আন্দামানের দিনলিপি
দেবাশিস রায়
~ আন্দামানের তথ্য ~ আন্দামানের আরও ছবি ~
দিনাঙ্ক ১ (১৬/০৪/২০১৬)
সেলুলার জেল:
ইতিহাস এখানে কথা বলে। রাষ্ট্রযন্ত্রের জিঘাংসা মেটানোর অপরূপ নিদর্শন।
তার শৈলী, কয়েদি পেষাই-এর আদর্শ পরিকাঠামো, মানুষের শরীর থেকে মন বিচ্ছিন্ন করার বাস্তবতাকে যে কত নির্মম রূপ দেওয়া যায় - এককথায় তার নিদর্শন, তাই অপরূপ।
অবশিষ্ট কয়েদ কুঠুরির প্রতিটি কক্ষে কান পাতলে এখনও শোনা যাবে সেই অনুচ্চারিত যন্ত্রণার ভাষা।
আর শোনা যাবে দীর্ঘশ্বাস। যাদের জন্য তাঁরা প্রাণপাত করেছিলেন, তাদের কাছে আজ শহিদ মানেই আলো-শব্দের হাল্কা বিলাসিতা আর সেলফির ঝলকানি, যাদের কাছে স্বাধীনতা থমকে থাকে স্মারক মিউজিয়ামে, তাদের জন্য ওই জরাজীর্ণ পিপুল গাছের স্বগতোক্তি। সব আলো নিভে যাবার পর যে গাছ কথা বলে ভিড় করে আসা বিদেহীদের সঙ্গে, দ্বীপ থেকে দ্বীপান্তরে।
এটুকুই অনুভব। কাব্যকথা নয়, এক ভীষণ আত্মগ্লানি গ্রাস করে আছে।এটাকে যদি 'এনজয়' করা বলা যায়, তবে তা নিদারুণ।
ইংরেজদের পো-দের থেকে অনেক বেশি রাগ হচ্ছে আজকের উত্তরাধিকারী কুলাঙ্গারদের ওপর যারা সবার টুঁটি টিপে হলেও "মা" শব্দ বার করে দেশাত্মবোধ জাহির করতে চায়।
সে সব কথা থাক। কালাপানি ছেড়ে বরং সবুজ দ্বীপের গল্প শোনাই। অন্তত পয়সা উশুল করতে হবে যে!!
দিনাঙ্ক ২ - (১৭/০৪/২০১৬) প্রথম অঙ্ক:
(রাতের প্রস্থান, জানলায় সূর্যোদয় - আলোর প্রবেশ)
তখন সকাল।
চব্বিশ ঘণ্টা হয়ে গেল দ্বীপান্তরে এসেছি অথচ নোনা জলে পা রাখিনি। তাই সকাল হতেই সৈকত সান্নিধ্যে যাবার জন্য ছটফটানি।
নির্ধারিত সময়ে বৃশ্চিকের আগমন, সারথি ছেলেটিও সাক্ষাৎ শ্রীকৃষ্ণ। কৃষ্ণ মন্ডল। দুই পুরুষ আগে বরিশালের ভিটেমাটি ছেড়ে ঠাকুর্দার আন্দামানে আগমন - সরকারি আনুকূল্যে ৬০ বিঘা জমিতে এক সর্বহারার লড়াই - বাস্তুহারার পরিচয় ঘুচিয়ে অল্প অল্প করে নতুন জীবনের বীজ বপন। আম জাম কাঁঠাল ছায়াবীথি ঘেরা একান্ত নিজস্ব আশ্রয়ের পাশাপাশি নারকেল-সুপারির বিস্তীর্ণ বাগিচা তৈরি, যা আজ বছরে পাঁচ লাখেরও বেশি আয় দেয়। এক নাগাড়ে বলে চলে মন্ডল। গাড়িটা ওর নিজস্ব। আন্দামানেই ওর জন্ম-কর্ম। কলেজ পাশ করে ট্যুরিজম। কলজেটাও বড়।
চড়াই উতরাই পথে কখন যে শহর ছেড়ে গ্রামের পথে গাড়ি ছুটেছে খেয়াল করিনি। পথের দুপাশে যত দূর চোখ যায় দীর্ঘদেহী সুপারি আর নারকেল গাছ সারিবদ্ধ ভাবে কুচকাওয়াজ রত।মাঝে মাঝে বিস্তীর্ণ জলাভূমি - কিছু উপড়ে পড়া গাছের কংকাল আর ঘরবাড়ি ভগ্নদেহ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মন্ডল বলল, এক সময় ওখানে বসতি ছিল - ওটা ছিল মন্দির; দেবতার গ্রাসে আজ ওটার আর সুনাম নেই - বয়ে চলেছে সুনামির ক্ষতচিহ্ন।ওই ঢুকে পড়া সমুদ্রজল আর বেরোনোর পথ পায়নি। ফলনশীল জমি এখন নোনাজলের স্বাদ পেয়ে অনুর্বরা - নিকট ভবিষ্যতেও তার পোয়াতি হবার সম্ভাবনা নেই।
গ্রামের নাম ওয়ান্ডুর। গ্রামবাসীরা অধিকাংশই বাঙালি - পোশাকি নাম 'সেটেলার' – সেটেলমেন্ট-এর অধীন সকলেই জমি পেয়েছে কম বেশি। কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চল হওয়ার সুবাদে সরকারি ভর্তুকি যথেষ্ট - একই কারণে সেটেলারদের বর্ত্তমান প্রজন্ম যথেষ্ট স্বচ্ছল - আন্দামানে নাকি কোনও ভিখারি নেই।
পথিমধ্যে একটা বড় প্রকল্প চোখে পড়ল। সাগরজল থেকে পরিস্রুত পানীয়জল প্রস্তুতকরণ চলে ওখানে - এক লিটার মিষ্টিজল তৈরি করতে প্রায় ১৫ টাকা খরচ হলেও সরকার বিনামূল্যে তা আন্দামানবাসীকে সরবরাহ করে!
