একা একা, ঘুরেঘারে, হীরাবন্দরে

তপন পাল

~ পূর্বপ্রকাশিতের পর ~

-৪-
বারুদকল থেকে ওই রাস্তা ধরেই কিছুটা গিয়ে বিড়লাপুর; সেখান থেকে ডোঙ্গারিয়া বিবিরহাট হয়ে 'বনে এলি গেলি' - 'বাওয়ালি'। বাওয়ালির প্রাচীন মন্দির কমপ্লেক্সে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে জীর্ণ কয়েকটি মন্দির, রাসমঞ্চ, জলটুঙ্গি (হ্রদের মধ্যে তৈরি করা গ্রীষ্মাবাস), নাটমন্দির, হাওয়াখানা। তৎকালীন জমিদার মণ্ডল (রায়) পরিবারের এই মন্দিরচত্বরে পাশ্চাত্য স্থাপত্যশৈলী ও পোড়ামাটির ফলক পাশাপাশি। পোড়ামাটির প্রতিষ্ঠালিপি অনুযায়ী গ্রামের প্রাচীনতম পুরাকীর্তিটি হল ১৭৭১ সালে হারাধন মণ্ডল প্রতিষ্ঠিত ৭০ ফুট উঁচু আটচালা রাধাকান্ত মন্দির। একদা নাকি এটি টেরাকোটা সমৃদ্ধ ছিল; কিন্তু বর্তমানে নিশ্চিহ্ন। সামনেই ভগ্ন নাটমণ্ডপ ও পরিত্যক্ত আটকোনা রাসমঞ্চ। এছাড়াও রয়েছে ৭০ ফুটের গোপীনাথের নবরত্ন মন্দির, রাধাবল্লভ মন্দির, লক্ষ্মী জনার্দন মন্দিরগুলি। একসময় বাওয়ালি রথও ছিল সুবিখ্যাত। কালীমন্দিরের পশ্চিম দিকে রয়েছে শ্যামরায়ের মন্দির। ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে বাওয়ালির জমিদার উদয়নারায়ণ মণ্ডল এই মন্দিরটি নির্মাণ করিয়েছিলেন।
ব্যবসায়িক ছোঁয়ায় ভোল বদলেছে বাওয়ালি রাজবাড়ি, ঢোকার মুখেই বড় বড় সিঁড়ি, কারুকাজকরা থাম, দীর্ঘ উঠোন, বারান্দা; তৈরি হয়েছিল মণ্ডল পরিবারের হাতে। রাজারাম মণ্ডল ছিলেন হিজলির রাজার সেনাপতি। বীরত্বের জন্য তিনি লাভ করেন পঞ্চাশ বিঘা জমি আর বিস্তর ধনদৌলত। তাঁর হাতেই বাওয়ালি রাজবাড়ির পত্তন। তারপর যা হয়, এক পুরুষের প্রতিষ্ঠিত বিগ্রহ পরবর্তী প্রজন্মের কাছে গলগ্রহ।
সেখান থেকে বাবা বড়োকাছারির থান; দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার বিস্তীর্ণ গ্রামীণ পশ্চাদভূমির অন্তঃপাতী অতীব জনপ্রিয় এই উপাসনাস্থল। থানটি বাউন্ডুলে শিব ও অনার্য মাতার সন্তান বাবা পঞ্চানন্দের; তাই শিবের সঙ্গে পঞ্চানন্দের দেহাকৃতি ও বেশভূষার সাদৃশ্য আছে। পঞ্চানন্দের গাত্রবর্ণ লাল, রুদ্রবদন ক্রোধোদ্দীপ্ত ত্রিনেত্র; টিকালো নাক, দাড়ি নেই, গোঁফ কান অবধি বিস্তৃত, মাথায় পিঙ্গলবর্ণের জটা চূড়া করে বাঁধা, কিছু বুকে পিঠে ছড়ানো। কানে ধুতুরা ফুল। উর্ধাঙ্গ অনাবৃত; নিম্নাঙ্গে বাঘছাল অথবা ধুতি, গলায় ও হাতে পঞ্চমুখী রুদ্রাক্ষমালা, হাতে ত্রিশূল ও ডমরু; পায়ে খড়ম, কাঁধে সাপ আর পাশে পাঁচমুখো গাঁজার কলকে। এঁর অনুচর জ্বরাসুর, সঙ্গী ভূত, প্রেত, ঘোড়া, বাঘ। একটা গল্প বলি শুনুন।
সে অনেক অনেকদিন আগের কথা; তখনও এ দিগরে ইলেট্টিরি আসেনি। একটা লোক কী কাজে সদরে গিয়েছিল; ফিরতে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত। নিশুতি, নিকষকালো অন্ধকারে শর্টকাট করতে সে হাঁটছিলো রাস্তা ছেড়ে মাঠ বরাবর; হঠাৎ দেখে কী মাঠের মধ্যে গাছপালার আড়ালে ম্যারাপ বেঁধে হ্যাজাক পেট্রোম্যাক্স জ্বালিয়ে যাত্রাপালা চলছে। হইহই কাণ্ড, সেও বসে গেল। তখন, জানেন তো বাবুমশাইরা, যাত্রাপালা হত হোল নাইট, মানে যাকে বলে কিনা সারারাত। সারাদিনের হটরানি, তা ভোরের দিকে লোকটার চোখ একটু জড়িয়ে এসেছিলো। যখন ঘুম ভাঙল, দেখে কোথায় কী! কোথায় ম্যারাপ, কোথায় হ্যাজাক আর কোথায় পেট্রোম্যাক্স!! সব ফর্সা। আসলে বুঝলেন কী না তো বাবুমশাইরা, যাত্রাপালাটা ছিল ভূ্তেদের, বাবা পঞ্চানন্দ স্বয়ং তার সাঙ্গোপাঙ্গদের নিয়ে যাত্রাপালা দেখছিলেন।
