ভাঙা মন্দিরের দেশ কাম্বোডিয়া

মলয় সরকার


~ পূর্বপ্রকাশিতের পর ~

পরদিন সকালে একবার বেরিয়ে পাব স্ট্রিটের আশেপাশে ঘুরে অল্প কিছু গিফট কিনলাম। ভাল বা নতুন কিছু নেই। সব চিনা জিনিস, সব জায়গাতে যেমন হয়।
এবার মেকং এক্সপ্রেস-এর বাসে চললাম বাটাম্বাং। বাসটি সুন্দর। বেশ পরিচ্ছন্ন ও আরামদায়ক। শহর ছাড়িয়ে বেরোতেই সুন্দর রাস্তা। দুধারে সেই আগের মতোই, একই গ্রাম্য দৃশ্য – ধান খেত, পুকুর আর ছোট বড় গ্রামীণ ঘরবাড়ি, ঠিক যেন ভারতবর্ষ। রাস্তায় এক জায়গায় বাস দাঁড়াল চা খাওয়ার জন্য। এখানে চা খাওয়ার পরেই হঠাৎ এমন বৃষ্টি এল যে আর বাসে ওঠার জন্য যেতে পারছিলাম না । আমাদের এই দুরবস্থা দেখে দোকানের এক কাম্বোডিয়ান সুন্দরী এগিয়ে এল এক বিশাল ছাতা নিয়ে। এই স্বল্প পথটুকু পার করে বাসে তুলে দিয়ে গেল। ছোট ছোট কথা, ছোট ব্যবহার অনেক সময়ই মনে দীর্ঘ রেখাপাত করে। সেইরকম এইটুকু আতিথেয়তা মনে সুগভীর দাগ রেখে গেল।
হাইওয়ে ছাড়িয়ে অন্য রাস্তাতে ঢুকলে অবশ্য এখানকার রাস্তা আর ওখানের রাস্তায় কোন প্রভেদ নেই। বাস বিকেল বিকেলই পৌঁছে গেল বাটাম্বাং-এ। আগে থেকে বলা ছিল হোটেলে। ওরা টুকটুক পাঠিয়ে দিয়েছে। নাম লেখা কার্ড নিয়ে সে দাঁড়িয়ে রয়েছে বাস থেকেই দেখলাম। আরও অন্য টুকটুকওয়ালারাও ভিড় করেছে বিভিন্ন হোটেলের নাম লেখা কার্ড নিয়ে।
হোটেলের নাম, পর ছে। নতুন হোটেল। মালিক ছেলেটিও কমবয়সী আর ভীষণ বিনয়ী। নাম চিয়াংসং। বলল, সে ইংরেজি খুব কম বোঝে। হোটেলে লোকজনও খুব বেশি দেখলাম না। চিয়াং বলল, নতুন খুলেছি তো, তাই এখনও বেশি প্রচার পায়নি। আস্তে আস্তে হচ্ছে। তাই বেশি লোকজনও রাখিনি। নিজেই সব করি। শুধু ঘর পরিষ্কার করার আর কাপড় কাচার দু-একজন আছে। যা লাগবে বলবেন আমি সবটাই দেখব। ওর ফোন নম্বরও দিল। বলল, এখানে সন্ধ্যায় তাড়াতাড়ি সব হোটেল, দোকান বন্ধ হয়ে যায়। তার আগে আপনাদের ভাল হোটেলে খাওয়ার জন্য নিয়ে যাব।
ঘরটা ভালোই, দোতলায়। সত্যিই নতুন। সাড়ে সাতটায় চিয়াং ওর গাড়ি করে একটা হোটেলে নিয়ে গেল। সেটাতে জানাল খাবার শেষ। অন্য একটা হোটেলে খেয়ে ফিরলাম। সেখানে হোটেলের মালিক তো 'জো হুজুর' ভঙ্গীতে হাত জোড় করেই আছে। সবটাই থাই আর কাম্বোডিয়ান খাবার।
পরদিন সকালে টুকটুক নিয়ে একটি ছেলে হাজির। ছেলেটির নাম বায়ান, খুব হাসিমুখ আর চটপটে ছেলে। প্রথমেই নিয়ে গেল এখানকার জন্য একটা সিম কার্ডের ব্যবস্থা করতে। একটা দোকানে এক ডলারে এক সপ্তাহ কল আর ডাটা দিচ্ছে। নিয়ে নেওয়া গেল। শহরের মাঝখানটা ভালই, একটা পার্কের মতন রয়েছে সিটি সেন্টারে।

