ভারতের উত্তরতম প্রান্তভূমিতে
জামাল ভড়
~ লাদাখের তথ্য ~ লাদাখের আরও ছবি ~
পৃথিবীর দ্বিতীয় শীতলতম জনবসতিপূর্ণ স্থান দ্রাস ও কার্গিল দেখার লোভে আমরা শ্রীনগর থেকে ১-ডি জাতীয় সড়ক ধরে লেহ-র উদ্দেশে রওনা দিলাম সকাল ঠিক আটটায়। দুপুরের দিকে দ্রাস পৌঁছালাম। বাল্টিক উপভাষায় দ্রাস কথার অর্থ নরক। ১০,৯৯০ ফুট উচ্চতার দ্রাসে পৌঁছেই শীতের অনুভূতি প্রবলভাবে কাঁপিয়ে দিল। মোবাইলের অ্যাপে তাপমাত্রা দেখলাম ৬ ডিগ্রি, মে মাসের ৩১ তারিখেই - কলকাতা ও দিল্লিতে যখন গরমের ঠেলায় ত্রাহি ত্রাহি রব! দ্রাস ক্ষুদ্র জনপদ। ঠোঁটে ছ্যাঁকা লাগা গরম কফি চুমুক দিয়ে শেষ করতে না করতেই দেখি ঠাণ্ডা!
ঘন্টা দুই পর ষাট কিমি দূরে কার্গিল পৌঁছে দেখি ঘড়িতে তখন বেলা আড়াইটে। এই সেই কার্গিল, ১৯৯৯ তে খবরের শিরোনামে ছিল। রাতারাতি কার্গিল জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল দিয়ে পাকিস্তানি সৈন্যবাহিনী সীমানা পেরিয়ে বেশ কিছু অঞ্চল জবরদখল করে। ভারতীয় সেনারা প্রাণ বাজি রেখে তাদের কাছ থেকে হৃত এলাকা পুনরুদ্ধার করেছিল বেশ কিছু শহিদের বিনিময়ে। সুরু ( সিন্ধুর স্থানীয় নাম ) নদীর তীরে কার্গিল। ৮৭৮০ ফুট উঁচু সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে। পনের হাজারের মতো জনসংখ্যার এই কার্গিলে। শুনলাম নব্বই শতাংশ শিয়া মুসলিম, পাঁচ শতাংশ সুন্নি ও বাকিরা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। বামদিকে পাহাড়ের ঢালে বড় বড় হরফে ইংরাজিতে টোলোলিং লেখা দেখিয়ে ড্রাইভার কাশেম বলল, এখান দিয়েই পাকিস্তানি সেনারা প্রথম অনুপ্রবেশ করেছিল। কার্গিল ওয়ার মেমোরিয়াল দেখে জুম্মা মসজিদে দ্বিপ্রাহরিক নামাজ পড়ে হোটেল রিয়াজে মধ্যাহ্নভোজন সেরে আবার রওনা।
শ্রীনগর থেকে লেহ-তে সড়কপথে যাওয়ার সময়ই পেরোতে হল জোজি লা ( ১১৫৭৫ ফুট ), নামিকা লা ( ১২৬০০ ফুট) ও ফতু লা ( ১৩৪৭১ ফুট)। এই পথেই ভারতে বহিঃআক্রমণ হয়েছে অতীতে, এই পথেই তিব্বতের সঙ্গে বাণিজ্য চলত বহু আগে -- আজ সেই পথ , সেই সমস্ত "পাস" পাস করার আনন্দের আতিশয্যে একমিনিটের তরেও ক্লান্তি স্পর্শ করছিল না দীর্ঘ ৪৩৪ কিমি পথ অতিক্রমের যাত্রা সত্ত্বেও।
সন্ধে নটার দিকে (এখানে সন্ধে নামে আটটায় ) কাশেম এক জায়গায় গাড়ি থামাল। সাইনবোর্ডে দেখলাম -- খালৎসি। সে বলল, এখানে নৈশভোজ সেরে নিতে হবে। খালৎসিতে বিদ্যুৎ নেই -- সন্ধে থেকে রাত দশটা অবধি জেনারেটরের আলো। তারপরে আঁধার নেমে আসে। হোটেল ম্যানেজারের মুখে শুনলাম এক নেপালি ভদ্রলোক এই হোটেলের লিজ নিয়েছেন। মে মাসের পনেরো তারিখে হোটেল চালু হয়েছে -- চলবে অক্টোবরের শেষ অবধি। তারপর পাততাড়ি গুটিয়ে আবার নেপাল। ২০০৮ থেকেই নাকি এখানে বিদ্যুৎ আসবে-আসবে করছে, এখনও এসে পৌঁছায়নি।
লেহ-তে প্রবেশের একটু আগে ড্রাইভার এক জায়গায় গাড়ি ধীর গতিতে এনে বলল -- এটা ম্যাগনেটিক হিল । পাহাড়ের নীচে চৌম্বকশক্তি গাড়িকে স্থানচ্যুত করে। সাইনবোর্ডেও দেখি সেই কথাই লেখা আছে!