বাবা একটু রগচটা বদমেজাজি বটে, কিন্তু দয়ালুও। তাঁর কাছে এসে কেউ খালি হাতে ফেরে না; তবে বাবার ভুলোমন তো, তাই সব প্রার্থনা লিখে জানাতে হয়। তোমার মনোবাঞ্ছা সাদা কাগজে লিখে, কোনে ছ্যাঁদা করে, লাল সুতো দিয়ে বেঁধে বাবার গাছে ঝুলিয়ে দাও, বা মন্দিরের রেলিংয়েও দিতে পারো; দেখবে তোমার প্রার্থনা পূরণ হবে। আসলে বোঝোই তো, কাছারি বলে কথা! কাছারি শব্দের মানে জানো তো! দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত, দফ্তর, অফিস, জমিদারের নায়েবের কার্যালয় এইসব। এখানে কী আর মুখের কথা চলে? লিখিতং পড়িতংই ভালো। তারপর প্রার্থনা পূরণ হলে, ইচ্ছা হলে তখন এসে পুজো দিয়ে যেও, বাতাসা, চিনির রঙিন মণ্ড দিয়ে। তবে বাবা শোলমাছ, আসব আর গাঁজা ভালবাসেন। তোমার ইচ্ছা হলে তাও দিতে পারো। এখানে মূর্তি নেই, একটি বড় অশ্বত্থ গাছ বাবার প্রতীক, তাকে ঘিরে মন্দির। ১৯৭৮ এর বন্যায় মূল অশ্বত্থগাছটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় স্থানীয় লোকজন সেই গাছটির পাশে আরেকটি অশ্বত্থ লাগান, কালক্রমে সেই এখন পুরনোর জায়গা নিয়েছে। অশ্বত্থ গাছটির পাতাগুলি কিঞ্চিৎ সাদাটে, পুরোহিত অব্রাহ্মণ।
তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিশীলনের দায় বাবার ঘাড়েও। শহুরে রুচির সঙ্গে মানাতে গাছতলায় এখন ত্রিশুল বসেছে, তাত্ত্বিক ক্ষেত্রসমীক্ষককে বোঝানো হচ্ছে এ থান বাবা ভূতনাথের, মানে শিবের। শোলমাছ বা আসব দেওয়াও কমে এসেছে, ছিঃ! ছেলেপিলে এসব দেখে কী শিখবে! তবে হুঁ হুঁ বাবা, আমাকে ওসব গপ্পো শুনিয়ে লাভ নেই। আমার ঠাকমা আর দিদিমা দুজনেই মেটেবুরুজের মেয়ে, তাঁদের মুখে এই থানের কাহিনি অনেক শুনেছি।
বাবা বড়কাছারির মূল খ্যাতি সন্তানেচ্ছা পূরণের জন্য। রূপরামের ধর্মমঙ্গলে আছে, 'কামারহাটে পঞ্চানন্দ বন্দে জোড় হাতে। ছেলেদের জন্য কত মেয়ে ওষুধ যায় খেতে'। তবে মানুষের সমস্যার তো শেষ নেই, তাই মামলা মোকদ্দমা, রোগ ব্যাধি, প্রেমে বাধা, বিবাহে বিলম্ব, পরীক্ষা পাস, চাকরি লাভ, সবকিছুর জন্যেই হিন্দু-মুসলমান সবাই এখানে পুজো দিতে আসে। পূজা পদ্ধতি অতীব সরল, দোকান থেকে বাতাসা, চিনির রঙিন মণ্ড, বেলপাতা, গাঁজা, গাঁজার কলকে, আকন্দর মালা কেনো, কিনে বাবার পুকুরে যাও। স্নান করতে পারলে ভাল, না পারলে অন্তত হাঁটুজলে নেমে ঘট ভরো। এবারে গাছতলায় গিয়ে ধুপ জ্বালিয়ে সব দিয়ে দাও; আর হ্যাঁ, দক্ষিণাটা ভুলোনা। জানোই তো! দক্ষিণান্ত না করলে পূজা সিদ্ধ হয়না।