একটি খালের মত ছোট নদী বয়ে গেছে শহরের মাঝ দিয়ে। নাম সাংকেই। রক্তাভ লাল জল এবং বেশ খরস্রোতা । নদীর পাড় বাঁধানো এবং দুপাশেই লোকের শরীর চর্চার মতো ব্যবস্থা রয়েছে। সিটি সেন্টারের কাছটা বেশ সুন্দর দোকানপাট ইত্যাদি। রাস্তায় আসতে আসতে যেটা বেশ বেশি করে চোখে পড়ল, কাম্বোডিয়ান পিপলস পার্টির খুব রমরমা। বিশাল বিশাল জায়গা নিয়ে ঝাঁচকচকে অফিস। শহরের বাইরেটা নরেন্দ্রপুর কী সোনারপুরের মত অনেকটা। বায়ান প্রথমে নিয়ে গেল একটা বেশ অজ পাড়াগাঁয়ের মত জায়গায়। সেখানে একটা পরিত্যক্ত রেললাইন রয়েছে। তবে ভাল অবস্থায়। সেখানে দেখি, রেললাইনের ওপর চারটে চাকা দেওয়া একটা ট্রলিতে বাঁশের পাটাতন বিছানো রয়েছে। সঙ্গে একটি মোটর লাগানো রয়েছে। কিছু মাঝবয়সী ছেলে সেটিকে চালাচ্ছে। আমি বুঝতে পারলাম না এটাতে দেখার কী আছে! এটার নাম নাকি 'ব্যাম্বু ট্রেন'।

আমি খড়্গপুরের রেল কলোনিতে মানুষ। ছেলেবেলায় এরকম ট্রলি অনেক দেখেছি এবং চেপেছি। এতে বোধ হয় সাত ডলার করে ভাড়া। ওরা ওই বাঁশের পাটাতনের ওপর বসিয়ে ৬ বা ৭ কিমি নিয়ে যাবে আবার নিয়ে আসবে। এরকম একটা গ্রাম্য ছেলেখেলা একটা জায়গার, বিদেশিদের এনে দেখানোর মতো কী আছে! ইচ্ছে হল না চাপার। ১৯৭৯ সালে একটা দেশ স্বাধীনতা পেয়েছে আর আজ চল্লিশ বছর পরেও বিশেষ উন্নতি করেছে বলে মনে হল না। আমার কিন্তু সব সময়েই নিজের দেশের কথা মনে হচ্ছিল যে আমরা নিজেরা স্বাধীনতার বাহাত্তর বছর পরেও কী এমন উন্নতি করেছি যে অন্য দেশের সমালোচনা করতে পারি।
এর পর গেলাম একটি খামারে যেখানে কুমীর চাষ হয়। ২ ডলার মাথাপিছু টিকিট নিল। কুমীরের ডিম ফোটানো থেকে শুরু করে বড় কুমীর পর্যন্ত এখানে রাখা রয়েছে। একটি গামলায় অনেকগুলো কয়েকদিন আগে ডিম ফোটা বাচ্চা রয়েছে।

তদারককারী মেয়েটি হাতে তুলে নিয়ে বাচ্চাগুলো দেখাচ্ছিল কী করে বালির নিচে ওরা ডিম রাখে। এখানে ঢোকার আগে বাইরে দেখেছিলাম কুমীরের ডিমের খোলার পাহাড়। কথায় কথায় বুঝলাম ওরা মালিক নয়, মালিক অন্য জায়গায় থাকে। এরা সব দেখাশোনা করার জন্য বেতনভুক কর্মী। এখানে প্রায় শদুয়েক এরকম খামার আছে। এখানে কেউ কুমীর খায় না, মারেও না। এগুলো চালান যায় ভিয়েতনাম, থাইল্যাণ্ড, চিন প্রভৃতি দেশে। যেখানে কুমীরগুলো রাখা আছে তা খুব পরিচ্ছন্ন নয়। বেশ কয়েকটি বড় বড় চৌবাচ্চায় মোট বোধ হয় দু-তিনশো কুমীর নোংরা অল্প জলে গাদাগাদি করে মরার মতো পড়ে আছে।

রেলিংবিহীন সরু, দেখার জন্য যে জায়গা করা আছে তার ওপর দাঁড়িয়ে ভয়ই লাগছিল যেকোনো মুহূর্তে একটু পা পিছলে পড়ে গেলেই বুভুক্ষু কুমীরদের খাদ্য হতে সময় লাগবে না। কুমীরদের এরা মাসে তিনবার খাবার দেয়। বাইরে কুমীরের চামড়া আর মাংসের নাকি খুব কদর। আমাদের দেশেও বেশ কয়েকটি কুমীর প্রকল্প আছে।
এখান থেকে গেলাম ওয়াট এক নম-এ। এটি একাদশ- দ্বাদশ শতাব্দীতে তৈরি, মূল প্রাচীন মন্দিরটি ধ্বংসস্তুপে পরিণত।

একটি নতুন মন্দির তৈরি হয়েছে সামনে। এটি ইন্দোচিন বৌদ্ধ স্থাপত্যের। পুরনো মন্দিরটি প্রায় আংকোরভাটের সমসাময়িক। এখানে উঠে দেখা গেল না। সেটি কিন্তু একটি হিন্দু মন্দির। আজ অনেকখানিই ধ্বংসস্তুপে পরিণত। অল্প কিছু অস্তিত্ব বাকি আছে যা দেখে প্রাচীনত্ব অনুমান করা যায়।

