চেন্নাই (Chennai)- বঙ্গোপসাগরের তীরে ব্যস্ত বাণিজ্যিক শহর চেন্নাই। চেন্নাই শহরেই প্রচুর দ্রষ্টব্য স্থান রয়েছে। আবার চেন্নাইকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ ভারতের বেশ কয়েকটি জায়গা বেড়িয়ে নেওয়া যায়। চেন্নাইয়ের অন্যতম আকর্ষণ বিশ্বের দ্বিতীয় দীর্ঘতম ১৩কিমি বিস্তৃত মেরিনা বিচ (Merina Beach)।
কোয়ুম নদীর তীরে ফোর্ট সেন্ট জর্জ। প্রায় চারশ বছরের প্রাচীন এই দুর্গে একটি সংগ্রহশালাও আছে। কাছেই বিধানসভা ভবন ও সচিবালয়। অন্যান্য দ্রষ্টব্যের মধ্যে রয়েছে চেন্নাই মিউজিয়াম ও সংলগ্ন আর্ট গ্যালারি। তামিলকবি থিরুভাল্লুরের স্মৃতিতে নির্মিত ভাল্লুভার কোট্টাম, স্নেক পার্ক, কপালেশ্বর মন্দির প্রভৃতি।
যাওয়াঃ- নিকটতম রেলস্টেশন চেন্নাই সেন্ট্রাল ও বিমানবন্দর চেন্নাই। তামিলনাড়ু পর্যটনের কন্ডাক্টেড ট্যুরে বা বাসে বাসে অথবা ভাড়া গাড়িতে আশপাশ বেড়িয়ে নেওয়া যায়। চেন্নাই থেকে বেড়িয়ে আসা যায় তিরুপতি (Tirupati) বা পণ্ডিচেরি (Pudicherri)ও।
থাকাঃ- চেন্নাই সেন্ট্রাল স্টেশনের বিপরীতে তামিলনাড়ু ট্যুরিজমের হোটেল আছে। আর শহর জুড়ে রয়েছে নানান মান ও দামের অজস্র হোটেল।
কেনাকাটাঃ-এখানকার কাঞ্জিভরম শাড়ি বিখ্যাত।
মামল্লাপুরম (Mamallapuram)- চেন্নাই থেকে ৭৬কি.মি. দূরে কাঞ্চিপুরম (Kanchipuram) ও ৬০কিমি দূরে মামল্লাপুরম বা মহাবলীপুরম (Mahabalipuram)। কাঞ্চিপুরমে রয়েছে বিখ্যাত বৈকুন্ঠ পেরুমল মন্দির, একম্রানাথ মন্দির, কামাক্ষীদেবী মন্দির, কৈলাসনাথ মন্দির প্রভৃতি। ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের অন্তর্ভুক্ত মামল্লাপুরম। এখানে পঞ্চরথ মন্দির, শোর টেম্পল, গুহা মন্দির প্রভৃতি দর্শনীয়।
শৈব ও বৈষ্ণবধর্মের তীর্থক্ষেত্র মামল্লাপুরম। বেলাভূমির তীরেই শোর মন্দির। একই মন্দিরে পূজিত হন মহাদেব ও বিষ্ণু। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের আলোয় রঙিন হয়ে ওঠেন মন্দিরের দেবতারা। পল্লবরাজাদের শিল্পনৈপুণ্যের সাক্ষর পঞ্চরথ মন্দির। এখানে রয়েছে অনুপম ভাস্কর্য আর শিল্পমণ্ডিত পাঁচটি মন্দির। মনে করা হয় এই মন্দিরগুলি পঞ্চপাণ্ডবের। মামল্লাপুরম থেকে ১৬কিমি দূরে পক্ষিতীর্থম।
যাওয়াঃ- চেন্নাই থেকে কাঞ্চিপুরম হয়ে বাসপথে মামল্লাপুরম। কাঞ্চিপুরম থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে মামল্লাপুরম। সময় লাগবে দেড়ঘন্টা। এছাড়া চেঙ্গালপেট হয়েও বাস বদলেও মামল্লাপুরমে আসা যায়। চেঙ্গালপেট থেকে মামল্লাপুরম ৩২ কিলোমিটার।
