দুটি পথে হিমাচল ভ্রমণ করা যায়। পর্যটকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় যেটি, সেটি হল কালকা হয়ে ছোটো লাইনের রেলে বা সড়কপথে সিমলা পৌঁছে যাওয়া। সেখান থেকেই পথ গেছে কিন্নরের দিকে। সিমলা থেকে অন্য একটি পথ বিলাসপুর-সুন্দরনগর-মাণ্ডি-কুলু হয়ে মানালি চলে গেছে। আর আরেকটি যে পথ সেটা হল ট্রেনপথে চাক্কিব্যাংক বা পাঠানকোট স্টেশনে নেমে সোজা ডালহৌসি। সেখান থেকে খাজিয়ার-চাম্বা-ভারমোর বেড়িয়ে ধরমশালা। ধরমশালাকে কেন্দ্র করে ঘুরে নিতে হবে জ্বালামুখী-পালামপুর-বৈজনাথ। এমনিতে মে থেকে অক্টোবরই হিমাচল ভ্রমণের আদর্শ মরশুম। তবে শীতের সময় বরফে সাজা হিমাচলি শোভাও অসাধারণ। দক্ষিণে শিবালিক, উত্তরে ধৌলাধার আবার ধৌলাধারের উত্তরে পিরপঞ্জাল-তুষারমুকুটের সারিঘেরা হিমাচলের সীমানা। রোটাং পাস, কুঞ্জুম পাস, বরলাচা লা এইসব বিখ্যাত গিরিবর্ত্মগুলোকে ভরসা করেই পৌঁছে যাওয়া যায় রাজ্যের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। মে থেকে সেপ্টেম্বর হিমাচল যেন ফুলেদের রাজ্য। রয়েছে দেবভূমি কিন্নর। তার শোভা আরেকরকম। ১৯৯৩ সালে কিন্নরের দরজা খুলে যায় ভারতীয় পর্যটকদের জন্য। সিমলার সামার ফেস্টিভ্যাল, মানালির উইন্টার কার্নিভাল, কুলুর দশেরা উৎসব - মহোৎসবের প্রাঙ্গণে দেশি-বিদেশি মুখ অচিরেই মিশে যায়। নানা ভাষা, নানা পরিধানে মিশে আছে হিমাচল রাজ্য। তবে হিন্দু ও বৌদ্ধধর্মের প্রাধান্য চোখে পড়ার মতন। জাতির পাশে উপজাতির ভিড়ও কিছু কম নয়। গুজ্জর, কিন্নর, লাহুলি, গদ্দিসহ নানা উপজাতির মানুষ তাদের মনের মতো করে সাজিয়ে রেখেছে হিমাচলকে।
সিমলা (Simla)- পথের পাশে উঁচু উঁচু পাহাড়ের পাঁচিল। কোথাওবা ঢাল বেয়ে নেমে এসেছে সারিগাছের দল। ফাঁকে ফাঁকে রোদ্দুরে হিমাচলি ছোঁয়াচ। তবে হিমাচল প্রদেশের রাজধানী সিমলার অন্যতম আকর্ষণ কিন্তু সিমলা ম্যল। হোটেল, দোকান, রেস্তোঁরা, বাজারহাট, ট্যুরিস্ট অফিস - সবমিলিয়ে ব্যস্ততম ট্যুরিস্ট স্পট এই ম্যল। বাসস্ট্যান্ড থেকে পনেরো মিনিটের খাড়াই হাঁটাপথে ম্যলে পৌঁছোনো যায়। যেদিকে হোটেল গুলমার্গ সেদিকেই ব্রিটিশযুগের তৈরি বিরাট বাড়িতে অ্যাকাউন্টেন্ট জেনারেলের অফিস, যাকে বলা হত গর্টন ক্যাসল, বিধানসভা ভবন ইত্যাদি। ঠিক তার কাছেই সিমলা কালীবাড়ি। এখানকার কালীমূর্তিটিকে জয়পুর থেকে আনা হয়েছে। ডানদিকে মঙ্গলচন্ডী আর বাঁয়ে শ্যামলাদেবী। শ্যামলাদেবীর নাম থেকেই এই জায়গার নাম হয়েছে সিমলা। ম্যলের শেষপ্রান্তে নিয়ো-গথিকশৈলীতে তৈরি অ্যাঙ্গলিসিয়ান ক্রাইস্ট চার্চ। ১৮৪৪-৫৭-র মধ্যে গড়ে ওঠা এই গির্জাঘর উত্তর ভারতের দ্বিতীয় প্রাচীন চার্চ। ম্যল থেকে স্ক্যান্ডাল পয়েন্ট হয়ে লক্করবাজারও ঘুরে আসা যায়। কালীবাড়ি, বিধানসভা ছাড়িয়ে চৌরা ময়দান। তার কাছেই স্টেট মিউজিয়াম। শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে আনানডেল রেসকোর্স। আরও এক ডেস্টিনেশন জাকু হিলস। সেখানে সকাল সকাল যাওয়াটাই শ্রেয়। ক্রাইস্ট চার্চ থেকে হাঁটাপথে মাত্র ২ কিলোমিটার দূরে জাকু হিলস। ইচ্ছে হলে ঘোড়ার পিঠে চেপেও যাওয়া যায়। জাকু পাহাড়ের মাথাতেই হনুমান মন্দির। বনসবুজের আগল ভেঙে যাবার কালে সাবধানতা আবশ্যিক। এ পথে হনুমানের উপদ্রব মারাত্মক। শহরের আশেপাশেই রয়েছে প্রসপেক্ট হিল, সামার হিল ইত্যাদি। প্রসপেক্ট হিলের মাথাতেই কামনাদেবীর মন্দির। সামার হিলে হিমাচল বিশ্ববিদ্যালয় এবং সেখান থকে ২ কিলোমিটার পথ পেরোলে চাদউইক জলপ্রপাত। চলে যান ১৯টা হোলবিশিষ্ট নলধেরা গল্ফকোর্সে। যাঁরা শিলং গেছেন এই গল্ফকোর্স তাঁদের শিলংয়ের গল্ফকোর্সের কথা মনে করিয়ে দেবে। এখানে পিকনিকের আসরও বসে কখনও-সখনও। রোমাঞ্চকর পথ পেরিয়ে ঘুরে আসা যেতেই পারে কুফরি-ফাগু থেকে। সবমিলিয়ে দুরাত অবশ্যই বরাদ্দ রাখতে হবে সিমলার জন্য।
যাওয়াঃ- কালকা থেকে সিমলা যাবার জন্য দিনে চারটি টয়ট্রেন চালু আছে। মোটামুটি সাড়ে ৫ ঘন্টায় ট্রেনগুলি কালকা থেকে সিমলায় যায়।
থাকাঃ- এখানে বাঙালির প্রথম পছন্দ সিমলা কালীবাড়ি। ঘরভাড়া সাধ্যের মধ্যেই। এছাড়া হিমাচল পর্যটনের হোটেল হলিডে হোম। আর বেসরকারি হোটেলতো রয়েইছে। সিমলার এস টি ডি কোডঃ ০১৭৭।
