রেল নিয়ে আলোচনায়

তপন পাল



~ পূর্বপ্রকাশিতের পর ~

দ্বিতীয় পর্ব – দার্জিলিং-এ

আশ্বিনের শারদ-প্রাতে বেজে উঠেছে আলোক-মঞ্জীর; ধরণীর বহিরাকাশে অন্তর্হিত মেঘমালা...

নিউ জলপাইগুড়ি জংশন রেলস্টেশনে সারারাত চা পাওয়া যায়। চারটেয় উঠে পরপর তিন কাপ চা, প্ল্যাটফর্মে কিঞ্চিৎ ঘোরাঘুরি, রেলগাড়ি দর্শন – তারপর সাড়ে ছটায় বোঁচকাবুঁচকি বেঁধে ঘর খালি করে শিলিগুড়ি জংশন স্টেশনে। সেখানেই জমায়েত, তারপর লম্বা কাফেলায় যাত্রা শুরু আটটায়।
শিলিগুড়ি জংশন থেকে সুকনার পথ গিয়েছে দার্জিলিং মোড় হয়ে, হিলকার্ট রোড ধরে পচাই নদী পেরিয়ে, অরণ্যানী আর চা বাগানের মায়াময় ছায়াময় পথ ধরে, দিগন্তের দেবতাত্মা হিমালয়কে সাক্ষী রেখে। 'পান্থ তুমি, পান্থজনের সখা হে, পথে চলাই সেই তো তোমায় পাওয়া। যাত্রাপথের আনন্দগান যে গাহে তারি কণ্ঠে তোমারি গান গাওয়া'। সুকনায় নেমেই ছেলেপিলেরা, তার মধ্যে ষাটোর্দ্ধ সত্তরোর্দ্ধরাও আছেন, ফটাফট ছবি তুলতে লেগে গেলেন। ভারতীয় রেলমুগ্ধ সংঘের বার্ষিক অধিবেশন শিলিগুড়িতে হয়েছিল ৩০ এপ্রিল আর ১ মে, ২০২২। সেবারেও উদ্যোক্তাদের মধ্যে আমি ছিলাম, আর পদস্থ রেল আধিকারিকদের দাক্ষিণ্যে আমাদের জন্য একটি বিশেষ রেলগাড়ি মঞ্জুর হয়েছিল, সুকনা থেকে রংটং যাওয়া ও আসার জন্য। সেই রেলগাড়ির পিছনে ছিল একটি ফ্ল্যাটবেড ওয়াগন। বার্ষিক অধিবেশন প্রতি বছরেই হয়, তাই শিলিগুড়ি অধিবেশনের নাম হয়ে গেল ছাইয়া ছাইয়া।

একটিই প্ল্যাটফর্ম, দুটি লাইন, ঔপনিবেশিক স্থাপত্যের স্টেশনবাড়ি। তার দোতলায় একটি চমৎকার সংগ্রহশালা, আর স্টেশনমাস্টার বাবুটিও চমৎকার মানুষ। তিনি প্রায় পুত্রস্নেহে সংগ্রহশালাটি আমাদের ঘুরিয়ে দেখালেন।
তারপরে রংটং; রংটং স্টেশনটি ভারি শান্ত। আমরা রাস্তার ধারে বসে চা খাচ্ছিলাম। খেতে খেতে চোখ গেল উপরপানে, দেখি ল্যাম্পপোস্টের টঙে এক অতিকায় মাকড়সা, রোদ্দুরে চকচক করছে। একদা দার্জিলিং হিমালয়ান রেল এর জাঙ্গল টি সাফারি শিলিগুড়ি জংশন থেকে রংটং অবধি আসত। শিলিগুড়ি জংশন থেকে পৌনে তিনটেয় ছেড়ে রংটং ঘুরিয়ে সন্ধ্যা ছটার মধ্যে শিলিগুড়ি জংশনে ফিরে যেত। গ্রাহক না পাওয়ায় সে পরিষেবা বন্ধ হয়ে গেছে।

