ঘনাদার শ্বশুরবাড়িযাত্রা – অথঃ কোচবিহারকথা

রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য

কোচবিহারের তথ্য

ট্রেন থেকেই শুরু করি। শিয়ালদা থেকে উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস সন্ধ্যে ৭.৩৫ এ ছাড়বে। কোচবিহার যাব। কোচবিহারের সঙ্গে আমার দীর্ঘ চল্লিশ বছরের সম্পর্ক। সৌজন্য - বিবাহ। মনটা খুব ভালো নেই। গচ্চা গেছে অনেক পয়সা। কী সব উপহার কিনেছেন আমার উনি। বললেন - আরে আমরা তো সিনিয়ার সিটিজেন। ভাড়া তো কম লাগছে যেতে। বুঝলাম, সান্ত্বনা দিচ্ছেন।
যথারীতি শেয়ালদা পৌঁছলাম। জানি প্ল্যাটফর্ম ৯এ। শেষমুহুর্তে মাইকে বলল প্ল্যাটফর্ম ৮। যৌবনের সেই 'সার্ভিস উইথ এ স্মাইলের' কথা মনে পড়ল। "সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলিতেছে"। 'রং বদলায় না'।
হুড়মুড় করে প্ল্যাটফর্ম ৮। কোচ নং ৯। প্ল্যাটফর্ম না হোক, কোচ তো হল। এবার দেখলাম, যেখানে দাঁড়িয়েছিলাম, সেখানেই কোচটা দাঁড়াল। কোচবিহারে বিহার করতে যাচ্ছি, কোচ তো সামনে দাঁড়াবেই। কি বলুন? তা, ধীরে ধীরে সিটে গিয়ে বসে, জম্পেশ করে একটা সিগারেট ধরালাম।
হাঁ হাঁ করে উঠলেন সামনের ভদ্রলোক - "খাবেন না, খাবেন না!"
"কেন?"
"দেখছেন না! এই যে, আমার প্যাকেট। আমি বলে খাচ্ছিনা, আর আপনি খাচ্ছেন?"
"তাতে,আপনার কি? আমি তো আপনার কাছে সিগারেট চাই নি।"
"বুঝবেন ঠ্যালা, যখন পুলিশ ধরবে!!!"
"কেন,পুলিশ ধরবে কেন, আমি কি চুরি করেছি নাকি,আপনার সিগারেট?"
"কোন বেকুবের পাল্লায় পড়লাম রে বাবা!!! কোত্থেকে আসচেন? দেখে তো হটেনটট মনে হচ্ছে না"
"দেখুন! গালাগালি করবেন না! বেকুবটা বুঝি, হটেনটট মানে কী?"
"যা ইচ্ছে বুঝুন, শুধু সিগারেটটা খাবেন না"
"আরে মশায়, আপনি কি আমার গার্জেন নাকি? তিনি তো সাথেই আছেন,কিছু তো বলছেন না!! আপনি কে মশাই?"
এবার হাসতে হাসতে পাশের কিউবিকল থেকে ভদ্রলোকের মেয়ে ( পরে জেনেছি) এসে সামনে এসে বলল – "জেঠু, বহুদিন হলো রেলের প্ল্যাটফর্ম আর কামরায় সিগারেট খাওয়া বন্ধ। পুলিশ দেখতে পেলে হয় ফাইন না হয় জেলে পুরবে আপনাকে। জানেন না?
অনেকদিন ট্রেনে চড়েন নি, না?"
ধাঁ আ আ-- করে মনে পড়ল। চট করে সিগারেটটা নিভিয়ে ফেলে, আমার পক্ষে যতটা সম্ভব মোলায়েম মুখে বললাম – "আগে বলবেন তো!!! খালি হেঁয়ালি করে যাচ্ছিলেন!!!"
ভদ্রলোক স্বভাবতই গম্ভীর।
বললাম – "আমার চেহারা দেখেছেন?" (যাঁরা আমায় "লাইভ" দেখেছেন,তাঁরা জানেন,আমি গোরিলাদের সাক্ষাৎ বংশধর)
"কেন? মারবেন নাকি?"
"ছিঃ! ছিঃ! কি যে বলেন!!! আরে না মশাই। আমার যেমন দেহে ফ্যাট, সেরকম ব্রেনেও ফ্যাট! তাই ব্রেনের হার্ড ডিস্কের "ফাইল অ্যালোকেশন টেবল"(FAT) কাজ করে না আমার। ফলে, এই ধূমপায়ীদের বিরূদ্ধে ফরমানটা ভুলে মেরে দিয়েছি।"
এবার মেয়ে হেসে বলল –"NTFS বা New Type File System, ব্রেনে লাগিয়ে নিন। অনেক তাড়াতাড়ি কাজ করবে।"
আমি বললাম – "বুঝলে হে, আমার সবই Unmovable Files। কিস্সু কাজ হবে না!"
কন্যার কথার তোড়ে এবারে পিতার আশ্চর্য হবার পালা – "কী ভাষায় কথা বলছেন আপনারা?"
আমি – "হটেনটটদের ভাষা!"
অবশেষে রাতের খাওয়া। রুটি একদম খেতে পারি না, সেই শুকনো রুটি! আর আলুর দম! উনি বললেন - খরচা বাঁচাচ্ছেন!!! ( আলু ১০ টাকায় নেমে এসেছে) যাই হোক, খেয়ে, টয়লেটে গিয়ে সিগারেটে সুখটান দিয়ে;শুয়ে পড়লাম।
বোধহয় মালদা হবে। রাত নিঝুম। আমাকে কে যেন দূর থেকে ডাকছে - "ও মশাই,ও মশাই.......।" নিশির ডাক হতে পারে ভেবে ঘাপটি মেরে অনেকক্ষণ পড়ে থাকলাম। এবারে জোর ঠ্যালা খেয়ে হুড়মুড় করে উঠতে হলো। উনি দেখি মাথা নীচু করে বসে। ওই ভদ্রলোক, সঙ্গে আরও কিছু লোক - "মশাই, আপনার নাকের সাউণ্ড বক্সের 'বাস'টা কমাবেন?"
"হটেনটটদের ভাষা জানলেন কি করে?"
"রাখুন তো, কোচে কেউ ঘুমতে পারছে না"
"কেন?"
"অত জবাব দেবনা! আর ঘুমোবেন না। এবার আমরা ঘুমোই"
"এ তো তুঘলকি ফরমান"!
"পরিবর্তনের জমানা! বুয়েছেন??? এই এক প্যাকেট সিগারেট দিলাম, টয়লেটে মাঝে মাঝে গিয়ে খেয়ে আসবেন, কিন্তু খবরদার!!!!! ঘুমোবেন না!!!! আপনি হৃদয়হীন হতে পারেন, কিন্তু আমরা নই। তাই সিগারেট দিলাম!"
"নাকের আমি, নাকের তুমি, নাক দিয়ে যায় চেনা" - একজন ফুট কাটলেন।
আরও একজন - "ঘুম পেয়েছে? বাড়ি যান! ট্রেনে কেন স্যার!"
বাউনের ছেলে - সব সইতে পারি, এমনকি চর্মপাদুকার প্রহার পর্যন্ত, কিন্তু অপমান??? কদাপি নয়! রেগে গিয়ে টয়লেটের সামনে মোবাইল চার্জ করতে লাগলাম!
সক্কাল বেলায় নিউ জলপাইগুড়ি ষ্টেশনে প্রায় অর্ধেক কোচ খালি! যাবার সময় ওই মেয়েটি বলে গেল — "বোফোর্স কামান দেখি নি। আওয়াজটা শুনে গেলাম।"
গোটা উত্তরবঙ্গে, দোলের দিন আবীর খেলা হয়। আর তার পরের দিন রং খেলা। কোচবিহারও তার ব্যতিক্রম নয়। ফলে যে দিন কোচবিহার পৌঁছলাম,সে দিন কোলকাতায় দোল খেলা হলেও, কোচবিহার নিরাপদ। কোচবিহার নামে ষ্টেশন থাকলেও, নিউ কোচবিহার ষ্টেশনে নামতে হয়। ওখানেই উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসের যাত্রা শেষ। নিউ কোচবিহার ষ্টেশন থেকে কোচবিহার শহর প্রায় ৯ কি.মি.। রিক্সা, বাস আর প্রচুর পরিমাণ ভাড়া গাড়ি আপনাকে শহরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত।
আস্তে আস্তে মালপত্র নিয়ে, বড় শালাবাবুর ( ষ্টেশনে এসেছিল রিসিভ করতে, নাম - রাহুল) সঙ্গে ওভারব্রিজ পার হয়ে, আমার ওনার সঙ্গে যখন বাইরে এলাম, তখন প্রায় সব গাড়ি অদৃশ্য। বসার উপযুক্ত করে নেওয়া,একটা টাটা "এস" গাড়িকে ডাকল রাহুল।
ড্রাইভার – "জামবাবু না? এই গাড়িতে আসচেন? বসেন, বসেন। দিদিও বসেন। রাহুলদা, আমারে বসায়ে ইষ্টিশনে গেল, আপনাদের আনতে। মজবুত গাড়ি। ভয় নাই।" বলে, সিটটায় বাড়ি দিতেই, একটা মেঘ উড়ে এল। ধুলো না নস্যি, বুঝলাম না! হাঁচতে, হাঁচতে প্রাণ অতিষ্ঠ।
ড্রাইভার – "তা অনেকদিন পরে আসতিছেন, জামবাবু। কোচবিহারের অবস্থা একটু পালটিসে। আপনিও মোটা হই গেল।" মেঘটা আস্তে আস্তে কাটছে! হাঁচিটাও কমছে!
