~ ৭ম বর্ষ ১ম সংখ্যা - বৈশাখ ১৪২৪ ~
শব্দ-অক্ষরের গভীরে মায়া থাকে, মায়া থাকে চলার পথের বাঁকে বাঁকে। এই দুই মায়া জড়িয়ে গাঁথা হয় ভ্রমণকাহিনির ছন্দ। সাহিত্যের অন্যান্য বিভাগের মতই ভ্রমণকাহিনিকেও বুঝতে গেলে তাকে অনুভব করতে হয়। ওই যে বিভূতিভূষণ বলে গেছেন, 'দেখে চোখ আর মন'। ওই যে প্রসন্নময়ী বলেছিলেন, একজন সারা পৃথিবী ঘুরেও 'ইষ্টক আর প্রস্তর ছাড়া' কিছুই দেখতে পেল না হয়তো।
ভ্রমণকাহিনি নিয়ে বাঙালিকৃত বিভিন্ন গবেষণার কাজের সঙ্গে পরিচিত হতে হতে মনে হয় যে এই সব গবেষকেরা সত্যিই লেখাগুলির মধ্যে ইষ্টক আর প্রস্তর ছাড়া কিছুই দেখতে পাননা। যে ইষ্টক ও প্রস্তর কাজে লাগে তাঁদের বিদ্যার ডিগ্রি এবং পকেটের অর্থের পরিমাণ আরও আরও গেঁথে তুলতে। না আছে এঁদের ভাষার ওপর দখল, না রসবোধ। ইংরেজিতে যে কাজ হয়েছে, তার যতটুকু পড়েছি, একেবারেই ভিন্ন, তাঁরা কিন্তু চোখ আর মন দিয়েই দেখেন।
এযাবত যে বাংলা ভ্রমণসাহিত্যের ইতিহাসের রেকর্ড ছিল তাতে জানা যায় ১৮৮৫ সালে প্রকাশিত কৃষ্ণভাবিনী দাসের লেখা 'ইংলণ্ডে বঙ্গমহিলা' বাঙালি মেয়ের লেখা প্রথম ভ্রমণকাহিনি, ভ্রমণপুস্তক, প্রথম বিদেশ ভ্রমণকাহিনি। অর্থাৎ বাঙালি মেয়ের লেখা ভ্রমণকাহিনির ইতিহাস শুরুর কাল ১৮৮৫। কিন্তু বাস্তবে তা নয়। কাব্যে তা শুরু হয় ১৮৬৪ এবং গদ্যে ১৮৭২ সালে। তাহলে মোটামুটি ধরে নেওয়া যায় যে ১৮৭০-এর দশক থেকে বাঙালি মেয়েরা পুরোদমে ভ্রমণকাহিনি লিখতে শুরু করেন। গাংচিল থেকে প্রকাশিত 'আমাদিগের ভ্রমণ বৃত্তান্ত'-এই এ তথ্য প্রথম উদ্ঘাটিত করি। অথচ খুব সম্প্রতি কাগজের পাতায় দেখলাম একজন বিদগ্ধ গবেষিকার কাজ হচ্ছে বাঙালি মেয়ের ভ্রমণকাহিনি নিয়েই। সময়সীমা কী আশ্চর্য ১৮৭০ থেকে শুরু! অথচ কাজটি করার দাবি তাঁর একার। এমনকী কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই তার আলোচনা প্রকাশিত হয়ে যায়, যেহেতু এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রয়েছে ভারত সরকারের একটি দপ্তরের অনুদান। আশ্চর্য লাগে যখন দেখি হাতের কাছে পাওয়া কিছু লেখা, কিছু বই নিয়েই ছাত্রছাত্রীদের শ্রমে কেমন গবেষণার পর গবেষণা, ডিগ্রির পর ডিগ্রি হচ্ছে। দুঃখ লাগে মূল রচনার বদলে যাওয়া পুনঃপ্রকাশে। এই গবেষিকারই এক ছাত্রী আমায় ফোন করে জানতে চেয়েছিল মুকুল পত্রিকা হাতে গরম কোথায় পাওয়া যাবে? এরই নাম গবেষণা! আমি তো জানি একটা লেখার সন্ধানে পায়ে হেঁটে, বাসে-ট্রেনে চড়ে ঘুরে বেড়াতে হয়, একটি লেখার সন্ধানে লাইব্রেরিতে লাইব্রেরিতে, বাড়িতে বাড়িতে, পুরনো স্কুল বা প্রতিষ্ঠানের দরজায় দরজায় মাথা খুঁড়তে হয়। অবশ্য নাম বাড়ানোর দৌড়ে যাঁরা নাম দিয়েছেন, এত সময় কোথায় তাঁদের? সত্যিই তো, তাঁরা তো আর আমার মতো মূর্খ নন।
দুঃখ লাগে, ক্ষোভ জমে একজন ভ্রমণকাহিনিকার হিসেবে। ভ্রমণগবেষকরা ভ্রমণকাহিনিকার হতে চান না। কারণ আমরা বা আমাদের লেখা তাঁদের কাছে 'সাবজেক্ট।' এ আরেকজন গবেষিকার মন্তব্য। আমরা কিন্তু খুঁজে নিতে পারি পুরনো ভ্রমণ কাহিনি, যত্ন করে পুনঃপ্রকাশ করতে পারি তার। লিখতেও পারি তাদের বিবর্তনের কথা অনুভবের গভীর থেকে চোখ আর মন দিয়ে। গবেষকদের কাছে তাই বিনীত অনুরোধ, আমাদের ভুল ইতিহাস, অর্ধইতিহাস লেখার থেকে বিরত হন। বিরত হন আমাদের শুধু 'সাবজেক্ট' ভাবা থেকেও।
আমাদের ইতিহাস আমরা নিজেরাই লিখে নিতে পারব।
'আমাদের ছুটি'-র সাত বছরে পা দেওয়ার প্রাক্কালে বিনিপয়সার এই আন্তর্জালপত্রিকার পক্ষ থেকে ভ্রমণলেখক-পাঠক-আলোকচিত্রীদের জানাই আন্তরিক কৃতজ্ঞতা পাশে থাকার জন্য।
- দময়ন্তী দাশগুপ্ত
এই সংখ্যায় -
ঢাল বেয়ে গাড়ি নেমে আসে জলের কাছে। কোথাও তার রঙ নীল। কোথাও বা খানিক ঘন হয়ে সবুজ হয়ে এসেছে। জলের আয়নায় মুখ দেখছে পাহাড় আর মেঘেরা। - ধারাবাহিক 'ভ্রমণকারী বন্ধুর পত্র - লাদাখ পর্ব'-এর তৃতীয় পত্র দময়ন্তী দাশগুপ্তের কলমে |
~ আরশিনগর ~
অচিন দ্বীপ মৌশুনী – অনিরুদ্ধ ভৌমিক |
~ সব পেয়েছির দেশ ~
বিনসারের জঙ্গলে – সুদীপ্ত ঘোষ |
~ ভুবনডাঙা ~
হো চি মিনের ভিয়েতনামে – রাইসুল সৌরভ |
~ শেষ পাতা ~
প্যাংগং সো, লাদাখ – আলোকচিত্রী- রত্নদীপ দাশগুপ্ত
ভালো লাগলে জানান বন্ধুদের |
||