--> :: Amader Chhuti - Istanbul ::

Home Page
Current Issue
Archive
Travel Plans
Trekking Routemap
Tips
Explore
Rail
Air travel
Other Websites

Feedback




hit counters
hit counter

ইস্তানবুল (Istanbul)

 

তুরস্ক বা তুর্কী (Turkey) দেশটা ইউরোপ এবং এশিয়া এই দুই মহাদেশের মধ্যে ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধন করেছে। মারমারা এবং ব্ল্যাক সি (Black Sea)-র মাঝে বসফরাস ব্রিজ (Bosphorous Bridge) আক্ষরিক অর্থেই যুক্ত করেছে এই দুই মহাদেশকে। তুর্কীর বৃহত্তম শহর ইস্তানবুলেও রয়েছে সেই মিশ্র সভ্যতা আর সংস্কৃতির দীর্ঘ ইতিহাস। খ্রীস্ট পূর্ব ৬৬০ সালে নির্মিত বাইজেন্টিয়াম (Byzantium) শহর ও পরবর্তীকালের কনস্টানটিনোপল (Constantinople)-ই আজকের ইস্তানবুল। দীর্ঘ ইতিহাসে বারবার হয়েছে ক্ষমতার হাতবদল। রোমান, বাইজেন্টিয়ান, লাটিন সাম্রাজ্যের পর এই শহর শাসন করেছেন ওটোমান (Ottoman) সুলতানেরা। ১৬০০ বছর ধরে ইউরোপ-মধ্য এশিয়ার ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু ছিল এই শহর। তবে আজকের গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ দেশটা তৈরির পেছনে বিরাট ভূমিকা ছিল কামাল আতাতুর্ক-এর - আধুনিক তুর্কীর প্রথম রাষ্ট্রপতি।

শহরের কেন্দ্রস্থল "সুলতান আহমেদ" স্কোয়ারের (Sultan Ahmet Square) আশেপাশে কয়েকশো মিটারের দুরত্বেই রয়েছে সুলতান আহমেদ মসজিদ, আয়া-সোফিয়া, তোপকাপি প্রাসাদ, বেসিলিকা সিস্টার্ন, গ্রেট প্যালেস, মোজেইক মিউজিয়াম, হিপোড্রোম এবং আরও অনেক কিছু – হাজার হাজার বছরের ইতিহাস।
সুলতান আহমেদ মসজিদ বা নীল মসজিদ (Sultan Ahmed Mosque/ Blue Mosque) – ১৬০৯-১৬১৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে নির্মিত এই মসজিদের ভিতরের সজ্জা মূলত নীল ইজনিক টালি দিয়ে, যার কারণে নীল মসজিদ নামকরণ। বহিরঙ্গে একটি প্রধান ডোম, সার আটটি ছোটো ডোম ও ছয়টি মিনার। সুলতান প্রথম আহমেদ মসজিদের ছ'টি মিনার বানানোর প্রস্তাব রাখলে অত্যন্ত সমালোচিত হন। কারণ সেই সময় শুধুমাত্র মক্কায় কাবা-র মসজিদে ছ'টি মিনার ছিল। সুলতান কাবা-র মসজিদে সপ্তম মিনার তৈরির আদেশ দিয়ে সমস্ত সমালোচনার ইতি টানেন।
মসজিদ দেখার জন্য সবচেয়ে ভালো পশ্চিমে হিপোড্রোম (Hippodrome) দিয়ে ঢোকা। নারী-পুরুষ জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলে মসজিদে প্রবেশ করতে ও প্রার্থনা করতে পারেন। এখানে পুরুষরা কেউ কিস্তি টুপি (স্কাল ক্যাপ) পরে প্রার্থনা করেন না, যা পৃথিবীর যে কোনো মসজিদে অভাবনীয় ব্যাপার। মহিলাদের মাথায় ঢাকা দিয়ে প্রবেশ করতে হয়। নিজের জুতো থলিতে ভরে নিয়ে প্রবেশ করতে পারেন, ভিতরে জুতোর র‍্যাক আছে। এখানে আজান দেওয়া হয় তুর্কী ভাষায়, আরবীতে নয়।

তোপকাপি প্রাসাদ (Topkapi Palace) - ১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় মেহমেদ কনস্টানটিনোপল জয় করে ওটোমান সাম্রাজ্য স্থাপন করেন। ১৪৬৫-১৮৫৬ তোপকাপি প্রাসাদ ছিল ওটোমান সুলতানদের মূল বাসস্থান। এই প্রাসাদ এখন মিউজিয়াম। তবে মূল প্রাসাদের খুব সামান্যই আর আগের চেহারায় আছে। কয়েকশো ঘরের মধ্যে সীমিত কিছু ঘর, সুলতানদের ব্যবহার করা পোষাক-গয়না-অস্ত্র ও অন্যান্য ব্যবহার সামগ্রী সর্ব সাধারণের দেখার জন্য রাখা আছে। কিন্তু সারা পৃথিবীর মুসলিমদের কাছে এই প্রাসাদের মাহাত্ম্য অন্য কারণে – এখানেই রাখা আছে পয়গম্বর হজরত মহম্মদের ব্যবহার করা পোষাক-অস্ত্র-সীলমোহর ইত্যাদি; ডেভিডের তরবারি, আব্রাহামের পাত্র, মোজেসের লাঠি এবং মক্কার বিভিন্ন দরজার চাবি। মক্কার দরজার চাবি থাকত ওটোমান সুলতানদের নিয়ন্ত্রণে। পৃথিবীর সমস্ত মুসলিমদের ওপর তাদের প্রভাব সহজেই অনুমেয়।
ওটোমান সুলতানদের ধন-সম্পদের মধ্যে একটি সিংহাসন আছে যেটি নাদির শাহ ভারতবর্ষ থেকে লুন্ঠন করে নিয়ে গিয়ে সুলতানকে উপহার দেন। মনে করা হয়, এই সেই " ময়ূর সিংহাসন"; - ময়ূর নেই, শুধু আসন আর পাদানি রয়েছে। অপূর্ব কারুকাজ।

