ঝটিকা সফরে সিঙ্গাপুর
মহম্মদ রাশেদুজ্জামান
~ তথ্য- সিঙ্গাপুর || সিঙ্গাপুরের আরো ছবি - মহম্মদ রাশেদুজ্জামান ~
এয়ারপোর্ট থেকে আন্ডারগ্রাউন্ড (এম আর টি) ট্রেনে আমি আর পিয়াস লিটল ইন্ডিয়া চলে এলাম। হোটেলে ব্যাগপত্র রেখে ফ্রেশ হয়ে ছুটলাম সেনটোসা আইল্যান্ডের দিকে। শুরু হলো আমাদের দুই বন্ধুর সিঙ্গাপুর ঝটিকা সফর।
মেরিনা বে সিঙ্গাপুরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। একে সিঙ্গাপুরের হার্টও বলা যায়। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এখানে ঘুরতে আসেন। নদীর একপাশে আধুনিক স্থাপত্যকলার অন্যতম নিদর্শন, বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল হোটেল মেরিনা বে স্যান্ড, কিছুটা দূরে আছে সিঙ্গাপুর ফ্লায়ার। সিঙ্গাপুরের জাতীয় প্রতীক মারলায়ন এবং থিয়েটারও এইখানেই।
নদীর চারপাশে সব বিখ্যাত স্হাপত্য ছাড়াও সারিসারি আকাশছোঁয়া ভবন ও বিশ্বের নামিদামী হোটেলগুলো জায়গাটার সৌন্দর্যে অন্যমাত্রা এনেছে। জনপ্রতি ৩০ সিঙ্গাপুর ডলার দিয়ে নৌকায় প্রায় দেড় ঘন্টা ঘুরলাম। রিভারসাইডের সারিসারি আলো ঝলমলে রেস্তোঁরা আর নানা রঙের, নানা বর্ণের মানুষজন দেখতে দেখতে কখন সময় কেটে গেছে বুঝতেই পারিনি।একমুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিল যেন ইটালির ভেনিস শহরে চলে এসেছি।এখানে রাত আরও মোহময়ী। মেরিনা বে স্যান্ড হোটেলের অতিপ্রাকৃতিক লেজার শো আর ব্যাকগ্রাউন্ড সুরের মূর্ছনা এক অপার্থিব জগতে নিয়ে যায়।
এখানের আরেক আকর্ষণ পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল ক্যাসিনোটি।স্কাই পার্ক নামে পরিচিত এই ভবনের নির্মাতা লাস ভেগাস স্যান্ডস। থাকার জন্য কক্ষ রয়েছে ২৫৬১টি। রয়েছে ১,২০,০০০ বর্গমিটারের কনভেনশন সেন্টার,৭৪,০০০ বর্গমিটারের মারিনা বে স্যান্ডস মল, একটি জাদুঘর, দুটি বড় আকারের সিনেপ্লেক্স, বিখ্যাত শেফ দ্বারা পরিচালিত ৭টি খাবারের রেস্তোরাঁ, দুটি ভাসমান ক্রিস্টাল প্যাভিলিয়ন এবং ৫০০টি টেবিল ও ১৬০০ স্লট মেশিন বিশিষ্ট পৃথিবীর বৃহত্তম ক্যাসিনো। এই ভবনের ওপরে রয়েছে ৩৯০০ জন লোক ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৪০ মিটার দৈর্ঘ্যের স্কাই পার্ক এবং ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ইনফিনিটি সুইমিং পুল।
