১৩শ বর্ষ ১ম সংখ্যা
বৈশাখ-শ্রাবণ ১৪৩০
বাঙালির চিরচেনা 'দিপুদা' অর্থাৎ দিঘা-পুরী-দার্জিলিং-এর ভ্রমণকাহিনি সংকলন নিয়ে তিনটে বইয়ের সম্পাদনা করছিলাম এক প্রকাশকের আমন্ত্রণে - এবছরের কলকাতা বইমেলাতে বের করার জন্য। কাজটা করতে করতেই আমাদের ছড়িয়েছিটিয়ে যাওয়া যৌথ পরিবারের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল এবারের বাৎসরিক পিকনিকটা হবে দার্জিলিং-এ। সকলের সুবিধেমতো দিনক্ষণ ঠিক করতে করতে শেষ অবধি মে মাসের ঘোর গরমে দিন তিনেকের জন্য দার্জিলিং পৌঁছেও গেলাম। দার্জিলিং-এও বেজায় গরম তখন। সমতলের লোকজনের গরমের ছুটির ম্যাল-অভিমুখী ভিড় মনে করায় ইদানীন্তন বড়দিনের কলকাতার পার্ক স্ট্রিটকে আর তার সঙ্গে যোগ হয়েছে হিলকার্ট রোডে বিশাল ট্রাফিক জ্যাম। তবে এসব সত্ত্বেও দার্জিলিং-এর আকর্ষণ বিন্দুমাত্র কমেনি। মেঘমালার মধ্যে দিয়ে টাইগার হিলে একঝলক সূর্যোদয়ের কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা, ম্যাল রোড-এর একদিক থেকে চক্কর দিয়ে রাজভবন আর ভিউপয়েন্টের নিরালা পেরিয়ে অন্যপাশ দিয়ে আবার ম্যালে ফিরে আসা থেকে অক্সফোর্ড বুকস্টোরে হিমালয় সংক্রান্ত বইপত্র নাড়াচাড়া, কেভেন্টার্সের ছাদে ব্রেকফাস্ট সবই দিব্যি আছে। ম্যালে একটা জায়ান্ট স্ক্রিন বসিয়ে সারাক্ষণ নাচ-গানের ভিডিও রেকর্ডিং দেখানো হচ্ছে সেটা অবশ্য পছন্দ হল না একেবারেই। তবু হিমেল সন্ধ্যায় ম্যালের রেলিং-এর একধারে বসে মানুষজন, ঘোড়ার পিঠে সওয়ার এইসব দেখতে দেখতে এক কাপ চা হাতে আমি দার্জিলিং-কেই ভীষণভাবে উপভোগ করছিলাম। মনে পড়ছিল সিকিমের রাজার থেকে দোর্জে-লিং অর্থাৎ 'বজ্রের দেশ'-এর হাতবদল হয়ে ব্রিটিশ কোম্পানির বড়লাটের গ্রীষ্মাবাস দার্জিলিং হয়ে ওঠার নানা কাহিনি।
১৮৩৯ সালে 'ফ্রেন্ড অফ ইন্ডিয়া'তে দার্জিলিং থেকে এক সাহেব চিঠি লিখছেন, ইংরেজদের জন্য সদ্যনির্মিত স্বাস্থ্যনিবাস স্যানেটোরিয়ামের বেডরুমে ফায়ার প্লেস নেই। দার্জিলিং পাহাড়ের সৌন্দর্য এবং পাহাড়ি পথ যে পালকি আর গরুর গাড়ি চলার মতো হয়েছে সেইসব খবর পাওয়া যায় আরেক সাহেবের চিঠিতে। সমতল থেকে দার্জিলিং-এ পৌঁছানোর রাস্তাও তৈরি হয়ে গেছে সেই বছরই। পৃথিবী ঘুরতে বেরিয়ে সেই পথেই দার্জিলিং এসেছিলেন ১৮৯৭ সালে মার্ক টোয়েন। বিচিত্র এক গাড়িতে সওয়ার হয়ে দার্জিলিং-এর পাহাড়ি পথে অভিযানের কথা লিখেছেন তাঁর 'ফলোয়িং দ্য ইকুয়েটরঃ আ জার্নি রাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড (১৮৯৭)' বইটিতে। গাড়িটি অনেকটা স্লেজের মতো। প্রায় মাটি ছোঁয়া নিচু সিটে ছজন বসতে পারবে। আর তাতে থাকার মধ্যে আছে কেবল একটা ব্রেক। সে এক শ্বাসরোধী অভিজ্ঞতা।
দার্জিলিং পাহাড়ের সৌন্দর্য বা কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতশ্রেণি দর্শন শুধু সাহেবদের নয়, মুগ্ধ করেছে এ দেশের প্রায় সব ভ্রমণার্থীকেই। তাই স্বাধীনতার আগে বা পরে বারবারই দার্জিলিং সাহিত্যের বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে। রবীন্দ্রনাথ, স্বর্ণকুমারী দেবী, উপেন্দ্রকিশোর, জলধর সেন, প্রবোধকুমার সান্যাল থেকে শুরু করে এযুগের অনেক সাহিত্যিকই দার্জিলিংকে এড়াতে পারেননি তাঁদের সৃষ্টিতে।
পর্যটন ব্যাবসার তাগিদে যতই ঘিঞ্জি হয়ে উঠুক না কেন দিনে দিনে, দার্জিলিং এখনও অতুলনীয়া। এবারের এই সপ্তাহান্তিক দার্জিলিং ভ্রমণটা আরও মনে থেকে যাবে কারণ ফিরে আসার কিছুকালের মধ্যেই এক পথ দুর্ঘটনায় চিরবিদায় নিলেন ভ্রমণসঙ্গীদের একজন।
- দময়ন্তী দাশগুপ্ত
~ এই সংখ্যায় ~
"এম্নি করে' বার বার আমরা দেখ্ছি চীনের মুখ আমাদের চেনা হয়নি; নিজেদের অনেক মনগড়া দাবী-দাওয়া, অনুযোগ অভিযোগ আমরা চীনের ঘাড়ে চাপিয়ে আস্ছি, আর চীন নির্ব্বিবাদে সে-সমস্ত ওলোট পালট করে' দিয়ে নিজের খোস-খেয়ালের ভরে নিজের পথটি ধরে' চলেছে। কে জানে এম্নি করে' কতবার চীন আচম্কা ভবিষ্যতের ইতিহাসকে মধুর অথবা নিষ্ঠুর পরিহাসে উদ্ভ্রান্ত করে' চলবে! - ঐতিহাসিক ও লেখক শ্রী কালিদাস নাগের লেখনীতে "চীনের চিঠি" |
~ আরশিনগর ~
~ সব পেয়েছির দেশ ~
নাগজিরার জঙ্গলে – দেব মুখার্জি | |
উত্তরাখণ্ডে ট্রেক (তৃতীয় পর্ব) – মৃণাল মণ্ডল |
~ ভুবনডাঙা ~
ওকাম্পোর দেশে – শ্রাবণী ব্যানার্জী | |
~ শেষ পাতা ~
সূর্যাস্তের হাট – তৃষ্ণা বসাক |
ইগুয়াজু জলপ্রপাত, ব্রাজিলের দিক থেকে - আলোকচিত্রী শ্রাবণী ব্যানার্জি