এর পাশেই রয়েছে এক বিশাল বুদ্ধমূর্তি, কিন্তু যত্নের অভাবে বিবর্ণ। এখানে দেখলাম বৃষ্টির জল ধরে রাখা ও তাদের পুনর্ব্যবহারের জন্য বিশাল বিশাল জালা এবং ট্যাঙ্কের ব্যবস্থা। এর সামনেই আছে একটা দীঘি যা পদ্মফুলে ভর্তি, তবে চিনে যেমন পদ্মফুল দেখেছিলাম অত বড় নয়। এই মন্দিরটি একাদশ শতাব্দীতে তৈরি, কিন্তু মাত্র নশো বছরের মধ্যে অবহেলিত থাকার জন্য কিভাবে একটা কীর্তি নষ্ট হতে পারে তার চরম নিদর্শন। অবশ্য শুধু এটা কেন সিয়েম রিপের বেশির ভাগ মন্দিরই তো তাই। বুদ্ধমূর্তিটি দেখে মনে হচ্ছে, এটি একটি ঘরের মাথায় বসানো।

এখান থেকে মাঠের ধার দিয়ে গেলাম চারিদিকে সবুজের মধ্যে দিয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলা দৃশ্য দেখতে দেখতে পৌঁছে গেলাম ওয়াট সামরুং নং বা চালু কথায় 'কিলিং ফিল্ড'-এ। এখানে একটি বৌদ্ধমন্দির আছে যা সাধারণত পালা-পার্বণে খোলে। এটি ১৭০৭ সালে চফা বেন নামে এক বৌদ্ধ সন্ন্যাসী স্থাপন করেন ধর্মচর্চা করার জন্য। তারপর ১৮৮৭ সালে তুদং চে নামে এক সন্ন্যাসী সমস্ত মৃত সন্ন্যাসীদের অস্থির ওপর পাশেই একটি ইটের স্তুপ বানান।

এরপর ১৯৭৫ সালের ১৫ এপ্রিল কাম্বোডিয়ার জীবনে এক ভয়ংকর অভিশপ্ত অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল। খমের রুজ সরকার দখল নিয়েছিল দেশের। তারা ১৯৭৬ সালে এই ধর্মচর্চার শান্ত জায়গাকে বেছে নিয়েছিল জেলখানা বানানোর জন্য। উপাসনার স্থানগুলি পরিবর্তিত হয়েছিল শিশু ও নারীদের জেলখানা হিসাবে। বিচার ও হত্যা চলেছিল নির্বিবাদে। হিসাব বলছে প্রায় ১০,৪০০ নারীপুরুষ ও শিশুকে হত্যা করা হয়েছিল এখানে। পরবর্তীকালে ১৯৭৯ সালে এই রাজত্ব শেষ হলে তখন যা দেহাবশেষ পাওয়া যায় তা মানুষকে দেখানোর জন্য রাখা হয়। সে জায়গাটির নাম 'দি ওয়েল অফ শ্যাডোস'। সেখানে শুধু মাথার খুলি আর অস্থি ভর্তি। দেখে ও তার বর্ণনা পড়ে গা শিউরে উঠছিল।

আজ সেই স্মৃতি সৌধের গায়ে লেখা আছে, 'ব্যক্তিগত ভাবে খুঁজে পাওয়া যায়নি কে বা কারা এটা করেছিল। তাই কাউকে আলাদা ভাবে শাস্তি দেওয়া যায়নি। আজ আর সেকথা ভেবে লাভ নেই। বরং যত তাড়াতাড়ি সে সব কথা ভুলে নতুন কাম্বোডিয়া গড়া যায় তার চেষ্টাই করা হোক।'

জানিনা এটাই ঠিক, নাকি হিটলারের নাৎসি বাহিনির সঙ্গে যুক্ত ছিল যারা তাদের শেষ জীবিত মানুষকেও শাস্তি দেওয়ার প্রচেষ্টা, কিংবা বাংলাদেশে সেদিনের যারা রাজাকার ছিল তাদের ফাঁসি দেওয়া কোনটা ঠিক। অবশ্য বৌদ্ধধর্মে ক্ষমারই বেশি আধিক্য। তাই সেই দর্শন অনুযায়ী হয়ত এটাই ঠিক।