কথায় কথায় পৌঁছে গেলাম সেই সমুদ্রতট।সেই সোনাবালি, সেই নোনাজল। পায়ের পাতা ডোবাতেই বালিকণাগুলো সমস্বরে যেন উঠল বলে - সর সর সর - আর অমনি সরে গিয়ে ঢেকে দিল চরণযুগল। নীল নীলাভ নীলচে অথবা গাঢ় নীল - কত রকম নীল হয়? গভীর থেকে গভীরতর কতদূর দেখা যায়? যতদূর চোখ যায় শুধু নীল। চরণ ছুঁয়ে যেতে যেতে তা যদি হৃদয় ছুঁয়ে ফেলে - মুখ দিয়ে অস্ফুটে বেরিয়ে আসে "ওয়ান্ডারফুল"।
ওয়ান্ডারফুল ওয়ান্ডুর - তারই কিছু মুহূর্ত বন্দী হল আজ আমার চলমান দূরভাষের ছোট্ট লেন্সে - আন্দামানের নামের সঙ্গে বন্দীত্বের কোথাও যেন একটা যোগ রয়েই গেছে। আমরা সপরিবারে তো তার কারাগারেই ধরা দিতে চলেছি, আজ সকাল থেকে। মনে ও মননে।
দিনাঙ্ক ২ (দ্বিতীয় অঙ্ক) - ১৭/৪/২০১৬
আজ বিকালে শুধুই উৎসব! পোষাকি নাম "বিচ ফেস্টিভ্যাল" - সমুদ্র আর বালুতট মিলেমিশে খেলা করল আজ বিকেল জুড়ে - আমাদের সঙ্গী করে। করভিনস কোভ বালুকাবেলায়।
পায়ের পাতা ভেজাতে ভেজাতে পৌঁছে গেলাম ঝিনুক সান্নিধ্যে - অঞ্জলি ভরে গেল, তবু মুক্তোর খোঁজ পেলাম না যে! বিস্তীর্ণ সমুদ্রতট জুড়ে কোথাও বা নিপুণ হাতে বালির স্থাপত্যকলা, কোথাও বা সংরক্ষিত সাগরজলে (কুমিরের গ্রাস থেকে বাঁচতে নেট দিয়ে ঘেরা) স্বল্পবসনার এক দেহে লীন হওয়ার শপথনামা। বেশ লাগছিল, সেই পড়ন্ত বিকেলের নিষ্পাপ নীলছবি।
নৌবিহারের ব্যবস্থাও আছে সেখানে। দ্রুত অথবা ধীরগতি। আমি অবশ্য স্থবির প্রস্তরবৎ থাকতেই ভালোবাসি - ঢেউ এসে কখনও সখনও যে হৃদয়ের অন্তঃস্থল নাড়া দেয় না এমন নয়। প্রাণের উৎস থেকে উৎসারিত সেই অনুভূতির নাম নাকি 'মহামায়া'।
করভিনস কোভ থেকে গিয়েছিলাম "চিড়িয়াটাপু" আর সংলগ্ন "মুন্ডা পাহাড়"। পাখিদের আড্ডা এখানে। নীরব নৈঃশব্দ্য - ঘরে ফেরার ডাক - সব পাখি ঘরে ফেরে। নীল জলে সোনার আগুন ছড়িয়ে সেথা সূর্য ডুব দেয় সারাদিনের ক্লান্তি ঘোচাবে বলে। আর তার সাতরঙা আলো শঙ্খচিলের ডানায় ভর করে আঁধারে হারায়। অন্ধকার নামে। শুধু জেগে থাকে আবছায়া ঘেরা সমুদ্রতট,ঢেউ ভাঙা চিকচিকে সফেদ ফেনা আর মহুয়াবনে ভেসে আসা ছলাৎ ছলাৎ শব্দ।