থাকাঃ- মামল্লাপুরমে তামিলনাড়ু রাজ্য পর্যটনের হোটেল ও বেসরকারি হোটেল আছে। মামল্লাপুরমের এস টি ডি কোডঃ- ০৪৪।
মাদুরাই (Madurai)-চোল এবং পাণ্ডিয়ান রাজাদের রাজত্বের দীর্ঘ ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন এই শহরে। প্রধান আকর্ষণ ১৬৩০ সালে নায়েক রাজাদের আমলে গড়ে ওঠা বিখ্যাত মীনাক্ষীমন্দির (Meenakshi Temple) - দ্রাবিড়ীয় শিল্পশৈলীর এক অপূর্ব নিদর্শন । পাণ্ডিয়ান রাজারা এর নির্মান শুরু করলেও তা শেষ করেন নায়করাজ বিশ্বনাথ। মন্দিরে মোট বারটি ভাস্কর্যমণ্ডিত গোপুরম বা তোরণদ্বার। একেকটির উচ্চতা ৪৫-৫০ মিটার। দক্ষিণদিকের গোপুরমটি সবচেয়ে বড় ও পূর্বদিকেরটি সবচেয়ে ছোটো। একই মন্দিরে দুই অংশে আরাধনা হয় দুই দেবতার। দেবী মীনাক্ষী এবং শিব বা সুন্দরেশ্বর। মন্দির ঘিরে রয়েছে নানা ইতিহাস ও কিংবদন্তি। মীনাক্ষী মন্দিরের কাছেই ইন্দো-সেরাসনিক এবং রাজস্থানি স্থাপত্যের সমন্বয়ের এক অনুপম নিদর্শন তিরুমালাই নায়েক প্যালেস (Thirumalai Nayak Palace)। ১৬৩৬ সালে নায়করাজ তিরুমালাই এই প্রাসাদ নির্মাণ করেন। অন্যান্য দর্শনীয়ের মধ্যে রয়েছে মারি আম্মান, গান্ধী মিউজিয়াম, আঝগর কোভিল প্রভৃতি।
যাওয়াঃ- নিকটতম রেলস্টেশন মাদুরাই। এছাড়া ত্রিচি থেকে মাদুরাইগামী বাস যাচ্ছে। ট্রেনও যাচ্ছে এপথে। বাসে ত্রিচি (Trichy/Tiruchirappalli) থেকে মাদুরাই ৩ ঘন্টা সময় লাগে। দূরত্ব ১৪০ কিলোমিটার।
থাকাঃ- মাদুরাইতে তামিলনাড়ু পর্যটনের দুটি হোটেল রয়েছে। এছাড়া প্রাইভেট হোটেল। মাদুরাইয়ের এস টি ডি কোডঃ ০৪৫২।
উটি(Ooty)-নীলগিরি পাহাড়ের বুকে শৈলশহর সবুজে ছাওয়া উটি বা উটকামণ্ড (Ootacamund)। উচ্চতা প্রায় ২,২৮০মি। নীল আকাশের নীচে পাহাড়ের গায়ে সবুজ চা বাগিচার চাদর টোডা উপজাতির বাসভূমি উটিকে মোহময়ী করে তুলেছে। সারাবছরই এখানে ঠান্ডার আমেজ থাকে।
উটির দ্রষ্টব্যের মধ্যে রয়েছে চার্চ, রোজ গার্ডেন, বটানিকাল গার্ডেন, মিউজিয়াম, ডোডাবেট্টা পিক, কেট্টি উপত্যকা আর শহরের মাঝে টলটলে জলের হ্রদ। উটি থেকে ১৯কিমি দূরে কুন্নুর(Kunnur)। কুন্নুরের খ্যাতি চা বাগানের জন্য। আর রয়েছে সিমস পার্ক, লোজ ফলস, ডলফিন নোজ ভিউ পয়েন্ট, লেডিসসিট ভিউপয়েন্ট প্রভৃতি। উটি থেকে ঘুরে আসা যায় পাইকারা ঝরনা ও হ্রদ আর মুদুমালাই অভয়ারণ্য (Mudumalai Wild Life Sanctuary)।
