কেরালাকে কয়েকটা সার্কিটে ভেঙে দেখে নেওয়া যায়। যারমধ্যে প্রধান দুটি - আলেপ্পি-কোট্টায়ম-কুইলন-ভারকালা-ত্রিবান্দ্রাম এবং কোচিন-মুন্নার-পেরিয়ার।
তিরুবনন্তপুরম বা ত্রিবান্দ্রাম (Thiruvananthapuram / Trivandrum) – পাহাড় আর সমুদ্রে ঘেরা, প্রাচীনত্ব আর আধুনিকতার গন্ধমাখা রাজধানী শহর। ইস্টফোর্ড বাসস্ট্যান্ডের কাছে শহরের প্রধান আকর্ষণ পদ্মনাভস্বামী মন্দির। ত্রিবাঙ্কুর রাজ্যের গৃহদেবতা অনন্তশয্যায় শায়িত বিষ্ণুর মন্দির। পুরুষদের ধুতি পরে মন্দিরে ঢুকতে হয়। আর মহিলাদের প্রবেশ নিষেধ। মন্দির লাগোয়া পুত্তানমালিকা প্রাসাদ। ত্রিবাঙ্কুর রাজাদের প্রাচীন এই প্রাসাদ এখন মিউজিয়াম। শহরের মাঝখানে নেপিয়ার মিউজিয়াম। এছাড়াও রয়েছে চিড়িয়াখানা ও বোটানিক্যাল গার্ডেন, আর্ট মিউজিয়াম, শ্রীচিত্রা আর্ট গ্যালারি, ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম, সায়েন্স মিউজিয়াম। অটো বা গাড়ি ভাড়া করে অথবা কেরালা পর্যটনের কন্ডাকটেড ট্যুরে বেড়িয়ে নেওয়া যায় শহর ও তার আশপাশ।
শহর থেকে ৮ কিমি দূরে শানগুমুখম সৈকত। সৈকতের ধারে পাথরের তৈরি ৩৫ মি লম্বা বিশালাকায় মৎস্যকন্যার অপরূপ ভাস্কর্য। কাছেই ভেলি ট্যুরিস্ট ভিলেজ। তিরুবনন্তপুরমের কাছেই সমুদ্রোপকূলে থুম্বায় ভারতীয় স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন ও বিক্রম সারাভাই স্পেস সেন্টার। সাধারণের প্রবেশ নিষেধ। তিরুবনন্তপুরম থেকে ৫১ কিমি দূরে ত্রিবাঙ্কুর রাজাদের রাজধানী ভাস্কর্যের শহর পদ্মনাভপুরম।
কোভালাম সৈকত (Kovalam Beach) – ১৬ কিমি দক্ষিণে ভারতের অন্যতম সেরা সমুদ্রসৈকত কোভালাম। তাল, নারকেল, পেঁপে, কলাগাছে ছাওয়া নিরালা সৈকতে শান্ত নীল সমুদ্র ছুঁয়ে যায় রুপোলি বেলাভূমি। উপরি পাওনা আয়ুর্বেদিক ম্যাসেজ পার্লার। সমুদ্রতীরের লাইটহাউসটি থেকে দিগন্তবিস্তৃত সমুদ্রবেলার অপরূপ ছবি মনে আঁকা হয়ে যায়। কোভালাম থেকে মাত্র ২ কিমি দূরে মেছুয়াদের গ্রাম ভিঞ্জিঞ্জাম। প্রায় ১০ কিমি দূরে ২০০০ বছরের পুরোনো পরশুরাম মন্দির।
পোনমুড়ি (Ponmuri) – তিরুবনন্তপুরম থেকে ৫৬ কিমি উত্তরে পশ্চিমঘাট পর্বতে স্বাস্থ্যনিবাস পোনমুড়ি। ইউক্যালিপ্টাস, রাবার আর চা বাগিচার সবুজ চাদরে মোড়া পোনমুড়ির পাহাড় সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তে অপরূপ হয়ে ওঠে। কাছেই পিপ্পারা ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারি। হাতি, সম্বর, লেপার্ড আর নানান পাখির বাসভূমি।