সন্তানলাভের আশায় এবং সন্তানলাভের পর ধন্যবাদজ্ঞাপনে মানুষ এখানে আসে। শর্ত দুটো। এক, সন্তান নিয়ে এলে সব সন্তানকেই আনতে হবে। অর্থাৎ কেউ যদি দ্বাদশতম সন্তানলাভের পর ধন্যবাদজ্ঞাপনে এখানে আসেন তাহলে পূর্ববর্তী একাদশ জাতকের কাউকেই বাড়িতে রেখে আসা যাবে না, নিয়ে আসতে হবে। দুই, এখানে এলে না খেয়ে বাড়ি ফিরবে না। মঙ্গলবারে ও শনিবারে বেশি ভিড় হয়, সন্তান নিয়ে দূরদূরান্ত থেকে ম্যাটাডোর ভাড়া করে, তাতে ব্যান্ডপার্টি চাপিয়ে, অনেক আত্মীয়স্বজন শুভাকাঙ্ক্ষী নিয়ে লোকজন আসে; দিনভর থাকে, রাঁধে বাড়ে খায়; সে এক দেখার মত ব্যাপার। সন্তানলাভের পর ধন্যবাদজ্ঞাপনে পুকুরে স্নান করে, দন্ডি কেটে পুজো দিতে হয়। সঙ্গে ছেলে হলে একটা মাটির গোপাল আর মেয়ে হলে একটা মাটির লক্ষ্মী, সঙ্গে সন্তানের ওজনের সমপরিমাণ বাতাসা।
বড় কাছারির কোন লিখিত ইতিহাস নেই। তবে আজকাল ঐতিহাসিকরা শুনছি মৌখিক ইতিহাসকে খুব গুরুত্ব দিচ্ছেন। তাই একটু গালগল্প করা যাক। আলিবর্দি খানের শাসনকালের শেষ দিকে মারাঠা বর্গিদের উৎপাতে স্থানীয় গ্রামের লোকজন ঘরবাড়ি ছেড়ে এক শ্মশান সন্নিহিত জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছিলো। বর্গীরা, ধর্মীয় সংস্কারেই হোক কিংবা ভূ্তের ভয়েই হোক, সেখানে যায়নি। তারপর, বৃষ্টিশেষের রামধনুর মত, সেই শ্মশানে আসেন এক সাধু। অলৌকিক ক্ষমতাবলে তিনি গ্রামের লোকজনদের সমস্যা মিটিয়ে দেন, রোগবালাই দূর করেন। মারাঠাদের দৌরাত্ম্যশেষে গ্রামটি আবার সমৃদ্ধশালী হয়ে ওঠে। সাধুর মৃত্যুর পর সেখানেই তাকে সমাধিস্থ করা হয়; আর সেখানেই গজায় সেই সাদাপাতার অশ্বত্থ। বাজারে রটে যায়, মৃত্যুর পরে গ্রামবাসীদের রক্ষার্থে এই অশ্বত্থগাছের রূপে তিনি ফিরে এসেছেন। ব্যস! শুরু হয়ে গেল।
মন্দিরে ঢোকার অনেক আগে থেকেই বেশ মেলা বসে গেছে! বাচ্চারা আসে, স্বাভাবিকভাবেই দোকানিরা খেলনা সাজিয়ে বসেছেন। খাবারের দোকান, লুচি, কচুরি, রাধাবল্লভী, ডালপুরি, নান, পেটাপরোটার অবাধ আয়োজন। আমি বাবার জন্য এক বোতল বিলাইতি নিয়ে গিয়েছিলাম। গাছের গোড়ায় ঢালার জন্য ছিপি খুলতে যেতেই পূজারী আর্তনাদ করে উঠলেন, খুলবেন না, খুলবেন না, এখানকার জলই চরণামৃত, শিশুরা খায়। তাঁর স্বাস্থ্যচেতনায় আমি অভিভূত হলাম, নির্নিমেষ চেয়ে রইলাম তাঁর দিকে, তিনিও আমার দিকে; কেটে গেল প্রহর। তারপর করুণ স্বরে জিজ্ঞাসিলেন 'প্রসাদ লাগবে'? আমি আর কী বলি, বললাম 'না, ওটা আপনি রাখুন।'
তা বড় কাছারি যখন, তখন নিশ্চয়ই ছোট কাছারি আছে কাছাকাছি; ব্রিটিশ আমলে যেমন বড়লাট থাকতেন রাজভবনে আর ছোটলাট এখনকার জাতীয় গ্রন্থাগারে। অবশ্যই! ছোট কাছারি তো আছেই, একটা নয়, দুটো। প্রথমটি জোকা আই আই এম-এর আগে, যেখানে আগে ট্রাম ডিপো ছিল, সেখান থেকে চড়িয়াল খাল বরাবর পূর্বদিকে, হাঁসপুকুরিয়া পেরিয়ে শাঁখারিপোতায় খালের ধারেই এক হেলানো অশ্বত্থগাছ ঘিরে। মন্দিরটি বেশ বড়, সদ্যনির্মিত, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় রাস্তাটি হওয়ার সময় ঠিকাদারকে ধরে হয়েছে; কিন্তু একটু খুঁটিয়ে দেখলে থানটির প্রাচীনত্ব সম্বন্ধে ধারনা পাওয়া যায়; হেলে পড়া অশ্বত্থগাছটির বয়স কম করেও দেড়শো