নৈনিতাল (Nainital) –‘তাল’ মানে হ্রদ বা সরোবর। হ্রদের ধারে অধিষ্ঠাত্রী দেবী নয়না বা নৈনি থেকে নৈনিতালের নামকরণ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১,৯৩৮মি. উঁচুতে সাত পাহাড়ে ঘেরা নৈনিতাল লেক। লেকের দুই প্রান্তে জমজমাট বাজার, দোকান। এর একদিকে তাল্লিতাল ও অন্যদিকে মাল্লিতাল। মাঝের দেড় কিমি জুড়ে ম্যল। চিনার গাছের দল সারবেঁধে এখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। পপলার, দেবদারুও ওর পড়শিবন্ধু। লেকের জলে বোটিংয়ের ব্যবস্থা আছে। কাছেপিঠের মধ্যে দ্রষ্টব্য নয়নাদেবীর মন্দির। ১৮২৪ সালে মোতিরাম শাহ এই মন্দিরটি নির্মাণ করান। ১৮৮০-তে নষ্ট হয়ে যায় ভূমিকম্পে। ১৮৮৩-তে নতুন করে তৈরি হয়। প্রচলিত ধারণা সতীর বাম নয়ন পড়েছিল এখানে, তাই নাম নৈনি। পাশেই শিখদের গুরুদোয়ারা। স্বল্পদূরত্বে মসজিদ এবং ১৮৪৭-এ তৈরি গথিকশৈলীর সেন্ট জনস চার্চ। বাকিংহাম প্যালেসের আদলে গড়া গথিকশৈলীর আর এক অনন্য নিদর্শন রাজভবন। রোপওয়ে চড়ে যেতে হবে ২,২৭০মি. উচুঁতে স্নোভিউ পয়েন্ট, ২,৬১১মি. উচুঁতে নয়না পিক। রোপওয়ে থেকে নৈনিলেকের আকার অনেকটা কাজুবাদামের মতো লাগে। সাতপাহাড়ি ঘেরা নৈনিসরোবরে সবুজ-নীলের অদ্ভুত মিশেল। আর রয়েছে ৪কিমি দূরে হনুমান গড়ি। নৈনিতালের আশেপাশে অনেকগুলো ছোট-বড় হ্রদ রয়েছে- ২২কিমি দূরে ভীমতাল, ২১কিমি দূরে সাততাল, ২৭কিমি দূরে নওকুচিয়াতাল, ১০কিমি দূরে খুরপাতাল। পাখি দেখার জন্য আদর্শ স্থান সাততাল আর নৈনিতাল থেকে ১৪কিমি দূরের নির্জন ঠিকানা প্যাংগট। রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিধন্য চির-পাইনে ঘেরা মনোরম রামগড় নৈনিতাল থেকে ২৫কিমি দূরে। নৈনিতাল থেকে ৫২কিমি দূরে কুমায়ুনের আর এক অপরূপ স্থান প্রাচীন শিব মন্দিরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা মুক্তেশ্বর (Mukteswar)। এখান থেকে হিমালয়ের শোভা অসাধারণ।
যাওয়া - নিকটতম রেলস্টেশন কাঠগোদাম(KGM)। কাঠগোদামের আগের স্টেশন হলদোয়ানিতে নেমেও যাওয়া যায়। কাছের বিমানবন্দর পন্থনগর। কাঠগোদাম থেকে নৈনিতালের দূরত্ব ৩৪কিমি, হলদোয়ানি থেকে ৩৯কিমি। পন্থনগর থেকে ৭১কিমি দূরে নৈনিতাল।
থাকা - কুমায়ুন মন্ডল বিকাশ নিগমের রেস্ট হাউস রয়েছে তাল্লিতাল, ভীমতাল, সাততাল, সুখতাল, নওকুচিয়াতাল ও কাঠগোদামে। নৈনিতাল জুড়েই রয়েছে বেসরকারি নানান হোটেল।
নৈনিতালের এস টি ডি কোডঃ ০৫৯৪২।
রানিখেত (Ranikhet) –নৈনিতাল থেকে ৬০কিমি দূরে ১,৮২৯মি উচ্চতায় ওক, পাইন, সিডার, সাইপ্রাসে ছাওয়া পাহাড়ি শহর রানিখেত। রানিখেতের প্রধান আকর্ষণ এখান থেকে হিমালয়ের এক বিশাল রেঞ্জ দেখতে পাওয়া যায়। রানিখেত থেকে ঘুরে আসা যায় ফ্রুট রিসার্চ সেন্টার চৌবাটিয়া, ঝুলাদেবীর মন্দির, তারিখেত, শীতলাখেত। রানিখেতে থেকেও করবেট ন্যাশনাল পার্ক বেড়িয়ে নেওয়া যায়।
রানিখেতকে জুড়ে ছড়িয়ে আছে নানান গল্পকথা –দুই রানিকে ঘিরে। একজন চাঁদবংশের রানি পদ্মাবতী। তিনি নাকি হিমালয়ের প্রেমে মুগ্ধ হয়ে এখানে বসবাস শুরু করেন। অন্যজন রানি কলাবতী। তাঁর চাষাবাদের খেত থেকেই হয়ত নাম হয় রানিখেত। যাইহোকনা কেন রানিদের ইতিকথা বুকে নিয়ে রানির মতই মহিয়সী পাহাড়ের রানি রানিখেত। রানিখেতের পুবে নেপাল, পশ্চিমে তেহরি গাড়োয়াল। মাঝের পাহাড়ি সংসারে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে নন্দাদেবী, কামেট, নীলকন্ঠ, হাতি পর্বত, গৌরী পর্বত, ত্রিশূল, নন্দাঘুন্টি, নন্দাকোট – এমনই আরও কত শৈলশিখরমালা। ব্রিটিশদেরও প্রিয় ছিল এই শহর। লর্ড মেয়োর উদ্যোগ সফল না হলেও পরে ১৮৬৯ সালে সিমলা থেকে গ্রীষ্মাবাস সরে আসে এখানে। কালে কালে কুমায়ুন রেজিমেন্টের সদর দপ্তরও বসে এখানে। রানিখেত থেকে ১০ কিমি দূরে চৌবাটিয়া সত্যিই একটু অন্যরকম। এখানে উত্তরাখন্ড সরকারের আপেলবাগিচা ও গবেষণাকেন্দ্র রয়েছে। দেড়শোরও বেশি প্রজাতির আপেল দেখা যায়। হিমালয়ের দৃশ্য তো আছেই। এখান থেকে রাতের রানিখেতের ছবি ভারি সুন্দর। এখান থেকে ৩কিমি হাঁটাপথে কৃত্রিম লেক ভালু ড্যাম।
চৌবাটিয়ার পথে ৭কিমি গেলেই ঝুলাদেবীর মন্দির। আসলে দেবীদুর্গা। পাশেই রামমন্দিরে দেবতা রাধাকৃষ্ণ, কালিকা, রাম-লক্ষণ-সীতা। আরও একজায়গা উপতা। তবে তার জন্য আলমোড়া যাওয়ার রাস্তা ধরতে হবে। ৭কিমি গেলেই নয় হোলবিশিষ্ট ফৌজি গল্ফকোর্স। প্রকৃতি এখানে তরঙ্গায়িত সবুজ মোরামে মোড়া। আরও ১ কিমি এগোলেই দেখা মিলবে ব্যাঘ্রবাহিনী কালিকার। অরণ্যনিরালায় সেই দেবীর ঘর।
যাওয়া - নিকটতম রেলস্টেশন কাঠগোদাম ও হলদোয়ানি। কাঠগোদাম থেকে রানিখেত ৮০কিমি আর হলদোয়ানি থেকে ৮৭কিমি। আলমোড়া থেকে দূরত্ব ৪৪কিমি, কৌশানি থেকে দূরত্ব ৭৫কিমি। নিকটতম বিমানবন্দর পন্থনগর।
থাকা - রানিখেতে কুমায়ুন মন্ডল বিকাশ নিগমের ম্যল রোডে ট্যুরিস্ট রেস্ট হাউস, চিলিয়ানৌলা রেস্ট হাউস ও মোনাল ট্যুরিস্ট রেস্ট হাউস। শীতলাখেতেও কে এম ভি এন-এর ট্যুরিস্ট রেস্ট হাউস আছে। আর আছে শহর জুড়ে অজস্র হোটেল।
রানিখেতের এস টি ডি কোডঃ ০৫৯৬৬। শীতলাখেতের এস টি ডি কোডঃ ০৫৯৬২ ।
করবেট ন্যাশনাল পার্ক (Corbett National Park) –নিবিড় জঙ্গলে ঘন সবুজের আলিঙ্গন প্রকৃতিপ্রেমীকে জোগাবে অজানার রোমাঞ্চ, ঠিক যেমনটি পেয়েছিলেন প্রখ্যাত শিকারী ও প্রকৃতিবিলাসী জিম করবেট। তাঁরই স্মৃতিতে এই জঙ্গলের নাম করবেট ন্যাশনাল পার্ক। অবশ্য করবেটের জাতীয়তার স্বীকৃতি জোটে ১৯৭৫ সালে। এর আগে ১৯৩৫-এ ইউনাইটেড প্রভিন্সের গভর্নর উইলিয়াম ম্যালকম হেইলির নামানুসারে এই জঙ্গলের নাম ছিল হেইলি ন্যাশনাল পার্ক।