এখান থেকে একটা রক্তাক্ত স্মৃতি নিয়ে চললাম টুকটুকে চেপে গ্রামীণ রাস্তার ধার দিয়ে, এ বাড়ির পাশ দিয়ে ও বাড়ির বাগান ছুঁয়ে গ্রামের হাফপ্যান্ট পরা ছেলেদের খেলা দেখতে দেখতে। তারপর বায়ান নিয়ে গিয়ে হাজির করল একটা বাড়িতে, আমাদের দেশের, বিশেষ করে আসামের গ্রামের বাড়ি যেমন হয় সেরকম। মোটেই কেতাদুরস্ত বা ঝাঁ-চকচকে নয়। সেখানে ওদের ঘরোয়া কায়দার চালের পাঁপড় তৈরি হচ্ছে কেমন করে সেটা দেখাতে। এই চালের পাঁপড় ওরা সবজি বা মাছ কী মাংস মুড়ে রোল করে খায়। দেখলাম ঘরোয়া মেয়েদের হাতের কেরামতি। মেশিনপত্তর বিশেষ কিছু নেই সবটাই হাতে তৈরি।
সারথি তার রথে চড়িয়ে চষা মাঠের ধার দিয়ে, গ্রামের মেঠো পথের পাশ দিয়ে নিয়ে গেল এক ওয়াইনারিতে, ছোট্ট মদ তৈরির কারখানা। এদের নিজেদের আঙুর গাছগুলি এখন ছাঁটছে। এখানে অন্য জায়গা থেকেও আঙুর আসে। একটা ছোট কাউন্টারে এখানে তৈরি সামগ্রী সব বিক্রী হচ্ছে। এগুলো দর্শনীয় হিসাবে এতই নগণ্য যে দেখতে আগ্রহ হচ্ছিল না। তবু, ভাবছিলাম, সবই দেখা উচিত। কারণ এই গরীব দেশের যদি আর কিছু না থাকে সেটা তো ওদের দোষ নয়। ওরা অতিথিকে ওদের সম্পদ যা ওরা ভাল মনে করে তাই দেখাচ্ছে। তবে তাতে তো ওদের লজ্জা নেই। সেই ছেলেবেলার কবিতার লাইনটা মনে পড়ল, 'সজ্জাহীনের লজ্জা নাইকো, দারিদ্র্যে নাই ভয়'।
এখান থেকে যাওয়া হল ওয়াট বানান-এ। এটি একটি খুব প্রাচীন বুদ্ধ মন্দির এবং অনেক উঁচু পাহাড়ের ওপর। নিচের থেকে সিঁড়ি উঠে গেছে ওপরের দিকে। প্রায় তিনশো সিঁড়ি আছে এখানে।

সিঁড়ির শুরুতে যেমন সব জায়গায় থাকে, রেলিং-এর মুখে দুটি নাগের মাথা রয়েছে। আর সামনেই রয়েছে একটি ঝিল। তার মধ্যে অনেকগুলি খুঁটির ওপর বাড়ি আছে। তাদের ছেলেমেয়েরা ও লোকজন সব ঝিলের মধ্যে ছোট ছোট নৌকো করে যাতায়াত করছে, যেমনটি করে কাশ্মীরের ডাল লেকে। মন্দিরটি যথেষ্ট বড় এবং বেশ প্রসিদ্ধ। এটি তৈরি করেছিলেন একাদশ শতাব্দীতে রাজা সপ্তম জারবর্মন। এর কারুকার্য ও বিশালতা সত্যিই দর্শনীয়। নিচে, সিঁড়িতে ওঠার মুখে খেলাম সেই বিশাল বড় ডাব যা একটা খেলেই পেট ভরে যায়। কী তার স্বাদ, কত জল আর কী সুন্দর শাঁস – মুখে লেগে আছে।
পরদিন গেলাম ব্যাট কেভ দেখতে। দূরে সবুজ পাহাড় দেখা যাচ্ছে। তার আগে আ-পাহাড় বিস্তৃত সবুজ গালিচার মত ধানের জমি। তার ওপর ঝলমলে সূর্যের নরম আলোয় এক অপূর্ব শোভা খেলা করে বেড়াচ্ছে, ঠিক যেন কোনো সবুজ সমুদ্রে আলোছায়ার তৈরি চঞ্চল মাছের ঝাঁক পিছলে পিছলে যাচ্ছে।

