স্বপ্নের দেশে একদিন

মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

তথ্য- প্যারিস ~ || ছবি - ডিজনিল্যাণ্ড ~ প্যারিস ~

মাঝে মাঝে খুব ছেলেবেলায় ফিরতে ইচ্ছে করে - সেই মজার দিনগুলোতে। তখন অবশ্য  আমার ছেলের ছোটবেলার মতো এত কার্টুন চ্যানেল, কম্পিউটার গেমস ছিল না। কিন্তু মিকি-মিনি অথবা সেই চিরকালীন স্নো হোয়াইট-সিন্ডারেলা তো আমাদের ছেলেবেলাও ভরিয়ে রেখেছিল - গ্রীষ্মের সেইসব একলা দুপুর, পুজো আর শীতের ছুটির সকাল-বিকেল।
এইসব ভাবতে ভাবতেই দেখি স্মৃতির দুয়ার খুলে কখন পৌঁছে গেছি প্যারিসের ডিজনিল্যান্ডে। লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে মাল্টিপল রাইডসের টিকিট কেটে একেবারে সোজা সুইস ফ্যামিলি রবিনসনের সেই বিখ্যাত ট্রি হাউসের সামনে। কে না জানে, যোহান ডেভিড ওয়াইজ-এর লেখা বিখ্যাত এই উপন্যাসের কথা। কল্পনার সেই ছবির আদলেই তৈরি ডিজনিল্যান্ডের এই ট্রি হাউসটি। ট্রি হাউসের কাছে পৌঁছাতে গেলে পেরোতে হবে দড়ি দিয়ে বোনা কাঠের ছোট একটি ঝুলন্ত ব্রিজ। তলায় অথৈ জল। ব্রিজ পেরোব কী! দেখি আমি এপারে এগোতে না এগোতেই শুভ্রাংশু পৌঁছে গেছে ওমাথায়। শুধু তাই নয় বেশ কয়েকটা বাচ্চা ছেলের সঙ্গে সমানে তাল মিলিয়ে লাফাচ্ছে ব্রিজের ওপর। বোঝো কাণ্ড! যত বলি, থামো থামো, তত দেখি উৎসাহ বাড়ছে! বুঝলাম শুধু আমার নয়, এখানে এসে বয়সটা ওরও কমছে, হয়তো একটু বেশিই!
ঝুলন্ত ব্রিজ পেরিয়ে ট্রি হাউসে পৌঁছে দেখি সেটা প্রায় ছোটখাটো একটা দুর্গের মতো। বাড়ির মধ্যে ঢোকার আগে পেরিয়ে আসতে হবে অস্ত্রাগার -যেখানে সাজানো আছে বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র -কামান, বন্দুক ও গোলাগুলি, কাল্পনিক শত্রুদের মোকাবিলা করার জন্য। বড় গাছটা দেখতে খানিকটা বটগাছের মতো হলেও আসলে কৃত্রিম - প্লাস্টিকের, তবে প্রায় বোঝাই যায় না। বাড়িটা সুন্দর করে গোছানো। বসার ঘরটা দেখলে মনে হয় যেন এখুনি রবিনসনদের কেউ একটা বই টেনে নিয়ে পড়তে বসবেন। রান্নাঘরে রয়েছে বাসনপত্তর, খাবার ঘরে কাঠের ডাইনিং টেবিল আর শোবার ঘরে একটা মাচা -সবই গাছের ওপর। সময় যেহেতু অল্প তাই কিছুক্ষণ থেকে হাঁটা দিলাম ‘ফ্যান্টম ম্যানর হাউসে’র দিকে। সমগ্র ডিজনিল্যান্ডটি প্রায় ৪,৮০০ একর জমির ওপর তৈরি। ইচ্ছে হলে টয় ট্রেনে চেপে বিভিন্ন স্টেশনে নেমে যাওয়া যায়। তবে পায়ে পায়ে ঘোরার মজাই আলাদা। অক্টোবর মাসের সকালে হাল্কা রোদের আমেজ গায়ে মেখে হাঁটতে বেশ ভালোই লাগছিল।