বছর। পাশের কবরস্থানে শোনা গেল মামদো (মৃত মুসলমান ব্যক্তির আত্মা)ভূ্তেরা থাকেন; তবে মধ্যে মধ্যে পেত্নি (প্রেতিনী, অবিবাহিতা মহিলার ভূত, সুপুরুষ যুবকে আগ্রহী) বা শাঁকচুন্নি (বিবাহিতা মহিলার ভূত, পরনে লালপাড় শাড়ি, হাতে হাড়ের উপর ঢলঢলে শাঁখা, সাধারণত বিবাহিত জীবন উপভোগ করতে ধনী বিবাহিতা মহিলাদের ভর করে) বা 'শাকিনী' (যারা বিয়ের পরে অসুখে বা নির্যাতনে আত্মহত্যা করেছে) বা 'মোহিনী' (যারা প্রেমে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যা করেছে)-রাও এখানে হাওয়া এবং চা খেতে আসেন। শোনা গেল বছর পঞ্চাশ আগে অবধি এদিকে 'বেগোভূত' (বাঘের আক্রমণে মৃত মানুষের ভূত) দেখা যেত, এখন আর যায় না। প্রসঙ্গত, বেহালা সরশুনা ঠাকুরপুকুর, বড়িশার প্রধান নিকাশি নালা বেগোর খাল তার নাম পেয়েছে এমন ভূ্তের থেকেই। ভূ্তেদের লিঙ্গভেদ আছে, আছে লিঙ্গবৈষম্যও; আছে জেন্ডার স্টিরিওটাইপিং। ভূ্তেদের জীববৈচিত্রে মহিলাদের প্রাধান্য মহিলাদের প্রতি বিগত যুগের সামাজিক সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গীর এক নির্ভুল অভিজ্ঞান।
বাবুমশাইরা তো জানেনই, ভূত শব্দটির উৎস সংস্কৃত ভূ ধাতু, যার অর্থ হওয়া; টু বি, বা প্রকাশিত হওয়া; টু ম্যানিফেস্ট। সেই অর্থে ভূত শব্দের শব্দার্থ আ বিয়িং, বা বড়জোর অ্যান এক্সিটিং প্রেজেন্স। সেই অর্থে আপনি আমি, বাঘ সিংহ, পায়রা মুরগি সবাই-ই ভূত। তবে ভূত শব্দটি যুগপৎ অতীত নির্দেশকও, যথা ভূত ভবিষ্যৎ বা ভূতকাল। এইবারে একই শব্দ যদি একই সঙ্গে অতীত ও বর্তমানের দ্যোতনা দেয়, তখন আমাদের হয় মরণ! আমরা ভাবতে বসি, অতীত কি তবে শুধুমাত্র অতীত নয়, বর্তমানেও তার অঙ্গাঙ্গী উপস্থিতি!! যখন চাকরি করতাম, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় উন্নয়নমূলক প্রকল্পের তদারকিতে গিয়ে এক বাউলি (সুন্দরবনে মধু কাঠ গোলপাতা সংগ্রহকারী দলের পথপ্রদর্শক) এর সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। তিনি বাদার হাঁটুজলে দাঁড়িয়ে মা বনবিবির নামে দীক্ষা নেওয়া মানুষ। জানিয়েছিলেন পশুপাখিদের ভাষা বুঝতে পারেন, বুঝতে পারেন তারা কী বলতে চাইছে; বেগোভূ্তেরা তাঁকে বাঘের অবস্থিতি সম্বন্ধে সতর্ক করে। তাঁকে অবিশ্বাস করিনি। আমার মত পেন্টুলপরা শহুরে মানুষ যদি অপরিচিত পথকুকুরের ডাক শুনে বুঝতে পারে সে বিরক্ত না ক্ষুধার্ত, তাহলে যে মানুষটি তাঁর সারা জীবনটি কাটালেন ম্যানগ্রোভের প্রকৃতিচর্চায় তিনি যে পশুপাখিদের ভাষা বুঝবেন এ আর আশ্চর্য কী! রেলচর্চার সূত্রে একবার এক বডিলিফটার (যারা রেললাইন থেকে কাটা পড়া মানুষের মৃতদেহ তুলে বাঁশে বেঁধে পলিথিনে জড়িয়ে জি.আর.পি.র কাছে জমা দেন) এর সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। তিনি জানিয়েছিলেন একবার সোদপুরের কাছ থেকে এক দেহ তুলে তিনি ঝামেলায় পড়েছিলেন। সবকিছু চুকেবুকে যাওয়ার পরেও মৃত ব্যক্তিটি নাকি তাকে প্রায়ই বলতেন, অমন হ্যাঁচকা টান দিয়ে তুললি বাবা, কোমরে বড্ড লাগল; এখনও ব্যথা আছে।