উটির অন্যতম আকর্ষণ টয়ট্রেনে ভ্রমণ। ব্রিটিশদের হাতে গড়া এই টয়ট্রেন এখন ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তকমা পেয়েছে।
উটিকে ঘিরে নীলগিরির উঁচু থেকে নীচুতে বন-পাহাড়ের কোলে ছড়িয়ে আছে আটটি হ্রদ। এই আটটা হ্রদ হল আপার ভবানী, পশ্চিম হ্রদ ১,২,৩, পোর্তিমুন্ড, অ্যাভেলাঞ্চ, এমেরাল্ড আর পারসন ভ্যালি। উটি থেকে আপার ভবানী ৬০ কিলোমিটার। পাহাড়ের ওপরে, চারপাশে ঘন জঙ্গল। উটি থেকে অ্যাভেলাঞ্চের দূরত্ব মোটামুটি ২০ কিলোমিটার। সরু একটা সেতু দিয়ে দুটো হ্রদ জুড়ে রয়েছে। ব্রীজ পেরিয়ে ওপারে এমেরাল্ড। উটি থেকে ঘন্টাখানেকের কিছু বেশি সময় লাগে পারসনভ্যালির ফরেস্ট চেকপোস্ট পোর্তিমুন্ডে পৌঁছাতে। জঙ্গলে ঢোকার জন্য বনবিভাগের পারমিট আবশ্যক। সেখান থেকে আরও ঘন্টা দুয়েকের দূরত্বে পোর্তিমুন্ড ভ্যালি। আরও কিছুটা এগিয়ে পারসন ভ্যালির হ্রদ।
যাওয়াঃ- নিকটতম রেলস্টেশন চেন্নাই সেন্ট্রাল ও বিমানবন্দর চেন্নাই। চেন্নাই সেন্ট্রাল থেকে ট্রেনে মেট্টুপলায়ম। সেখান থেকে টয়ট্রেনে উটি। চেন্নাই থেকে সরাসরি বাসেও উটি পৌঁছান যায়। বাস আসছে বেঙ্গালুরু, মাইসোর, কোয়েম্বাটুর, মেট্টুপলায়ম প্রভৃতি নানান শহর থেকে। শহরের মধ্যে ঘোরাঘুরির জন্য অটো পাওয়া যায়। উটি থেকে গাড়িভাড়া করে নীলগিরির বুকে ছড়িয়ে থাকা হ্রদগুলি দেখে নিতে হবে।
থাকাঃ- উটিতে তামিলনাড়ু পর্যটনের দুটি হোটেল আছে- চেরিং ক্রস রোডে ইউনিট ১ এবং বটানিকাল গার্ডেন রোডে ইউনিট ২। স্টেশন চত্ত্বর, লেক অঞ্চল ও চেরিং ক্রস এলাকায় নানা মান ও দামের অনেকগুলি প্রাইভেট হোটেল আছে।
(তথ্য সহায়তাঃ সুমিত চক্রবর্তী)
ভ্রমণ কাহিনিঃ অচেনা উটি
কোদাইকানাল (Kodaikanal)- তামিলনাড়ুর জনপ্রিয় শৈলশহর কোদাইকানাল উটি থেকে ২৭০কিমি দূরে। মেঘপিওনের দেশে পাহাড়ের খাঁজে প্রকৃতির খেয়ালে সৃষ্ট কোদাই লেক। লেকের চারপাশে সাজানো বাগান - ফুলেদের জলসাঘরে রঙিন প্রজাপতির মেলা। নীল আকাশ আর পালানি পাহাড়ের ছায়া পড়ে কোদাইলেকের বুকে। শহরে বেশকিছু পার্ক আছে। রয়েছে মানমন্দির, সোলার ফিজিক্যাল অবজারভেটরি। ঘোড়ায় চেপে যাওয়া যায় মিয়ারশোলা ও সিলভার কাসকেড ঝরনা। ২১ কিলোমিটার দূরে বেরিজাম হ্রদ (Berijam Lake)। লেকে বোটিংয়ের ব্যবস্থা আছে। কোদাইকানালের পাহাড়জুড়ে অনেকগুলি ভিউপয়েন্ট ও ঝরনা আছে।
