আকাশের কথা সাগরের কানে
        
      দময়ন্তী দাশগুপ্ত
~ গোয়ার তথ্য ~ || ~ গোয়ার আরও ছবি ~
ভিডিয়ো ক্যামেরার স্ক্রিনে বৃষ্টির ফোঁটা। সরে সরে যাওয়া ঘনসবুজ বারবার ঝাপ
সা হয়ে যাচ্ছে। মেঘলা সকালে অমরাবতী এক্সপ্রেস ছুটে  চলেছে ভগবান মহাবীর ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারির পাহাড়-জঙ্গলের বুক চিরে। দুধসাগর -স্টেশনের নামটা চোখে পড়তেই সকলেই সতর্ক ক্যামেরা হাতে অথবা উৎসুক চোখে। ঠিক করতে পারছিলাম না  ঠিক কোনটা করব -দুচোখ ভরে দেখব ওই অপরূপ দৃশ্য নাকি  আনপড় হাতে ধরা ক্যামেরাতেই চোখ লাগাব। ভাবতে ভাবতেই জানলার সামনের পাহাড়-সবুজ সরে গিয়ে দুধসাদা ঝরনার প্রশস্ত ক্যানভাস। সবুজ পাহাড়ের গা বেয়ে প্রায় ছ’শো মিটার উচ্চতা থেকে নামছে মান্ডবীর  ফেনিল সাদা জলধারা -হঠাৎ যেন  চোখটা ধাঁধিয়ে গেল। কিন্তু মাত্র কয়েক সেকেন্ডের এই  প্রাপ্তি। বাঁক ঘুরতে অন্য জানলায় আর এক ঝলক। তারপর – এই জানলায়-ওই জানলায় – দূর থেকে আরও  কিছুক্ষণ।
   সমুদ্রকে যদি নারীর সঙ্গে তুলনা করা  যায় তাহলে গোয়া চির লাস্যময়ী। অদ্ভুত একটা মাদকতা ছড়িয়ে আছে সমুদ্র সৈকতে,  সৈকতঘেঁষা বিচ রেস্টুরেন্ট আর অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস রাইডে কিম্বা শহরের বুকের  ঘনসবুজে। 
       মারগাঁও থেকে যখন কোলভা পৌঁছোলাম তখন দুপুর  গড়িয়ে গেছে -ঝমঝমিয়ে এসেছে বৃষ্টি। বৃষ্টি থামতেই  হাজির হলাম সৈকতে। নারকেল গাছে ছাওয়া ভেজা ভেজা বেলাভূমিতে তখন পর্যটকদের ভিড়। ওরই  মাঝে ওয়াটার স্কুটার আর প্যারাসেলিংয়ের হাঁকডাক। 
       বিচ-লাগোয়া রেস্টুরেন্টে – গোয়ায় যাকে বলে ‘শ্যাক’ - বসে মৃদুমন্দ আলোয় অক্টোপাসের একটা দুর্দান্ত ডিশ। বাইরে ঝমঝম বৃষ্টি। বৃষ্টি  কমলে বেরিয়ে পড়ি। রাস্তার ধারে আলোঝলমলে সব দোকান আর রেস্তোঁরা। পর্তুগিজ সুরের টানে ঢুকে পড়ি আরেকটা রেস্তোরাঁয়। বাইরে পাতা টেবিল চেয়ারে বসে পড়ি আইসক্রিম নি
য়ে। সামনেই কীবোর্ড-গিটার নিয়ে বসে গান গাইছেন যিনি তাঁর নাম গারুদা -দ্য ওয়ান ম্যান ব্যান্ড। 
       অক্টোবরের এই সময়ে কোলভায় আওয়ার লেডি অব মার্সি চার্চে শিশু যিশুখ্রিস্টকে ঘিরে উৎসব চলে -বসে যায় মেলা। মা মেরির কোল থেকে  নেমে ছোট্ট যিশু কয়েকদিনের জন্যএখন সকলের আপনজন। সবাই চুমু খাচ্ছেন চার্চের ফাদারদের কোলে থাকা ছোট্ট পুতুল যিশুর পায়ে। আমার মেয়েও বাদ  পড়েনা।