সুকনা অবধি সমতলেরই গাছপালা দেখা যেতে লাগল, সুকনা পেরোবার পরেও কিছুটা। আর চা বাগান তো আছেই। তারপরেই সহসা বদলে গেল উদ্ভিজ্জচিত্র; দেখা দিতে লাগল দেবদারু, পাইন। "অস্ত্যুত্তরস্যাং দিশি দেবতাত্মা হিমালয়ো নাম নগাধিরাজঃ| পূর্বাপরৌ তোয়নিধী বিগাহ্য স্থিতঃ পৃথিব্যা ইব মানদণ্ডঃ||" চড়াইপথের শুরু। বাঁকের পর বাঁক পেরিয়ে আমরা উঠছি। পর্ণমোচী শাল সেগুনের জায়গা নিল চিরহরিৎ, ক্রমে তার জায়গা নিল সরলবর্গীয় বৃক্ষেরা; তাদের পাতায় পাতায় আদিত্যের ঝলকানি। পর্বতো বহ্নিমান ধূমাৎ। পর্বতচূড়ার নাকের সামনে দিয়ে ধোঁয়ার মত মেঘ উড়ে উড়ে যাচ্ছে। আমার কাছে এ দৃশ্য নতুন কিছু নয়। গত বছরেই এক প্রবল বৃষ্টির দিনে আমার অর্ধাঙ্গিনীর ইচ্ছা হল রূপনারায়ণ দেখার। প্রবল বৃষ্টির মধ্যে আমরা যখন আচার্য জগদীশ বসুর মাথায়, দেখা গেল ফর্টি টুর নাকের সামনে দিয়ে ধোঁয়ার মত মেঘ উড়ে উড়ে যাচ্ছে। বিদ্যাসাগরে উঠতে গিয়েও সেই দৃশ্য।
রাস্তায় দেখা মিললো অনেক বানরের (rhesus macaque/(Macaca mulatta)। মহানন্দা অভয়ারণ্যের গা দিয়ে যাওয়ার সময় হস্তীদর্শনের আকাঙ্ক্ষা ছিল, কিন্তু পূরণ হল না; পরিবর্তে দেখা মিললো ময়ূরের (Indian Peafowl/Pavo cristatus)। সুকনা পেরোবার পরেই প্রথাগত ফিঙে ছাতারের জায়গা নিল বসন্ত বউরির খুড়তুতো ভাই Blue-throated Barbet (Psilopogon asiaticus), বাজ (Black Baza/Aviceda leuphotes), শিকরা (Shikra/Accipiter badius), Green-billed Malkoha (Phaenicophaeus tristis), Grey-throated Babbler (Stachyris nigriceps), Grey-headed Woodpecker (Picus canus), Wedge-tailed Green-Pigeon (Treron sphenurus) – আর অগণন প্রজাপতি। যেখানেই গাড়ি থেকে নামছি, যেখানেই রাস্তার ধারে বসছি, ঝোপেঝাড়ে শুধু প্রজাপতি। পার্বত্য প্রজাতির প্রজাপতির মধ্যে চোখে পড়লো Common Gem, Bright Sunbeam, Hill Jezebel।
রংটং থেকে চুনাভাটি পেরিয়ে তিনধারিয়া মেরামতি কারখানা। ১৮৮০ সালের মার্চে শিলিগুড়ি থেকে তিনধারিয়া রেলপথ চালু হয়, উদ্বোধন করেছিলেন তদানীন্তন বড়লাট এডওয়ার্ড রবার্ট লিটন (Bulwer-Lytton, 1st Earl of Lytton, ৮ নভেম্বর ১৮৩১ – ২৪ নভেম্বর ১৮৯১)। তখনই রেলসম্পত্তি নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য Tindharia Railway Workshop for the Darjeeling Himalayan Railway এর সৃষ্টি। আমি চেন্নাইয়ের পেরাম্বুরে ইন্টেগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরি দেখেছি, চিত্তরঞ্জন লোকো কারখানা দেখেছি, বারাণসীর লোকো কারখানা দেখেছি, হায়দ্রাবাদে মেধার কারখানা দেখেছি, দেখেছি বেলিয়াঘাটা হাওড়া সাঁতরাগাছি আসানসোল ভাদোদরা হুব্বালি ভুসাওয়ালের লোকো শেড। তারপরেও তিনধারিয়ার মেরামতি কারখানা আমাকে চমৎকৃত করে – এমনই সর্বাঙ্গীণ তার ব্যবস্থাপনা।

পরবর্তী বিরতি বহুকথিত বহুচর্চিত, Bourne and Shepherd এর ১৮৮০ সালের ছবিতে চিরায়ত Agony Point। আদতে নাম লুপ নম্বর চার, সমগ্র রেলপথের তীব্রতম বাঁক এটাই। দেখতে দেখতে ভাবছিলাম প্রণম্য সেই মানুষগুলির কথা, তাঁদের স্বপ্ন দেখার দুঃসাহসিকতার কথা। কিভাবে তাঁরা এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলেন তার চেয়েও যেন বড় হয়ে ওঠে কিভাবে তাঁরা ভাবতে পেরেছিলেন যে পাহাড়কেও বাঁধা যায় রেললাইনের আলিঙ্গনে; দূরকে করা যায় নিকট, পরকে করা যায় ভাই। ওগো, পথের সাথি, নমি বারম্বার। পথিকজনের লহো লহো নমস্কার॥

তারপর গয়াবাড়ি পেরিয়ে Zigzag 6 (Reverse No. 6) – চড়াইপথের এটিই শেষ রিভার্স।

গয়াবাড়ি – রিভার্স নম্বর ছয় – মহানদী পেরিয়ে বেলা একটা নাগাদ আমরা পৌঁছলাম গিদ্দাপাহাড় সাইডিং। শকুনের ডানার মত দেখতে বুঝি এই পাহাড়; তাই এমন নাম! হিন্দি ও নেপালিতে শকুনকে গিধ বলে; সংস্কৃত গৃধিনীর অপভ্রংশ। ওই অঞ্চলে একদা প্রচুর শকুন ছিল। রাজাভাতখাওয়ায় Vulture Conservation Breeding Centre (VCBC) শুরু হয়েছিল ২০০৬-এ। উদ্দেশ্য ওই অঞ্চলের তিন প্রজাতির শকুনের white-rumped vulture (Gyps bengalensis), Indian vulture (Gyps indicus) এবং slender-billed vulture (Gyps tenuirostris) এর সংরক্ষণ, প্রজনন এবং তাদের স্বাভাবিক বসতিতে পুনর্বাসন। প্রথম দশ বারো বছর কেন্দ্রটি কাজ করতো নীরবে। এটি ছিল সরকারি পরিভাষায় 'off display' facility। সেখানে প্রাণীবিজ্ঞানী সমাজবিজ্ঞানী সমাজকর্মীরা কাজ করতেন নীরবে – বাইরের লোকেদের বা ভ্রমণার্থীদের প্রবেশাধিকার ছিলনা। ২০১৬ – ২০১৯ আমাকে সরকারি কাজের সূত্রে ডুয়ার্স অঞ্চলে ঘোরাঘুরি করতে হত; আর Bombay Natural History Society র দীর্ঘকালীন সদস্য হওয়ার সুবাদে কয়েকবার সেখানে গিয়েওছি। গিদ্দাপাহাড় সাইডিঙের আশেপাশেই 'মেরে সপনো কি রানি কব আয়ে গি তু' গানের চিত্রায়ণ হয়েছিল।
হিলকার্ট রোডের উপরেই এই একদা-স্টেশন। যাত্রীবাহী রেলগাড়িরা এখন আর এখানে দাঁড়ায় না। তবে ব্রিটিশ আমলে দাঁড়াত, বিপরীতগামী দুই রেলগাড়ির পারস্পরিক অতিক্রমণ (ক্রসিং) ও হত।

