বারাণসী ও এলাহাবাদ

তপন পাল

পূর্বপ্রকাশিতের পর -

~ বারাণসীর আরও ছবি ~

চতুর্থ দিন
শনিবার দু তারিখে ছিল ছট; ফেরার পথে দেখলাম পুরো শহর যানজটে অবরুদ্ধ। আমাদের হোটেলের নিম্নেই গঙ্গা প্রবাহিতা। ঘর থেকে দেখলাম বর্ণাঢ্য পাড়ে তিলধারণের ঠাঁই নেই – ঢাক ঢোল বাজছে, বাজি পুড়ছে। অস্তসূর্যকে প্রণাম জানিয়ে তাঁরা নদীপারেই রয়ে গেলেন; পরদিন বালার্ককে প্রণাম করে ঘরে যাবেন। পরদিন আকাশ মেঘলা, বাতাসে কুয়াশা, নদীর আকাশে দেশজ ও মরশুমি আবাবিল (Red rumped Swallow – Hirundo daurica)-এর ঝাঁক – সূর্যের দেখাই নেই।

বারাণসী অবস্থিতির চতুর্থ দিনটিও শুরু হল ভোরবেলায়। হোটেল কর্তৃপক্ষ এবারে যে গাড়ি ও সারথিটিকে জুটিয়ে দিয়েছিলেন, দুজনেই অতীব নির্ভরযোগ্য। বারাণসী থেকে এলাহাবাদ ১২১ কিলোমিটার, সময় লাগলো তিন ঘণ্টা। প্রথমেই প্রয়াগ সঙ্গম।

গঙ্গা, যমুনা, ও অন্তঃসলিলা কল্পিতা সরস্বতীর সঙ্গমস্থলে প্রয়াগ সঙ্গম। সমুদ্র মন্থনে উত্থিত লক্ষ্মী পেলেন নারায়ণ; রম্ভা, মেনকা, ঊর্বশী গেলেন দেবলোকে, সুরাদেবী গেলেন অসুরদের দিকে। কামধেনু পেলেন বিষ্ণু, ঐরাবত পেলেন ইন্দ্র আর উচ্চৈঃশ্রবাঃ পেলেন অসুররা। কৌস্তুভ নিলেন বিষ্ণু, পারিজাত গেল দেবলোকে, আর চন্দ্র গেল শিবের জটায়। অসুরেরা একজোট হয়ে সুধার কলসি নিয়ে নিলো। ইতোমধ্যে নারায়ণ মহিলা সেজে হাজির; সে রূপলাবণ্যে সবাই মোহিত। ঝগড়া থামিয়ে সবাই যখন সেই মোহিনী রূপ দেখতে ব্যস্ত, গরুড় এসে অমৃতের কলসি নিয়ে সোজা স্বর্গে। তবে অনেক দূরের পথ তো, বেচারা একনাগাড়ে উড়তে পারেনি; জিরিয়ে নেওয়ার জন্য চার জায়গায় দাঁড়াতে হল। কুম্ভ যতবার ভূমিস্পর্শ করে, অমৃত চলকে পড়ে মাটিতে। সেই জায়গা চারটের মধ্যে একটা সঙ্গম; তাই এখানে কুম্ভমেলা বসে। সেই মাহাত্ম্যে বিশ্বাস করে যুগযুগান্ত ধরে মানুষ ছুটে আসে অবগাহনে, পাপ ধুতে। প্রয়াগে মুড়িয়ে মাথা, মরগে পাপী যথা তথা। এইখানেই সপ্তম শতাব্দীতে রাজা হর্ষবর্ধন নাকি কুম্ভমেলায় সর্বস্ব দান করেছিলেন। আশ্চর্যের কিছু নেই, প্রয়াগ প্রাচীন কাল থেকেই 'মহাদানক্ষেত্র'। তবে কী না কে বলেছেন যে রাজা হর্ষবর্ধন কুম্ভমেলায় সর্বস্ব দান করেছিলেন? আজ্ঞে, বানভট্ট আর হিউয়েন সাঙ; দুজনেই হর্ষবর্ধনের অন্নদাস, প্রথমজন সভাকবি, আর দ্বিতীয়জন ৬৪৩ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যভাগে প্রভূত স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রাসহ স্বদেশের উদ্দেশ্যে গমন করেন। আমি ষাট বছরের জীবনে জ্ঞানত কোন পাপ করিনি, আর এই জলে স্নানের প্রশ্নই নেই। চুলকানি এমন একটি রোগ যার জন্য মানুষের সহানুভূতিও পাওয়া যায় না। তবে বাচস্পতি মিশ্র তার তীর্থচিন্তামণি গ্রন্থে অগস্ত্য মুনিকে উদ্ধৃত করে লিখেছেন গঙ্গোদক 'গণ্ডূষমাত্রপানেন অশ্বমেধফলম লভেৎ' – অর্থাৎ এক চুমুক গঙ্গাজলপানে অশ্বমেধযজ্ঞ সুষ্ঠভাবে নিষ্পন্ন করার সমপরিমাণ পুণ্য অর্জিত হয়। আমার ছোট ফ্ল্যাট, অত পুণ্য নিয়ে রাখবো কোথায়?