ভগবান ভদ্রলোকের সঙ্গে আমার খুব একটা ভাব-ভালোবাসা নেই কারণ ভদ্রলোক আজ অবধি আমার কোন উপকারে আসেননি। যদিও আমার এক চাকুরিতুতো দাদা দাবি করতেন যে ভগবান বহুবার নাকি তার সঙ্গে দেখা করে তাকে বড়লোক করে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন; কিন্তু বড়লোক হলে গলফ খেলতে হবে এই ভয়ে তিনি ওই প্রস্তাবে রাজি হননি। তবে ভূতেদের সঙ্গে আমার বিলক্ষণ সৌহার্দ্য; তারা আমাকে নিঃসঙ্গতার সময় সঙ্গ দেয়, দুঃখের সময় সান্ত্বনা দেয়, বড়সাহেবের কাছে ঝাড় খেয়ে মন খারাপ হলে বলে, মন খারাপ করিস না, একদিন দেখবি গিয়ে ঠিক ওর ঘাড়টা মটকে দিয়ে আসবো। সবাই বলে কানাভুলো ভূতেরা পথিকের গন্তব্য ভুলিয়ে একই রাস্তায় বারবার ঘুরপাক খাওয়াতে থাকে, ভয়ে ক্লান্তিতে একসময় পথিক মারা যায়। অথচ একবার গভীর রাতে ব্যাংককের রাস্তায় আমি যখন পথ হারিয়ে পেত্নী শাঁকচুন্নি চোরাচুন্নি মোহিনী শাকিনী ডাকিনী নিশি আলেয়াদের মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছিলাম, একটা কানাভুলো ভূতই আমার হাত ধরে আমাকে হোটেলে পৌঁছে দিয়েছিল।
তবে পরিশীলনের দায় এনার ঘাড়েও চাপলো বলে। ভরসন্ধ্যা বেলায় ভূ্তের মন্দিরে এক স্বল্পবয়সী দম্পতিকে দেখে অবাক হলাম। বোঝাই যাচ্ছে তাঁরা এখানকার লোক নন। চা খেতে গিয়ে জানা গেল জোকা আই.আই.এম. সন্নিহিত এলাকায় অনেকগুলি বড় বড় আবাসন প্রকল্প হচ্ছে; তার একটিতে তাঁরা বাসস্থান ক্রয় করছেন। কতটা কাজ এগোল দেখতে এসেছেন। এবং সেখানে এলেই তাঁরা এখানে আসেন, পারিপার্শ্বিক তাঁদের এতটাই ভাল লাগে।
দ্বিতীয়টি আমতলা চৌমাথা থেকে পূর্বদিকে মউখালি বিবিরহাট সাজুয়া হয়ে হাটবাড়িয়ায়, চটা ডাকঘর রোডের উপর। এটি ছোটখাটো মন্দির। দুজায়গাতেই ফেরার পথে গিয়েছিলাম।
বড় কাছারি থেকে লস্করপুর ঘনশ্যামপুর ফতেপুর সরিষা হয়ে ডায়মন্ডহারবার ঠিক এক ঘণ্টা।

-৫-
শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার নিত্যযাত্রীরা জানেন, শরতের শুরুতেই কিভাবে হাতে এসে পড়তে থাকে রঙিন লিফলেট, সুন্দরবন ভ্রমণের। ক্যানিং টাউন থেকে লক্ষ্মীদা, ট্যারাদা, নিত্যদা প্রমুখেরা লঞ্চ নিয়ে পর্যটক নিয়ে বেরোন, সঙ্গে ইলিশ উৎসব। ভ্রমণের তিনদিনে তারা কোন কোন জায়গায় নিয়ে যাবেন সেটি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বলা থাকে না, এই সব দাদারা কী কী দেখাবেন বলার চেয়ে বেশি জোর দেন কী কি খাওয়াবেন তার ওপর। ব্রোশিওরেই তিনদিনের চারবেলার মেনু ছাপিয়ে দেয়া থাকে। সকালের জলখাবারে একদিন লুচি, একদিন কচুরি; বিকেলে একদিন আলুর চপ মুড়ি, একদিন মোমো। তবে আমরা তো জানি, সত্যিকারের ইলিশ উৎসব পৃথিবীতে একজায়গাতেই হয়, ডায়মন্ডহারবারে। তবে কী না এ ইলিশ বেলচা ইলিশ, অর্থাৎ ট্রাক থেকে বেলচা দিয়ে নামাতে গিয়ে যে ইলিশ বেলচার ঘায়ে বিক্ষত হয়েছে; তাই দাম কম। ভরা বর্ষায়, রাস্তার ধারে, ডায়মন্ডহারবারে যেখানে সেখানে গজিয়ে ওঠে ভাতের হোটেল। তারা সবাই বেলচা ইলিশের পদ খাওয়ান - নেহাতই সাদামাটা চালের ভাত, সঙ্গে ইলিশের তেল, ভাপা, ঝাল, ঝোল, অম্বল মায় পাতুরি অবধি। এইরকমই এক ভোজনালয়ে বিলম্বিত মধ্যাহ্নভোজ।