এই চিড়িয়াটাপুতেই খুঁজে পাওয়া যাবে এমন অনেক শিকড় উপড়ে যাওয়া আন্দামানি মহুয়া গাছ, যার হৃদয়ে এখনো সুনামির দগদগে ক্ষত।আর ফিসফিসানি - আগত ভ্রমণ পিপাসু দ্বিপদীদের উদ্দেশ্যে - হাত ছেড়ো না বন্ধু আমাদের - তোমাদের শিকড় শক্ত রাখতে।মহুয়াফুলের মাদকতায় শরীর অবশ হয়।
ফিরে আসি অস্থায়ী আবাসে - শিকড়ের টানে।
দিনাঙ্ক ৩ (১৯/০৪/২০১৬)
আজ ভ্রমণ বৃত্তান্তের 'নোটবুক' খালি।সকালবেলা থেকেই একটা কষ্ট গলার কাছে এসে আটকে আছে। কোথাও ঘোরার মন নেই - শরীর টেনে এদিক ওদিক - ধারে কাছে দু-একটা মিউজিয়াম - স্মারক সংগ্রহ।
আজ স্মৃতিদেরই ভিড়। আজ সকালে ধ্রুব নামক নয় বছরের এক প্রিয় বালকের মৃত্যু সংবাদ পেলাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠে মোবাইল ডেটা অন করতেই ধ্রুব'র অফ হয়ে যাবার খবর এলো। বালকাশ্রম ছেড়ে অন্য আশ্রমে পাড়ি দিয়েছে সে।
সারাটা দিন মনের আকাশ জুড়ে ধ্রুবতারা - সূর্য নামক নক্ষত্রকে ম্লান করে দিয়ে।আমার সারাটা দিন, মেঘলা আকাশ আর কাকে দেব?
ভালো থাকিস ধ্রুব।
দিনাঙ্ক ৪ (১৯/০৪/২০১৬)
(বারাটাং - মাড ভলক্যানো)
প্রায় ৮০-৯০ কিমি স্পিডে গাড়ি ছুটছে। জানলার কাঁচ নামিয়ে রাখা যাচ্ছে না, ভোরের ঠাণ্ডা বাতাস তিরের মতো এসে চোখমুখে বিঁধছে। এলোমেলো চুল সামলাতে সামলাতে তুলতুলি বলল - জানলাটা উঠিয়ে দাও না! অগত্যা অর্ধ উত্তোলিত।
সকালের প্রথম কনভয় ধরতে হবে। মিস করলে ফের সাড়ে তিন ঘন্টার অপেক্ষা।
আজ যাচ্ছি বারাটাং - মাঝে প্রায় ৫০ কিমি পথ অতিক্রম করতে হবে জারোয়া অধ্যুষিত অঞ্চল। তারই আচরণবিধির প্রথম শর্ত - সমস্ত গাড়িকে পুলিশি নজরবন্দীর মধ্যে থেকে 'কনভয়'-এ চলতে হবে। গতি ৪০ কিমি ঘন্টাপ্রতি। চলতে হবে অবিরাম, পথিমধ্যে থামতে মানা। ছবি তুলতে মানা, খাবার দিতে মানা, আরও অনেক না - না। অন্যথায় জেল - জরিমানা। বিরল জনজাতি জারোয়াদের নিজস্বতা রক্ষার্থে সভ্য মানবজাতির ভারতীয় সংস্করণ যে আইন বানিয়েছে, তার নাম PAT Regulations.
উদ্দেশ্য বারাটাং হয়ে লাইম স্টোন কেভ অথবা মাড ভলক্যানো দেখতে যাওয়া, কিন্তু সারিবদ্ধভাবে কনভয়ে দাঁড়ানো শতকরা ১০০ ভাগ ট্যুরিস্টের অন্তরের উদ্দীপনা - একবার যদি জারোয়া নামক ওই কুহেলিকার সম্মুখীন হওয়া যায়! নিজের চোখের আয়নায় যদি একবারের জন্যও ওই আদিম মানুষের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাওয়া যায়!