সেখান থেকে ১৮৩৫ সালে সিকিমের রাজা কর্তৃক প্রদত্ত ব্রিটিশদের উপহার কার্শিয়ং। মহকুমা শহর, তবে Peterborough বা Swindon, খড়গপুর বা জামালপুরের মত মূলত রেলশহর। ১৮৮০র আগস্টে খেলনা রেলগাড়ি এখানে পৌঁছয়। মূল স্টেশন ভবনের একটি ঘরে একটি চমৎকার স্মৃতিমেদুর সংগ্রহশালা, খেলনা রেলগাড়ি নিয়ে পুরাতন সংবাদপত্রের সংগ্রহ। সেটি দেখে আমরা স্টেশনের ভিতরের চমৎকার আহারশালাটিতে; তার নাম Café de Central, স্থাপিত ১৮৮১তে। আহারশালাটির পরিবেশ সর্বাংশে ঔপনিবেশিক – তেমনই তার থালা গেলাস, কাঁটা চামচ, আহার্য – এই ভরদুপুরেও সেখানে লাইভ ব্যান্ড। সেখানে মধ্যাহ্নভোজে।

কার্শিয়ং স্টেশনটি অনেকখানি ছড়িয়ে, মূল লাইন থেকে শেড ও সাইডিং, কিন্তু মূল স্টেশনটি কানাগলিসুলভ এক ডেড এন্ডে। দার্জিলিংগামী রেলগাড়িগুলিকে তাই মূল স্টেশন থেকে পিছিয়ে এসে চড়াইপথ ধরতে হয়; এবং এই পিছিয়ে আসার পথটি এক ব্যস্ত রাস্তার মোড় পেরিয়ে। তাই যানজট লেগেই থাকে, সঙ্গে বিরক্তি, বিশৃঙ্খলা। আগের দিন রাতে যখন আলোচনা হচ্ছিল, তখন কতিপয় স্থানীয় দাবি করলেন এই সাদা হাতির জন্যই হিলকার্ট রোড এবং কার্শিয়ং স্টেশন মোড় সততই যানজটগ্রস্ত, এবং যানজট কমানোর জন্যই খেলনা রেলগাড়ি তুলে দেওয়া দরকার। এখানে একটি ছোট লোকো শেডও আছে। কার্শিয়ং এক চমৎকার শহর, সততই সেখানে মেঘ কুয়াশা আর বৃষ্টির ছেলেখেলা। মেঘের পাহাড় ভেঙে চুঁইয়ে পড়ে জল; কুয়াশার চাদর জড়িয়ে আছে গাছের সারি আর জীবন, দূরে স্কুলের ঘণ্টা পড়ল, এক ঝরনার সঙ্গে পথে দেখা।

কার্শিয়ং পেরোবার পর থেকে জমির দখল নিল সরলবর্গীয় সিডার, ওক আর বার্চ। পরবর্তী বিরতি টুং – সোনাদা – রংবুল – জোড়বাংলো পেরিয়ে ঘুম; ভারতের সর্বোচ্চ রেলওয়ে স্টেশন (২,২৫৮ মিটার; ৭,৪০৭ ফুট)। দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে ৪ এপ্রিল ১৮৮১ সালে ঘুমে পৌঁছায়। শিলিগুড়ি থেকে ঘুম পর্যন্ত ওঠার পর, ট্রেনটি প্রায় ১,০০০ ফুট (৩০০ মি) নামতে শুরু করে। রেলওয়ে স্টেশন চত্বরটি চমৎকার পার্কসুলভ; সর্বদাই সেখানে বাষ্পীয় লোকোদের হিসহিসানি, ফিসফিসানি। এখানেও একটি ঘরে সংগ্রহশালা।

পরবর্তী বিরতি বাতাসিয়া লুপ, রেলপথ এখানে সুড়ঙ্গের মাধ্যমে এবং একটি পাহাড়ের চূড়ার ওপর দিয়ে গ্রেডিয়েন্ট কমানোর জন্য সর্পিল। এটি ১৯১৯ সালে চালু হয়েছিল। আমার ধারণা ছিল এখানে মন্দির টন্দির আছে এবং সেখান থেকে সকল যাত্রীকে বাতাসা দেওয়া হয়, কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল তেমন কিছু নয়, এখানে বিস্তীর্ণ ঢালের ওপর দিয়ে সারাক্ষণ বয়ে যায় শনশনে বাতাস, তাই এর নাম বাতাসিয়া। ভারতীয় সেনাবাহিনীর গোর্খা সৈন্যদের একটি স্মৃতিসৌধ রয়েছে। পর্যটকদের জন্য বসে গেছে বাজার।