যাওয়াঃ- কাছের রেলস্টেশন মাদুরাই। মাদুরাই স্টেশন থেকে অটোয় চেপে ৪কিমি দূরত্বে আরাপালায়াম বাসস্ট্যান্ড। সেখান থেকে প্রতি ঘন্টায় কোদাইকানাল যাওয়ার বাস ছাড়ছে। তবে সকালের দিকেই বাসে আধিক্য। আরাপালায়াম থেকে কোদাইকানাল প্রায় ১২০ কিলোমিটার। শহর ও তার আশেপাশে বেড়ানোর জন্য সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থায় সিটি ট্যুর রয়েছে ।
থাকাঃ- কোদাইকানালে রয়েছে তামিলনাড়ু পর্যটনের হোটেল ও বেসরকারি হোটেল আছে। কোদাইকানালের এস টি ডি কোডঃ ০৪৫৪২।
রামেশ্বরম(Rameswaram) - দক্ষিণ ভারতের কাশী,মান্নার উপসাগরের বুকে দ্বীপতীর্থ রামেশ্বরম। মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে পম্বন সেতু দিয়ে যুক্ত। শ্রীরামচন্দ্রের পৌরাণিক কাহিনীর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এই তীর্থভূমি। প্রধান দ্রষ্টব্য শ্রীরামনাথস্বামী শিবমন্দির। মন্দিরে রয়েছে শ্রীরামচন্দ্রের প্রতিষ্ঠিত শিবলিঙ্গ। প্রধান লিঙ্গটি ছাড়াও মন্দিরে অজস্র ছোট-বড় শিবলিঙ্গ, নন্দীমূর্তি ও পার্বতীদেবীর ছোট একটি মন্দির আছে। মন্দিরে কারুকার্যময় তিনটি গোপুরম বা প্রবেশদ্বার। একপাশে ১৯৭ মিটার দীর্ঘ একটি অলিন্দ আছে যা এশিয়ার মধ্যে বৃহত্তম। অলিন্দের দুপাশে ভাস্কর্যময় স্তম্ভ ও ওপরে রঙিন ছবিতে সাজানো সিলিং। মন্দিরের মধ্যে বাইশটি পবিত্র জলকুণ্ড আছে।
মন্দির থেকে কিছুটা এগিয়ে পবিত্র সৈকত অগ্নিতীর্থম। ১৪ কিলোমিটার দূরে ধনুষ্কোডি। যাওয়ার পথে পড়বে শ্রীরামচন্দ্রের সেতুবন্ধনের স্থান ও শ্রীকোঠান্দারামার বিভীষণ মন্দির।
অন্যান্য দ্রষ্টব্যের মধ্যে রয়েছে রামঝরোখা মন্দির, রামতীর্থম ও লক্ষ্মণতীর্থম মন্দির ইত্যাদি।
যাওয়াঃ- নিকটতম রেলস্টেশন মাদুরাই। মাদুরাই থেকে রামেশ্বরমের দূরত্ব ১৭০ কিলোমিটার। নিয়মিত বাস যাচ্ছে।
থাকাঃ- রাজ্য পর্যটনের হোটেল তামিলনাড়ু। এছাড়া বেসরকারি হোটেল। রামেশ্বরমের এস টি ডি কোডঃ ০৪৫৭৩।
ভালপারাই -শোলায়ার লেক (Valparai - Sholayar Lake) - এশিয়ার দ্বিতীয় গভীরতম ড্যাম। তামিলনাড়ুতে অবস্থিত এই হ্রদটি ভালপারাই থেকে ২০ কিমি দূরে। আগে কোয়েম্বাটোর যেতে হবে। তারপর বাস অথবা ট্যাক্সিতে পোল্লাচি। পোল্লাচি থেকে সকালে বেরিয়ে শোলায়ার লেক ঘুরে আসা যায় আর ভালপারাই-তে থাকলে শোলায়ার লেক হয়ে আথিরাপল্লি ফল্স অবধি যাওয়া যায়। ভালপারাই থেকে শোলায়ার ২০ কিমি, আর শোলায়ার থেকে আথিরাপল্লি ৫৬ কিমি, পুরো রাস্তাটাই ঘাট রোড আর হাল বেশ খারাপ-ই। পুরোটাই জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে। দোকানপাট কিছুই নেই। সঙ্গে জল আর খাবার রাখতে হবে। রাস্তায় নাম না জানা অন্তত ২০-৩০টা জংলি নদী পাবেন। অসাধারণ এক যাত্রা! চারদিকে সবুজ গালিচার ওপরে সাদা কুয়াশার চাদর।
