গ্যাংটক(Gangtok) - সিকিমের রাজধানী ৫,৫০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত গ্যাংটক। জমজমাট শহরের প্রাণকেন্দ্রে এম. জি. মার্গকে ঘিরে দোকানপাট -বাজারহাট। গ্যাংটক শহর ও তার আশেপাশের দ্রষ্টব্যগুলি গাড়ি ভাড়া করে দেখে নেওয়া যায়। তবে শুধুমাত্র গ্যাংটকেই এতকিছু দেখার আছে যে একদিনে ঘুরে দেখা সম্ভব নয়।
গ্যাংটক থেকে ২৪ কি.মি. দূরে ১,৫৫০ মিটার উচ্চতায় সিকিমের ধর্ম ও সংস্কৃতির পীঠস্থান ঐতিহ্যময় রুমটেক মনাস্ট্রি (Rumtek Monastery)। চতুর্থ চোগিয়ালের তৈরি মূল মনাস্ট্রিটি ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর ১৯৬০ সালে এই মনাস্ট্রি তৈরি করা হয়। নতুন মনাস্ট্রিটি রুমটেক ধর্মচক্র সেন্টার নামে পরিচিত। পাহাড়ের ঢালে একের পর এক গুম্ফা। সবুজের পটভূমিকায় ঝকঝক করছে সোনায় মোড়া চূড়া। স্বর্ণচক্র, স্বর্ণহরিণ, সোনার বুদ্ধ আর মনিমুক্তোখচিত সোনার স্তূপ গুম্ফাকে ঝলমলে রূপ দিয়েছে। পাশাপাশি আলো-আধাঁরিতে ঢাকা শান্ত প্রার্থনা ঘর। দেওয়ালের ম্যুরাল আর জাফরির কাজ ছড়িয়ে দিয়েছে স্নিগ্ধ পবিত্রতার রেশ। এটিই এখন ধর্মচক্র সম্প্রদায়ের মূল দপ্তর। বছরভর উৎসব লেগে থাকে এই বিশাল মনাস্ট্রিতে। এরমধ্যে লামাদের মুখোশ নৃত্য বিশেষ আকর্ষণীয়। নতুন মনাস্ট্রির দেড় কিলোমিটার দূরে লোয়ার রুমটেকে রয়েছে আদি মনাস্ট্রিটি।
রুমটেকের পথে গ্যাংটক ছাড়িয়ে ১৪কিমি দূরে বনদপ্তরের অর্কিডোরিয়াম। বিভিন্ন প্রজাতির অর্কিড সহ নানান ট্রপিকাল গাছগাছালির দেখা মিলবে এখানে। পৌঁছোনোর দেড় কিমি আগে পাহাড়ি ফুল আর অর্কিডের রাজ্য জহরলাল নেহরু বোটানিক্যাল গার্ডেন। এখানে রয়েছে জানা-অজানা নানা পাহাড়ি গাছপালা। রুমটেকের ৪কিমি আগে এলাচ বাগানে ভেতর দিয়ে পথ গিয়েছে রে খোলা ওয়াটার গার্ডেনে। রুমটেকের পথেই পড়ে রাংকা গুম্ফা আর তিনতালে। তিনতালে থেকে সন্ধ্যার আলোঝলমল গ্যাংটক অপরূপ লাগে।
শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে তিন কিমি দূরে এনচে মনাস্ট্রি (Enchey Monastery)। ‘এনচে’ শব্দের অর্থ নির্জন। চিনা প্যাগোডার অনুকরণে তৈরি মনাস্ট্রিটিতে বুদ্ধ, পদ্মসম্ভব ও অন্য বৌদ্ধ ধর্মগুরুদের মূর্তি রয়েছে। এনচে মনাস্ট্রি মূলত নাইয়াং বৌদ্ধদের। প্রাচীন গুরুতান্ত্রিক লামা দ্রুপতাব কারপো প্রায় দুশো বছর আগে স্থানটি নির্বাচন করেন। মনাস্ট্রিটি গড়ে ওঠে তারও ১০০বছর পরে। প্রতিবছর জানুয়ারি মাসে মুখোশ উৎসব ‘ছাম’ নৃত্যে মেতে ওঠেন মনাস্ট্রির লামারা। এনচে মনাস্ট্রি ছাড়িয়ে আরও আট কিমি উত্তরে তাশি ভিউ পয়েন্ট (Tashi View Point)। এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা আর মাউন্ট সিনিয়লচুর শোভা অসাধারণ।