রাত একটায় লেহ-তে পৌঁছালাম। লেহ তখন নিশীথের সুপ্তিতে মগ্ন। হোটেল খায়ুলের সুখপ্রদ বিছানায় শুয়েও সারাদিনের ভ্রমণজনিত ক্লান্তিও দু'চোখের পাতাকে এক করতে পারছিল না। এ যেন পিয়া-মিলন-বাসনার প্রতীক্ষা। কখন মিলিত হব আমার স্বপ্নচর লেহ-র সঙ্গে। কখন দু'চোখ ভরে দেখব আমার বহু প্রতীক্ষিত লেহ, প্যাংগং , খারদুং লা, চাঙ লা, ডিসকিট , হুন্ডার , নুব্রা -- এরা প্রত্যেকে যেন আমার পরিবারের সদস্য।
১৯৭৯ তে লাদাখ জেলাকে ভেঙে দু'টি জেলা -- কার্গিল ও এই লেহ জেলা তৈরি হয়। লেহ জেলার সদর লেহ শহর। গুজরাতের কচ্ছ জেলার পর এটাই ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা - ৪৫,১১০ বর্গ কিমি। ১১,৫৬২ ফুট উচ্চতার লেহ শহরে আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পরদিন সম্পূর্ণ বিশ্রাম। হোটেল আর আশেপাশে একটু পায়চারি। হোটেল খায়ুলের অবস্থান ওল্ড ফোর্ট রোডে। হোটেল মালিক জি.এম. মীর স্বামী-স্ত্রী দু'জনেই কৃষিবিজ্ঞানী, চাকরিতে দু'জনেই উচ্চপদে আসীন। একমাত্র মেয়ে ফুটফুটে লাদাখি পুতুল -- সিয়ানা। সারাদিন সিয়ানাকে নিয়ে খেললাম। সিয়ানা যেন কাবুলিওয়ালা গল্পের মিনি -- অনর্গল কথা বলে। এখনও চোখ বন্ধ করলে সিয়ানার মিষ্টিমুখ, সুশ্রী চেহারা, লাদাখের প্রতিচ্ছবি ভেসে ওঠে।
লেহ থেকে পরদিন বেরলাম আমার স্বপ্নমানসী প্যাংগং লেককে দেখার আশায়। দূরত্ব ১৩৪ কিমি। পথে পড়ল শ্যে। এখানেই থ্রি ইডিয়টস্ খ্যাত স্কুলটি অবস্থিত। ফেরার পথে দেখব ঠিক করলাম। প্যাংগং-এর অনির্বচণীয় আকর্ষণ আমাকে অনবরত তাড়া করছিল তখন। কখন দু'চোখ ভরে দেখব অপ্সরাসুন্দরী প্যাংগং-কে। ১৪,২৭০ফুট উচ্চতায় ১৩০ কিমি দীর্ঘ ও সর্বাধিক ৫কিমি প্রশস্ত এই প্যাংগং সো (Tso)। 'সো' কথার অর্থ সরোবর, যেমন 'লা' মানে গিরিপথ। লেকের লবণাম্বুরাশির লাবণ্যর দুর্নিবার আকর্ষণে কিছু দূরের চাং লাতেও বেশি সময় নিলাম না ।
চাং লা । চাং অর্থাৎ দক্ষিণ আর লা মানে পাস বা গিরিবর্ত্ম। অর্থাৎ দক্ষিণে প্রবেশের গিরিবর্ত্ম । চাং লা পৃথিবীর তৃতীয়* উচ্চতম মোটরগাড়ি চলার পথ। উচ্চতা ১৭,৬৫০ ফুট। চাং লা-তে যখন পৌঁছাই, দেখি তুষারপাত হচ্ছে। সেনাবাহিনির স্বাস্থ্যসহায়ক কেন্দ্র আছে ( আগত পর্যটকদের হঠাৎ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে দেখভালের জন্য)। আমার স্ত্রী শবনম অর্থাৎ শিশির আর শ্যালিকা নার্গিস যার মানে ফুল, তুষারপাতে নিজেদের অবগাহন করতে লাগল। স্ত্রীর উদ্দেশে বললাম -- শিশিরে তুষারপাত ! আর শ্যালিকাকে বললাম -- ফুল শিশিরসিক্ত হতে দেখেছি, তুষারাবৃত হতে এই প্রথম দেখছি।