পোল্লাচিতে থাকার অনেক হোটেল আছে - সেরা হোটেল ‘নিভেথা’। পোল্লাচি থেকে ভালপারাই ট্যাক্সিতে যাওয়াই ভালো, বাসের সার্ভিস খুব একটা ঘনঘন নয়। ভালপারাইতে ভালো কোন হোটেল নেই। কিন্তু বাড়িতে থাকার বা হোম স্টে-র ব্যবস্থা আছে। তবে খাওয়াদাওয়া দক্ষিণ ভারতীয় এবং নিরামিষ। হোম স্টে-র খরচা দৈনিক ১৫০০-২৫০০ টাকা। তবে অনেক বড় ঘর – চার-পাঁচ জন আরামে থাকা যায়। পোন্নি হোমস্টেতে ২৪ ঘন্টা জল, সংলগ্ন বাথরুম সবই আছে। বিদ্যুতের ভীষণ সমস্যা। সঙ্গে মোমবাতি রাখতেই হবে আর মশা তাড়ানোর ক্রীম, ধূপ ইত্যাদি-ও।
জরুরিঃ ভালপারাই ছাড়ার পর পুরো ৭০-৭৫ কিমি রাস্তা কিন্তু “হাই প্লাস্টিক ফ্রি জোন”। একটু অসাবধান হলেই সঙ্গে সঙ্গে ১০০০ টাকা জরিমানা। কেরল সরকার ও তামিলনাড়ু সরকার উভয়েই এব্যাপারে ভীষণ কঠোর। আথিরাপল্লি পৌঁছানোর আগে রাস্তার ওপরেই ভরাচল আর চাপড়া দুটো ঝরনা পড়ে। গাড়ির চালকরা কিন্তু কিচ্ছু চেনেন না, স্থানীয় লোকদের জিজ্ঞেস করে যেতে হবে। (তথ্য – সুমিতচক্রবর্তী)
কন্যাকুমারী (Kanyakumari)- ভারতবর্ষের ম্যাপের একেবারে শেষবিন্দুতে তিনসাগরের মিলনক্ষেত্রে স্বামী বিবেকানন্দের স্মৃতিমাখা এই শহর। সমুদ্রের তীরে দেবী কুমারী আম্মান মন্দির। আজও পার্বতী এখানে কুমারীরূপে শিবের প্রতীক্ষারত। কাছেই লঞ্চঘাট। বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়ালে যাওয়ার জন্য লঞ্চ ছাড়ছে। সাগরের মাঝে পাথুরে টিলার ওপর অজন্তা ও ইলোরার গুহামন্দিরের আদলে তৈরি রক টেম্পলটি। ব্রোঞ্জের অবয়বে দাঁড়িয়ে স্বামী বিবেকানন্দ। ওদিকে আরও এক বিশাল পাথরখণ্ডের ওপর ১৩৩ ফুটের মূর্তি-তামিল কবি তিরুভাল্লুভারের। কুমারী মন্দিরের কাছে গান্ধী মেমোরিয়াল। গান্ধীজির চিতাভস্ম এখানে রাখা হয়েছিল।
কন্যাকুমারী থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে ১৮ শতকে গড়া পোর্তুগিজদের দুর্গ ভেট্টাকোট্টা দেখে নেওয়া যায়। ১৩ কিলোমিটার দূরে সুচিন্দ্রম মন্দিরে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বরের অধিষ্ঠান। বৈষ্ণব ও শৈব ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র তীর্থস্থান। ১৯ কিলোমিটার দূরে নাগেরকয়েলে সর্পদেবতার মন্দির। শহর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে পদ্মনাভপুরমে রয়েছে ত্রিবাঙ্কুর রাজাদের রাজপ্রাসাদ। ১৭ ও ১৮ শতকের প্রাচীন কারুশিল্প ও চিত্রসম্ভার দর্শনীয়।