Disneyland - Paris, by Subhranshu Biswas
'ফ্যান্টম ম্যানর হাউসে' ঢুকে মনে হল যে ভূতে বিশ্বাস করেনা সেও ভয় পেয়ে যাবে। নিশ্ছিদ্র অন্ধকারে কখনো নরকঙ্কালের লাল রঙের চোখ জ্বলে উঠছে কখনোবা কোন "ঘোস্ট" বিকট স্বরে অট্টহাস্য করছে। বললে বিশ্বাস করবেন না একবার তো আমার ঘাড়ের ওপর একটা ভুত নিঃশ্বাস ফেলল বেশ জোরে জোরেই। দু-এক মূহুর্তের জন্য আমার হৃৎপিন্ডটাই বোধহয় প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল! এক ঘর থেকে আরেক ঘর যাওয়ার পর আমাদের উঠতে হল নৌকায় -অন্ধকার সুড়ঙ্গ, সরু জলপথের আশে-পাশে অসংখ্য ভূত-প্রেত। কেউ কাঁদছে আবার কেউ হাসছে। যতই বানানো হোক না কেন সত্যি বলতে কী প্রথমে খুব মজা লাগলেও শেষের দিকে আমি যে একেবারে ভয় পাইনি তা বললে মিথ্যে কথা বলা হবে। একটা কফিন থেকে যখন একটা গলিত শব উঠে পড়ল তখনতো আমার হাত-পা একবারে ঠান্ডা। দু-একটা বাচ্চা ভয়ে কেঁদে উঠল। নিজেকে অবশ্য ঠিক ওদের দলে ফেলছিনা।
পুরো ডিজনিল্যান্ডটা ঘুরতে হলে সবচেয়ে ভালো একটা ম্যাপ সংগ্রহ করে নেওয়া। প্রথমে ঢুকেই মেন গেটের ডান পাশে বড় করে আঁকা ডিজনিল্যান্ডের মানচিত্র রয়েছে। এছাড়া বেশ কিছু স্টলেও ডিজনিল্যান্ডের মানচিত্র পাওয়া যাচ্ছিল। আমি একটা মানচিত্র হাতে নিয়ে দেখলাম পুরো এলাকাটা চার ভাগে বিভক্ত -ডিসকভারিল্যান্ড, ফ্রনটিয়ারল্যান্ড, অ্যাডভেঞ্চারল্যান্ড এবং ফ্যানটাসিল্যান্ড। ফ্যানটাসিল্যান্ডেই রয়েছে স্লিপিং বিউটির প্রাসাদ। বিশাল প্রাসাদ -মানিকরত্নখচিত। গল্পের মতই প্রাসাদের মধ্যের সব চরিত্রগুলো গভীর ঘুমে অচৈতন্য। একটা অদ্ভুত নিস্তব্ধতা চারপাশে। যেহেতু আরও অনেক রাইড দেখা বাকী আর অগুণতি মানুষের ভিড় তাই আমরা স্লিপিং বিউটি ক্যাসেল থেকে বেরিয়ে তাড়াতাড়ি এগোলাম টয় ট্রেনে চড়বার জন্য। পিছনে পড়ে রইল ঘুমন্ত সুন্দরী তার রাজপুত্রের অপেক্ষায়। সময় বাঁচানো আর মজা ছাড়াও টয় ট্রেনে চড়বার  আরেকটা বড় কারণ হল আমরা ততক্ষণে বুঝে গেছি গোটা ডিজনিল্যান্ড কেবলমাত্র পায়ে হেঁটে ঘোরা বেশ কষ্টকর! তবে যাঁরা হাঁটতে একেবারেই অক্ষম তাঁদের মন খারাপ করার কোন কারণ নেই। হুইলচেয়ারে বসে তাঁরা অনায়াসেই পুরো ডিজনিল্যান্ড ঘুরে দেখতে পারবেন।