কুলু (Kulu)- ধসপ্রবণ অনেকটা রাস্তা আর ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি টানেল পেরিয়ে কুলু শহর-ভ্যালি অফ গডস। মুনিঋষিদের আখড়া ছিল আজকের কুলু বা সেকালের কুলুত উপত্যকায়। কুলুকে ঘিরেই কতরকম ছন্দে তরঙ্গ তুলে বয়ে চলেছে বিয়াস, শতদ্রু, মেহু, পার্বতী, সরোবরী, চন্দ্র, ভাগা- এমনই সব পাহাড়ি নদী। ঋতু বদলায়। সাথে সাথে বদলে যায় ফুল-ফলের বাগ-বাহার। লাল-সোনালি আপেল থেকে নাশপাতি, চেরি, খোবানি, গরমে কুলুর অঙ্গে রডোডেনড্রনের রঙিন সাজ, ধান, যব, ভুট্টা ফসলের সোনালি বর্ণাভা- ঘাটতি নেই কিছুরই। প্রাচীনকাল থেকে মধ্য এশিয়ার গেটওয়ে কুলু হয়েই বাণিজ্যিক যোগসূত্র গড়ে উঠেছে। অক্টোবরে বিখ্যাত উৎসব দশেরা। হরজাই সাজে সেজে ওঠে কুলু। বিচিত্র সব বাজনার তালে জমে ওঠে উৎসব। দেবী হিড়িম্বা থেকে মালানা গ্রামের দেবতা জমলুও আসেন এই উৎসবে। রঘুনাথজি এঁদের মধ্যে কুলীনশ্রেষ্ঠ। কুলু থেকে আখারাবাজার হয়ে জগন্নাথ মন্দির বেড়িয়ে নেওয়া যায়। কুলু-মানালি পথে রয়েছেন বৈষ্ণোদেবী, মূল বাসস্ট্যান্ড থেকে দুর্গম পাহাড় ডিঙিয়ে পৌঁছে যাওয়া যায় ২,৪৬০ মিটার উচ্চতায়। ওখানে বিজলি বা বিজলেশ্বর মহাদেবের অধিষ্ঠান। অবশ্য জিপও চলাচল করে এপথে। কুলুতে মোটামুটি একরাতই যথেষ্ট। তবে প্রত্যেকটি জায়গাকে অনুভব করতে গেলে অন্তত দুরাত লাগবে। এর মধ্যে একদিন রাখতে হবে মণিকরণের (Manikaran) জন্য। কুলু থেকে ঘন্টায় ঘন্টায় বাস ছাড়ে। প্রায় আড়াই ঘন্টায় ভুন্টারজারি-কাসোল হয়ে ৪৪ কিলোমিটার দূরের মণিকরণে পৌঁছোনো যায়। পশ্চিমে বিষ্ণুকুন্ড, উত্তরে হরেন্দ্র পর্বত, পুবে ব্রহ্মনালা, দক্ষিণে পার্বতীগঙ্গা-এই বিস্তীর্ণ ভূভাগ জুড়ে মণিকরণতীর্থ। শিব-পার্বতীর পৌরাণিক আখ্যান, ধর্মনির্বিশেষে সকল মানুষের অবাধ পুণ্যার্জন, নানকের গুরুদোয়ারা-মণিকরণের পুরো ছবিটাই ভক্তিপ্রেমে উজাড় হওয়া এক তীর্থভূমির মতো। বিশ্বের উষ্ণতম প্রস্রবণটিও এখানেই। এখানকার মন্দিরে মন্দিরে বৈষ্ণোদেবী, হনুমান, ময়নাদেবী, শ্রীকৃষ্ণ, রাম প্রমুখ দেবতার অধিষ্ঠান। মণিকরণ ঘুরে ফিরে আসতে হবে কুলুতে। কুলু থেকে মনিকরণ যাবার দিনের শেষ বাসটি কুলু ফেরে সন্ধে ৬টায়।
যাওয়াঃ- গাড়ি করে যাওয়াই যায়। তবে সিমলা থেকে বাসে গেলেও খুব একটা অসুবিধে হবে না। দিনে ৪ বার সিমলা ছেড়ে বাস আসছে ১০ ঘন্টায়। এ পথের দূরত্ব ২২০ কিলোমিটার। এছাড়া পাঠানকোট থেকেও বাস মেলে কুলু যাবার।
থাকাঃ- কুলুতে হিমাচল পর্যটনের দুটি হোটেল রয়েছে। হোটেল সিলভারমুন ও হোটেল শর্বরী। এছাড়া বেসরকারি হোটেলও প্রচুর। কুলুর এস টি ডি কোডঃ- ০১৯০২।
মানালি (Manali)- পাইন আর দেবদারুতে ছাওয়া তুষারমৌলি পাহাড়ঘেরা শহর মানালি। শান্ত সুনিবিড় আবছায়া ঢাকা এই শহর ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বরফ চাপা থাকে। তবে এখানে দার্জিলিং, সিমলা, মুসৌরির মতো পাহাড়ের ঢালে ঢালে বাড়িঘরের বেশ অভাব। পৌরাণিক কাহিনির আর্বতে পড়ে এই জায়গার সুদূর অতীতের নাম ছিল মানালিসু। আদিপিতা মানবস্রষ্টা মনু বাসও করতেন বিপাশার তীরে। সকাল-সন্ধের উৎসবমুখর ম্যল রোড ছেড়ে দেড় কিলোমিটার যেতে হবে। ওখানেই হিড়িম্বাদেবীর মন্দির। অবশ্য খানিকটা খাড়াই পথেও উঠতে হবে। হিড়িম্বার মন্দিরের পাশেই আছে ভীম ও হিড়িম্বার পুত্র ঘটোৎকচের মন্দির।
মন্দিরজুড়ে সূক্ষ্ম কাঠশিল্পের রকমবাহার। ১৬ শতকে রাজা বাহাদুর সিংয়ের আমলে এটি তৈরি হয়। বাসস্ট্যান্ডের কাছেই তিব্বতীয় মনাস্ট্রি, ক্লাবহাউস। বিপাশার অন্যপারে মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট। অটোরিকশা ভাড়া করে ৩ কিলোমিটার দূরের বশিষ্ঠ আশ্রম ও উষ্ণকুন্ড দেখে আসা যায়। এরপর গাড়ি ছুটে যাক ৫১ কিলোমিটার দূরের রোটাং পাসে। মানালির খ্যাতির সিংহভাগ জুড়ে বরফমোড়া রোটাংয়ের উপস্থিতি। বনবনানীর বুকের উপর ছেঁড়া কাঁথার মতো বরফের বিছানা। সবুজ গাছ আর ধবধবে সাদা বরফ। দারুন কনট্রাস্ট। মাঝে বর্ষার সময়টুকু বাদ দিয়ে এপ্রিল থেকে জুন এবং সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত রোটাং পাস (Rothang Pass) খোলা থাকে। বরফসাম্রাজ্য জুড়ে সবসময়ই স্কিয়িং, প্যারাগ্লাইডিংয়ের ব্যস্ততা। অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয়দের স্বর্গভূমি। কন্ডাক্টেড ট্যুরে সারাদিনের প্রোগ্রামে রোটাং ঘোরানো হয়। রোটাংয়ের পথ ধরে খানিকটা এগোলেই বাঁদিকে একটি রাস্তা চলে গেছে। ওদিকে সোলাং ভ্যালি। মানালি থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার।
যাওয়াঃ- কুলু থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে মানালি। কুলুর প্রায় প্রতিটি বাসই মানালি যাচ্ছে। সিমলা থেকে মানালি আসার চাইলে সাধারণ ও ডিলাক্স বাস আছে। সিমলা থেকে মানালি যেতে সময় লাগবে প্রায় ১২ ঘন্টার মতো। চন্ডিগড় থেকে বাসে এলে একই সময় লাগবে। দিল্লি থেকেও মানালি যাবার নাইট সার্ভিসের বাস আছে। তবে সেক্ষেত্রেও সময় অনেকটাই বেশি লাগবে। প্রায় ১৭ ঘন্টার মতো।