সালটা ১৯৭৩। ভারতে ব্যাঘ্রপ্রকল্পের শুরু। প্রথম ব্যাঘ্রপ্রকল্পের শিরোপা পায় করবেট ন্যাশনাল পার্ক। নৈনিতাল থেকে ১১৫কিমি দূরে মহুয়া, শাল, বয়ড়া, হরিতকীর আদিম নির্জনতায় প্রায় নিশব্দে ঘুরে বেড়ায় চিতল, হরিণ, ভালুক, হায়না। কখনও ত্রস্তপায়ে ছুটে যাবে বার্কিং ডিয়ার, শম্বর, ঘড়িয়াল। অরণ্যের ঘাসেঢাকা প্রান্তরে ঘুরে বেড়ায় বুনোহাতির পাল। গাইড ধুলোপথে আঙুল দেখিয়ে বাঘের পায়ের ছাপ দেখাবেন। হয়তো কয়েক সেকেন্ড আগেই হেঁটে গেছে ওই পথ দিয়ে। তারপর সেই পথেই ছুটবে গাড়ি - যদি দর্শন মেলে। ২০০৭ সালে ১৬৪টি বাঘ ছিল এই অরণ্যে। হাতির সংখ্যা এখন প্রায় ৭০০। এখানে বনবিড়াল, নীলগাই, বুনোশুয়োরও রয়েছে। অজস্র পাখির ডাক শোনা যায় এই জঙ্গলে। প্রায় ৬০০ প্রজাতির পাখির দেখা মেলে এখানে। পাখি দেখার সবচেয়ে ভালো সময় ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি। গহীন এই অরণ্যভূমির আয়তন প্রায় ১,২৮৯ বর্গ কিমি। শিবালিক পাহাড়ের কোলে এই অরণ্য। অরণ্যের বুক চিরে বয়ে গেছে রামগঙ্গা ও কোশি নদী। নদীর জলে কুমির, কচ্ছপ, ঘড়িয়াল আর মহাশোল মাছের ঝাঁক।যাওয়া - নিকটতম রেলস্টেশন কাঠগোদাম থেকে ৫৯কিমি দূরে রামনগর(RMR)। রামনগর থেকে আরও ৫৭কিমি দূরে অরণ্যের প্রবেশদ্বার।
থাকা - জঙ্গলে থাকার জন্য ধিকালা, সুলতান, বিজরানি, গৈরাল, ঘিনাউলি – পাঁচটি ফরেস্ট বাংলো আছে। বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগঃ ফিল্ড ডিরেক্টর, টাইগার প্রোজেক্ট, রামনগর, নৈনিতাল- ২৪৪৭১৫।
কৌশানি (Kaushani) –ঝকঝকে নীলাকাশ, আর লম্বা লম্বা পাইনের সারির আকাশছোঁয়ার চেষ্টা। শোনা যায়, কৌশিন মুনির নামেই এই জনপদের নাম কৌশানি। কোন অতীতে হয়ত এখানেই ছিল মুনিবরের আশ্রম। তবে আজকের রূপবতী কৌশানি ব্রিটিশদের হাতে তৈরি। সময়টা ছিল ১৮৬৪ সাল। গান্ধিজি কৌশানিকে সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। ১৯২৯ সালে ১২ দিন অনাসক্তি যোগ আশ্রমে ছিলেন গান্ধিজি। এখানে বসেই তিনি গীতার অনাসক্তি যোগ নিয়ে লেখেন। গান্ধি আশ্রমের সংগ্রহশালায় রয়েছে বেশকিছু ঐতিহাসিক আলোকচিত্র আর গান্ধিজির ব্যাবহার করা বিভিন্ন সামগ্রী। এখানে একটি কুটিরশিল্পকেন্দ্র রয়েছে। হাঁটাপথেই দেখে নেওয়া যায় গান্ধি আশ্রম ও গান্ধিজির শিষ্যা সরলাবেনের তৈরি কস্তুরবা শিল্পকেন্দ্রটি। ১৮৯০মিটার উচ্চতায় এ যেন প্রকৃতির নিজস্ব এক বারান্দা যেখানে দাঁড়ালে নন্দাঘুন্টি, ত্রিশূল, চৌখাম্বা, নন্দাকোট, নন্দাদেবী, পঞ্চচুল্লি, নীলকন্ঠ –এমনই কত শৃঙ্গরাজি ঘিরে থাকবে তুষারশৃঙ্খল হয়ে। এরই মধ্যে কোনও একটা শৃঙ্গে এসে পড়ে ভোরের প্রথম মায়াবী আলো কিংবা বিদায়ী সূর্যের সোহাগি অস্তরাগের কিরণ। পৃথিবী ব্যেপে ছড়ায় মোহিনীপ্রকৃ্তির মায়াজাল। কৌশানি থেকে ১৯কিমি দূরে চৌকরি যাওয়ার পথে গোমতী নদীর তীরে শৈবতীর্থ বৈজনাথ(Baijnath)। মন্দিরগুলি ত্রয়োদশ শতাব্দীর। কৌশানির ৫ কিমি আগে রাস্তা গিয়েছে ৪ কিমি দূরের অরণ্য, পাহাড় আর শিবমন্দির নিয়ে নির্জন রুদ্রধারী।
যাওয়া - কাঠগোদাম বা হলদোয়ানি থেকে নৈনিতাল, রানিখেত হয়ে কৌশানি। বাস, জিপ বা ভাড়া গাড়িতে পৌঁছান যায়। কাঠগোদাম ও রানিখেত থেকে দূরত্ব যথাক্রমে ১৩৬কিমি ও ৫৯কিমি। পিথোরাগড় থেকে দূরত্ব ১৬৪কিমি। নৈনিতাল ১১৫কিমি দূরে।
থাকা - কৌশানিতে কুমায়ুন মন্ডল বিকাশ নিগমের ট্যুরিস্ট রেস্ট হাউস ও বেশ কয়েকটি বেসরকারি হোটেল আছে। কৌশানির এস টি ডি কোডঃ ০৫৯৬২।
বাগেশ্বর-চৌকরি (Bageswar-Chaukari) –সরযূ ও গোমতী নদীর সঙ্গমে ৯৭৫মি উচ্চতায় শৈবতীর্থ বাগেশ্বর। নাম হয়েছে বাগনাথ মহাদেবের নামে। শোনা যায়, একসময় মার্কণ্ডেয় মুনির আশ্রম ছিল এখানে। ১৪৫০ সালে চাঁদ বংশের রাজা লক্ষীচাঁদ বাগনাথের প্রাচীন মন্দির সংস্কার করেন। অতীতের পৌরাণিক স্থান আজকের আধুনিক শহর। যদিও আজও শহরের শরীর থেকে মুছে যায়নি প্রাচীনতার ছাপ। এখানে-সেখানে ঘর বেঁধেছেন প্রাচীন দেবদেবীরা। দুর্গামাতা, কালিকা, ভৈরব, দত্তাত্রেয়,বাণেশ্বর,গঙ্গামাতা এমনই আরও কত প্রাচীন মন্দির। এইসব মন্দিরের মূর্তিগুলি তৈরি হয়েছিল ৭ম থেকে ১৬ শতকের মধ্যে। পিন্ডারি-কাফনি ও সুন্দরডুঙ্গা গ্লেসিয়ারের ট্রেকিং রুটও শুরু এই বাগেশ্বর থেকেই।
বাগেশ্বর থেকে ৪৫কিমি দূরে পাহাড়ি উপত্যকা চৌকরি। উচ্চতা ২০১০ মিটার। ট্যুরিস্ট লজের চত্ত্বর থেকেই নন্দাঘুন্টি, ত্রিশূল, চৌখাম্বা, নন্দাকোট, নন্দাদেবী, পঞ্চচুল্লি প্রভৃতি হিমালয়ের একের পর এক শৃঙ্গ দৃশ্যমান। চৌকরি থেকে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার দূরে কস্তুরী মৃগ ফার্ম ও রিসার্চ সেন্টার। ৪কিমি দূরের কোটমানিয়া পর্যন্ত জিপ যাবে। চৌকরি থেকে ৩৯কিমি দূরে পাতালভুবনেশ্বর গুহা। সংকীর্ণ পিছল সিঁড়িপথে প্রায় একশো ফুট নীচে নামলে গুহার ভেতরে দেখা যাবে স্ট্যালাগমাইট-স্ট্যালাগটাইটের অপরূপ সব কারুকার্য। চৌকরি থেকে পাতালভুবনেশ্বর যাওয়ার পথে চা বাগানে ছাওয়া ছোট্ট পাহাড়ি শহর বেরিনাগ।যাওয়া - নৈনিতাল, রানিখেত ও কৌশানি থেকে বাগেশ্বরের দূরত্ব যথাক্রমে ১১৫, ৫৯ ও ৩৮কিমি। এই পথে বাস চলে।বাগেশ্বর থেকে চৌকরি যেতে জিপ ভাড়া করতে হবে।
থাকা - বাগেশ্বর ও চৌকরিতে কুমায়ুন মন্ডল বিকাশ নিগমের ট্যুরিস্ট রেস্ট হাউস ও কয়েকটি প্রাইভেট হোটেল আছে। পাতালভুবনেশ্বরেও সরকারি ট্যুরিস্ট লজ রয়েছে।
আলমোড়া (Almora) –সরযূ ও গোমতী নদীর সঙ্গমে ৯৭৫মি উচ্চতায় শৈবতীর্থ বাগেশ্বর। নাম হয়েছে বাগনাথ মহাদেবের নামে। শোনা যায়, একসময় মার্কণ্ডেয় মুনির আশ্রম ছিল এখানে। ১৪৫০ সালে চাঁদ বংশের রাজা লক্ষীচাঁদ বাগনাথের প্রাচীন মন্দির সংস্কার করেন। অতীতের পৌরাণিক স্থান আজকের আধুনিক শহর। যদিও আজও শহরের শরীর থেকে মুছে যায়নি প্রাচীনতার ছাপ। এখানে-সেখানে ঘর বেঁধেছেন প্রাচীন দেবদেবীরা। দুর্গামাতা, কালিকা, ভৈরব, দত্তাত্রেয়,বাণেশ্বর,গঙ্গামাতা এমনই আরও কত প্রাচীন মন্দির। এইসব মন্দিরের মূর্তিগুলি তৈরি হয়েছিল ৭ম থেকে ১৬ শতকের মধ্যে। পিন্ডারি-কাফনি ও সুন্দরডুঙ্গা গ্লেসিয়ারের ট্রেকিং রুটও শুরু এই বাগেশ্বর থেকেই।