ঘন জঙ্গল। গাছপালার ফাঁক ফোকর দিয়ে চিকচিকে রোদ এসে পড়েছে এক ফালি রাস্তায়। সকালের প্রথম কনভয় চলেছে আগে পিছে পুলিশি নজরদারিতে। সকলেই শির এবং দাঁড়া টানটান করে বসে আছে, আর ইতিউতি খুঁজে চলেছে আদিম উৎসাহে। দু-তিনবার যে তাদের দর্শন মিলতে পারে, গাড়িচালক বন্ধু আগেই জানিয়েছেন। মিললও তাই।
আমার ধারণা সভ্যজগতের মানুষগুলোর অসভ্য কৌতূহল নিবারণের জন্য তাঁরা চলে আসেন -নিরাভরণ রাস্তার ধারে। না কি পেটের টানে? PAT কি পেটের সংস্থান করেছে? সরকারী সাহায্য অপ্রতুল? বিষয়টা অস্পষ্ট। না জেনে বলতে পারব না, পড়ে দেখতে হবে। মনটা ভারী হয়, এই পৃথিবীর জল হাওয়ার স্বাভাবিক অধিকারী ছোট ছোট বাচ্চাগুলোকে দেখে চশমার কাঁচ ঝাপসা হয়ে আসে।আশপাশের গাড়ি থেকে শব্দ ভেসে আসে - ওই তো, ওই তো!! নিজের লজ্জাবস্ত্র হারিয়ে যায় ভেজাল সভ্যতার কাছে।
নাও চটপট উঠে পড়ো এবার - বিশালাকার বার্জে করে অন্য পাড়ে পৌঁছে - মাড ভলক্যানোর ভেলকি দেখে আসি। এই পথেই পারাপার হবে যত বাস-লরি, দুধের গাড়ি - যাদের দিতে হবে পাড়ি - আরো বহুদূর - ডিগলিপুর।
মিনিট দশেক সময় - শান্ত জলরাশির দু'পাড় জুড়ে নোনাজল ভালোবাসা ম্যানগ্রোভ অরণ্যের বাস।তার মাথায় মাথায় রোদের ছোঁয়ায় দারুণ মায়া। তার শিকড়ে শিহরে সকাল বিকেল ছলাৎ ছল।
তাড়াহুড়ো করে উঠে পড়তে হবে অন্য গাড়িতে - অন্য পারে পৌঁছেই - নচেৎ ফেরার কনভয় মিস হবে বইকি!! কিছুটা এগোতেই রাস্তা চলে গেছে সোজা ডিগলিপুরের দিকে মায়াবন্দর হয়ে - আরো ৩০০ কিমি প্রায়, আন্দামানের দ্বিতীয় শহুরে সন্তানের হাত ধরতে। আমরা সামনের মোড় থেকে বাঁক নিয়ে সোজা ওপরে উঠে যাব ভাঙা পথ ধরে। ড্রাইভার ছেলেটি বেশ কথা বলে। জানাল, লাইম স্টোন কেভ খোলা থাকলে এই কাদা দেখতে কেউ আসে না। যাওয়ার রাস্তাতেও হাত পড়েনি গত দশ বছর।
গাড়ি থেকে নেমে ১৬০ মিটার পথ অল্প চড়াই। পৌঁছানো গেল - কাদামুখের উৎসে - যেখান থেকে বুদবুদের মতো উৎসারিত হচ্ছে তেলজলকাদা মিশ্রিত পলি আর মিথেন, ছড়িয়ে পড়ছে ধরিত্রী মায়ের স্তনবৃন্ত থেকে স্রোতধারার শাখা প্রশাখা হয়ে। বিরল দৃশ্য। দ্বীপ ভূখণ্ডের আরও অনেক বিরলতার মতো।
দিনাঙ্ক ৪ (সায়াহ্ন) রস আইল্যান্ড
সারাদিন ধরে অজস্র ভ্রমণ পিপাসু মানুষের আনাগোনা এইখানে। একসময়কার ব্যস্ত এই দ্বীপ ভূখণ্ডে কী না ছিল - ডাকঘর থেকে টেলিফোন, পাওয়ার হাউস থেকে জল পরিশোধনাগার, টেনিস কোর্ট থেকে অভিজাত ক্লাব - সাহেব সুবোদের স্ট্রাটেজিক প্ল্যানিং সেন্টার। আর ছিল সেই অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ যা না থাকলে রস আইল্যান্ডের রসমাধুরীতে টান পড়ত, অসমাপ্ত থাকত আন্দামানের ইতিহাস - কারাগারের অন্ধকারে নিক্ষিপ্ত সেই বন্দী জীবন,যেখানকার কয়েদিদের বিন্দু বিন্দু ঘামে গড়ে ওঠা দ্বীপের শৈশব - যৌবনের যন্ত্রণার কাহিনি লিপিবদ্ধ রয়েছে।
