অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়

~ ~ হামটা পাস ট্রেকরুট ম্যাপ ~ হামটা পাস ট্রেকের আরও ছবি ~

পূর্বপ্রকাশিতের পর -

রাতে ঘুমোতে পারিনি। আমাদের টেন্টের মেঝের মাটি অসমান। বাঁ-দিক ঢালু, উঁচু-নীচুও যথেষ্টই। স্লিপিং ব্যাগ থেকে মাথা অল্প বের করে দেখলাম নীলাদ্রিও নড়া-চড়া করছে। আজ তাড়াতাড়ি বেরোনো। টয়লেট টেন্টে লাইন পড়ার আগে কাজ সেরে নেবার উদ্দেশ্যে বাইরে বেরিয়ে পড়লাম দুজনে। আকাশে অল্প আলো ফুটব ফুটব করছে। আকাশের রং হ্যান্ডমেড পেপারে তুলো দিয়ে নীলের ওপর এক পোঁচ কালো দিয়ে জলরং করা আকাশের মতো। চারিদিক নিস্তব্ধ। শুধু রানি নালার আপন ছন্দে বয়ে চলার শব্দ। ঘাস-পাতায় জমে যাওয়া কুয়াশার আস্তরণ, যেন কেউ সযত্নে মোম-পালিশ করে দিয়েছে। ইন্দ্রাসন পিকের শুভ্র তুষারে নীলের ছোঁয়া। আমাদের পাসের পথ কুয়াশায় ঢাকা পড়ে গেছে। সকালের কাজকর্ম শেষে টেন্টে ফিরে একেবারে তৈরি হয়ে নিলাম।

জুতোর পাশে আলাদা করে রাখা থাকল 'গেইটার'(Gaiter) আর 'মাইক্রোস্পাইকস' (Micro spikes)। এই দুটোর কার্যকারিতা সম্পর্কে একটু বলে নেওয়া দরকার। 'গেইটার' হল এক ধরনের লম্বা মোজার মতো পরিধান যেটা চেন দিয়ে আটকানো যায়। এটা প্যান্টের উপর দিয়ে (হাঁটুর চার-পাঁচ ইঞ্চি নীচে) জুতো পরে নেবার পর পরতে হয়। নীচের দিকে একটা ছোট্ট বেল্ট থাকে যেটাকে জুতোর তলা দিয়ে আরেক পাশে নিয়ে এসে আটকে দেওয়া যায়। পর্বত আরোহণের সময় গভীর তুষারে পা ঢুকে যায়। বরফের কুচি যাতে জুতো এবং প্যান্ট না ভিজিয়ে দেয় তাই প্যারাস্যুট বা সিন্থেটিক টেরিলিন জাতীয় কাপড় দিয়ে গেইটার বানানো হয় এবং পরা হয়। এবার আসি মাইক্রোস্পাইকস-এর কথায়। 'মাইক্রোস্পাইকস' হল জুতোর তলায় পরার জন্য একধরনের স্টিলের চেন লাগানো কাঁটাযুক্ত জিনিস। এর ওপরের দিকে শক্ত ইলাস্টিক রাবার-এর খাঁচা করা থাকে যেটা জুতোর সঙ্গে শক্ত হয়ে আটকে থাকে। সাধারণত আইস-ফিল্ডে বা গ্লেসিয়ার-এর ওপর দিয়ে হাঁটার জন্য এটা পরতে হয়। যেহেতু আজ পাস ক্লাইম্ব করব তাই মাইক্রোস্পাইকস আর গেইটার-এর প্রয়োজন পড়বেই। পথে আজ অনেকগুলো আইসফিল্ড পড়বে তার সাথে পঞ্চাশ-ষাট ডিগ্রি ঢালে একটানা ক্লাইম্ব করতে হবে। মাইক্রোস্পাইকস পরা থাকলে পা স্লিপ করার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।

সকাল ৬.৩০, "টিম হার্ডল"...

ব্রেকফাস্ট করার পর নিজেদের এবং আরও পাশের দু'টো তাঁবু নীলাদ্রির সঙ্গে মিলে গুছিয়ে ফেললাম। সবাই শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। সাড়ে ছ'টায় হৃষি সবাইকে চেঁচিয়ে এক যায়গায় জড়ো হতে বলল। আজকের হাঁটার প্ল্যানিং সম্পূর্ণ অন্যরকম। যেহেতু নমিতা আমাদের মধ্যে সবচেয়ে স্লো তাই ওকে টিম লিডারের পরের মেম্বার করা হল। এভাবে বয়স্ক, স্লো, মিডিয়াম এবং ফাস্ট মিলিয়ে মিশিয়ে একটা নির্দিষ্ট প্যাটার্নে ওরা পরপর দাঁড়াতে বলল। স্পষ্ট নির্দেশ, এই প্যাটার্ন কোনো অবস্থাতেই ব্রেক করা যাবে না এবং কেউ কাউকে ওভারটেক করে বেরিয়ে যাবে না। সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হার্ডল করে নিজেদের উৎসাহিত করে নিজেদের ব্যাকপ্যাক কাঁধে নিলাম।