বদুপাশে এই কচি সবুজের সমুদ্রের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে একসময় পৌঁছে গেলাম ব্যাট কেভে। এরপরে আর টুকটুক যাবে না। গাড়ি নিতে হবে। এখানে দর্শকদের বসার জন্য অনেক চেয়ার রয়েছে যাতে তারা বসে অপেক্ষা করে কখন সন্ধ্যা নামবে এবং সেই সময় ঝাঁকে ঝাঁকে চামচিকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন করে পঙ্গপালের মত সামনের উঁচু পাহাড়ের গায়ে যে গুহা দেখা যাচ্ছে তার থেকে বেরোবে, সেই দৃশ্য দেখবে। অপেক্ষা করার যখন ব্যাপার আছে, অতএব সামনেই চা, জলখাবারের দোকানও আছে। পাহাড়ের গায়ে বিশাল এক হাঁ-এর মতো গুহা, তাতে ওঠা যায় না। নিচু থেকেই দেখতে হবে। আর সামনে এক বিশাল বোর্ডে সরকারের তরফ থেকে লেখা রয়েছে, এই চামচিকেদের কোন ক্ষতি না করতে, কারণ এরা পোকা খেয়ে এত ফসল বাঁচায় যে দেশের অর্থনীতিতে তার বিশাল সুফল ফলে। এরা মূলতঃ সন্ধ্যার আগে আগেই বের হয়, কারণ দিনের আলো সহ্য করতে পারে না। ঠিক পুরো ঝাঁকটা দেখতে পেলাম না। বিচ্ছিন্নভাবে অল্পস্বল্প কিছু বেরোচ্ছিল। যখন পুরো ঝাঁক বাদুড় একসঙ্গে বেরোয়, তারা ঠিক, সমুদ্রের ছোট মাছের ঝাঁক যেমন বিভিন্ন দিক পরিবর্তন করে ঘোরে এবং অদ্ভুত এক জ্যামিতিক ছবি তৈরি করে, তেমনই সন্ধ্যার কালচে নীল বা লালচে আকাশের পটভূমিতে কালো বিন্দু বিন্দু চামচিকের দল সুন্দর উড়ন্ত দেখার মত ছবি তৈরি করে। বেশ খানিকক্ষণ ধরে ওরা এই প্রদর্শনী করে।
এর পর আর টুকটুক এগোয় না। ছোট এক টিলার মত পাহাড়ে উঠতে হবে যেটা অন্য জিপসি গাড়ির মত শক্তপোক্ত গাড়ি যাবে। আমাদের টুকটুকের চালকই ডেকে আনল একটা গাড়িকে। সবই তো ওদের চেনাশোনা লোক। যাই হোক গেলাম, এছাড়া তো আর উপায়ও নেই, অবশ্য তরুণ ছেলে মেয়েরা বা যাদের কাছে একটু বেশি সময় ও শক্তি আছে তারা হেঁটেও যাচ্ছে। ওপরে দু-তিনটি মন্দির আছে আর রয়েছে এক বীভৎস স্মৃতি নিয়ে জেগে থাকা কিলিং কেভ। এখানে একটি প্রাকৃতিক গুহা রয়েছে, ওই স্ট্যালাগমাইটের তৈরি বা কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে তৈরি। এতে নামা যায় কিছুটা। এর ওপরে যে ফুটো আছে তার থেকে হতভাগ্য মানুষদের, শিশু নারী নির্বিশেষে, নিচে ফেলে দেওয়া হত। পড়ার সময় পাথরে মাথা ফেটে বা আঘাতেই তারা মারা যেত। এখানে দুটো আলাদা কাঁচের আধারে শিশু ও বড়দের খুলি, হাড় আলাদা করে দেখার জন্য রাখা আছে। চোখের সামনে সেদিনের সেই দৃশ্যটা জীবন্ত হয়ে ফুটে উঠল। থাকতে পারলাম না বেশিক্ষণ।
বাইরে বেরিয়ে একটু ওপরে উঠে দেখলাম বহুদূর পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে। ওপরের মন্দিরটাতে অনেক বাঁদর ও তাদের দুষ্টুমি দেখে মনটাকে একটু সুস্থ করার চেষ্টা করতে লাগলাম।

এখান থেকে পরদিন বাসে নমপেন যাওয়া হল। বাসটা ছোট তবে আরামদায়ক। মাত্র আট-ন জনের বসার মতো বাস।
রাস্তায় যেতে যেতে কাম্বোডিয়ার গ্রাম শহর একে একে পথেই পড়ে থাকছিল, এগিয়ে চলেছিলাম সাধারণ মানুষদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে সঙ্গী করে। ছবির মত পেরিয়ে যাচ্ছিল তাদের হাসি-কান্না, স্কুলের ছেলেদের পড়তে যাওয়া, জেলের মাছ ধরা আর বড় বড় পার্টি অফিসের ইমারত। মাঝে খুব কম জায়গাতেই থামছিল এই বাস, কারণ এটি মেকং এক্সপ্রেসের বাস এবং বাটাম্বাং থেকে নমপেনই এর গন্তব্য। সব যাত্রীই নমপেন যাবে। নমপেনের হোটেলে বলে রেখেছিলাম যে বাসস্ট্যাণ্ডে পৌঁছালে যেন ওরা আমাদের হোটেলে নিয়ে যায়।
হোটেলে পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। রিসেপসনের ছেলেটি বলল, ও নাকি কোলকাতা থেকে হোটেল ম্যানেজমেন্ট পড়ে এসেছে। শুনে ভাল লাগল। হোটেলটি বেশ ভালো। শহরের একেবারে মাঝখানে, নতুন, ঝাঁ চকচকে পাঁচতলা হোটেল। খোলা ছাদে রেস্তোঁরা। নিস্তব্ধ কালো আকাশের নিচে গরম গরম খাবার খেতে খেতে গাছ দিয়ে সাজানো রেস্তোঁরার চেয়ার থেকে চারধারের নিয়ন জ্বলা নমপেনকে একটা আঁকা ছবির মতো মনে হচ্ছিল।
আমরা যেদিন নমপেনে ঢুকলাম তার পরের পরদিনই ছিল এখানে সাধারণ নির্বাচন। রাতে বেশ কিছু লোককে বাইকে ও গাড়িতে ঝাণ্ডা লাগিয়ে যেতে দেখলাম। ভাবলাম, খেয়েছে রে! হাতে গোনা দিন এখানে ঘোরার। যদি নির্বাচনের জন্য বন্ধ থাকে বা কোনও জায়গায় ঘোরা বন্ধ হয় তাহলে পুরো ক্ষতি। যদিও লোকজনকে জিজ্ঞাসা করে জানলাম, তেমন কিছু হওয়ার সম্ভাবনা নেই তবু আমরা তো ভারতের, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ। ভোট মানেই বুঝি মিটিং, মিছিল, বনধ্, খুনোখুনি, দাঙ্গা। কিংবা বড় বড় ফেস্টুন-ব্যানারের কী কাট আউটের চাপে শহরের দৃষ্টি অন্ধ, নিঃশ্বাস বন্ধ। কিন্তু পরদিন সকালে দেখলাম একেবারে ভোরে হোটেলের সামনের চকে বেশ খানিকটা ফাঁকা জায়গায় প্রচুর মানুষ সাদা পোষাক পরে ঝাণ্ডা নিয়ে বাইক, সাইকেলে হাজির। বক্তা বক্তৃতা শুরু করলেন। আমি ভাবলাম এই রে, দিনটা গেল। কী আশ্চর্য! বেলা আটটার সময় সব মিটিং শেষ। রাস্তা ফাঁকা, কে বলবে একটু আগে অত মানুষ এখানে ছিল! শহর একেবারে স্বাভাবিক।
তারপর সারা দিন চুপচাপ। কেবল চকের রাস্তার পাশে বড় বড় জায়ান্ট ডিজিটাল স্ক্রিন টাঙানো রয়েছে। তাতে কিছু আলোচনা বক্তৃতা চলছে আর অল্প কিছু মানুষ সামনের চেয়ারে বসে আছে। গোটা শহরে আর কোথাও কিছু চোখে পড়েনি। পরের দিন অর্থাৎ নির্বাচনের দিনও কিছু লক্ষ্য করিনি।
হোটেলের কাছেই নরোদম বুলেভার্ড ও শিহানুক বুলেভার্ডের সংযোগে দাঁড়িয়ে আছে আংকোরীয় ধাঁচে নির্মিত ইনডিপেন্ডেন্স টাওয়ার। এটি ১৯৫৮ সালে তৈরি হয়েছিল ফরাসীদের হাত থেকে কাম্বোডিয়ার ১৯৫৩ সালে স্বাধীনতা প্রাপ্তি উপলক্ষ্যে।