যাওয়া – নিকটতম রেলস্টেশন তিরুবনন্তপুরম (TVC), বিমানবন্দর চেন্নাই। চেন্নাই থেকে ত্রিবান্দ্রাম যাওয়ার অনেক ট্রেন আছে। ত্রিবান্দ্রাম থেকে বাসে বাসেই কোভালাম আর ভাড়া গাড়িতে পোনমুড়ি বেড়িয়ে নেওয়া যায়। ত্রিবান্দ্রাম থেকে আলেপ্পির দূরত্ব ১৬০ কিমি, এর্নাকুলাম ২২২ কিমি, কুইলন ৭২ কিমি, ভারকালা ৪০ কিমি, কুমিলি (পেরিয়ারের কাছে) ২৫৩ কিমি। সব জায়গাতেই যাতায়াতের জন্য বাস রয়েছে।
কুইলন বা কোল্লাম (Quilon) – তিরুবনন্তপুরম থেকে ৭২ কিমি দূরে অষ্টমুড়ি লেকের ধারে ব্যাকওয়াটারের দেশ কুইলন। কাজুবাদাম আর মশলার রাজ্য। লেকের পাড়ে কাজু, নারকেল, কলা, কাঁঠাল গাছের সারি। শহর জুড়ে লালটালিতে ছাওয়া কাঠের বাড়িঘর। লেকের ধারে ডিস্ট্রিক্ট ট্যুরিজম প্রমোশন কাউন্সিল (ডি.টি.পি.সি.)-র পিকনিক ভিলেজ। শহর থেকে ৫ কিমি দূরে সমুদ্রসৈকত। ১০ কিমি দূরে অমৃতান্দময়ী মাতার আশ্রম। কুইলনের সেরা আকর্ষণ ব্যাকওয়াটার ট্যুর। বোটজেটির কাছেই বুকিং অফিস। ট্যুরের সময় সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টো। অষ্টমুড়ি লেক, ডি টি পি সি-র ট্যুরিস্ট রিসেপশন সেন্টার লাগোয়া বাসস্ট্যান্ডে ত্রিবান্দ্রাম, আলেপ্পি, কোচি, কোট্টায়মগামী বাস মেলে। ৫ কিলোমিটার দূরে সাগরপারের ছোট্ট বন্দরগাঁ থাঙ্গাসেরি একসময়ের ব্রিটিশ আর পর্তুগিজদের বাণিজ্যবন্দর ছিল। এখানে সোনার কয়েন দিয়ে বাণিজ্য চলত বলে এর স্থানীয় নাম সোনারগাঁ। পর্তুগিজ আমলের দুর্গের ধ্বংসাবশেষ আর গির্জা আজও আছে। সেসবই তৈরি হয়েছিল ১৮-র দশকে। ব্রিটিশদের হাতে তৈরি থাঙ্গাসেরির বিখ্যাত লাইটহাউস বিকেল সাড়ে ৩টে থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। কুইলন থেকে ১০ কিমি দূরে মায়ানাড। সুব্রামন্নার মন্দির, শোনা যায় এই মন্দির আর মূর্তি শংকরাচার্যের সমসাময়িক। কুইলন থেকে প্রায় ২৮ কিমি দূরে সনরো দ্বীপ নারকেল দড়ি আর নৌকা তৈরির জন্য বিখ্যাত। কেরালার জলরেখার চলমান জীবনরেখা কেট্টুভল্লম, এক বিশেষ ধরণের নৌকো, যাকে সকলে স্নেকবোট নামে চেনে তা তৈরি হয় এই দ্বীপের কারখানায়।
কুইলন থেকে প্রায় ৩৫ কিমি দূরে শিবক্ষেত্র ওছিরা। এখানেই রয়েছে বিখ্যাত পরমব্রহ্ম মন্দির। নভেম্বর-ডিসেম্বরে ১২ প্রদীপের উৎসব পানথ্রাডু ভিলাক্কু আর জুন মাসের ওছিরাকাল্লি উৎসব বিখ্যাত। কুইলন থেকে প্রায় ৬৬ কিমি দূরে পৃথিবীর অন্যতম বিখ্যাত ইকো-ট্যুরিজম প্রোজেক্ট থেনমালা। ঘন বনাঞ্চল, টি অ্যান্ড রবার প্ল্যান্টেশন জোন - সব মিলিয়ে সবুজের রাজ্যপাট। তার মধ্যেই স্কাল্পচার গার্ডেন, অ্যাম্ফিথিয়েটারসহ কালচারাল জোন, মিউজিকাল ফাউন্টেন, অ্যাডভেঞ্চার জোন।
