ভেনিসে একটা দিন

অর্পিতা কুন্ডু চ্যাটার্জ্জী

~ ভেনিসের তথ্য ~ ভেনিসের আরও ছবি ~

আজ ১৩ মে। কাল এইসময় আমরা হয়তো ইতালিতে পৌঁছে গেছি। প্রথমে যাব মিলান, তারপর ফ্লোরেন্স ও পিসা, আর সব শেষে ভেনিস । অবশ্য আজকে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে মনটা একটু খারাপ লাগছে, মনে হচ্ছে এই তিন দিনের কোনও একদিন বৃষ্টির মুখে পড়তে হতে পারে। ইউরোপের আবহাওয়া আন্দাজ করা একটু মুশকিল। সাধারণত গ্রীষ্মকালে আবহাওয়া ভালই থাকে, কিন্তু মাঝে মাঝে বৃষ্টি হলেই সব মাটি। বৃষ্টি যদিও আমার বেশ পছন্দ, কিন্তু বৃষ্টিতে বাড়িতে বসে গরম চা আর পকোড়া খেতেই বেশি ভালো লাগে। বেড়ানোর জন্য অবশ্যই আলো ঝলমলে পরিষ্কার আকাশই উপযুক্ত।

ইতালির যে ক'টা জায়গায় ঘুরেছি তার মধ্যে আমার সব থেকে ভালো লেগেছে ভেনিস, তাই তাকে নিয়েই এই লেখা। ১৬ মে সকালে ভেনিস পৌঁছেছিলাম। মেসত্রে (Mestre) শহর থেকে একটা ফেরি করে ভেনিস আইল্যান্ড-এ এলাম। ভেনিস একটা খুব সুন্দর আর মায়াবী শহর। অগণিত ছোটো ছোটো ওয়াটার ক্যানাল ছড়িয়ে আছে সারা শহর জুড়ে। এখানে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার জন্য উপায় ছোট নৌকো যার নাম গন্ডোলা। পৃথিবীর আর কোনও শহরে এরকম নেই। ইউনেস্কো পুরো শহরটিকেই ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট-এর আখ্যায় ভূষিত করেছে।
শহর জুড়ে যেমন আছে ওয়াটার ক্যানাল তেমনই আছে ছোট ছোট গলিপথ আর পুরনো সব বাড়ি, যার বেশিরভাগই এখন হোটেল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এইসব গলিপথ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মনে হচ্ছিল মধ্যযুগে শেক্সপিয়ারের কোনও নাটকের পটভূমিতে পৌঁছে গেছি, অথবা যেন বেনারসের অলিগলিতে ঘুরে বেড়াচ্ছি। ভেনিসের এই গলিপথগুলো যেমন বহু পুরনো ইতিহাসের সাক্ষী, আবার ইউরোপিয়ান সংস্কৃতি ও স্থাপত্যে অলংকৃতও। অধিকাংশ বাড়িই পুরনো স্থাপত্যের নিদর্শন। তার মধ্যেই উল্লেখযোগ্য হলো সেন্ট মার্ক'স স্কোয়ার (Saint Mark's Square), বেল টাওয়ার, সেন্ট মার্ক'স বাসিলিকা (Saint Mark's Basilica), ডোজেস প্যালেস (Doge's Palace), রিয়্যালটো ব্রিজ (Rialto Bridge) এইসব। আর অবশ্যই গন্ডোলা চড়ে জলপথে ভ্রমণ এখানকার মূখ্য আকর্ষণ।

শহরটা খুব জমজমাট, চারদিকে প্রচুর ট্যুরিস্টের ভিড়। প্রচুর দোকান - ঢালাও বিক্রি হচ্ছে ভেনেশিয়ান মাস্ক আর ছোট ছোট কাঠের বা প্লাস্টিকের তৈরি গন্ডোলা। রিয়্যালটো ব্রিজের আশেপাশে এরকমই অনেক সারি সারি দোকানের ভিড়। আমরাও যথারীতি ওখান থেকেই আমাদের কেনাকাটা সেরে ফেললাম। একটা গ্লাস পেনড্যান্টও কিনলাম কারণ ভেনিস কাচের নানা রকম শৌখিন জিনিস তৈরির জন্যও বিখ্যাত। কাছেই মুরানো (Murano) আইল্যান্ড-এ বেশ কিছু নামী গ্লাস ফ্যাকট্রি আছে, সময়ের অভাবে সেখানে যাওয়া হয়ে উঠলনা। দুপুরে ইতালির বিখ্যাত পিত্জা আর জিলাতো আইস ক্রিম সহযোগে লাঞ্চ সারলাম। তারপর আবার পায়ে হেঁটে দেখতে লাগলাম এই ঐতিহ্যপূর্ণ শহরটিকে।

বিকেলের দিকে গন্ডোলা চড়লাম। যেহেতু গন্ডোলার ভাড়া বেশ বেশি তাই আমরা আরো তিনজনের সঙ্গে শেয়ার করে একটা গন্ডোলা ভাড়া করেছিলাম। আধঘন্টা ধরে গন্ডোলা আমাদের শহরের আনাচে কানাচে ঘোরালো। চালকরা আবার মাঝে মাঝে ইতালিয়ান গান গাইছিল যা শুনে সত্যিই মনে হচ্ছিল কোনো টাইম মেশিনে বসে মধ্যযুগে পৌঁছে গেছি। বেশ লাগছিল। ছোটবেলায় কোন একটা সিনেমায় দেখেছিলাম বাড়ির পিছনের দরজায় নৌকা বাঁধা আছে আর বাড়ির সবাই ওই নৌকা করেই সব জায়গায় যাতায়াত করে। মাকে জিজ্ঞেস করতে বলেছিল ইতালির ভেনিস বলে একটা শহরে সত্যিই এমন হয়, সেই তখন থেকে আমার ভেনিস দেখার শখ।
বিকেলের পড়ন্ত রোদে ভেনিসের রূপই আলাদা। আমরা সেন্ট মার্কস স্কোয়ারে বেল টাওয়ার আর সান মার্কো ব্যাসিলিকার সামনে বেশ কিছুটা সময় কাটালাম। কাছেই একটা রেস্টুরেন্টে খুব সুন্দর ভায়োলিন বাজিয়ে গান বাজনা হচ্ছিল। ভায়োলিনের সুর পরিবেশটাকে আরো মনোরম করে তুললো। ধীরে ধীরে সন্ধে নেমে এলো, এবার আমাদের চলে যাওয়ার পালা, মনটা যেন কেমন খারাপ লাগছিল, এই শহরে কয়েক ঘন্টা কাটিয়ে এত ভালো লাগছিল যে ফিরে যেতে মন চাইছিল না। যাওয়ার আগে এইটুকু বলে ভেনিসকে বিদায় জানালাম, আবার নিশ্চয় দেখা হবে।


~ ভেনিসের তথ্য ~ ভেনিসের আরও ছবি ~

স্বামীর কর্মসূত্রে জার্মানীর ফ্রাঙ্কফুটের বাসিন্দা অর্পিতা কুন্ডু চ্যাটার্জি বর্তমানে গোথে ইউনিভার্সিটিতে নিউরোসায়েন্সে পি এইচ ডি করছেন। ভালোবাসেন বেড়াতে আর নানা জায়গার সংস্কৃতি ও খাবারদাবারের স্বাদ নিতে।

 

 

SocialTwist Tell-a-Friend

To view this site correctly, please click here to download the Bangla Font and copy it to your c:\windows\Fonts directory.

For any queries/complaints, please contact admin@amaderchhuti.com
Best viewed in FF or IE at a resolution of 1024x768 or higher