অনেক বছর আগে, সেই ১৯৮৩তে, এলাহাবাদ এসেছিলাম কন্ট্রোলার অফ ডিফেন্স একাউন্টস পেনসন-এর অফিসে এক সভায় যোগ দিতে। সেবারে সঙ্গমে স্নান করেছিলাম, পাঁচ লিটারের জ্যারিকেনে করে সঙ্গমের জল বাড়ি নিয়ে গিয়েছিলাম; আমাদের বাটানগরের বাড়ির ছাদ ঢালাইয়ের সময় সেই জল মিশিয়ে কাজ হয়েছিলো। ইতোমধ্যে কেটে গেছে অনেকগুলি বছর। জীবনদেবতা এতদিনে উল্টোডাঙার অটোওয়ালায় রূপান্তরিত; প্রতিনিয়ত তার হাতে অপমানিত লাঞ্ছিত ধিক্কৃত পর্যুদস্ত হতে হতে সেই বিশ্বাস সেই বোধ এর আর কিছুই বেঁচে নেই। শেয়ার নৌকা যাচ্ছে, তবে আমাদের ইচ্ছা আলাদা নৌকা। সারথি বললেন নেবেন না মশাই, মাঝনদীতে গিয়ে পূজোর নামে তোলাবাজি করবে। সম্রাট আকবরের কেল্লা নির্মাণের সময় নদীর ভাঙনে গাঁথনি টিঁকছিলো না। লোকে বললো নদীকে নরবলি না দিলে তার ক্রোধ শান্ত হবে না, সে বন্ধন স্বীকার করবে না। আকবর চিন্তিত হলেন; এক ব্রাহ্মণ স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে বলি হল, শর্ত এই যে তার বংশধরেরাই বংশপরম্পরায় প্রয়াগে পাণ্ডাগিরি করবে। তারাই এখন তোলাবাজি করছে। নদীকে বাঁধতে নরবলির এই গল্পগুলি সার্বজনীন, কালোত্তর – যার বিস্তৃতি সম্রাট আকবরের শাসনকাল থেকে ব্রিটিশ শাসনকাল। অবসরে রেলচর্চা করে থাকি, বিশেষত উপমহাদেশে রেলপথ বিস্তৃতির ইতিহাস ও তৎসংশ্লিষ্ট সামাজিক প্রেক্ষাপট ও পরিবর্তন নিয়ে। রেল নিয়ে চালু থাকা লোকগল্পগুলি আমাকে ভীষণ টানে, রেল নিয়ে জনচেতনা ও জনবিশ্বাসের নির্ভুল অভিজ্ঞান ওই গল্পগুলি। রূপনারায়ণ অথবা গোদাবরী, যেখানেই যাই গল্প শুনি কিভাবে এই নদীর উপর সেতু কিছুতেই দাঁড়াচ্ছিল না, একটি স্তম্ভ বারবার ভেঙ্গে পড়ছিল। অবশেষে সাহেবরা এক গরিব ব্রাহ্মণের ছেলেকে ধরে এনে বলি দিল; তার দেহ পুঁতল ওই থামের নিচে; তবেই তো সেতু দাঁড়ালো, লোহার গাড়ি চললো। ভিয়েনার সেই ইঞ্জিনিয়ার তরুণের কথা মনে আছে, যে বৃটিশদের সঙ্গে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ বানাতে এসেছিলো - আর সেই জলকুমারীর কথা, যাকে সে নিরন্তর খুঁজতো !

শ্রীমতী পাল নৌকার দরদাম করে মাঝিকে বললেন আমি হিন্দুঘরের মেয়ে, কিন্তু আমার স্বামীটি মুসলমান, যদিও গোরু খায় না। ব্যাস! নির্ঝঞ্ঝাটে সঙ্গম ভ্রমণ সারা। নৌকায় যমুনার সবজেটে জল বেয়ে অনেকখানি। হিন্দি সিনেমায় গঙ্গা সততই মা, কিন্তু যমুনা বাঈ। কেন আজ বুঝলাম। 'কোথায় পাবো হার কলসি কোথায় পাব দড়ি; তুমি হও যমুনা রাধে আমি ডুইব্যা মরি'।

সম্রাট জাহাঙ্গীরের সভাসদ জগন্নাথ পণ্ডিতরাজার গঙ্গালহরীতেই সম্ভবত প্রথম গঙ্গার মাতৃমূর্তির কল্পনা; তার আগে গঙ্গাকে কুমারী যুবতী ভাবা হতো। গঙ্গা যখন বারো বছর হিমালয়ে বদ্ধ হয়ে ছিলেন, মর্ত্যে নামার পথ পাচ্ছিলেন না, তখন দেওয়াল ভাঙতে ডাক পড়ে দেবরাজ ইন্দ্রের ঐরাবতের; তিনিও গঙ্গার রূপে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে কুপ্রস্তাব দিয়েছিলেন। আমরা সবাই মহাভারতের শান্তনু-গঙ্গার যে উপাখ্যান শুনি, তার শুরু স্বর্গে। রাজা মহাভিষা দিগবসনা গঙ্গাকে দেখে মুগ্ধ, গঙ্গাও অপলকে চেয়ে আছেন তাঁর দিকে – এই সব দেখেই না পিতামহ ব্রহ্মার ব্রহ্মতালু জ্বলে উঠলো; তাঁর অভিশাপে রাজা মহাভিষা মর্ত্যে জন্মালেন রাজা প্রতীপের পুত্র শান্তনু হয়ে। তারপর ইতিহাস।