ভারকালা (Varkala) – তিরুবনন্তপুরম থেকে কুইলন যাওয়ার পথেই পড়ে ভারকালা। কথিত আছে, বিষ্ণুর উপাসনার জায়গা খুঁজতে এসে এখানে নারদ তাঁর ভাল্লাকালম বা বল্কল খুলে স্থান নির্ধারণ করেন। সেই থেকেই এই নামের উৎপত্তি। মূল সড়ক ছেড়ে ১১ কিমি বাঁয়ে পাহাড়চূড়োয় ভারকালা প্রস্রবণ। ভারকালার পাপনাশম সৈকতে স্নান করলে পাপ ধুয়ে যায় এমনটাই বিশ্বাস করেন স্থানীয় মানুষ। ধনুকাকৃতি পাপনাশম সৈকতের একপাশে লালপাথরের প্রাচীর। সৈকতশেষে টিলা বা ক্লিফটপ। টিলার মাথায় শিবগিরি মঠ। অন্যদিকে সার দিয়ে রয়েছে হোটেল, রিসর্ট, রেস্তোরাঁ, ম্যাসাজ পার্লার। পাপনাশম সৈকতের পথে ২০০০ বছরের প্রাচীন শ্রীজনার্দনস্বামী(বিষ্ণু) মন্দির।
যাওয়া – তিরুবনন্তপুরম থেকে এন এইচ- ৪৭ ধরে কুইলন পেরিয়ে আরও ৩৬ কিলোমিটার দূরে ভারকালা। কুইলন থেকে ভারকালা আরবসাগরের তীর ধরে ভারতের সবচেয়ে সুন্দর সিনিক ড্রাইভওয়ে।
আলেপ্পি বা আলহাপূজা (Alappuzha/Alleppey) – সমুদ্র-নদী-খাঁড়ি আর মাকড়সার জালের মতো অজস্র খাল নিয়ে কেরালার আলেপ্পি বা আলহাপূজা প্রাচ্যের ভেনিস নামে খ্যাত। এর একপাশে আরব সাগর, অন্যদিকে কেরালার বৃহত্তম লেক ভেম্বানাদ। একসময় ত্রিবাঙ্কুর রাজাদের বাণিজ্যকেন্দ্র ছিল আলেপ্পি। সমুদ্র থেকেও নিচুতে বাঁধ দিয়ে চাষ হচ্ছে নারকেল, কলা আর নানারকম মশলার গাছের। সবুজের মাঝে ছোট ছোট বাড়িঘর। বোট জেটি থেকে নৌকা বা মোটরবোট ভাড়া করে দেখে নেওয়া যায় ব্যাকওয়াটারের শোভা। ডি টি পি সি বা কে টি ডি সি-র হাউসবোটের প্যাকেজট্যুরেও ঘোরা যায়। শহরের একপাশে আলেপ্পির সৈকত। আর আছে বিজয়া বিচ পার্ক, সি ভিউ পার্ক। আলেপ্পির দক্ষিনে প্রায় ১৫ কিমি দূরে আম্বালাপুজা শ্রীকৃষ্ণ মন্দির। কেরলীয় গঠনশৈলী আর দশ অবতারের ভিন্ন ভিন্ন রূপ, সবমিলে প্রাচীন এক চেহারা। ৩২ কিলোমিটার দূরে নাগরাজের মন্দির। নাগরাজ স্থানীয় এক ব্রাহ্মণ পরিবারের গৃহদেবতা। লোকবিশ্বাস, অলৌকিক এই দেবমূর্তি আসলে বিষ্ণু আর শিবের মিলিত রূপ। আলেপ্পি থেকে অটোভাড়া করে আশপাশ ঘুরে নেওয়া যায়।
যাওয়া – নিকটতম রেলস্টেশন আলেপ্পি (ALLP), বিমানবন্দর চেন্নাই। চেন্নাই থেকে আলেপ্পি যাওয়ার অনেক ট্রেন আছে। তিরুবনন্তপুরম থেকে রাজ্যপরিবহনের বাসে চলে আসা যায় ১৫০ কিলোমিটার দূরে আলেপ্পিতে। আলেপ্পি থেকে কুইলন বা কুইলন থেকে আলেপ্পি যাওয়া যায় জলপথেও।