কিছু কিছু জায়গার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে যায় কিছু চিত্রকল্প। হরিদ্বার যাওয়ার পথে রেলগাড়ি যখনই বেরিলিতে থামে, আমি চমকে উঠি। সেই কোন বাল্যে, ষাটের দশকে গান শুনেছিলাম 'ঝুমকা গিরা রে, বেরিলি কি বাজার মে'। নায়িকা সাধনা প্রয়াতা হয়েছেন ২০১৫য়; তবু আমার মনে হয় রেলগাড়ি থেকে নেমে বেরিলির বাজারে গেলেই দেখা যাবে তিনি নাচছেন 'ঝুমকা গিরা রে'। বারাণসী যাওয়ার পথে কোডারমা পৌঁছালেই যেন শুনতে পাই 'ম্যায় তো ঝুমরিতিলাইয়ান এ আয়েহি হু'(চলচ্চিত্র মউন্ত ১৯৭৫)। এমন কি ২০১৭য় মুক্তিপ্রাপ্ত জগগা জাসুস ছবিতে একটি গান ছিল 'মেরা গাঁও ঝুমরিতিলাইয়াঁ'। স্বপ্নশহর সেই ঝুমরিতিলাইয়ান তো এই কোডারমাতেই; পঞ্চাশ পঞ্চাশটা বছর কেটে গেল; আমার ঝুমরিতিলাইয়ান যাওয়া আর হয়ে উঠলো না। বাতাসিয়া লুপও সেইরকম। মনে হয় আশেপাশেই কোথাও আছেন গামছা কাঁধে দিলীপকুমার আর সায়রাবানু। তারা নাচছেন আর গাইছেন 'ছোটি সি পঞ্ছি ছোট্ট ঠোঁটে রে মিষ্টি ফুলের মধু লুটে রে ঝিরিঝিরি ঝোরা তিরিতিরি নাচে রে'।
তারপর রবীন্দ্রনাথের ভাষায় 'গাড়ি চলতে লাগল। বন-পাহাড়-পর্বত-ঝরনা-মেঘ এবং বিস্তর খাঁদা নাক এবং বাঁকা চোখ দেখা দিতে লাগল। ক্রমে ঠাণ্ডা, তারপর মেঘ, তার পরে নদিদির সর্দি, তার পরে বড়দিদির হাঁচি, তারপরে শাল কম্বল বালাপোষ, মোটা মোজা, পা কন্কন্, হাত ঠাণ্ডা, মুখ নীল, গলা ভার ভার এবং ঠিক তার পরেই দার্জিলিং'।

উনিশ শতকে বা বিশ শতকের প্রথমদিকেও দার্জিলিং পাক্কা বিলিতি শহর; বড়লোক না হলে বেড়াতে যাওয়া প্রায় অসম্ভব৷ তখনও সেখানে মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্নবিত্ত বাঙালি পর্যটকের পাইকারি যাওয়া-আসা শুরু হয়নি৷ ১৯৪৫ সালে অনিলকৃষ্ণ সরকারের লেখা 'দার্জ্জিলিং সাথী' সেই অর্থে পথিকৃৎ। 'এদের এখানে ঐরূপ যে সমুদয় উৎসবাদি আছে, তাতে যোগ দিয়ে এখানকার ভূমি, জল, ও বস্তী মানুষদের সঙ্গে বাঙ্গালীদের গভীরতরভাবে সম্বন্ধ স্থাপনা করা উচিত৷ নতুবা বাঙ্গালীরা বিদেশী বলে এদের দ্বারা শীঘ্রই পরিত্যক্ত হবে'৷ তারপর সত্তরের দশক অবধি দার্জিলিং নিম্ন মধ্যবিত্ত বাঙালির একতম মধুচন্দ্রিমা গন্তব্য। মনে রাখবেন শাহরুখ গৌরী খানেরও মধুচন্দ্রিমা পাহাড়ের রানি এই দার্জিলিং-এই।

হোটেল। অপরাহ্ণে কিঞ্চিৎ ঘোরাঘুরি, জিপস্ট্যান্ডে দেখি সেই সন্ধ্যাতেও গাড়িদাদারা চেঁচাচ্ছেন 'শিলিগুড়ি, শিলিগুড়ি, শিলিগুড়ি'। আশ্চর্য হলাম। রোহিণী বাইপাস হয়ে এখন তাহলে সূর্যাস্তের পরেও পাহাড়ে গাড়িঘোড়া চলে! চল্লিশ বছর আগে তো এমনটি ছিল না। তখন শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং এর পথ ছিল পাঙ্খাবাড়ি হয়ে; সে এক দুরূহ পথ। এবারে শুনলাম সে পথ এখন প্রায় পরিত্যক্ত।

দাস স্টুডিয়োয় পুরানো দিনের রেলগাড়ির ছবির অন্বেষণ; এক চা বুটিকে মহার্ঘ চা ভক্ষণ- আর মলে কিঞ্চিৎ কেনাকাটা; পরিবার পরিজন ফেলে একা একা ঘুরতে গেলে কি আর খালিহাতে ফেরা যায়! তৎপরে গ্লেনারিজে নিষিদ্ধ মাংস সহযোগে পানাহার। পরিবেশ পরিপূর্ণ ঔপনিবেশিক, এক গায়ক ফিল কলিন্সের গানগুলি গাইছিলেন পরপর - You'll Be in My Heart, Another Day in Paradise, Against All Odds, Turn It On Again, One More Night … । ফিল আমাদের প্রজন্মের, পাঁচের দশকের জাতক, তার গান আমার ভারি প্রিয়।