শেষপর্যন্ত পৌঁছলাম প্যাংগং লেক। এ কী দেখি! দিগন্তবিস্তৃত নীলজলরাশির একটা চওড়া ফিতে পূর্ব থেকে পশ্চিমে পাতা! এই সুদীর্ঘ একশো তিরিশ কিমি বিস্তৃত লেকের মাত্র চল্লিশ কিমি ভারতের অন্তর্ভুক্ত, বাকিটা চিনের তিব্বতে। নীল ! নীল ! শুধুই নীল -- কোথায়ও ফিকে নীল , কোথায়ও গাঢ় নীল আবার কোথায়ও ময়ূরকন্ঠী নীল -- নীল নীলিমায় লীন! লীন এই কারণেই, যে-অংশ চিনে, তা অদেখাই থেকে যাবে। মনে হল সুন্দরীর সম্পূর্ণ অবয়ব না দেখে শুধুমাত্র মুখটুকুই দেখলাম। এতেই এত লাবণ্য, সারা অঙ্গে না জানি কত কান্তি! লেকের ধারে যে রেস্তোঁরাতে আমির খান উঠেছিলেন সেখানে ঢুকে আলাপ হল এক ব্রিটিশ দম্পতি ও তাঁদের সুইডিশ বান্ধবীর সঙ্গে। ২০০৬-এ তারসেম সিং পরিচালিত 'দ্য ফল' ছবির ( লি পেস , ক্যাটিনকা আনটার ও জাস্টিন ওয়াডেল অভিনীত) কিছু অংশ এখানে স্যুটিং হওয়ার পরে ভারতের বাইরের অনেক পর্যটকই লাদাখ আসছেন। তাছাড়া শ্যাম বেনেগালের নেতাজী সুভাষ বসুর উপর নির্মিত 'দ্য ফরগটন্ হিরো' ও বলিউডের অন্যান্য কিছু সিনেমা যেমন 'গজনি , 'তাশান , 'লক , 'পাপ ও সর্বোপরি আমির খানের 'থ্রি ইডিয়টস্ লাদাখকে ভারতীয় পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
প্যাংগং থেকে ফেরার পথে শ্যে-তে সেই একদা অখ্যাত পরে আমির খানের 'থ্রি ইডিয়টস্' ছবির স্যুটিং-এর দৌলতে বিখ্যাত হওয়া স্কুল দেখে যখন হোটেলে ফিরলাম তখন রাত হয়নি, সন্ধে আটটা।
এর পরের গন্তব্য খারদুং লা। পৃথিবীর উচ্চতম* মোটরগাড়ি চলাচলের পথ। যাত্রাপথে দেখলাম পথের ওপরে অনেক জায়গাই বরফে ঢাকা -- চাকা যাওয়ার সরু দাগটুকুই দেখা যাচ্ছে। এবারের ড্রাইভার মহম্মদ আলি সন্তর্পণে গাড়ি চালাতে চালাতে পৌঁছে গেল। সাইনবোর্ডে ইংরেজিতে জ্বল্জ্বল্ করছে খারদুং লা ১৮,৩৮০* ফুট -- পৃথিবীর সর্বোচ্চ মোটর চলার সড়ক। একটা ক্যাফেরিনাতে লেখা আছে -- পৃথিবীর সর্বোচ্চ ক্যাফেরিনা। এক স্যুভেনিরের দোকানেও ওই একই বিজ্ঞাপন। উঃ! কী তুষারপাত! নিমেষে সর্বাঙ্গ শুভ্র তুষারকণায় ভরে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে রাশি রাশি তুলো টুকরো টুকরো করে ওপর থেকে কেউ ফেলে দিচ্ছে।
খারদুং লা থেকে এবার চললাম শীতল মরুভূমি দেখার অভিপ্রায়ে চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে রুক্ষ্ম নেড়া পাহাড় দেখতে দেখতে। সায়ক নদীর তীর ধরে কিছুক্ষণ গাড়ি চলার পর মহম্মদ আলি গাড়ি থামিয়ে বলল -- ওই দেখুন মার্মট। মূষিক সদৃশ তৎপর প্রাণী। এরপর মহম্মদ আলি যা দেখাল তা অতি বিরল প্রাণী -- তিব্বতি বুনো গাধা -- কিয়াং। অনেকগুলো কিয়াং ঘুরে বেড়াচ্ছে -- একটু কাছে গেলেই, দে ছুট।