থাকা – ত্রিবান্দ্রমে কেরালা পর্যটনের ম্যাসকট হোটেল, কোভালামে কে টি ডি সি-র হোটেল সমুদ্র। পোনমুড়িতে রয়েছে পোনমুড়ি ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্স ও পি ডব্লু ডি-র বাংলো। কুইলনে অষ্টমুড়ি হ্রদের ধারে কেরালা পর্যটনের যাত্রীনিবাস। ভারকালায় রয়েছে কেরালা ট্যুরিজমের গভর্নমেন্ট গেস্ট হাউস। পোনমুড়ি বাদে সর্বত্রই বেসরকারি হোটেল রয়েছে।
কোট্টায়াম – আল্লাপুজা অথবা কোচি থেকে ব্যাকওয়াটার ভ্রমণে পৌঁছে যাওয়া যায় পশ্চিমঘাট পর্বতমালা আর ভেম্বানাদ লেকের মাঝে কোট্টায়ামে। চিরহরিৎ আর পর্ণমোচী অরণ্যে ছাওয়া কোট্টায়ামে চা, কফি, কোকো, গোলমরিচ, এলাচ, রবারের চাষ হয়।
১৮ শতকের মধ্যভাগে থেক্কুমকুর রাজার রাজধানী ছিল কোট্টায়াম। শহর জুড়ে নানা হেরিটেজ চার্চ – সেন্ট ম্যারিজ চার্চ, চেরিয়াপাল্লী চার্চ, ভালিয়াপাল্লি চার্চ উল্লেখযোগ্য। কোট্টায়াম-এর্ণাকুলাম সড়কপথে এট্টুমানুর ও ভাইকুম মন্দিরদুটি দ্রষ্টব্য।
কোট্টায়াম থেকে ১২ কিমি পশ্চিমে ভেম্বানাদ হ্রদে নারকেল গাছে ছাওয়া সবুজ দ্বীপে কুমারাকোম পক্ষীআলয়। পরিযায়ী আর স্থানীয় পাখিদের মেলা বসে বিশেষ করে শীতের সময়ে। স্টর্ক, হেরন, ইগ্রেট, স্কাইলার্কের পাশাপাশি দেখা মিলবে চেনা হাঁস, কোকিলেরও। জলে বোটিং-এর ব্যবস্থা আছে। থাকা যায় হাউসবোটেও।
নির্জন দ্বীপ পাথিরামানালও এখানের আরেক আকর্ষণ।
যাওয়া - কুমারাকোমের নিকটবর্তী বিমানবন্দর কোচি। তবে কলকাতা থেকে কোচি যোগাযোগ তত সুবিধের নয়। কলকাতা থেকে বিমানে গেলে চেন্নাই বা ত্রিবান্দ্রাম হয়ে যাওয়াই ভাল। সেখান থেকে ট্রেনে বা অন্য বিমানে কোচি। ট্রেনেও তাই চেন্নাই কিংবা ত্রিবান্দ্রাম দিয়ে সফর শুরু করাই ভাল। চেন্নাই বা ত্রিবান্দ্রম থেকে সরাসরি কোট্টায়াম চলে আসা যায় ট্রেনে। কোট্টায়াম বা কোচি থেকে ভাড়া গাড়িতে কুমারকোম।
থাকা - কুমারাকোম যদিও ছোট্ট একটি জনপদ কিন্তু পর্যটকদের অত্যন্ত প্রিয় জায়গা। তাই হোটেল, রিসর্টের সংখ্যা অনেক। পাঁচতারা হোটেলের সংখ্যাও কম নয়। কুমারাকোম পাখিরালয়ের ভেতরে কেরালা পর্যটনের নিজস্ব পর্যটকাবাস আছে – ওয়াটারস্কেপ (Waterscape)। ব্যবস্থাপত্র অতি চমৎকার। অগ্রিম বুকিং করে নেওয়াই ভাল। যদি কুমারাকোমের সঙ্গে কেরালার প্যাকেজ ট্যুর করেন সেক্ষেত্রে সঙ্গে তো ভাড়ারগাড়ি তো থাকবেই, নতুবা খেয়াল রাখতে হবে যে এখানে সঙ্গে নিজস্ব ভাড়ারগাড়ি না থাকলে একটু অসুবিধে হতে পারে। লোকাল ট্রান্সপোর্ট সেরকম সুবিধের নয়। কোট্টায়াম বা কোচি থেকে শুধু কুমারাকোম ঘুরতে চাইলে দু'তিন দিনের জন্য গাড়ি সঙ্গে নিয়ে নেবেন। শান্ত নির্জন পরিবেশে পাখিদের মাঝে দুটো দিন কাটাতে মন্দ লাগবে না।
