বেড়িয়ে এসে আপনার অভিজ্ঞতাগুলো যেমনভাবে শেয়ার করতে চান কাছের মানুষদের সাথে - ঠিক তেমনি করেই সেই কথাগুলো ছোট্ট করে লিখে পাঠিয়ে দিন ছুটির আড্ডায়। ছয় থেকে ছেষট্টি আমরা সবাই কিন্তু এই ছুটির আড্ডার বন্ধু। লেখা ডাকে বা নির্দিষ্ট ফর্মে মেল করে পাঠালেই চলবে। লেখা পাঠাতে কোনরকম অসুবিধা হলে ই-মেল করুন - amaderchhuti@gmail.com
কলকাতার কাছেই
অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়
শীতের সকাল। বর্ধমান-হাওড়া লোকালে উঠে পড়েছি। গন্তব্য মেমারীর কাছে দেবীপুর। দেবীপুর রেলস্টেশন থেকে বাসে দেবীপুর গ্রামের শিবতলা স্টপেজে পৌঁছতে সময় লাগল মিনিট কুড়ি। এখান থেকে আমার গন্তব্য লক্ষ্মী-জনার্দন মন্দির হাঁটাপথে পাঁচমিনিট। এই মন্দিরের টেরাকোটার কাজ দেখতে আর ছবি তুলতেই আমার আসা।
দেবীপুর গ্রামে আনুমানিক ৪০-৫০ ফুট উঁচু অতি সুন্দর রেখ দেউল রয়েছে। মন্দির অভ্যন্তরে পূজিত হচ্ছেন লক্ষ্মী-জনার্দন। টেরাকোটা মণ্ডিত দেউলটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন গ্রামের জমিদার নরোত্তম সিংহ। প্রতিষ্ঠাকাল ১৩ আষাঢ় ১২৫১ সাল। শোনা যায় মন্দির প্রতিষ্ঠার সময় টেরাকোটার অলংকরণগুলি তৈরি করার জন্য গঙ্গানদীর মাটি এবং জল ব্যবহার করা হয়েছিল। মন্দির চত্বর ঘিরে ভগ্নপ্রায় ঘরের সারি। সেইসময় পুজোর জোগান ঘর হিসেবে এগুলির ব্যবহার হত।
বেশ উঁচু বেদীর ওপর মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত। মন্দিরটির সামনে এবং দুপাশের কিছু অংশে সুন্দর টেরাকোটার কাজ রয়েছে - ফুলপাতা, বিষ্ণুর অবতার, সমাজচিত্র, কৃষ্ণকথা, হিন্দু দেবদেবী, রামায়ণ, অর্জুনের লক্ষ্যভেদ আরও কত কী। জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভেঙ্গে গেছে একান্নবর্তী সিংহ পরিবারও। পূর্বের আর্থিক সঙ্গতিও আর নেই। তার প্রভাব পড়েছে মন্দিরটিতেও। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভেঙ্গে পড়েছে মূল প্রবেশদ্বারও।
জঙ্গলাকীর্ণ সেই প্রাচীন মন্দিরে দাঁড়িয়ে বাংলার অপূর্ব সুন্দর টেরাকোটা শিল্পের এই ভগ্ন, জীর্ণ দশা দেখে মনটা খারাপ হয়ে যাচ্ছিল।
প্রাণীবিদ্যার অধ্যাপক অপূর্ব-র নেশা বেড়ানো আর ছবি তোলা। বাংলার গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে থাকা চোখের আড়ালে চলে যাওয়া টেরাকোটার মন্দিরশিল্পকে ক্যামেরার দৃষ্টিতে পুনরুদ্ধার করাই তাঁর ভালোলাগা। পাশাপাশি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ভ্রমণ ও অন্যান্য লেখালেখি।
ছুটির আড্ডার অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন।