প্রাথমিকভাবে জরুরি হল পাখিদের আচরণ পর্যবেক্ষণ করে তাদের সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হওয়া। এবিষয়ে ভালভাবে রপ্ত হলে পাখির চালচলন আগাম আন্দাজ করা সম্ভব হবে আর সুন্দর ছবি তোলার সম্ভাবনা-ও অনেক বাড়বে।
প্রত্যেক বন্য প্রাণীরই একটা “সার্কেল অফ ফিয়ার” থাকে। নিজের আশপাশে কতটা দূরত্ব অবধি কোন আগন্তুককে বিনা বাধায় আসতে দেওয়া যেতে পারে – প্রাণীটির চারপাশে সেই কাল্পনিক বৃত্তাকার এলাকাকে বলে “সার্কেল অফ ফিয়ার” বা “ভীতির বৃত্ত”। কোন বন্য প্রাণীর এই বৃত্তের মধ্যে ঢুকে পড়লে সে বিপক্ষের শক্তির মাত্রা আন্দাজ করে হয় পশ্চাদপসরণ করবে নতুবা আক্রমণ করবে। পাখিদের এই বৃত্তের পরিধির কাছাকাছি পৌঁছতে হবে। একেক ধরণের পাখির ক্ষেত্রে এটা একেকরকম হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে একটি রবিনের তিন মিটার কাছে পর্যন্ত যাওয়া যেতে পারে, তার থেকে কাছাকাছি গেলে তবেই সেটি উড়ে যাবে কিন্তু একটি কেস্ট্রেলের কাছে ৩০ মিটারের বেশি কাছাকাছি যাওয়া প্রায় অসম্ভব।
সরঞ্জাম - অধিকাংশ পাখিই খুব চঞ্চল আর লাজুক। তাই ভালো ছবি তোলা্র জন্য অত্যন্ত জরুরি সঠিক সরঞ্জাম। অন্তত ৩.৫ এফ পি এস ফাস্ট ড্রাইভ মোড এবং ৯ বা তার বেশি অটোফোকাস পয়েন্টযুক্ত অ্যাডভান্সড ফোকাসিং সিস্টেমওলা একটা ডিজিটাল এস এল আর ক্যামেরা খুবই উপযোগী। শার্প অ্যাকশন শট নিতে দরকার পড়বে এগুলো। প্রয়োজন ৩০০ মিমি বা আরও বেশি ফোকাল লেংথের একটা ফাস্ট লেন্স-ও। সামর্থ্য অনুযায়ী লেন্সের অ্যাপারচার যতটা বড় হয় -এফ/৫.৬, এফ/৪ বা সম্ভব হলে এফ/২.৮ অ্যাপারচারের লেন্স কিনতে পারলে ছবি আরো ঝকঝকে হবে।
আলো – ফোটোগ্রাফি বা ‘আলোকচিত্র’-এ আলোই মুখ্য উপাদান চিত্রটি ফুটিয়ে তুলতে। আলোকে ব্যবহার করতে হবে নিজের সুবিধা অনুযায়ী। যদি রৌদ্রোজ্জ্বল দিন হয় তাহলে কর্কশ ছায়াগুলিকে ব্যবহার করুন মুডি ও অ্যাটমস্ফেরিক ছবি তুলতে। অন্যথায় জোরালো আলোকে ব্যবহার করুন ব্যাক-লিট এফেক্ট পেতে। সঠিক “পজিশন” থেকে ছবি তুলতে পারলে পাখির চারপাশে সুন্দর একটা আলোর বলয় (‘রিম লাইট’) তৈরি হবে। উজ্জ্বল আলো হলে দ্রুত গতির “শাটার স্পিড” ব্যবহার করা সম্ভব এবং তার ফলে অ্যাকশন-ফ্রিজিং শট্স নেওয়াও যাবে। আলোর জন্য ক্যামেরায় ইভালুয়েটিভ মিটারিং ব্যবহার করাই সুবিধাজনক। পাখির ছবি তোলার শ্রেষ্ঠ সময় ভোরবেলা এবং শেষবিকেল। এই সময় আলোকপাত থাকে একেবারে যথাযথ – ‘ফোটোগ্রাফি’-র ভাষায় যাকে বলে ‘গোল্ডেন লাইট’। রঙগুলি তখন উষ্ণতর থাকে আর ছায়া হয় নরম। ফলস্বরূপ ছবিতে পাখির পালকের রঙ-রূপ ফুটে ওঠে একেবারে সঠিকভাবে।
ফোকাস – পাখিরা খুবই ছটফটে -তাই অনেক সময়ই ছবি তোলার পর দেখা যায় ঠিকমত ফোকাস হয়নি। এই জন্য ক্যামেরায় আগে থেকে অটো-সার্ভো (AI Servo) মোড অন করে রাখা উচিত যাতে ক্যামেরা নিজে থেকেই উড়ন্ত পাখিকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে ফোকাস করে যেতে পারে। পশ্চাদপটে গাছ-পাতা-ঝোপঝাড় ইত্যাদির জটলা বেশি না থাকলে সব কটা অটোফোকাস পয়েন্ট-ই অন করে দেওয়া যায়, যাতে ক্যামেরা তাদের ‘ট্র্যাক’ করতে পারে। ঝোপঝাড় বেশি থাকার কারণে ক্যামেরা ঠিকমত ফোকাস ‘ট্র্যাক’ করতে সময় নিচ্ছে মনে হলে সিঙ্গল অটো-ফোকাস পয়েন্ট ব্যবহার করতে হবে – সাধারণ ভাবে ঠিক মাঝের পয়েন্টটাই বেছে নিতে পারেন।
কম্পোজিশন – ছবি তোলার প্রাথমিক নিয়ম ‘রুল অফ থার্ড’ অনুযায়ী সাধারণভাবে ছবি দেখতে সবচেয়ে ভালো লাগে যখন পাখিটি ছবির একেবারে কেন্দ্রে না থেকে খানিক বাম দিকে বা ডানদিকে থাকে আর তার মুখ থাকে ছবির ফাঁকা জায়গার দিকে ফেরানো। এর একমাত্র ব্যতিক্রম হয় যখন ছবির বেশিরভাগ ফ্রেম জুড়ে পাখি একেবারে ক্যামেরার দিকে সোজাসুজি তাকিয়ে আছে। তখন তাকে ছবির কেন্দ্রে রেখে কম্পোজ করাই ভাল।
আরো কিছু টুকিটাকি - ঘনিষ্ঠ “পয়েন্ট অফ ভিউ” পাওয়ার জন্য ক্যামেরা রাখতে হবে পাখির চোখ বরাবর। নজর দিতে হবে ‘ব্যাকগ্রাউন্ড’ পরিষ্কার রাখার উদ্দেশে। ফ্রেমের মধ্যে দৃষ্টি আকর্ষণকারী অন্য কোন বস্তু যেমন সাদা ফুল ইত্যাদি এড়িয়ে যেতে হবে যাতে চূড়ান্ত ছবিতে দর্শকের মনোযোগ পাখির থেকে বিভ্রান্ত না হয়। গাঢ় রঙের পোশাক পরতে হবে এবং মুখ ও হাতে ঢাকা দিতে হবে যাতে পাখিরা ভয় পেয়ে উড়ে না যায়।