~ ৩য় বর্ষ ৪র্থ সংখ্যা - মাঘ ১৪২০~
বেশ কিছুদিন ধরে জাতীয় গ্রন্থাগারে বসে পুরোনো বই ঘাঁটছিলাম। হাতে এল বাংলা ভ্রমণ কাহিনির একেবারে প্রথমদিককার কিছু লেখা, কয়েকটি বই। দেখলাম বাংলাসাহিত্যে ভ্রমণকাহিনির ইতিহাস খুব পুরোনো নয়। আসলে পায়ের তলায় সর্ষে এই প্রবাদবাক্য কিন্তু আধুনিক বাঙালিকে ঘিরেই তৈরি হয়েছে। প্রাচীনকালে বাণিজ্য অথবা যুদ্ধযাত্রা, পরবর্তী পর্বে ধর্মপ্রচারের মত খুব প্রয়োজন না হলে বাঙালি বেরোতনা। স্বাভাবিকভাবেই সেই বেরোনোর অনুষঙ্গে সত্যিকার ভ্রমণকাহিনি লেখা সম্ভব ছিল না, হয়ওনি। অষ্টাদশ শতকের মধ্যভাগ থেকে বাঙালি যখন তীর্থের উদ্দেশ্যে বেরোতে শুরু করল তখন থেকে ভ্রমণকাহিনি রচনার শুরু হয়। অবশ্য নিছক তীর্থভ্রমণ ছাড়াও সেই ভ্রমণের রাজনৈতিক তথা অন্যান্য বৃহৎ উদ্দেশ্যও ছিল। লেখার মাধ্যমও তখন গদ্য ছিলনা, কাব্যেই কাহিনি লেখা হত। বাংলা ভ্রমণ গদ্যসাহিত্যের জন্ম নিতে আরও প্রায় একশো বছর লেগেছিল।
প্রথমদিককার বইগুলোর মধ্যে সবথেকে উল্লেখযোগ্য তিনটি হল বিজয়রাম সেনের 'তীর্থমঙ্গল'(১৭৭০), জয়নারায়ণ ঘোষালের 'কাশী-পরিক্রমা'(১৮০৯) এবং যদুনাথ সর্ব্বাধিকারীর লেখা 'তীর্থভ্রমণ' ১৮৫৩-১৮৫৭ সালে (১২৬০-৬৪ বঙ্গাব্দ) । রচনার কালক্রম হিসেবে এগুলিই বাংলা ভ্রমণসাহিত্যের প্রথম তিনটি গ্রন্থ। প্রথম দুটি পুঁথি কাব্যে লেখা হলেও তীর্থভ্রমণ গদ্যে রচিত হয় যদুনাথের ডায়েরির পাতায়। ১৮০০ সালে শ্রীরামপুরে বাংলা হরফে মুদ্রণ শুরু হলেও তীর্থমঙ্গল ও কাশী-পরিক্রমা পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয় ১৯০৬ সালে এবং যদুনাথের গ্রন্থটি ১৯১৫ সালে। পুস্তকাকারে মুদ্রিত হতে অনেক দেরি হওয়ার জন্য খুব স্বাভাবিকভাবেই এই বইগুলির কোন প্রভাব ঊনবিংশ শতকের ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত বাঙালির ওপরে পড়েনি। কিন্তু সংবাদ প্রভাকরে ঈশ্বর গুপ্তের পত্রাকারে লিখিত ধারাবাহিক ভ্রমণকাহিনির (১৮৫০ খ্রিস্টাব্দ/১২৫৭ বঙ্গাব্দ) প্রকাশের ঠিক পরে পরেই আমরা দেখতে পাই সেই সময়ের সাময়িক পত্রিকাগুলিতেও ভ্রমণ কাহিনি প্রকাশের চল শুরু হয়। বাংলা ভ্রমণসাহিত্যের বিকাশে তো বটেই 'ঘরকুনো' বাঙালির বেড়াতে বেরোনোর মানসিকতা গড়ে তোলাতেও 'বামাবোধিনী', 'ভারতী', 'নব্যভারত', 'মুকুল', 'সখা', 'প্রবাসী', 'ভারতবর্ষ'-র মত পত্রিকাগুলি একটা বড়সময় ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ছোট-বড়দের বিভিন্ন সাময়িকীর পাশাপাশি পুস্তকাকারে প্রকাশিত হতে শুরু করে বাঙালির লেখা দেশবিদেশের নানা ভ্রমণ কাহিনিও। অন্যান্য লেখালেখির পাশাপাশি ভ্রমণ কাহিনি লিখতে কলম তুলে নিলেন রমেশচন্দ্র দত্ত, সত্যেন্দ্রনাথ, রবীন্দ্রনাথ, স্বর্ণকুমারী, শিবনাথ শাস্ত্রী প্রমুখ। আবার মূলতঃ ভ্রমণ লেখার হাত ধরেই বাংলা সাহিত্যে পাকাপাকি আসন করে নিলেন জলধর সেন, শরৎচন্দ্র শাস্ত্রী, কৃষ্ণভাবিনী, প্রসন্নময়ীরা।
বেড়ানোর মতই বই পড়ার আদতও বাঙালির চেনা সখ – তা ছাপা হোক বা ই-বুক। পুরোনো এই ভ্রমণ কাহিনিগুলির নস্টালজিয়া তাতে এনে দেয় একটা অন্যরকম আমেজ। আজকের ভ্রমণপ্রিয় বাঙালি লেখক-পাঠকেরা অনেকেই শতাব্দী প্রাচীন সেইসব লেখাগুলি পড়ার সুযোগ পাননি। 'আমাদের ছুটি'-র পাঠকদের জন্য এবার থেকে পুরোনো পত্রিকার পাতা থেকে অথবা পুরোনো বইয়ের কিছু কিছু নির্বাচিত অংশ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হবে পত্রিকার পাতায়। নতুন বছরে এটাই আমাদের পুরোনো উপহার।
২০১৪ ভালো কাটুক সবার – ভ্রমণে আর মনভ্রমণে।
- দময়ন্তী দাশগুপ্ত
এই সংখ্যায় -
"যুবরাজ প্রিন্স্ অফ ওয়েলস্ যখন বোম্বায়ে আগমন করেন তখন তাঁহার সম্মানার্থে এলিফাণ্টা দ্বীপে এক ভোজ দেওয়া হয় সেই উপলক্ষে গুহাভ্যন্তর দীপালোকে সুন্দর রূপে রঞ্জিত হইয়াছিল। মন্দ নয়। শৈবমন্দিরে ম্লেছ ভোজ – না জানি দেবদেবীগণ কি ভাবে এই অঘোরকৃত্য নিরীক্ষণ করিতেছিলেন!" - এলিফ্যান্টা গুহা ভ্রমণের স্ম্রৃতিকথা সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কলমে |
~ আরশিনগর ~
শুশুনিয়াকথা - শুদ্ধসত্ত্ব ঘোষ |
|
~ সব পেয়েছির দেশ ~
|
~ ভুবনডাঙা ~
পাহাড়চূড়ার আতঙ্কের শেষে – দেবাশিস বিশ্বাস |
|
~ শেষ পাতা ~
প্রবারণা পূর্ণিমার রাতে – জিয়াউল হক শোভন |
অন্নপূর্ণা পর্বতারোহণের পথে দেখা ধৌলাগিরি শৃঙ্গ
আলোকচিত্রী- শ্রী দেবাশিস বিশ্বাস়
ভালো লাগলে শেয়ার করুন বন্ধুদের সাথে - |
||