সন্ধ্যাটিতে সিক্ত হলেম ঔপনিবেশিক মায়াময়তায়, স্মৃতিমেদুরতায়। কে ভাবতে পেরেছিল শহর কলকাতার দশ-বারো ঘণ্টা দূরত্বেই আছে এমনি এক মায়াশহর – যেখানে বাতাসে ছড়ানো হিম, পথ চলতে গালে হামি দিয়ে যায় জলধরপটল, যেখানে দিগন্ত অদৃশ্য, সেখানে সবুজ বনানী আর শৈলমালা – আর যেখানে আমার পথে পথে পাথর ছড়ানো। তাই তো তোমার বাণী বাজে ঝর্না-ঝরানো॥ ম্যালের দাস স্টুডিয়োর সামনে দাঁড়িয়ে আমার কেমন এক অনুভূতি হল। ১৯৫৮ সালে আমার সদ্যবিবাহিত পিতামাতা মধুচন্দ্রিমায় দার্জিলিং এসে দাস স্টুডিয়োয় লুকিয়ে লুকিয়ে ছবি তুলিয়েছিলেন, সে ছবি পরিবারের কারও চোখে পড়লে গালমন্দ নাকি নিশ্চিত ছিল – বাড়ির বউ এত বেহায়া!! আমি তখন কোথায় ছিলাম – আমি কি তখন এভাবেই দাস স্টুডিয়োর সামনে জ্যাকেট গায়ে দাঁড়িয়েছিলাম? আর সেই কড়া মেজাজের রোগাপ্যাংলা লোকটা কি এখন এখানে কাছাকাছিই আছেন, কেমন আছেন, আমি তাঁকে স্মরণ করায় তিনি কি বিষম খেলেন? এক্ষুনি এসে আবার আমার কান ধরবেন নাকি? কে জানে!!! বাবার জন্যে ভারি কষ্ট হতে লাগল! আহারে! অভাবের চাদরে তালি দিতে দিতেই লোকটার জীবন গেল; একটু সুখের মুখ দেখল না গো!

তখন কে বলে গো সেই প্রভাতে নেই আমি সকল খেলায়, সকল খেলায় করব খেলা এই আমি

বারো তারিখে সকাল আটটায় দার্জিলিং স্টেশনে জমায়েত। স্টিম শেড পরিদর্শন। রেল পরিকাঠামো, অবকাঠামো ও রসদ অধ্যয়ন।
কিছু উৎসাহী বন্ধু খেলনা রেলগাড়ির স্টিম রাইডে গেলেন। ৫২৫৯৪ দার্জিলিং – ঘুম – দার্জিলিং স্টিম রাইড দার্জিলিং থেকে ছাড়ে সকাল নটা পঁচিশে, ঘুম পৌঁছায় সোয়া দশটায়। রিভার্সালের পর ঘুম থেকে ছাড়ে দশটা পঁয়ত্রিশে এবং দার্জিলিং পৌঁছায় এগারোটা কুড়িতে – সবসুদ্ধ বারো কিলোমিটার। স্টিম রাইডের পরেই ডিজেল রাইড, বিকাল অবধি নিরন্তর চলে – পথিমধ্যে বাতাসিয়া লুপে দাঁড়ায় কিছুক্ষণের জন্য, আর সেই উপলক্ষেই সেখানে মেলা বসে যায়। রেলভাড়ার মধ্যেই ঘুম জাদুঘরের প্রবেশদক্ষিণা ধরা থাকে। জয়রাইড টয় ট্রেনকে ভালো আয় দিচ্ছে; অপারেটিং প্রফিট বাড়ছে। চালু থাকার জন্য ওরা আর ভারতীয় রেলের বা সরকারের মুখাপেক্ষী নয়। তাই ধরে নেয়া যায় ভ্রমণার্থীদের সৌজন্যে টয় ট্রেন টিঁকে থাকবে। তবে আমি গেলাম না। প্রথমত, আমি আগে ওই রাইডে চড়েছি, এবং দ্বিতীয়ত উদ্যোক্তাদের একজন হিসাবে আমার দার্জিলিং পাততাড়ি গুটিয়ে নেওয়ার কাজ ছিল।

