বেড়ানোর ভাল লাগার মুহূর্তগুলো সকলের সঙ্গে ভাগ করে নিতে ইচ্ছে করে, অথচ দীর্ঘ ভ্রমণ কাহিনি লেখার সময় নেই? বেড়িয়ে এসে আপনার অভিজ্ঞতাগুলো যেমনভাবে গল্প করে বলেন কাছের মানুষদের - ঠিক তেমনি করেই সেই কথাগুলো ছোট্ট করে লিখে পাঠিয়ে দিন ছুটির আড্ডায়। লেখা পাঠানোর জন্য দেখুন এখানে। লেখা পাঠাতে কোনরকম অসুবিধা হলে ই-মেল করুন - admin@amaderchhuti.com
রুপোলি রেশি আর সোনালি সিলারি গাঁও
পল্লব ব্যানার্জি
~ রেশিখোলা-সিলারিগাঁও-এর আরও ছবি ~
অফিস কলিগ'রা বলল – "নর্থ বেঙ্গল? আ-বা-র??"
ছাত্রছাত্রীরা বলল – "উফ্ – আপনিও তো যেন আমাদের মতোই পরীক্ষার পড়া রিভিশন দিচ্ছেন - এক জিনিস বারবার..."
বন্ধুরা বলল – "রবি ঠাকুর কি বলেছেন জানিস তো? 'রেখেছ বাঙালি করে, মানুষ করনি' – আর তো কোনদিন বাংলার বাইরে যেতেই পারবিনা। কি আছে বলতো ওখানে?"
সত্যিই তো। এই প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে নেই। আর থাকলেও ওদের বোঝানোর মতো ভাষা আমার নেই। সত্যিই "উত্তরবঙ্গে কি আছে" এই প্রশ্নের উত্তরে অনেক ভেবে একটাই শব্দ খুঁজে পেলাম – 'টান'। দয়া করে জিজ্ঞেস করবেন না – কিসের, কতটা, কেমন – ইত্যাদি।
এই 'টান'-এর ওপর ভর করেই আবার পাড়ি দিলাম উত্তরবঙ্গে। এবার বেছেছি দুটো এমন জায়গা যেখানে দিনের বেলায় শুধুই পাখির ডাক আর রাতের বেলা ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ। রেশিখোলা - আর সিলারি গাঁও।
সবার আগে যেটা দরকার তা হল – দল ঠিক করা। আট জনের একটা দল বানাতে পারলে সব থেকে ভাল। এই পথে গাড়ি যেহেতু সহজে মেলে না, তাই শুরুতেই একটা গাড়ি বুক করে ফেলা আপনার পক্ষে বুদ্ধিমানের কাজ হবে। আর তখনই বুঝতে পারবেন 'দল' এর সুবিধাটা কোথায়। হাতে গোনা যে হোটেলগুলো আছে, তাতেও চার-শয্যা (ফোর-বেডেড) ঘরই বেশি। সেখানেও দলে ভারি হলে সুবিধা।
একটা গাড়ি রিজার্ভ করে নিলাম – নিউ জলপাইগুড়ি থেকে সো-জা রেশিখোলা। নেপালি ভাষায় খোলা মানে নদী বা পাহাড়ি ঝোরা। 'রেশি' নদীর উপত্যকা বলে এর নাম রেশিখোলা। আমরা ধার্মিক বাঙালিরা এটাকেই 'ঋষি'খোলা বানিয়ে ফেলেছি। এর এক ধারে সিকিম, আর এক ধারে পশ্চিমবঙ্গ। মাঝে স্বাধীন ভাবে ছুটে চলেছে রেশি। শীতে জল খুব বেশি না হলেও স্রোত ভালোই। দু'দিকের পাহাড় বেশ খাড়া ঢাল বেয়ে নেমে এসেছে নদীর কোলে। গাড়ি থেকে নেমে প্রায় এক কিলোমিটার হেঁটে হোটেল। পৌঁছানোর একটু আগে গাড়িতে বসেই হোটেলে (অবশ্যই আগে থেকে বুকিং করে রাখবেন) ফোন করুন। পোর্টার আসবে। ওরাই মালপত্তর বয়ে নিয়ে যাবে। ওদের পিছন পিছন চলুন। তবে এটা তো আর হাওড়া স্টেশন নয় যে সবসময় মাল-বাহককে নজরে নজরে রাখতে হবে। এখানে ওরা ইচ্ছে করে হারিয়ে যায় না। বরং