এই জায়গার দেশীয় নাম হাজিপুর, চৈতন্যদেব পুরী গমনকালে হাজিপুরে এসেছিলেন। সেখান থেকে ছত্রভোগ বন্দর; আজকের কৃষ্ণচন্দ্রপুর। বিপ্রদাস পিপলাই পঞ্চদশ শতকের কবি, মনসা-পাঁচালির প্রাচীনতম এবং সম্পূর্ণ কাহি্নি একমাত্র তাঁর কাব্যেই লভ্য। সেখান থেকে এবং চৈতন্যজীবনীকাব্য থেকে আমরা জেনেছি নিম্ন গাঙ্গেয়বঙ্গের অন্যতম শক্তিপীঠ ছত্রভোগের কথা। বাঙালি সওদাগররা দেবী ত্রিপুরাসুন্দরী ও ভৈরব অম্বুলিঙ্গশিব দর্শন করে, চক্রতীর্থে স্নান করে সমুদ্রে নৌকায় বাণিজ্যে যেতেন। চৈতন্যদেব এই পথেই পুরী গিয়েছিলেই। শ্রীমৎ বৃন্দাবনদাস ঠাকুর লিখছেন 'এইমত প্রভু জাহ্লবীর কুলে কুলে। আইলেন ছত্রভোগ মহা কুতুহলে'। পথে আদিগঙ্গার যে ঘাটে কিছু সময়ের জন্য থেমেছিলেন চৈতন্যদেব, এখন সেই স্থানেরই নাম 'বৈষ্ণবঘাটা'।
ডায়মন্ডহারবার, তার পুরনো হাজিপুর নাম নিয়ে সুন্দরবনের মধ্যে ভালোই ছিল। বাধ সাধল ইংরেজরা; নব্য শহর কলকাতা রক্ষার্থে নদীমুখে একটি বন্দর ও নদী বরাবর কিছু দুর্গ না বানালেই নয়। এখন পিকনিকের যে জায়গাটি রয়েছে, তার উজানেই চিংড়িখালি দুর্গের ধ্বংসাবশেষ; কয়েকটা ভাঙা দেওয়াল, নদীতীরে বহুদূর পর্য্যন্ত ছড়িয়ে থাকা ইটের টুকরো – দুর্গের একদা-বিস্তৃতি বোঝায়। জনশ্রুতি, সপ্তদশ শতকে পর্তুগিজ জলদস্যুরা লুটের মাল রাখার জন্য এটি তৈরি করে। পর্তুগিজ জলদস্যুরা লুটের মাল রাখার জন্য মস্ত দুর্গ বানালে সমসাময়িক মুসলিম শাসকরা কি চোখ বুজে থাকতেন – নাকি তাদের কাছে আঠারো ভাটির দেশের কোনো খবরই পৌঁছাত না। দ্বিতীয় ব্যাখ্যাটিই গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়। আমারও কিন্তু কাঁকনদিঘির জটার দেউল দেখেও পর্তুগিজ জলদস্যুদের কীর্তি বলেই মনে হয়েছে। পরবর্তীকালে ইংরেজরা এটি সারিয়েসুরিয়ে নিয়ে ব্যবহার করতে শুরু করে, এবং অবশেষে নদীভাঙনে দুর্গটি পরিত্যক্ত হয়।

১৮১৫-র ইস্ট ইন্ডিয়া গেজেটিয়ার বলছে ইংরেজদের বাণিজ্যপোতগুলি এখানে মাল ওঠাতো নামাতো। বোঝা যাচ্ছে কলকাতা বন্দর চালু হবার আগে ডায়মন্ডহারবার বন্দর যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক ছিল। ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে ডায়মন্ডহারবারে ভারতের প্রথম টেলিগ্রাফ স্টেশন স্থাপন থেকেই বোঝা যায় কলকাতার সঙ্গে ডায়মন্ডহারবারের যোগাযোগ সাহেবদের কাছে কতটা জরুরি ছিল। ডায়মন্ডহারবারে রেললাইন ও দক্ষিণ পশ্চিম কলকাতার তারাতলা থেকে লম্বা ডায়মন্ডহারবার রোড তারই অভিজ্ঞান। প্রয়োজনের তাগিদেই ডায়মন্ডহারবারে অনেক সরকারি অফিস গড়ে উঠেছিল, এমনকি একটি ছোট জেলখানাও।