রাত্রিবেলা সবুজ ঘাসের কার্পেটের মাঝে আলো ঝলমল টাওয়ারটি সত্যিই মন কেড়ে নেয়। বহু মানুষ সন্ধ্যাবেলা এখানে বেড়াতে আসেন, গল্প করতে, সময় কাটাতে। ওইদিন এসেই সন্ধ্যাবেলা একবার বেরিয়েছিলাম এখানটায় হাঁটতে। শান্ত স্নিগ্ধ আলো অন্ধকারে একটা মায়াবী রহস্যময় পরিবেশ তৈরি হয়েছিল।
পরদিন প্রথমেই গেলাম রাজবাড়ি দেখতে। হোটেলের কাছেই হাঁটা পথেই যাওয়া যায় রাজবাড়ি। বেশ চড়া ই-টিকিটের দাম। ঠিক মেকং নদীর ধারে রিভারফ্রন্ট পার্কের সামনে। অনেক সিকিউরিটি পেরিয়ে তো ঢুকলাম ভিতরে। হঠাৎ ঢুকে পড়লে যেন চমকে ওঠার মত।

রাজবাড়ি বলে মূল যে প্রাসাদটাকে সেটা খুব যে বড় তা নয়। তবে বৈচিত্র্যে এটাকে মন্দিরই বলা হোক আর প্রাসাদই বলা হোক, ধরণ সেই একই, অনেকগুলো ছুঁচোলো চূড়াওয়ালা স্থাপত্য। দেখে বুঝলাম না রাজকার্য ছাড়াও তো রাজাদের থাকার জায়গা কিছু থাকবে তো, যেমনটি আছে ব্যাংককে, চিনে বা অন্যত্রও দেখেছি। হয়তো এখানেও আছে, জনতার জন্য তা দর্শনীয় নয়। তবে এটা খুব পুরনো রাজবাড়ি নয়; বর্তমান রাজার ঠাকুর্দার বাবা ১৮৬৬ সালে এটি অনেক জ্যোতিষশাস্ত্র মেনে তৈরি করেছিলেন। বেশ গাছপালা দিয়ে সাজানো চৌহদ্দিটা। আর রাজবাড়ির রঙ এখানকার রীতি অনুযায়ী লাল হলুদ সোনালির আধিক্যে সাজানো। পাশেই আছে একটি থ্রোন হল বা সিংহাসন ঘর। মাঝে একটা দেওয়াল দিয়ে আলাদা করা উত্তরদিকের একটি বড় চৌহদ্দিতে আছে সিলভার প্যাগোডা।

প্যাগোডা মানেই বুদ্ধমূর্তির মন্দির। প্যাগোডার সিঁড়িগুলো দামী ইটালিয়ান মার্বেলে তৈরি। ভিতরের মেঝে প্রায় ছয় টন রুপো দিয়ে তৈরি। এখানে ভিতরের বুদ্ধমূর্তি হল 'এমারেল্ড বুদ্ধ"। তাতে কত হিরে মুক্তো সোনা দানা আছে সে আর নাই বা বললাম। আরো কয়েকটি পূর্বতন রাজা রানির স্মৃতিসৌধ আছে। আর আছে পাশেই একটি আংকোরভাটের মডেল। প্যাগোডার দেওয়ালে রয়েছে রামায়ণ ও বুদ্ধের জীবনী অনুসরণে ফ্রেস্কো।