পরদিন সকালে ব্রেকফাস্ট সেরে বেরিয়ে পড়লাম সাউথ গোয়া ট্যুরে। প্রাচীন পর্তুগিজ অধ্যুষিত গোয়ার জীবনযাত্রা সংরক্ষিত করে রাখা হয়েছে লিউটোলিমে। এটি স্থানীয় এক পর্তুগিজ ভদ্রলোকের ব্যক্তিগত উদ্যোগ – যাকে প্রোমোট করছে  গোয়া ট্যুরিজম। মাথাপিছু দেড়শো টাকার টিকিট করে ঢুকতে হল। পড়ার ঘর থেকে  রান্নাঘর সবই নিখুঁতভাবে সাজানো। সব ঘুরেটুরে বীরেন মন্তব্য করল, এবার কলকাতায়  ফিরে ওদের বাড়িটার (তা শ’খানেক বছরের পুরোনো তো হবেই) যা যা রেনোভেশন করেছে সেগুলো আবার বদলে আগের  মত করে চাট্টি আরশোলা ছেড়ে দেবে। তাহলে দেড়শো না হোক একশো টাকা পার হেড টিকিট করাই  যেতে পারে। 
  উলটোদিকে বিগফুট মিউজিয়াম। পাথরের ওপর একটা বড় পা-এর নির্দশন পাওয়া গেছে, তাই  এই নাম। একশো বছর আগে গোয়ার গ্রাম্যজীবন কেমন ছিল সেটাই তুলে ধরা হয়েছে বিভিন্ন  মডেলের মাধ্যমে। 
  ছোট্ট একটা মোমের পুতুলের মিউজিয়াম দেখে পরবর্তী গন্তব্য শান্তাদুর্গা ও শ্রীমঙ্গেশ মন্দির। শিবাজির পুত্র শম্ভুজি শান্তাদুর্গার মন্দিরটি  নির্মাণ করেন। এখানে দুর্গা শান্তরূপে  অধিষ্ঠিত। বিখ্যাত গায়িকা লতা মঙ্গেশকরের গ্রামেই রয়েছে শ্রীমঙ্গেশ মন্দির। তবে  তুমুল বৃষ্টিতে প্রায় কেউই মন্দিরদুটি ভালো করে দেখতে পেলেন না। 
সাউথ গোয়া ট্যুরের সেরা আকর্ষণ ওল্ড  গোয়া। সত্যি বলতে কী আলাদা করে না এলে এখানকার অপূর্ব সুন্দর চার্চগুলো প্রাণভরে  দেখা হয়ে ওঠেনা। মেঘলা দুপুর, চার্চের শান্তস্নিগ্ধ পরিবেশ সবমিলিয়ে মনটা কেমন  অন্যরকম হয়ে যাচ্ছিল। ৬০৫ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত হয়েছিল ব্যাসিলিকা ডি বম জেসাস। বিশ্বাসীদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র এই গির্জায় বিশেষভাবে রক্ষিত আছে  সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ারের দেহ। তাঁর শেষ ইচ্ছা অনুসারে মৃত্যুর পরে চিন থেকে  গোয়ার এই চার্চে দেহটি আনা হয়। প্রতিবছর ৩ ডিসেম্বর জেভিয়ারের মৃত্যুদিনকে স্মরণ  করা হয়। দশবছর অন্তর তাঁর দেহ সর্বসাধারণের জন্য প্রদর্শন করা হয়। লাল ল্যাটেরাইট পাথরে আইয়োনিক, ডোরিক ও কোরিন্থিয় রীতিতে নির্মিত এই চার্চটির অভ্যন্তরে অসাধারণ ম্যুরাল চিত্রে ফুটে উঠেছে সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ারের জীবনকাহিনি।  চার্চের প্রধান বেদির নীচে বম জেসাসের বা শিশু যিশুর মূর্তি। 
  ব্যাসিলিকা-ডি-বম-জেসাসের উলটোদিকে গোয়া তথা এশিয়ার বৃহত্তম চার্চ সে ক্যাথিড্রাল।  