বাগেশ্বর থেকে ৪৫কিমি দূরে পাহাড়ি উপত্যকা চৌকরি। উচ্চতা ২০১০ মিটার। ট্যুরিস্ট লজের চত্ত্বর থেকেই নন্দাঘুন্টি, ত্রিশূল, চৌখাম্বা, নন্দাকোট, নন্দাদেবী, পঞ্চচুল্লি প্রভৃতি হিমালয়ের একের পর এক শৃঙ্গ দৃশ্যমান। চৌকরি থেকে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার দূরে কস্তুরী মৃগ ফার্ম ও রিসার্চ সেন্টার। ৪কিমি দূরের কোটমানিয়া পর্যন্ত জিপ যাবে। চৌকরি থেকে ৩৯কিমি দূরে পাতালভুবনেশ্বর গুহা। সংকীর্ণ পিছল সিঁড়িপথে প্রায় একশো ফুট নীচে নামলে গুহার ভেতরে দেখা যাবে স্ট্যালাগমাইট-স্ট্যালাগটাইটের অপরূপ সব কারুকার্য। চৌকরি থেকে পাতালভুবনেশ্বর যাওয়ার পথে চা বাগানে ছাওয়া ছোট্ট পাহাড়ি শহর বেরিনাগ।যাওয়া - আলমোড়া থেকে নৈনিতালের দূরত্ব ৬৩কিমি, কাঠগোদামের দূরত্ব ৮৬কিমি, রানিখেতের দূরত্ব ৪৪কিমি। বিভিন্ন জায়গা থেকেই আলমোড়ায় আসার বাস পাওয়া যায়। নিকটতম রেলস্টেশন কাঠগোদাম।
থাকা - আলমোড়ায় কে এম ভি এন-এর ট্যুরিস্ট রেস্টহাউস আছে। এছাড়াও নানান মান ও দামের অনেকগুলি বেসরকারি হোটেল রয়েছে।
বিনসর (Binsar) – পাহাড় বেড়ানোয় জঙ্গলের স্বাদ পেতে যেতে হবে আলমোড়া থেকে ৩১কিমি দূরে পাইন, ওক, দেবদারু, রডোডেনড্রন আর ক্যাকটাসের অরণ্যভূমি বিনসর। ২,৪১২ মিটার উচ্চতায় বিনসর থেকে কেদারনাথ, চৌখাম্বা, নন্দাঘুন্টি, পঞ্চচুল্লি প্রভৃতি হিমালয়ের শৃঙ্গরাজি অপরূপ দৃশ্যপট রচনা করে। বিনসর বনভূমিতে বনমুরগি, বার্কিং ডিয়ার, বুনোশুয়োর প্রভৃতি প্রাণীর ও নানান প্রজাতির পাখির দেখা মিলবে।
যাওয়া - আলমোড়া থেকে জিপ বা প্রাইভেট গাড়িতে বিনসর যেতে হবে।
থাকা - কে এম ভি এন-এর ট্যুরিস্ট লজ আছে। জঙ্গলের মধ্যে বনবাংলোতেও থাকা যায়। বনবাংলোয় থাকার জন্য যোগাযোগ- ডি.এফ.ও, আলমোড়া (পশ্চিম)। অল্প কয়েকটি বেসরকারি হোটেল আছে।
জাগেশ্বর (Jageswar)- হিমালয়ের বুকে পাইন-ফারের সুপ্রাচীন অরণ্য। দীর্ঘ শাখাপ্রশাখা ছড়ানো গাছের ছাতায় বাধা পায় প্রখর সূর্যালোকও। বনভূমির ভিতর দিয়ে বয়ে চলেছে পাহাড়ি নালা জটাগঙ্গা। উপত্যকার ভরকেন্দ্রে ১,৮৭০ মিটার উচ্চতায় জাগেশ্বর শহর। ছোটো জনপদ। বন কেটেই যা কিছু জায়গাজমি। পর্যটকদের কাছে জাগেশ্বরের আকর্ষণ এখানকার প্রাচীন মন্দিররাজি।
ছোটো-বড় মিলিয়ে অন্তত ১২৪টি মন্দির আছে এখানে। সপ্তম শতকে কুমায়ুনের কাত্যুরি রাজাদের আমলে বানানো। সূর্যবংশীয় কাত্যুরি রাজারা ছিলেন শৈব। কুমায়ুনের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে সেইসময়ের বানানো অসংখ্য মন্দির। অধিকাংশই কালের কবলে ধ্বংসপ্রাপ্ত। ব্যতিক্রম জাগেশ্বর। জাগেশ্বরের বেশিরভাগ মন্দিরই শিবের। কাত্যুরি রাজাদের পর চম্পাবতের চাঁদরাজারাও মন্দিরগুলির প্রচুর সংস্কার করেছিলেন।
মন্দিরগুলি ‘নাগর’ শৈলীতে নির্মিত। গর্ভগৃহ চতুষ্কোণাকৃতি। বিমানশিখরে স্থাপিত রয়েছে ‘আমলক’। তার ওপর ‘কলস’। মাদলাকৃতি শিখরও দেখতে পাওয়া যায়। মন্দিরের কুলুঙ্গিতে রাখা মূর্তিগুলিও অনবদ্য। উল্লেখযোগ্য মন্দিরগুলি হল জাগেশ্বর মহাদেব, মহামৃত্যুঞ্জয়, দণ্ডেশ্বর, কেদারনাথ, বালেশ্বর, বদরীশ্বর, নীলকন্ঠেশ্বর, নবদুর্গা, কালিকা, পুষ্টিদেবী, সূর্যদেব, নবগ্রহ, কুবের প্রভৃতি। জাগেশ্বর মন্দিরটি পশ্চিমমুখী। মন্দিরের প্রবেশপথের দুধারে দুটি দ্বারপাল মূর্তি- শিবের অনুচর নন্দী ও ভৃঙ্গী। শিব এখানে নাগেশরূপে পূজিত হন। লিঙ্গটি দুটি ভাগে বিভক্ত- বৃহৎ অংশটি শিব, ছোটটি পার্বতী। পিছনে চাঁদবংশীয় রাজা দীপচাঁদ এবং ত্রিপলচাঁদের অষ্টধাতু দিয়ে নির্মিত দণ্ডায়মান মূর্তি। গর্ভগৃহে প্রজ্বলিত অর্নিবাণ দীপশিখা। পূর্বমুখী মহামৃত্যুঞ্জয় মন্দিরের গর্ভগৃহে শিবলিঙ্গটি একনেত্রবিশিষ্ট। সবচেয়ে বড় মন্দির দণ্ডেশ্বর। বিশালাকায় লোহার ঘন্টাটি দেখার মতো। সারাদিন ধরেই তীর্থযাত্রীদের সমাগম ঘটে। মন্দির চত্ত্বরের বাইরে পূজার উপকরণ সাজিয়ে সার সার দোকান বসেছে । এখানে পাণ্ডাদের উৎপাত নেই। মন্দিরগুলিকে ঘিরে এক নির্জন শান্ত উপত্যকা। জাগেশ্বরে পুরাতত্ত্ব বিভাগের একটি চমৎকার সংগ্রহশালা আছে। ঘন পাইন বনের মধ্যে দিয়ে তিন কিলোমিটার চড়াই পথ ভেঙ্গে যেতে হয় বৃদ্ধ জাগেশ্বর মন্দিরে। পথটি ভারি সুন্দর। জাগেশ্বরের আধ কিলোমিটারের মধ্যে হিড়িয়াটপ(২,২৮০ মিটার)। এখান থেকে হিমালয়ের কয়েকটি বিখ্যাত শৃঙ্গ দেখা যায়। কাছেই আরেকটি সুন্দর স্থান পানুয়ানৌল্লা।
যাওয়াঃ-আলমোড়া থেকে জাগেশ্বর মাত্র ৩৪ কিলোমিটার। আরটোলা থেকে পথ ঘুরে গিয়েছে। লোহাঘাটের দিক থেকে যাত্রা শুরু করলে মারোয়াখান, পানার, আরটোলা হয়ে জাগেশ্বর ৫৫ কিলোমিটার। বাস চলে দুদিক থেকেই।
থাকাঃ-জাগেশ্বরে থাকার জন্য রয়েছে কে এম ভি এন-এর ট্যুরিস্ট বাংলো। জাগেশ্বরের এস টি ডি কোডঃ- ০৫৯৬২।
উৎসব-জাগেশ্বরের মনসুন ফেস্টিভ্যাল বিখ্যাত। ১৫ জুলাই শুরু হয়ে একমাস ধরে চলে।টনকপুর (Tanakpur) – টনকপুরকে কেন্দ্র করে পূর্ণাগিরি, শ্যামলাতাল বেড়িয়ে চম্পাবত লোহাঘাট হয়ে মায়াবতী আশ্রমে পৌঁছান যায়। কুমায়ুন হিমালয়ের সংযোগকারী স্টেশন হিসেবে পূর্ব হিমালয়ের প্রবেশদ্বার টনকপুর গুরুত্বপূর্ণ। টনকপুর থেকে ১৫কিমি দূরে পূর্ণাগিরি দেবী দুর্গার মন্দিরের জন্য খ্যাত। শেষ আট কিমি জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে হাঁটতে হবে। টনকপুর থেকে পিথোরাগড়ের পথে ৪৬কিমি দূরে শ্যামলাতাল। শ্যামলাতালের কাছেই বিবেকানন্দ আশ্রম। শ্যামলাতালের নৈসর্গিক শোভা অপরূপ। টনকপুর থেকে শ্যামলাতাল পেরিয়ে ৩৬কিমি দূরে চম্পাবত। চাঁদরাজাদের সময়কার মন্দিরগুলি অন্যতম দ্রষ্টব্য।
যাওয়া - নিকটবর্তী রেলস্টেশন টনকপুর(TPU)।
থাকা - টনকপুর, পূর্ণাগিরি, শ্যামলাতাল ও চম্পাবতে কে এম ডি এন-এর ট্যুরিস্ট লজ আছে।
লোহাঘাট ও মায়াবতী আশ্রম (Lohaghat & Mayabati) –টনকপুরকে কেন্দ্র করে পূর্ণাগিরি, শ্যামলাতাল বেড়িয়ে চম্পাবত লোহাঘাট হয়ে মায়াবতী আশ্রমে পৌঁছান যায়। কুমায়ুন হিমালয়ের সংযোগকারী স্টেশন হিসেবে পূর্ব হিমালয়ের প্রবেশদ্বার টনকপুর গুরুত্বপূর্ণ। টনকপুর থেকে ১৫কিমি দূরে পূর্ণাগিরি দেবী দুর্গার মন্দিরের জন্য খ্যাত। শেষ আট কিমি জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে হাঁটতে হবে। টনকপুর থেকে পিথোরাগড়ের পথে ৪৬কিমি দূরে শ্যামলাতাল। শ্যামলাতালের কাছেই বিবেকানন্দ আশ্রম। শ্যামলাতালের নৈসর্গিক শোভা অপরূপ। টনকপুর থেকে শ্যামলাতাল পেরিয়ে ৩৬কিমি দূরে চম্পাবত। চাঁদরাজাদের সময়কার মন্দিরগুলি অন্যতম দ্রষ্টব্য।