১৮৬৮-৬৯ এ ডায়মন্ডহারবার বন্দরের মাইলখানেক দক্ষিণের এই দুর্গ পুনর্নির্মিত হয়। কলকাতা বন্দরের প্রতিষ্ঠা ১৮৭০ এ। পোতাশ্রয় গড়ে উঠতে ইংরেজরা এর নাম দিল ডায়মণ্ডহারবার, সেকি সূর্যাস্তকালে গঙ্গার জল হিরের মত চিকচিক করে বলে! শখানেক বছর আগেও এখানে জাহাজ থাকতো, মাল নামতো উঠতো। তবে এর কৌশলগত গুরুত্বও অনেকখানি। বাংলা থেকে বেরোতে গেলে তুমি যেই হও না কেন, এইখান দিয়েই তোমাকে বেরোতে হবে; চাঁদ সদাগর থেকে বেহুলা এই পথ দিয়েই গিয়েছিলেন; পর্তুগিজ থেকে ইংরেজ এই পথ দিয়েই এসেছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই এই নদীপথকে উন্মুক্ত ও সচল রাখা ও এর উপর সার্বিক অধিকার বজায় রাখার প্রশ্নটি ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক শক্তির কাছে চিরকাল গুরুত্ব পেয়ে এসেছে। চল্লিশ বছর আগেও নদীতীরে চিংড়িখালি দুর্গের ধবংসাবশেষ দেখেছি। বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে কলিকাতা নগরী রক্ষা করার জন্য দুর্গটি বানানো হয়েছিল, পাশেই ছিল ইংরেজদের একটি পুরাতন গোরস্থান। দুর্গ সুরক্ষিত করার জন্য ব্যারাকপুর থেকে কামান এনে বসানো হয়েছিল যার মধ্যে দুটি কামানের ভগ্নাবশেষ ২০১১ সাল নাগাদ পাওয়া গিয়েছিল। সংস্কারের উদ্দেশ্য ছিল পর্তুগিজ জলদস্যুদের হাত থেকে বন্দর, ও তার সঙ্গে নুনের ব্যবসার স্বার্থরক্ষা; এই দুর্গ সেইসময়ে নিমক-রাজস্ব বিভাগের প্রধান অফিস ছিল। এছাড়াও মক্কা থেকে যেসব তীর্থযাত্রীরা ফিরতেন, তাদের জন্য একটা শিবির (কোয়ারান্টাইন ক্যাম্প) ছিল এখানে। বিগত চার দশকে নদীর পাড় ভাঙার দরুণ এই দুর্গ ক্রমিক অবলুপ্তির পথে, এখন সেখানে স্থানীয়রা বৎসরান্তিক বাতিল মাটির প্রতিমা বসিয়ে দিয়ে যায়।

নদীর ধারে, ভরা বর্ষার জোয়ার। নৌকারাজি, মাল নামছে উঠছে। জাহাজ আসছে যাচ্ছে, ঢেউ ভাঙছে, উল্টে ফেলে দেওয়ার মত প্রবল হাওয়া। বসে বসে খুব আশ্চর্য লাগছিল। একত্রিশ বছরের মার্গারিত এলিজাবেথ নোবল কুয়াশামোড়া এক শীতের সকালে জাহাজের ডেক থেকে স্বপ্নাবিষ্টের মত এখন আমি যেখানে বসে আছি এদিকেই হয়তো চেয়েছিলেন; ঠিক যেমনটি চেয়ে ছিলেন বাহাদুর শাহ জাফর বার্মাযাত্রাকালে; হয়তো তখনই তাঁর মনে এসেছিল 'কিতনা হ্যায় বদনসিব জাফর/ দফনকে লিয়ে দো গজ জমিনভি মিল নাহি সাকি।' - জাফর, তুমি এতই দুর্ভাগা, ভালবাসার দেশে তোমার কবরের জন্য দু'গজ মাটিও জুটল না। কিংবা 'উমর দরাজ মাঙ্গঁকে লায়ে থে চার দিন - দো আরজু মেঁ কাট গয়ে, দো ইন্তেজার মেঁ।' - চার দিনের আয়ু নিয়ে এসেছিলাম। দু'দিন কাটল প্রত্যাশায় আর দু'দিন অপেক্ষায়। উঠে পড়লাম; কিলোমিটারখানেক হেঁটে এলাম পুরনো কেল্লার দিক থেকে, মায়া রোড ধরে বাঁধ রোড, সেখান থেকে নদীর গা বরাবর রাস্তা চলে গেছে অ-নে-ক দূরে। নিচু মাঠে তখন গোড়ালি সমান জল, ছুটোছুটি করে বেড়াচ্ছে কুচো মাছ। আকাশ সারাদিন রৌদ্রোজ্জ্বল ছিল, এখন মেঘ জমছে। নৌকার রঙিন পাল গঙ্গায় পতপত করে উড়ছে।