থাকাঃ- মানালিতে হিমাচল পর্যটনের হোটেল রোটাং। বেসরকারি হোটেলও আছে। মানালির এস টি ডি কোডঃ- ০১৯০২।
|| ভ্রমণ কাহিনি – ঢাকা থেকে সিমলা ||
জগৎসুখ-নাগ্গর (Jagatsukh-Naggar)- মানালি থেকে বিয়াসের পুল পেরিয়ে উত্তরদিকে রোটাংয়ের পথ। দক্ষিণে ৬ কিলোমিটার দূরে জগৎসুখ। ওটা একটা গ্রাম। অথচ একসময় এই জায়গাই ছিল কুলু উপত্যকার রাজধানী। সেখানে অষ্টম শতকের গৌরীশংকর মন্দির আর পঞ্চদশ শতকের সন্ধ্যাদেবীর মন্দির বিরাজমান। দুটোই দেওদার কাঠের তৈরি। জগৎসুখ থেকে ১১ কিলোমিটার এগোলেই নাগ্গর। এ পথে আরও একটি অপূর্ব মন্দির চোখে পড়বে। জগৎসুখের পরে কুলু উপত্যকার রাজধানী হয় নাগ্গর। জগৎসুখ থেকে নাগ্গর যাবার পথে বিয়াসের উপর ব্রিজটা পার হলেই পড়বে পাতলিখুল। নাগ্গর বললেই আপাদমস্তক কাঠের তৈরি নাগ্গর ক্যাসলের কথাই মনে হবে। যদিও সে দুর্গের একাংশে এখন হিমাচল পর্যটনের হোটেল হয়েছে। নাগ্গর দুর্গের কাছেই গৌরীশংকর মন্দির, বিষ্ণুমন্দির, ত্রিপুরসুন্দরী মন্দির প্রভৃতি পাথরের প্রাচীন স্থাপত্যের দর্শন মেলে। খাড়াই রাস্তাটা ধরে উঠে গেলে রোয়েরিখ আর্ট গ্যালারিটাও দেখা হয়ে যাবে। গ্যালারির অলিন্দে কিংবা প্রকৃতির বুকে দাঁড়ালেই চোখের আলোয় উজাড় হয়ে ধরা দিয়ে যাবে উত্তর হিমালয়ের সাজানো মুকুটরাজি। সূর্যের আলো পড়ে শৃঙ্গগুলি থেকে কত মণিদ্যুতি যে বিচ্ছুরিত হয় তার ইয়ত্তা নেই। মূলত এই অপার মহিমময় প্রকৃতির আলিঙ্গনে বদ্ধ হয়েই রাশিয়ান শিল্পী নিকোলাস রোয়েরিখ এখানে বাড়ি করেছিলেন। তাঁর ছেলে সোয়েৎস্লভ রোয়েরিখও ছিলেন স্বনামধন্য শিল্পী। গোটা বাড়িটা আজ তাঁদের আঁকা ছবি ও ফোটোগ্রাফের সংগ্রহশালা। এই শিল্পের গণ্ডি ছাড়ালেই লোকশিল্পের হাতছানি। উরসবতী আর্ট সেন্টার। রোয়েরিখ থেকে কিছুটা দূরে।
যাওয়াঃ- মানালি থেকে কন্ডাক্টেড ট্যুরের ব্যবস্থা আছে জগৎসুখ-নাগ্গর ঘোরার জন্য। এছাড়া মানালি থেকে কাতরেইন-কুলুর বাসেও চেপে পড়া যায়। কাতরেইনের ৫ কিলোমিটার উত্তরে বিপাশার পশ্চিমতীরে পাতলিখুল। সেখান থেকে নদী পেরিয়ে পায়ে হেঁটে বা অটোয় চেপে নাগ্গর।
থাকাঃ- নাগ্গরে থাকার জন্য হিমাচল পর্যটনের নাগ্গর ক্যাসল। নাগ্গরের এস টি ডি কোডঃ- ০১৯০২।
রামপুর ও সারাহান (Rampur & Sarahan) - ঝকঝকে নীল আকাশ, বরফে মোড়া পাহাড়, পথের পাশে আপেল-আঙুর-নাশপাতির বাগান আর প্রকৃতির মতোই অপরূপ সুন্দর মানুষ-মর্ত্যের কিন্নর কিন্নরীদের নিয়ে রূপকথার দেশ কিন্নর। সিমলা ছাড়িয়ে ২২ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে পাইন ফার, দেবদারু ছাওয়া আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথে যাত্রা সারাহানের দিকে। কুফরি, নারকান্ডা, ফাগু পেরিয়ে রামপুর। সিমলা থেকে রামপুর প্রায় ১৩৫ কিলোমিটার। একদা বুশাহার রাজাদের রাজধানী। শহরের ঢোকার মুখেই রাস্তার বাঁদিকে বিশাল হনুমান মূর্তি। বাসস্ট্যান্ড এলাকা বেশ জমজমাট। বাসস্ট্যান্ডের কাছেই রাজবাড়ি পদম প্রাসাদ। প্রায় দুশো বছর আগের তৈরি। রাজা পদম সিংয়ের তৈরি এই প্রাসাদের নিচতলা পাথরের আর ওপরতলা কাঠের। এই প্রাসাদকে কেন্দ্র করেই রামপুর শহরের গড়ে ওঠা। অসাধারণ স্থাপত্যের নিদর্শন হলেও পর্যটকদের একেবারে কাছ থেকে এই প্রাসাদকে দেখার জো নেই। কারণ কাউকেই প্রাসাদঅন্দরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। কাছেই বুদ্ধ, কৃষ্ণ আর লক্ষ্মীনারায়ণের মন্দির। বাসস্ট্যান্ডের আশপাশেই খাবারের বেশ কয়েকটা হোটেল রয়েছে। থাকার হোটেলগুলো খানিক নিচে, শতদ্রুর ধারে।
রামপুর ছাড়িয়ে বন পাহাড়ের পথে ২৩ কিলোমিটার দূরে জিওরি। হিন্দুস্থান-টিবেট রোডে আরও ১৭ কিলোমিটার চড়াই পথ পেরিয়ে শেষ বিকেলে পৌঁছনো প্রাচীন জনপদ সারাহানে। সারাহানের উচ্চতা ২,১৬৫ মিটার। প্রহর শেষের আলোয় মায়াবী হয়ে যায় শ্রীখন্ড শিখর। সন্ধ্যার নিস্তব্ধতা চিরে বেজে ওঠে দামামা-করতাল। ভীমকালী মন্দিরে শুরু হয় সন্ধ্যারতি। শ্রীখণ্ড মহাদেব শিখরের নীচে এর অবস্থান। পুরোনো যে মন্দিরটি ছিল সেটা কোনও কারণে হেলে পড়ে। সেইজন্য ১৯৩০ সালে বুশাহররাজ শামশের সিংহ পুরোনো মন্দিরের পাশে নতুন আরেকটি মন্দির তৈরি করেন। মন্দিরের গর্ভগৃহে অসুরনাশিনী দেবী দুর্গার মূর্তিটি হঠাৎ দেখে বৌদ্ধমূর্তি বলে ভুল হতে পারে। ত্রিতল মন্দিরের সারা দেওয়াল জুড়ে অসাধারণ কাঠের কাজের নকশা। বুশাহার রাজাদের গৃহদেবতা ভীমকালীর অবস্থান সবচেয়ে ওপরের তলে। একসময় নাকি নরবলিও হত এখানে। এখন সারাদিনে বার তিনেক আরতি ও প্রসাদ বিতরণ হয়। দশেরার সময় চলে বিরাট উৎসব। মন্দিরকে ঘিরে আপেল বাগান। একই চত্বরে রয়েছে রঘুনাথ মন্দির, নৃসিংহ মন্দির ও লঙ্কারানির মন্দির। এই অঞ্চলের রাজধানী রামপুর হলেও আগে সারাহানই রাজধানী ছিল। দু-তিন মিনিট হাঁটাপথে রাজবাড়ি তথা বর্তমানে মুখ্যমন্ত্রীর আবাস। পাহাড়ের ওপরে রয়েছে একটি পক্ষীনিবাস। এখানে মোনাল পাখির প্রজননকেন্দ্র রয়েছে।