যাওয়া - টনকপুর থেকে ৯০কিমি দূরে লোহাঘাট। লোহাঘাট থেকে মায়াবতী ১০কিমি দূরে। গাড়ি বা জিপ ভাড়া করে মায়াবতী আশ্রমে পৌঁছতে হবে।
থাকা - লোহাঘাটে কে এম ডি এন-এর রেস্টহাউস আছে। মায়াবতীতে আশ্রমেই থাকতে হবে। আশ্রমে থাকার জন্য যোগাযোগঃ অদ্বৈত আশ্রম, মায়াবতী, লোহাঘাট, জেলা চম্পাবত, উত্তরাঞ্চল, পিনঃ- ২৬২৫২৪।
পিথোরাগড়ঃ- ১৮১৫মি উচ্চতায় শৈলশহর পিথোরাগড়। শহরের পশ্চাদপটে চান্দক, থল, ধ্বজ, কেদার ও কুন্দর- হিমালয়ের পঞ্চশিখর। পিথোরাগড়ের কাছেপিঠে বেশ কয়েকটি প্রাচীন মন্দির আছে। পিথোরাগড় থেকে মুন্সিয়ারির পথে শান্ত ছোট্ট জনপদ ডিডিহাট। ডিডিহাট থেকে মুন্সিয়ারি যাওয়ার পথে ১৮০০মিটার উচ্চতায় পাহাড়ি গ্রাম বিরথি।
যাওয়া - নিকটতম রেলস্টেশন টনকপুর। টনকপুর থেকে ১৫১কিমি দূরে পিথোরাগড়। বাস, জিপ বা ভাড়া গাড়িতে যাওয়া যায়। পিথোরাগড় থেকে থল হয়ে ডিডিহাটের দূরত্ব ৮১কিমি, ওগলা হয়ে দূরত্ব ৫৩কিমি। ডিডিহাট থেকে বিরথির দূরত্ব ৬৪কিমি।
থাকা - পিথোরাগড়, ডিডিহাট, বিরথি- তিন জায়গাতেই কে এম ডি এন-এর ট্যুরিস্ট রেস্ট হাউস আছে।
লোহাঘাট ও মায়াবতী আশ্রম (Lohaghat & Mayawati) - টনকপুর থেকে মায়াবতী যাওয়ার পথেই লোহাঘাট। লোহাঘাট থেকে ঘুরে নেওয়া যায় অ্যাবোট মাউন্ট, বাণাসুর কেল্লা, দেবীধুরা, পঞ্চেশ্বর ও রিঠামিঠা সাহিব। লোহাঘাট থেকে কমবেশি ১১কিলোমিটার দূরে মিশনারি অ্যাবোট সাহেবের নামে অ্যাবোট মাউন্ট। উচ্চতা ২০০০ মিটার। এখান থেকে হিমালয়ের বিস্তৃত শৃঙ্গরাজি দৃশ্যমান। লোহাঘাট থেকে ৭কিলোমিটার দূরে বাণাসুর কেল্লা। শোনা যায়, বাণাসুর নাকি এই কেল্লা নির্মাণ করেন। পরে ষোড়শ শতাব্দীতে চাঁদরাজারা এই কেল্লার উপর একটি দুর্গ তৈরি করেন। লোহাঘাট থেকে প্রায় ৪৫কিলোমিটার দূরে দেবীধুরা। দর্শনীয় বরাহীদেবীর মন্দির, প্রাগৈতিহাসিক যুগের ধ্বংসাবশেষ, ভীমশিলা, গুহার অভ্যন্তরে দেবীধুরার থান প্রভৃতি। আরও ৫৩ কিলোমিটার এগিয়ে শিখতীর্থ রিঠামিঠা সাহিব। গুরুদোয়ারায় রাতে থাকা যায়। লোহাঘাট থেকে প্রায় ৩৯কিলোমিটার দূরে কালিন্দী ও সরযুর সঙ্গমে পঞ্চেশ্বর।
লোহাঘাট থেকে মাত্র ১০কিমি দূরে ২,০৭০মি উচ্চতায় শান্তস্নিগ্ধ পরিবেশে মায়াবতী আশ্রম। স্বামী বিবেকানন্দ আশ্রমটির নামকরণ করেন অদ্বৈত আশ্রম (Advaita Ashrama) । পাশেই ঐতিহাসিক ‘মাদার সেভিয়ার বাংলো’ যেখানে জগদীশচন্দ্র, সিস্টার নিবেদিতা, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস প্রমূখ বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা একসময় থেকে গেছেন। ৪কিমি দূরে ধরমগড়ে স্বামীজি ধ্যানে বসতেন। আশ্রমের পরিবেশ ভারি সুন্দর। চমৎকার প্রকৃতিও। হিমালয়ের সারি সারি শৃঙ্গ অদ্ভুত আবেশে আচ্ছন্ন করে মনকে।
যাওয়াঃ- টনকপুর থেকে ৯০কিমি দূরে লোহাঘাট। লোহাঘাট থেকে মায়াবতী ১০কিমি দূরে। গাড়ি বা জিপ ভাড়া করে মায়াবতী আশ্রমে পৌঁছতে হবে।
থাকাঃ- লোহাঘাটে কে এম ডি এন-এর রেস্টহাউস আছে। মায়াবতীতে আশ্রমেই থাকতে হবে। আশ্রমে থাকার জন্য যোগাযোগঃ অদ্বৈত আশ্রম, মায়াবতী, লোহাঘাট, জেলা চম্পাবত, উত্তরাঞ্চল, পিনঃ- ২৬২৫২৪।
পিথোরাগড় (Pithoragarh) - ১৮১৫মি উচ্চতায় শৈলশহর পিথোরাগড়। পাহাড় আর অরণ্যে ঘেরা সবুজ উপত্যকা। শহরের পশ্চাদপটে চান্দক, থল, ধ্বজ, কেদার ও কুন্দর- হিমালয়ের পঞ্চশিখর। একসময় গোর্খাদের তৈরি পিথোরাগড় দুর্গটি এখন সরকারি কার্যালয়। শহরের কেন্দ্রস্থলে জমজমাট বাজার এলাকাটিও ঘুরে বেড়ানো আর কেনাকাটার জন্য বেশ ভালো। ৯কিলোমিটার দূরে চান্দক পাহাড় থেকে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত অপরূপ। যুদ্ধে নিহত ভারতীয় সৈনিকদের স্মৃতিতে কুমায়ুন রেজিমেন্টের উদ্যোগে গড়ে উঠেছে উদ্যান আর শহিদবেদি নিয়ে মহারাজা পার্ক। পিথোরাগড়ের কাছেপিঠে বেশ কয়েকটি প্রাচীন মন্দির আছে। এরমধ্যে রাই গুম্ফায় সোমেশ্বর মহাদেবের মন্দির, কপিলেশ্বর মহাদেবের মন্দির, চণ্ডী মন্দির, উল্কাদেবীর মন্দির, বরদানি মন্দির এবং কৈলাস আশ্রম উল্লেখযোগ্য। পিথোরাগড় থেকে মুন্সিয়ারির পথে শান্ত ছোট্ট জনপদ ডিডিহাট। ডিডিহাট থেকে মুন্সিয়ারি যাওয়ার পথে ১৮০০মিটার উচ্চতায় পাহাড়ি গ্রাম বিরথি।
যাওয়াঃ- নিকটতম রেলস্টেশন টনকপুর। টনকপুর থেকে ১৫১কিলোমিটার দূরে পিথোরাগড়। বাস, জিপ বা ভাড়া গাড়িতে যাওয়া যায়। পিথোরাগড় থেকে থল হয়ে ডিডিহাটের দূরত্ব ৮১কিলোমিটার, ওগলা হয়ে দূরত্ব ৫৩কিলোমিটার। ডিডিহাট থেকে বিরথির দূরত্ব ৬৪কিলোমিটার। মুন্সিয়ারি থেকে পিথোরাগড় ১৩৫কিলোমিটার
থাকাঃ- পিথোরাগড়, ডিডিহাট, বিরথি- তিন জায়গাতেই কে এম ভি এন-এর ট্যুরিস্ট রেস্ট হাউস আছে।মুন্সিয়ারিঃ- ৭২০০ফুট উচ্চতায় সবুজে ঘেরা শান্ত পাহাড়ি শহর মুন্সিয়ারি জোহরা উপত্যকার প্রাণকেন্দ্র। মুন্সিয়ারির পথে ১৫কিমি আগে কালামুনিতে সিংহবাহিনী দেবীর মন্দির আছে। এখান থেকে পঞ্চচুল্লি অসাধারণ লাগে। মুন্সিয়ারি থেকেও পঞ্চচুল্লি মোহময়। দিনান্তে সূর্য পাটে নামলে, গাছগাছালির ছায়ারা যখন দীর্ঘ হতে থাকে, সামনের শিরতোলা পাহাড়ে তখন নীল সিল্যুয়েট। পিছনে পূর্ব দিগন্তে পঞ্চচুল্লির শ্বেতশুভ্রশরীর জুড়ে চলছে রংবদলের খেলা। পঞ্চচুল্লি-পঞ্চপাণ্ডবের পাঁচ উনুন, পাঞ্চালীর পাকশালা। কুমায়ুনের পিথোরাগড় জেলার তিব্বত সীমান্তে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে পাঁচটি শৃঙ্গঃ পঞ্চচুল্লি-১ (৬,৩৩৫ মিটার), পঞ্চচুল্লি-২ (৬,৯০৪ মিটার), পঞ্চচুল্লি-৩ (৬,৩১২ মিটার), পঞ্চচুল্লি-৪ (৬,৩৩৪ মিটার), পঞ্চচুল্লি-৫ (৬,৪৩৭ মিটার)। আর তাদের শরীরে রঙের কত বাহার! কখনও গলানো সোনা, কখনও জ্বলন্ত অঙ্গার, কখনও দুধে আলতায় আবার কখনওবা রুপোরঙ। তবে অবুঝ মেঘেরা মাঝেমধ্যেই বাদ সাধে।