ঘড়িতে দেখাচ্ছে সকাল ৬.৪৫ আর থার্মোমিটারে ৪.৩° সেলসিয়াস। আমাদের পথ চলা শুরু হল। সকালে যথারীতি সৌম্যদা অক্সিমিটার দিয়ে আমার অক্সিজেন স্যাচুরেশন লেভেল চেক করে গেছে। ৮৬ দেখানোয় নিশ্চিন্ত হয়ে বলল-"এই তো, বাহ! তুমি পারবে।" গায়ে আলতো রোদ পড়তেই মনের সব আশঙ্কা এক লহমায় মুছে গেল। জবুথবু ঠান্ডায় আমরা বোল্ডার ভেঙে এগোতে শুরু করলাম। ক্যাম্প থেকেই দেখা যাচ্ছিল দূরে একটা গলির মধ্যে দিয়ে রাস্তা বেঁকে গেছে। মনে হচ্ছিল এই তো, কতক্ষণ আর লাগবে। একঘন্টা হাঁটার পর মনে হল অন্তত আরও চল্লিশ মিনিট হাঁটলে তবেই ওখানে পৌঁছতে পারব। বোল্ডার ছেড়ে শক্ত আইস-এ এসে পড়েছি। গতকালও অল্প তুষারপাত হওয়ায় ওপরে আলতো কুচো বরফের আস্তরণ। গেইটার পরাই আছে তবে স্পাইকস পরতে হয়নি। পাশে বিশাল এক গ্লেসিয়ারের তলা দিয়ে কুলকুল করে নদী বয়ে চলেছে। কিছুটা পরেই একটা আইস ব্রিজ পড়ল। সৌম্যদা আগে গিয়ে আইস এক্স দিয়ে মেরে মেরে ওটা কতটা শক্ত পরীক্ষা করে দেখার পর আমাদের গ্রিন সিগন্যাল দিল। সামনে যতদূর দেখা যাচ্ছে রাস্তা সোজা ওপরে উঠে গেছে। আমরাও লাইন করে এগিয়ে চলেছি। কেউ কেউ পিছলে গিয়ে দু-তিন বার আছাড় খেল। আমিও খেতে খেতে বাঁচলাম। নীলাদ্রির ফোনটা চেয়ে নিয়ে বেশ কিছুটা রেকর্ডিংও করা হল। পিছন ফিরে দেখলাম আমাদের তাঁবু আর মালপত্র নিয়ে খচ্চর সমেত আমাদের কিচেন স্টাফরা আসছে। সৌম্যদা বলেছে পাসের সামিট করে পরের ক্যাম্পে পৌঁছোতে নয় ঘন্টা মতো বা তার কিছু বেশি লাগবে। দেড় ঘন্টাতেই চড়াই উঠতে অবস্থা কেরোসিন! দেখা যাক কী আছে কপালে।

মাঝারি গতিতে এগিয়ে চলেছি সবাই। বেশ খাড়া চড়াই। নমিতাও সামনে থাকায় এগোতে বাধ্য হচ্ছে, নাহলে পুরো টিম দাঁড়িয়ে পড়ছে। আটটা নাগাদ চড়াই শেষ হয়ে একটা আধা সমতল আধা ঢালু জায়গা এল। এটা প্রথম ব্রেক পয়েন্ট। আজ বলাই ছিল যেখানে সেখানে দাঁড়ানো যাবে না। দু মিনিট বসার পরেই দেখলাম হুড়মুড় করে আমাদের পাশ দিয়ে খচ্চরের পাল সমেত বাকি কিচেন স্টাফরা বেরিয়ে গেল। ওদের স্পিড দেখে অবাক হয়ে গেলাম। কুয়াশার বুক চিরে পাহাড়ি রোদ গায়ে এসে পড়ছে। বেশ জোরালো। সবাই গায়ে সানস্ক্রিন মেখে নিলাম। আমাদের ছাড়িয়ে চারপেয়ের দল অনেকদূর এগিয়ে গেছে। বরফে পা ঢুকে গিয়ে কয়েকজন বেশ হিমসিমও খাচ্ছে। তাদের সাহায্য করতে বেশ পরিশ্রম করতে হচ্ছে কিচেন স্টাফদের। এই মানুষগুলোকে সেলাম না জানিয়ে উপায় নেই। কী পরিশ্রম করতে পারে এরা! মিনিট পনেরোর বিশ্রাম শেষ। ক্যামেরাকে ছুটি দিয়ে ব্যাগ কাঁধে উঠে পড়লাম।