টয়ট্রেনে উঠতে গিয়ে দেখি সেখানেও প্রচুর ঠেলাঠেলি –লম্বা লাইন। একজন ফরাসি মহিলা তো আমাকে প্রায় ধ্মকে উঠলেন - পুসে ন্য পাসা, মাদাম। ভাগ্যিস ফরাসি একটু-আধটু জানা ছিল তাই বুঝতে পারলাম ঠেলতে বারণ করছেন। মোটেও ঠেলিনি তবু বাদামি চামড়ার মানুষ বলেই হয়তো দোষ হল আমার। যাইহোক কোনরকমে টয়ট্রেনের কামরায় একটা জানালার ধারে বসে পড়লাম। কলকাতার নিক্কো পার্কের টয়ট্রেনটি এর কাছে সত্যিই খেলনা। এই ট্রেনে বিশাল বড় বড় কামরা -সংখ্যায় অনেক বেশি আর যাচ্ছেও বেশ জোরেই। মাঝে মাঝে বাঁশি বাজছে। বেশ কিছুটা পথ টয়ট্রেনে করে যাবার পর একটা স্টেশনে টুক্‌ করে নেমে পড়লাম। নেমে একেবারে পড়বিতো পড় শয়তানের আবির্ভাবের প্যারেডের সামনে। অন্যান্য ট্যুরিস্টদের কাছ থেকে জানতে পারলাম যে ডিজনিল্যান্ডে রোজ এক-একটা প্যারেডের আয়োজন করা হয় আর সেগুলি বেশ চিত্তাকর্ষকও। আমাদের ভাগ্যে শয়তান! কী আর করা যাবে, অতএব তারই রুদ্ধশ্বাস প্রতীক্ষা।Devil's Parade, by Subhranshu Biswas শয়তানের আবির্ভাব বা ‘ডেভিলস্ অ্যারাইভাল’ দেখতে দুদিকে মানুষ সারিবদ্ধ হয়ে ক্যামেরা হাতে দাঁড়িয়ে আছে। কেউ কেউ ফুটপাথের ওপর বসেই পড়েছে। ঠিক কী ঘটবে তা নিয়ে বিস্তর জল্পনা কল্পনা চলছে। খুব জোরে জোরে ড্রাম বাজতে শুরু করল আর তারপরই দেখি ওই তো শয়তানের সাঙ্গপাঙ্গরা আসছে। বিকট কালো, সবুজ আর নীল মুখোশ পরে শয়তানের দলবল মার্চ করছে। ঠিক যেন শিবঠাকুরের নন্দী-ভৃঙ্গী -তবে এরা দলে আরও ভারি। কান ঝালাপালা করা তীব্র বাজনার সঙ্গে কিছুক্ষণ ধরে চলল উদ্দাম ভূতের নৃত্য! হাসতে হাসতে আমার পেটে খিল ধরে যাওয়ার যোগাড়।হঠাৎ বাজনা থেমে গেল। ভাবছি কি হল! ঠিক তখনই দুটি কালো ঘোড়া ছুটিয়ে একটা ঝাঁটা বাঁধা গাড়িতে শয়তানের আবির্ভাব ঘটল খোলা রঙ্গমঞ্চে। কালো ঘোড়া দুটোর আকার দেখে চমকে উঠলাম -আমাদের দেশের ঘোড়াগুলোতো এদের কাছে নেহাতই বাচ্চা! শয়তান বসে আছে ছ্যাকরা গাড়িতে কালো জামা গায়ে আর গাড়ির ওপরে কঙ্কালের মাথা আঁকা পতাকা উড়তে উড়তে সগৌরবে ঘোষণা করছে শয়তানের আগমনবার্তা। চোখের পলক ফেলতে না ফেলতে শয়তানের প্যারেড সঙ্গীসাথী সমেত উধাও হয়ে গেল প্রকান্ড একটা গেটের ভেতর। যাবার আগে শয়ে শয়ে ক্যামেরার উদ্দেশে পোজ্‌ দিয়ে শয়তান হাত নাড়তে লাগল।