মহকুমা শহর। মোট জনসংখ্যার বেশিরভাগই হল ভোট বা ভোটিয়া। এঁদের আদি বাসস্থান ছিল তিব্বত। এই অঞ্চলের লোকসংস্কৃতিতে আজও তিব্বতি প্রভাব বেশ সুষ্পস্ট। এঁদের প্রধান জীবিকাও তিব্বতের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য। মুন্সিয়ারি নামটিও তিব্বতি। ‘মুন’ অর্থ তুষারকণা আর ‘সিয়ারি’-র মানে খেত, অর্থাৎ তুষারক্ষেত্র। বাস্তবিকই, এখানে দীর্ঘ শীতকাল। নভেম্বর থেকে এপ্রিল, তুষারপাতের শুরু থেকে বরফগলার শেষ, এ ছ’মাস উপত্যকার জীবন যেন থমকে থাকে। উপত্যকার বুক চিরে বয়ে চলা গোরিগঙ্গা তখন তীব্র স্রোতস্বিনীরূপ ধারণ করে।
মুন্সিয়ারির বাসস্ট্যান্ডের আগে রাস্তাটা নীচের দিকে নেমে গেছে। দোকানপাট, বাজারহাট সবই এই রাস্তার দুধারে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে দিয়ে পথ গিয়েছে নন্দাদেবীর মন্দিরের দিকে। শেষ দু’কিলোমিটার হাঁটতে হবে। প্রশস্ত সবুজ বুগিয়ালের প্রান্তে ছোট সাদা মন্দির। পিছনে পঞ্চচুল্লি, রাজরম্ভা, লাচার উই, রালামধুরা, রিমলাউই-এর মতো শৃঙ্গের মালা।
শহর থেকে দু-কিলোমিটারের মতো পথ নীচের দিকে নামলে নানাসেন ভিলেজ। এখানেই মাস্টারজি মিউজিয়াম। ডঃ এস এস পঙ্তি- মাস্টারজি নামেই তাঁকে সবাই চেনেন। হিমালয়ের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে সংগৃহীত দুর্লভ জিনিসপত্র দিয়ে সাজিয়ে তুলেছেন নিজস্ব এই সংগ্রহশালাটি।
মুন্সিয়ারি থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে হস্তশিল্পকেন্দ্র দারকোট। পাকা রাস্তা থেকে খাড়া সিঁড়ি নেমে গেছে গ্রামে। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই ভেড়া-খরগোশ পোষার চল রয়েছে। হস্ত চালিত তাঁতে বোনা হচ্ছে টুপি, মাফলার, শাল, কার্পেট। মেয়েরাই সব করছে ।
যাওয়াঃ- কাঠগোদাম থেকে মুন্সিয়ারির দূরত্ব ২৮০ কিলোমিটার। আলমোড়া, থল, তেজাম, বিরথি, কালামুনিটপ হয়ে পথ। বিরথি থেকে মুন্সিয়ারির দূরত্ব ৩৫কিমি। টনকপুর থেকে মুন্সিয়ারি ৩০৮ কিলোমিটার। চালথি, চম্পাবত, লোহাঘাট হয়ে পিথোরাগড়। পিথোরাগড় থেকে মুন্সিয়ারির দূরত্ব ১২৮কিমি। পিথোরাগড় থেকে থল পৌঁছানোর দুটি রাস্তা। একটি দেবল হয়ে, দ্বিতীয়টি ওগলা, ডিহিহাটের দিক থেকে। শীতকালে বরফ পড়ে কালামুনিটপ হয়ে যানবাহন চলাচল যখন বন্ধ হয়ে যায়, মুন্সিয়ারি যাবার আরেকটি বিকল্প পথ খোলা থাকে। সেটি পিথোরাগড়-ওগলা-আসকট-জৌলজিবি-মাদকোট হয়ে মুন্সিয়ারি। ভাড়া গাড়ি বা শেয়ার জিপে যেতে হবে।
থাকাঃ- কুমায়ুন মন্ডল বিকাশ নিগমের ট্যুরিস্ট রেস্ট হাউসে থাকতে হবে। মুন্সিয়ারির এস টি ডি - ০৫৯৬১।ভ্রমণ কাহিনি – || মুন্সিয়ারির কথা || মুন্সিয়ারির আত্মীয়তায় ||
ভ্রমণ কাহিনি - || তবু অনন্ত জাগে... হিমালয় ভ্রমণ - সেকাল একাল ||
হরিদ্বার (Haridwar) গাড়োয়াল হিমালয়ের প্রবেশপথ হরির দ্বার অর্থাৎ হরিদ্বারের অবস্থান উত্তরাঞ্চলের সাহারানপুর জেলায়। হরিদ্বারেই গঙ্গা সমতলে নেমেছে। প্রতি ১২ বছর অন্তর এখানেই বসে মহাকুম্ভের আসর। গঙ্গার জলে অবগাহন করে মানুষ তার পাপক্ষালন করে, সিঞ্চিত হয় পুণ্যবারিতে। শুধু পুণ্যার্থীই নয়, হর-কি-পউরি ঘাট, চণ্ডীপাহাড়, মনসাপাহাড়, গঙ্গার জলে সন্ধ্যারতি-এসবের অমোঘ আকর্ষণ পর্যটককে বারবার টেনে আনে হরিদ্বারে।
হরিদ্বারের প্রধান আকর্ষণ হর-কি-পউরি ঘাট। পুরাণে উল্লেখ আছে, রাজা বিক্রমাদিত্য তাঁর ভাইয়ের স্মরণে এই ঘাটটি নির্মাণ করেন। ঘাটের ধারে স্নানের সুবিধার জন্য লোহার শেকল রয়েছে। হর-কি-পউরি কে কেন্দ্র করে বাজার, দোকান, হোটেল, ধর্মশালা নিয়ে জমজমাট হরিদ্বার। সন্ধ্যায় হর-কি-পউরি ঘাটে গঙ্গারতি দর্শণীয়। ফুল আর প্রদীপের ডালা সাজিয়ে ভাসিয়ে দেওয়া গঙ্গায়। দীপ্তদীপের আলোকমালায় অপরূপ হয়ে ওঠে গঙ্গাবক্ষ।
যাওয়া - নিকটতম রেলস্টেশন হরিদ্বার(HW) ও ২৮কিমি দূরে লাকসার(LRJ)। কাছের বিমানবন্দর ৪২কিমি দূরে জলি গ্রান্ট।
থাকা - হরিদ্বারে গাড়োয়াল মন্ডল বিকাশ নিগমের ট্যুরিস্ট রেস্টহাউস রাহি হোটেল। এছাড়া শহর জুড়ে অজস্র হোটেল আর ধর্মশালা রয়েছে। রাজাজী ন্যাশনাল পার্কের চিল্লা স্যাংচুয়ারিতেও জি.এম.ভি.এন.-এর ট্যুরিস্ট রেস্টহাউস ও ফরেস্ট রেস্টহাউস আছে। রাজাজী ন্যাশনাল পার্কে ফরেস্ট রেস্টহাউসে থাকার জন্য যোগাযোগঃ- ফিল্ড ডাইরেক্টর, রাজাজী ন্যাশনাল পার্ক, ৫/১ আনসারি মার্গ, দেরাদুন- ২৪৮০০১।
খাওয়া - হরিদ্বারের প্যাড়া আর কুলফিমালাই বিখ্যাত।
কেনাকাটা - কম্বল, গরম পোশাক, পিতলের ঘর সাজানোর দ্রব্য, পুজোর নানান সম্ভার মিলবে বড় বাজার, মোতি বাজার চত্ত্বরে।
হৃষিকেশ (Hrishikesh) –গঙ্গার তীরে ৩৪০ মিটার উচ্চতায় প্রাচীন শহর হৃষিকেশ। পুরাণ মতে, ঋষি রায়াভ্যার সাধনায় খুশি হয়ে ভগবান বিষ্ণু তাঁকে দেখা দেন হৃষিকেশ রূপে, তাই ঋষির সাধনস্থল পরিচিত হয়েছে হৃষিকেশ নামে। পাহাড়, জঙ্গল আর পুণ্যতোয়া জাহ্নবী গঙ্গা এই নিয়েই হৃষিকেশের সংসার। এখানে থেকে বেড়িয়ে নেওয়া যায় ৪কিমি দূরের রামঝুলা, ৭কিমি দূরে লছমনঝুলা, ৬কিমি দূরে পুষ্করমন্দির । শহরের কাছেপিঠেই রয়েছে ভারত মন্দির, রঘুনাথ মন্দির, ঋষিকুম্ভ, গীতা পরমার্থ নিকেতন ও স্বর্গাশ্রম। হৃষিকেশও চারধামে যাওয়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশদ্বার। হৃষীকেশ থেকেও রাজাজি ন্যাশনাল পার্ক বেড়িয়ে নেওয়া যায়।
যাওয়া - নিকটতম রেলস্টেশন হৃষিকেশ ও হরিদ্বার। হরিদ্বার থেকে হৃষিকেশের দূরত্ব ২৪কিমি। হরিদ্বার থেকে বাস, অটো, প্রাইভেট গাড়ি বা ট্রেনে হৃষিকেশ পৌঁছান যায়।
থাকা - জি.এম.ভি.এন.-এর ট্যুরিস্ট রেস্টহাউস ভারতভূমি, ঋষিলোক ও সিসমমারি। হৃষিকেশেও প্রচুর হোটেল ও ধর্মশালা আছে ।
দেরাদুন- হরিদ্বার থেকে ৫২কিমি দূরে উত্তরাখণ্ডের রাজধানী দেরাদুন। অতীতে এখানেই নাকি ছিল গিরি দ্রোণাচার্যের আশ্রম। তাঁর নাম থেকেই শহরের নামকরণ। এখনও শিক্ষার জন্য বিশেষ প্রসিদ্ধ দুন স্কুলটি। সামরিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান মিলিটারি আকাডেমিও এখানেই। অন্যান্য দ্রষ্টব্যের মধ্যে রয়েছে টপকেশ্বর মহাদেবের মন্দির, সহস্রধারা, ইন্ডিয়ান ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট, তপোবন আশ্রম ইত্যাদি। ১০ কিমি দূরে খালাসি ডিয়ার পার্ক।