দু-পাশের গাঢ় সবুজের মধ্যে দিয়ে নামতে নামতে আপনিই হয়তো হারিয়ে যাবেন মায়াচ্ছন্ন হয়ে। গাড়ি থেকে নামার পর ঝরনার জলের একটা মৃদু শব্দ কানে আসবে। সেটাই ক্রমশঃ বাড়তে বাড়তে গর্জনে পরিণত হবে। নদীর ওপর একটা বাঁশের সাঁকো আছে যেটা বাংলা আর সিকিমের মধ্যে যোগাযোগ রেখেছে। আরও একটু অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় হলে স্থানীয় লোকের হাত ধরে হেঁটে হেঁটেও নদী পেরোনো যায়। নাহলে মালপত্তরগুলো ঘরে রেখে নিজেকে রেশি-র কাছে সঁপে দেওয়া। পাখি আর প্রজাপতির মেলা বসেছে সেখানে। নদীর কুলকুল শব্দের সংগতে ঝিঁঝিঁ আর রাতচরা পাখির আওয়াজ। ঘরের বাইরে আলো বলতে মাথার ওপরের ওই চাঁদ। সেই চাঁদের আলো নদীর জলে আর গাছের পাতায় পড়ে তৈরি হয় রুপোলি এফেক্ট। নদীর উল্টো দিক থেকে ভেসে আসে বিরহীর মন কেমন করা বাঁশির সুর।
রেশিখোলাতে আতিথেয়তা পেলাম বেশ ভালই। ব্যবহার আর নির্জনতার দিক থেকে থাকার ভালো জায়গা 'রেশি রিভার রিসর্ট'। বলে রাখা ভালো যে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সব খাবার খরচা ওদের বুকিং চার্জের মধ্যেই ধরা থাকে। সকালে লুচি তরকারি সঙ্গে চা, দুপুরে ভাত-ডাল-সব্জি-ভাজা আর ডিমের কারি, সন্ধ্যেবেলা পকোড়া সহযোগে চা, রাতে মুরগির কারি আর রুটি।
গতকাল সন্ধে থেকেই লক্ষ্য করছিলাম দুই সঙ্গী কেমন যেন মনমরা। বেশ বুঝতে পারছি – শহরের জাঁকজমক থেকে দূরে ওরা থাকতে চায়না। বারান্দায় দেখা হতেই একবার সাহস করে বাপ্পা আর সৌরভকে জিজ্ঞেস করলাম – "কি রে? পকোড়া ভালো লাগছে না? তোরা অন্য কিছু খাবি?" তার উত্তরে যা শুনলাম তাতে হাসব না কাঁদব না অবাক হব, বুঝতে পারলাম না। বাপ্পা গম্ভীর মুখে জানতে চাইল – "এখানে ফুচকার দোকান নেই?" দিগন্ত বিস্তৃত ঘন জঙ্গল, মাথার ওপর দ্বাদশীর চাঁদ, আর তার আলোয় চকচক করতে থাকা রুপোলি 'রেশি'র দিকে একবার চোখ বুলিয়ে খুব সংক্ষেপে জবাব দিলাম – "না রে"। বাপ্পা যেন ওর অপ্রাপ্তির দুঃখটাকে মেনে নিয়ে বলল – "ঠিক আছে, কী আর করা যাবে? কাল তো যাচ্ছি সিলারি গাঁও। ওখানে নিশ্চই পেয়ে যাব", বলে ঘরে ঢুকে গেল। আমি মনে মনে জানি – ওখানেও ওদের নিরাশ হয়েই থাকতে হবে। বেশ বুঝতে পারলাম – শিলিগুড়ি নিদেন পক্ষে কালিম্পং না পৌঁছানো পর্যন্ত ওদের মুখে হাসি দেখতে পাব না।
সকালে গাড়ি নিয়ে প্রথমেই গেলাম – পেডং। এখানকার বিখ্যাত মনাস্ট্রিটা পথেই পড়ে। বৌদ্ধ গুম্ফার বারান্দা থেকে চারপাশটা দেখলে মন ভরে যায়। নীল আকাশে টুকরো টুকরো সাদা মেঘের তলায় ছোট্ট পাহাড়ি শহর পেডং। শহর মানে কিন্তু গ্যাংটক বা দার্জিলিং এর মতো ঘিঞ্জি নয়। একটা হাই স্কুল (St. George High School), একটা জিপ / ট্যাক্সি স্ট্যান্ড আর কয়েকটা পাকা বাড়ি।