জানা গেল, সময়ের সাথে সাথে কয়েদখানায় এসেছে নতুন নতুন অতিথি।পাল্টেছে নজরদারির হুকুমদার। পাল্টায়নি শুধু অত্যাচারের দিনপঞ্জি।কয়েদিরা মুখ বুজে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। সকলে অবশ্যই নয়। বিনিময়ে চলেছে গণহত্যা, কেউ বা হয়েছে আত্মঘাতী। একটু আগেই তোপধ্বনি করে যে লাট সাহেবকে স্বাগত জানানো হয়েছে, বন্দি শের আলির অতর্কিত থাবায় তার নীল রক্ত মিশেছে সমুদ্রনীলে।
রস দ্বীপ বর্ত্তমানে জনবসতি শূন্য। কিছু হরিণ, খরগোশ আর ময়ূর সারাদিন মুক্তমনা হয়ে ঘুরে বেড়ায়। ময়ূরের পেখমে আর খরগোশের ছুটোছুটিতে বন্দীজীবনের ইতিহাস ভুলতে চায় ইট কাঠের ধ্বংসস্তূপ। ভ্রমণার্থীর হাত থেকে নারকেল মালার শাঁস খায় রসের হরিণ।
সারাদিন ধরে পোর্টব্লেয়ার থেকে রস দ্বীপান্তরে আসা মানুষের সঙ্গে মন খুলে কথা বলার ফুরসত নেই ইতিহাসের রাজসাক্ষী ওই ধ্বংসস্তূপের। তাই দিনের শেষে যখন সমস্ত দর্শনার্থী ফিরে যায়, সন্ধ্যা নেমে আসে দিগন্ত জুড়ে - তখন রিক্ত দ্বীপের উন্মুক্ত টেনিস কোর্টের সামনের গ্যালারিতে আলোশব্দের ছায়াধ্বনিতে জেগে ওঠে দ্বীপমালার ইতিহাস। শাবানা আজমি'র মায়াবী কন্ঠ আর গুলজারের রচনায় ফিরে ফিরে আসে ঐতিহাসিক মুহূর্ত - ইতিহাসের পাতা উলটে সচল হয়ে ওঠে পাওয়ার হাউসের ইঞ্জিন, বেজে ওঠে ডাকঘরের টেলিফোন আর বুকের ভেতর বন্দীর হাহাকার।
বিশ্বযুদ্ধের দামামা শোনা যায়, সুদূর রস আইল্যান্ডে ধ্বনিত হয় নেতাজির উদাত্ত কন্ঠ, রবীন্দ্রনাথের স্বদেশমন্ত্র। নিভে যাওয়া সূর্যর সব রঙ শুষে নিয়ে সাদা আলোর জ্যোৎস্না ছড়িয়ে পড়ে নীল সমুদ্রে। সাগরতল থেকে উত্থিত হয় তেরঙার ডাক। সদর্পে বলে আমি ভারতবাসী।
সপরিবারে সাক্ষী থাকি এক অসাধারণ অভিজ্ঞতার। মনে মনে তর্পণ সারি - মহাতর্পণ।
দিনাঙ্ক পাঁচ (নীল দ্বীপান্তর) ২০/০৪/২০১৬
সকাল হতে না হতেই ব্যাপক উদ্দীপনা, সপরিবার দারুণ চাঙ্গা - নীল স্বপ্নিল সমুদ্র সান্নিধ্যে যাব - বিশালাকৃতি এম ভি রানিচাংগা চেপে।
যাত্রাপথ নীল দ্বীপ হয়ে হ্যাভলক। আমাদের গন্তব্য নীল। আগামীকাল হ্যাভলক। কিন্তু বন্দরে পৌঁছে জানা গেল কোন এক অজ্ঞাত কারণে আগামীকাল নীলদ্বীপ থেকে হ্যাভলক যাওয়ার জাহাজ অমিল! ওদিকে হ্যাভলক থেকে পোর্ট ব্লেয়ার ফেরার বিলাসবহুল ক্রুজের ই-টিকিট রয়েছে হাতে। পোর্ট ব্লেয়ার থেকে নীল ঘন্টা দুয়েকের পথ, ২০ কিমি দূরত্বেই হ্যাভলক। অথচ উপায়ান্তর নেই। তা হলে কি নীল ছুঁতে পারব না! বুকের গভীর থেকে সাড়া পেলাম চলো নীলদ্বীপ, আগামীকালের কথা পরে ভাবা যাবে।
আসন গ্রহণ করার মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই ভেসে পড়লাম জলে। প্রথম দশ মিনিট কাটতে না কাটতেই চোখের সামনে থেকে স্থলভাগ নিমেষে উধাও!! পৃথিবীর চারভাগ জল - বাকি শূন্য স্থল। পেটের মধ্যে গুড়গুড় করে উঠল - পকেটে ডাক্তার বন্ধুর দেওয়া স্টেমিটিল আর বুকের ধুকপুকানিতে থ্যালাসোফোবিয়ার রুগীকে জলে না নামার (বা ভাসার) পরামর্শ।
জানলার গোলে চোখ পড়তেই দেখি সফেদ ফেনিল সমুদ্র উচ্ছ্বল ঢেউ তুলে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরছে জাহাজটিকে অথচ একটু দূর থেকে দিগন্তে দৃষ্টির সীমানা অবধি গাঢ় নীল শান্ত সমাহিত নিস্তরঙ্গ।