কিছুটা যাওয়ার পর বাঁদিক থেকে গঙ্গা এসে যোগ দিলেন। তখন আমার মনে পড়লো, অনেক অনেক বছর আগে যখন বহরমপুরে থাকতাম, খাগড়ার লোকজনকে দেখতাম পালাপার্বণে গঙ্গাস্নান করতে গঙ্গা পেরিয়ে ওপারে নিয়াল্লিশপাড়া যাচ্ছেন, জিজ্ঞাসা করলে বলতেন খাগড়ার পাড়টি নাকি যমুনার পাড়, নিয়াল্লিশপাড়ার পাড়টি গঙ্গার। এদিকে ওদিকে প্রচুর পাখি, পরিযায়ী অতিখ্যাত সাইবেরিয়ান গালরা [Heuglin's gull or Siberian gull (Larus fuscus heuglini)] ইতোমধ্যেই পৌঁছে গেছে, পৌঁছে গেছে তাদের জ্ঞাতি পূর্ব সাইবেরিয়ান গালরাও [East Siberian gull(Larus vegae)]। মূলত এদের দেখতেই এবারে নভেম্বরে আসে। এছাড়া আমাদের দেশি প্রজাতি কালোমাথার নদী টার্ন [Indian river tern (Sterna aurantia)], বড় পানকৌড়ি [Oriental darter (Anhinga melanogaster)] আরও অনেক প্রজাতির পাখি এখানে ওখানে জলে ভাসছে, জল ঘেঁসে উড়ছে। কিছু ফেরিওয়ালা নৌকায় ঘুরে ঘুরে ছোট ছোট প্লাস্টিকের প্যাকেটে ঝুড়িভাজা বিক্রি করছেন; লোকে তাই কিনে পাখিদের খাওয়াচ্ছে; ওই পাখিরা নাকি অতীতে যাদের অস্থি সঙ্গমে বিসর্জিত হয়েছে তারাই। সাইবেরিয়ার পাখিদের বেসনভাজা খাইয়ে ফাঁকা প্যাকেটটি জলেই ফেলছেন, পাখিরা গিয়ে ঠোকরাচ্ছে – প্লাস্টিক জলে মিশছে, পাখিদের পেটে যাচ্ছে; মানুষ যে কী করে এতটা অসংবেদনশীল হতে পারে!

পরিবেশবিদরা সর্বদাই বন্য পশুপক্ষীকে খাওয়ানোর বিরুদ্ধে, কারণ এতে প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রের সূক্ষ্ম ভারসাম্য লঙ্ঘিত হয়। খাদ্যাণ্বেষণের স্বভাবজ পন্থা থেকে কাউকে বিচ্যুত করাটা কারো পক্ষেই ভাল নয়। আহার্য সংগ্রহে ঘোরাফেরা (foraging) সব প্রাণীরই একটি অতি প্রয়োজনীয় ব্যায়াম। সেটি না হওয়ায় এবং তাদের স্বাভাবিক খাদ্য ছেড়ে ক্রমশ মানুষের খাবারে অভ্যস্ত হয়ে পড়ায় তাদের অপুষ্টি বাড়ে, তারা পৃথুল হয়ে পড়ে, পরিণামে অসুস্থ পাখির সংখ্যা বাড়ে, আর তাদের মাধ্যমে রোগ ছড়ায়। একটি বিশেষ প্রজাতি মানুষের অনুগ্রহ পেলে তাদের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে প্রতিযোগীরা কোণঠাসা হয়ে পড়ে; সীমায়িত হয়ে পড়ে তাদের বাঁচার পরিসর; ঠিক যেমন মানুষঘেঁষা পথকুকুর নিয়ে কিছু মানুষের আদিখ্যেতা ক্রমেই নির্মূল করছে শিয়াল, খেঁকশিয়াল, ভাম, খাটাস, বনবেড়াল, বাঘরোল, দাঁড়াশ সাপ, প্রভৃতি প্রজাতিকে। আবেগ দিয়ে যে প্রকৃতি চলে না, সে চলে উদাসীন নির্মমতার নিজস্ব নিয়মে, সেটাই আমরা বুঝি না।

অবশেষে সঙ্গম, দুই নৌকার মাঝে পায়ের নিচে বাঁশের পাটাতন, লোহার শিকল ধরে নারীপুরুষ স্নান করছেন, নারকোল ভাসাচ্ছেন। দেখেশুনে নৌকা ঘুরিয়ে আমরা ফের ডাঙায়।

নদীর নাম হিসাবে যমুনা অতীব জনপ্রিয়। বাংলাদেশের প্রধান তিনটি নদীর একটি তথা ব্রহ্মপুত্র নদীর প্রধান শাখাটির নাম যমুনা। ইনি গোয়ালন্দের কাছে পদ্মায় মিশেছেন। আরেক যমুনা ভাগীরথী থেকে বেরিয়ে নদীয়া ও উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিতা হয়ে চারঘাটের কাছে ইছামতীতে পড়েছেন। ত্রিবেণী সপ্তগ্রামের বর্ণনায় পঞ্চদশ শতাব্দীর বিপ্রদাস পিপলাই লিখছেন, 'গঙ্গা আর সরস্বতী যমুনা বিশাল অতি, অধিষ্ঠান উমা মাহেশ্বরী'। কালক্রমে যমুনা 'যে নদী হারায়ে স্রোত চলিতে না পারে, সহস্র শৈবালদাম বাঁধে আসি তারে' - প্রবাহ হারিয়ে খালের আকারে গঙ্গাতে পড়েছে।