যাওয়াঃ সিমলার পুবদিকে কিন্নর। সিমলা থেকে রামপুর হয়ে সারাহান। সারাহান থেকে কিন্নরের জেলাসদর রেকংপিও। সুন্দরী কল্পায় রাত কাটিয়ে সাংলা হয়ে তিব্বত সীমান্তের শেষ গ্রাম ছিটকুল। সিমলা থেকে সরাসরি সারাহান যাবার বাসও পাওয়া যায়। কিন্নরকৈলাসের নীচে কল্পা। ওদিকে বসপার তীরে সাংলা উপত্যকা। সিমলা থেকে হিন্দুস্থান-টিবেট রোড ধরে কিন্নর যাওয়ার পথটিই প্রচলিত। সিমলা থেকে কিন্নরের বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার বাস ছাড়ে লক্করবাজার বাসস্ট্যান্ড থেকে। কালকা ও চন্ডীগড় থেকেও বাসে কিন্নরের নানা জায়গায় যাওয়া যায়। তবে বাসে কিন্নর সফর সময়সাপেক্ষ। সবথেকে ভালো হয় সিমলা থেকে পাঁচ-ছয়দিনের জন্য গাড়ি ভাড়া করে এই রুটে ঘুরে আসা। অ্যাম্বাসাডর, টাটাসুমো যায়।
থাকাঃ- রামপুরে হিমাচল পর্যটনের হোটেল বুশাহার রিজেন্সি। সারাহানে ছুটির ঘর হতে পারে হিমাচল প্রদেশ পর্যটনের হোটেল শ্রীখণ্ড। এছাড়াও রামপুর ও সারাহানে বেসরকারি কিছু হোটেল আছে। রামপুর ও সারাহানের এস টি ডি কোডঃ- ০১৭৮২ ।
রেকংপিও-কল্পা(Rekongpio & Kalpa)- সারাহান থেকে পরদিন রওনা রেকংপিওর দিকে। পথে করছামে বসপা ও শতদ্রু নদীর সঙ্গম। করছামে শতদ্রু নদীর ওপর কাঠের ঝোলা সেতু পেরিয়ে পাহাড়ি পথে যাত্রা। করছাম থেকে রেকংপিওর দিকে কিছুটা এগোলেই রাস্তার বাঁকে হঠাৎই চোখের সামনে খুলে যায় বরফে ঢাকা কিন্নর-কৈলাস। শিবলিঙ্গ ভিউ পয়েন্ট থেকে দেখা যায় বাণাসুরের বিখ্যাত শিবলিঙ্গ। ৭,৪৩৩ ফুট উচ্চতায় ছবির মতো সুন্দর কিন্নর জেলাসদর রেকংপিও।
আগে কিন্নরের জেলাসদর ছিল কল্পা। কিন্তু শীতে বেশি তুষারপাতের জন্য তা রেকংপিওতে সরিয়ে আনা হয়। কল্পা থেকে বেশ কিছুটা নীচে এই রেকংপিও। পথের দূরত্ব ১১ কিলোমিটার। বাসস্ট্যান্ডের কাছেই রয়েছে বৌদ্ধগুম্ফা। দোকানে দোকানে উপচে পড়ছে আপেল, কাঠবাদাম, চিলগোজা। রেকংপিওর গুম্ফা পেরিয়ে আরও এক কিলোমিটার এগোলে ভুট্টার খেত আর কাঠের বাড়ি নিয়ে ছোট্ট গ্রাম কোঠি। কোঠি গ্রামে রয়েছে দেবী চন্ডিকা আর ভৈরব মন্দির। প্রচলিত গল্পকথা, বাণাসুরকে যুদ্ধে পরাজিত করে শ্রীকৃষ্ণের পৌত্র অনিরুদ্ধ এখানে চন্ডিকাদেবীর মন্দির নির্মাণ করেন। ছোট্ট এই পাহাড়ি গ্রামে কিন্নরের প্রাচীন সংস্কৃতির ছোঁয়া মিলবে।
রেকংপিও থেকে কল্পার পথ অসাধারণ সুন্দর। রেকংপিও থেকে রাস্তাটা যখন চড়াই ভেঙে কল্পার দিকে উঠবে, চোখে পড়বে অসংখ্য চিলগোজা গাছের সারি। বাদামজাতীয় ফল হয় এই গাছে। একমাত্র কিন্নরেই বিরল প্রজাতির এই বাদাম গাছের দেখা মেলে। পাহাড়ি ঢালে আখরোট, আপেল, আঙুর, খোবানির ভরা সংসার। উৎসবপ্রিয় কিন্নর-কিন্নরীদের বাস এখানে। নাচে-গানে, পোশাকে-আশাকে বাহারি জীবনের রংছোঁয়া রূপকথা। তিব্বতের কাছাকাছি হওয়ায় হিন্দুধর্ম ও বৌদ্ধধর্মের প্রভাব দেখা যায়। ২,৭৫৮ মিটার উচ্চতায় কল্পা সত্যিই স্বপ্নলোক। সবুজ উপত্যকার মাঝে কাঠের বাড়ি নিয়ে ছবির মতো কল্পার গ্রাম। আর হাত বাড়ালেই বরফে ঢাকা কিন্নর-কৈলাস। কিন্নর-কৈলাস শৃঙ্গের একটু নিচে বাঁদিকে বাণেশ্বরের শিবলিঙ্গ। লাল, বেগুনি, হলুদ আবার কখনও সাদা-দিনের বিভিন্ন সময়ে রঙ বদলে যায় শিবলিঙ্গের। জ্যোৎস্নারাতে হয়ে ওঠে আরও অপরূপ। আগস্ট মাসে স্থানীয় মানুষ পুজো দিতে যান এই শিবলিঙ্গের। শেষ বিকেলের নরম হলুদ আলোয় ঝলমলিয়ে ওঠে কিন্নর-কৈলাস। সন্ধ্যার বুকে কৈলাস শৃঙ্গে লেগে থাকে রক্তিমাভা। কল্পার খ্যাতি তার ফলের বাগানের জন্যও। আঙুরের রস থেকে তৈরি সুরা স্থানীয় মানুষের প্রিয় পানীয়। প্রকৃতির মতোই সুন্দর আর সরল এখানকার জীবনযাত্রাও। কল্পার বাজারের কাছে রয়েছে প্রাচীন গুম্ফা। পর্যটকদের গুম্ফার ভেতরে ঢোকার অনুমতি না থাকলেও বাইরের কাঠের কারুকার্য দেখে মুগ্ধ হতে হয়। পাকদন্ডী পথে ফলের বাগানের ভেতর দিয়ে নেমে যাওয়া যায় কল্পার গ্রামে। দু’কিলোমিটার দূরে চিনি গ্রাম। এখানকার বৌদ্ধমন্দিরের কারুকার্যও দেখার মতো। কল্পার কাছেই আরেক ছোট্ট গ্রাম রোধি। খাদের মুখে শেষ হয়েছে পথ। অতল খাদের কিনারে অসামান্য দৃশ্যপট।