সাদা রঙের প্রাসাদের ন্যায় পর্তুগাল ও গথিক স্থাপত্যের এই চার্চটি ১৫৬২-১৬৫২ প্রায়  নব্বই বছর ধরে তৈরি হয়েছিল। প্রাসাদের বর্হিভাগ তাসকান রীতিতে এবং অন্তর্ভাগ কোরিন্থিয়  স্টাইলে নির্মিত। চার্চের মূল বেদির ওপরে যিশু ও নীচে মাতা মেরির মূর্তি। সবচেয়ে  নীচে পর্তুগালের রানি সেন্ট ক্যাথরিনার মূর্তি। চার্চটিও সেন্ট ক্যাথরিনার  উদ্দেশ্যেই উৎসর্গীকৃত। চার্চটির মধ্যে একেকটি প্রকোষ্ঠে একেকটি মূর্তি রয়েছে -আওয়ার লেডি অফ হোপ, আওয়ার লেডি অফ লাইফ, আওয়ার লেডি অফ থ্রি নিডস ইত্যাদি। সহ্যাদ্রি  পর্বত থেকে পাওয়া হোলি ক্রশটিও সযত্নে রক্ষিত আছে চার্চে। দেওয়ালের ম্যুরালে ফুটে  উঠেছে সেন্ট ক্যাথরিনার জীবনকাহিনি। আগে ক্যাথিড্রালটির দুটি চূড়া ছিল। এখন  কেবলমাত্র উত্তরের চূড়াটিই আছে। এখানেই রয়েছে বিখ্যাত গোল্ডেন বেল। বিরাট এই  গোল্ডেন বেল-এর ঘন্টাধ্বনি ছড়িয়ে যায় গোয়ার প্রান্তে -প্রান্তরে। 
এদিনের শেষ দর্শন ডোনা -পাওলা বিচ। এই সৈকতের সঙ্গে যতটাই রোম্যান্টিক কাহিনি  জড়িয়ে থাক না কেন কংক্রিটে বাঁধানো সৈকতটি ঠিক ততটাই আনরোম্যান্টিক। কংক্রিটের পথের পাশে একের পর এক দোকানে হরেকরকম পশরা পেরিয়ে রেলিংয়ের ধারে দাঁড়ালে নীচে সমুদ্র আর দূরে ভাস্কো বন্দরে  দাঁড়িয়ে থাকা জাহাজগুলোর আউটলাইন। ডোনা পাওলায় আসার পথে উপরি পাওনা মিরামার সৈকত – রাজধানী পানাজি-র একমাত্র সী বিচ -মান্ডবী নদী  যেখানে আরবসাগরে পড়েছে। 
  বিকেলে হোটেলে ফিরে একটুক্ষণ বিশ্রাম  নিয়ে আবার বেরিয়ে পড়ি সাগরবেলার দিকে। সন্ধে পেরিয়ে রাত নামছে -মায়াবী হয়ে উঠছে গোয়া। সৈকত ধরে হাঁটতে হাঁটতে লাগোয়া  একটা রেস্টুরেন্টে বসি - সান্ধ্যআহার – সিফুড এবং পানীয় সহযোগে। আমি অবশ্য ছোটদের ফ্রুট  জুসের ভাগিদার। সৈকতে পেতে রাখা চওড়া বিচচেয়ারে গা এলিয়ে দিই।  আড্ডা চলে, মাঝে মাঝে নিস্তব্ধতা -একলা সাগরের  গান।     
  নর্থ গোয়া পৌঁছে কালাঙ্গুটে সৈকতে পা  রাখলে প্রথমেই মনে পড়ে পুরীর সৈকতের  কথা - বাপরে কী ভিড়! লোক একেবারে গিজগিজ করছে -সুইমিং  কস্টিউম পরা সাহেব -মেমসাহেব থেকে  বাঙালি -অবাঙালি আমজনতা। ওয়াটার স্কুটার,  ব্যানানা রাইড, প্যারাসেলিং -এর হাঁকাহাঁকিতে  কান পাতা দায়। সৈকতে একটা ঢুঁ মেরে আমরা চললাম অটোতে আঞ্জুনা বিচে। বুধবার, ফ্লি মার্কেট বসবে। যদিও বেশ দেরিই হয়ে গিয়েছিল। পৌঁছে দেখি  দোকানপাট সব গোটাতে শুরু করেছে। জামাকাপড় থেকে পুরোনো ঘড়ি-কম্পাস-শৌখিন  হুঁকো, ঘর সাজানোর রকমারি নিয়ে বসা স্থানীয় দোকানিদের পাশাপাশি বিদেশি-বিদেশিনীরাও  বসে গিয়েছিল টুকিটাকি-র পশরা সাজিয়ে –  এখন ভাঙা হাটে  জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে ঘরে ফেরার পালা – আবার পরের  বুধবারের অপেক্ষায়। সন্ধেবেলায় আবার সৈকতে। চারপাশে  জমজমাট বাজার চলে গেছে একেবারে সৈকতের মুখ পর্যন্ত। সৈকতের গায়েই বেশ ক’টা বড়বড় রেস্টুরেন্ট। কোলভার নির্জন  রহস্যময়ী চরিত্রটা এখানে একেবারেই অনুপস্থিত, এ যেন বড় বেশি ঝলমলে, উচ্ছ্বল, উজ্জ্বল। 
