বেড়িয়ে এসে আপনার অভিজ্ঞতাগুলো যেমনভাবে শেয়ার করতে চান কাছের মানুষদের সাথে - ঠিক তেমনি করেই সেই কথাগুলো ছোট্ট করে লিখে পাঠিয়ে দিন ছুটির আড্ডায়। ছয় থেকে ছেষট্টি আমরা সবাই কিন্তু এই ছুটির আড্ডার বন্ধু। লেখা ডাকে বা নির্দিষ্ট ফর্মে মেল করে পাঠালেই চলবে। লেখা পাঠাতে কোনরকম অসুবিধা হলে ই-মেল করুন - amaderchhuti@gmail.com
বাংরিপোশির হাতছানি
সুদীপ্ত মজুমদার
~ তথ্য- বাংরিপোশি || বাংরিপোশির ছবি - সুদীপ্ত মজুমদার ~
বাংরিপোশি - শুধুমাত্র একটা রোমান্টিক নামের আকর্ষণে যখন ঊড়িষ্যার এই অখ্যাত জনপদ বেছে নিই সপ্তাহান্তিক ছুটি কাটানোর জন্য, তখন আমার সহযাত্রীদের অনেকেই প্রাথমিক দ্বিধা পোষণ করেছিলেন। এটা ঠিকই যে জায়গাটা সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য জানা ছিল না। কোন এক ভ্রমণ পত্রিকায় পড়া একটি ছোট লেখাই সম্বল। কিন্তু নতুন জায়গায় যাওয়ার সেটাই তো মজা।
সকাল সাতটা পঁচিশের ফলকনামা এক্সপ্রেস যখন বালাসোর পৌঁছল তখন প্রায় বেলা এগারোটা। সেখান থেকে একটা গাড়ি ভাড়া করে রওনা হলাম আমাদের গন্তব্যের দিকে। পিচের রাস্তার দু-ধারের গাছগুলির নুইয়ে পরা শাখা যেন তোরণ সাজিয়ে আমাদের স্বাগতম জানাবার জন্যই দাঁড়িয়ে আছে। আগে থেকে বলা থাকায় হোটেলে আমাদের দুপুরের রান্না করে রেখেছিল না হলে বেশ মুশকিলেই পড়তাম। সামান্য সেই আয়োজনই ক্ষিদের মুখে যেন অমৃত।
বাংলো প্যাটার্নের একটা ছোট একতলা বাড়ি। তিনটে শোবার ঘর আর একটা ডাইনিং স্পেস -এই নিয়ে হোটেল। পিছনের দিকে কেয়ার-টেকার তাঁর পরিবার নিয়ে থাকেন। মেন গেট থেকে একটু হেঁটে গেলেই রাস্তা -NH6। সেই রাস্তা ধরে আমরা হাঁটতে বেরোলাম বিকেলবেলা। দু-পাশে খোলা মাঠ, ধান জমি আর ইতি উতি গাছ-গাছালির শান্তির পরিবেশ। নিস্তব্ধতাকে মাঝে মাঝে ভেঙ্গে দিচ্ছে হুশ্ করে চলে যাওয়া কোনো ট্রাক বা গাড়ি। কিছু দূরে একটা ধাবায় বসে যখন চায়ের তেষ্টা মেটাচ্ছি তখন তাকিয়ে দেখি সামনের ছোট পাহাড়ের পেছনে সূর্য অস্ত যাচ্ছে। গোধূলির বর্ণচ্ছটা পুকুরের জলে প্রতিফলিত হয়ে এক মায়াময় পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
পরদিন সকালে আবার গাড়ি ভাড়া করে বেরিয়ে পড়লাম খড়কাই নদীর ওপর সুলাইপাত ড্যাম দেখতে। দুঘন্টার যাত্রার শেষের দিকটায় মেঠো পথে গ্রামের ভেতর দিয়ে যাওয়া। নদীর টলটলে নীল জল আর দূরের পাহাড় যেন নির্জনে হাতছানি দিয়ে ডাকে।
ফেরার পথে বুড়িবালাম নদীর পাশে পাশে চলা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গরমও বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। জানুয়ারি মাসেই এই রোদের তেজ হলে না জানি গ্রীষ্মকালে কি হয়! পথে ডোকরা শিল্পীদের গ্রামে খানিক বিরতি। অপূর্ব এই শিল্পকাজ কেমনভাবে হয় তাই প্রত্যক্ষ করা নিজের চোখে। এখানে প্রায় সব ঘরেই শিল্পীরা এই কাজ করেন। প্রথমে মাটির ওপর মোমের একটা আস্তরণ দিয়ে তাতে সূক্ষ্ম কাজ করা। তার ওপর আবার মাটি চাপিয়ে পুড়িয়ে নিয়ে ছাঁচ তৈরি হয়। সেই ছাঁচ, গলানো ব্রোঞ্জ দিয়ে ভর্তি করে পরে ঠান্ডা হলে ওপরের মাটি সরিয়ে নেওয়া হয়। ভাবতে অবাক লাগছিল আমরা শুধু সাজানো মূর্তিটাই দেখি, তার পিছনে যে কতখানি পরিশ্রম আছে তা এখানে না এলে জানতেও পারতাম না। এই বেড়ানোর স্মৃতি হিসেবে আমরা সকলেই কিছু কিছু মূর্তি কিনে নিলাম।
সন্ধের পর থেকেই আর কিছু করার নেই। টিভি নেই, ইলেকট্রিসিটি থাকলেও কম ভোলটেজের আলোয় বই পড়া যায় না। আর বিএসএনএল ছাড়া কোন মোবাইল টাওয়ারও ধরে না। তার মধ্যে আবার প্রায় রুটিন করে প্রতি সন্ধ্যায় লোডশেডিং হয় ঘন্টা দুয়েক। কিন্তু ঘরের বাইরে এসে আকাশের দিকে তাকিয়েই মনটা ভরে গেল। এত তারা তো কলকাতায় দেখতে পাই না কখনো এত স্পষ্ট করে! এমনকি সপ্তর্ষিমন্ডলও খুব সহজেই চিনতে পারলাম। মনে হচ্ছিল যেন তারারা লক্ষ আলোকবর্ষ পেরিয়ে আমাদের কত কাছাকাছি চলে এসেছে।
~ তথ্য- বাংরিপোশি || বাংরিপোশির ছবি - সুদীপ্ত মজুমদার ~
নামী তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত সুদীপ্ত ভালোবাসেন বেড়াতে।