সূর্য পাটের পথে, সদ্য অম্বুবাচী গেছে, দিন এখনও যথেষ্ট বড়। তবুও বাড়িফেরার তাড়া থাকেই, সেই কোন সকালে বেরিয়েছি, ইতিমধ্যে সারথিকে তিনবার ফোন হয়ে গেছে, সেও ফেরার তাড়া দিচ্ছে। রাস্তার ধারে একটা চায়ের দোকানে চা-ঘুগনি খেতে লেগেছি, দেখি একটা অটো আমাদের পেরিয়ে চলে গেল, আবার ঘুরে এসে আমার সামনে থামল। অটো থেকে নামলেন ধুতি শার্ট পরিহিত এক বয়স্ক ব্যক্তি, হাতে একটি আমরা যাকে বলি রেশন ব্যাগ। নেমেই আমাকে ধমকি, আপনি ডায়মণ্ডহারবারে এসেছেন আমাকে জানাননি। এইবারে ভদ্রলোককে চিনতে পারলাম। অনেকদিন আগে যখন জিলা পরিষদে চাকরি করতাম, তখন এই ভদ্রলোক আমাদের কিছু ঘাট বাৎসরিক ভিত্তিতে জমা নিতেন। ওঁর বদান্যতা, এতগুলি বছর পরেও চিনেছেন ও অবসরপ্রাপ্ত আমাকে দেখে গাড়ি থামিয়েছেন। আমি বললাম কী করে জানাবো, আমি কি আপনার ঠিকানা জানি! জানার দরকার নেই, ডায়মণ্ডহারবারে রাস্তার কুকুরকেও আমার নাম বললে আমার আড়ত দেখিয়ে দেবে। যাক বাবা! এঁর তাহলে আড়তও আছে, ভারি মজা।
গিয়ে উঠলাম নগেন্দ্রবাজারে তাঁর আড়তে। সে এক ভজখট কাণ্ড। সবাই একসঙ্গে কথা বলছে, কেউ কারও কথা শুনছে না; শুনবে কি করে, মাছ নিলাম হচ্ছে তো! মাথায় ঝুড়িতে করে মাছ নিয়ে যাচ্ছে লোকে, ঝরঝর করে জল গড়াচ্ছে, আর সেই জল জামায় পড়তে এমন আঁশটে গন্ধ বেরোতে শুরু করল তা আর বলবার নয়।
বিকট ও বিচিত্রদর্শন সামুদ্রিক মাছের, চিংড়ির, কাঁকড়ার সমাহার। ফুট চার-পাঁচেকের বিশাল মুখগহ্বরের দৈত্যাকার মাছগুলোকে দেখে বিনীত প্রশ্ন করলাম, 'এই মাছ খায়?' 'অবশ্যই।' 'কারা খায়?' 'আজ্ঞে আপনারাই।' আমি মাথা ঝাঁকিয়ে বললাম, 'কক্ষনো নয়। আমাদের বাড়িতে এইসব মাছ ঢোকেইনা।' তিনি বললেন 'আশি একশো টাকায় কি আর ক্যালকাটা ভেটকির ফিশ ফ্রাই হয়? ক্যালকাটা কেন, বোম্বে ভেটকিরও হয় না। তাহলে বাকি থাকলো কে, হাঙর আর এরা।' আমি পালাবার পথ খুঁজলাম। ভদ্রলোক জোরজার করে দুটো ইলিশ দিলেন। 'আরে নেন! এখন তো আর আপনি চাকরি করছেন না।' মাছ নিয়ে ডিকিতে, কারণ ফেরার পথে ছোট কাছারিগুলোয় ঢুকবো; বাঁওড়ের মেছো ভূতেরা মাছের জন্যে পাগল; রান্নাঘর বা জেলেদের নৌকা থেকেও তারা মাছ চুরি করে খায়। মাছ কিনে কেউ রাতের বেলা গাঁয়ের রাস্তা দিয়ে ফিরলে এরা তার পিছু নেয় – তারপর নির্জন বাঁশঝাড় বা বিলের ধারে ভয় দেখিয়েই হোক বা মারধোর করে মাছ নিয়ে নেয়। আর এতো ইলিশ বলে কথা!!

-৬-
তেমন কিছু ঘটেনি। ছোট কাছারিগুলো দেখে নির্বিঘ্নে বাড়িতে। পরদিন সকালে আবার বাজারে গিয়ে ইলিশগুলো কুটিয়ে আনতে হল।

- সমাপ্ত -

হিসাবশাস্ত্রের স্নাতকোত্তর শ্রী তপন পাল West Bengal Audit & Accounts Service থেকে অবসর নিয়েছেন সম্প্রতি। তাঁর উৎসাহের মূল ক্ষেত্র রেল - বিশেষত রেলের ইতিহাস ও রেলের অর্থনীতি। সে বিষয়ে লেখালেখি সবই ইংরাজিতে। পাশাপাশি সাপ নিয়েও তাঁর উৎসাহ ও চর্চা। বোম্বে ন্যাচারাল হিস্ট্রি সোসাইটি এবং ইন্ডিয়ান রেলওয়ে ফ্যান ক্লাবের সদস্য শ্রী পালের বাংলায় ভ্রমণকাহিনি লেখালেখির প্রেরণা 'আমাদের ছুটি'। স্বল্পদূরত্বের দিনান্তভ্রমণ শ্রী পালের শখ; কারণ 'একলা লোককে হোটেল ঘর দেয় না।'

 

HTML Comment Box is loading comments...

To view this site correctly, please click here to download the Bangla Font and copy it to your c:\windows\Fonts directory.

For any queries/complaints, please contact admin@amaderchhuti.com
Best viewed in FF or IE at a resolution of 1024x768 or higher