ড্রাইভার এবার তুরীয় মেজাজে।
বলল – "জামবাবু, একটা নতুন টিভি কিনসি। কালারিং। বউ পোস্কার করতে যাতিছিল, আমি মানা করসি। করসে কি, কাপড়ে সোডার জল দিয়া ঘসতে যাতিছিল, ওই ইস্ক্রিনটা। মাথ্থা খারাপ! সোডা দিয়া ঘষলে যদি রং উইঠ্যা গিয়া সাদা কালো হইয়া যায়! সোডা দিয়া আজকাল খুব রং উঠতিসে। কি দিয়া পোস্কার করব, বলি ফ্যালান তো!"
গম্ভীর হয়ে বললাম, "ঝামেলা মিটে যাক, তোর বাড়ি গিয়ে সব বলে দেব।"
কোচবিহার শহরের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, সব রাস্তা সোজা। সুপারি গাছ প্রচুর। আর প্রায় প্রত্যেক বাড়ির সামনে বাগান। রাজার আমলে নিয়ম ছিল, প্রত্যেক বাড়ির সামনে ফুলের বাগান রাখা বাধ্যতা মূলক ।
জীবনযাত্রা এখানে বেশ ঢিলে। সেই ইঁদুর দৌড় নেই। লোকে আয়েস করে বাজার হাট করে। সকাল আটটার আগে সেরকম বাজার হাট বসে না।
স্থানীয় আপিস বাবুরা বাজার করে, জল খাবার খেয়ে দপ্তরে যান। তারপর দুপুরের টিফিন হলে আবার বাড়ি এসে ভাত খান।
আগে ভীষণ বৃষ্টি হতো বলে, সব বাড়ির ওপরে টিনের ছাদ। এখন অবশ্য বহুতল বাড়ি উঠছে । লোকজন বেশ দার্শনিক টাইপের। ধরা যাক, আপনি কোনো দোকানে গেলেন কিছু কিনতে। ভিড় না থাকলেও আপনাকে বেশ খানিকটা দাঁড়াতে হবে। দোকানদার হয়তো টিপিন করছেন, বা আপনাকে জরীপ করবে। আপনাকে নতুন মনে হলে কিছু খেজুর করবেই। এম.আর.পি. যা লেখা থাকবে সেটাই দিতে হবে বা একটু বেশি দিতে হবে। কারণ হয়তো সেটা এখন আউট অফ ষ্টক। এখন কিছুটা পাল্টেছে তবে এম.আর.পি.র নীচে পাবেন না।
আবার অন্য ঝামেলাও আছে। ধরুন আপনার ক্যামেরার এস.ডি. কার্ড ফুল। এবারে সেটাকে সিডিতে তুলে কার্ড খালি করতে চান। যান দোকানে , একটা ব্ল্যাঙ্ক ডিভিডির দাম ৫০ টাকা। আপনি বললেন :- "সেকি ! কলকাতায় ম্যাক্স টু ম্যাক্স দাম ১৫, এখানে ৫০ ?"
কান চুলকোতে চুলকোতে দোকনি বলবে :- "ওসব সস্তা মাল আমরা রাখি না। আর আনার পয়সাটা কে দেবে শুনি ?"