যাওয়াঃ- সাংলা থেকে কল্পা গেলে মাত্র সাড়ে তিনঘন্টায় পৌঁছে যাওয়া যায়। ভরসা একমাত্র বাস। এছাড়া সিমলা থেকে কল্পাও বাসপথে আসা যায়। সময় লাগবে ১২ ঘন্টার মতো। রামপুর থেকে কল্পা ঘন্টাদুয়েকে পৌঁছোনো যায়। রেকংপিও থেকে মাত্র ১১ কিলোমিটার দূরে কল্পা। কিন্নর সফরের শেষ পর্যায়ে কল্পায় এসে একই পথে না ফিরে চলে যাওয়া যায় স্পিতি (Spiti) উপত্যকার দিকে। কল্পা থেকে সকাল সকাল রওনা দিয়ে নাকো লেক আর তাবো গুম্ফা দেখে কাজায় (Kaza) পৌঁছে যাওয়া যায়। কাজা থেকে কুনজুম পাস এবং রোটাং পাস পেরিয়ে মানালি।
থাকাঃ- কল্পায় হিমাচল পর্যটনের হোটেল কিন্নর-কৈলাস। এছাড়া থাকার জন্যে বেসরকারি কয়েকটি হোটেল আছে। রেকংপিও ও কল্পার এস টি ডি কোডঃ- ০১৭৮৬।
সাংলা-ছিটকুল (Sangla & Chhitkul)- রেকংপিও থেকে কারছাম। কারছাম থেকে বাসপা নদীকে সঙ্গী করে সাংলার পথে। পিকচার পোস্টকার্ডের মতো সুন্দর সাংলা। আপেল বাগানে ঘেরা উপত্যকার বুক চিরে বয়ে চলেছে তুঁতে রঙের বসপা নদী। সবুজ উপত্যকাকে ঘিরে তুষার ঢাকা পর্বতমালা। এপ্রিল-মে মাসে এই সবুজ ঢেকে যায় সাদা রঙের আপেলফুলে। আগস্ট-সেপ্টেম্বরে আপেল গাছে ফল ধরে। ২,৬৮০ মিটার উঁচুতে পাইন, দেবদারু আর বার্চ সাজানো বনভূমির হাতছানি এড়ানো দায়। আপেল বাগানের পাশ দিয়ে কামরু দুর্গ। গ্রামটার নামও ওই দুর্গের নামেই। বাসস্ট্যান্ড থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার গেলেই দেখা মিলবে পাঁচতলা কাঠের দুর্গটির। সে পথেই পড়বে ভগবতী মন্দির, বদরীনারায়ণ মন্দির। যে পথে কামরু দুর্গ ওপথে না গিয়ে বাসস্ট্যান্ড থেকে অন্য পথে গেলে সোনার গম্বুজওলা বেরিনাগ মন্দির। ইচ্ছে হলে বসপার বুকে কাঠের পুল পেরিয়ে দেখে আসা যায় ট্রাউট মাছ চাষের গবেষণাকেন্দ্রটিকে। থাকার জন্য এখানে বেশ কয়েকটি হোটেল আছে। তবে আরও ২৬ কিলোমিটার এগিয়ে তিব্বত সীমান্তে ভারতের সর্বশেষ গ্রাম ছিটকুলেও থাকা যায়। সাংলার গ্রাম পেরিয়ে ছিটকুলের রাস্তা। পরিষ্কার পথ প্রায় নেই বললেই চলে। বোল্ডারে ঢাকা পথের ওপরেই নেমে এসেছে পাহাড়ি ঝর্না। পথের পাশে আপেল বাগান। পথ শেষ হয় নুড়ি বিছানো বিস্তৃত মালভূমিতে। বাঁদিকে শিল্পীর ইজেলে আঁকা ছবির মতো গ্রাম। মাত্র ৬০০-৬৫০ মানুষের বাস এখানে। বাতাসে পাইন, ফার, চিলগোজা গাছের সুবাস। পিছনে নীল আকাশের বুকে দুধসাদা পর্বত। ছিটকুলের উচ্চতা ১১,৬০০ ফুট। অদূরে নী-লা গিরিসঙ্কট -বসপার উৎপত্তিস্থল। নী-লার এপারে ভারত আর ওপারে তিব্বত। আপেল আর জাফরান গাছে ছাওয়া সবুজ উপত্যকায় বিচিত্রবর্ণের প্রিমুলা আর পপির সমাহার। জ্যোৎস্নারাতে বরফে মোড়া পাহাড় আর সবুজ উপত্যকা নিয়ে মোহময়ী হয়ে ওঠে ছিটকুল। এখানে প্রাচীন কালীমাতার মন্দির ও পাঁচশো বছরের পুরোনো কাঠের দুর্গ দেখবার মতো। সাংলা থেকে ছিটকুল দিনেদিনেও ঘুরে আসা যায়।
যাওয়াঃ- অনেক পথেই সাংলা পৌঁছোনো যায়। সিমলা থেকে বাসে চেপে সরাসরি সাংলা। দূরত্ব ২৩০ কিলোমিটার। সময় লাগে ১২ ঘন্টার মতো। রামপুর থেকে বাসে ঘন্টাদুয়েকের মধ্যে সাংলা। সেক্ষেত্রে দূরত্ব ১০০ কিলোমিটার। এছাড়া নিজেদের ভাড়া করা গাড়ি থাকলে তো কথাই নেই। সিমলা, রামপুর, সারাহান যেখান থেকে খুশি সাংলা পৌঁছনো যাবে। ছিটকুল পৌঁছতে একমাত্র সম্বল ভাড়াগাড়ি (বাসপথ আছে বটে তবে বাসের সংখ্যা কম)। সাংলা থেকে মাত্র ২৬ কিলোমিটার। সাংলা ও ছিটকুলের এস টি ডি কোডঃ- ০১৭৮৬।
থাকাঃ- থাকার জন্যে প্রাইভেট হোটেলই ভরসা। সাংলায় পি ডব্লু ডি রেস্টহাউস আছে।
কেনাকাটাঃ- কিন্নর শাল, টুপি, রুপো আর পাথরে তৈরি অলঙ্কার, মধু, শুকনো ফল এমন নানান জিনিস সংগ্রহ করা যায়। নিজস্ব হস্তশিল্প পশমের শালের জন্য রামপুর বিখ্যাত।
মেলাঃ- উৎসবপ্রিয় কিন্নরে সারা বছরের বিভিন্ন সময়ে নানা জায়গায় ছোট-বড় মেলা বসে। চৈত্রমাসের নবরাত্রিতে হিমাচলের বিভিন্ন মন্দিরে ভক্তের সমাগম হয়। এদিন ভীমকালীর মন্দিরেও বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়। সেপ্টেম্বরে কল্পা, সাংলা, সুরং আর নিচর জুড়ে চলে ফুলের উৎসব। অক্টোবরের শেষ থেকে নভেম্বরের শুরুর সময় জুড়ে রেকংপিওতে বসে আদিবাসী মেলা। নভেম্বর মাসে কয়েকদিনের জন্য বড়ো মেলা বসে রামপুরে। তিনশো বছরের পুরোনো এই মেলাকে লোকে লাভী মেলা বলেই চেনে। নানা জাতি-উপজাতির মানুষজন দূর দূর থেকে তাঁদের বিভিন্নরকমের হস্তশিল্প নিয়ে এসে পসরা জমান মেলাপ্রাঙ্গণে।
সেরা সময়ঃ- গ্রীষ্মকাল ও শরৎকাল কিন্নর যাওয়ার দুই মরশুম। এপ্রিল-মে মাসে কিন্নর হয়ে ওঠে অপরূপ।
|| ভ্রমণ কাহিনি – দেবতাদের রাজ্যে দুর্যোগে ||