নিউ সেক্রেটারিয়েটের ঠিক পাশেই পাহাড়ের ঢালে মৃগ উদ্যান। সারনাথের মৃগ উদ্যানের বুদ্ধমূর্তির আদলে রয়েছে বিশালকায় বুদ্ধমূর্তি। চোগিয়াল রাজাদের দেওয়ান রুস্তমজির নামে পার্কটির নামকরণ করা হয়েছে। খোলা বাগানে ঘুরে বেড়ায় হরিণেরা। ফুলে ছাওয়া মৃগ উদ্যান থেকে চারপাশের বরফশৃঙ্গ দেখতে ভারি ভালোলাগে। মৃগ উদ্যানের কাছেই চোগিয়াল রাজাদের প্রাসাদ। প্রাসাদ চত্বরেই রয়েছে তুসুক লা কং মনাস্ট্রি। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে তিব্বতি নববর্ষ ‘পাং লাবসল’। উৎসবের সময় জনসাধারণের জন্য মনাস্ট্রির দরজা খোলা থাকে । এইসময় দেখা যায় লামাদের ‘ছাম’ নৃত্যও।
প্রয়াত পুত্র পালজং নামগিয়ালের স্মৃতিতে রাজা তাশি নামগিয়াল গড়ে তোলেন নামগিয়াল ইনস্টিটিউট অব টিবেটোলজি (Namgyal Institute of Tibetology) - গ্যাংটক শহর থেকে ৩ কিমি দূরে তিব্বতি বই আর তিব্বতীয় সংস্কৃতির নানান স্মারক নিয়ে একটি অসাধারণ সংগ্রহশালা। তিব্বতীয় পুস্তক ও পুঁথির ভাণ্ডারের ক্ষেত্রে এটি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম।
ইনস্টিটিউট অব টিবেটোলজি থেকে হাঁটা পথে চড়াই ভেঙে একটু এগোলে সোনালি চূড়োর শ্বেতশুভ্র দো দ্রুল চোর্তেন (Do Drul Chorten) । প্রার্থনার ঘরে রয়েছে লামাতন্ত্রের প্রবর্তক পদ্মসম্ভবের বিশালকায় মূর্তি। চোর্তেন ঘিরে ১০৮টি প্রার্থনা চক্র।
শহর থেকে ৭কিমি দূরে টিলার মাথায় ভিউ পয়েন্ট গণেশ টক। এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা আর গ্যাংটক শহর অপরূপ দেখায়। লাগোয়া গণেশমন্দির। গণেশ টকের বিপরীতে ২০৫ হেক্টর এলাকা জুড়ে হিমালয়ান জুলজিকাল পার্ক। ১১কিমি দূরে আরেক ভিউ পয়েন্ট হনুমান টক। গ্যাংটক থেকে ১৫কিমি দূরে রংবেরঙের ফুল,অর্কিড ও দুষ্প্রাপ্য ওষধি গাছে সাজানো সারামসা গার্ডেন। ভারতের একমাত্র প্রজাপতি পার্ক রয়েছে গ্যাংটকেই। গ্যাংটক থেকে বেড়িয়ে নেওয়া যায় ২০ কিমি দূরে ৭০০০ ফুট উচ্চতার ফামবাংলো ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারি। পাহাড়ি ফুল আর দুষ্প্রাপ্য অর্কিডে ছাওয়া এই অরণ্যে ভালুক, রেড পান্ডা, বার্কিং ডিয়ারের পাশাপাশি দেখা মেলে নানান প্রজাতির পাখি আর প্রজাপতির।