সিঙ্গাপুর ভ্রমণের সবচেয়ে রকিং আর থ্রিলিং পার্ট ছিলো ইউনিভারসাল স্টুডিও মুভি থিম পার্ক ভ্রমণ। এটা এখনো পর্যন্ত আমার জীবনের সেরা অভিজ্ঞতার একটা। বিস্ময়ে হতবাক হয়েছি দেখে,একটা সাধারণ থিম পার্ককে কতটা ক্রিয়েটিভ ভাবে সাজানো যায়! এখানে ঢুকতে জনপ্রতি ৭৪ সিঙ্গাপুর ডলার লাগে। পার্কের ভেতরে ঢুকেই আঁতকে উঠেছিলাম খোদ "মেরিলিন মনরো"-র এর ভূত দেখে। তারপর সামলে নিয়ে ওনার সাথে ছবিও তুলে ফেললাম। একটু সামনে গিয়ে দেখি বিশাল জাহাজ টাই্টানিক। আরও একটু এগিয়ে মাদাগাস্কায় গিয়ে দেখলাম ছোট একটা প্লেন ক্র্যাশ করে গাছের সাথে আটকে আছে আর পাইলটের মরা দেহটা ঝুলে থাকতে থাকতে কঙ্কাল হয়ে গেছে। সেখান থেকে ‘ফার ফার অ্যাওয়ে’-তে গিয়ে দেখা হল মিস্টার আর মিসেস শ্রেক-এর সঙ্গে। তারা দিব্যি মানুষজনের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারপর বিখ্যাত ডিজনিল্যান্ড ক্যাসেলের হলে শ্রেক ফোর ডি মুভি দেখলাম। এখানে রয়েছে লস্ট ওয়ার্ল্ড-এর বিখ্যাত মুভি ওয়াটার ওয়ার্ল্ড এর স্টেজ। সেখানে তিন ভাঁড় কিছু সময় সবার গায়ে পানি ছিটিয়ে বেশ তামাশা করলো। তখন বুঝলাম ফোর ডি হলের সামনে কেন তিন ডলারের রেইন কোট বিক্রি করছিলো। খানিকটা পানির ঝাপটা আমাদের গায়েও এসে লাগলো। তারপর শুরু হলো মেইন শো। নায়ক ,নায়িকা, ভিলেন সমৃদ্ধ টানটান উত্তেজনাপূর্ণ একটা নিঁখুত অ্যাকশন মুভি দেখে আশ্চর্যান্বিত হয়ে গেলাম।
জুরাসিক পার্কেও দেখি তিন ডলারে রেইন কোট বিক্রি হচ্ছে। আবার পানিপুনি নাকি? এমনিতে ওয়াটার ওয়ার্ল্ড শো দেখে মাথা ভিজে! আবার কি হয় না হয় ভেবে আর রিস্ক নিলাম না, কিনলাম একটা রেইন কোট। আমার অবুঝ বন্ধুটি কিনলো না। শেষে তাকে পাঁচ ডলার দিয়ে মেশিনে দাঁড়িয়ে কাপড় শুকোতে হয়েছিলো। জুরাসিক পার্কে জঙ্গলের মধ্যে একটা তীব্র স্রোতধারার সরু নদীর স্রোতের সাথে এক প্রকার যুদ্ধ করতে করতে আপনাকে এগুতে হবে। এসময় জঙ্গল থেকে আচমকা দৈত্যাকার অনেকগুলা ডাইনোসর যদি আপনাকে খাওয়ার জন্য ছুটে আসে তাহলে কি আত্মা খাঁচায় থাকবে?
‘দ্য রিভেঞ্জ অফ মামি’ নামে একটা ভয়াবহ রাইড আছে।যেটাতে দূর্বল হার্টের কেউ চড়লে অ্যাক্সিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা একশো শতাংশ! না বুঝে ওই রাইডে চড়ে চোখে তারা দেখতে দেখতে বের হয়ে দেখি,মমি সিনেমার হিরো "ব্যান্ডন ফ্রেজারের" ভুত হেব্বি ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওর সাথে ছবি তুলতে গিয়ে দেখি বিশাল লাইন তাই আর ছবি তোলা হলো না।
আমরা ইউনিভারসাল স্টুডিওতে ঢুকেছিলাম বেলা ১১টার সময় আর এখন বাজে প্রায় ৪টে।এতটা সময় কীভাবে গেল বুঝতেই পারি নি। কিন্তু এখন পেট কথা বলা শুরু করেছে।পিয়াসের টায়ার্ড ভাবসাব দেখেও না দেখার ভান করলাম। ম্যাপে দেখলাম আর একটা এরিয়া বাকি আছে। সেটা হলো সাই ফাই সিটি। নামেই বুঝা যায় এ পর্যন্ত যা যা দেখলাম তারচেয়ে অনেক বেশি চমক ওখানে হয়তো অপেক্ষা করছে। তাই আমার জোরাজুরিতে বন্ধু নিমরাজি হলো। অবশ্য কিছুসময়ের জন্য স্নাক্স, জুস আর বিড়ি বিরতি দিতে হলো।