সঙ্গমের কাছে সিপাহি বিদ্রোহের স্মৃতিবিজড়িত আকবরের কেল্লা, মতান্তরে হিন্দুরাজার তৈরি, আকবর সংস্কার করেছিলেন। ২৩২ খ্রিস্টপূর্বাব্দের বেলেপাথরের অশোকস্তম্ভ এই দুর্গের অভ্যন্তরে। দুর্গের ভিতর পুরাতন মন্দির, তার পাশেই অক্ষয়বট। আকবর বাদশার সময় হিন্দুরা এই গাছে চড়ে গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়ে মরতেন। এর পূজা করলে নাকি অক্ষয় ফললাভ হয়; ফলে কয়েক জন্ম নিরাপদে নিশ্চিন্তে পাপ করা যেতে পারে। ১৯১০ সালে বটতলা থেকে মৎস্যপুরাণের গল্প নিয়ে প্রকাশিত হয় কেবলরাম চট্টোপাধ্যায় প্রণীত 'শ্রীপ্রয়াগ মাহাত্ম্য'। তদনুযায়ী ব্রহ্মা বিষ্ণু ও মহেশ্বর নাকি একবার একসঙ্গে প্রয়াগে বেড়াতে এসেছিলেন। তারপর তীর্থমাহাত্ম্যে আর ফিরতে পারেন নি, ব্রহ্মা রয়ে গেলেন চতুর্ভুজ বেণীমাধব হয়ে, বিষ্ণু রয়ে গেলেন শাল্মলীতরু (শিমূল Bombax ceiba) হয়ে, আর মহেশ্বর রয়ে গেলেন অক্ষয়বট (Ficus benghalensis) হয়ে। আমার আবার বৃক্ষপুজা দেখলেই, বিশেষত বনস্পতি বৃক্ষপুজা, বোধিবৃক্ষের বৌদ্ধ অনুষঙ্গ মনে পড়ে। এখানেও তেমনটি মনে হল। এই শাল্মলীতরু অক্ষয়বট কি তবে বৌদ্ধ উত্তরাধিকার! হিউয়েন সাঙও তাঁর বৃত্তান্তে জানাচ্ছেন যে প্রয়াগে তিনি প্রাচীন একটি 'নরখাদক' বটবৃক্ষ দেখেছিলেন। 'নরখাদক' কেন? কারন তিনি এই বৃক্ষের পাশের একটি মন্দিরে মানুষের হাড়-গোড় দেখেছিলেন। তবে হিউয়েন সাঙকে খুব একটা গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই, ভদ্রলোক প্রচুর উল্টোপাল্টা কথা লিখেছেন, যথা প্রয়াগকে তিনি বলেছেন বৌদ্ধ তীর্থক্ষেত্র। জৈন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস এই বটগাছের নীচেই তীর্থঙ্কর ঋষভদেব তপস্যা করেছিলেন।

পাশেই বড়াহনুমান মন্দিরে পবনপুত্র শুয়ে আছেন। বছরে একবার হলেও নাকি সঙ্গমের জল ফুলে উঠে পবনপুত্রের চরণ ধুইয়ে দেয়। আলোপীদেবী মন্দির কাছেই। সেখানে কোন মূর্তি নেই, আছে এক পালকি। আলোপী মানে নাকি অদৃশ্য। সতীর দেহ বিখণ্ডিকরণের শেষ খণ্ডটি নাকি এখানেই পড়েছিল, সম্পূর্ণ হয়েছিল তাঁর অদৃশ্যকরণ। মতান্তরে, বঙ্কিমচন্দ্রের ইন্দিরার মত এক নববধূ নির্জন রাস্তায় ডাকাতদের হাতে পড়েছিলেন। বেহারা সিপাইদের মেরে ডাকাতদল যখন পালকি খুলল, দেখা গেল ভিতরে কেউ নেই। সেই কুমারী নববধূর স্মারক এই মন্দির। কাছেই সম্প্রতি তৈরি ১৩০ ফুট উঁচু চারতলা শঙ্কর বিমানমণ্ডপম, তার বিভিন্নতলায় দেবদেবীরা বসে আছেন। বেণীমাধব মন্দির কাছেই, ছোট গলির ভিতরে। চৈতন্যদেব নাকি এখানে এসেছিলেন। এই মন্দির পঞ্চমাধবের অন্যতম। বাকিরা যথাক্রমে বারাণসী, থিরুভনন্থপুরম, রামেশ্বরম ও পিঠপুরমে।