এখান থেকে বেরিয়ে গেলাম আরেকটা প্যাগোডা দেখতে। এটি শহরের মাঝেই তবে একটু উঁচুতে। চারধারে বেশ পার্কের মত করা আছে। ভেতরে ছোট-বড় নানা বুদ্ধমূর্তি রয়েছে। ভেতরটা বেশ জমকালো করে সাজানো। মন্দিরে ওঠার মুখেই রয়েছে দুটি বড় সিংহ মূর্তি।
চলে এলাম আবার রাজপ্রাসাদের বাইরে সামনে মেকং নদীর ধারে, যেখানে মিশেছে মেকং ও সিয়েম রিপ থেকে আগত টোনলা স্যাপ। রাস্তাটির নাম সিসোওয়াথ কোয়ে। এটি নদীর ধার বরাবর, হেঁটে চলার মতো সাজানো সুন্দর রাস্তা। অনেকটা আমাদের গঙ্গার ধারে যেমন আছে বা সাধারণত নদীর ধারে যেমন হয়। বহু লোক স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্যই হোক বা ভালো লাগার জন্যই হোক, নদীর ধারে বেড়াতে আসে, আড্ডা মারে। নদীর পাশে বেড়ানোর রাস্তা, তার পাশেই বড় রাস্তা সিসোওয়াথ কোয়ে।

পাশে বেশ অনেকটা ফাঁকা মাঠ, যেন গড়ের মাঠের ছোট সংস্করণ আর তার পাশেই রাজবাড়ি। সবমিলিয়ে জায়গাটা বেশ ভালো বেড়ানোর পক্ষে। অনেকে খাবার-দাবার, বসার সতরঞ্চি, আর ছেলে-মেয়ে, বল-র‍্যাকেট সব নিয়ে এসেছে, সবার সঙ্গে ছুটির দুপুরটা কাটাবে বলে। নদীর ধারে নানা রকমের ফল, চাট, ঠেলাগাড়ি, ভিখারি সব আছে। আমার তো কলকাতা মনে হচ্ছিল। নদীর ধারে চলার পথের ওপর মাঝে মাঝে বসার জায়গা। কোথাও ছোট বুদ্ধমন্দির রয়েছে, কোথাও গান হচ্ছে, বুড়ো-বুড়িরা বসে শুনছে। এক জায়গায় দেখলাম, একটা বুদ্ধমন্দিরের সামনে অনেক ভিড়, অনেকে পদ্মফুল দিয়ে পুজো দিচ্ছে। পাশেই পদ্মফুল বিক্রি হচ্ছে। আর একটা মজার ব্যাপার দেখলাম, কয়েকজন পাখিওলা মন্দিরের সামনে খাঁচায় করে খুব ছোট ছোট চড়াই পাখির মতো পাখি অনেক বিক্রি করছে। লোকে কিনছেও খুব। পাখিওলা খাঁচার থেকে পাখিটা বের করে লোকের হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে। লোকে নিয়ে গিয়ে বুদ্ধকে প্রণাম করে পাখিটা উড়িয়ে দিচ্ছে। পাখিগুলো একটু উড়ে আবার কাছের ছোট গাছে বা নদীর ধারে এসে বসছে। এদিকে কয়েকটি ছেলে হাতে একটি লম্বা লাঠি নিয়ে ঘুরছে। লাঠির আগায় বোধ হয় আঠাজাতীয় কিছু লাগানো আছে। বোকা পাখিগুলো কিছু খেয়াল করছে না। ছেলেগুলো লাঠির আগাটা পাশ থেকে চুপি চুপি পাখিটার গায়ে ঠেকিয়ে দিচ্ছে আর পাখিটা আটকে যাচ্ছে লাঠিতে। ওরা তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে আবার খাঁচায় রাখছে। পাখিটা আবারও বিক্রি হচ্ছে। অবাক হয়ে এই মজার ব্যাপারটা দেখলাম।

এখান থেকে ফেরি যাচ্ছে উলটোদিকের দ্বীপটাতে বেড়ানোর জন্য বা স্থানীয় লোকেদের নানা কাজে। ওপাড়ে হোটেলও রয়েছে বেশ বড় বড়। যেখানে মেকং আর টোনলা স্যাপ এসে মিলেছে সেই জায়গাটা বেশ চওড়া। আমরা যদি নমপেন আসতাম সিয়েম রিপ থেকে, তাহলে এখানেই এসে উঠতাম। কয়েকটা বড় লঞ্চ দাঁড়িয়ে রয়েছে দেখলাম।