পেডং দেখে আবার গাড়ি ছুটল। খানিকটা রাস্তা বেশ মসৃণ। তারপর শেষ চার কিলোমিটার শুরু হল – যেন ড্যান্সিং রোড। পাথর ফেলা রাস্তার ওপর দিয়ে গাড়ি চলল লাফাতে লাফাতে। একেবারে 'বিরু তামাং'-এর হোমস্টে সিলারি গাঁও রিট্রিটে থামল। এই বিরু তামাংই এখানকার সর্বেসর্বা।
এখানে তিন-চারটে দারুণ স্পট রয়েছে হেঁটে ঘোরার জন্য - রামেটি ভিউ পয়েন্ট – যেখানে দাঁড়ালে আপনি পায়ের তলায় তিস্তা নদীর চোদ্দটা বাঁক দেখতে পাবেন আর একই সঙ্গে মাথার ওপর পাবেন ঝলমলে কাঞ্চনজঙ্ঘা। দাক্শাম্ ফোর্ট – গাইড ছাড়া যাবেন না। ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে পাহাড়ের ওপরে প্রায় চারশো বছরের পুরোন কেল্লার ধ্বংসাবশেষ (এখন জঙ্গলে এমন ছেয়ে গিয়েছে যে বোঝাই যায় না)। জোঁক থেকে সাবধান। নুন এর প্যাকেট রাখুন সঙ্গে। সাইলেন্ট ভ্যালি – এখানে এসে না দাঁড়ালে এই জায়গার নীরব সৌন্দর্য বোঝানো মুশকিল। ইচ্ছেগাঁও – মাত্র তিন-চার কিলোমিটার এর মধ্যে আর একটা গ্রাম, আর একটা নতুন উঠে আসা ট্যুরিস্ট স্পট।
সূর্যের আলো থাকতে থাকতেই আকাশে কেমন ত্রয়োদশীর চাঁদ উঠেছে, পাখিদের কিচির মিচির কানে আসছে। পাহাড়ি ময়নার মিষ্টি শিস্ - দূরে ওই বড় গাছটায় উড়ে এসে বসছে। উজ্জ্বল নীল রঙের পাখিটার বাসা হোটেলের পাশের মরা গাছটার কোটরে– ওর নাম ব্লু ফ্লাইক্যাচার। সকালে রোদ উঠলে মিনিভেট, সিবিয়া, ব্ল্যাক বুলবুল-এর রঙে চোখ ধাঁধিয়ে যাবে। সন্ধে নামছে। গরম গরম চা আর পকোড়ার আশায় চাদর জড়িয়ে বারান্দায় গিয়ে বসি। পাহাড়ের নীচে শহরে যখন আলো জ্বলে দেখতে অপূর্ব লাগে।
পরের দিন ভোরের আবছা আলোয় কাঞ্চনজঙ্ঘার অবয়ব। ধীরে ধীরে সিঁদুর-পরানোর ভঙ্গিতে সূর্যের প্রথম কিরণ পড়ল তার চূড়ায়। এরপর শুধু রঙ বদলের খেলা। যেন সারা পাহাড় জুড়ে আগুন লেগেছে।
তারপরে শুধুই মুগ্ধতা।
~ রেশিখোলা-সিলারিগাঁও-এর আরও ছবি ~
পল্লব ব্যানার্জি - স্কুলশিক্ষক পল্লব ব্যানার্জির নেশা ঘুরে বেড়ানো আর ছবি তোলা। নিজের যা কিছু ভালো লাগে, তা অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে আনন্দ পান। আর সেটা করতে গিয়েই তাঁর মনে হয়েছে বেশির ভাগ বাঙালির মধ্যেই এক ভবঘুরে মন রয়েছে। শুধুমাত্র তাকে জাগিয়ে তোলার অপেক্ষা। সেই তাগিদেই লেখা আর ছবি তোলার কাজে মন দিয়েছেন। শহর বা চেনা জায়গা নয়, অনেক দূরে যেখানে দিনে পাখির ডাক, আর রাতে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক ছাড়া আর কোনও শব্দ থাকে না সেই জায়গাই তাঁর ভবঘুরে মনকে ডাকে।
রাঙামাটির দেশ ঝাড়গ্রামে
পলাশ পান্ডা
~ ঝাড়গ্রামের তথ্য ~