নেহরু-গান্ধী পরিবারের বাসভবন আনন্দভবন এখন জাতীয় সংগ্রহশালা। পুরানো আনন্দভবন, যেখানে ইন্দিরা গান্ধী জন্মেছিলেন, সেটি এখন স্বরাজভবন নামে পরিচিত। কাছেই ভরদ্বাজ আশ্রম, রামচন্দ্র নাকি বনগমনের পথে এখানেই ভরদ্বাজ মুনির সঙ্গে দেখা করেছিলেন।

১৫৯৪ তে সম্রাট আকবর গুরুতর অসুস্থ হন; শুরু হয়ে যায় তার তিন পুত্রের মধ্যে – সেলিম, দ্যানিয়েল ও মুরাদ – ক্ষমতা দখলের লড়াই। আকবর সেরে ওঠেন, কিন্তু এই আভ্যন্তরীণ রেষারেষি, বিশেষত শাহজাদা সেলিমের অধৈর্য উচ্চাকাঙ্ক্ষা তার ভাল লাগেনি। মুঘল সম্রাটরা ব্রিটিশ রাজপরিবারের মত primogeniture পদ্ধতির, যেখানে সিংহাসন স্বাভাবিক নিয়মেই সর্বজ্যেষ্ঠের দখলে যায়, অনুসারী ছিলেন না। তারা মধ্য এসিয়ার প্রচলিত পদ্ধতি অনুসরণ করতেন, যেখানে সিংহাসনের ওপর রাজপরিবারের সকল প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ সদস্যদের সমান হক – মারপিট করে যে দখল করতে পারবে সিংহাসন তার। সম্রাট আকবর এই প্রথায় কিঞ্চিৎ পরিবর্তন ঘটিয়ে দখলদারির এই লড়াই থেকে ভাই-ভাইপোদের বাদ দিয়ে কেবলমাত্র পুত্রদের মধ্যে সীমায়িত করেন।

তাই সেরে উঠে শাহজাদা সেলিমকে জব্দ করতে তিনি এক অদ্ভুত পন্থা নিলেন। সেলিমের সাত বছর বয়স্ক পুত্র খসরুকে সভাসদ পদ দিলেন ও সদ্যবিজিত ওড়িশার রাজস্বের অংশভাক করলেন। খসরুর মামা মান সিংহ তখন বাংলার সুবেদার। তদুপরি প্রকাশ্য দরবারে সম্রাট আকবর ঘোষণা করলেন যে পুত্রদের চেয়ে পৌত্ররাই তার বেশি প্রিয়। মামা ভাগ্নের এই অক্ষ পরবর্তীকালে বিপদের কারণ হতে পারে, এই বিবেচনায় মেওয়ার থেকে ফিরে এবং রাজধানীতে সম্রাট আকবরের অনুপস্থিতির সুযোগে, সেলিম নিজেকে সম্রাট ঘোষণা করে দিলেন। এলাহাবাদে আকবরের দুর্গের পাশে তিনি নিজের দরবার বসিয়ে ফেললেন। আবুল ফজলকে হত্যার মত ঘৃণিত কাজ সত্ত্বেও, প্রধানত আকবরের মা হামিদা ও স্ত্রী সালিমার দৌত্যে আকবর ও সেলিমের সম্পর্ক কিছুটা সহজ হয়; না হয়ে উপায়ও ছিল না কারন আকবরের অপর দুই পুত্র, দ্যানিয়েল ও মুরাদ, ততদিনে রহস্যজনকভাবে মদে বিষক্রিয়ায় পরপারে। আকবর তবু নাকি চেয়েছিলেন ছেলেকে অতিক্রম করে নাতি খসরুকে সিংহাসনে বসাতে, কিন্তু সভাসদরা বললেন সেটা ভাল দেখায় না। ১৬০৫ এর অক্টোবরে সম্রাট আকবরের মৃত্যুর পর সিংহাসনে সেলিম। সেলিমের বড়ছেলে খুসরু মির্জা (১৫৮৭ – ১৬২২) পিতা সেলিমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে সিংহাসন দখলের চেষ্টা করেন। ব্যর্থ হন, ধরা পড়েন, এবং এক অভিনব শাস্তির মুখোমুখি হন। রাজসমারোহে হাতির পিঠে হাওদাতলে তিনি চাঁদনি চকে, পথের দুপাশে বন্দি তার সমর্থকরা, তিনি যখন যার নিকটবর্তী হন, তারই পেট কাটা পড়ে, নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে আসে; তারপর খুসরুকে অন্ধ করে দেওয়া হয়। তাতেও দুর্দশার শেষ হয় নি। ১৬১৬য় তিনি নূরজাহানের ভাইয়ের হাতে বন্দি, ১৬২০ তে খুররমের হাতে, তারপর আচমকা মৃত্যু, কিভাবে তা নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে মহাবিতর্ক।

জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর সময় খুররম দাক্ষিণাত্যে; নূরজাহানের জামাতা শাহ্‌রইয়ারের সম্রাট হওয়া আটকাতে খুররমের অন্যতম শ্বশুর ও নুরজাহানের ভ্রাতা আসফ খান খুসরুর পুত্র দাওয়ান বকশকে সিংহাসনে বসান। তারপর খুররম রাজধানীতে ফেরার আগেই তার নির্দেশে শাহ্‌রইয়ার ও দাওয়ান বকশ দুজনেই পিতৃদত্ত প্রাণটি হারান। খুসরু মির্জার মোগল স্থাপত্যরীতির বেলেপাথরের সমাধিসৌধ খসরু বাগ। তার পাশে শুয়ে তার মা, অম্বরের রাজকন্যা শাহ বেগম। বাগানটি অতীব বিস্তৃত ও সযত্নলালিত।