'The most enjoyable day I have spent on earth mixed ecstasy of deadly fright and unimaginable joy'. মার্ক টোয়েন (Samuel Langhorne Clemens। নভেম্বর ৩০, ১৮৩৫ – এপ্রিল ২১, ১৯১০)। ১৮৯৬ সালে মার্ক টোয়েন দার্জিলিং এসেছিলেন, 'টয় ট্রেন' নামটি নাকি তারই দেওয়া। মার্ক টোয়েন দার্জিলিং থেকে ঘুম গিয়েছিলেন খেলনা রেলগাড়িতে। সেখান থেকে তিনি ও তার সাথীরা শিলিগুড়ি নেমেছিলেন ইঞ্জিনবিহীন এক চারচাকার চাঁদোয়া খাটানো ফ্ল্যাটবেড ওয়াগনে, যে ফ্ল্যাটবেড ওয়াগনে চড়ার কথা আগে বলেছি। মাধ্যাকর্ষণ তাঁদের নামিয়েছিল গড়গড়িয়ে। তাঁদের একতম নিরাপত্তামূলক যন্ত্র ছিল একটি হ্যান্ড ব্রেক – গাড়ির গতিবেগ কমানোর জন্য বা থামানোর জন্য। তবে উৎরাই পথে সেই ব্রেকের কার্যকরিতা অতীব সন্দেহজনক, কারণ অদ্যাবধি খেলনা রেলগাড়িতে প্রতি কামরা থেকে ব্রেক ব্যবহৃত হয়, এবং প্রতিবার ব্রেক ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে ইঞ্জিন থেকে বালি রেললাইনে পড়ে ঘর্ষণ বাড়িয়ে রেলগাড়িকে থামায়। মার্ক টোয়েনের ভাষায় এই অবরোহণ was like 'an arrow from a bow', গড়গড়িয়ে। তার রেলগাড়ি 'went flying down the mountain... flying and stopping, flying and stopping...that was the most enjoyable day I have spent in the earth. For rousing, tingling, rapturous pleasure there is no holiday trip that approaches the bird flight down the Himalayas in a 'hand-car'.
বাতাসে মেঘ, দিগন্ত ঢাকা। স্টেশনচত্বরেই ঘোরাফেরা। হঠাৎ মনে হল আচ্ছা, রেললাইনটি শেষ হল কোথায়? স্টেশনের upper end-এ তো কোন বাফার দেখলাম না। হাঁটাহাঁটি করে রহস্য উদ্ধার হল। রেললাইনটি স্টেশনে শেষ হয়নি, সে বাজারের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে গিয়েছে অনেকখানি; শেষ হয়েছে এক goods shed-এ। goods shed-টি অদ্যাবধি বিদ্যমান, যদিও জীর্ণ, বিধ্বস্ত। সেখানে একটি রোপওয়ে (আজকের যাত্রী রোপওয়ে থেকে পৃথক), সে চা বাগান থেকে চা আনতো। পরিত্যক্ত, অবহেলিত সেই রোপওয়ে ছিল hydraulically powered, যদিও সে জলধারা আজ শুকিয়ে গিয়েছে।
পুরনো দিনের ছবিতে দেখেছি দার্জিলিং স্টেশনের Turn Table, অর্থাৎ যেখানে লোকোর অভিমুখ ঘোরানো হয়। বৈদ্যুতিক লোকোর দুটি কেবিন থাকে, দুটি থেকেই সমদক্ষতায় রেলগাড়ি চালানো যায়। প্রতিতুলনায় বাষ্পীয় বা ডিজেল লোকো Single Cabbed; তাই ক্ষেত্রবিশেষে লোকো ঘোরানোর দরকার পড়ে। এবারে গিয়ে দেখলাম Turn Table-টি বিলুপ্ত, সারা জায়গাটি পাথরে বাঁধিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাইতে অনেকখানি ফাঁকা জায়গা বেরিয়েছে, পর্যটকদের পর্বত অবলোকনেও সুবিধা হচ্ছে, কিন্তু বিলুপ্ত হয়েছে এক ঐতিহ্য। লোকজনকে জিজ্ঞাসা করে জানলাম এই বছরের শুরুতেই এই কাণ্ডটি ঘটেছে। দেখে ও শুনে ভারি খারাপ লাগল।

দার্জিলিং-এ দুটি বাড়ি একরকম দেখতে – রাজভবন ও বর্ধমান হাউস। এ নিয়ে ঝগড়াঝাঁটি বিস্তর। বিষয়টি নাকি গড়িয়েছিল আদালত অবধি। শেষ পর্যন্ত আদালত বর্ধমানের মহারাজাকে বর্ধমান হাউস নির্মাণের অনুমতি দেন; তবে দুই শর্তে – (১) বর্ধমান হাউসের চারদিকের দেওয়ালের প্রতিটিতে রাজ ভবনের ওই দেওয়ালের চেয়ে একটি করে ইট কম থাকবে; এবং (২) বর্ধমান হাউস তৈরি করতে হবে রাজভবনের চেয়ে নিচের অবস্থানে। ব্যাপারটা নিজের চোখে দেখা ভালো, তাই সেখানেও একবার যাওয়া হল। তবে হারানো ইটটি খুঁজে পেলাম না।

আমরা কাজ গুটোলাম, আরোহীরা ফিরে এলেন। সম্মিলিত মধ্যাহ্নভোজ। এরই ফাঁকে কয়েক লহমার জন্য মেঘ সরিয়ে দেখা দিলেন রৌদ্রোজ্জ্বল কাঞ্চনজঙ্ঘা। কোন্‌ দূরের মানুষ যেন এল আজ কাছে; কাঞ্চনজঙ্ঘা আজ চোখের নাগালে। মাউন্ট এভারেস্ট ও কে ২ এর পরে কাঞ্চনজঙ্ঘা পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম, হিমালয়ের দ্বিতীয় উচ্চতম ও ভারতের উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ। এর উচ্চতা ৮,৫৮৬ মিটার/ ২৮, ১৬৯ ফুট। ১৮৫২ সাল অবধি কাঞ্চনজঙ্ঘাকেই পৃথিবীর সৰ্বোচ্চ শৃঙ্গ বলে মনে করা হত। এর পাঁচটি মূল শৃঙ্গ - Kanchenjungha Main, Kangchenjunga West, Kangchenjunga Central, Kangchenjunga South, এবং K áng bǎ chén। কাঞ্চনজঙ্ঘা তৎসম শব্দ নয়; এটি মূলত 'কাং চেং জেং গা' - 'তুষারের পাঁচ ঐশ্বর্য'; তারা প্রতিনিধিত্ব করে ঈশ্বরের পাঁচ ভান্ডারের - স্বর্ণ, রৌপ্য, রত্ন, শস্য এবং পবিত্র পুস্তক। এর মধ্যে কাঞ্চনজঙ্ঘা মেইন, সেন্ট্রাল এবং সাউথ ভারতের উত্তর সিকিম জেলায়, নেপাল সীমান্তে; বাকী দুটি নেপালের তাপ্লেজুং জেলায়।