স্নো-লাইন দিয়ে হেঁটে চলেছি। একটা সুতোয় গাঁথা মালার মতো এক সারিতে একটানা। সামনে একটা সরু রিজ-লাইন। ওটা পেরোনোর পর রাস্তা পুরো খাড়াই উঠে গেছে একটা সোজা হাইওয়ের মতো। হঠাৎ করে এক রাজ্যের মেঘ আর কুয়াশা এসে চারিদিক অন্ধকার করে ফেলল। ১০-১৫ ফিটের বেশি দেখা যাচ্ছে না, পুরো হোয়াইট আউট। সৌম্যদা জানাল পাসের কাছাকাছি এসে পড়েছি। আর ৫-১০ মিনিট। সবাই আরেকটা করে লেয়ার চাপিয়ে নিলাম। ঠান্ডায় কুলফি জমে যাচ্ছিল! দেখলাম আমাদের খচ্চরের পাল আবার পিছিয়ে পড়েছে। অনেক নীচে ওদের ঠেলে ঠেলে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছে আমাদের বাকি কিচেন স্টাফেরা। হাঁটুডোবা তুষারে ওদের উঠতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।

কনকনে ঠান্ডা হাওয়া গায়ে কাঁপুনি ধরিয়ে দিচ্ছে। আরেকটু এগোতেই বাঁ-দিকে দেখতে পেলাম নেড়া পাথরের মধ্যে দিয়ে খাড়াই প্রায় পঁয়ষট্টি ডিগ্রি ঢালে ট্রেল উঠে গেছে হামটা পাস টপের দিকে। ফর্মেশন ফলো করে একে একে সবাই চড়াই ভেঙে পৌঁছে গেলাম পাসের মাথায়। এত কষ্ট স্বীকার সার্থক। ১৪১০০ ফুট উচ্চতায় সামনে বিশাল ইন্দ্রাসন পিকের নীচে দাঁড়িয়ে নিজেকে বড়ই ক্ষুদ্র আর সামান্য মনে হতে লাগল। এই বিশাল তুষার রাজ্যে আমরা কজন হিমালয়ের পায়ের কাছে নতমস্তকে তার সীমাহীন বিশালত্বের রূপরস চেটেপুটে উপভোগ করতে লাগলাম। ডাক্তারবাবু, গৌতমদা আরও সবাই ধূপসহযোগে শিবস্তোত্রম পাঠ করলেন। আমরা ক্যামেরার সদ্ব্যবহার করতে থাকলাম। আধঘণ্টা থাকার পর এবার নামার পালা। কুলু উপত্যকা ছেড়ে আমরা এখন এগিয়ে যাব 'কোল্ড ডেজার্ট" সম্বলিত স্পিতি উপত্যকার দিকে।

মিনিট কুড়ি নামার পর একটা পাথুরে এলাকায় সবাই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসা হল। ব্যাগপত্তর নিয়ে খচ্চরের দল আমাদের পেরিয়ে যাবে। কিচেন স্টাফেরা আগে গিয়ে টেন্ট পিচ করবে। এই সুযোগে সবাই টিফিনবক্স খুলে সুস্বাদু চিজ স্যান্ডুইচে কামড় বসালাম। অনেকক্ষণ পর খাদ্যবস্তু পেটে পড়ায় বুঝলাম পাস ক্লাইম্ব করার উত্তেজনায় খিদের কথা ভুলে গেছিলাম বেমালুম। পাশ দিয়ে দুদ্দাড় করে অবলা জন্তুর দল পেরিয়ে যাবার পর আমরাও চলার প্রস্তুতি নিলাম। বোল্ডার আর ঝুরো পাথর ভর্তি সরু রাস্তা। সাবধানে না নামলে পিছলে পড়ে যাবার ভয়। সৌম্যদা বারবার বলছিল –"Guys, please walk on the mountain side"। আমার সামনে সামনে হাঁটছিল প্রিয়াঙ্কা। অনেকটা নেমে এসেছি। হঠাৎ ওপর থেকে দু'জন মেষপালক চিৎকার করে কিছু বলল। তর্জমা শুনে পিলে চমকে গেল। ওদের ভেড়ার পালকে কয়েকটা পাহাড়ি নেকড়ে তাড়া করেছে। আর তাতেই বেচারারা ভয় পেয়ে ছুটে পালাতে শুরু করেছে। তাদের ক্ষুরের ধাক্কায় যেখানসেখান থেকে আলগা পাথর আমাদের উপর গড়িয়ে পড়তে পারে তাই তারা সাবধান করে দিচ্ছে। শুনে সৌম্যদা বলল সবাইকে জলদি পা চালাতে। সেরকম বিপদ কিছু হল না। দু-একটা ছোটখাটো পাথর পড়ল বটে তবে তেমন ভয় পাইয়ে দেবার মতো কিছু ঘটল না। তখনও বুঝিনি বিপদ আসছে সামনে।

দুপুর ১.০৫... "গ্লেসিয়ারে ধুন্ধুমার"...