পরদিন প্রথমেই ভোর ভোর উঠে নদীর ধারে হাঁটতে গেলাম। বেশ ভালো লাগল, খুব ভিড় নেই - বেশ পরিচ্ছন্ন। তারপর সকালের দিকে সেন্ট্রাল মার্কেটে গেলাম। অনেকটা আমাদের নিউ মার্কেটের মতো। এখানে ইলেকট্রনিক জিনিস, সবজি মাছ, মাংস, ফল সব পাওয়া যায়। তবে বাজারটা চৌকো বা লম্বা নয়, গোল। এক এক দিকে এক একটা উইং, সেইমত এক এক দিকে এক এক জিনিস বিক্রি হয়। ভালোই গুছোনো বাজার। তবে আমাদের কেনার মতো কিছু ছিল না।

এখানকার হত্যাকাণ্ডের কথা পড়ে আর শুনে এবং কিছুটা বাটাম্ব্যাংএ দেখে এমন বিরক্তি, ঘৃণা এবং বিবমিষার উৎপত্তি হয়েছিল যে আমরা এখানকার দুটো দ্রষ্টব্যস্থান টুয়োল স্ল্যাং ও জেনোসাইড মিউজিয়াম দেখতে গেলাম না। এই জায়গাগুলোতে ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত যে হাজার হাজার মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে, তাদের প্রতি শ্রদ্ধায় তাদের মাথার খুলি-অস্থি সব সাজিয়ে রাখা হয়েছে সেই অন্ধকারময় ইতিহাসকে স্মরণে রাখার জন্য। ভাবছিলাম কোথায় নেই এই জিনিস, পোlল্যাণ্ডে আউসউইৎজ, চেকোশ্লোভাকিয়ার প্রাগে কুটনা হেরাতে, প্যারিসের ক্যাটাকম্ব, পূর্ব পাকিস্তানে, চিনে। কোথাও এগুলো আজও প্রকাশ্যে আনা হয়নি আবার কোথাও হয়েছে। আমাদের ভারতবর্ষেও এরকম অনেক আছে। সভ্যতার ও রাজনৈতিক শক্তির বিজয়রথ নির্বিচারে সাধারণ অসহায় মানুষের রক্তের ওপর দিয়েই যুগ যুগ ধরে এভাবেই এগিয়ে চলেছে।

পরিবর্তে স্থানীয় ন্যাশনাল মিউজিয়াম দেখতে গেলাম। মিউজিয়ামটি ছোটর ওপর বেশ ভালোই। সুন্দর গাছগাছালিতে সাজানো। এখানে ঘোরা বেড়ানোর কোন সমস্যা নেই। ওলা-উবেরের মত টোটো বা টুকটুকের অ্যাপ আছে। আগে থেকে মোবাইলে ডাউনলোড করে নিলে একেবারেই অসুবিধা নেই, ঠকে যাবারও চিন্তা নেই। সারা দেশেই আমাদের বিপরীতে অর্থাৎ রাস্তার ডানদিক ঘেঁষে গাড়ি চলে। নমপেন শহরটা যেটুকু দেখেছি মোটামুটি পরিচ্ছন্নই লেগেছে। লোকজনের আর্থিক অবস্থা খুব যে উঁচু তা নয় অনেকটা আমাদের মতোই। তবে রাস্তাঘাট পরিচ্ছন্ন। লোকে খুব নোংরা করে না আর সরকারিভাবেও পরিষ্কার করার ব্যবস্থা রয়েছে। রাস্তায় আমাদের মতোই ছোট ছোট দোকান আছে, কিছু কিছু বড় বড় শপিংম্যলও আছে। শহরে চেঁচামেচি খুব শুনিনি। ভোট ছিল, কিন্তু কিছুই বন্ধ হতেও দেখিনি বা শহরের জীবনযাত্রার ওপর কোন প্রভাব পড়তেও দেখিনি।
এখানে রাশিয়ান মার্কেট নামে সেন্ট্রাল মার্কেটের মত একটা বাজার আছে। দোকানপাটের নাম কিছু আমাদের মতো ইংরাজি এবং কিছু কাম্বোডিয়ার খমের ভাষায় লেখা। আর একটা জিনিস দেখলাম, এখানে ফরাসি প্রভাব খুব রয়েছে। ঊনবিংশ শতাব্দী থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত ফরাসি অধিকৃত ছিল। তাই খাওয়াদাওয়া থেকে রাস্তাঘাট, স্থাপত্য সব কিছুর ওপরই ফরাসি ধরণ বজায় আছে। পরদিন রওনা দিলাম নমপেন এয়ারপোর্টের থেকে কলকাতার দিকে। সঙ্গে রইল ভালো এবং মন্দলাগা একরাশ স্মৃতি।

~ সমাপ্ত ~


অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক-আধিকারিক মলয় সরকার বর্তমানে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষদের শিক্ষা স্বাস্থ্য ও পরিবেশ উন্নয়নে বিশেষভাবে যুক্ত। এছাড়া পড়াশোনা ও লেখালিখি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। নেশা দেশ-বিদেশ ভ্রমণ এবং উদ্যানচর্চা।

 

 

HTML Comment Box is loading comments...

To view this site correctly, please click here to download the Bangla Font and copy it to your c:\windows\Fonts directory.

For any queries/complaints, please contact admin@amaderchhuti.com
Best viewed in FF or IE at a resolution of 1024x768 or higher