ছাঙ্গু-নাথুলা(Changu/Tsongmo –Nathu La)- চিন সীমান্তে নাথুলাগামী পথে গ্যাংটক থেকে ৩৫ কিমি দূরে বরফে মোড়া পাহাড়ের বুকে ৫০ফুট গভীর টলটলে জলের হ্রদ ছাঙ্গু। স্থানীয় নাম সোমগো (TSOMGO)। ভুটিয়া ভাষায় ‘TSO’ অর্থ লেক, ‘MGO’ হচ্ছে হেড। প্রায় ১২ হাজার ফুট উচ্চতায় পাহাড়ের কোলে এই ছাঙ্গু লেকই লুংজে চু-র উৎস। পাহাড় ভেঙে লুংজে চু মিশেছে রাংপো চু তে। শীতকালে ছাঙ্গুর জলে বরফ জমে যায়। এই লেকটি পরিযায়ী পাখি আর ব্রাক্ষ্মণী হাঁসেদের বাসস্থান। বসন্তে হ্রদের চারপাশ রঙিন হয়ে ওঠে রডোডেনড্রন, প্রিমুলা আর নীল-হলুদ পপি ফুলে। স্থানীয় বৌদ্ধ ও হিন্দুদের কাছে পবিত্র হ্রদ। লেকের কাছেই ছাঙ্গু বাবার মন্দির আর দুস্প্রাপ্য প্রিমুলা অর্কিড উদ্যান। লেকের পাড়ে গরম পোশাক, ইয়াকের দুধের চিজ, কিউরিও- নানা পশরা নিয়ে বসেছে স্থানীয় দোকানি। লেকের পাড়ে দেখা মিলবে চমরি গাইয়ের। এখানে ট্রেকিং-ও করা যায়।
ছাঙ্গু পেড়িয়ে শেরথাংয়ে এসে নাথুলার পথ ছেড়ে ডানদিকে কুপুপ উপত্যকায় বাবা হরভজন সিং মন্দির। ১৯৬২ সালে চিন-ভারত যুদ্ধে সেনা নায়ক হরভজন সিং শহিদ হন। ১৯৯৭ সালে গুরুদ্বারটি তৈরি হয়। সবুজ পাহাড়ের কোলে হলুদ রঙের মন্দিরটি দূর থেকে দেখতে খুব সুন্দর লাগে। মঙ্গল ও রবিবারে মেলে বাবার অন্নপ্রসাদ। কাছেই আরেকটি স্পট টুকলা। এখান থেকে অসাধারণ লাগে তুষারে ঢাকা হিমালয়।
সীমান্ত কাছে হওয়ায় ছাঙ্গু-নাথুলা যেতে ইনারলাইন পারমিট লাগে। ছাঙ্গু যেকোন দিন যাওয়া গেলেও, তিব্বত সীমান্তে নাথুলা যাওয়ার পারমিট মেলে সোম ও মঙ্গল বাদে সপ্তাহে পাঁচদিন। ছাঙ্গু থেকে নাথুলা-র দূরত্ব প্রায় ২০কিমি। ১৪ হাজার ফুট উচ্চতায় নাথুলা সীমান্তে রয়েছে ভারত-চিন যুদ্ধে নিহত ভারতীয় সেনার শহিদ স্মারক।
ছাঙ্গু যাওয়ার পথে গ্যাংটক শহর থেকে ৭কিমি দূরে বনজকরি ঝরনাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে সিকিমের আরেক পর্যটন স্পট। বনজকরি থেকে ৮কিমি দূরে পাহাড়ি অরণ্যের বুকে পাল জুরমাং কাগয়ু মনাস্ট্রি।
ছাঙ্গু থেকে জালুক-রংলি-ফটক পেরিয়ে পৌঁছে যাওয়া যায় আরিতার লেক। সাড়ে পাঁচঘন্টার যাত্রায় পড়বে কুপুপ লেক। গ্যাংটক থেকে রংপো হয়েও পৌঁছানো যায় আরিতার লেকে। এ পথের দূরত্ব ৬৮কিমি। লেকের পাড়ে বৌদ্ধমন্দির। হেলিপ্যাড ভিউ পয়েন্ট, লাভার্স পয়েন্ট আর মানখিম টেম্পল ভিউ পয়েন্ট থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা, নাথুলা আর জেলেপ লা-র প্যানোরামিক ভিউ অসাধারণ। পায়ে পায়ে ঘুরে নেওয়া যায় তিনশো বছরের প্রাচীন রেনক মনাস্ট্রি।