যাওয়াঃ- নিকটতম রেলস্টেশন দেরাদুন। কাছেদূরের বিভিন্ন জায়গা থেকে বাস আসছে।
থাকাঃ- জি.এম.ভি.এন.-এর হোটেল দ্রোণা। এছাড়া প্রচুর হোটেল আছে ।
মুসৌরি- সবুজ পাহাড়ের ব্যাকড্রপে রূপালি শৃঙ্গের সারি - এই সেই মুসৌরি পাহাড় - ব্রিটিশদের প্রিয় শৈলাবাস যা দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিল মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথকে। পাহাড়-সবুজের এই সৌন্দর্য দুচোখভরে দেখতে কাছারি পয়েন্ট থেকে রোপওয়েতে চড়ে পৌঁছতে হবে গান হিল। এখান থেকে বন্দরপুঞ্ছ, স্বর্গা্রোহিণী প্রভৃতি শৃঙ্গগুলি দেখা যায়। পুরো উপত্যকাটাই এখান থেকে অসাধারন লাগে। ১২ কিমি দূরে কেম্পটি ফলস, ৯কিমি দূরে থারিপানি জলপ্রপাত। ৬কিমি দূরে নাগদেবীর মন্দির। ২০ কিমি দূরে সুরকান্ডাদেবীর মন্দির। ১১কিমি দূরে বিনগ মাউন্টেন স্যাংচুয়ারি।
যাওয়াঃ- নিকটতম রেলস্টেশন দেরাদুন ৩৪ কিমি দূরে। বাসে একঘন্টা লাগে।
থাকাঃ- জি.এম.ভি.এন.-এর ট্যুরিস্ট রেস্টহাউস গাড়োয়াল টেরাস। এছাড়া অনেক হোটেল আছে ।পঞ্চপ্রয়াগঃ-দেবপ্রয়াগ, রুদ্রপ্রয়াগ, কর্ণপ্রয়াগ, নন্দপ্রয়াগ আর বিষ্ণুপ্রয়াগ - হিন্দু পুণ্যতীর্থ এই পঞ্চপ্রয়াগ। হৃষিকেশ থেকে ৬৯কিমি দূরে ৫১৮মি উচ্চতায় দেবপ্রয়াগ (Devaprayag)। রঘুনাথজীর মন্দির, বশিষ্ঠ কুণ্ড, ব্রহ্মকুণ্ড দর্শনীয়। ২৭কিমি দূরে দেবী চন্দ্রবদনীর মন্দির। দেবপ্রয়াগ থেকে ৩৩কিমি দূরে শ্রীনগর। শ্রীনগরে রয়েছে গাড়োয়াল বিশ্ববিদ্যালয়, কমলেশ্বর ও কল্যানেশ্বর মন্দির, কেশবরায়ের মন্দির, রাজরাজেশ্বর মন্দির, কেশোরাই মঠ ও শঙ্করাচার্য মঠ। শ্রীনগর থেকে ৬০কিমি দূরে উত্তরকাশীর পথে তেহরি। এখানেই রয়েছে তেহরি ড্যাম। তেহরির রাজবাড়িটি দর্শনীয়।
শ্রীনগর থেকে ৩৫কিমি দূরে পঞ্চপ্রয়াগের অন্যতম রুদ্রপ্রয়াগ (Rudraprayag)। অলকানন্দা ও মন্দাকিনীর সঙ্গমে ৬১০মি উচ্চতায় রুদ্রপ্রয়াগের অবস্থান। নদীসঙ্গমের মুখেই একখণ্ড শিলা। কথিত আছে এই শিলায় বসেই দেবর্ষি নারদ বীনা বাজাতেন। তাই এই শিলার নাম নারদশিলা। মন্দিরও গড়ে উঠেছে এখানে। কাছেই জগদম্বা ও অন্নপূর্ণা মন্দির। কিছুটা ওপরে রুদ্রনাথ তথা শিবের মন্দির। এছাড়াও কাছে পিঠেই রয়েছে গোপেশ্বর, সোমেশ্বর, নারদেশ্বর, কল্পেশ্বর প্রভৃতি একাধিক শিবমন্দির। রুদ্রপ্রয়াগ থেকে ৫কিমি দূরে কোটিশ্বর গুহামন্দির। একশোর-ও বেশি সিঁড়ি ভেঙ্গে মন্দিরচত্ত্বরে নামতে হবে। আরও নীচে জলধারায় যুগযুগ ধরে পাহাড় ক্ষয়ে সৃষ্ট অসংখ্য শিবলিঙ্গ। রুদ্রপ্রয়াগ থেকে ১৮কিমি দূরে ১০০০মি উচ্চতায় অলকানন্দার তীরে ঋষি অগস্ত্যর তপস্যাস্থল অগস্ত্যমুনি। রুদ্রপ্রয়াগ থেকে ৩৭কিমি দূরে ১,৪০০মি উচ্চতায় হরিয়ালিদেবী মন্দির। রুদ্রপ্রয়াগ থেকে গৌরিকুণ্ডের পথে ২৫কিমি দূরে মন্দাকিনীর তীরে নির্জন চন্দ্রপুরী। চন্দ্রপুরী থেকে ২কিমি দূরে সিয়ালসোর। কেদারনাথ ও বদ্রীনাথ যাওয়ার পথও রুদ্রপ্রয়াগ থেকে দু’ভাগ হয়ে গেছে।
যাওয়া - নিকটতম রেলস্টেশন হরিদ্বার ও হৃষিকেশ। হরিদ্বার বা হৃষিকেশ থেকে বাস বা ভাড়া গাড়িতে পঞ্চপ্রয়াগ বেড়িয়ে নেওয়া যায়।
থাকা - দেবপ্রয়াগ, শ্রীনগর, চন্দ্রপুরী, সিয়ালসোর, কর্ণপ্রয়াগ ও নন্দপ্রয়াগে জি.এম.ভি.এন.-এর ট্যুরিস্ট রেস্টহাউস আছে। অপেক্ষাকৃত বড় শহরগুলিতে হোটেল ও ধর্মশালাও মিলবে।
পঞ্চকেদারঃ-কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পর ভ্রাতৃহত্যার পাপস্খালনের জন্য কৃষ্ণের পরামর্শে শিবের শরণাপন্ন হতে যান পঞ্চপাণ্ডব। দর্শন দিতে অনিচ্ছুক শিব মহিষরূপে পালাতে গেলে ভীম চিনে ফেলেন। শিবকে ধরতে গেলে মহিষরূপী শিবের দেহ পাঁচ টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়ে পঞ্চকেদারে। কেদারনাথে মহিষাঙ্গ, মদমহেশ্বরে নাভি, তুঙ্গনাথে দুই বাহুসহ হৃদয়, রুদ্রনাথে মুখমণ্ডল ও কল্পেশ্বরে জটা।
কেদারনাথ (Kedarnath) –মন্দাকিনীর তীরে ৩,৫৮৮ মিটার উচ্চতায় শৈবতীর্থ কেদারনাথ। পঞ্চপাণ্ডবই কেদারনাথের মন্দিরটি তৈরি করান বলে কিংবদন্তী শোনা যায়। মূল ফটকের সামনে শিবের বাহন নন্দীর মূর্তি। মন্দিরের ভিতরে ও বাইরে নানান মূর্তি খোদিত রয়েছে। একখণ্ড পাথর শিবের প্রতিভূ। মন্দিরের পিছন দিকে কেদার শৃঙ্গ সকাল-সাঁঝে অপরূপ হয়ে ওঠে। কেদারনাথ মন্দিরের কাছাকাছি চারটি উষ্ণকুণ্ড- উদক্য, রেতং, রুদ্র ও ঋষি আছে। মন্দিরের পিছন দিকে আদি শঙ্করাচার্যের সমাধি। কেদারনাথ থেকে ট্রেক করে ৪কিমি দূরের চোরাবালিতাল (উচ্চতা ৪,২৭৫ মি.) ও ৮কিমি দূরের বাসুকিতাল (উচ্চতা ৪,৩২৮ মি.) বেড়িয়ে নেওয়া যায়। শীতের সময় কেদারনাথের প্রতিমূর্তিকে উখিমঠে নামিয়ে আনা হয়। সেখানেই তিনি পূজিত হন। দীপাবলী থেকে অক্ষয় তৃতীয়া পর্যন্ত মন্দির বন্ধ থাকে।
যাওয়া - হরিদ্বার থেকে ২৪৭ ও হৃষিকেশ থেকে ২২৩কিমি দূরে গৌরিকুন্ড। গৌরিকুন্ড থেকে ১৪ কিমি দূরে কেদারনাথ। শেষ ১৪ কিমি হেঁটে বা ডান্ডি, কান্ডি অথবা ঘোড়ায় পার হতে হবে। পথে রামওয়াড়াচটি ও গরুড়চটিতে খাওয়া দাওয়া ও বিশ্রাম করে নিতে পারেন। অগস্ত্যমুনি থেকে কেদারনাথে হেলিকপ্টার সার্ভিসও রয়েছে।
থাকা - গৌরিকুন্ড ও কেদারনাথে জি.এম.ভি.এন.-এর ট্যুরিস্ট রেস্টহাউস আছে। কেদারনাথে ধর্মশালাও আছে।
ভ্রমণ কাহিনি – || যেখানে আকাশ নাম ধরে ডাকে || ভালো থেকো কেদার ||
ত্রিযুগীনারায়ণ (Trijuginarayan) – গৌরিকুন্ড থেকে আরও ৫ কিমি নিচে শোনপ্রয়াগ। শোনপ্রয়াগ থেকে চড়াই পথে ৫ কিমি দূরে ত্রিযুগীনারায়ণ। কথিত আছে এখানেই নারায়ণকে সাক্ষী রেখে হর-পার্বতীর বিবাহ হয়েছিল। আজও অনির্বাণ সেই যজ্ঞের ধুনি। নারায়ণ ছাড়াও লক্ষ্মী, সরস্বতী ও শিবের মন্দির আছে।