না, এ সমুদ্রকে ভালো না বেসে পারা যায় না। চোখের আরামটুকু ভালো করে উপভোগ করার সাধে ওপরে উঠে এলাম। সমুদ্র কি হৃদয়ের ভাষা বোঝে? অথবা ভালবাসা? এক হাত বাড়াতেই উজাড় করে ফিরে পেলাম নয়নাভিরাম দৃশ্যপট।এক ঝাঁক সমুদ্র শুশুক (ডলফিন) জাহাজের দুই পাশ ধরে আনন্দে লাফাতে লাফাতে চলল - মাতল প্রতিযোগিতায়।সবাইকে হেঁকে "ডেকে" আনতে আনতে তারা প্রায় রণে ভঙ্গ দিয়েছে। তবু নিরাশ হল না কেউ। সকলেরই প্রায় সেই বিরল দর্শন মিলল।
হাতের চলমান দূরভাষের গুগল মানচিত্রে নীল জলরাশির মাঝে "মাই লোকেশন" বৃত্তাকারে কেন্দ্রগত, আরও জানান দিচ্ছে - দেখতে দেখতে আমাদের জলযান নীলদ্বীপ অভিমুখে ব্যবধান কমিয়ে আনছে।
নজরে এলো এক ঝাঁক উড়ন্ত পাখি জল ছুঁয়ে ছুঁয়ে লাফিয়ে চলেছে, ভুল ভাঙল - মাঝ সমুদ্রে জলপৃষ্ঠে কোন পাখি? ওগুলো যে উড়ুক্কু মাছ, শৈশবে পড়া বইয়ের পাতা থেকে সদ্য পরিচয় সেরে গেল - আমাদের সাগরভ্রমণ সার্থক করবে বলে।
রানিচাংগা যখন নীলদ্বীপের জেটি ছুঁল, তখন সকাল গড়িয়েছে দুপুরে। জেটির দুধারে দীর্ঘ পথের ধারে ধারে রঙবেরঙ এর ফুলের সারি সমুদ্রের অন্তঃস্থল থেকে উঁকি দিচ্ছে। ওগুলোর পোশাকি নাম সি কোরাল। দেখবার মতো দৃশ্য।
পা রাখলাম নীলদ্বীপে। চারদিকের সৈকতরেখার কৌমার্য অটুট এখানে। ছোট্ট জনপদ - মূলত হিন্দু বাঙালিদের বাস। সৈকত তটগুলির নামের মধ্য দিয়ে অস্তিত্বের সরব উচ্চারণ - লক্ষণপুর, সীতাপুর, ভরতপুর সি বিচ। কয়েক ঘর দক্ষিণী আর এক ঘর মুসলিমের বাস এই চরাচরে। গাছপালা ঘেরা গ্রাম্য সরল পরিবেশ। আম পেয়ারা নিম মহুয়ার মিলমিশ আর কেয়াপাতার ঝোপঝাড় বালুতট জুড়ে। রোদের প্রকোপ বেশি হলেও পথিমধ্যে নারকেল রাজা (কিং কোকোনাট) গায়ে হলুদ মেখে নতুন বউয়ের মতো শীতল পানীয় পাত্র হাত বাড়িয়ে দিল।তৃপ্ত হলাম তার অমৃতসুধায়।
সার দিয়ে ছোট ছোট অকৃত্রিম কুঁড়েঘর অপেক্ষা করে আছে নতুন অতিথিদের জন্য। তারই একটির আতিথ্য গ্রহণ করলাম। দ্বিপ্রাহরিক আহার সেরে পাড়ি দেওয়া গেল সমুদ্র কিনারায় লক্ষণপুর -২ বিচে প্রাকৃতিক সেতু পরিদর্শনে। বাস্তব আর কল্পনার মিশেলে সেখানে অপরূপ সেতুবন্ধন।সূর্যর শেষ রশ্মি সেই সেতুর ছায়াকে দীর্ঘায়িত করার আগেই পাড়ি দিলাম লক্ষণপুর- ১ বিচে, সূর্যাস্ত দেখব বলে।
যতদূর চোখ যায় শুধু নীল - হাল্কা থেকে ঘন, অগভীর থেকে গভীরে। পড়ন্ত বিকেলে পরিচ্ছন্ন সাদা সমুদ্রতটে তখন চা-জলখাবারের পসরা, আতিথ্যের কোনও ত্রুটি নেই। চায়ের পেয়ালায় চুমুক দিতে দিতে গোধূলিবেলার নরম রোদ গায়ে মেখে সূর্যাস্তের সাক্ষী হলাম আমরা।
তট ধরে ফেরার পথে জলে আলোড়ন - হাওয়া লেগেছে ঢেউয়ের পালে, পূর্ণিমার আগের রাতে চাঁদের আইবুড়ো ভাত - নীল জলে রূপোলি আলোর খেলা তীব্রতর হচ্ছে, সাদাবালির গায়ে হীরকের দ্যুতি, রক্তে মিশছে সি মহুয়ার নেশা। নিজেকে লুকিয়ে তাড়াতাড়ি ফিরে আসি গেরস্থের কুটিরে রাত কাটাতে, নিশিডাক উপেক্ষা করে।
নীল তুমি চিরকুমারী থেকো।।
দিনাঙ্ক ৬ (ভরতপুর বিচ, নীলদ্বীপ) ২১/০৪/২০১৬