কাঞ্চনজঙ্ঘাকে ঘিরে আছে অগণন অতিকথা (মিথ)। লেপচাদের কাছে এই শৃঙ্গ অতীব পবিত্র; অদ্যাবধি সব কাঞ্চনজঙ্ঘা অভিযান শেষ হয় শিখরের কয়েক ফুট নিচে, কারণ শিখর পবিত্র, সেখানে পদার্পণ অনভিপ্রেত। ১৯৫৫র মে মাসে জো ব্রাউন আর জর্জ ব্যান্ড যখন প্রথম কাঞ্চনজঙ্ঘা জয় করেন, তখন থেকেই এই ব্যবস্থা। ২০০০ সালে এক অস্ট্রিয়ান পর্বতারোহী দল কুড়ি হাজার মার্কিন ডলারের বিনিময়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা জয় করিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তাইতে স্থানীয়রা অতীব ক্ষুব্ধ হন, পরিণামে ভারত সরকার কাঞ্চনজঙ্ঘা অভিযান নিষিদ্ধ করেন। আজও কাঞ্চনজঙ্ঘা অভিযান করতে হলে নেপালের দিক দিয়ে করতে হবে, ভারত সরকার অনুমতি দেবেন না। লেপচাদের বিশ্বাস বিশ্বের প্রথম দুই নারী পুরুষ সৃষ্টি করার পর ঈশ্বর তাদের নামিয়ে দিয়েছিলেন এই শৃঙ্গে। তাদের থেকেই মানবজাতির উদ্ভব। মর্ত্যের স্বর্গ, মায়েল ল্যাং এইখানেই; সেখানেই আদিমাতা না জং ন্যাও-এর বাস। সিকিমের উপর দিয়ে উড়ে যাওয়া পরিযায়ী পাখিরা সেখানেই বাসা বাঁধে, ডিম পাড়ে। অমরত্বের রহস্যও নাকি এর শ্বেতশুভ্র শৃঙ্গের নিচে কোথাও লুকানো আছে। একটা গল্প বলি শুনুন।
এক জেলে একবার মাছ ধরতে ধরতে নদীর উজানে চলে গিয়েছিল অনেকখানি। সে গিয়ে পৌঁছালো ভারি সুন্দর এক উপত্যকায়। সেখানে এক বুড়োবুড়ির সংসারে সে আতিথ্য পেল - ভরপেট খেয়ে সারারাত আরামে ঘুমাল। ঘুম ভাঙতে দেখে, ও মা! বুড়োবুড়ির পাত্তা নেই, দুটো চাঁদপানা ছেলেমেয়ে ঘরের মধ্যে খেলা করছে। 'তোমরা কে গো! কালকের সেই বুড়োবুড়িরা কোথায়'? জবাবে চাঁদপানা ছেলেমেয়ে দুটো জানাল তারাই সেই বুড়োবুড়ি। এই উপত্যকার সব মানুষের জীবনচক্র প্রতিদিনই আবর্তিত হয়। ভোরবেলায় সদ্যোজাত, দুপুরবেলায় বাল্যাবস্থা, সন্ধ্যায় প্রৌঢ়, রাতে বৃদ্ধাবস্থা, পরদিন সকালে ফের শিশু। মৃত্যু কি তা এখানে কেউ জানে না। অমরত্বের উপত্যকার এই অতিকথা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ব্যেপে লেপচাদের মধ্যে প্রবাহিত।
এই অঞ্চল Dzo-nga (Kanchenjunga Demon) নামের এক দেবতা তথা দানবের বাসস্থান। ১৮৯৯ সালে ডগলাস ফ্রেশফিল্ড কাঞ্চনজঙ্ঘায় আরোহণের পথ অনুসন্ধান করতে গিয়ে লেখেন 'demon of inaccessibility' রা সেই পথ পাহারা দিচ্ছে। ১৯২৫ সালে এই ব্রিটিশ ভূতাত্ত্বিক দল এখানে দুপেয়ে উলঙ্গ এক ইয়েতি দেখে। ১৯৫১ সালে এরিক শিপটনের তোলা ইয়েতির তেরো ইঞ্চি বাই আঠারো ইঞ্চির পদচ্ছাপের সেই ছবি তো প্রবাদপ্রতিম। ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় অনেক কাঞ্চনজঙ্ঘা অভিযাত্রীই তাদের নানাবিধ অতীন্দ্রিয় অনুভূতির কথা জানিয়েছেন। বিজ্ঞানীরা অবশ্য বলেছেন সবই বিভ্রম, মস্তিস্কে অম্লজান কমে গেলে অমনটি হয়।
একফাঁকে টুক করে কোচবিহারের মহারানী সুনীতি দেবী ও তদীয় ভগিনী ময়ূরভঞ্জের মহারানী সুচারু দেবীর অর্থানুকূল্যে ১৯০৮ সালে শিবনাথ শাস্ত্রীর কন্যা হেমলতা সরকার প্রতিষ্ঠিত মহারানী গার্লস হাই স্কুল। সত্যজিৎ রায়ের প্রথম শিক্ষাক্ষেত্র, লীলা মজুমদার এখানে কিছুকাল (১৯৩০ – ১৯৩১) পড়িয়েছিলেন।
পারস্পরিক বিদায়পর্ব। দুটোয় রওয়ানা, গাড়িতে আমরা তিনজন, ঘুম থেকে কার্শিয়ং মেঘ শুধু মেঘ, রাস্তা ধোঁয়াটে, গাড়ির জানালা দিয়ে ঢুকে আসছে মেঘবালিকারা। কার্শিয়ং-এর কিছু আগে Goethals Siding; যাওয়ার পথে দেখা হয়নি। সেখানে ক্ষণিক বিরতি।