ও হ্যাঁ ! বলতে ভুলে গেছি। আমার নয় শ্বশুরবাড়ি, আপনাদের তো হোটেল খুঁজতে হবে। ইলোরা, যুবরাজ, রয়্যাল প্যালেস, কোচবিহার হোটেল ছাড়াও আরও অনেক হোটেল পাবেন।
এছাড়াও আছে বেনফিসের গেষ্ট হাউস। সরকারি ব্যাপার - এসি হয়তো কাজ করছে না । এক্ষুনি ঠিক করছি বলে, আসবে এক / দেড় ঘন্টা পর। খাবার পাবেন, তবে মুঠোফোন থেকে অর্ডার দিলে পাবেন অনেক পরে। তবে জায়গাটা নিরাপদ। অবশ্য কোচবিহার শহরটাই বেশ নিরাপদ ।
কোচবিহার শহর হলো জেলা সদর। বয়ে গেছে তিস্তা, তোরসা, রায়ডাক, জলঢাকা, সংকোশ, গদাধর, কালজানি নদী।
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জায়গাগুলো হলো হলদিবাড়ি, হেমকুমারী, কুঠি, সিতাই, শীতলকুচি, মধুসূদন, জামালদহ, অনুকূল ঠাকুরের আশ্রম, চ্যাংরাবান্ধা, মেখলিগঞ্জ, দিনহাটা, বলরামপুর।
চলুন একটা রিক্সা নিই । শহরটাকে ঘুরে দেখি । প্রথমেই যাই মদন মোহন মন্দির ।
চিরন্তন চারচালা শৈলীর মন্দির। সোনা আর অষ্টধাতুর তৈরি আসল মদন মোহন বিগ্রহ চুরি গেছে প্রায় ২০ বছর আগে। মন্দিরের সামনে বৈরাগী দীঘি। একসময়ে এই জায়গায় বৈরাগীদের বসতি ছিল। তাই এই নাম। মন্দিরের চাতালে উঠে কিন্তু ছবি তোলা নিষেধ। ১৮৮৯ খ্রীষ্টাব্দের ৮ই জুলাই মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণ এর ভিত্তি স্থাপন করেন।
এই মন্দিরের সংস্কারের সময় যে শিলালিপিটা আবিস্কৃত হয়েছে, তার আয়তন ৭৭.৫ সেমি X ১৪ সেমি । লিপি বাংলা হলেও, ভাষা সংস্কৃত ।
" বিধু বিধু সংহিত গজ সম্মিত শাক মিথুনগত মিত্রে
নরপনরেন্দ্রাত্মজনি নৃপেন্দ্রাহ্বয় নৃপতিঃ শরনেত্রে।
দিন ইহ দৈবত গৃহ ভূ-স্থাপিত মকরোদাত্ম করেণ
বাস্তুকৃতোচিত রৌপ্য বিনির্ম্মিত শস্ত্র বিশেষ ধরেণ।।"
( ঋণ :- বালুরঘাট থেকে প্রকাশিত " মধুপর্ণী" পত্রিকার কোচবিহার সংখ্যা, ১৩৯৬ বাংলা সন )
অস্যার্থ :- ১১৮১, অঙ্কের বামাবর্ত অনুসারে ( বাঁ দিক থেকে ) ১৮১১ শকাব্দ +৭৮ = ১৮৮৯ খ্রীষ্টাব্দ। ২৫ (শরনেত্রে ) শে আষাঢ় ( মিথুন গত মিত্রে ) নৃপতি নরেন্দ্র নারায়ণের পুত্র নৃপতি নৃপেন্দ্র নারায়ণ রৌপ্য নির্মিত শস্ত্রের সাহায্যে স্বহস্তে দেব গৃহের ভিত্তি স্থাপন করলেন ।
অবিশাস্য দ্রুতগতিতে কাজ শেষ হয়ে ১৮৯০ সালের ২১ শে মার্চ রাজমাতা নিশিময়ী আই ( অর্থ - মা) দেবতী এই মন্দির উদ্বোধন করেছিলেন ।
মন্দির দেখা হলো ? চলুন বেরিয়ে পড়ি এখান থেকে। রিক্সাকে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন ? ভালো করেছেন। ঘন্টা প্রতি ৭০/৮০ টাকা নেবে। আর তাহলে ঝামেলা নেই। না হলে যেখানে সেখানে রিক্সা পাওয়া খুব মুশকিল । অবশ্য শেষে তারা আরও ৮০ টাকা চাইতে পারে ভাড়ার ওপর, তবে ওটা ওদের নিজেদের জন্য নয়। মদন মোহনের ভোগে লাগাবে বলে নেয়। এরা খুব ভক্ত মানুষ, এটা মনে রাখবেন ।