আগাম কিছু না জানিয়েই একটা বাঁক ঘোরার পর সামনে এসে হাজির হল এক বিশাল গ্লেসিয়ার। তাকে অতিক্রম করে নীচে নামতে হবে বেশ খানিকটা। পঞ্চাশ-ষাট ডিগ্রি ঢালে অন্তত দেড়শো ফুট নামতে হবে। গ্লেসিয়ারটার একটু বর্ণনা দিতে হয়, নাহলে পরবর্তী ঘটনাক্রম বোঝানো যাবে না। বরফ বেশ শক্ত, কিন্তু ওপরের স্তর হালকা পিচ্ছিল হয়ে আছে। বেলা বেড়ে যাওয়ায় ওপরের স্তরের বরফ গলতেও আরম্ভ করেছে। সদ্য তুষারপাত না হওয়ায় ওপরে কোনো ঝুরো বরফের আস্তরণ জমেনি। ১৫০ ফুট মতো আন্দাজ নীচে নামার পর ঢালের গড়ান (slope) একটু কমে আবার তীব্র হয়ে গেছে, অনেকটা দুটো ধারাবাহিক সিঁড়ির মাঝখানের ল্যান্ডিং স্পেস-এর মতো। যেখানে বরফের আস্তরণ শেষ সেখান থেকেই শুরু হয়েছে বড় বড় এবং ধারাল বোল্ডারের সারি। ঢাল এতটাই তীব্র যে রোপিং না করে নামাটা কঠিন বলে আমার মনে হল। রোপিং করে নামা বেশ কষ্টকর এবং সময়সাপেক্ষ বলে হৃষি বলল সবাই স্লাইড করে নামবে। প্রথমে সুনীল আর রাহুল নেমে গেল। এরপর একে একে আমাদের নামার পালা। একটু একটু করে সবাই নামতে লাগল। বেশ ভয় ভয় করছিল। নিজের থেকে বেশি পিঠের ব্যাগে থাকা ক্যামেরাটার জন্য। যা হয় হোক বলে তৈরি হলাম। আগের কয়েকজন নেমে যাওয়ায় একটা ট্রেল তৈরি হয়েছে, অনেকটা জল যাওয়ার কাঁচা মাটির ড্রেনের মতো। কিন্তু বরফ আরেকটু গলে যাওয়ায় পিচ্ছিলতাও বেড়েছে। ওয়াকিং পোল দু'হাতে মাথার উপর তুলে পা সামনের দিকে করে বসে পড়লাম। হৃষি ভেবেছিল ঠেলা দেবে, তার আগেই তীব্র বেগে নীচে হড়কে গেলাম। দশ-বারো ফুট যাওয়ার পরই আর নিয়ন্ত্রণ রাখা গেল না। ঘষা খেয়ে পিঠ-কোমরের ছাল উঠে গেল। দুরন্ত গতিতে নামতে নামতে চিত হয়ে গড়িয়ে গেলাম। রাহুল কোনোমতে আমাকে আটকাল ঠিকই কিন্তু সোজা হয়ে দাঁড়াতে গিয়ে আবার উল্টে পড়লাম। নীচের দিকে আর আটকানোর কেউ নেই। গোড়ালি আর ওয়াকিং পোল গেঁথে নিজেকে আটকে ফেললাম কোনোমতে। তবে এতে একটা সুবিধে হল। আমি সেকেন্ড লাইন অফ ডিফেন্স হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।