কার্শিয়ং। স্কুল ছুটি হয়েছে। গাড়ি কার্শিয়ঙের পর অন্য পথ ধরল - রোহিণী পথ তথা সুভাষ ঘিসিং মার্গ। পাকদণ্ডী পথ বেয়ে নিউ জলপাইগুড়ি জংশন নামলাম সাড়ে পাঁচটায়। আমার ফেরার টিকিট রাত সাড়ে আটটায় নিউ জলপাইগুড়ি জংশন থেকে ১২৩৭৮ নিউ আলিপুরদুয়ার শিয়ালদহ পদাতিক এক্সপ্রেসে – এবারেও আমার সংরক্ষণ বাতানুকূল প্রথম শ্রেণিতে, অর্থাৎ শেষের দিক থেকে দ্বিতীয় কামরায়। এই রেলগাড়িটির বিরতি কিঞ্চিৎ বেশি। চিরচেনা পথে শিয়ালদহ পরদিন সকাল পৌনে সাতটায়।

কৃতজ্ঞতা -
1. Indian Railways Fan Club
2. Rail Enthusiasts Society
3. North East Frontier Railway
4. Digital South Asia Library
5. Darjeeling Himalayan Railway
6. Darjeeling Himalayan Railway Society United Kingdom
7. Gulma Mohorgong Tea Estate
8. Wikipedia
9. Bombay Natural History Society
10. Cafe De Central, Kurseong Station
11. Ms. Gunjan Bharti. Sub Inspector RPF and her team for Siliguri Junction Event
12. Col. SK Choudhary - Former Divisional Railway Manager of Katihar Division
13. Mr. K. Surendra Kumar - Present Divisional Railway Manager of Katihar
14. Mr. Sanjay Chilwarwar - Additional Divisional Railway Manager of New Jalpaiguri Junction
15. Shri Arvind Kumar Mishra. Former Director of the Darjeeling Himalayan Railways
16. Mr. Manish Kumar - Senior Divisional Mechanical Engineer of Siliguri Junction Diesel Loco Shed
17. Mr. Arnav Sinha - Divisional Mechanical Engineer, New Jalpaiguri
18. Mr. Asif Ali - Area Manager of NJP
19. Mr. Shitanshu Biswas - Engineer at Tindharia Workshop
20. Mr. Chandan Kumar - Traffic Inspector of DHR, host for the entire trip, and guide for the event
21. Mr. Tapan Malakar - Station Superintendent at Sukna Railway Station
22. Mr. Chumpel Lepcha - Station Manager Sukna Railway Station
23. Mr. Shravan Kumar - Station Manager at Rongtong Railway Station
24. Mr. Mingma Sherpa - Station Manager at Kurseong Railway Station
25. Mr. Sagar Bishwakarma - Station Manager at Ghum Railway Station
26. Mr. Suman Pradhan - Station Manager at Darjeeling Railway Station
27. Steam Loco Shed, Darjeeling
28. Mr. Bibhas Acharjee. Siliguri NG Shed
29. আমাদের সারথি শ্রীমান মিঠুন

~ সমাপ্ত ~

হিসাবশাস্ত্রের স্নাতকোত্তর শ্রী তপন পাল West Bengal Audit & Accounts Service থেকে অবসর নিয়েছেন সম্প্রতি। তাঁর উৎসাহের মূল ক্ষেত্র রেল - বিশেষত রেলের ইতিহাস ও রেলের অর্থনীতি। সে বিষয়ে লেখালেখি সবই ইংরাজিতে। পাশাপাশি সাপ নিয়েও তাঁর উৎসাহ ও চর্চা। বোম্বে ন্যাচারাল হিস্ট্রি সোসাইটি এবং ইন্ডিয়ান রেলওয়ে ফ্যান ক্লাবের সদস্য শ্রী পালের বাংলায় ভ্রমণকাহিনি লেখালেখির প্রেরণা 'আমাদের ছুটি'। স্বল্পদূরত্বের দিনান্তভ্রমণ শ্রী পালের শখ; কারণ 'একলা লোককে হোটেল ঘর দেয় না।'

 

HTML Comment Box is loading comments...

To view this site correctly, please click here to download the Bangla Font and copy it to your c:\windows\Fonts directory.

For any queries/complaints, please contact admin@amaderchhuti.com
Best viewed in FF or IE at a resolution of 1024x768 or higher