মদমহেশ্বর (Madamaheshwar) – কেদারনাথের পথে গৌরীকুণ্ড (Gaurikund) থেকে ৩১ কিমি দূরে গুপ্তকাশী (Guptakashi)। প্রচলিত গল্পকথা বলে, কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পর নিজেদের পাপস্খালনের জন্য কৃষ্ণের পরামর্শে মহাদেবের স্মরণাপন্ন হন পাণ্ডবেরা। ক্ষুব্ধ শিব তাঁদের হাত থেকে নিস্তার পেতে ষাঁড়ের ছদ্মবেশে গুপ্তকাশীতে লুকিয়ে ছিলেন, তাই এই নাম। ভীম কৌশলে তাঁকে খুঁজে পেলে স্বরূপ ধারণ করেন পঞ্চকেদারে। তারই এক রূপ – নাভির অংশ মধ্যমহেশ্বর বা মদমহেশ্বর।
গুপ্তকাশী থেকে ১৩ কিমি দূরে উখিমঠ (Ukhimath) অবধি বাস যাচ্ছে। সেখান থেকে ভাড়ার জীপে উনিয়ানা (Uniana), কালীমঠ, লেখ পেরিয়ে রঁসি (Ransi) । রঁসি থেকে হাঁটাপথে ৬ কিমি দূরে গৌন্দার (Gaundhar)। আরও কিছুটা এগিয়ে বানতোলি (Bantoli)। বানতোলিতে দুই নদীর মিলনস্থল – সরস্বতী ও সুমেরু গঙ্গা, এই মিলিত ধারাই মদমহেশ্বর গঙ্গা। গৌন্দার/বানতোলিতে রাত কাটিয়ে থেকে পরদিন হাঁটা ৩,২৮৯মি. উচ্চতায় মদমহেশ্বরের উদ্দেশ্যে। একে একে পেরিয়ে আসা খাদাড়া, নানু, মৌখাম্বা, কুন। তারপর বিস্তীর্ণ সবুজ উপত্যকা, মাথার ওপর পরিষ্কার নীল আকাশ, ডানদিকে তুষারশোভিত হিমালয়ে নজর কাড়বে চৌখাম্বা। বাঁপাশে 'বুড়া'র খাড়া দেওয়াল আর সামনে দেবাদিদেবের গর্ভগৃহ – মদমহেশ্বর। মন্দিরে রূপোর পাতে মোড়া অষ্টধাতুর শিবমূর্তি। মূল মন্দিরের পিছনের রাস্তা দিয়ে চড়াই পথ গিয়েছে পাহাড়চূড়ায় বুড়ামদমহেশ্বর (১১,৪৭৩ ফুট) মন্দিরে। সেখানে ছোট পুকুরের জলে বরফে মোড়া চৌখাম্বা আর নীল আকাশের প্রতিচ্ছবি ভাসছে।
মদমহেশ্বর ট্রেকরুট ম্যাপ দেখুন এখানে।
যাওয়া - গৌরিকুন্ড থেকে ঘোড়া বা ট্রেকারে ত্রিযুগীনারায়ণ দর্শনে যাওয়া যায় । গুপ্তকাশী-মদমহেশ্বর বা উখিমঠ-মদমহেশ্বর মূলত ট্রেকরুট। তবে কিছুটা রাস্তা বাসে বা জিপে যাওয়া যায়।
থাকা - ত্রিযুগীনারায়ণ, গুপ্তকাশী ও উখিমঠে জি.এম.ভি.এন.-এর ট্যুরিস্ট রেস্টহাউস আছে। অন্যত্র হোটেল বা ধর্মশালায় থাকতে হবে।
ভ্রমণ কাহিনি – || মদমহেশ্বরের মায়ায় ||
তুঙ্গনাথ-রুদ্রনাথ (Tunganath-Rudranath) - উখিমঠ থেকে বাস বা জিপে ২৯কিমি দূরে চোপতা ভ্যালি। চোপতা থেকে চড়াই ভেঙ্গে সাড়ে ৩কিমি দূরে তুঙ্গনাথ। তুঙ্গনাথে রাত কাটিয়ে সূর্যোদয় দেখতে রাত থাকতেই বেড়িয়ে পড়ুন চন্দ্রশিলার উদ্দেশ্যে। চন্দ্রশিলা থেকে পঞ্চচুল্লী, নন্দাদেবী, দুনাগিরি প্রভৃতি গাড়োয়াল ও কুমায়ুনের শৃঙ্গরাজি দৃশ্যমান। তুঙ্গনাথে শিবের মন্দিরটি প্যাগোডাসদৃশ । তুঙ্গনাথ ছাড়াও কেদারনাথ, রুদ্রনাথ, পার্বতী প্রভৃতি দেবদেবীর মূর্তি রয়েছে মন্দিরে। চোপতায় কস্তুরীমৃগ প্রজনন কেন্দ্রটি দ্রষ্টব্য । উখিমঠ থেকে ৫কিমি দূরে দেওরিয়াতাল।
তুঙ্গনাথ থেকে ৬কিমি দূরে মন্ডল গ্রাম। মন্ডল গ্রাম থেকে গোপেশ্বর হয়ে ২২কিমি দূরে রুদ্রনাথ। ৩,৫৬০মি. উচ্চতায় পাহাড় কেটে গুহার ন্যায় রুদ্রনাথ মন্দির। কালো কষ্টি পাথরের শিব মূর্তি।
যাওয়া - চোপতা পর্যন্ত বাসে বা জিপে পৌঁছে শেষ সাড়ে তিন কিলোমিটার হেঁটে তুঙ্গনাথে পৌঁছাতে হবে। চোপতা থেকে মন্ডল যাওয়ার বাস বা জিপ মেলে। রুদ্রনাথের বাকি পথটা হেঁটেই পেরতে হবে।
থাকা - চোপতা থেকে ৮কিমি দূরে দোগোলভিটায় জি.এম.ভি.এন.-এর রেস্টহাউস ও পি.ডব্লু.ডি. গেস্টহাউস আছে। চোপতা, মন্ডল ও গোপেশ্বরে ছোট হোটেল আছে।
কল্পেশ্বর (Kalpeswar) – মুনি-ঋষিদের তপোভূমি কল্পেশ্বর। গুহামন্দিরে শিলাস্তূপ শিবের জটা রূপে পূজিত হয়।
যাওয়া - গোপেশ্বর থেকে চামোলী হয়ে যোশীমঠের পথে ৪৮কিমি দূরে হেলাং। বাস ও শেয়ার জিপ পাওয়া যায়। হেলাং থেকে ৬কিমি দূরে উর্গম হয়ে আরও ৩কিমি দূরে কল্পেশ্বর।
থাকা - কল্পেশ্বর মন্দিরে থাকা ও খাওয়া যায়। তবে হেলাং বা যোশীমঠে ফিরে এসে থাকাই ভালো। হেলাং-এ প্রাইভেট লজ়ে থাকতে হবে। চামোলী থেকে যোশীমঠের পথে ৫কিমি দূরে বিরহীতে জি.এম.ভি.এন.-এর লজ আছে।
যোশীমঠ-আউলি (Joshimath-Aauli) – হৃষিকেশ থেকে ২৫৭কিমি দূরে বদ্রীনাথের পথে ব্যস্ত পাহাড়ি জনপদ যোশীমঠ। বাসস্ট্যান্ডের নীচে লোয়ার বাজারে নৃসিংহ দেবতার মন্দির। বাসস্ট্যান্ডের মাথায় শঙ্করাচার্য গুম্ফা।যোশীমঠ থেকে ট্রেক করে বা জিপে আউলি যাওয়া যায়। যোশীমঠ থেকে আউলি যাওয়ার জন্য রোপওয়ের ব্যবস্থাও রয়েছে। পথে গড়সন বুগিয়ালে নেমে ঘুরে নেওয়া যায়। আউলিকে ঘিরে অর্ধচন্দ্রাকারে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে ত্রিশূল, নন্দাদেবী, দুনাগিরি, নীলকন্ঠ, কামেট- একের পর এক তুষারধবল শৃঙ্গরাজি। আউলির আর এক পরিচয় শীতকালে বরফে মোড়া স্কি গ্রাউন্ড।
যাওয়া - নিকটতম রেলস্টেশন হৃষিকেশ। হৃষিকেশ-বদ্রীনাথ বাস যাচ্ছে যোশীমঠ ছুঁয়ে। প্রাইভেট গাড়িতেও এই পথে পাড়ি দেওয়া যায়। যোশীমঠ থেকে আউলির দূরত্ব ১৬কিমি।
থাকা - যোশীমঠ ও আউলিতে জি.এম.ভি.এন.-এর ট্যুরিস্ট রেস্টহাউস আছে। যোশীমঠে প্রাইভেট হোটেলেও থাকা যায়।
ভ্রমণ কাহিনি - || প্রকৃতির রঙ-তুলিতে আউলি – আশীষ গঙ্গোপাধ্যায় ||
বদ্রীনাথ (Badrinath) – অলকানন্দা নদীর তীরে ৩,১৩৩মি উচ্চতায় চারধামের অন্যতম বদ্রীনাথ। পদ্মাসনের ভঙ্গিমায় কালো শালগ্রাম শিলার বিষ্ণুমূর্তি। অঙ্গে স্বর্ণভূষণ, মাথায় সোনার মুকুট। মন্দিরের অভ্যন্তরে তিনটি অংশ- সভামন্ডপ, দর্শনমন্ডপ এবং গর্ভগৃহ। মন্দিরে লক্ষ্মী, গণেশ, শিব, পার্বতী প্রভৃতি দেবদেবীর মূর্তি রয়েছে। মন্দিরের গায়েই তিনটি তপ্তকুন্ড- নারককুন্ড, সূর্যকুন্ড ও তপ্তকুন্ড। ২কিমি দূরে চরণপাদুকায় রয়েছে বিষ্ণুর চরণচিহ্ন। বামনি গ্রামে উর্বশী ও নন্দাদেবীর মন্দির । ২কিমি দূরে তিব্বত সীমান্তে মানা গ্রামে ব্যাসগুহা। মানাগ্রামে ভীমপুল পেরিয়ে আরও ৭কিমি ট্রেকিং পথে বসুধারা জলপ্রপাত। দীপাবলী থেকে অক্ষয় তৃতীয়া পর্যন্ত মন্দির বন্ধ থাকে।
যাওয়া - হরিদ্বার থেকে ৩২২কিমি ও হৃষিকেশ থেকে ২৯৮কিমি দূরে বদ্রীনাথ। পথে একদিন যোশীমঠে বিশ্রাম নিলে সুবিধা হবে। যোশীমঠ থেকে বদ্রীনাথের দূরত্ব ৫২কিমি। নিকটতম বিমানবন্দর ৩১৫কিমি দূরে দেরাদুনের জলি গ্রান্ট।