সোজা দাঁড়িয়ে সামনে তাকাতেই দেখি আমার চেয়েও অনেক বেশি গতিতে নামছে নীলাদ্রি। ভারী চেহারার জন্য কোনোরকম নিয়ন্ত্রণ নেই ওর নামায়। হঠাৎ করে রাহুলের কাছাকাছি এসে তালেগোলে ওর ওয়াকিং পোল বরফে গেঁথে গেল বেকায়দায়। সেটা সঙ্গে সঙ্গে গেল ভেঙে আর নীলাদ্রি আরও সামনে ছিটকে পড়ে রাহুলের পায়ে এসে গোঁত্তা মারল। দুজনে কোনমতে উঠে দাঁড়াতে যাবে ওপর থেকে প্রবল বেগে নেমে আসা অমিত দুজনকেই ধাক্কা মেরে ফেলে দিল। আমি চোখের সামনে দেখতে পেলাম একসাথে চারজন একরাশ বরফের টুকরোর সঙ্গে হুড়মুড় করে ভীষণ স্পিডে নেমে যাচ্ছে বোল্ডারের দিকে। আমি আগে থেকেই অনেকটা নীচে এসে গেছিলাম। আমার ঠিক সমান্তরাল অবস্থানে ডানদিকে বেশ দূরে দাঁড়িয়ে ছিল সৌম্যদা। ও দৌড় দিল ধরার জন্য। আমি একটা বেশ বড়ো পাথরের চাঁইয়ের একটু ওপরে ঈশান কোণ ঘেঁষে দাঁড়িয়েছিলাম। মাথায় একটাই ইন্সটিঙ্কট কাজ করছিল। নীলাদ্রিকে ধরতেই হবে। ডানদিকে কোনাকুনি দৌড় দিলাম। সেকেন্ডের ভগ্নাংশে ওর ডানহাত আমার ডানহাতের তলা দিয়ে বগলের তলায় কোনোমতে গলিয়ে নিতে পারলাম শেকলের মতো। বাঁহাতে পোলটা ছিল। ওটায় সাপোর্ট দেওয়ায় অর্ধবৃত্তাকারে পাক খেয়ে দুজনে ওই বড়ো পাথরের চাঁইয়ের পিছনে কম বরফ পড়ায় যে গর্ত হয়েছিল সেটার মধ্যে কোমর অবধি ঢুকে গেলাম। বাকিরা চেনের মত একে অপরের হাত ধরেছিল। সৌম্যদা ওদের ধরে ফেলে আইস অ্যাক্স দিয়ে অ্যাঙ্কর করে থামিয়ে ফেলল। আর কিছুটা গড়িয়ে গেলেই সবাই মিলে গিয়ে সোজা বোল্ডারের ওপর পড়ত। ভাগ্য ভালো কারও কোনও বড় আঘাত লাগল না। পাসের মাথায় ভোলেনাথের পুজো সার্থক বলে মনে হল। ক্যাম্প বেশি দূরে ছিল না। দশ ঘণ্টার জায়গায় মাত্র সাড়ে সাত ঘণ্টায় আমরা পাস কমপ্লিট করে ছবির মতো ক্যাম্পসাইট "শিয়া গোরু" পৌঁছে গেলাম দুপুর আড়াইটেয়।

বিকেল ৫.৩০... "শিয়া গোরু-র গুঁতো"...

"এ কেমন অদ্ভূত নাম সৌম্যদা?" "শিয়া গোরু?" "হা-হা" করে আওয়াজ করে হেসে সৌম্যদা বলল-"শিয়া গোরু মানে a very cold and windy place বুঝলে?" মনে মনে ভাবলাম সে কি আর বুঝছি না? সূর্যের আলো নিভে যেতেই সব উত্তাপ কে যেন এক লহমায় শুষে নিয়েছে। শিয়া নদীর ধারে ক্যাম্পসাইট। একটা সমতল ভ্যালির মতো জায়গায়। প্রচন্ড ঠান্ডা হাওয়া হাত-পা-নাকের ডগা অবশ করে দিচ্ছে। আকাশও কালচে, বাতাসে ভিজে গন্ধ। যে কোনও সময় বৃষ্টি নামবে। হাওয়ার চোটে তাঁবু উড়ে যাবে মনে হতে লাগল। পাস ক্লাইম্ব করে এসে সবাই বেশ ক্লান্ত। স্যুপ খেয়ে ঝরনার জলে কাপ ধুতে গিয়ে মনে হল হাত কেটে পড়ে যাবে। 'শিয়া গোরু'-র তীব্র শিঙের গুঁতো হাড়ে-মজ্জায় টের পাচ্ছিলাম। এই জন্যই বলে কোল্ড ডেজার্ট। সাতটায় ডিনার করে টেন্টে ঢুকে কোনোমতে স্লিপিং ব্যাগে সেঁধিয়ে গেলাম। ডাক্তারবাবুদের টেন্ট পাশেই ছিল। বৃষ্টি শুরু হতে গৌতমদা চেঁচিয়ে বললেন-"নীলাদ্রি সাবধান, যদি রাতে হড়পা বানে ভেসে যাই তাহলে কিন্তু উদ্ধার কোরো।" নীলাদ্রিও হেসে বলল "একসাথেই ডুবব গৌতমদা' চিন্তা নেই"। বৃষ্টি আর হাওয়ার জোর বাড়তে লাগল। তাঁবুর উপর একটানা বৃষ্টির পটপট চড়বড় শব্দ শুনতে শুনতে ক্লান্তিতে চোখ বুজে এল।

২২-শে জুন...সকাল ৬.০০ টা... "চন্দ্র নদী ও পাকিস্তান"...