ভ্রমণ কাহিনি - || ক্রৌঞ্চদ্বীপ কুমারাকোমে ||
কোচিন বা কোচি (Cochin) – ভেম্বানাদ হ্রদ, আরবসাগর আর ব্যাকওয়াটারের মাঝে ১০টি দ্বীপ নিয়ে কেরালার অন্যতম ব্যস্ত বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিন। নাম বদলে এখন কোচি। উইলিংডন দ্বীপ, এর্নাকুলাম আর ফোর্ট কোচি – কোচিনের তিন প্রধান দ্রষ্টব্যস্থল। কে টি ডি সি-র লঞ্চ ট্যুরে দেখানো হয় ওয়েলিংডন দ্বীপ, কোচি বন্দর, জিউস সিনাগগ, মাত্তানচেরি প্রাসাদ, ফোর্ট কোচি, বোলগেটি দ্বীপ। ফোর্ট কোচি দুর্গটি ব্রিটিশদের সৃষ্টি। কোচিতে আর এক দর্শনীয় ঐতিহাসিক সেন্ট ফ্রান্সিস চার্চ। মাত্তানচেরী জেটির কাছে মাত্তানচেরী প্রাসাদ। প্রাসাদের দেওয়ালে ম্যুরাল পেন্টিংয়ের অপরূপ কারুকার্যে ফুটে উঠেছে রামায়ণ, মহাভারত ও পুরাণের নানান গল্প। জু টাউন পেরিয়ে ইহুদিদের উপাসনাস্থল সিনাগগ। এর্নাকুলামের উত্তর-পশ্চিমে কোচি উপহ্রদে বোলাঘাটি দ্বীপ। বোলাঘাটির পশ্চিমে ভাল্লারপদম দ্বীপ। কোচির আরেক আকর্ষণ কোচি মিউজিয়াম ও হিল প্যালেস মিউজিয়াম।
মুন্নার (Munnar) – মুদ্রাপূজা, নালাতান্নি আর কুন্ডলা – তিন পাহাড়ি নদীতে ঘেরা সবুজ শৈলশহর মুন্নার। দিগন্তবিস্তৃত চা বাগান মুন্নারের বৈশিষ্ট্য। পশ্চিমঘাট পর্বতের ঢালে এলাচ, গোলমরিচ, লবঙ্গ, দারচিনি আর কফির চাষ হয়। মুন্নার থেকে ১৫ কিমি দূরে ইরাভিকুলাম জাতীয় উদ্যান। এই অরণ্যেই রয়েছে দক্ষিণ ভারতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ আনামুদি (২৬৯৫ মিটার) নীলগিরি হাতি, শম্বর, গউর ইত্যাদি প্রাণীর দেখা মিলবে এই জঙ্গলে। বর্ষায় অরণ্য বন্ধ থাকে। মুন্নার থেকে ১৬ কিমি দূরে দেবীকুলাম। এখানে রয়েছে সীতা দেবী সরোবর। ১৩ কিমি দূরে মাডুপেট্টি হ্রদ। হ্রদের ওপর মাডুপেট্টি ড্যাম। আশপাশে দেখুন ইন্দো-সুইস প্রজেক্ট, ইকোপয়েন্ট, কুন্ডালা হ্রদ ও ড্যাম। মাডুপেট্টি ও কুন্ডালা হ্রদে বোটিংয়ের ব্যাবস্থা আছে। চা বাগিচা ঘেরা পথে ১ ঘণ্টায় পৌঁছে যাওয়া যায় দক্ষিণ ভারতের সর্বোচ্চ (২২০০ মি)চা বাগান টপস্টেশন। ডি টি পি সি-র কন্ডাকটেড ট্যুরে মুন্নারের দ্রষ্টব্যগুলি ঘুরে নেওয়া যায়।