  পরদিন নর্থ গোয়া  ট্যুর। সাউথ গোয়া ট্যুরের মতোই বাসে উঠে গাইড বলতে শুরু করলেন আমাদের গন্তব্যের  কথা। তবে আজ শুরুটা একটু অন্যরকম। লিস্টে যে জায়গাগুলোর নাম আছে অদলবদল হয়ে ঢুকে  পড়েছে নতুন সৈকত কোকোবিচ। ওখানে নাকি দেখা মিলবে ডলফিনের। রোদ বেশ চড়া। সৈকতের  পাশে বাস দাঁড়াতে নীচে নেমে পায়ে পায়ে সবাই মিলে বোটের দিকে এগোনো। বিচের গা বেয়ে উঠে গেছে সবুজ পাহাড়। পাড়ের কাছে রঙিন রঙিন  বোটের সারি। নীল -সবুজ জল কেটে তিরতির করে আমাদের  বোট চলেছে - ঢেউয়ের মাথায় কি ডলফিন লাফিয়ে উঠল? সকলেরই উৎসুক  দৃষ্টি, হাতের ক্যামেরা তাক সেই দিকে -ওই যে, ওই যে। ওরই ফাঁকে গাইড দেখান পাহাড়ের গায়ে নারকেল গাছের সারির ফাঁকে ফাঁকে ‘হাসিনা  মান যায়েগি’-র শুটিং বাংলো, সেন্ট্রাল জেল। কোকো বিচ থেকে বেশ  কিছুটা ওপরে উঠে এসে আগুয়াদা ফোর্ট- মান্ডবী আর জুয়ারি নদীর সঙ্গমে। একসময় এই দুর্গে অনেকগুলি  ঝরনা ছিল। পানীয় জল নিতে জাহাজ ভিড়ত এই দুর্গের কাছে। ‘আগুয়া’ শব্দের অর্থও জল। দুর্গের একাংশই এখন সেন্ট্রাল জেল।  আলবার্তো পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত এই দুর্গেই রয়েছে দক্ষিণ -পূর্ব এশিয়ার প্রাচীনতম লাইট হাউসটি। সিঁড়ি ভেঙে দুর্গের ওপরে উঠে আসি। ছড়ানো-ছেটানো অনেকটা জায়গা জুড়ে ট্যুরিস্টের  ভিড়। এখান থেকে সমুদ্র ভারি সুন্দর।
  দুপুরে মায়েম হ্রদের তীরে গোয়া  ট্যুরিজমের রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ ব্রেক। রেস্টুরেন্ট থেকে নিচে সবুজ পাহাড়ে ঘেরা  টলটলে জলের হ্রদটা ভারি ভালো লাগছিল। 
  এই তো ক’দিন ধরে গোয়া ঘুরছি, তবু কেন জানি না মন ভরছে না। আসলে  আমাদের তো হাত বাড়ালেই সমুদ্দুর -পুরী, দিঘা - ধূসর জলে ঢেউয়ের খেলা। আন্দামানের নীল সমুদ্র সবুজ পাহাড় মনের আঁখিতে ফিরে ফিরে আসছে। আর তাই  রূপসাগরের ঠিকানা মিলছে না। গোয়ার নির্জন সৈকতগুলোতে যাওয়া হয়ে ওঠেনি। কিন্তু ভাগাতোরে  পৌঁছে এবার সত্যিই মুগ্ধ হলাম। পাথর-পাথর সৈকত পেরিয়ে বেলাভূমি। নীলসাগরের গা থেকে  উঠে গেছে ঘন সবুজ পাহাড়। কোথাওবা পাহাড়-সাগরের মাঝে বেড়া টেনেছে নারকেল গাছের  সারি। সৈকতের এখানে -সেখানে  স্বল্পবাস বিদেশি-বিদেশিনীর রোদ্দুর পোহানো। কোথাওবা নিভৃতে দুজনে সৈকতে -পাহাড়ে। মাঝে আমাদের মতো আলপটকা কিছু ট্যুরিস্ট। ঢেউয়ে  পা ভিজিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে যাই। সবুজ পাহাড়টা যেখানে ঝুঁকে এসে কথা বলতে চাইছে  সাগরকন্যার সঙ্গে। ডাক আসে, বাস ছাড়ার সময় হয়ে এল। গলা তুলে দীপকে বলি, এখানেই  থেকে গেলে হতো না কি? 