রোজ সকালের মতো "কাম আউট গাইজ, ইওর টি ইজ হিয়ার" ডাকে ঘুমচোখে তাকিয়ে আড়মোড়া ভাঙলাম। আজ আমাদের গন্তব্য 'ছত্রু' হয়ে 'ছোটিধারা।' আমাদের শেষ ক্যাম্প। ছত্রু-তেই দাঁড়িয়ে থাকবে আমাদের গাড়ি। আজকের হাঁটা সমতল ভ্যালি এবং উৎরাই মিশিয়ে। কিন্তু প্রথমেই পেরোতে হবে তীব্রগতিতে বয়ে চলা শিয়া নদী। এর প্রস্থ আগের দিনের নদীটার চেয়েও অনেক বেশি চওড়া, তবে স্রোত একটু কম। সকালবেলার বরফ গলা জলে হাঁটু অবধি ডুবিয়ে আমরা পেরোতে থাকলাম একইভাবে হিউম্যান চেইন বানিয়ে। ঠান্ডার চোটে হাঁটুর নীচ থেকে পুরোটা অবশ হয়ে গেল। অন্য পাড়ে পৌঁছে পা শুকিয়ে লাফ দিয়ে এবং ঘষে ঘষে রক্ত চলাচল ফিরিয়ে আনতে হল। তারপর শুরু পথ চলা শিয়া নদীর ডান দিকের পাড় বেয়ে। প্রায় একঘন্টা চলার পর বসতে হল। সবুজ গালিচা ছেড়ে রুক্ষ ধূসর ধুলিময় নৈসর্গে এসে পড়লাম। খাড়া উৎরাই বেয়ে নামতে নামতে হাঁটু ককিয়ে উঠতে লাগল। একটানা একভাবে নামতে নামতে হঠাৎ দেখা পাওয়া গেল দূরে চন্দ্র নদীর পাড়ে গাড়ি রাস্তার। ট্রেক শেষ ভেবে একসাথে আনন্দও হচ্ছিল আবার দুঃখও। একটা ময়দানের মতো জায়গায় সবাই বসে রেস্ট নিচ্ছিল। আমিও ক্যামেরা বের করে সবার দিকে তাক করতে শুরু করলাম। দূরে চন্দ্র নদীর ওপর ব্রিজ দেখা যাচ্ছিল। আর তার পাশে বিশাল এক ভয়াবহ গ্লেসিয়ার।

আরও আধ ঘন্টা হাঁটার পর যখন গ্লেসিয়ারের সামনে পৌঁছোলাম। ভয়ে বুকটা একবার ধড়াস করে উঠল। গ্লেসিয়ারটা পুরো পাহাড়ের ঢাল বরাবর। প্রায় ষাট ডিগ্রি ঢাল আর তার শেষ গিয়ে মিশেছে গর্জন করে তীব্র বেগে বয়ে চলা চন্দ্র নদীতে। আমার সামনে নীলাদ্রি আর তার সামনে হৃষি। কথায় কথায় সে জানাল গত বছরই এক ট্রেকারের মৃত্যু হয়েছে এখান থেকে পড়ে গিয়ে। হাসতে হাসতে আরও বলল-"অগর ইঁহাসে গিরে, তো সিধা পাকিস্তান পহুঁচ যাওগে।" শুনে বুক গলা সব শুকিয়ে গেল। আমার হাতে তাও ওয়াকিং স্টিক আছে, নীলাদ্রিরটা তো গতকালই মায়ের ভোগে। মনে মনে বললাম-"মাগো, মা তারা! এযাত্রা বাঁচিয়ে দাও মা।" এদিকে সুনীল দেখি প্রায় কুড়ি ফুট নীচে নেমে দৌড়াদৌড়ি করছে। এই পাহাড়ি ছেলেগুলোর সাহস দেখলে অবাক লাগে। রোজ মৃত্যুর গালে চুমু খেয়ে আসে অবলীলায়। দেখি সে চেঁচিয়ে বলছে কেউ স্লিপ করলে আমি ঠিক ধরে নেব চিন্তা নেই। খুব সাবধানে আগের লোকের ফুটপ্রিন্টে পা ফেলে আর ট্রেক পোল অ্যাংকর করে আস্তে আস্তে পেরিয়ে গেলাম। ধীরে ধীরে সবাইকে হাত ধরে পার করে দিল সৌম্যদা, রাহুল আর হৃষি। বাকি পথ লাস্ট ক্যাম্পে পৌঁছোবার আর চন্দ্রতাল দেখতে যাবার আনন্দে প্রায় একদৌড়ে এসে পড়লাম আমাদের বাহনের কাছে।

দুপুর ১.০০ টা... "চন্দ্রতালের পথে"...