কল্যাণী দেবী মন্দির ও ললিতা দেবী মন্দির উভয়েই দাবি করেন তারা একান্নপীঠের অন্যতম। গঙ্গাতীরবর্তী শিবকুটিতে শিবের নিবাস তথা অফিস (কাছারি), অনেকটা আমাদের দক্ষিণ ২৪ পরগনার ছোট কাছারি বড় কাছারির মতন। বনবাসের পথে রামচন্দ্র এখানেই শিবপূজা করেছিলেন। মন্দিরটি ছোট।

ত্রয়োদশ শতকের গথিক স্থাপত্যের আদলে অল সেন্টস চার্চ তৈরি হয়েছিল উনবিংশ শতকের শেষের দিকে, লোকমুখে এখন তা পত্থর কি গির্জা। এটি সেই সমস্ত মানুষের স্মরণে নিবেদিত যাঁরা ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখেন। স্যার উইলিয়াম এমারসন দ্বারা পরিকল্পিত এটি; কলকাতার ভিক্তোরিয়াও তার পরিকল্পনা। সেন্ট জোসেফস ক্যাথিড্রাল ইতালিয়ান স্থাপত্যের রোমান ক্যাথলিক চার্চ। সরস্বতী ঘাট যমুনার ওপর, পাশেই মনকামেশ্বর শিবের মন্দির। ২০০৪ এ নির্মিত যমুনার ওপর নতুন সেতু ভারতের দীর্ঘতম ঝোলানো সেতু, এলাহাবাদের সঙ্গে জুড়েছে নৈনিকে। শহরের কেন্দ্রে ঘড়ি ঘর।
কট বলে একটা ঢিপি, দেখলেই মনে হয় বল্লাল ঢিপি, বা সখিসোনার ঢিপি, বা রাক্ষসীডাঙার ঢিপি। সেখানেই সমুদ্র কূপ, সেটা নাকি সমুদ্রগুপ্তের সময়কার, এখন আশ্রম। পাশেই উলটা কিলা, এক সুফি সাধক বাবাকে শাসক হেনস্থার চেষ্টা করেছিল, বাবা রেগে পুরো দুর্গটাকেই উলটে দিয়েছিলেন।

সিভিল লাইনে হনুমান নিকেতন অনেকখানি জায়গা জুড়ে। মন্দিরের এক দিকে হনুমান, রাম সীতা লক্ষ্মণ আর দুর্গা, অন্যদিকে সূর্য গণেশ উমা মহেশ্বর লক্ষ্মী নারায়ণ আর গরুড়। মধ্যিখানে দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ।

পঞ্চম দিন
শহরের উপকণ্ঠে রেললাইন পেরিয়ে বারাণসী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় রোডের ওপর ডিজেল লোকোমেটিভ ওয়ার্কস, বারাণসী। ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থা ১৯৬৪র জানুয়ারিতে তাদের প্রথম ডিজেল ALCO লোকোটি তৈরি করেন। উচ্চ অশ্বশক্তির ডিজেল লোকোর পাশাপাশি এনারা প্রথম বৈদ্যুতিক লোকো WAP 7 তৈরি করেন ২০১৭র ফেব্রুয়ারিতে। ২০১৯ এর ফেব্রুয়ারিতে এনাদের শততম বৈদ্যুতিক লোকো WAP 7 তৈরি হয়। ভারতীয় রেল ছাড়াও নেপাল, বাংলাদেশ, মালি, সেনেগাল, শ্রীলঙ্কা, সুদান, তানজানিয়া, এঙ্গোলা, ভিয়েতনামে এঁরা লোকো পাঠান।

সাহস করে গিয়ে পড়লাম। গেটে বললাম ঢুকে দেখতে চাই। তারা ফোনে ধরিয়ে দিলেন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। অনুমতি পাওয়া গেল।

দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, বারাণসী থেকে কলকাতায় ফেরার কোন ভাল রেলগাড়ি নেই। বারাণসী থেকেই ছেড়ে কলকাতায় আসে একটি মাত্র রেলগাড়ি, ১৩১৩৪ বারাণসী শিয়ালদহ এক্সপ্রেস; তার সময় লাগে সোয়া ছাব্বিশ ঘণ্টা। ২০০৩ এর সেপ্টেম্বরে বিভূতি এক্সপ্রেস চালু হতে আমরা খুব আনন্দিত হয়েছিলাম; কিন্তু সে আনন্দ ছিল স্বল্পস্থায়ী, এলাহাবাদ অবধি সম্প্রসারিত হয়ে তার জাত গিয়েছে, বারাণসী থেকে সময় নেয় প্রায় চোদ্দ ঘণ্টা, প্রায়শই সেটা বেড়ে দাঁড়ায় ষোল সতের ঘণ্টায়, তারপর মোকামা পেরনোর আগেই তার জল ফুরিয়ে যায়। অপরাপর রেলগাড়িগুলি আসছে অনেক দূর থেকে, সেই অমৃতসর বা দেরাদুন, জম্মু বা জয়সলমীর থেকে, তাতে মধ্যবর্তী স্টেশনের বরাদ্দ কোটা খুব কম; তাছাড়া তাদের দেরি করার সম্ভাবনাও বেশি। আমার সাধের ১২৩৮২ পূর্বা এক্সপ্রেস বারাণসী ঢোকে ভোর পাঁচটায়। ধরতে হলে আমাকে আগের দিন রাতে স্টেশনে এসে শুয়ে থাকতে হয়। আমার অনেকদিনের শখ, হাওড়া বারাণসী হাওড়া একটা দুরন্ত চালাবো, উভয়দিকেই রাত আটটায় ছেড়ে সে গন্তব্যে পৌঁছাবে ভোর পাঁচটায়; পথিমধ্যে থামবে শুধু ধানবাদ, গয়া, আর মুঘলসরাইয়ে।