কখন পৌঁছে গেলাম দিসকিট-এ ৩৫ মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট বুদ্ধমূর্তির সামনে। অপূর্ব মূর্তি। অদূরে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের জন্য বসবাসের মঠগুলিও লাগোয়া। দিসকিট ছেড়ে চলে আসার পরই চোখে পড়ল বালি আর বালি, রাশি রাশি বালি, ডানদিক বরাবর বিস্তৃত বালি আর বালিয়াড়ি -- কোথাও ঢিবি, কোথাও সমতলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লহরীর আকৃতিতে -- মনে হল যেন ঢেউয়ের দোলায় দোলায়িত হচ্ছে বালুকণারাশি। সিয়াচেন হিমবাহের গলিত জল এখানে নুব্রা নদীতে মিশেছে -- যা তির্তির্ করে বয়ে চলেছে সায়ক নদীতে পড়বে বলে। গেলাম মরুভূমিতে। দু'কুঁজ বিশিষ্ট ব্যাক্ট্রিয়ান উট দেখলাম, চড়লাম – পনেরো মিনিটে দেড়শ' টাকা।
এরপরে হুন্ডার -- জামসেদজীর হোটেল -- ব্যাক্তির নামেই হোটেলের পরিচিতি। মে-র তিন তারিখেই বেশ ঠাণ্ডা। জামসেদজীর সঙ্গে আলাপ হল। জায়নামাজ চাইলাম। কেবলা-নির্দেশক কম্পাস-সম্বলিত একটা সুদৃশ্য জায়নামাজ দিলেন। জানলাম হুন্ডার-নুব্রার জীবনযাত্রার কাহিনি। স্থানীয় বিশেষজ্ঞদের মতে নুব্রা শব্দটি লুম্রা (Lumra ) থেকে এসেছে -- যার অর্থ পুষ্প-উপত্যকা। লাদাখের এই হুন্ডারেই কিছু সবুজের ছোঁয়া পাওয়া যায় কাঁটাগাছ ছাড়াও। তাই এখানে চাষ-আবাদ হয়।
পরদিন হুন্ডার ছেড়ে ফিরে চললাম। পথে পড়ল এক বিস্তীর্ণ জলাভূমি। যেতে যেতে চোখে পড়ল লেখা - সিয়াচেন মাত্র ৮০ কিমি দূরে। পথে একটা লোহার ব্রিজ। ফটো তোলার জন্য ক্যামেরা বের করতেই এক সেনা জওয়ান ছুটে এলেন। নিষেধ করলেন ছবি তুলতে। স্থানীয় এক গ্রামে পৌঁছালাম ঘুরে ঘুরে। গ্রামের শান্ত পরিবেশের মাঝে অতি সুন্দর বৌদ্ধমন্দির। মন্দিরের কারুকার্য চোখে পড়ার মতো। আর কিছুটা এগোলে পানামিক উষ্ণ প্রস্রবণ। কিন্তু ড্রাইভার মহম্মদ আলি রাজি না হওয়ায় ফিরতে হল। সঙ্কীর্ণ চড়াই উৎরাই বরফে ঢাকা পথে ফেরা ঝুঁকিপূর্ণ, তার উপর যেভাবে তুষারপাত হচ্ছে! চার তারিখে রাত ন'টায় ফিরে আবার হোটেল খায়ুল। পরদিন আবার সম্পূর্ণ বিশ্রাম। লেহ-কে শেষবারের মতো উপভোগ করতে ইতস্তত বিক্ষিপ্ত ঘোরাঘুরি -- কখনো তিব্বতি মার্কেটে, কখনো স্থানীয় বাজারে -- দেখলাম পথের দু'দিকে সবজির পসরা সাজিয়ে বিক্রি হচ্ছে -- বিক্রেতারা বেশির ভাগ মহিলা।