আবার এগিয়ে চলা। রাইড্‌সগুলোর ফাঁকে ফাঁকে বিশাল এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বিভিন্ন সুভ্যেনির শপ, রংবেরং-এর নানান ফুলগাছ আর কিছু অবাক করা মডেল। এক জায়গায় দেখি দাঁড়িয়ে আছে ‘কুমড়োপটাশ’ -আমাদের ‘আবোল তাবোল’-এর নয় – এ হল সাহেব কুমড়োপটাশ –‘মিঃ পিটার পাম্পকিন’। এঁর পরণে পশ্চিমি জামাকাপড় কিন্তু মাথায় একটা মস্ত বড় কমলা রঙের কুমড়ো। আমি পিটার পাম্পকিনের পাশে হাসিমুখে ছবি তুলে ফেললাম। আর শুভ্রাংশু মিসেস পলি পাম্পকিনের সঙ্গে। এরই মাঝে ঘুরতে ঘুরতে এক জায়গায় মিকি আর মিনির সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। ওরা দুজনে ইতস্ততঃ ঘুরে বেড়াচ্ছিল আর সকলকে অটোগ্রাফ দিচ্ছিল। আমিও এক ফাঁকে সুযোগ পেয়ে মিনির সঙ্গে হ্যান্ডশেক করে নিলাম। বিশাল চেহারা নিয়ে মিনি আমার কাঁধে তার হাতটা রাখল। এখন কলকাতার অনেক মেলাতেও চলমান কার্টুন ক্যারেকটারদের দেখতে পাওয়া যায় কিন্তু ডিজনিল্যান্ডে তাদের সঙ্গে দেখা হওয়ার থ্রিলটাই অন্য। ঠিক যেন ছেলেবেলার কমিক্সের পাতা থেকে উঠে এসে ওরা হাত মেলালো সেই ছোট্ট মেয়েটার সঙ্গে যে নাকি বায়না ধরত বাবা-মায়ের সঙ্গে ঝিলমিল যাবে বলে (নিক্কো পার্ক তখনো হয়নি)।
আমরা এক মঙ্গলবারে এসেছি ডিজনিল্যান্ডে, রবিবার বা অন্য কোন ছুটির দিনে এলে কোনও রাইডে ওঠাই দুষ্কর হত। প্রতিটি রাইডেই বিশাল সরীসৃপের মতো লাইনে দীর্ঘ প্রতীক্ষায় দাঁড়িয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন কোণ থেকে আসা মানুষ। এরকমই একটা রাইডের জন্য অপেক্ষা করতে করতে মনে এল দুর্গাপুজোর মন্ডপে ঢোকার লাইনের কথা। এখানেও আছে ‘ফাস্ট পাসের ব্যবস্থা -কলকাতায় যেমন ‘ভি.আই.পি.’ পাস। ‘ফাস্ট পাস’ যার কাছে থাকবে তাকে আর কষ্ট করে লাইনে দাঁড়াতে হবে না। সে সরাসরি গিয়েই রাইডে চড়তে পারবে লাইনের দাঁড়ানোদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে। তবে  ফাস্ট পাসে’-র আওতায় কেবল কিছু কিছু বিশেষ রাইডসই পড়ে। সব রাইডসে এভাবে বেলাইনে ওঠার সুযোগ পাওয়া যায় না!