তাই ফেরার পথে উড়োজাহাজই ভরসা, বিকেল পৌনে সাতটায় স্পাইসজেট, সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় ইন্দিগো, মধ্যরাত্রে আবার ইন্দিগো। প্রথম উড়ানটি ছোট উড়োজাহাজে; আটাত্তর আসনের কিউ ৪০০ বম্বারদিয়ার দ্যাশ আট; দ্বিতীয়টি এয়ারবাস এ ৩২০, আর তৃতীয়টি চুয়াত্তর আসনের এটিআর ৭২। আগে কখনও এটিআর ৭২ এ চড়া হয়ে ওঠে নি, তাই ইচ্ছা ছিল। কিন্তু ভ্রাতা বলিলেন যে এয়ারবাস এ ৩২০ যখন আছে তখন অ্যাডভেঞ্চারের লোভে আধ ঘণ্টা বেশি সময় দিয়ে ডানায় টেবিলফ্যান সাঁটা উড়োজাহাজে চড়ার কোন মানে হয় না; বিশেষত শীতের রাতে – যখন উত্তরবায় একতারা তার তীব্র নিখাদে দিবে ঝংকার, শিথিল যা ছিল তারে ঝরাইবে, যাইবে তারে দলি দলি। শ্রীমতী পালও দেখলাম তাতে সায় দিলেন।

তাই এবারে আমাদের যাত্রা ৬ই ৭১৬ বারাণসী ১৯৩০, কলকাতা ২০৫০। উড়োজাহাজ এয়ারবাস এ ৩২০। সকাল থেকে চক, বিশ্বনাথ গলি, থাথেরি বাজার, গোধুলিয়া, দশাশ্বমেধ গলি ঘুরেঘারে কিঞ্চিৎ কেনাকাটা হল। শাড়ি না কিনলেও কাঠের খেলনা, ধর্মীয় মোটিফসহ ধাতব গহনা, মির্জাপুরি কার্পেট, কাচের চুড়ি, গোলাপি মিনাকাজের বাসন (গোলাপি মিনাকাজ শুধু বারাণসীতেই হয়), এবং লাল পেঁড়া। তারপর খেয়ে উঠে বারান্দায় বসে বসে গঙ্গা দেখছিলাম, ডাইনে ত্রিপুরাসুন্দরী মানমন্দির দশাশ্বমেধ... কিঞ্চিৎ ভাতঘুমও ধরেছিলো। আমি যেন দেখলাম একটা বছর চোদ্দ পনেরোর কালো হাফপ্যান্ট আর স্যান্ডো গেঞ্জি পরা টিঙটিঙে রোগা ছেলে এক ঘাট থেকে অন্য ঘাট ধরে হেঁটে হেঁটে এদিকপানে আসছে। কাছাকাছি হতে চিনতে পারলাম; ওটি ছেচল্লিশ বছর আগের আমি; কোথাও ইথারে হয়তো ছাপ রয়ে গিয়েছিল, এত বছর ধরে রয়ে গেছে। আশ্বস্ত হলাম। যাক, আমি যখন থাকব না তখনও তাহলে আমি রয়ে যাব এখানেই কোথাও, গঙ্গার হাওয়া খাব, বিশ্বনাথ গলির পেঁড়া খাব, লোককে ডেকে ডেকে বলব - দিনের পথিক মনে রেখো, আমি চলেছিলেম রাতে সন্ধ্যাপ্রদীপ নিয়ে হাতে। যখন আমার ও-পার থেকে গেল ডেকে, ভেসেছিলেম ভাঙা ভেলায়...

বাক্স প্যাঁটরা গুছিয়ে এবার হোটেল থেকে বিদায় নেবার পালা। মালিককে জড়িয়ে ধরে বললাম ভাই রে! বেঁচে থাকলে সামনের দীপাবলিতে ফের জ্বালাতে আসবো! সে আমাদের দুজনের 'লম্বি পর্মায়ু' কামনা করে বলল, তোমরা আর কী জ্বালাও গো! তুমি তো অবসর নিয়েছো, একমাস আমার হোটেলে ম্যানেজারি করো। তোমারও কাশীবাসের পুণ্য হবে, আমার একটু সুরাহা হবে; জানোই তো! কাশী শুধু ভারতের বাইরে তাই নয়, পৃথিবীরও বাইরে - মহাদেবের ত্রিশুলের ডগায় তার অবস্থান। এখানে এসে থাকলে বুঝবে অতিথিদের কত ম্যাও আমাদের সামলাতে হয়।