হাসছেন বুঝি ? তা হাসুন। আমার সাদা মনে কাদা নেই।
সোজা চলুন সাগরদিঘির পাড়ে। বিশাল একটা দিঘি। সমুদ্রের মত দেখতে লাগে বলে সাগর দিঘি।
প্রথমেই বাঁ ধারে চোখে পড়বে, একটা প্যাটন ট্যাংক। বাংলাদেশ যুদ্ধের সময়, এটা দখল করে ভারতীয় সেনাবাহিনী। সাগরদীঘির পাড় ঘিরে রয়েছে, কোচবিহার শহরের প্রায় সমস্ত প্রশাসনিক ভবনগুলো। ১৯৭৪ সালে এক মাষ্টার মশাইকে বিএসএফরা বিনা কারণে গুলি করে মারলে এই ভবনগুলো পুড়িয়ে দেয় ক্ষুব্ধ জনতা। আবার নতুন রূপ নিয়েছে এই সব। সন্ধে হয়ে গেলে রবীন্দ্র সঙ্গীত বাজে। পাড়ে পাড়ে বসার জায়গা আছে। বিবাহিতরা বসে দুদণ্ড নতুন করে প্রেমালাপ করে নিতে পারেন।
এই দীঘির চারধারে কোচবিহারের সমস্ত বিবরণ দেওয়া আছে, ছোট করে তা লিখেছেন - ডঃ নৃপেন্দ্র নাথ পাল।
খিদে পেলে খাবার পাবেন অনেক রকম। তবে, আমার মতে ভেজিটেবল মোমো খান। অন্য খাবার খেলে, অ্যাসিড যদি না হয় তা হলে টাকা ফেরৎ। ( ওরাও দেবে না, আমার কথা বাদ দিন - গরীব আদমী ছে বাবু )
এই সাগরদীঘি নৃপেন্দ্রনারায়ণ তৈরি করেন বলে জানা যায়। যদিও এর কোনো তথ্য প্রমাণ দিতে পারবো না। মূলত খাবার জল এখান থেকে সরবরাহ করা হতো।
যেই করে থাকুন, কোচবিহারে এখনও দীঘির সংখ্যা প্রচুর। দুঃখের কথা, প্রোমোটাররা এইগুলো বুঁজিয়ে কিছু ফ্ল্যাট বাড়ি তুলছেন।
চলুন, " গ্যাঁজাবো" বলে একটা রেস্তোঁরাতে কিছু মুখে দেই । পেট ভরবে, স্বাদ মোটামুটি । খিদের মুখে মন্দ নয় ।
এবারে চলুন কোচবিহারের রাজপ্রাসাদ দেখি । সোয়াশো বছর আগে রোমের সেন্ট পিটার্স চার্চের আদলে গড়া এই রাজপ্রাসাদ তৈরি করেছিলেন রাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ সিংহ। এখানে হাতির মূর্তি-সংবলিত তোরণদ্বারের কারুকাজ কতই না অপূর্ব। প্রাসাদের প্রবেশ পথে রয়েছে ভুটানের রাজাকে যুদ্ধে হারানোর স্মারক - দুটি কামান। শীর্ষ গম্বুজের নীচে প্রাসাদের দরবার হলও কম আকর্ষণীয় নয়। রাজপ্রাসাদের সংগ্রহশালায় রয়েছে বিপুল ছবির সম্ভার আর প্রত্নসামগ্রী।
ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ কোচবিহার রাজপ্রাসাদের ভেতরে একটি মিউজিয়াম তৈরি করেছে। এই প্রদর্শশালা সমগ্র উত্তরবঙ্গের গর্ব। এখানে আছে প্রাচীন চিত্রলিপি, রাজপরিবারের ব্যবহৃত সামগ্রী, প্রাচীন মূর্তি, আসবাব, পোশাক-পরিচ্ছদ এবং পুজো-পার্বণের উপাদান। মিউজিয়ামে ঢুকেই দেখা যায় রাজপরিবারের মূল্যবান চিত্র। রানি সুনীতি দেবী, ইন্দিরা