সাই ফাই সিটিতে গিয়ে দেখি জটিল সব ঘোরপ্যাঁচ মারা ট্র্যাক দিয়ে দুটা রোলার কোস্টার অবিশ্বাস্য গতিতে ছুটছে। সাথে কোস্টারের যাত্রীদের প্রবল চিৎকার। সেটা ভয়ে না কি আনন্দে বোঝা মুশকিল! আমি আর পিয়াস রোলার কোস্টারে উঠলাম। আমাদের চশমা,ক্যামেরা, পিয়াসের ঘড়ি সব কাউন্টারে নিয়ে নিলো।আমি এটাতে উঠে এক মুহূর্তের জন্য মৃত্যুর স্বাদ পেয়েছিলাম। যা বর্ণনার অতীত। সেখান থেকে গেলাম ট্রান্সফরমার রাইডে। ওটা আমার কাছে সবচেয়ে সেরা মনে হয়েছে। একটা অবিশ্বাস্য রকম উত্তেজনাপূর্ণ রাইড ছিলো। মেগাট্রন আর অপটিমাস প্রাইডের তুমুল যুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বশরীরে আপনাকে যেতে হবে। মেগাট্রন আপনাকে বারবার মৃত্যুর মুখে ফেলবে কিন্তু অপটিমাস প্রাইড মুহূর্তের মধ্যে আপনাকে রক্ষা করবে। কারণ পৃথিবীকে বাঁচানোর জিনিসটা যে তখন আপনার হাতে। যেটা রাইডের শুরুতেই অপটিমাস প্রাইড আপনাকে দিয়ে দেয়।
সাই ফাই সিটিতে গিয়ে দেখি জটিল সব ঘোরপ্যাঁচ মারা ট্র্যাক দিয়ে দুটা রোলার কোস্টার অবিশ্বাস্য গতিতে ছুটছে। সাথে কোস্টারের যাত্রীদের প্রবল চিৎকার। সেটা ভয়ে না কি আনন্দে বোঝা মুশকিল! আমি আর পিয়াস রোলার কোস্টারে উঠলাম। আমাদের চশমা,ক্যামেরা, পিয়াসের ঘড়ি সব কাউন্টারে নিয়ে নিলো।আমি এটাতে উঠে এক মুহূর্তের জন্য মৃত্যুর স্বাদ পেয়েছিলাম। যা বর্ণনার অতীত। সেখান থেকে গেলাম ট্রান্সফরমার রাইডে। এটা আমার কাছে সবার সেরা মনে হয়েছে - অবিশ্বাস্য রকম উত্তেজনাপূর্ণ রাইড। মেগাট্রন আর অপটিমাস প্রাইডের তুমুল যুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বশরীরে আপনাকে যেতে হবে। মেগাট্রন আপনাকে বারবার মৃত্যুর মুখে ফেলবে কিন্তু অপটিমাস প্রাইড মুহূর্তের মধ্যে আপনাকে রক্ষা করবে। কারণ পৃথিবীকে বাঁচানোর জিনিসটা যে তখন আপনার হাতে। যেটা রাইডের শুরুতেই অপটিমাস প্রাইড আপনাকে দিয়ে দেয়।
ওখান থেকে বের হয়ে আমরা দুই বন্ধু একদম থ' হয়ে গেছি। কেউ কোন কথা বলছিলাম না। আস্তে আস্তে হাঁটা দিলাম নিউয়ার্ক শহরের দিকে। আর একটা বিখ্যাত ভূত দেখলাম, তার নামটা অবশ্য জানি না। একটা পুরো দিনের শেষে ইউনিভারসাল স্টুডিও থেকে বের হলাম।
সারাদিন ঘুরেফিরে শেষমেষ দুই বন্ধু ৭৫ সিঙ্গাপুর ডলার বা মাথাপ্রতি ২৫০০ টাকার একটা অতি লাক্সারি বাসে ক্লান্ত শরীরে ঘুমাতে ঘুমাতে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।
~ তথ্য- সিঙ্গাপুর || সিঙ্গাপুরের আরো ছবি - মহম্মদ রাশেদুজ্জামান ~
পেশায় ব্যবসায়ী রাশেদুজ্জামানের ইচ্ছে কর্মজগতের শত ব্যস্ততার ফাঁকে সময় পেলেই পৃথিবীর পথেপথে ঘুরে বেড়াবার। স্বপ্ন দেখেন দুনিয়ার ব্যস্ত থেকে ব্যস্ততম আলো ঝলমলে নগরীগুলো দুচোখ ভরে দেখে নেওয়ার।