লেহ-তে দর্শনীয় বলতে রাজা সেংগি নামগিয়াল ( ১৬১২-১৬৪২ ) প্রতিষ্ঠিত রাজপ্রাসাদ, শান্তিস্তূপ, হেমিস গুম্ফা, ওয়ার মিউজিয়াম ও জামা মসজিদ -- যা লেহ-তে বিশ্রামের দু'দিনেই দেখে নিয়েছি। লেহ-তে দু'টি বড় জামে মসজিদ আছে, একটি সুন্নিদের, অপরটি শিয়াদের। তিব্বতীদের দু'টি বাজার আছে, একটি বহু দোকান সম্বলিত, অপরটি অপেক্ষাকৃত ছোট। কী নেই সেই বাজারে, দেশি- বিদেশি বিবিধ জিনিসপত্রের সম্ভার, কোরীয় ব্ল্যাঙ্কেট, জাপানী ল্যাপটপ, জার্মান ক্যামেরা, সুইডিস ঘড়ি, ক'টা জিনিসের নাম বলব? হাল ফ্যাশনের পোশাক-আশাক? তাও পাবেন।
বিদায়ের দিন নুব্রা যাত্রার সঙ্গী ড্রাইভার মহম্মদ আলি বলল -- বাবু আমাদের গাঁয়ে চলুন। বললাম, কোথায় তোমার বাড়ি? সে বলল, জাঁসকর। সেটা কোথায়, আমার জিজ্ঞাসা। জানাল, চাদরের পাশে। বললাম, চাদর? সেটাই বা কোথায়? সে বলল, কার্গিল হয়ে যেতে হয়। জানতে চাইলাম, সেখানে কী কী দেখার আছে? মহম্মদ উৎসাহী হয়ে বিনম্রভাবে বলল, জাঁসকর নদী যখন বরফে ঢেকে যায়, তাকে বলে চাদর। বরফের বৈচিত্র্য দেখতে হলে জাঁসকর যেতেই হবে, অন্তত বারো রকমের বরফ আছে। আম আপেলের প্রজাতি আছে জানতাম, বরফের বৈচিত্র্যের কথা এই প্রথম শুনলাম। যা হোক কিছু করার নেই, সকাল এগারটায় ফ্লাইট। বললাম, আপাতত আমাদের এয়ারপোর্টে পৌঁছে দাও। আবার যদি কোনদিন লাদাখে আসি তখন সে সাধ পূর্ণ করব ।
[*পৃথিবীর উচ্চতম মোটর চলার পথ খারদুং লা নয়, যদিও খারদুং লা-তে সেটাই লেখা আছে। খারদুং লা-র উচ্চতা ১৭৭৭০ ফুট। এটা পৃথিবীর তৃতীয় ও চাং লা চতুর্থ উচ্চতম মোটর চলার পথ। বিশ্বের সর্বোচ্চ মোটর চলার গিরিপথ মারসিমিক লা (১৮৪০০ ফুট) ও দ্বিতীয় উচ্চতম কাকসাং লা (১৭৮৮০ ফুট) দুই-ই অবশ্য লাদাখেই। প্যাংগং সো থেকে হানলে বা সরাসরি সো মোরিরি যেতে গেলে পথে কাকসাং লা পেরোতে হয়। আর প্যাংগং থেকে ৩০ কিমি উত্তরের মারসিমিক লা যান খুব কম লোকই। কারণ অতি দুর্গম এই গিরিপথের ওপারে আর কোনও বসতি বা বিশেষ কিছু দ্রষ্টব্য নেই। - সম্পাদক]
~ লাদাখের তথ্য ~ লাদাখের আরও ছবি
পেশায় শিক্ষক জামাল ভড়ের শখ দেশবিদেশের মুদ্রা ও নোট সংগ্রহ এবং ভ্রমণ । পাশাপাশি নেশা সাহিত্য চর্চা - বিশেষত কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধ রচনা। বিভিন্ন সময়ে আজকাল, ওভারল্যান্ড, কলম ইত্যাদি পত্রপত্রিকা ও ওয়েব ম্যাগাজিনে লেখা প্রকাশিত হয়েছে। ২০১০-এ সোনাঝুরি ওয়েবম্যাগাজিনের পক্ষে শ্রেষ্ঠ কবি - 'সোনার স্রষ্টা' পুরস্কার লাভ।