ক্যাম্প হওয়ার কথা ছিল ছত্রুতে। কিন্তু চন্দ্রতালের পথে একটু এগিয়ে থাকার জন্য ক্যাম্পসাইট বদলে করা হয়েছে ছোটিধারায়। লাঞ্চ শেষ করে বেরোনো হবে চন্দ্রতালের পথে। আমাদের আগের ব্যাচ সেখানে যেতে পারেনি প্রচুর বরফে রাস্তা বন্ধ থাকার জন্য। আমরা ভাগ্যবান। সেই ট্রেকের প্রথম দিন থেকে অধীর আগ্রহে বসে আছি 'মুন লেক' দেখার জন্য। ক্যামেরার ব্যাটারিও বাঁচিয়ে রাখা ওই কারণেই। ন্যাপস্যাকে সব গুছিয়ে তৈরি হচ্ছি বেরোনোর জন্য, ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামল। চারিদিক ঝাপসা হয়ে গেল মুহূর্তেই। তবে কি ভাগ্য বিরূপ হল? কুড়ি মিনিটের আছাড়ি-পিছাড়ি বারিপাত শেষে আকাশের মুড আস্তে আস্তে ঠিক হতে শুরু করল। যাত্রা শুরু করলাম। রাস্তার বর্ণনা এখানে নিষ্প্রয়োজন, কারণ বেশ সংকীর্ণ পাথুরে জল কাদায় ভর্তি অসমতল পথরেখাকে রাস্তা বলে আলাদা করে চেনাই দায়। লে-মানালি হাইওয়েতে এসে পড়লাম বাতাল পেরিয়ে। সুমোর পিছনের সিটে বসে ততক্ষণে কতবার যে মাথা ছাদে ঠুকে গেছে হিসেব রাখিনি। অবশেষে পড়ন্ত বিকেলে গাড়ি এসে থামল চন্দ্রতালের পায়ে চলা রাস্তার ধারে। এর পর এক কিলোমিটার ট্রেক করে যেতে হবে। সবাই জোরে হাঁটা লাগালাম। আশা ছিল ভালো ভালো ছবি তুলব, কিন্তু সে গুড়ে বালি। আকাশ কালো হয়ে আছে। কুয়াশা ছেয়ে আসছে। গা ভিজছে বৃষ্টি না কুয়াশায় বুঝতে পারছি না। অবশেষে তিনি দেখা দিলেন। সে সৌন্দর্যের বর্ণনা হয় না।

চন্দ্রতালের নামকরণ তার আকারের জন্যই। অপরূপ সে শোভা। চারিদিকে স্পিতি উপত্যকার লালচে বাদামি পাহাড় দিয়ে ঘেরা পান্না সবুজ আর তুঁতে রঙের মিশেল তার জলের রঙে। হাড় জমিয়ে দেওয়া ঠান্ডা ভিজে বাতাস আর মেঘের ঘনঘটা থাকা সত্ত্বেও তার মোহ মনকে স্তব্ধ করে দেয়। ছবি তোলার সুযোগ বড়ো একটা ঘটল না বৃষ্টির জন্য। চোখ দিয়ে তার ঘোরলাগা মাতাল করে দেওয়া সৌন্দর্য প্রাণভরে শুষে নিলাম অনেকক্ষণ ধরে। এবার ফেরার পালা। লেকের জল মাথায় ঠেকিয়ে হাঁটু গেড়ে প্রণাম করে উঠে পড়লাম। অন্ধকার নামবে। তার আগে যতটা পারা যায় এগোতে হবে। ফিরে যেতে মন চাইছে না, তবু ফিরতে হবেই। আবার একটা প্রাণান্তকর রোড জার্নির শেষে অন্ধকারের মধ্যে প্রবল ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে যখন ক্যাম্পে ফিরলাম শরীরে এক বিন্দুও শক্তি বাকি নেই।

২৩-শে জুন... "আমারও তো গল্প বলা কাজ"...

রাত পেরোল, সকালও হল যথারীতি, যেমন রোজ হয়। হ্যাঁ, আজ ফিরতে হবে। এই ফেরার দিনগুলো বড়ই অদ্ভুত হয়। একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায় প্রতিটা ঘাস-পাথর-ঝরনা-পাখি-বরফকুচির সঙ্গে। এবার উপরি মনখারাপ এতোগুলো অসাধারণ মানুষ, যাদের পাঁচদিন আগেও চিনতাম না, যারা কেমন অন্যরকম আপন হয়ে গেছিল, তাদের ছেড়ে যেতে হবে বলে। এরকম সান্নিধ্য পাহাড়ই পারে এনে দিতে। ছবি তুলতে তুলতে মনখারাপ বাড়তে থাকল। শুভ্রাংশু কাজের কাজ করেছিল। সবার সাথে ও একটা করে সেলফি তুলে রেখেছিল। ব্রেকফাস্টের পর কনভোকেশন হল। সার্টিফিকেট অফ 'সাকসেসফুল ট্রেক কমপ্লিশন', 'গ্রিন ট্রেইল ক্রুসেডর', 'ইন্সপায়ারিং ট্রেকার' এইসব। সবাই মিলে গ্রুপ ফোটো তুলে আস্তে আস্তে নিজের নিজের গাড়িতে উঠে বসলাম। রোটাং পাস হয়ে চার-পাঁচঘন্টার পথ মানালি। অনেকে আজ ওখান থেকেই দিল্লির বাস ধরবে। আমাদের বাস আগামীকাল। হিমাচলী গান শুনতে শুনতে আর তার অপরূপ সবুজ-সাদার মিশেলে দাঁড়িয়ে থাকা বিশাল পর্বত আর নীল মেঘের কোলাকুলি দেখতে দেখতে দুপুর দুটো নাগাদ মানালি পৌঁছে গেলাম। সবার শেষের গাড়িতে ছিলাম আমরা। বেশিরভাগ টিমমেটের সঙ্গে দেখাই হল না। যাদের সঙ্গে হল, কোলাকুলি করে মনখারাপ আরও বেড়ে গেল। আবার সেই পুরোনো গেস্ট হাউস। বুক করাই ছিল। তবে গ্রাউন্ড ফ্লোরে অন্য একটা রুম জুটল। খুশি হলাম ছবি আসা টিভি আর জল গরম হওয়া গিজার পেয়ে। আজ শুধু আলসেমি।