যাওয়াঃ- নিকটতম রেলস্টেশন নিউ জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি জংশন। বিমানবন্দর বাগডোগরা। বাগডোগরা থেকে গ্যাংটক হেলিকপ্টার সার্ভিস আছে। এই সুবিধা নিতে গেলে সিকিমস ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে শেয়ার জিপ বা ভাড়া গাড়িতে ৪-৫ ঘন্টায় ১১৪কিমি দূরে গ্যাংটক। শিলিগুড়ির তেনজিং নোরগে বাসস্ট্যান্ড থেকে এন.বি.এস.টি.সি. বা এস.এন.টি. বাস যাচ্ছে গ্যাংটক। এছাড়া মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের বাসও গ্যাংটক যাচ্ছে। গ্যাংটক থেকে গাড়ি ভাড়া করে ছাঙ্গু-নাথুলা ঘুরে নেওয়া যাবে। শিলিগুড়ি থেকে ঘন্টাতিনেকের সড়কযাত্রায় আরিতার পৌঁছে যাওয়া যায়।
থাকাঃ- বাসস্ট্যান্ড থেকে ৩কিমি দূরে সিকিম ট্যুরিজমের সিনিয়িওলচু লজ। এছাড়া সিকিম গভর্নমেন্টের গেস্ট হাউস ও সার্কিট হাউস আছে গ্যাংটকে। আর গ্যাংটক জুড়েই রয়েছে নানান মান ও দামের অজস্র হোটেল।
কেনাকাটাঃ- সিকিমের হস্তশিল্প সংগ্রহে রাখার মত। ফারের টুপি, থাঙ্কা, কার্পেট, চা প্রভৃতি কেনার তালিকায় রাখা যায়। গ্যাংটকের ইনস্টিটিউট অব কটেজ ইন্ড্রাস্ট্রি বা নিউ মার্কেট, এম.জি. রোড চত্ত্বরের দোকানপাট থেকে কেনাকাটা করা যায়।
|| ভ্রমণ কাহিনি - বার্সের চিঠি ||
ইয়ুমথাং-গুরুদোংমার (Yumthang-Gurudongmar)- ১১,৮০০ফুট উচ্চতায় রডোডেনড্রন আর প্রিমুলার দেশ ইয়ুমথাং। গ্যাংটক থেকে দূরত্ব ১৪০কিমি। গ্রীষ্মকালে ফুলে ফুলে রঙিন হয়ে থাকে ইয়ুমথাং। ইয়ুমথাং-কে ঘিরে রয়েছে বরফাবৃত হিমালয়ের শিখররাজি। ইয়ুমথাং থেকে আরও ২৩কিমি দূরে বরফের দেশ ইয়ুমেসামডং।
ইয়ুমথাং থেকে দু দিনের দূরত্বে গুরুদোংমার হ্রদ। ১৭,৮০০ ফুট উচ্চতায় এই সরোবর বৌদ্ধ ও হিন্দুদের কাছে খুবই পবিত্র স্থান। কোথাও জলের রং নীল, কোথাও বা হাল্কা সবুজ। চারপাশে বরফে মোড়া পাহাড়। হ্রদের জলে ভিড় জমায় পরিযায়ী পাখির দল।
যাওয়াঃ- গ্যাংটক থেকে ফোদং, মংগন পেরিয়ে সিংঘিক। সিংঘিক থেকে চুংথাং পেরিয়ে লাচুং-এ রাত্রিবাস। লাচুং থেকে ২৪কিমি দূরে ইয়ুমথাং। ইয়ুমথাং থেকে গুরুদোংমার যেতে আবার লাচুং-এ ফিরতে হবে। লাচুং থেকে চুংথাং হয়ে লাচেন গ্রামে রাত্রিবাস। লাচেন থেকে থাঙ্গু হয়ে গুরুদোংমার। থাঙ্গু থেকে চোপতা ভ্যালিও ঘুরে আসা যায়। গ্যাংটক থেকে সরাসরি লাচেন-এ এসে রাত কাটিয়েও পরদিন গুরুদোংমার পৌঁছানো যায়।
লাচুং থেকে লাচুং নদীর ব্রিজ পেরিয়ে ১৩,০০০ফুট উচ্চতায় তুষাররাজ্য কাটাও পৌঁছানো যায়।