    আঞ্জুনা সৈকতটা একেবারে রঙিন রঙিন  ছোট্ট ছোট্ট পাথরে বোঝাই। সমুদ্র আর দেখব কী, পাথরের কত রং লাল, সবুজ, হলুদ, বাদামি,  সাদা, কালো -ইস কী সুন্দর! এইটা নিই মা, মেয়ে  বলে, মাও ব্যস্ত সাগরসৈকতে নুড়ি কুড়োতে। দুজনেই মাথার টুপি বোঝাই করি রঙিন রঙিন নুড়ি পাথরে। মেয়ের বাবা বলে, এত পাথর  তোমরা নিয়ে যাবে! না, না, সব কী আর নেব, আশ্বাস দিই, মানে, বেশি বইতে হবে না  তোমাকে আর কী! 
সন্ধ্যায় পানাজি ফিরে মান্ডবী নদীর বুকে বোট ত্রুইজ দিয়ে আজকের যাত্রা সারা। শহরের বুক ছুঁয়ে ছুঁয়ে মান্ডবী চলেছে মোহনার দিকে। নদীর  তীরের ঘন সবুজের ফাঁকে ফাঁকে বাড়ি-ঘর, গাড়ির রাস্তা, আর রসভঙ্গকারী এল আই সি,  এয়ারটেলের হোর্ডিং। জলে ভাসছে আরও বোটগুলো, মাঝে মাঝে ছোট জাহাজ। নদীর জলে আবির গুলে সূর্য ডুবছে, বোটের ওপর বদলে বদলে  যাচ্ছে গানের কথা - সুর -গায়ক –গায়িকা, নাচের দল। অন্ধকার নেমে এসেছে। আলোর  মালায় সেজে উঠছে পানাজি। কালো জল কেটে এগিয়ে যাচ্ছে আলোয় ভরা জাহাজ।
 রাতে কালাঙ্গুটে  ফিরে দেখি বিচের পাশের রেস্টুরেন্টগুলো চেয়ার-টেবিল পেতে দিয়েছে বিচের ওপরে – টেবিলে-টেবিলে জ্বলছে  প্রদীপ – নরম হলুদ আলোয় - ভেসে আসা পর্তুগিজ সুরে রোম্যান্টিক হয়ে উঠেছে সাগরবেলা। 
  একেকটা সকাল হঠাৎ করে ভারি সুন্দর হয়ে  যায়, কেমন জানি অন্যরকম। পরদিন বেশ সকালে উঠে কালাঙ্গুটের সৈকত ধরে হাঁটছি। তখন  নির্জন। হাঁটতে হাঁটতে প্রায় বাগা বিচের কাছাকাছি। সমুদ্রের ধারে পাতা আরামকেদারায়  তখনও অলস সকাল। রেস্টুরেন্টগুলো খোলেনি। তাই বসবার দাম চাইবার লোকও নেই। দিব্যি  হাত-পা ছড়িয়ে চুপ করে আধশোয়া হয়ে বসে আছি। সামনে একটু একটু করে সমুদ্রের বুকে সকাল  স্পষ্ট হচ্ছে। বাড়ছে লোকজনের আনাগোনা। তবু কেমন  শান্ত চুপচাপ সমুদ্রের মুখোমুখি হারিয়ে যাওয়া নিজের সঙ্গে। ‘কখন আসে একটি সকাল সে যেন মোর পথেই  বাঁধে বাসা সে যেন মোর চিরদিনের চাওয়া’-মোবাইলের আলতো গানের কলি কানের কাছে -হাঁটতে হাঁটতে ফিরে আসি। দেখি মাছধরার নৌকা ফিরেছে, চলছে জাল থেকে মাছ  সংগ্রহের পালা। রোদ উঠেছে। সার দেওয়া রঙিন রঙিন ছাতার নীচে আরামকেদারায় আয়েশ, বডি  ম্যাসেজের আরাম নেওয়া। সমুদ্দুরের জলে স্নান আর জলখেলা। ব্যানানা রাইডের হলুদ  বোটের কাত হয়ে শুয়ে থাকা সৈকতে, যাত্রী পেলেই জলে দৌড়ানো। 
  আজ সারাদিন ইচ্ছেমতো সমুদ্রস্নান, কেউ  ওয়াটার স্কুটারে জল  ছুঁয়ে ছুঁয়ে, কেউ নীল আকাশে প্যারাসেলিংয়ে, কেউ বা সেরে নেবে সব  শপিং। ওরই মধ্যে ফের ঝমঝম বৃষ্টি, সাগরে আকাশে মাখামাখি।      
 
~ গোয়ার তথ্য ~ || ~ গোয়ার আরও ছবি ~
![]()
 লেখালেখি, সম্পাদনা আর সাংবাদিকতাই দময়ন্তীর ভালোলাগা। এই সূত্রেই যুক্ত রয়েছেন বিভিন্ন পত্রপত্রিকার সঙ্গে। 
![]()
			 
			 | 
		||