থাকা - গাড়োয়াল মন্ডল বিকাশ নিগমের ট্যুরিস্ট রেস্টহাউস দেবলোক, ট্র্যাভেলার্স লজ ও যাত্রীনিবাস। এছাড়া পি.ডব্লু.ডি. ইন্সপেকশন বাংলো, ফরেস্ট রেস্টহাউস, হোটেল ও অজস্র ধর্মশালা আছে।
হেমকুন্ড সাহিব ও ভ্যালি অব ফ্লাওয়ার্স (Hemkundasahib & Valley of Flowers) – যোশীমঠ-বদ্রীনাথের পথে ১৯কিমি দূরে ১,৮৪৯মি. উচ্চতায় গোবিন্দঘাট। গোবিন্দঘাট থেকে হেঁটে, ডান্ডি বা ঘোড়ায় চড়ে পৌঁছতে হবে হেমকুন্ড সাহিব ও ভ্যালি অব ফ্লাওয়ার্স। ঘাংঘারিয়া থেকে সাড়ে ৫কিমি খাড়াই চড়াই পথে হেমকুন্ড সাহিব। নীল-সবুজ টলটলে জলের সরোবরে বরফ ভাসে সারা বছরই। দশম শিখ ধর্মগুরু গোবিন্দ সিংজির লোককথা ছড়িয়ে আছে শিখদের পবিত্র এই ধর্মস্থানে। পাশেই হিন্দু তীর্থ লক্ষ্মণ মন্দির। গোবিন্দঘাট থেকে হেমকুন্ডর পথে ব্রক্ষ্মকমলের সৌরভে মন স্নিগ্ধ হবে। ঘাংঘারিয়া থেকে সাড়ে ৩কিমি দূরে ৩,৫২৫মি. উচ্চতায় অশ্বক্ষুরাকৃতি ভ্যালি অব ফ্লাওয়ার্স। প্রাইমুলা, জুনিপার, পপি, বাটারকাপ, অ্যাস্টার- হাজারো ফুলের বর্ণে আর সৌরভে পৃথিবীর নন্দনকানন। জুলাই-আগস্ট মাস ফুলের মরসুম। উপত্যকায় বয়ে চলেছে পাহাড়ি নদী পুস্পবতী। ১৯৮১ সালে জাতীয় উদ্যানের শিরোপা পেয়েছে ভ্যালি অব ফ্লাওয়ার্স বা নন্দাদেবী জাতীয় উদ্যান। এই অরণ্যে পুস্প ছাড়া অন্যতম আর্কষণ কস্তুরী মৃগ ও বরফচিতা।
যাওয়া - যোশীমঠ থেকে গোবিন্দঘাট হয়ে আরও সাড়ে ৫কিমি দূরে ঘাংঘারিয়ায় রাত কাটিয়ে একদিনে হেমকুন্ড ও আরেকদিনে ভ্যালি অব ফ্লাওয়ার্স বেড়িয়ে নেওয়া যায়। নন্দাদেবী জাতীয় উদ্যানে ঢোকার জন্য অনুমতিপত্র লাগে।
থাকা - গোবিন্দঘাট, ঘাংঘারিয়া ও হেমকুন্ডে গুরুদ্বার আছে । ঘাংঘারিয়াতে জি.এম.ভি.এন.-এর ট্যুরিস্ট রেস্টহাউস ও প্রাইভেট হোটেল আছে । এই পথে ঘাংঘারিয়াতে রাত্রিবাসই সুবিধাজনক ।
উত্তরকাশী (Uttarkashi) – গঙ্গোত্রীর পথে উত্তরাঞ্চলের এক জ়েলাসদর উত্তরকাশী । হরিদ্বার বা হৃষিকেশ থেকে ৬-৭ ঘন্টার দূরত্বে জমজমাট শহর । উত্তরকাশীতে থেকে দেখে নেওয়া যায় ৫কিমি দূরে নেহেরু মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিউট আর শহরের মধ্যে বিশ্বনাথ, ভৈরব, জ্ঞানেশ্বর, একাদশ রুদ্রের মন্দির ।
যাওয়া - নিকটতম রেলস্টেশন হরিদ্বার বা হৃষিকেশ থেকে বাস বা ভাড়া গাড়িতে উত্তরকাশী পৌছাঁন যায় । হরিদ্বার ও হৃষিকেশ থেকে দূরত্ব যথাক্রমে ১৭২কিমি ও ১৪৮কিমি ।
থাকা - উত্তরকাশীতে জি.এম.ভি.এন.-এর রেস্টহাউস আছে । এছাড়াও থাকার জন্য ধর্মশালা ও প্রাইভেট হোটেল রয়েছে ।
হর-কি- দুন (Har-Ki-Dun) - দেরাদুন (Dehradun) থেকে বাসে বা গাড়িতে ৩৫ কিমি দূরে মুসৌরি (Mussoorie) হয়ে পুরোলা (Purola)। রাস্তায় পড়বে কেম্পটি ফলস (Kempty Falls)। পুরোলায় জি এম ভি এন-এর গেস্ট হাউস আছে। হোটেল,রেস্টুরেন্ট, দোকান-বাজার আছে। ট্রেকাররা এখান থেকে প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করে। এই রুটে এটাই শেষ শহর, এরপর মোবাইল পরিষেবা,বিদ্যুৎ বা অন্য কোন আধুনিক পরিষেবা এসব আপাতত নেই। পুরোলা থেকে ঘন্টা দুয়েকের পথ মোরি (Mori)। পাহাড়, নদী, সবুজ বনানী সব মিলিয়ে যেন অপূর্ব এক চিত্রপট। থাকার জন্য ফরেস্ট রেস্ট হাউস আছে। মোরি থেকে ২১ কিমি দূরে নেটওয়াড় (Netwar) - গোবিন্দ ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারির (Govind Wild Life Sanctuary) প্রবেশদ্বার। ৯৫৭.৯৬৯ বর্গ কিমি ব্যপ্ত এই বনাঞ্চল বিভিন্ন প্রজাতির পশুপাখি ও উদ্ভিদের জন্য সংরক্ষিত। স্নো লেপার্ড, ব্ল্যাক বিয়ার, ব্রাউন বিয়ার, মাস্ক ডিয়ার, গোল্ডেন ঈগল এই অরণ্যে বাস করে। নেটওয়ারে রুপিন ও সুপিন নদী মিলিত হয়ে নাম হয়েছে টন্স। প্রথমদিন সাঁকরিতে রাত্রিবাস।
সাঁকরি (Sankri) থেকে গাড়িপথে তালুকা (Taluka)পৌঁছতে প্রায় ৪০ মিনিট সময় লাগে। তালুকা থেকে এপথে পায়ে হাঁটা শুরু। দীর্ঘ ১৪ কিমি ট্রেক করে সীমা (Sima)-য় পৌঁছে ফরেস্ট রেস্ট হাউসে রাতে থাকা।
ফরেস্ট রেস্ট হাউস ছেড়ে খানিকটা যেতেই সুপিন নদীর ওপর ঝুলন্ত ব্রীজ, তারপরই আধ কিমি মারাত্মক চড়াই। বাঁদিকে ওসলা (Osla) গ্রামের রাস্তা গেছে - এপথের শেষ গ্রাম। শোনা যায় মহাভারতের কৌরবদের উত্তরসূরিদের বাস এখানে,দুর্যোধনের মন্দিরও আছে। অনেকটা খাড়া পাহাড়ে ওঠার পর পৌঁছান কালকাতিয়া ধার (Kalkatia Dhar)-এ। এখানে হর কি দুন নালা ও যমদ্বার নালা মিলিত হয়েছে।
সারাদিন ১২ কিমি হেঁটে, ১১৫০০ ফুট উচ্চতায় শিবের উপত্যকা হর-কি-দুন পৌঁছানো। এখানে উপত্যকা অনেকটা দোলনার মত ঝুলে আছে যেন। কথিত আছে স্বর্গের পথ গেছে এখান থেকেই,মহাভারতের পঞ্চ পান্ডব এ পথেই স্বর্গ যাত্রা করেন। গাড়োয়ালের উত্তর পশ্চিমে ফতেহ পর্বতের ৩৫৬ মিটার উঁচু এ উপত্যকা। এর আরেক নাম টন্স ভ্যালি (Tons Valley)। থাকার জন্য ফরেস্ট রেস্ট হাউস আর জি এম ভি এন এর বাংলো আছে। উপত্যকার সামনেই স্বর্গারোহিনী শৃঙ্গ (Swargarohini Peak)। বামে হর-কি-দুন, ডানদিকে রুইসারা (Ruisara)। আরও ডানদিকে ধুঁয়াধার (Dhumadhar)। এখান থেকে আগে ৪ কিমি ট্রেক করে যমদ্বার গ্লেসিয়ার (Yamdwar Glacier) পৌঁছান যেত। এই গ্লেসিয়ার থেকেই যমদ্বার নালার উৎপত্তি। তবে গ্লোবাল ওয়ার্মিংর জন্য এখন আরও দূরে চলে গেছে তাই ৯ কিমি গেলে তবেই গ্লেসিয়ার দেখতে পাওয়া যাবে। আবার ৩ কিমি প্রায় পুরোটাই চড়াই পেরিয়ে মারিন্দা তাল (Marinda Tal)। মারিন্দা তাল থেকে হর কি দুন নালার জন্ম। মারিন্দা ছাড়িয়ে পর্বতপ্রেমীরা বরাসু পাস (Borasu Pass) পেরিয়ে হিমাচলে প্রবেশ করে।
প্রয়োজনীয় তথ্য - দেরাদুন থেকে গাড়ি বুক করে নেওয়া যায়,অথবা সকাল ৬টা,৮টায় বাস যাচ্ছে সাঁকরি। মাঝে বিশ্রাম নিয়ে পুরোলা থেকেও আবার যাওয়া যায়।
সাঁকরি তে গাড়োয়াল মন্ডল বিকাশ নিগম-এর বাংলো আছে। ব্যবস্থা বেশ ভাল।বাকি সব জায়গায় জি এম ভি এন ও ফরেস্ট রেস্ট হাউস আছে। তবে টেন্ট ও রেশন নিয়ে যাওয়াই ভাল। (তথ্য সহায়তাঃ ঝুমা মুখার্জি)
ভ্রমণ কাহিনি - || ঈশ্বরের আপন দেশে ||