থাকাঃ- লাচুং-এ বেশকিছু বেসরকারি হোটেল আছে। লা-চেন্-এও বেসরকারি হোটেল আছে, তবে সংখ্যাটা কম। আছে খাবারের ব্যবস্থা। খুব উচ্চমানের খাবার না হলেও খাওয়া যাবে। হোটেলে জল ও গীজার ব্যবস্থাটি আবশ্যই আগেভাগে পরীক্ষা না করলে সমস্যায় পড়তে হতে পারে। থাকবার জন্য সরকারি বাংলোও আছে।
গ্যাংটক থেকে গাড়ি ভাড়া করবার সময় স্থানীয় ড্রাইভারের সঙ্গে দরদাম করে থাকা, খাওয়া ও ঘোরার কমপ্লিট প্যাকেজও করা যেতে পারে। গাড়ির আয়তন ও খাবারের মান অনুযায়ী টাকার অঙ্কটা ঠিক হয়।
ভ্রমণ কাহিনি - পবিত্র হ্রদের তীরে || রূপকথার দেশ লাচুং
বার্সে-উত্তরে (Versey - Uttarey) - ১০,০০০ ফুট উচ্চতায় সিঙ্গলিলা অভয়ারণ্যের কোলে ট্যুরিস্ট স্পট বার্সে । মার্চ-এপ্রিলে রডোডেনড্রনে ভরে থাকে। হিমালয়ান ফেজেন্ট, ব্লু এবং ব্ল্যাক ম্যাগপাই প্রভৃতি নানা ধরনের পাখির দেখা মিলবে এখানে। বার্সে থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্য অপরূপ। বার্সে থেকে জোরথাং হয়ে যাওয়া যায় রিনচেনপং। ৫,৫০০ফুট উচ্চতায় অবস্থিত রিনচেনপং থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা, কুম্ভকর্ণ, রাবোং, কোকতাং প্রভৃতি শৃঙ্গগুলি অনবদ্য লাগে। রিনচেনপং-এর কাছেপিঠে দ্রষ্টব্য গুলি হল- হেরিটেজ হাউস, রিনচেনপং মনাস্ট্রি, পয়জন লেক, রবীন্দ্র স্মৃতিভবন, রিসাম মনাস্ট্রি, ইত্যাদি। ১৮কিমি দূরে আর এক ট্যুরিস্ট স্পট হিমালয়ের বুকে ছোট্ট দুই প্রতিবেশী গ্রাম হি আর বারমিয়োক। হি-বারমিয়োক থেকে সিংশোর ব্রিজ পেরিয়ে নির্জনতার কোলে পাহাড়ি গ্রাম উত্তরে (Uttarey)। এছাড়া, এশিয়ার দ্বিতীয় উচ্চতম গর্জ ব্রিজ সিংশোর আর তার কাছের সাজানো ডেনটাম গ্রাম (Dentam) অবশ্য দ্রষ্টব্য। অন্যপথে পেলিং।
যাওয়াঃ- নিকটতম রেলস্টেশন নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ভাড়া গাড়িতে জোরথাং হয়ে হিলে। হিলের ৯কিমি আগে ওখরে-তে রাত্রিবাস। হিলে থেকে বার্সে ৪কিমি হাঁটাপথ। এন.জে.পি. থেকে সরাসরিও রিনচেনপং চলে আসা যায়। দূরত্ব প্রায় ১২৫কিমি। তারপর রিনচেনপং থেকে হি-বারমিয়োক , উত্তরে অথবা পেলিং।
থাকাঃ- বার্সে, রিনচেনপং, ওখরে, উত্তরে সর্বত্রই বেসরকারি হোটেলে থাকতে হবে। বার্সের কাছে হিলেতেও থাকা যায়।
|| ভ্রমণ কাহিনি - বার্সের চিঠি ||
পেলিং (Pelling)- পশ্চিম সিকিমের অন্যতম পর্যটক প্রিয় স্থান পেলিং। উচ্চতা ৬,৮০০ ফুট। শহর থেকে একটু দূরে সিকিমের অন্যতম প্রাচীন মনাস্ট্রি পেমিয়াংশি। পেলিং-এর হেলিপ্যাড থেকে ৪কিমি দূরত্বে ৯,০০০ ফুট উচ্চতায় সাঙ্গোচোলিং মনাস্ট্রি (Sankacholling Monastery)। পেলিং-এ এসে ঘুরে নিতে হবে ৩০০ বছরের প্রাচীন গুহা পেমিয়াংশি (Pemayangtse