদিপুরের বৈশিষ্ট্য একটু আলাদা। এখানে দিনে দু’বার সমুদ্র সরে যায় বহুদূরে, আবার ফিরে আসে পাড়ের কাছে। কেয়া, কাজু, ঝাউয়ে ছাওয়া মনোরম বেলাভূমি। চাঁদিপুর থেকে ৩কিমি দূরে বলরামগড়ি। বুড়িবালাম নদী এখানে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। এখানেই চাঁদিপুর ক্যান্টনমেন্ট এলাকা। চাঁদিপুর থেকে ঘুরে আসা যায় শৈবতীর্থ পঞ্চলিঙ্গেশ্বর (Panchalingeswar Temple)। সবুজ অরণ্যে ঢাকা ছোট-বড় পাহাড়ি টিলা নিয়ে মনোরম স্থান। দেবতা এখানে পাঁচটি লিঙ্গ পাথর তাই এই নাম। পাহাড়-জঙ্গলে ট্রেকিংও করা যায়। বালেশ্বর থেকে পঞ্চলিঙ্গেশ্বরের দূরত্ব ২৭কিমি।
যাওয়াঃ- নিকটতম রেলস্টেশন বালেশ্বর (Balasore)। দূরত্ব ১৬ কিমি। স্টেশনের বাইরে থেকে অটো ও প্রাইভেট গাড়ি পাওয়া যাবে চাঁদিপুর যাওয়ার জন্য।
থাকাঃ- চাঁদিপুরে ওড়িশা গভর্নমেন্টের পান্থনিবাস ও বেসরকারি প্রচুর হোটেল আছে। পঞ্চলিঙ্গেশ্বরেও সরকারি পান্থশালা আছে।চাঁদিপুরের এস টি ডি কোডঃ- ০৬৭৮২।
বাংরিপোশি(Bangriposi) - ছোট্ট ছুটির রোমান্টিক নাম বাংরিপোশি। বালাসোর থেকে একটু দূরেই ওড়িশার প্রায় অখ্যাত এক জনপদ। গাছগাছালিতে ছাওয়া শান্ত পরিবেশ। বাংরিপোশিকে ঘিরে রয়েছে বিদ্যাভাণ্ডার, পাথরকুসি, অর্ধেশ্বর, বুড়াবুড়ি - সবুজ পাহাড়ের সিল্যুয়েট। কাছেপিঠের দ্রষ্টব্য খড়কাই নদীর ওপর সুলাইপাত ড্যাম, বুড়িবালাম নদী আর স্থানীয় ডোকরা শিল্পীদের গ্রাম। ২কিমি দূরে ঠাকুরানী পাহাড়। ৪ কিমি দূরে পাহাড়ের ওপরে বনদূর্গা বা দেবী বাংরিপোশির মন্দির। হাতে সময় থাকলে বেড়িয়ে নেওয়া যায় সিমলিপাল অরণ্যও।
যাওয়া – নিকটবর্তী রেলস্টেশন বাংরিপোশি, বারিপদা ও বালাসোর(Balasore)। বারিপদা ও সিমলিপাল অরণ্যের প্রবেশদ্বার যোশীপুর থেকে দূরত্ব যথাক্রমে ৬১ ও ৬০ কিমি। বালাসোর থেকে বাংরিপোশির দূরত্ব ১০০ কিলোমিটার। গাড়িভাড়া মোটামুটি ১২০০ টাকা। বাংরিপোশি থেকে আশেপাশে ঘোরার জন্য গাড়িভাড়া পড়বে মোটামুটি ১৫০০ টাকা।(২০১১ সালের জানুয়ারি মাসের তথ্য অনুযায়ী)। সড়কপথেও বাংরিপোশির সঙ্গে ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন যায়গার যোগাযোগ রয়েছে।
থাকা – ও টি ডি সি-র পান্থশালা ও স্থানীয় একটি হোটেল আছে।
মরসুম – শীতকাল অর্থাৎ ডিসেম্বর-জানুয়ারি এখানে বেড়ানোর ভালো সময়।
~ ভ্রমণ কাহিনি - বাংরিপোশির হাতছানি ~
ভিতরকণিকা(Bhitarkanika) -ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য ব্রাহ্মণী ও বৈতরণী নদীর সঙ্গমস্থলে ভিতরকণিকা। ১৯৭৫ সালে এই অরণ্য অভয়ারণ্যের স্বীকৃতি পায়। হেতাল, গরাণ, সুন্দরী, গেঁও- নানান ম্যানগ্রোভ গাছগাছালিতে ছাওয়া অরণ্যের বাসিন্দা হরিণ, চিতা, বুনো শুয়োর, বন বিড়াল আর নানান প্রজাতির পাখি। শীতের দিনে ভিড় জমায় পরিযায়ী পাখির দল। নদীর জলে কুমির, কচ্ছপ আর মাছেদের আনাগোনা। পৃথিবীর বৃহত্তম কুমীরের দেখা পাওয়া যেতে পারে এখানেই।শীতে সমুদ্রতীর ঢেকে যায় ডিম পাড়তে আসা হাজার হাজার অলিভ রিডলে কচ্ছপ।
যাওয়াঃ- নিকটতম রেলস্টেশন ভদ্রক। স্টেশন থেকে বাসস্ট্যান্ড পৌঁছে বাস বা প্রাইভেট গাড়িতে ৫০ কিমি দূরে চাঁদবালি। চাঁদবালি থেকে লঞ্চে নলতাপেটিয়া ঘাটে পৌঁছে রিকশায় ৪কিমি দূরে ভিতরকণিকা।
থাকাঃ- চাঁদবালিতে সরকারি ব্যবস্থাপনায় অরণ্যনিবাস।
সিমলিপাল অভয়ারণ্য(Simlipal)-ওড়িশার আর এক অভয়ারণ্য সিমলিপাল। ময়ুরভঞ্জ জেলায় ২৭৫০ বর্গকিমি ব্যপী এই বনভূমির বিস্তার। বাঘ, হাতি, সম্বর, লেপার্ড, হরিণ, গাউর আর পাহাড়ি ময়না, ময়ূরের রাজত্ব এই বনভূমি। বরেহপানি ও জোরান্ডা - দুটি জলপ্রপাতও রয়েছে এই অভয়ারণ্যে।
যাওয়াঃ- নিকটতম রেলস্টেশন বালেশ্বর। বালেশ্বর থেকে ৬০কিমি দূরে বারিপদা। বারিপদা থেকে ৩৫কিমি দূরে বাংরিপোশি। বাংরিপোশি থেকে সিমলিপালের দূরত্ব ৫৯কিমি। অন্যথায় বারিপদা থেকে সরাসরি ৯০কিমি দূরে যোশিপুর দিয়েও অভয়ারণ্যে ঢোকা যায়।
থাকাঃ- সিমলিপালের অভয়ারণ্যে চাহালা, নওয়ানা, জোরান্ডা, বরেহিপানি, গুড়গুড়িয়া, যোশিপুর এসব জায়গায় বনবাংলো আছে। বনবাংলো বুকিং-এর জন্য বারিপদা ট্যুরিস্ট অফিসে, সিমলিপাল টাইগার রিজার্ভের ফিল্ড ডিরেক্টরের সঙ্গে বা ও টি ডি সি ভুবনেশ্বরে যোগাযোগ করতে হবে।