ফেরার দিন...

বিকেল পাঁচটায় বাস ছাড়ল। সারাদিন বলার মতো কিছু ঘটেনি। ম্যালে ঘুরে আর অল্প কেনাকাটা করে কেটেছে। দিল্লি পৌঁছে অভিষেক-পর্ণার বাড়ি যাওয়ার কথা। ওখানে দুপুরে খেয়ে বিকেলে রাজধানী এক্সপ্রেস। পর্ণার হাতের রান্না কোনোভাবেই মিস করতে চাইছিলাম না। রাতে বাসে ঠিক সাড়ে আটটা-নটা নাগাদ শরীরটা খারাপ করল। ভীষণ বমি পাচ্ছিল। জীবনে প্রথমবার পাহাড়ে এরকম হল। পরে অভিষেক বলল, ওই রাস্তাটাই ওরকম। ম্যাক্সিমাম লোকের এসি ভলভোতে ওই জায়গায় বমি পায়। ওদেরও হয়েছিল নাকি। যাহোক সকালে হিমাচল ভবনের কাছে নেমে উবের ধরে গবেটমার্কা ড্রাইভারটার জন্য প্রায় সারা দিল্লি ঘুরে ওদের ফ্ল্যাটে পৌঁছোতে পারা গেল । দুপুরে উপাদেয় ভোজ সেরে দুই বন্ধুকে বিদায় জানিয়ে আরেক রাউন্ড এক্সট্রা মনখারাপ সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়া গেল স্টেশনের উদ্দেশ্যে। দিল্লির গরম আমাদের নিয়ে আয়েশ করে শিক-কাবাব বানিয়ে নিল অটোয় যাওয়ার সময়। আবার রাজধানী। ট্রেনে হুইসল দিয়ে যথা সময় ছাড়ল। ঘ্যাচাং করে ঝাঁকুনি কিছুক্ষণের জন্য বাস্তবে ফিরিয়ে আনলেও মন পড়ে ছিল পাহাড়ি রাস্তার বাঁকে, রূপকথার রাজ্যে। রূপঙ্করের গলায় 'বাস্তুশাপ' সিনেমার গানটা হেডফোনে বাজছিল-

"আমারও তো গল্প বলা কাজ
নটে গাছ মুড়িয়েছে আজ
এবার ফিরি তবে
পাহাড়ের ঢাল গুনে গুনে
কাঁটা কাঁটা ঘষে ঘষে
উলে উলে বুনে বুনে"...

শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল উলে বোনা সোয়েটার পরে পাহাড়ের ঢাল গোনা এই জন্মে যেন শেষ না হয় আমার...

~ ~ হামটা পাস ট্রেকরুট ম্যাপ ~ হামটা পাস ট্রেকের আরও ছবি ~

জিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার টেকনিকাল অ্যাসিস্টেন্ট অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কিছুদিন পাহাড়ে না গেলেই ডিপ্রেশনে ভোগেন। ট্রেকে বেরোলেই ফের চাঙ্গা হয়ে ওঠেন। কিন্তু ফিরে এসে লিখতে বসলেই আবার ল্যাদ খান। তবে এর পরেও কষ্টেসৃষ্টে যেটুকু লেখেন তা স্রেফ '' আমাদের ছুটি''-র জন্যই। বাড়িতে চমৎকার রুটি বানান। মাঝেমধ্যে রান্না করতেও ভালোবাসেন।

 

SocialTwist Tell-a-Friend

To view this site correctly, please click here to download the Bangla Font and copy it to your c:\windows\Fonts directory.

For any queries/complaints, please contact admin@amaderchhuti.com
Best viewed in FF or IE at a resolution of 1024x768 or higher