Monastery), ৩০কিমি দূরে পবিত্র লেক খেচিপেরি (Khechipedi Lake), কাঞ্চনজঙ্ঘা ফলস, রিম্বি ও ছাঙ্গো ফলস। ভাঙ্গা রাজপ্রাসাদকে বুকে করে আজও বেঁচে আছে সিকিমের রাজধানী রাবডান্টসে। পেমিয়াংসি গুম্ফার কাছে সিকিমের প্রথম রাজধানী ইয়াকসাম ট্রেকারদের আকর্ষণ স্থল। এখানে রয়েছে কাথক লেক ও দুবাদি গুম্ফা। এখানকার নরবুগাং-চোর্তেনে পাথরের সিংহাসনটি সিকিমের চোগিয়ালের সাক্ষ্য বহন করছে।
যাওয়াঃ- নিকটতম রেলস্টেশন নিউ জলপাইগুড়ি থেকে গাড়ি ভাড়া করে পেলিং পৌঁছান যায়। দূরত্ব প্রায় ১৩৫কিমি। রাবংলা থেকে পেলিং প্রায় ৬০কিমি।
থাকাঃ- পেলিং-এ বেসরকারি হোটেলে থাকতে হবে।
রাবংলা-বোরং(Ravangla-Borong)- দক্ষিণ সিকিমের টেনডং আর মৈনাম পাহাড়ের মাঝে ৬,৮০০ ফুট উচ্চতায় রাবংলার অবস্থান। নরসিং, পান্ডিম, সিম্ভো প্রভৃতি শৃঙ্গ দর্শনের আদর্শ জায়গা রাবংলা। গাড়ি ভাড়া করে একদিনেই দেখে নেওয়া যায় রালং গুম্ফা, নামচির পথে টেমি টি-গার্ডেন, টিবেটান রিফিউজি হ্যান্ডিক্র্যাফটস সেন্টার প্রভৃতি। রাবংলা থেকে ১৭কিমি দূরে রঙবেরঙের পাখির রাজ্য বোরং। বেশ খানিকটা উতরাইপথ পায়ে হেঁটে দেখে আসা যায় রঙ্গিত নদীর ধারের উষ্ণপ্রস্রবণটি। রাবংলা থেকে ঘুরে আসা যায় ২৬কিমি দূরের নামচি। জমজমাট নামচি শহর থেকে ৮কিমি দূরে ৭০০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত সামদ্রুপচেতে রয়েছে ১৩৫ ফুট উঁচু গুরু পদ্মসম্ভবের বিশালকায় একটি মূর্তি। রাবংলা থেকে ঘন্টা আড়াইয়ের দূরত্বে শান্ত নির্জন কালুক। রিনচেনপং থেকে ৩ কিমি দূরে। রাবংলা থেকে দেড় কিলোমিটার ট্রেকপথে পৌঁছান যায় ভালেদুঙ্গা পাহাড়। আরেক ট্রেকিংরুট রাবংলা থেকে মৈনাম ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারির অরণ্যপথে ১০,৫৬০ফুট উচ্চতায় মৈনাম শৃঙ্গ। রাবংলা বা নামচি থেকে ডামথাং হয়ে ট্রেকপথে ৮,৭৬২ ফুট উচ্চতায় টেনডং হিলটপও পাড়ি দেওয়া যায়।
যাওয়াঃ- নিকটতম রেলস্টেশন নিউ জলপাইগুড়ি থেকে গাড়ি ভাড়া করে বা শেয়ার জিপে রাবংলা ও বোরং পৌঁছান যায়। দূরত্ব প্রায় ১২০কিমি।
থাকাঃ- রাবংলা ও বোরং-এ বেশ কয়েকটি বেসরকারি হোটেল রয়েছে।
উৎসবঃ- বছরে বিভিন্ন সময়ে সিকিমের বিভিন্ন জায়গায় নানান উৎসব পালিত হয়। এরমধ্যে দশেরা বা দশাইন উৎসব, অক্টোবরে সিকিম ফেস্টিভ্যাল, ডিসেম্বরে তিস্তা টি ফেস্টিভ্যাল, মার্চ-মে মাসে গ্যাংটকে পুষ্পোৎসব, মে মাসে হি-বারমিয়োক উৎসব, ফেব্রুয়ারিতে রুমটেক মনাস্ট্রিতে ছামনৃত্য, ডিসেম্বরে এনচে মনাস্ট্রিতে কাগিয়াদ নৃত্য বিশেষ উল্লেখযোগ্য।