ডালহৌসি (Dalhousie) - সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২,০০০ মিটার উঁচুতে ব্রিটিশদের সাজানো সুন্দর শৈলশহর ডালহৌসি। ভারতীয়দেরও বড় প্রিয় এই শহর। রবিঠাকুর, সুভাষচন্দ্র, মহাত্মা গান্ধি-বিশ্ববন্দিত ব্যক্তিত্বদের পদধূলিধন্য ডালহৌসি। পাহাড়ি সবুজের কোলে দু-তিনদিনের নিশ্চিন্ত বিশ্রাম। গান্ধিচক থেকে সুভাষচক যাবার পথটার নাম গরম সড়ক। ডালহৌসির জি পি ও থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটারের মধ্যে পঞ্চপুল্লা। ঝরনাসহ নিসর্গপ্রকৃতি পর্যটকদের একেবারে বুকের কাছে টেনে নেবে। এখানে পাঁচটি সেতু আছে, তাই এর নাম পঞ্চপুল্লা। পথেই পড়বে সাতধারা ঝরনা। এরপর সুভাষ বাউলি-জি পি ও থেকে মাত্র ১ কিলোমিটার। পাইন, সিডার গাছে ঘেরা অসাধারণ পরিবেশ। ১৯৩৭ সালে সুভাষচন্দ্র বসুর বিশ্রামের জায়গা ছিল এই সুভাষ বাউলি। দুটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হল গান্ধিচক ও সুভাষচক। দোকান, বাজার, রেস্তোঁরায় সাজানো গান্ধিচক। শহরের লক্কর মান্ডি থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে ডাইনকুণ্ড চূড়া। পাশেই কালাটপ। ডাইনকুণ্ড চূড়া থেকে তুষারশৃঙ্গ, উপত্যকা এবং নগরের পুরো ছবিটা ধরা পড়ে। চূড়ায় আর্মি ক্যাম্প থাকায় পর্যটকদের যাওয়ার অনুমতি পেতে অনেকসময় অসুবিধে হয়। এসব ছাড়া রয়েছে সেন্ট জনস চার্চ সংলগ্ন লাইব্রেরি ও সেন্ট ফ্রান্সিস চার্চ।
যাওয়াঃ- চাক্কিব্যাংক বা পাঠানকোট (Pathankote) দিয়ে ঢুকলে প্রথম ডেস্টিনেশনই হতে পারে ডালহৌসি। দূরত্ব প্রায় ৮০ কিলোমিটারের মতো। বাসে চাপলে সময় লাগবে চারঘন্টা।
থাকাঃ- থাকার জন্যে প্রচুর বেসরকারি হোটেল আছে। ডালহৌসির এস টি ডি কোডঃ-০১৮৯৯
খাজিয়ার (Khajjiar Lake)- পাইন, সিডারের জঙ্গলঘেরা খাজিয়ার হ্রদ আজ প্রায়-শুকনো কাদাগোলা ডোবাতে পরিণত হয়েছে। অথচ এই খাজিয়ারকেই হিমাচলের গুলমার্গ বলা হয়। এছাড়া আরও একটি উপাধি আছে খাজিয়ারের। ভারতের সুইজারল্যান্ড। সরলবর্গীয় অরণ্যের সবুজ উপত্যকা। এখানকার প্রধান আকর্ষণ নষ্ট হয়ে গেলেও হিমাচলি সবুজ এখনও ফিকে হয়ে যায় নি। সময়ে সময়ে খাজিয়ারের উপত্যকায় পিকনিকের আসর বসে যায়। ভ্যালির সীমানা ধরে হালকা চালে দৌড়ে যায় যাত্রীবোঝাই ঘোড়া। অজস্র ট্যুরিস্টের ভিড়ে গমগম করে খাজিয়ার। হ্রদের কাছেই খাজিনাগের মন্দির। খিলানস্তম্ভে অসাধারণ কারুকাজ।
যাওয়াঃ- ডালহৌসির সুভাষচক থেকে বাস ছাড়ছে খাজিয়ার যাবার। ডালহৌসি থেকে প্রায় ২৩ কিলোমিটার দূরত্বে খাজিয়ার। কেউ যদি ব্যক্তিগতভাবে গাড়ি ভাড়া করে যান তাহলে খাজিয়ার দর্শন করে একদিনেই ডালহৌসি ফেরা যায়।
থাকাঃ- থাকার জন্যে বেসরকারি হোটেল আছে। খাজিয়ারের এস টি ডি কোডঃ-০১৮৯৯।
চাম্বা (Chamba)- ইরাবতী বা রাভিনদীর ডানতীরে চাম্বা। মধ্যযুগীয় স্থাপত্যশৈলীর মোড়কে চাম্বা গড়ে উঠেছে রাজা সাহিল বর্মার আমলে। দশম শতাব্দীর রাজা ছিলেন এই সাহিল বর্মা। দেখার মধ্যে আছে বিশাল রাজপ্রাসাদ, নানান বর্ণিল সংগ্রহের ভুরি সিং মিউজিয়াম, দৈবমহিমান্বিত প্রাচীন দেবদেবীর মন্দির। মন্দিরগুলোয় বিশেষ বিশেষ তিথি-নক্ষত্রে উপচে পড়ে ভক্ত-পর্যটকদের ভিড়। কেউ আসেন পুজো দিতে, আবার কেউবা শুধু দুচোখ ভরে দেখে যান মধ্যযুগীয় শিল্পরীতির কারুকলা। স্থাপত্য, চারুকলা এসব না হয় বাদই দিলাম। চাম্বার চারপাশে যদি দুদন্ড চোখ মেলা যায় তাহলে দেখা যাবে পাহাড়মেশা হিমাচলি শোভা নান্দনিক সৌকর্যে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখছে পর্যটকদের। শহরের ঠিক মাঝমধ্যিখানে নদীর তীরে এক বিশাল ময়দান। নাম চৌগান ময়দান। দুদিন বরাদ্দ রাখাই যায় চাম্বার জন্য। হাঁটাপথে দেখে নেওয়া যায়। দশম শতাব্দীর লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দিরগুচ্ছ, পুলিশ চৌকি এবং ট্রেজারি বিল্ডিংয়ের পিছনের চম্পাবতী মন্দির। জানসালি বাজারের শেষপ্রান্তে রয়েছে প্রাচীন এক মন্দির। ওটা দেবী ব্রজেশ্বরীর। এছাড়াও সাহ মাদার হিলের উপরে সুইমাতা মন্দির এবং পুরো নগরীর উপরে চামুণ্ডা মন্দির। গোটা চাম্বা শহরটা এবং বিস্তীর্ণ ইরাবতী উপত্যকা যদি একচোখে দেখতে চাইলে উঠে আসতে হবে চামুণ্ডা মন্দিরে। অসাধারণ এক অনুভূতি।
চৌগান ময়দানের পাশেই হরিরাই মন্দির। সামনেই একটা তোরণ আছে। বহু প্রাচীন। আজ আধুনিকতার ছোঁয়ায় ট্যুরিস্ট স্পটগুলো অনেক বেশি ঝলমলে হয়েছে ঠিকই। কিন্তু সেই ঝলমলে আধুনিক ঝালরের আড়ালে কত পুরোনো গৌরবগাথা চাপা পড়ে আছে তার খবরাখবর কে রাখে! তবু মনে রাখে, বুকে আগলে রাখে ওই তোরণের মতো কিছু স্থাপত্য। চম্পানগরীর গৌরবময় দিনগুলোর স্মৃতি হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে ওই তোরণ। চাম্বাতেই রয়েছে অখণ্ডচণ্ডী প্যালেস, রংমহল ইত্যাদি।