দেবী, কোচবিহাররাজ নরনারায়ণ, নৃপেন্দ্রনারায়ণ, জিতেন্দ্রনারায়ণ প্রমুখদের তৈলচিত্র সংরক্ষিত আছে। আর রয়েছে কোচবিহার রাজাদের শাসনাধীন এলাকার মানচিত্র, শিকারের চিত্র, কোচবিহারের মন্দির ও সৌধের চিত্র, ১৯০৯-এর রাজ্যসীমা, রাজ্যের বিভিন্ন প্রত্নসমৃদ্ধ অঞ্চলগুলির (গোসানিমারী, কামতাপুর) খননকার্যের ও প্রত্নবস্তুর আলোকচিত্র, বিলিয়ার্ড বোর্ড, আয়না, তালা-চাবি ইত্যাদি।
পোশাক-পরিচ্ছদ ও আসবাবের ক্ষেত্রে টোটো, রাভা, মেচ, রাজবংশী জনজাতি মানুষদের ব্যবহৃত পোশাক- পরিচ্ছদ, অলঙ্কার, সংগীত সরঞ্জাম বিশেষ উল্লেখ্য। এছাড়া বিষহরি,মালান,মনসা ইত্যাদির পুজোয় ব্যবহৃত উপকরণ — যেমন, চোব্দুঙ্গ (প্রদীপ), চেরাগবাতি, ত্রিশূল, লামা(প্রার্থনাচক্র),দেবদেবীর মুখোশ, অস্ত্র, শিকার সামগ্রী, জনজাতিদের মাছ ধরার সরঞ্জাম যেমন — টুমি, গেইতুং, তাপাই, পাললা এবং বাদ্যযন্ত্রের মধ্যে থুমপাচুত, গিতাং, মুখাবাঁশি, আড়বাঁশি, সানাই, দোতারা সুন্দর ভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে। পাল-সেন যুগ থেকে চতুর্দশ শতাব্দী পর্যন্ত দুশোরও বেশি বিভিন্ন মূর্তি রয়েছে। আছে নারায়ণী মুদ্রা, যা কোচবিহাররাজ নরনারায়ণ চালু করেছিলেন। রানি ভিক্টোরিয়ার দেওয়া সাতটি পদক সংরক্ষিত আছে। মাত্র ৫ টাকা প্রবেশমূল্যে রাজবাড়ির অভ্যন্তরের ইতিহাস, উত্তরের জনজাতি ও সংস্কৃতির হদিশ মিলবে। ক্লান্ত লাগলে রাজবাড়ির সামনে বিরাট জায়গায় একটু জিরিয়ে নেওয়া যাবে। তবে সংগ্রহশালায় মোবাইল ও ক্যামেরা নিষিদ্ধ। রাতে এই রাজপ্রাসাদে আলোর খেলা চলে ।
অনেকক্ষণ তো ঘুরলেন। এবারে চলুন হোটেলে ফিরি। আবার যদি পারি, পরের পর্বে আপনাদের কোচবিহার শহরের বাইরে নিয়ে যাব ।
ততক্ষণ – অলবিদা ।
[তথ্য ঋণ :- ইতিকথায় কোচবিহার ( ডঃ নৃপেন্দ্র নাথ পাল ), ইন্টারনেট, আনন্দবাজার পত্রিকা, আমার ব্যক্তিগত সংগ্রহ ]

কোচবিহারের তথ্য



দশ বছর হলো অবসর প্রাপ্ত ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধি রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য এখন গিন্নির ফাইফরমাস খাটেন আর দিনরাত বকুনি খান। বাংলা পত্রিকার আন্তর্জাল মহলে যিনি জনপ্রিয় ‘ঘনাদা’-র কলমে। সদ্যপ্রকাশিত হয়েছে তাঁর প্রথম গ্রন্থ ‘চাপড়ঘন্ট’।

 

 

SocialTwist Tell-a-Friend

To view this site correctly, please click here to download the Bangla Font and copy it to your c:\windows\Fonts directory.

For any queries/complaints, please contact admin@amaderchhuti.com
Best viewed in FF or IE at a resolution of 1024x768 or higher