দুপুরে ম্যাক ডোনাল্ডস্‌’-এ ঢুকলাম লাঞ্চ খেতে । এখানকার ম্যাক ডোনাল্ডস্‌টি ফ্রান্সের বৃহত্তম। এতবড় দোকানে প্রথমবার ঢুকলে চোখে ধাঁধা লেগে যায়। যে দিকে দু চোখ যায় শুধু সারি সারি চেয়ার আর টেবিল । দোকানের বাইরে ম্যাক ডোনাল্ডসের হলুদ-লাল জামা পরা জোকারের সেই চেনা মূর্তি। শিশুরা দোকানে ঢুকলেই তাদের একটা করে বেলুন দিয়ে অভ্যর্থনা জানানো হচ্ছে। আর ভিড়? সকাল থেকে হাঁটাহাঁটির পর ঘন্টাখানেক দাঁড়িয়ে পা যখন ব্যথায় অস্থির তখন হাতে পেলাম বার্গার আর কোল্ড ড্রিংকস্‌। পেটের মধ্যে ততক্ষণে দাউদাউ করে জ্বলতে শুরু করেছে ক্ষিদের আগুন। যাইহোক ভোজনপর্ব সেরে কিছুটা ‘ক্যালোরি গেইন’ করে আবার ছুটলাম পরের রাইডের দিকে।
‘স্পেস স্টেশনে’ পৌঁছে দেখি বেশ কিছু বাচ্চা ছেলের রাইড্টা এত ভালো লেগেছে যে তারা আবার চড়বে বলে দৌড়াচ্ছে। এই রাইডে শারীরিকভাবে সক্ষম ব্যক্তি না হলে ওঠা কিন্তু একেবারে মানা। একদম রকেটের মত দেখতে রাইডটিতে প্রতিটি আসনের সঙ্গে আছে মজবুত আগল। রকেটের মধ্যে বসে হবে আমাদের মহাকাশ ভ্রমণ। আমি একটা আসনে বসে পড়তেই নিমেষের মধ্যে আগলটি আটকে গেল আমার পেটের কাছে -অনেকটা সিট বেল্টের মতো। তারপর যেন উল্কার গতিতে ছুটতে শুরু করল রকেটটা -কাল্পনিক নক্ষত্রলোকে। কখনো জ্বলজ্বলে তারাদের মাঝখান দিয়ে, কখনোবা ঘন কালো গ্যাসের মেঘের দলকে হটিয়ে, আবার কখনো এঁকেবেঁকে উল্কা পিন্ডদের পাশ কাটিয়ে। একে ভয়ঙ্কর গতির অনুভূতি, তারপর একসময়ে বসার জায়গাগুলো গেল ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে -অর্থাৎ কিনা ‘হেঁট মুন্ড উর্দ্ধপদ’ অবস্থায় কয়েক মুহূর্ত ঝুলতে লাগলাম আমরা। প্রচন্ড কষ্টে আমার প্রায় চোখ দিয়ে জল আসবার উপক্রম হল। শুনতে পেলাম পাশে শুভ্রাংশু চেঁচাচ্ছে ওর চশমা খুলে ঝুলছে বলে। রকেটের গতি কিন্তু কমেনি। সবাই যখন প্রায় ভয়ে আধ্মরা তখন সমস্ত বিশ্বব্রহ্মান্ড ঘুরে, চাঁদের পাশ কাটিয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসার সময় হল। রকেটের গহ্বর থেকে বেরোবার সময় ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরাগুলো ঝলসে উঠল। নিজেদের ভীত সন্ত্রস্ত মুখগুলোর ছবি দেখে খুব একচোট হেসে নিলাম।Disneyland at night
সারাদিন ধরে লাইনের পর লাইন দিয়ে একটার পর একটা রাইড চড়ে যখন প্রায় সন্ধে নেমে আসছে দৌড়ালাম সার দিয়ে সাজানো সুভ্যেনির শপগুলোর দিকে। ঠিক যেন রাসের মেলা। বিক্রি হচ্ছে হরেকরকমের খেলার জিনিস -মিকি মাউস, ডোনাল্ড ডাক, কাউবয় টুপি, বন্দুক, ঢাল-তরোয়াল, মিকি আঁকা টিশার্ট, সিন্ডারেলা কস্টিউম, বিভিন্ন রঙের ও আকারের পুতুল, মাথার শিং, মুখোশ, চকোলেট, ক্যান্ডি আরও কত কী -বলে শেষ করতে পারব না। তবে বেশীরভাগ জিনিসেরই আকাশছোঁয়া মূল্য। ঝোঁকের মাথায় আমি একটা ডিজনিল্যান্ডের প্যারেডের ভি.সি.ডি. কিনে ফেললাম। তার দামই পাঁচ পাউন্ড!
আমাদের ট্যুরিস্ট বাসের দিকে যখন হেঁটে ফিরছি মন খারাপ করা একটা সুর বাজছে মাইকে। সমস্ত ডিজনিল্যান্ড জুড়ে আলোর রোশনাই। ঘরে ফেরা মানুষের ঢল দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল যেন একটা মিনি বিশ্বের মানুষ টাইম মেশিনে চেপে কয়েক ঘন্টার জন্য শৈশবে ফিরে গিয়েছিল। এখন খেলা শেষে ধুলোবালি মেখে আবার বর্তমানে পৌঁছে ঘরে ফেরার পালা। মনে মনে ভাবছিলাম বাস্তবে যদি আর কখনো না পারি, স্লিপিং বিউটির মত ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ঠিক একদিন আবার ফিরে আসব এই স্বপ্নের দেশে।

তথ্য- প্যারিস ~ || ছবি - ডিজনিল্যাণ্ড ~ প্যারিস ~

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য এবং ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্রী মহুয়া বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ছোট গল্প ও ভ্রমণকাহিনি লেখেন।

 

 

SocialTwist Tell-a-Friend

To view this site correctly, please click here to download the Bangla Font and copy it to your c:\windows\Fonts directory.

For any queries/complaints, please contact admin@amaderchhuti.com
Best viewed in FF or IE at a resolution of 1024x768 or higher