যাওয়াঃ- চাম্বার কাছে রেলস্টেশন পাঠানকোট। সেখান থেকে বাস, ট্যাক্সি অথবা জিপে চাম্বা আসা যায়। সেক্ষেত্রে ১২২ কিলোমিটার পথ পেরোতে হবে। সময় লাগবে প্রায় সাড়ে ৪ ঘন্টা। এছাড়া ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চাম্বাগামী বাস আসছে। জম্মু, সিমলা, মান্ডি, মানালি, কাংড়া, অমৃতসর, দিল্লি, হরিদ্বার এবং ডালহৌসি থেকে বাস আছে চাম্বায় যাবার। ডালহৌসি থেকে চাম্বার দূরত্ব ৪৯ কিলোমিটার।
থাকাঃ- থাকার জন্যে প্রচুর বেসরকারি হোটেল আছে। চাম্বার এস টি ডি কোডঃ-০১৮৯৯
ভারমোর (Bharmore)- অতীতের ব্রহ্মপুর, আজকের ভারমোর। প্রাচীন চাম্বার রাজধানী ছিল ব্রহ্মপুর। ৪০০ বছর ধরে রাজ্য-রাজধানীর এই সম্পর্ক টিঁকে ছিল। ভাঙন ধরল দশম শতাব্দীতে। রাজা সাহিল বর্মা পত্তন করলেন চম্পানগরীর। গদ্দিরা এল। শুরু হল চাষবাষ। বিশেষত আপেলের চাষ। আঞ্চলিক ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখলে দেখতে পাব চৌরাশিয়া মন্দির। অর্থাৎ চুরাশিটি শিবমন্দির। তৈরি হয় সপ্তম থেকে একাদশ শতকের মধ্যে। তবে কালের আঘাতে ধ্বংস হয়ে গেছে বেশ কতগুলি। রয়ে গেছে লিঙ্গরাজ, মণিমহেশ, গণেশ, শীতলা, সূর্যলিঙ্গ, ব্রাহ্মণী, চামুণ্ডা, নৃসিংহ, চতুর্ভুজ, লক্ষ্মণ, মহিষাসুরমর্দিনী, লক্ষ্মীনারায়ণ ইত্যাদি মন্দির।এইসব মন্দিররাজিকে ঘিরেই সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২,১৩০ মিটার উঁচু এই ছোট্ট জনপদ আজও টিঁকে আছে। তুষারমৌলি হিমালয়ের কোলে এই জায়গা আজও শিবভূমি নামে খ্যাত। এমন বহু পর্যটকই আছেন যাঁরা ভ্রমণপথে অ্যাডভেঞ্চারকে সঙ্গী করতে চান। তাঁরা ট্রেকিং করে ঘুরে আসতে পারেন সুবিখ্যাত মণিমহেশ হ্রদে। ঠিক তার পিছনেই মণিমহেশ শৃঙ্গ। হ্রদের জলে পড়ে ওই শৃঙ্গের ছায়া। সে এক অনন্য দৃশ্য।
যাওয়াঃ- চাম্বা থেকে ভারামোর মোট ৬৫ কিলোমিটার রাস্তা। বাস যায়। গাড়ি থাকলে আরও সুবিধে।
থাকাঃ- থাকার জন্যে অল্পকয়েকটি বেসরকারি হোটেল আছে। ভারমোরের এস টি ডি কোডঃ-০১০৯০।
ধরমশালা (Dharamshala)- ১৯০৫সালের প্রবল ভূমিকম্পে প্রাচীন ধরমশালা ধূলিসাৎ হয়। পরবর্তীকালে যখন নতুন নগর গড়ে ওঠে তখন দুভাগে ভাগ হয়ে যায় ধরমশালা। নানান সরকারী দপ্তর, কোতোয়ালি বাজার, ব্যবসাকেন্দ্র নিয়ে গড়ে ওঠে লোয়ার ধরমশালা। উপরের অংশটির বা আপার ধরমশালার নাম হয় ম্যাকলয়েডগঞ্জ বা ফরসিথগঞ্জ। তারপর ১৯৬০ সালে দলাই লামার কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র হয়ে ওঠে আপার ধরমশালা। প্রচুর তিব্বতি শরণার্থীর বাস এখানে। তাই আপার ধরমশালাকে বলে হয় ‘লিটল লাসা ইন ইন্ডিয়া’। এটা কাংড়া জেলার সদরশহর। কাংড়া শহরটি ধরমশালা থেকে ১৮ কিলোমিটার উপরে। ধৌলাধারের গিরিঢালে লোয়ার ধরমশালার উচ্চতা ১,২৫০ মিটার। সেখান থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে ২,০০০ মিটার উচ্চতায় আপার ধরমশালা। এখানে মানে ম্যাকলয়েডগঞ্জের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে বিশাল মনাস্ট্রি। মেরুন পোশাকে মোড়া ছোট-বড়ো লামার দল ইতিউতি ঘুরে বেড়ায়। মনাস্ট্রিটির বিপরীতেই দলাই লামার বাড়ি। এখান থেকে মাত্র এক কিলোমিটারের মধ্যে টিবেটান ইনস্টিটিউট অফ পারফর্মিং আর্টস। প্রাচীন তিব্বতীয় সংগীত, নাটক ও সাংস্কৃতিক ধারাকে বাঁচিয়ে রাখাই টি.আই.পি.-র কাজ। তিব্বতি হস্তশিল্পের আঁতুড়ঘর টিবেটান হ্যান্ডিক্র্যাফটস সেন্টার তো আছেই।
ম্যাকলয়েডগঞ্জ থেকে ২ কিলোমিটার এগিয়ে ভাগসুনাগ শিবমন্দির এবং আরও কিছুটা হাঁটাপথে এগোলে ভাগসুনাগ জলপ্রপাত। ভারতবর্ষে বেশকিছু মন্দির আছে যেখানে পশ্চিমি পর্যটকদের আনাগোনা একটু বেশি চোখে পড়ে। এই ভাগসুনাগ তেমনি এক মন্দির। মন্দিরকে কেন্দ্র করে ছোট্ট জনপদ। চারধারে পর্বতমালার বেষ্টনী। দিনশেষে ওই পাহাড়কোলেই চুপ করে ডুব দেয় সূর্য। উলটোদিকের পাহাড়তলি থেকে ধেয়ে আসে একরাশ অন্ধকার। দিন-সন্ধের সন্ধিগোধূলি কত মুসাফিরের চোখে যে রং লাগিয়ে মিলিয়ে গেছে তার হিসেব নেই। তবে দিন থাকতে থাকতেই ঘুরে আসা ভালো ঝরনার কাছ থেকে। অমন সুন্দর ঝরনার পরিবেশটা যাতে অবাঞ্ছিত আবর্জনায় ভরে না ওঠে সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার। হাতে সময় থাকলে প্রকৃতির কোলের আল বেয়ে ঘুরে নেওয়া যায় সুরম্য পরিবেশে। দুচোখ ভরে যাবে আলোধোয়া ধৌলাধারের চোখে চোখ রেখে। একসময় কানে আসবে ভাগসুনাগের ঘরে সন্ধ্যারতির ঘন্টা। ততক্ষণে পশ্চিম পাহাড়ে সূর্যও ডুবুডুবু।
