-->
সিডনি(Sydney) - নিউ সাউথ ওয়েলস-এর রাজধানী সিডনির প্রধান আকর্ষণ বন্দর, অপরূপ সৈকতগুলি এবং ব্লু-মাউন্টেন । সিডনি বলতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে সিডনি হারবার ব্রিজ (Sydney Harbour Bridge ) ও সিডনি অপেরা হাউস (Sydney Opera House) । শহরকে ঘিরে রয়েছে মনোরেল। সিডনির সেরা আকর্ষণ ৮১ কিলোমিটার পশ্চিমে ব্লু-মাউন্টেন জাতীয় উদ্যান (Blue Mountains National Park)। স্যান্ড স্টোন এবং লাইম স্টোনের এই পাহাড়টির উচ্চতা ২০০ মিটার। এখানে ইউরেনিয়াম জাতীয় খনিজ পদার্থ পাওয়া যায়। সাতশোর বেশি প্রজাতির ইউক্যালিপ্টাস আছে এখানে। ইউক্যালিপ্টাসের তেল যখন বাতাসে ভাসে তখন সূর্যের আলোয় নীল দেখায় -তাই এর নাম ব্লু-মাউন্টেন। এখানেই রয়েছে ইকো পয়েন্ট ও থ্রি সিস্টারস্ রক। আগে পাহাড়ের ওপর কয়লা খনি ছিল। এখনও সবই সাজানো রয়েছে -ছোট রেলপথ, তার ওপর কয়লাশুদ্ধ গাড়ি। অন্যান্য দ্রষ্টব্যের মধ্যে রয়েছে হাইড পার্ক, লুনা পার্ক, রয়েল বোটানিকাল গার্ডেন, কুইন ভিক্টোরিয়া বিল্ডিং, অস্ট্রেলিয়া মিউজিয়াম, সিডনি টাওয়ার, ডার্লিং হারবার, তারোংগা জু ইত্যাদি। হাতে সময় থাকলে ঘুরে আসা যায় অপরূপ সুন্দর বন্দি ও মানলি সৈকত।
ব্রিসবেন (Brisbane) - ব্রিসবেন অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় নদী বন্দর। নদীর নামেই শহরের নাম। কুইনসল্যান্ডের (Queensland) রাজধানী শহরটি থেকে ম্যাগনেসাইটের মত মূল্যবান খনিজ পদার্থ রপ্তানী হয়। ব্রিসবেন নদীর ওপরে স্টোরি ব্রিজ নজর কাড়ে। সিডনি হারবার ব্রিজের নির্মাতা জন ব্যাডফিল্ডেরই হাতে তৈরি এই ব্রিজ। অন্যান্য দ্রষ্টব্য ব্রিসবেন সিটি হল, ক্যাঙ্গারু পয়েন্ট, চায়না টাউন, সেন্ট স্টিফেন্স ক্যাথিড্রাল, কাস্টমস হাউস, কুইনসল্যান্ড গ্যালারি অব মডার্ন আর্ট, কুইনসল্যান্ড মিউজিয়াম, মিউজিয়াম অব ব্রিসবেন, সিটি বোটানিক গার্ডেন, স্ট্যানলি স্ট্রিট, পার্লামেন্ট ভবন, সানকর্প স্টেডিয়াম, ট্রপিকাল পার্ক, মোরেটন বে এবং সংশ্লিষ্ট দ্বীপগুলি, লোন পার্ক কোয়ালা স্যাংচুয়ারি, আলমা পার্ক জু, মাউন্ট কু-থা প্রভৃতি। তবে এখানকার সেরা আকর্ষণ ৯৪ কিলোমিটার দক্ষিণে সোনালি বেলাভূমি আর নীল সাগর নিয়ে ‘গোল্ড কোস্ট’ (Gold Coast)। সমুদ্রতীরের এই শহরটাতে সবাই আসে ছুটি কাটাতে। সমুদ্রের ধারে তাই সারি সারি বিশাল বিশাল হোটেল আর রেস্তোঁরা। এখানে রয়েছে হরেক রকম রাইড আর নানা মজা নিয়ে থিমপার্ক ‘ড্রিমওয়ার্ল্ড’। আরেকটাদিন রাখতে হবে ‘সি ওয়ার্ল্ড’-এর জন্য। এখানে ডলফিন, শীল, হাঙর-এর নানান শো দেখতে পাওয়া যাবে। কাটানো যাবে পেঙ্গুইনদের সঙ্গে কিছুটা সময়ও।
কেইর্নস (Cairns) - ব্রিসবেন থেকে চলে আসা যায় ট্রপিকাল উত্তর কুইনসল্যান্ডের কেইর্নস-এ। ১৭৭০ সালে ক্যাপ্টেন কুক প্রথম কেইর্নস-এ আসেন। তারপর থেকেই ধীরে ধীরে এখানে জনবসতি গড়ে ওঠে। ট্যুরিজমই এখানের প্রধান জীবিকা তবে চাষবাসেও এই অঞ্চল বেশ উন্নত। মূলত নানাধরণের ফল ও আখের চাষ হয়। মাছব্যবসাও রোজগারের আরেকটা বড় উপায়। শহরের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাচ্ছে ব্যারন নদী। আবার এখানেই রয়েছে পৃথিবীর আদিমতম রেনফরেস্ট ডেইনট্রি ন্যাশনাল পার্ক। বেড়িয়ে নেওয়া যায় স্থানীয় আদিবাসী গ্রামে। এখানকার আদিবাসী হল জাপুকাই। কুরাণ্ডা রেল-এ চড়ে উপভোগ করা যায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। পথে পড়বে ব্যারন নদীর ওপর ব্যারন ঝরনা এবং গর্জ। ব্যারন গর্জ ন্যাশনাল পার্ক ওয়ার্লড হেরিটেজ এরিয়া হিসেবে স্বীকৃত। প্রায় চল্লিশ লক্ষ বছর আগে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয়েছিল ব্যারন নদী পরিবেষ্টিত এই অঞ্চল। হাতে সময় থাকলে ঘুরে আসা যায় ফ্রেজার আইল্যান্ড থেকে।