লালবাহাদুর শাস্ত্রী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (IATA: VNS, ICAO: VIBN); পথ পঁচিশ কিলোমিটার। তখন ঘড়িতে ছটা, আকাশে তখনও রোদ্দুর। বিমানবন্দরটি আন্তর্জাতিক হলেও খুব একটা বড় নয়, ২৭৪৫ মিটারের একটিই রানওয়ে, ষোলটি চেক ইন জানালা।
আমাদের উড়োজাহাজ VT IEC এলেন কিঞ্চিৎ দেরি করে, আমাদের নিয়ে উড়লেন, এবং দমদমে নামিয়েও দিলেন। তারপর বাড়ি।

পুনঃ অনেকেই বেড়াতে যাওয়ার আগে সম্ভাব্য খরচের একটি ধারণা পেতে চান। তাদের জ্ঞাতার্থে জানাই, রেলভাড়া ১৬৯৫, এরোপ্লেন ভাড়া ৫৪০৮, হোটেলভাড়া ২২,৮০০, খাইখরচ চা মিনেরাল ওয়াটার লস্যি ৭,০০০। গাড়ি ও নৌকা ভাড়া ১১,২৫৫। কেনাকাটা ও পূজার খরচের তো কোনও উর্দ্ধসীমা হয় না।

কৃতজ্ঞতাঃ
১। https://www.wikipedia.org/
২। Tuzuk-e-Jahangiri: Translated by Rogers, Alexander. London: Royal Asiatic Society. 1909
৩। The Princes of the Mughal Empire. Munis D Faruqui. 1504 – 1719. Cambridge University Press. 2012
৪। https://varanasi.nic.in/
৫। www.uptourism.gov.in/
৬। Thornton, Edward (1858). A Gazetteer of the Territories Under the Government of the East India Company and of the Native States on the Continent of India (Public domain ed.). W. H. Allen.
৭। A Hand-Book of Benares Arthur Parker Creative Media Partners, LLC, 2015
৮। Śākta Contribution to Varanasi Ramesh Chandra Sharma, Pranati Ghosal Jñāna-Pravāha Centre for Cultural Studies and Research
৯। Banaras City of Light Diana L. Eck
১০। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় (১২ই সেপ্টেম্বর, ১৮৯৪ - ১লা সেপ্টেম্বর, ১৯৫০)
১১। সত্যজিৎ রায় (২ মে, ১৯২১ – ২৩ এপ্রিল, ১৯৯২)
১২। নারায়ণ সান্যাল (২৬ এপ্রিল ১৯২৪ - ৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৫)
১৩। Hymns of Guru Nanak by Khushwant Singh (Author), Arpita Singh (Illustrator), K. Singh (Translator) Published 1997 by Orient BlackSwan ISBN 8125011617 (ISBN13: 9788125011613)
১৪। The Man-eating Leopard of Rudraprayag, Jim Corbett, Oxford University Press, ISBN 0-19-562256-1
১৫। পিতৃবন্ধু, শ্যামনগর বালিকা বিদ্যালয়ের সত্তরের দশকের ইংরিজি শিক্ষক, সুকুমার সার, যাঁর মুখে প্রথমবার বারাণসীর কথা শুনেছিলাম।
১৬। নগুয়েন ফাম ডিঙ। জানিনা নামটা ঠিক লিখলাম কি না। ভিয়েতনামি পর্যটক। অশিক্ষিত পটুত্বে মহাযান বৌদ্ধধর্ম নিয়ে তার সঙ্গে বিস্তর বকবক করলাম সারনাথে।
১৭। আমাদের সারথি লালবাহাদুর
১৮। আমাদের বারাণসীর দাঁড়িমাঝি আকাশ
১৯। আমাদের এলাহাবাদের দাঁড়িমাঝি ভরত

- সমাপ্ত -

~ বারাণসীর আরও ছবি ~

হিসাবশাস্ত্রের স্নাতকোত্তর শ্রী তপন পাল West Bengal Audit & Accounts Service থেকে অবসর নিয়েছেন সম্প্রতি। তাঁর উৎসাহের মূলক্ষেত্র রেল - বিশেষত রেলের ইতিহাস ও রেলের অর্থনীতি। সেবিষয়ে লেখালেখি সবই ইংরাজিতে। পাশাপাশি সাপ নিয়েও তাঁর উৎসাহ ও চর্চা। বোম্বে ন্যাচারাল হিস্ট্রি সোসাইটি এবং ইন্ডিয়ান রেলওয়ে ফ্যান ক্লাবের সদস্য শ্রী পালের বাংলায় ভ্রমণকাহিনি লেখালেখির প্রেরণা 'আমাদের ছুটি'। স্বল্পদূরত্বের দিনান্তভ্রমণ শ্রী পালের শখ; কারণ 'একলা লোককে হোটেল ঘর দেয় না।'

 

SocialTwist Tell-a-Friend
 

To view this site correctly, please click here to download the Bangla Font and copy it to your c:\windows\Fonts directory.

For any queries/complaints, please contact admin@amaderchhuti.com
Best viewed in FF or IE at a resolution of 1024x768 or higher