নাহ,গরমটা কমল না - সকাল আটটা বাজতে না বাজতেই রোদের প্রকট রোদ চশমা আর সানস্ক্রিন লোশনকে হার মানিয়ে গায়ে কাঁটার মতো বিঁধছে। প্রাতরাশে গরম লুচি আর আলুর দম। এবার গন্তব্য ভরতপুর বিচ। নীলদ্বীপের জেটি সংলগ্ন বিশাল সি বিচ। স্বচ্ছ জলে জীবন্মৃত কোরালের বাস। মাথাপিছু ৫০০ দিলে গ্লাসবোটে চাপিয়ে কিনারা থেকে অনেক দূরে গিয়ে দেখে আসা যাবে রঙবেরঙ এর কোরাল আর ক্ষুদে মাছেদের আস্তানা। এ বিচটিতে বিভিন্ন জলক্রীড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। স্পিড বোট বা ওয়াটার স্কুটারে চেপে উত্তেজনাপূর্ণ সাগর ভ্রমণ। জলের নীচে নেমে একটু গভীরে গিয়ে স্কুবা ডাইভিংও করা যায়, কিন্তু দক্ষ গাইডের অভাবে তা এখন বন্ধ।
সি বিচ থেকেই দেখা যায় জাহাজের আসা যাওয়া - নীলদ্বীপের জেটিতে। কিন্তু আজ সকাল থেকে তা জনমানব শূন্য। গতকালের আশঙ্কাকে সত্যি করে জানা গেল, আজ থেকে তিনদিন নীল দ্বীপ অভিমুখে কোন সরকারি জাহাজ নাও চলতে পারে। আর যদি বা চলে নীল থেকে হ্যাভলক যাওয়ার কোন উপায় নেই।
চিন্তার পারদ বাড়তে থাকল।এদিকে আবার আগামী শনিবার কলকাতায় ফেরার ফ্লাইট। অবশেষে সকাল দশটা নাগাদ খবর এল পোর্ট ব্লেয়ার থেকে একটা স্পেশাল বোট ছেড়ে আসবে নীলদ্বীপে। সেটা করেই আমাদের ফেরত পাঠানো হবে, হ্যাভলক ভ্রমণ অসম্পূর্ণ রেখে।
তবু কিছুটা নিশ্চিন্ত হওয়া গেল। ঘন্টা দু'এক ধরে সমুদ্রজল আর সমুদ্রতট দাপাদাপি করে সবাই যখন ক্লান্ত,তখন একটু দূরেই কিছু দক্ষিণী লোকজন বাজনাসহ সমুদ্রকোলে আসর বসিয়েছে মংগল অনুষ্ঠানের। মাথায় ফুল লাগিয়ে শ্যামলা মেয়েরা বাজনার তালে তালে পা ফেলে বৃত্তাকারে পরিভ্রমণ করছে। বাজনার বোলে সমুদ্রিকার ঘুম ভাঙছে, হলুদ বালির ওপর আছড়ে পড়ে ভাঙছে সফেদ ফেনায়। জল বাড়ছে দেখে সমুদ্রস্নানে ইতি টেনে, ছায়াঘেরা বালিতে বসে পড়া গেল। বালিতট জুড়ে অসংখ্য পসরা। বিশুদ্ধ ডাবের জল অথবা বেলপানা। সমুদ্রের ফিরিয়ে দেওয়া ঝিনুক- শাঁখ-পলা-র মেলা সামগ্রী। বিক্রেতারা মূলত বাঙাল - পূর্বপুরুষরা বাংলাদেশ থেকে এসে পুনর্বাসিত হয়েছিলেন এই দ্বীপ ভূমিতে। আরও কিছু বাসিন্দা বাস জমিয়েছেন অনেক পরে - সকলেরই আদি নিবাস কলকাতা - আদতে অধিকাংশই বসিরহাট, হাবড়া - কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা। অতিথিবৎসল এবং মধ্য-স্বচ্ছ্বল।
দেখতে দেখতে দূর দিগন্তরেখায় ভেসে উঠল সেই জলযানের ছবি, যার অপেক্ষারত আমরা। যে ভাবেই হোক ফিরতে হবেই, তাই ট্রাভেল-এর লোক ভোর থেকে লাইন দিয়ে টিকিট তুলেছে। আর দেরি নয়। ফিরতে হবে পোর্ট ব্লেয়ার, দু ঘন্টার জলপথ পাড়ি দিয়ে।
যাবার আগে নিজেদের বসার জায়গাটা পরিষ্কার করে ফেলা গেল। সমগ্র বিচে একটাও আবর্জনা পড়ে নেই - নির্দিষ্ট সময় অন্তর সাফাইকর্মীরা আবর্জনা সংগ্রহের গাড়ি নিয়ে ঘুরছে। স্বচ্ছ ভারতের স্বপ্ন নয়, এই জঙ্গল - এই জলাভূমি আর তার বিশাল জীববৈচিত্র্যকে বাঁচিয়ে রাখার জীবনবোধে ওরা উন্নীত।
কাল ২২ এপ্রিল ওয়ার্ল্ড আর্থ ডে, ওদের সেলাম না জানিয়ে পারলাম না।
দিনাঙ্ক ৭ - সপ্তাহান্তে মাউন্ট হ্যারিয়েট এবং শহর ভ্রমণ - ২২/০৪/২০১৬