অনেক দিন থেকেই মনটা কেমন পালাই পালাই করছিল। হাতে ছুটিও তেমন নেই, কম সময়ে বেড়িয়ে আসার একটা জায়গা বাছতে গিয়ে প্রথমেই কেন জানি লালমাটির দেশ ঝাড়গ্রামের কথা মন এল। অফিসের দুই বন্ধুকে সঙ্গী করে এক শনিবার অফিস ছুটির পর বেরিয়ে পড়লাম।
ঝাড়গ্রাম স্টেশনে নামলাম, তখন ঘড়িতে সন্ধ্যে ছ'টা। ওখানকারই এক পুরোনো বন্ধু, মুকুল, আগে থেকেই গেস্টহাউস ও পরের দিন বেড়ানোর জন্য গাড়ি বুক করে রেখেছিল। স্টেশনে নেমে দেখি আমাদের জন্য দাঁড়িয়েও আছে। গেস্টহাউসে পৌঁছে ড্রাইভারের সঙ্গে পরের দিনের প্ল্যান নিয়ে বসে পড়লাম। কাল দুপুরে ট্রেন, সকাল সকাল বেরিয়ে পড়তে হবে আশপাশটা দেখে নেওয়ার অন্য।
অ্যালার্ম বাজার আগেই ঘুম থেকে উঠে চটপট তৈরি হয়ে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। মুকুলও আজ সারাদিনের সঙ্গী। গাড়ি এন.এইচ. ফাইভ ধরে বেলপাহাড়ির দিকে পাড়ি দিল। তখনও সকালের ঘুম ভাঙেনি, হালকা কুয়াশার চাদর ঘিরে রয়েছে তাকে। কিছুটা যাওয়ার পর রাস্তার ডানদিকে চোখে পড়ল এম.পি.এস. গ্রুপস অফ কোম্পানিজ-এর গেট। কিছুদিন আগে পর্যন্ত এটা একটা ট্যুরিস্ট স্পট ছিল, কিন্তু এখন আর ঢুকতে দেওয়া হয় না। শহর ছাড়িয়ে এবার শাল-শিমুলের জঙ্গলের পথ ধরলাম। কিছুটা যাওয়ার পর দহিযুড়ি থেকে রাস্তাটা দু'ভাগ হয়েছে। ডানদিকের রাস্তাটা বিনপুর হয়ে বেলপাহাড়ি গেছে। আমরা ওটা না ধরে বাঁদিকের রাস্তাটা ধরলাম, এটা একটু শর্টকাট হয়। এপথে কিছুটা এগোলে শুরু হয় কুশবনির জঙ্গল। জঙ্গলের দু'ধারে শাল-শিমুলের প্রাধান্য বেশি। যাওয়ার সময় গা একটু ছমছম করছিল বৈকি। একটা জায়গায় গাড়ি থামিয়ে নেমে জঙ্গলের ছবি তুলব বলতে ড্রাইভার সরাসরি না করে দিল। মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল কিন্তু কিছু করার নেই, কারণ ড্রাইভার আগের দিনই বলে দিয়েছিল রাস্তায় যেখানে সেখানে নামা যাবে না। যাইহোক, সাত কিলোমিটার জঙ্গলটাকে অতিক্রম করে একটু লোকালয়ের কাছাকাছি এসে প্রথমবার গাড়ি দাঁড় করালো। নামতেই প্রথমবার ঠাণ্ডা অনুভব করলাম। মেঘলা পরিবেশ, হাল্কা বাতাস বয়ে চলেছে, সঙ্গে দু'এক ফোঁটা বৃষ্টিও পড়ছে। বেশিক্ষণ বাইরে না থেকে আবার গাড়িতে উঠে পড়লাম। দহিযুড়ির পর সবচেয়ে বড় জনপদ হ'ল পানিহাটি। পানিহাটিতে না থেমে সোজা বেলপাহাড়ির দিকে চললাম।
প্রায় ৪৮ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে অবশেষে বেলপাহাড়ি বাজারে এসে পৌঁছলাম। বেলপাহাড়ি বাজারটা মোটামুটি বড়। আজ এখানে হাটবার। স্থানীয় চাষিরা নিজেদের মাঠের সবজি নিয়ে বাজারে এসেছে বিক্রির জন্য। গাড়ি থেকে নেমে বাজারটা একটু ঘুরে দেখলাম। আমাদের এক সঙ্গী সেই বাজার থেকে টাটকা টম্যাটো ও একটা বাঁধাকপি বেশ সস্তাতে কিনেও ফেলল। আমারও ইচ্ছা করছিল, কিন্তু