ম্যাকলয়েডঞ্জ থেকে মাত্র ১ কিলোমিটার দূরত্বে সেন্ট জনস চার্চ। ১৮৬৩ সালে তৈরি এই গির্জার ভিতরে ভাইসরয় লর্ড এলগিনের সমাধি রয়েছে। ধরমশালায় মৃত্যুবরণ করার পর তাঁকে এখানেই সমাধিস্থ করা হয়। ম্যাকলয়েডগঞ্জ থেকে ৭ কিলোমিটার দূরত্বে নাড্ডি গ্রাম। সেই রাস্তাতেই ডাললেক। এ ডাললেকের পরিবেশ তেমন একটা মনোমুগ্ধকর নয়। সে তুলনায় নাড্ডি খুবই সুন্দর। নাড্ডি ভিউপয়েন্ট থেকে ধৌলাধার সমেত পুরো উপত্যকার দৃশ্য অনন্যসুন্দর। ভাগসুনাগ থেকে চলে যাওয়া যায় ধরমকোট। সেখান থেকে কাংড়া উপত্যকার ছবির সঙ্গে ধরা দেয় পং ড্যাম। ট্রেকিং যাঁদের নেশা তাঁরা একবেলার ট্রেকে চলে যেতেই পারেন ট্রিউণ্ড। সেখানে ক্যাম্প করে থাকার সুব্যবস্থা আছে। রয়েছে বনবিভাগের বিশ্রামগৃহ। এখানকার মূল আকর্ষণ তুষারঢাকা ধৌলাধার।
লোয়ার ধরমশালায় ঢোকার মুখেই ওয়ার মেমোরিয়াল। দেশের জন্য প্রাণদান করা শহিদদের স্মরণে এটি তৈরি করা হয়েছে। কুণালপাথরি গুহামন্দির লোয়ার ধরমশালা থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার। ২২ কিলোমিটার দূরে কাবেরী বনবিভাগের বিশ্রামগৃহ। কাবেরী সরোবরের কাছেই আছে কালীমন্দির ও দুর্বাসা মন্দির।
যাওয়াঃ- চাম্বা থেকে ধরমশালা আসার খুব বেশি বাস নাই। সকালের বাস কেবল মাত্র সরাসরি ধরমশালা পৌঁছোয়। সময় লাগে ৭ ঘন্টা। দূরত্ব ১৭০ কিলোমিটার। পাঠানকোট থেকে ধরমশালা আসা যায়। বাসে চেপে ঘন্টাচারেকে পার হয়ে যাওয়া যায় প্রায় ৯০ কিলোমিটার পথ। ডালহৌসি থেকে যদি কেউ ধরমশালা আসতে চাইলে পাঠানকোট হয়ে না এলেও হয়। লহরু হয়ে একটা শট রুট আছে। সেক্ষেত্রে ডালহৌসি থেকে ধরমশালা ১২৭ কিলোমিটার। চাক্কিব্যাংক থেকে দূরত্ব ১৪৩ কিলোমিটার। বাস-পথে ৫-৬ ঘন্টা সময় লাগে। কোনও পর্যটক যদি ধরমশালাকেই টার্গেট করেন হিমাচল ভ্রমণের শুরু হিসেবে তাহলে তাঁরা অনায়াসেই চণ্ডীগড় হয়ে আসতে পারেন। ৯ ঘন্টার জার্নি। নাইট সার্ভিসও চালু আছে।
থাকাঃ- থাকার জন্যে প্রচুর বেসরকারি হোটেল আছে। ধরমশালার এস টি ডি কোডঃ- ০১৮৯২।
জ্বালামুখী (Jwalamukhi)- দক্ষযজ্ঞ কাণ্ডে সতীর খণ্ডবিখণ্ড দেহ পৃথিবীর যে যে প্রান্তে পড়েছে ঠিক সেইখানেই গড়ে উঠেছে সতীপীঠ। জ্বালামুখী সেই ৫১ পীঠেরই এক পীঠ। তবে এখানে কোন মূর্তি নেই। আছে অনাদিকাল ধরে অনির্বাণ শিখায় জ্বলতে থাকা এক নীলাভ দ্যুতি। এখানে সতীর জিভ পড়ে। শোনা যায়, এক রাখাল এই শিখাটি আবিষ্কার করে। ওই শিখাই নাকি অগ্নিপ্রভা সতীর জিভ। তিথি-র উৎসবে পুণ্যার্থীর ভিড়ে পা ফেলাই দায় হয় জ্বালামুখীতে। এখানে দুটি ঝরনাও আছে। এপ্রিল ও অক্টোবরে নবরাত্রির মেলা বসে এখানে। ওই দৈবশিখাকে ঘিরে কাটোকরাজ ভূমিচন্দ্র মন্দির গড়েন। বাদশা আকবর এই মন্দিরের চূড়াটি সোনায় মুড়ে দেন। পাঞ্জাবের শিখরাজারা ভেট হিসেবে দান করেন রুপোর দরজা। শোনা যায়, রাম-লক্ষ্মণ-সীতা না কি এই মন্দিরে এসেছিলান। জ্বালামুখী থেকে আরও ৩৫ কিলোমিটার দূরে চিন্তাপূরণী নামে একটি পীঠস্থান আছে। সেখানে সতীর চরণ পড়েছিল। যদিও এও লোকবিশ্বাস।
যাওয়াঃ- ধরমশালা থেকে বাসে চেপে জ্বালামুখী। বাসগুলো কাংড়া (Kangra) হয়ে যায়। ধরমশালা থেকে ৫৫ কিলোমিটার এবং কাংড়া থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে জ্বালামুখী। মোটামুটি আড়াই ঘন্টার মধ্যে জ্বালামুখী পৌঁছে যাওয়া যায় ধরমশালা থেকে।
থাকাঃ- অল্প কয়েকটি বেসরকারি হোটেল আছে। জ্বালামুখীর এস টি ডি কোডঃ-০১৯৭০।
পালামপুর-বৈজনাথ(Palampur & Baijnath)- পাহাড়প্রদেশে এ এক সমতল উপত্যকা। কমবেশি ১,২০০ মিটার উচ্চতা। প্রকৃতি এখানে উদারহস্ত। দেওদার-পাইনের সবুজবিন্যাস, চা-বাগান, নিরালা-নির্জনে খোলা হাওয়ার খেলে যাওয়া - পালামপুর এমনই। ধরমশালা থেকে যদি কেউ পালামপুরে আসার পথে চামুন্ডাদেবী মন্দির দেখে নেওয়া যায়। ইচ্ছে হলে সেখানে থাকাও যেতে পারে। পালামপুরের কাছেই কুণ্ডলা নদী। ঝরনাও বয়ে যাচ্ছে আপন খেয়ালে।
তুষারমৌলি পর্বতের কোলে শিবভূমি বৈজনাথ। নবম শতাব্দীর এই মন্দির, নাটমন্দিরসমেত একরত্নবিশিষ্ট পাথরের মন্দির-ঐতিহ্য, শিল্প, প্রাচীনত্বে অনন্য। এখানেই না কি শিব সাধনা করেছিলেন। দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম এই বৈজনাথ।এখানে অধিষ্ঠিত মহাদেবকে চিকিৎসকদের প্রভু হিসেবে কল্পনা করা হয়। তাই তাঁর নাম বৈদ্যনাথ। হয়তো ওই নামটাই লোকমুখে ঘুরেফিরে বৈজনাথ হয়ে উঠেছে।
যাওয়াঃ- জ্বালামুখী থেকে বাসে চেপে কাংড়া হয়ে পালামপুর। দূরত্ব প্রায় ৯০ কিলোমিটার। পালামপুর থেকে মাত্র ১৬ কিলোমিটার দূরে শিবতীর্থ বৈজনাথ, ভাড়াগাড়িতেই পার হতে হবে এই পথ।
থাকাঃ- থাকার জন্যে পালামপুর ও বৈজনাথের বেশ কয়েকটি বেসরকারি হোটেল আছে। পালামপুর ও বৈজনাথের এস টি ডি কোডঃ-০১৮৯৪