পোর্ট ব্লেয়ারের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন একটা টুকরো চাথাম। একটা নাতিদীর্ঘ কংক্রিটের সেতু দিয়ে জোড়া। চাথাম থেকে আর এক ফালি (স্ট্রিপ) সমুদ্র পেরোলেই বাম্বুফ্ল্যাট। তারই পৃষ্ঠে মাউন্ট হ্যারিয়েট। পোর্ট ব্লেয়ার মায় সারা আন্দামানের উচ্চতম স্থান এটি। জাতীয় বনাঞ্চল হিসাবে সংরক্ষিত।
আমাদের অস্থায়ী ঠিকানা থেকে সকাল দশটায় রওয়ানা দিয়ে বেলা এগারটা হয়ে গেল শিখরে পৌঁছাতে। মাঝপথে বড় ভেসেলে করে গাড়িসুদ্ধ হেসে খেলে চাথাম থেকে বাম্বুফ্ল্যাট আসাটা মনে রাখার মতো। ভীষণ শৃঙ্খলা মেনে চলে সবাই।
সমুদ্রের কিনারা দিয়ে যেতে যেতে সুন্দর পথ উঠে গেছে চড়াই উতরাই ডিঙিয়ে। চারপাশের ফিকে গাছপালা উচ্চতার সাথে সাথে ঘন হয়ে আসে, নাম না জানা পাখির ডাকে মন উতলা হয়, দিন দুপুরে একটানা ঝিঁঝিঁ ডেকে চলে।
অনেকটা পথ চলেছি জঙ্গলের আলো আঁধারির মধ্য দিয়ে, গাছপালার ফাঁক দিয়ে আলোছায়ার খেলা, অনেকটা উঠে এসেছি মনে হচ্ছে মেন সি লেভেল থেকে! হঠাৎই একটা বাঁক ঘুরতেই অস্ফুটে শব্দ বেরিয়ে এল - ওয়াহহ, অসাধারণ!! হঠাৎ ফিরে পাওয়া সেই হারিয়ে যাওয়া নীল - পাহাড়ের চরণতলে এসে আছড়ে পড়ছে। রাস্তার পাশে অনেকটা খোলা জায়গা দিয়ে দৃশ্যমান - নারকেল গাছের সারির মধ্য দিয়ে ওই দেখা যাচ্ছে নীল সমুদ্রে ঢুকে পড়া 'নর্থ বে' আইল্যান্ড, তার লাইটহাউস।
সেলভান (আমাদের আজকের সারথি) সেলডম কথা বলে, আমাদের উচ্ছ্বাস দেখে বলে উঠল - 'স্যার, এক বিশ রুপিয়া কা নোট নিকাল লিজিয়ে, অউর কম্পেয়ার কিজিয়ে।' তাই তো, ঠিকই বলেছে।পাখির চোখে এ দৃশ্য তো এখান থেকেই তোলা!
আর কিছুটা যেতেই মাউন্ট হ্যারিয়েট রিজার্ভ ফরেস্টের প্রবেশদ্বার - আগন্তুকের দলিলে নাম লিখিয়ে অরণ্যে প্রবেশ। গাড়ি গিয়ে থামলো বনবাংলোর গেটে। বিরাট এলাকা জুড়ে ব্রিটিশ আমলের গ্রীষ্মাবকাশের সাহেবি বাংলোর স্মৃতিচিহ্নের পাশে বর্তমান বন দপ্তরের বাংলো। সৌর বিদ্যুৎকোষ ও হাওয়াকলের মাধ্যমে চেষ্টা হয়েছিল তড়িৎ সঞ্চারের। উদ্যোগ সফল হয় নি। ক্যাম্পাস জুড়ে ছড়ানো ছেটানো ভিউ পয়েন্ট - চোখ মেলে থাকলেই হল, সামনের বিস্তীর্ণ মানচিত্রে একে একে ধরা দেবে সাগরপারের রস আইল্যান্ড, নর্থ বে, হ্যাভলক, নীল দ্বীপ।
এখান থেকে আরও গভীর অরণ্যে পায়ে হেঁটে (ট্রেক) ঘুরে আসা যায় ২.৫ কিমি দূরত্বের কালাপাত্থর। আসা যাওয়া মিলিয়ে ঘন্টা দেড়েক। পাইথন, গিরগিটি অথবা প্রজাপতি আর পাখপাখালির একান্ত ঠিকানায়। সরু রাস্তার দুদিকে গাছপালা লতাগুল্ম মাটিতে নেমে এসে স্বাগত জানায় এখানে। আমরা ওই পথের এক চতুর্থাংশ পায়ে হেঁটে ঘুরে আসলাম, গা ছমছম অনুভূতি নিয়ে।
ফেরার পথে ঠিক করলাম, আবার আসব ফিরে - এই বনকুটিরে - দুদিনের তরে, শুধু নৈ:শব্দ্য ভালোবেসে।
~ আন্দামানের তথ্য ~ আন্দামানের আরও ছবি ~
'আমাদের ছুটি' আন্তর্জাল ভ্রমণ পত্রিকার অনেকদিনের বন্ধু দেবাশিস রায় ভালোবাসেন বেড়াতে। যুক্ত রয়েছেন বিভিন্ন এন জি ও-র সঙ্গে। এই প্রথম কলম ধরলেন তাঁর প্রিয় পত্রিকাটির জন্য।