আর্কিওলজিকাল মিউজিয়াম (Archaeological Museum) – তোপকাপি প্রাসাদের কাছে ইস্তানবুল আর্কিওলজিকাল মিউজিয়াম। এটি আসলে তিনটি মিউজিয়াম – দ্য আর্কিওলজিকাল মিউজিয়াম, দ্য অ্যানশ্যান্ট ওরিয়েন্ট মিউজিয়াম (Ancient Orient Museum) এবং টাইলড কিয়স্ক মিউজিয়াম (Tiled Kiosk Museum)। ইস্তানবুলের ইতিহাসকে প্রত্যক্ষ করতে বিশ্বের দশটি গুরুত্বপূর্ণ মিউজিয়ামের অন্যতম এই মিউজিয়াম ঘুরে দেখতে হবে। ইস্তানবুল আর্কিওলজিকাল মিউজিয়ামে ৬০ হাজার প্রত্নতাত্ত্বিক সংগ্রহ, ৫ লক্ষ বিভিন্ন প্রকার মুদ্রা ও ৭৫ হাজার কিউনিফর্ম ট্যাবলেট [কিউনিফর্ম হচ্ছে সুমের সভ্যতার লেখচিত্র যা খ্রিস্টের জন্মের চার হাজার বছর আগে তৈরি হয়েছিল] অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে সংরক্ষিত আছে।

আয়া সোফিয়া (Hagia Sofia) - ৫৩৭-১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দ, আয়া সোফিয়া ছিল অর্থোডক্স চার্চের বেসিলিকা। এখানে বাইজেনটাইন স্টাইলের মোজেইক কাজ অপূর্ব সুন্দর। ১২০৪-১২৬১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ক্যাথলিক চার্চের অনুগামীরা এই বেসিলিকার ওপর হামলা চালিয়েছে। ১৪৫৩ তে সুলতান দ্বিতীয় মেহমেদ রাতারাতি এই বেসিলিকাকে মসজিদে বদলে দেন। অসাধারণ সব মোজেইক-ফ্রেসকোগুলো ঢেকে দেওয়া হয়। এত কিছুর পরেও বাইজেনটাইন ও ওটোমান সভ্যতার উত্তরাধিকার নিয়ে আয়া সোফিয়া অপূর্ব স্থাপত্য ও সৌন্দর্যের প্রতীক হয়ে আজও  মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।বর্তমানে এটি মিউজিয়াম। ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো হেরিটেজ সাইট রূপে ঘোষিত হয়।
মাটির তলায় রয়েছে সিস্টার্ন বা জলাধার (Basilica Cistern)। এখানে রয়েছে আস্ত একটা বেসিলিকা। ৩৩৬ টি অপূর্ব সুন্দর কারুকার্য করা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আছে এই বেসিলিকা। ৫৩২ খ্রিস্টাব্দে বাইজেনটাইন সম্রাট প্রথম জাস্টিনিয়ান এই বেসিলিকাকে জলাধার বা সিস্টার্ন বানিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন। প্রাসাদের জল সরবরাহ হত এখান থেকেই।

চোরা চার্চ (Chora Church) - ওটোমান আমলে চোরা চার্চটিকেও মসজিদে বদলে ফেলা হয়েছিল। এটিও এখন মিউজিয়াম। এখানে মোজেইকের কাজ খুব সুন্দর। ফ্রেস্কোগুলোও যথেষ্ট ভালো অবস্থায় পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।

যাওয়াঃ ইস্তানবুলের প্রধান বিমানবন্দর আতাতুর্ক এয়ারপোর্ট (Ataturk Airport) শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে ২০ কিমি পশ্চিমে। এছাড়া রয়েছে সাবিহা গোসেন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (Sabiha Gokcen Internatioal Airport)।
মুদ্রাঃ এখানকার মুদ্রা হিসেবে তুর্কি লিরা (Lira) ব্যবহৃত হয়। তবে আমেরিকান ডলারও চলে।
খাওয়াঃ তুর্কিশ দোনের কাবাবের খ্যাতি রয়েছে। বাকলাভা মিষ্টিটিও খেতে খুবই সুস্বাদু।
কেনাকাটাঃ স্থানীয় মিস্টি, তুর্কি চা, কম্বল, অ্যান্টিক পোষাক ইত্যাদি কেনার তালিকায় রাখা যায়।

কয়েকটি ওয়েব ঠিকানাঃ
http://www.istanbul-travel.net/
http://www.istanbultravel.org/
http://english.istanbul.com/

তথ্য সহায়তাঃ কাকলি সেনগুপ্ত

~ ভ্রমণ কাহিনিঃ ঐতিহ্যের শহর ইস্তানবুলে ~

 

Album

Live Traffic Feed

To view this site correctly, please click here to download the Bangla Font and copy it to your c:\windows\Fonts directory.

For any queries/complaints, please contact admin@amaderchhuti.com
Best viewed in FF or IE at a resolution of 1024x768 or higher