যাওয়াঃ- নিকটতম রেলস্টেশন রামেশ্বরম। সেখান থেকে নাইট সার্ভিসের বাসে কন্যাকুমারী যাওয়া যায়। মোটামুটি ঘন্টা ছয়-সাতের সফর। মাদুরাই থেকে কন্যাকুমারী প্রায় ২৪০ কিলোমিটার।
থাকাঃ- তামিলনাড়ু পর্যটনের হোটেল আছে। আর বেসরকারি হোটেল। কন্যাকুমারীর এস টি ডি কোডঃ ০৪৬৫২।
ভ্রমণ কাহিনিঃ তিন সমুদ্রের মিলন স্থল - কন্যাকুমারী
কোস্টাল ট্রেকিং (Coastal Trekking)- পয়েন্ট ক্যালিমার থেকে কুড্ডালুরু। এই দু’শো দশ কিলোমিটার পথ, সমুদ্রের পাড় ধরে চলা। তামিলনাড়ুর নাগাপট্টিনম ডিস্ট্রিক্টের একেবারে শেষ মাথায় দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে পয়েন্ট ক্যালিমার। তামিল ভাষায় বলে কোডিয়াকড়াই। চেন্নাই থেকে মাদুরাই। মাদুরাই থেকে বাসে গুরুভায়ুর হয়ে ভেদারনিয়ান। এখান থেকে মাত্র বারো কিলোমিটার দূরে পয়েন্ট ক্যালিমার।
পয়েন্ট ক্যালিমারের বার্ড স্যাংচুয়ারির খুব নাম। এখানে বন দপ্তরের একটা বাংলো আছে।
পুরো ট্রেকে রাত্রিবাস করতে হবে পথের গ্রামগুলিতে। সম্ভাব্য কয়েকটি জায়গা পুষ্পভরম বা মল্লারপুরম, কামেশ্বরপুরম, নাগাপট্টিনম, তরঙ্গমবাড়ি, থিরুমুলাইভাসাল, এম. জি. আর. থেট্টি। পথে পড়বে বিখ্যাত ভেলাংগিনি চার্চ।
কুড্ডালুরু থেকে চেন্নাই হয়ে ফেরা।
জরুরি-কোস্টাল ট্রেকের সময় সঙ্গে নিজের বৈধ পরিচয় পত্র (ভোটার আই ডি, পাসপোর্ট ইত্যাদি) এবং স্থানীয় কমিশনারের স্বাক্ষরিত অনুমতিপত্র রাখতে হবে।
ট্রেকিং রুট –
১ম দিনঃ কোডিকড়াই(পয়েন্ট ক্যালিমার) – ভেদারানিয়াম নদী –মল্লারপুরম/পুষ্পভরম
২য় দিনঃ মল্লারপুরম/পুষ্পভরম – নদী – ভিল্লাপালেম – নদী - কামেশ্বরপুরম
৩য় দিনঃ কামেশ্বরপুরম – সেরুদুর – নদী – ভেলাংগিনি – কাল্লার – নদী - নাগাপট্টিনম
৪র্থ দিনঃ নাগাপট্টিনম – নাগোর – নদী – কড়াইকল – তরঙ্গমবাড়ি
৫ম দিনঃ তরঙ্গমবাড়ি – পুডুপেট্টাই – নদী - কাবেরী নদী – পুম্পুহার – নদী - থিরুমুলাইভাসাল
৬ষ্ঠ দিনঃ থিরুমুলাইভাসাল – থুডুয়াই – পাসিয়ার – নদী – পেলুমেড্রাই – নদী –এম. জি. আর. থেট্টি
৭ম দিনঃ এম. জি. আর. থেট্টি – মুদাশালোদাই – নদী – পুডুকুপাস –ভেল্লাঙ্গাবিয়াসপেট্টাই – সিলাভাইপেট্টাই – আহিপেট্টাই – পাটোরা – পেরিপাম – নদী - কুড্ডালুরু