তবে কেইর্নসের সেরা আকর্ষণ ২৫৪ কিলোমিটার দূরে গ্রেট বেরিয়ার রিফ মেরিন পার্ক (Great Barrier Reef Marine Park )। এটি ন্যাশনাল পার্ক এবং হেরিটেজ সাইট। গ্রেট বেরিয়ার রিফ - পৃথিবীর সর্ববৃহৎ প্রবাল প্রাচীর। জাহাজে করে নব্বই মিনিটের সফরের পর গ্লাস বোটে করে কোরাল দেখতে যাওয়া। এছাড়া রয়েছে সেমি সাবমেরিন ট্রিপ। কাঁচের মধ্য দিয়ে নীল জলরাশি দেখতে দেখতে যাওয়া – চোখে পড়বে পাহাড়ের উঁচু উঁচু মাথা - কত বিচিত্র আকারের, রঙবেরঙের দেওয়াল - লাল, নীল, হলদে, চক্র কাটা - প্রবাল প্রাচীর। প্রাচীরের গায়ের কাছে আবার ছোট বড় অসংখ্য রঙিন রঙিন মাছ খেলে বেড়ায়। এই রিফটির আয়তন ৩ লক্ষ ৪৫ হাজার স্কোয়ার কিলোমিটার। এর আবিস্কর্তা ক্যাপ্টেন কুক। এখানে স্নর্কেলিং ও স্কুবা ডাইভিং-এর মজাও নেওয়া যায়।
মেলবোর্ন (Melbourne) – ভিক্টোরিয়ার রাজধানী মেলবোর্ন ইয়ারা নদীর প্রাকৃতিক বন্দর পোর্ট ফিলিপের গায়ে অবস্থিত। শহরের মাঝে অবস্থিত ইউরেকা স্কাই ডেক-এর ওপর থেকে পুরো মেলবোর্ন শহরটিকে ছবির মত দেখায়। মেলবোর্নের সংস্কৃতির কেন্দ্র ফেডারেশন স্কোয়ার। হেরিটেজ পার্কে রয়েছে ক্যাপ্টেন কুকের কলেজ। ১৮৫০ সালে নির্মিত ক্যাথিড্রালটিও দেখার মত। শহিদদের স্মরণে রয়েছে 'স্রাইন অব রিমেমব্রেনস'। রয়েল বোটানিক গার্ডেন-এ হেরিটেজ ট্যুরে সময় কাটানো যায়। অথবা ঘুরে নেওয়া যায় বিখ্যাত মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড থেকে। এখানে সরকারি ট্রামে ফ্রিতে সিটি ট্যুর করায়। ইয়ারা নদীতে রিভার ক্রুইজও আকর্ষনীয়। কেনাকাটার জন্যে ব্রানসউইক স্ট্রিট আর চ্যাপেল স্ট্রিটের দোকানগুলিতে ঢুঁ মারতে হবে। হাতে সময় থাকলে ঘুরে আসা যায় চার্চিল আইল্যান্ড ভিজিটর সেন্টার পশুখামার ও ফিলিপ আইল্যান্ড। ফিলিপ আইল্যান্ডে ১৯৯১ সালে বন্য কোয়ালা সংরক্ষণ সেন্টার তৈরি করা হয়েছে। কোয়ালা অস্ট্রেলিয়ার একটি বিশেষ পশু। এরা গাছের ডালে থাকে, দেখতে অনেকটা খরগোশের মত কিন্তু অনেক বড়। আশি রকম প্রজাতির পাখি এখানে আছে। এখানকার ক্যাঙারুগুলো অপেক্ষাকৃত ছোট, এদের ওয়ালাবাই (Wallaby) বলা হয়। ফিলিপ আইল্যান্ডের সবচেয়ে বিস্ময়কর দৃশ্য হল পেঙ্গুইন প্যারেড। তেরো ইঞ্চি সাইজের এই পেঙ্গুইনদের বাস এই অঞ্চলেই -এরা ভোরবেলা বেরিয়ে যায় সাগরের উদ্দেশ্যে। কিন্তু সন্ধ্যা হওয়ার আগে ফিরে আসে নিজেদের ডেরায়। এদের প্যারেড দেখার জন্য সমুদ্রের তীরে নির্দিষ্ট জায়গায় গ্যালারি করা আছে। এখানে ছবি তোলা নিষেধ।
যাওয়াঃ ব্রিসবেন, অ্যাডিলেড (Adelaide), কেইর্নস, ডারউইন (Darwin), মেলবোর্ন, পার্থ (Perth) ও সিডনিতে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আছে।
অন্যান্যঃ অস্ট্রেলিয়ার জলবায়ু জায়গার সঙ্গে বদলে যায়। উত্তরে গরম এবং ট্রপিকাল আবহাওয়া, অন্যদিকে দক্ষিণে খুবই ঠান্ডা, সময় সময় বরফ পড়ে।
থাকা, বেড়ানো ইত্যাদি নানান তথ্যের জন্য এই ওয়েবসাইটগুলি দেখা যেতে পারে -
http://www.australia.com/#
http://australia.gov.au/
http://www.informationcentres.com.au/
তথ্য সহায়তাঃ মঞ্জুশ্রী সিকদার
~ ভ্রমণ কাহিনি - এক ভ্রমণে দুই দেশ ~