বইবার ভয়ে দেখে-দেখেই কাটালাম। সকাল সকাল বেরিয়েছি, খাওয়া হয়নি কিছুই। এমন কী চা-ও নয়। বাজারের এক জায়গায় দেখলাম গরম গরম লুচি ভাজছে। লোভ সামলাতে পারলাম না। সেখানেই গরম লুচি, ঘুগনি ও চা সহযোগে জলযোগ সারলাম। এই বেলপাহাড়ি থেকে ডানদিকে একটা রাস্তা বেঁকে গেছে। ওই রাস্তা ধরে কিছুটা গেলে পড়ে ঘাঘরা ওয়াটার ফলস্। তারাফেনি ব্যারেজের জলধারা থেকে সৃষ্টি হয়েছে ঘাঘরা ওয়াটার ফলস। বর্ষাকালে এর প্রকৃত রূপটা অনুভব করা যায়। এখন জল না থাকায় প্রায় শুকনো।
ওখান থেকে বেরিয়ে সোজা চললাম কাঁকরাঝোরের উদ্দেশ্যে। রাস্তা সরু হলেও অবস্থা খুব একটা খারাপ নয়। নতুন করে রাস্তা নির্মাণের কাজ চলছে। বেলপাহাড়ির পর থেকেই চারপাশের পরিবেশটা বদলাতে থাকল, বড় বড় গাছগুলো দূরে সরে গিয়ে ঘাসে মোড়া ছোট ছোট সবুজ টিলা দেখতে পেলাম। মেঘলা থাকায় হালকা কুয়াশায় ঢেকে রয়েছে। বুঝতেই পারলাম, আমরা কাঁকরাঝোর এলাকার মধ্যে ঢুকে পড়েছি। চাষের সময় রাস্তার ধারের জমিগুলো সবুজ ধানে ভরে যায়, এখন চারদিক ফাঁকা ধু ধু করছে। চলতে চলতে হঠাৎ চোখে পড়ল দূরে গাছের ডালে একটা নীলকন্ঠ পাখি বসে রয়েছে, গাড়ি থামিয়ে ছবি তুললাম তবে ভালো এলোনা। চলার পথে দেখলাম ব্রাউন শ্রাইক, গ্রিন পিজিয়ন, স্পটেড ডাভ। কাঁকরাঝোরে এমন কিছু দেখার নেই, তবে রাস্তার ধারের চিত্রপটটা খুবই সুন্দর। এরপর আমরা কাঁকরাঝোর থেকে ফিরতি পথে পানিহাটি থেকে ডানদিকের রাস্তা ধরে চলে এলাম চিল্কিগড় রাজবাড়ি। রাজবাড়ি দেখে চলে গেলাম কনক দুর্গার মন্দির। এক সামন্ত রাজা এই মন্দিরটি তৈরি করেছিলেন - ডুলুং নদীর ধারে ঘন জঙ্গলের মধ্যে। এই অঞ্চলের একটি জনপ্রিয় পিকনিক স্পট। দেখলাম প্রচুর টুরিস্ট এসেছে নদীর ধারে পিকনিক করতে। মন্দির চত্ত্বরে খুব হুনুমানের উৎপাত লক্ষ্য করলাম। পরের গন্তব্য বিখ্যাত ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি। বর্তমানে নীচের কুড়িটি রুম নিয়ে গড়ে উঠেছে হেরিটেজ হোটেল। ১৯৩১ খ্রীষ্টাব্দে রাজা নরসিংহ মল্লদেব বাহাদুরের আমলে এই রাজবাড়ি তৈরি হয়েছিল। রাজবাড়ির কাঠামো গথিক ও মুসলিম কারুকার্যের আদলে গড়ে উঠেছে। এখানে অনেকটা সময় এলোমেলো ঘুরে কাটিয়ে দিলাম।
ুব খিদেও পেয়ে গেছে। শহরে ফিরে এসে একটা হোটেলে দুপুরের আহার সারলাম। এবারে শেষ দর্শনীয় স্থান মিনি জু। টিকিট কেটে ঢুকে পড়লাম চিড়িয়াখানা দেখতে। দেখা হল বার্কিং ডিয়ার, ময়ূর, উদ্বিড়াল, পাহাড়ি ময়না, কাকাতুয়া, শামুকখোল এবং আরও পশুপাখি।
রাঙামাটির দেশকে বিদায় জানিয়ে এবার ফেরার পালা।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের কম্পিউটার অপারেটার পলাশ পান্ডা-র শখ ফোটোগ্রাফি ও বেড়ানো।