পেরিয়ার (Periyar) – কেরালার থেক্কাডি জেলায় পেরিয়ার ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারি – ভারতের অন্যতম সুন্দর অভয়ারণ্য। ১৮৯৯ সালে অভয়ারণ্যের মর্যাদা পায় পেরিয়ার। ১৯৭৯ সালে টাইগার রিজার্ভের শিরোপা। প্রায় ৮০০ বর্গ কিমি ব্যাপী এই অরণ্য হাতিদের বিচরণক্ষেত্র। দেখা মেলে চিতাবাঘ, বাইসন, বুনো মোষ, বুনো কুকুর, বুনো শুয়োর, হরিণ ইত্যাদি জীবজন্তুর। জঙ্গলে বিভিন্ন প্রজাতির স্তন্যপায়ী, প্রজাপতি, পাখি, সরীসৃপের সঙ্গে সহাবস্থান করে আছে নানান উপজাতির মানুষজনও। জঙ্গলের গভীরে রয়েছে পাথরের তৈরি বহু প্রাচীন এক মন্দির। পেরিয়ার হ্রদের বুকে লঞ্চে চেপেও করা যায় অরণ্য ভ্রমণ। থেক্কাডিতে হ্রদের ধারে কে টি ডি সি ও বনদপ্তরের অফিস। উভয়েরই বোট ক্রুইজের ব্যবস্থা আছে। বনদপ্তরের বেশ কিছু ইকো-ট্যুরিজম অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরও রয়েছে। নেচার ওয়াক, ব্যাম্বু র্যাফটিং, টাইগার ট্রেইল, ট্রাইবাল হেরিটেজ, ভিলেজ ট্যুর ইত্যাদি। সারা বছরই পেরিয়ার অরণ্য খোলা থাকে। হাতির পিঠে চড়েও ঘোরা যায় পেরিয়ারে।
যাওয়া – নিকটতম রেলস্টেশন এর্নাকুলাম জংশন( ERS ) ও এর্নাকুলাম টাউন( ERN ) । চেন্নাই থেকে এর্নাকুলাম যাওয়ার ট্রেন আছে। এর্নাকুলাম থেকে মুন্নার ১৩০ কিমি।মুন্নার থেকে পেরিয়ার অরণ্যের কাছের শহর কুমিলি ১০৫ কিমি।যাতায়াতের জন্য বাস রয়েছে।
থাকা – কোচির বোলগেটি দ্বীপে কেরালা পর্যটনের হোটেল বোলগেটি প্যালেস। মুন্নারে কেরালা পর্যটনের হোটেল টি কাউন্টি। থেক্কাডিতে কেরালা পর্যটনের তিনটি হোটেল আছে – পেরিয়ার হাউস, লেক প্যালেস ও অরণ্য নিবাস। সর্বত্রই বেসরকারি হোটেল রয়েছে।
ভ্রমণ কাহিনি - || এক নিমজ্জিত অরণ্যে ||
উৎসব - সারা বছর ধরেই নানান উৎসবে মেতে ওঠেন কেরালার মানুষজন। যার মধ্যে এপ্রিলে নববর্ষের সময় ধানকাটার উৎসব ওনাম আর আগস্ট মাসের দ্বিতীয় শনিবারে আলেপ্পির পম্পা নদীতে বোট রেস বিশেষ আকর্ষণীয়। মার্চ-এপ্রিল ও অক্টোবর-নভেম্বরে ত্রিবান্দ্রামের পদ্মনাভস্বামীর মন্দিরে দশ দিন ধরে উৎসব চলে। জানুয়ারি মাসে ত্রিসুরে হয় বর্ণাঢ্য এলিফ্যান্ট মার্চ।
কেনাকাটা – মশলার দেশ কেরালা। আর তার খ্যাতি হস্তশিল্পের জন্য। মাটি, হাতির দাঁত, চন্দন কাঠ, তামা, কাঁসা, কাঠের তৈরি ঘর সাজানোর জিনিস, মূর্তি, মসলা, কাজুবাদাম, রংবেরঙের লুঙ্গি, তাঁতজাত বস্ত্র এসব রাখতে পারেন কেনাকাটার তালিকায়। সর্বত্রই পাওয়া যায় তবে ত্রিবান্দ্রম বা কোচি থেকেই কেনা ভাল।